মন চায় সুইসাইড করি !

0
1500

মন চায় সুইসাইড করি !
কিন্ত সুইসাইড করতে যে পরিমাণ সাহস প্রয়োজন সে পরিমাণ সাহস বর্তমানে আমার মধ্যে নেই।তাহলে কি করব আমি ? সাজগোজ করে আমার হতে গিয়েও হতে না পারা প্রেমিকের বিয়ের দাওয়াতে যাব ? কলিগদের পাশে বসে ঢগঢগ করে দুগ্লাস বোরহানি খাব ? আয়েশ করে কাচ্চিটা খাওয়ার পর স্টেজে উঠে রিফাতের পাশে বসে সেল্ফি তুলে দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে বলব,

‘ কনগ্রাচুলেইশন ভাইয়া ! ‘

ইচ্ছে করে বিশাল একটা কাঁচি নিয়ে রিফাতের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে কুচিকুচি করে ওর শেরওয়ানিটা কেটে দিয়ে বলি,

‘ কেন ভালোবাসলে না আমাকে ? ‘

অথচ আমি এতদিন মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম রিফাতও আমাকে ভালোবাসে।দিন বলছি কেন ? বছর, হুম দু বছর ধরে এমনটা ভেবে বসে আছি এই বোকা আমিটা ! বাড়িতে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব ভেঙে দিচ্ছিলাম এটা সেটা বলে।প্রথমদিকে বাবা আমার কথায় সায় দিত।ইদানিং বোধহয় তার বিরক্তিটাও মায়ের মতন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।প্রায়ই মা খুব আয়োজন করে বসে আমার কাছ থেকে কিছু একটা শুনতে চায়।আমি সব বুঝি।বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকি।মায়ের সাথে এমন লুকোচুরি খেলতে আমার একটুও ভালো লাগে না ; কিন্ত কি করব আমি ? কঠিন ব্যক্তিত্বের মেয়েরা কিছু ক্ষেত্রে ভীষণ অসহায়।

.
একটা মেয়ের কখন সবচেয়ে কষ্ট হয় জানেন ? যখন সে দেখে তার ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে অন্য কারো হতে যাচ্ছে ! বুঝি না এই ইতি নামের মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই ? অফিসে জয়েন করার মাত্র দুই মাসের মধ্যে সে রিফাতের মন জয় করে নিল ; অথচ দুই দুইটা বছরেও আমি রিফাতের মনে ছোট্ট করে নিজের একটা জায়গা তৈরী করে পারি নি।অফিসের কাজে সবসময় রিফাতের সহযোগিতা, আমার কখন কি প্রয়োজন কোনো কিছুতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা এই ব্যাপারগুলোকে ভুল করে আমার প্রতি ওর ভালোবাসা ভেবেছি এতদিন।হয়ত অন্যান্য কলিগদের চাইতে ও একটু বেশি পছন্দ করে আমাকে।এর বেশি কিছুই না।এই সহজ বিষয়টা বুঝতে এত সময় লেগে গেল কেন আমার ? সত্যি বলতে ইতি আমাদের অফিসে না এলে হয়ত আমি সেটা বুঝতেও পারতাম না।

মাঝে মাঝে আমি আড়চোখে দেখি রিফাত কাজের কথা বলতে বলতে ইতির ডেস্কের সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।ইতি খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শোনে তারপর ল্যাপটপে এটা সেটা রিফাতকে দেখায়।রিফাত তখন কুঁজো হয়ে ওর ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে ল্যাপটপের স্ক্রিণে দু তিন মিনিট চোখ বুলিয়ে ওকে কিছু একটা বুঝিয়ে দেয়।এই বিরক্তিকর দৃশ্যটা মুহূর্তেই আমার চোখে জ্বালা ধরায়।এত অসহ্যকর কেন এই মেয়েটা ? এভাবে রিফাতকে কাছে ডাকার কি দরকার ওর ? আমারও অসংখ্যবার কাজে সমস্যা হয়েছে।তখন প্রিন্ট আউট কপি নিয়ে রিফাতের কেবিনে হাজির হয়েছি।এই পাজি মেয়ের মতন কাজ করি নি।শুধু ইতির দোষ দিচ্ছি কেন ? রিফাত নিজেও তো কম যায় না।কি দরকার ছিল এত ইতির সুবিধা অসুবিধার খোঁজ রাখার ? অন্য কারো দিকে কি একটুখানি নজর দেয়া যেত না ? কারো অপেক্ষার চাহনিতে সমাপ্তি চিহ্ন এঁকে দিলে কি খুব ক্ষতি হত ? ইতির খোঁজখবর রাখতে গিয়েই বুঝি আমার মনের খাতায় নিখোঁজ সংবাদের নোটিশটা ঝুলিয়ে গেল রিফাত ?

.
যেদিন ইতি ওদের বিয়ের কার্ডটা আমার ডেস্কে এসে দিয়ে গেল সেদিনের পর থেকে আমি সম্ভবত আর বেঁচে নেই।আমার প্রাণহীন শরীরটা কেবল একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে।কোনো ঘুম নেই, ক্লান্তি নেই, তষ্ণা নেই… কিছুই নেই ! এভাবে আর কত ? মনে মনে ঠিক করলাম রিফাতের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে হবে আমাকে।

দিনশেষে কাজ গোছানোর পর যখন রেজিগনেশন লেটারটা টাইপ করছিলাম তখন পেছন থেকে হঠাৎ কারো স্পর্শ পেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম,

— কি পুনম ? খুব ব্যস্ত ?

আমি কষ্ট করে একটু হেসে বললাম,

— জ্বী না।প্লিজ বসুন ইতি।

— উহু, বসব না।রাকিব স্যার সাইট ভিজিটে গিয়েছে বুঝলেন।

এরপর ইতি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল,

— কাজ করার মুড নাই একদম।চলেন একটু স্পেশাল মোমেন্ট সেলিব্রেট করি সবাই মিলে।

আমি বিরক্তিভাব আড়াল করে বললাম,

— আমার জরুরি কিছু কাজ বাকি আছে।আপনারা এনজয় করেন।

ইতি এবার জোর করে আমার হাত টেনে ধরে বলল,

— আহ ! উঠুন তো।

বুঝতেই পারিনি আমার জীবনের সবচাইতে সুন্দর মুহুর্তটা তখন আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সবাই যে যার ডেস্কে নিজের মতন কাজে ব্যস্ত।কেবল রিফাতের কেবিনটা ফাঁকা।আমি ভেতরে ঢুকতেই ইতি খুব সাবধানে দরজাটা লাগিয়ে দিল।দেয়ালে থোকায় থোকায় নীল সাদা বেলুন সাজানো।ডেস্কে রাখা কেকটাতে ‘ লভ ইউ পুনম ‘ লেখাটা চোখে পড়তেই আমি অবাক দৃষ্টিতে ইতির দিকে তাকালাম।সাথে সাথেই রিফাত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল।ইতি মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,

— এই অফিসে জয়েন করার পর থেকেই আমি লক্ষ্য করেছি তুমি আমাকে খুব একটা পছন্দ করো না।

একটু হেসে ইতি আবার যোগ করল,

— অনুমতি ছাড়াই তুমি করে বললাম কিন্ত।বন্ধুর হবু বউকে আর কত আপনি আপনি করা যায় বলো তো ? জানি তুমি অবাক হচ্ছ ! হওয়াটাই স্বাভাবিক।এতদিন ইচ্ছে করেই কিছু বলি নি।বিশেষ করে যখন টের পেলাম তুমি রিফাতকে মন দিয়ে বসে আছ, তখন তোমাকে খুব জ্বালাতে ইচ্ছে হলো।তাই রিফাতকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা প্ল্যান করে ফেললাম।রিফাত হচ্ছে আমার ছোটবেলার বন্ধু বুঝলে।ওকে খুব ভালো চেনা আছে আমার।ভীষণ চাপা স্বভাবের ছেলে।মরে যাবে তবুও মনের কথা বলবে না।ভাবলাম তোমাকে বিয়ের কার্ড দেখিয়ে ক্ষেপিয়ে দিলে যদি কিছু একটা গতি হয় ওর।এদিকে দেখি বিয়ের কথা শুনে তুমিও কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছ।জানো সেদিন তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ওভাবে কাঁদতে দেখে বেচারা রিফাত তো মরেই যাচ্ছিল।তাই ভাবলাম গাধা দুটোকে আর না কাঁদাই।

আমি লাজুক কন্ঠে বললাম,

— তাহলে বিয়ের কার্ডটা… ?

ইতি মুচকি হেসে বলে,

— বোকা মেয়ে ওটা আমাদের প্ল্যানের অংশ ছিল।যাতে তুমি ব্যাপারটা বিশ্বাস করো।যা হোক রিফাত আমার কাজ শেষ, এবারে ইতিকে ছুটি দাও।

কথাটা বলেই ইতি চোখ টিপ দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।সাথে সাথেই রিফাত এক টানে আমাকে বুকের ভেতর এনে বলল,

— জলদি করে ভালোবাসি বলে দাও তো পুনম।আর একটুও অপেক্ষা করতে পারছি না।

আমি ওর বুকে মাথা রেখে বললাম,

— আই লভ ইউ রিফাত ভাইয়া।

রিফাত হাসতে হাসতে বলল,

— এখনো ভাইয়া !

— কি করব বলো ! দু বছরের অভ্যেস, সময় লাগবে।

— অন্তত বিয়ের দিন ভাইয়া বলো না !

আমি আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে বললাম,

— হুম, চেষ্টা করব।

।।।।।।।।।।

#জিনিয়া_জেনিস