মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-২৫

0
549

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা মন খারাপ করে চকিতে বসে আছে। কারণ এদিকে ফাহিমের সাথে রুবির বিয়ের আয়োজন চলছে। কোন মেয়ে পারে নিজের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে এভাবে চেয়ে চেয়ে দেখতে? ইভানাও পারল না। খুব রাগ হতে লাগল তার৷

রাবেয়া বানু অতি উৎসাহের সাথে বিয়ের সব কাজ করে চলেছেন। ইভানা একবার ঐদিকে দেখল তপ্ত শ্বাস ফেলে। তার ইচ্ছা করছে রাবেয়া বানুকে জ্যা’ন্ত চিবিয়ে খেতে। আজ রাক্ষ’সী বা নর’খা’দক হলে সে নিশ্চয়ই এই কাজটি করে ফেলতো৷ শুধু মানুষ বলেই নিজের এই মনের ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারছে না৷ তদুপরি ইভানা মনে মনে বলল,
‘খুব আনন্দ আপনার তাই না? সব আমি বের করছি। খুব সখ আমার জামাইয়ের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবে। আজ এমন ব্যবস্থা করব যে বিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, বিয়ের নাম শুনলেও ভয় পাবেন।’

ইভানা নিজের ফোন বের করল। অতঃপর কাঙ্খিত নম্বরটিতে ম্যাসেজ করে বলল,
‘সব কিছু রেডি তো? আমি যেভাবে বলেছিলাম সেভাবেই কিন্তু সব করতে হবে।’

ফিরতি ম্যাসেজ আছে,
‘কোন চিন্তা করবেন না ম্যাম। আমরা অলরেডি গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে। যথাসময়ে ওখানে পৌঁছে যাব। তারপর শুরু হবে টুইস্ট।’

ম্যাসেজটি দেখে ইভানা আনমনে হাসে৷ এরমধ্যে সে খেয়াল করে না ফারজানা বেগম কখন তার পাশে এসে বসেছেন। ইভানাকে হাসতে দেখে তিনি ভাবলেন মেয়েটা হয়তো অধিক শোকে বোধশক্তি হারিয়েছ। তাই তিনি ইভানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘জানিনা কি থাইকা কি হইয়া গেল। আমার পোলাটারে ওরা এইভাবে ফাসাইয়া দিল। ফারহানকে আমি সব জানাইছি। ওর কিছু জরুরি কাজ শেষ কইরা আইজ রাতের মইধ্যে চইলা আইবো। তুমি চিন্তা কইরো না। ফারহান নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবে।’

ইভানা তাকালো ফারজানা বেগমের দিকে। অতঃপর হালকা হেসে বললো,
‘আপনার বড় ছেলেকে কিছু করতে হবে না। উনি এখানে পৌঁছানোর আগেই আমি সব ব্যবস্থা করে বলব।’

ইভানার কথা শুনে ফারজানা বেগম বুঝতে পারলেন এই মেয়ে নিশ্চয়ই কোন পরিকল্পনা করেছেন। তাই হয়তো এরকম ভাবে কথা বলছে। ব্যাপারটা ভেবে তিনিও নিশ্চিন্ত হলেন। এই বিয়েটা যাতে কোনভাবে না হয় এটাই এখন তার একমাত্র চাওয়া।

৪৯.
রাবেয়া বানু যেন কোনভাবে জানতে পেরে গেলেন ফারজানা বেগমের বড় ছেলে ফারহান আজ রাতেই আসছে। তিনি এটা জানেন যে ফারহান একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তাই তিনি এবিষয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চান না। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তারপর যা হবার হবে। সে কারণে তিনি চাচ্ছেন বিকেলের মধ্যে বিয়েটা দিয়ে দিতে। সেই অনুযায়ী সব পরিকল্পনা করে নিয়েছেন।

আশেপাশের জনা কয়েক প্রতিবেশী ও গ্রামের মুরব্বিরা সবাই উপস্থিত হয়েছে ইতিমধ্যে। রাবেয়া বানু তাদের সবার সামনে আর্জি পেশ করে বলেন,
‘আপনেরা তো জানেন ঐ পোলা কতোটা ক্ষমতাধর। ওর ভাই একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তাই আমার ভয় কইরছে যে কোনভাবে যেন ওরা টাকার জোরে কিছু না করে। তাই আপনেরা একটু দেখুন তাড়াতাড়ি যদি বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়। নইলে যে আমার মাইয়ার কপাল পু’ড়ব।’

রাবেয়া বানুর কথায় সবাই সহমত পোষণ করেন। রহিম মিয়াও ততক্ষণে নিজের স্ত্রী এবং মেয়ের কথায় ভুল বুঝেছেন। যার ফলে তিনিও নিজের মেয়ের ই’জ্জত বাঁচাতে দ্রুত বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছেন। এসব ঘটনা ইভানার সামনেই ঘটে যাচ্ছে। রাবেয়া বানুর এই চাল খুব দ্রুতই ধরতে পারল ইভানা৷ এই মহিলা নিশ্চিতভাবেই ভীষণ ধূর্ত প্রকৃতির। তাই এমন কিছু যে তিনি করবেন সেটা ইভানা ভালোই বুঝতে পারছিল। এখন এসবে বিচলিত নয় সে। কারণ কি করতে হবে সেটা তার ভালোই জানা আছে।

ফাহিম রুমে বসে ছিল। খুব খারাপ অনুভূতি হচ্ছে তার। কোন দো’ষ না করেই আজ এভাবে ফে’সে গেল সে। ফাহিমের কোন ইচ্ছাই নেই ঐ রুবি নামের মেয়েটাকে বিয়ে করার। কারণ মেয়েটা তাকে বা’জে ভাবে সবার সামনে অপমানিত করেছে। এরজন্য ফাহিম জে’ল খাটতেও রাজি। তাছাড়া ফাহিম এখন মনেপ্রাণে ইভানাকে ভালোবাসে। ইভানার যায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করাও তার জন্য কঠিন। তবে ফাহিম এখনো ইভানার উপর ভরসা করে আছে। ইভানা তাকে যখন কথা দিয়েছে এই বিয়েটা হতে দেবেনা তখন কোন কিছুর বিনিময়েই দেবে না।

এরমধ্যে ইভানা ফাহিমের রুমে প্রবেশ করল। ইভানাকে দেখেই ফাহিম এগিয়ে গেল তার দিকে। অতঃপর বলল,
‘ইভানা,,, তুমি কি করে বিয়েটা আটকাবে কিছু ভেবেছ? আমার পক্ষে তুমি ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’

‘আপনি শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনার বিয়ে ঐ রুবির সাথে হবে না।’

বলেই ইভানা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফাহিম ইভানার কথার ভরসাতেই রইল।

৫০.
ফাহিমের এখন প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে ইভানার উপর। মেয়েটা তাকে কথা দিয়েছিল সে কিছুতেই ফাহিমের সাথে রুবির বিয়ে হতে দেবে না। কিন্তু এখনো তো তার কোন নামগন্ধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই যে ইভানা ফাহিমের রুম থেকে বেরিয়ে গেছে তারপর থেকে আর তার খোঁজ নেই। এরমধ্যে কিছু ছেলে এসে জোরপূর্বক ফাহিমকে ধরে বাইরে নিয়ে গেলো। ফাহিম দেখলো একটি চেয়ারে মাথায় ঘোমটা দিয়ে লাল শাড়ি পড়ে একটি মেয়ে বসে আছে। ফাহিম বুঝল মেয়েটা রুবি। ফাহিমের রাগ বাড়তে লাগল। ছেলেগুলো জোরপূর্বক ফাহিমকে মেয়েটির পাশের চেয়ারে বসাল।

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবে এমন সময় ফাহিম বলে উঠল,
‘বন্ধ করুন এসব। আমি বিয়ে করব না।’

রাবেয়া বানু চেচিয়ে বলে উঠলেন,
‘আমার মাইয়ার এতবড় সর্ব’নাশ কইরা এখন তো এসব কইলে শুনবো না। তোমাকে তো,,,”

রাবেয়া বানুর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই একটা গু’লির শব্দ শোনা গেল। ভয়ে কেপে উঠল সবাই।

আশেপাশে উপস্থিত সবাই পিছনের দিকে তাকালো। সকলের দৃ’ষ্টি অনুসরণ করে ফাহিমও তাকালো। তাতে যা দেখল সেটা চমকে দেওয়ার মতোই।

ইভানা এদিকেই এগিয়ে আসছে। তার হাতে বন্দু’ক। সে একা নয় সাথে বন্দু’কধারী পুরো একটি গ্যাং।

ইভানা এগিয়ে এসে সোজা ব’ন্দুক তাক করলো রাবেয়া বানুর ক’পালে। ভয়ে শিউরে উঠলো রাবেয়া বানু। আশেপাশে উপস্থিত সবাই ভীষণ ভয় পেয়েছে। কিন্তু ইভানার সাথে থাকা বন্দু’কধারী গ্যাং এর ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারছে না।

ইভানা রাবেয়া বানুর ক’পালে ব’ন্দুক ঠেকিয়ে বলল,
‘ভালো চাইলে আমার স্বামীকে কিভাবে ফা’সিয়েছেন সেটা সবার সামনে স্বীকার করুন। না’হলে গু’লি করে আপনার খু’লি উড়িয়ে দেবো।’

রাবেয়া বানু তড়তড় করে ঘামতে লাগলেন। জীবন বাঁচানো ফরজ। যদি বেঁচেই না থাকেন তাহলে নিজের মেয়ের সাথে বড়লোক ছেলের বিয়ে দিয়ে কি লাভ? এটা উপলব্ধি করতে পেরে রাবেয়া বানু সবার সামনে নিজের সব দোষ স্বীকার করে নিল।

ইভানা হেসে বলল,
‘বাহ, নকল ব’ন্দুকের ভয়ে তাহলে আসল সত্য সামনে এলো।’

‘মানে?’

‘এখানে সব ব’ন্দুক নকল। আর এনারা সবাই থিয়েটারের লোক।’

‘তাহলে শব্দটা কিসের আছিল?’

‘সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে করিয়েছি।’

ইভানার এই বুদ্ধি দেখে ফাহিম মনে মনে খুব প্রশংসা করল। রহিমা মিয়া এগিয়ে এসে রাবেয়া বানুকে এলো’পাথারি মা’রতে লাগলেন। অতঃপর রুবিকেও একইভাবে প্র’হার করলেন৷ এসব দেখে ইভানা, ফাহিম, ফারজানা বেগম সবাই শান্তি পেলো।

গ্রামে আবার বিচারসভা বসল। যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো রুবি ও রাবেয়া বানুকে মাথা ন্যা’ড়া করে গোটা গ্রাম ঘুরানো হবে। এসবে ইভানা, ফাহিম কারো কোন আগ্রহ নেই৷ রহিম মিয়া তাদের কাছে ক্ষমা চাইলে ফারজানা বেগম কিছু কথা শুনিয়ে দেন। অতঃপর সবাই মিলে গ্রাম ত্যাগ করে শহরের দিকে রওনা দেয়। ফেলে রেখে যান কুসুমপুর গ্রামের কিছু বি’শ্রী স্মৃতি।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨