#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
২৩
🌸
ওদেরকে এমনভাবে চেঁচাতে দেখে ইভান বলল,
“সমস্যা নাই। নিয়ে দিচ্ছি তোদের।”
মীরা দু’পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে অসম্মতি জানালো। বলল,
“নিয়ে দেওয়া কথা না ভাইয়া। তোমরা এসব জিনিস কোনদিন কেনো না। সঠিক দাম জানো না। তাই বলে কি আমার সামনে আমার ভাইদের থেকে ডাকাতি করবে! অসম্ভব।”
মাহিমাও বলল,
“দুইটা স্কার্ফ আটশো টাকা! দিনেদুপুরে ডাকাতি পেয়েছেন নাকি?”
দোকানী লোকটা বলল,
“তাহলে আপনারাই বলেন কত দিবেন।”
মাহিমা একটু ভেবে বল,
“দেড়শো করে তিনশো। তার বেশি এক টাকাও না। দিলে দিবেন। না দিলে চলে যাব।”
আবির বিস্ময়ে রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে বোনের দিকে তাকাচ্ছে। এটা তার নিজের বোন! এখন ত মানুষের সামনে বোন পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগছে। কোথায় আটশো আর কোথায় তিনশো! আবির মুখ লুকিয়ে ফেলে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল। জায়িনের চোখাচোখি হয়ে গেলে বোকা হাসি দিল। চোখ, মুখের ভঙ্গিমা করে বোঝালো, এটা তার বোন না। এটা কার বোন! নিশ্চয় হাসপাতালে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। জায়িন হেসে ফেলল। মুবিন হাঁ করে মাহিমাকে দেখছে। মীরাও মাহিমার সাথে সুর মিলিয়ে বলল,
“হ্যাঁ। এই স্কার্ফের দাম খুব বেশি হলে দেড়শোই হবে। এর বেশি হবে না।”
“না, আপু। এত কমে হবে না।”
মীরা বলল,
“এত কম কই? আপনার কি মনে হয় আমরা এই প্রথম স্কার্ফ কিনছি? তাই দাম জানি না। শুনুন এমন স্কার্ফ দিয়ে আমার ওয়ারড্রব ভরা। বিশ্বাস না হলে চলুন দেখাই।”
মাহিমা মীরার দিকে তাকিয়ে চোখে কিছু ইশারা করে বলল,
“আমরা যদি দেড়শো টাকা করে এমন স্কার্ফ এনে দিতে পারি তখন কিন্তু ফ্রি-তে দিতে হবে। আমাদের কলেজের পাশের দোকানেই এমন স্কার্ফ কত দেখেছি।”
ইভান ওদের কথাবার্তা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভা মুখ টিপে হাসছে। মেয়েগুলো কী ভীষণ বিচ্ছু!
“আপু আর একটু বাড়িয়ে দিলে হয় না? ভাইয়া আপনি কিছু বলুন।”
মাহিমা জবাব দিল,
“ভাইয়া কী বলবে? ভাইয়া কি বুঝে নাকি? আমার ভাইয়েরা এত সহজসরল ওদেরকে আপনারা যা বলবেন তা-ই মেনে নিবে।”
“তাহলে আপু সত্যিই এই দামে দেওয়া যাচ্ছে না।”
মীরা মাহিমার হাতে মৃদু চাপ দিল। তারপর বলল,
“ঠিক আছে। দুশো করে চারশো। দুটাতে পঞ্চাশ করে একশো টাকা বাড়িয়েছি। আর এক টাকাও বাড়াব না। দিলে প্যাক করুন। নয়তো ভাইয়া চলো। অন্য দোকান দেখি।”
মীরা মাহিমা ইভানের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মনে মনে এক দুই গুনছে। মাহিমা ফিসফিস করে বলল,
“এখনই ডাকবে। দেখে নিও।”
মাহিমার কথা সত্যি হলো। লোকটা সত্যিই পেছন থেকে ডাকলো।
“আচ্ছা আপু, নিয়ে যান। রাগ করবেন না।”
মীরা, মাহিমা বিজয়ের হাসি হাসল। আবির, ইভান, মুবিন তিনজনই বাকরুদ্ধ। আটশো টাকার জিনিস চারশো টাকায় দিয়ে দিচ্ছে! তাদের কাছে তো আটশোও কম মনে হয়েছিল। ছেলেদের থেকে এভাবেই ডাকাতি করে তাহলে! ওরা ফিরে গেল। ইভান টাকা দিল। মীরা মাহিমা দুই ব্যাগ দু’জন হাতে নিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসলো। আসার সময় দোকানী ইভানকে বলল,
“ভাইয়া এর পর থেকে কিছু নিতে এলে ওদের নিয়ে আসবেন না প্লিজ। এক টাকাও লাভ করতে দিল না।”
ইভান হাসলো। আবিরের বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে বারবার দোকানী লোকটাকে গালি দিচ্ছে।
“তোরা না থাকলে শালা আমাদের সাথে সত্যিই আজ ডাকাতি করত। আমি তো আটশো দিয়েই নিয়ে নিতাম।”
মুবিন এতক্ষণে মুখ খুললো।
“আমি কল্পনাও করিনি লোকটা এত কমে দিয়ে দিবে।”
মীরা বলল,
“কম না মুবিন ভাই। এগুলোর দাম এতই। বড় দোকানে আছে বলে দাম বেড়ে গেছে। ছোট দোকান থেকে নিলে এর কমেও নেওযা যাবে। জিনিস একই কিন্তু।”
“হুম। সেটাই তো দেখছি।”
আবির বলল,
“তোরা এত দরদাম করা কীভাবে শিখেছিস?”
মাহিমা গৌরবের সাথে বলল,
“মেয়েদের এসব শিখতে হয় না ভাইয়া। মেয়েরা এসব গুণ জন্ম থেকেই নিয়ে আসে।”
“আজকের পর থেকে আমার সব জামাকাপড় তোরা কিনবি। আমি টাকা দিয়ে দিব। তোরা আমার জন্য নিয়ে আসবি। বাকি যত বাঁচবে তার থেকে অর্ধেক তোদের। পারবি না?”
মীরা মাহিমা একসাথে বলল,
“অবশ্যই।”
ইভা হাসতে হাসতে বলল,
“তোমরা ভাইবোনরা কি সমসময় এরকম ছিলে? মানে ছোট থেকেই এমন।”
আবির ইভার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হেসে বলল,
“অবাক হচ্ছেন ভাবী? শবে তো শুরু। আমাদের সাথে থাকুন বেশি না এক মাসেই আপনাকেও আমাদের মতো বানিয়ে ফেলব।”
ইভান এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে বলল,
“তনি, প্রিয়া ওরা আবার কোথায় গেল?”
“আমি খুঁজে আনছি।”
বলেই মীরা ছুটে কোথাও চলে গেল। ইভান পেছন থেকে ডাকলো।
“পরে আবার তোকে কে খুঁজতে যাবে।”
“আমি খুঁজে আনছি ভাইয়া।”
মাহিমাও কারো কথা না শুনে চলে গেল। এদের কাণ্ড দেখে ইভান নিরাশ হয়ে বলল,
“ওদেরকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে সহিসালামত বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটা।”
জায়িন পকেট থেকে ফোন বের করে ইভার কাছে এসে বলল,
“আমি একটু আসছি।”
জায়িন ফোন কানে নিয়ে ওদিকে চলে গেল। এখানে কি ওরা দাঁড়িয়ে থাকবে? আবির বলল,
“ভাবী আপনার তো কেনাকাটা শেষ হয়নি। চলুন দেখি আপনিও কেমন দামাদামি করতে পারেন।”
মুবিন বলল,
“আপু পানি খাবে?”
“খাওয়ালে সওয়াবের কাজ হতো।”
“আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।”
🌸
তনি আপুরা কোথায় গেছে? পুরো মল জুড়ে দুই চক্কর লাগিয়ে ফেলেছে। তবুও ওদের দেখা পাচ্ছে না। মীরা এই দোকান, ওই দোকান খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছিল। একটা ছেলে হাতে সেল্ফি স্টিক ধরে পেছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে আসছে। মীরা আগে খেয়াল করেনি। একটুর জন্য ছেলেটা এসে ওর সাথে ধাক্কা খেতো। কিন্তু তার আগেই কেউ মীরার হাত ধরে টেনে নিল। মীরা তাকিয়ে দেখল জায়িন ভাই। ছেলেটা জায়িনের সাথে ধাক্কা খেয়ে সরি টরি বলে একাকার করে ফেললো। জায়িন রাগলো না। শান্ত অথচ কেমন ধমক মেশানো গলায় ছেলেটাকে বলল,
“শপিংমলে ব্লগ করার জায়গা? ব্লগ করার জন্য পার্ক, রেস্টুরেন্টে আরও অনেক জায়গা আছে।”
ছেলেটা কাচুমাচু মুখে বলল,
“সরি ভাইয়া। আমি আপুকে দেখিনি। সরি আপু। ভাইয়াকে বলুন না আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন।”
ছেলেটাকে এত করে ক্ষমা চাইতে দেখে মীরার মন গলে গেল। সে হেসে বলল,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। ভুল মানুষেরই হয়।”
“তারপরও সরি আপু। ভাইয়া আপনার অনেক কেয়ার করে। তাই হয়তো রেগে গেছেন।”
মীরা মুখ মুচড়ে মনে মনে বলল, কেয়ার না কচু করেন। মানুষকে ধমকে উনি মজা পান। জায়িন কঠিন চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে সে এখান থেকে কেটে পড়লো। ছেলেটা চলে গেলে জায়িনও চলে যেতে নিল। মীরা ওর পিছু নিয়ে বলল,
“আপনি সবাইকে এমন ধমকান কেন? ছেলেটা আপনাকে কতটা ভয় পেয়েছে জানেন। বেচারা সরি বলতে বলতেই…
” ওই ছেলের জন্য খুব মায়া হচ্ছে!”
“হবে না? ওই ছেলের জায়গায় যে কেউ থাকলেও হতো। কীভাবে সরি বলছিল। আপনি সবসময় এমন গম্ভীর থাকেন বলেই আপনাকে বয়সের থেকেও বেশি বুড়া লাগে। আপনি তো আবির ভাইয়ার সমান হবেন। কিন্তু আপনাকে আমার বাবার বয়সী লাগে। কেন জানেন?”
জায়িন থেমে গিয়ে কঠিন চোখে মীরার দিকে তাকাল। মীরা কিছুটা ভয় পেলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। এই লোককে ভয় পাওয়ার কী আছে? ইনি কি তার গার্জিয়ান? টিচার? নাকি বড় ভাই? এলাকার বড় ভাই। মুখে মুখে ভাই ডাকে শুধু। উনাকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
“শুনুন জায়িন ভাই, আপনি তো ডাক্তারি পড়ছেন। তাহলে নিশ্চয় এই কথাটা জানার কথা। হাসলে মানুষের মন ভালো থাকো। শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আপনিও এখন থেকে হাসার চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো হাসতে না পারলেও অস্বাভাবিক মানুষের মতো সারাবছর মুখটাকে বাংলার পেঁচার মতো করে রাখবেন না। আমি কত হাসি দেখেন। সেজন্য কি আবার বাবার সম্পত্তি কমে গেছে? কমেনি, না? আপনি হাসলেও আপনার বাবার সম্পত্তি কমে যাবে না। বরং হাসলে আপনাকে সুন্দর দেখাবে। মানুষ অযথাই আপনাকে ভয় পাবে না।”
🌸
শপিং শেষে বের হয়ে প্রিয়া জোরাজুরি শুরু করলো সে ফুচকা খাবে। তনিরও মত আছে দেখে আবির উৎসাহ নিয়ে বলল,
“শুধু তুমি একা খাবে না। আমরা সবাই খাবো।”
মীরা মাহিমা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে মুখ বাঁকাল। ওদের মুখ বাঁকানো জায়িন, মুবিন দু’জনেরই নজরে পড়ল। রাস্তার পাশেই ফুচকা স্টল। ইভা আপুও দলটার সাথে ভিড়ে যাওয়ায় মুবিন জায়িন চলে যেতে পারছে না। তারপরও জায়িন চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আবির যেতে দিল না।
“দূর শালা! কয়দিন পর বিয়াই হবি এখন তোর ভাব দেখার সময় আছে নাকি।”
তনি, প্রিয়া ঝাল দিয়ে ফুচকা খাবে। ইভার ঝাল পছন্দ না। আবির সবার পছন্দ জেনে সবার জন্য এক প্লেট করে ফুচকা দিতে বললে মীরা নাক উঁচিয়ে বলল,
“আমি ফুচকা খাই না।”
মাহিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমিও না।”
চলবে…
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
Jerin Afrin Nipa
২৪
🌸
ইভা, মুবিন জীবনের প্রথম এমন দু’জন মেয়েকে দেখল যারা ফুচকা পছন্দ করে না। ওরা অবাকও হলো। মেয়ে মানেই তো ফুচকা পাগল। টয়লেটের পানি দিয়ে টক বানানো হয় বললেও এরা ফুচকা খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। কিন্তু এরা দু’জন পুরাই ভিন্ন। জায়িন সময় দেখছে। আরও কতক্ষণ লাগবে কে জানে। ইভা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এই মেয়েরা, তোমরা সত্যিই ফুচকা পছন্দ করো না?”
দু’জনই একসাথে উত্তর দিল,
“নাহ।”
ইভা বিস্ময় ধরে রাখতে পারলো না। তার কাছাকাছি এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।
“সত্যি!”
“ইয়েস।”
পরিবারের সবাই এই কথাটা জানে মীরা মাহিমা কেন ফুচকা পছন্দ করে না। এদের এই ফুচকা পছন্দ না করার পেছনের অনেক বড় ইতিহাস আছে। ইতিহাসটা সংক্ষেপে বলা যাক। স্কুল শেষে প্রতিদিন ওরা ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরত। এমন কত দিন গেছে যে বাড়ি ফিরে আর ভাত খেতে পারেনি। তো একদিন মীরার প্লেটে ফুচকায় ভীষণ খারাপ একটা জিনিস পেয়েছিল। যা খাওয়া যায় না। তা দেখেই যে এই জিনিসের উপরে ঘৃণা বসেছে। ওই ঘটনার পর বাড়ি ফিরে দু’জনেই পেট খারাপ করেছিল। এবং ওই পেট খারাপ সিরিয়াস অবস্থায় পৌঁছে গিয়ে মীরাকে হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে নিয়েছিল। দুই তিনটা সপ্তাহ যেভাবে ভুগিয়েছে তা ভুলবার মতো নয়। বাড়ির সবাই এই কথা জানে। ইভা ওসব ঘটনা জানে না বলেই এমন অবাক হচ্ছে।
“মানে তোমরা মেয়ে মানুষ হয়ে ফুচকা পছন্দ করো না! এরকমটা কিন্তু খুব কমই দেখা যায়।”
“ফুচকা কী দিয়ে বানা… বলতে বলতে থেমে গেল মীরা। কারণ ফুচকা ওয়ালা লোকটা যেন কেমন চোখে তাকে দেখছে। লোকটার সামনে তো আর বদনাম করা যায় না। মীরা চোখ ইশারা করে ইভাকে কাছে ডাকলো। ইভার কানে কানে বলল,
” ফুচকা কীভাবে বানায় জানলে তুমিও ফুচকা খাওয়া ছেড়ে দিবে। দুই হাতে, দুই পায়ে, টয়লেট থেকে এসে হাত না ধুয়ে, নাক পরিষ্কার করে আরও কতভাবে…
“ইইউ! আর বলো না। থামো থামো।”
মীরা মাহিমা শব্দ করে হাসছে। ইভার সত্যিই এখন আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে না। জায়িন অদ্ভুত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চিরিয়াখানায় নতুন কোন প্রাণী দেখছে। এরা তো সাঙ্ঘাতিক মেয়ে! মীরা মাহিমাকে হাসতে দেখে তনি বুঝে গেল। তনি ধমকে উঠে বলল,
“খচ্চরের বাচ্চারা আজ ওসব কথা বললে সত্যি সত্যিই কিন্তু লাথি খাবি। তোরা খাস না বলে কি বাকিদের খাওয়া দেখতে পারবি না।”
মারী দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“আমি কী বলেছি? কিছুই তো বলিনি।”
মাহিমা হেসে কুটিকুটি। তার ভাইয়ের চোখ রাঙানো পাত্তাই দিচ্ছে না।
“মীরা তোর মনে আছে ওইদিন আমরা কী দেখেছিলাম? মনে নেই?”
“একশোবার মনে আছে। ওই জিনিস দেখার পর থেকেই তো আমরা ফুচকা খাওয়া ছেড়েছি।”
“তনি আপুকে বলব কী দেখেছিলাম? বলে দেই হ্যাঁ।”
“বল।”
দু’জন দুষ্টুমি করছে এটা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তনি, প্রিয়া চেতে যাচ্ছে। প্রিয়া রেগেমেগে বলল,
“ইভান ভাই তুমি তোমার আদরের বোনদের কিছু বলবে? ওরা কিন্তু আমার হাতে চড় খাবে।”
ইভান মিছেমিছি ওদের বকে দিল। কিন্তু তাতেও দু’জনের কারোরই তেমন ফারাক পড়ল না। মুবিন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সব দেখছে। কী বিচ্ছু মেয়ের দল! প্রিয়া, তনি ফুচকা খাওয়ার সময় ওরা চুপ থাকলো। মজা করার সীমাও ওরা জানে। কারো পছন্দের জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মজা করা ঠিক না। মীরা মাহিমা কিছু খায়নি। ইভান ফুচকার বিল দিয়ে ওদেরকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখে কোথায় যেন গেল। প্রায় সাথে সাথেই হাতে পাঁচ ছয়টা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে ফিরে এলো। মীরা মাহিমার কাছে এসে বলল,
“ধর।”
ওরা খুশি হয়ে সবগুলোই নিয়ে নিল। মীরা আহ্লাদে গলে নিয়ে ন্যাকামির লিমিট পার করে বলল,
“অউওও! ইভান ভাই তুমি কত ভালো। তুমিই আমার একমাত্র ভাই। এজন্যই তো আমি তোমাকে এত পছন্দ করি।”
মাহিমাও পিছিয়ে থাকল না।
“ইভান ভাই আমার নিজের ভাইকেও আমি এতটা ভালোবাসি না যতটা তোমাকে ভালোবাসি।”
আবির মাহিমার মাথায় চাটি মারলো।
“ওরে বাটপার! এই কথা আমাকেও কতবার বলেছিস তুই।”
মাহিমা মাথায় ব্যথা পেয়েছে। সে মাথায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলল,
“মন থেকে বলিনি। মুখে মুখে বলেছি।”
ইভা ফোঁস করে হেসে ফেলল। ওদের সাথে থাকলে হাসতে হাসতে ইভার পেট ফেটে যাবে। একটার থেকে আরেকটা বড় ড্রামা বাজ। ইভান বলল,
“তোরা দুইটা করে রাখ। বাকি গুলা তনি, প্রিয়াকে দে।”
মীরা দিবে না। সে সজোরে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
“জীবনেও না। ওরা ফুচকা খেয়েছে। আমরা কিছুই খাইনি। আমি দিব না।”
মাহিমাও ওর হাতের হাওয়াই মিঠাই পেছনে লুকিয়ে ফেলে বলল,
“আমিও দেব না। একটুও না।”
তনি, প্রিয়া অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে বলছে,
“ইভান ভাই তুমি এই দুই শয়তানকেই বেশি আদর করো। সবসময় ওদেরকে সব জিনিস বেশি বেশি দাও। এটা কিন্তু ঠিক না। আমরাও তোমার বোন। সব বোনদের সমান চোখে না দেখলে পাপ হবে।”
এরা কি থ্রি ফোরে পড়া বাচ্চা! কেউ দেখলে বলবে এরা সবাই কলেজ, ভার্সিটিতে পড়ে। ওদের এই খুনসুটির জন্যই ইভার এই পরিবার এত পছন্দ হয়েছে। সে সবটাই এনজয় করছে। কিন্তু মুবিন ভিন্ন গ্রহ থেকে টপকে পড়া এলিয়েনের মতো সবকিছু দেখছে। জায়িনের চেহারার ভাবে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ইভান ওদেরকে বুঝিয়ে বলল,
“হাওয়াই মিঠাই দিয়ে দে। তোদেরকে আমি আরও অনেককিছু খাওয়াবো।”
মীরা শর্ত রাখল।
“বার্গার।”
“হুম।”
মাহিও ইভানের কথা মেনে নিল। তার থেকে একটা হাওয়াই মিঠাই তনির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“বিরিয়ানি।”
মীরা তার থেকে প্রিয়াকে দিল। মীরা প্রথমে বার্গার বললেও বিরিয়ানিও তার ভীষণ পছন্দ। সে মাহিকে বলল,
“তুই আমার থেকে বার্গার খাবি। আমি তোর থেকে বিরিয়ানি। ডান?”
“ওকে ডান।”
ইভান এদের বাচ্চামি দেখে হাসছে। এই দুইটা সত্যিই পাগল। সবাই বড় হয়ে গেলেও এই দুইটা যেন কোনদিনও বড় না হয়। সবসময় এরকমই থাকে। তনি, প্রিয়া জানে এই দুইটা পাগল। তাই তারা আর তর্কাতর্কি করলো না। বাড়ির ছোটরা একটু বেশিই ভালোবাসা পায়। এটাই নিয়ম। রুশমি, মাহা বড় হলে মীরা মাহির জায়গা ওরা নিবে।
🌸
কাল হলুদ আজ মীরা মাহিমা বাড়িতে কাউকে না জানিয়েছে ইভা আপুদের বাসায় চলে এসেছে। আসলে ওরা দেখতে এসেছে ইভা আপুদের বাড়ি কীভাবে সাজাচ্ছে। ওদের পেয়ে ইভা ভীষণ খুশি।ছাঁদে হলুদের স্টেজ বেঁধেছে শুনে দু’জনই দৌড়ে চলে এলো। মীরা আগে আগে ছুটছে। মাহিমা ওকে ধরতে পারছে না। দু’জন প্রতিযোগিতা করে ছাঁদে আসতে গিয়ে মীরা সিঁড়ি মাথায় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল। পেছনে মাহিমা ছিল। মীরা মাহিমার উপরে পড়ে ওকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। থমকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য জায়িন হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে দেখছে। এরা এখানে কোত্থেকে এসেছে? পড়ে গিয়ে দু’জনই ওরে বাবাগো, ওরে মাগো করছে। চার পাঁচটা সিঁড়ি গড়িয়ে পড়েছে। ব্যথা পেয়েছে এটাই স্বাভাবিক। মীরা কোমর ধরে ব্যথায় মুখ কুঁচকিয়ে বলে উঠল,
“ও আল্লার, এই বয়সেই আমার কোমর গেল রে।কোন কানার বাচ্চা হ্যাঁ! চোখে দেখতে পাস না? ও বাবা, আমি এখন হাঁটব কীভাবে? বাড়ি ফিরব কীভাবে?”
মীরা তার উপর পড়েছে। তাই মাহিমার সব রাগ মীরার উপরে। সে-ও ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে বলল,
“হারামির বাচ্চা। মোটির ছাও। তুই আমার উপর পড়লি কোন দুঃখে? তোর নায়কের উপরে পড়ার শখ আমাকে দিয়ে মিটালি কেন? ও আল্লাহ, আমার ঠ্যাং মনে হয় ভেঙে গেছে। আমার বিয়েতে নাচা চাঙ্গে উঠেছে।”
“ভাঙা ঠ্যাং নিয়েও ন্যাংড়াতে পারবি। কিন্তু আমি ভাঙা কোমর নিয়ে উঠে দাঁড়াব কীভাবে?”
পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েও এদের মাথায় আজেবাজে খেয়ালই আসছে। এমন না যে আমাদের সাথে আরও খারাপ কিছু হতে পারতো। হাত পা ভাঙতে পারতো। জায়িন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী দরকারে নিচে আসছিল ওটাই ভুলে গেল। জায়িন গটগট করে আবার উপরে চলে যাচ্ছে শব্দ পেয়ে মীরা খেঁকিয়ে উঠল,
“কেমন মানুষ রে! মানবতা নেই? দুইটা মেয়েকে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েও একটু অপরাধবোধ হচ্ছে না। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে তো দূরের কথা। আমরা ঠিক আছি কি-না এই কথাটাও জিজ্ঞেস করলো না। মানুষ না অন্য কিছু?”
জায়িন থেমে গেল। মীরা কথাগুলো বেশ রেগেই ঝাঝের সাথে বলেছে। কারণ সে এখনও জানে না মানুষটা কে? জায়িন ফের একবার লম্বা করে শ্বাস টেনে উপরে না গিয়ে নিচে নামতে লাগলো। মীরা এখনও কোমর ডলছে। মাহিমা অল্প ব্যথা পেয়েছে। সে জিজ্ঞেস করল,
“তুই ঠিক আছিস মীরা?”
“জানি না রে। উঠে দাঁড়ালে বলতে পারবো।”
মীরার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কারো গম্ভীর গলা শোনা গেল।
“ওঠো দেখি। হাড়গোড় ভেঙে থাকলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
চলবে…