মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-১+২

0
952

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_1

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আরজু আছে। গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা তার।ফর্সা মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। রোদে কিছুক্ষণ দাড়ালেই তার এই অবস্থা হয়।ঠিক এই কারণেই গ্রীষ্মকাল তার ভীষণ অপছন্দ।সে বারবার হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে সময় দেখে নিচ্ছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর রাস্তার অপজিটে কাউকে দেখে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। হয়তো তার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। মানুষটি রাস্তা পার হয়ে তার সামনে এসেই দুই কানে হাত দিয়ে সরি বলতে লাগলো। এতক্ষণ মানুষটির উপর ক্ষিপ্ত থাকলেও এই মুহূর্তে দুই কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা তার কাছে ভীষণ কিউট মনে হচ্ছে। কিউট মেয়েদের এ ধরনের অ্যাক্টিভিটি গুলো তাদের কিউটনেস আরও বাড়িয়ে দেয়। জারাকে এখন ঠিক তেমন কিউট লাগছে।আরজু নিজের কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললো

-“এই রোদের মধ্যে আমি 20 মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি আর তোর এতক্ষণে আসার সময় হলো?”

-“আচ্ছা সরি বাবা। এখন চলত শপিং শেষ করে আবার ক্লাসে যেতে হবে।”

-“নেক্সট টাইম আমি আর তোর কোন শপিং-এ যেতে পারবো না।”

জারা আরজুর গাল টেনে আদুরে গলায় বলল
-“আমার কিউটি পাই রাগ করিস না।তোর চয়েজ অনেক ভালো এইজন্যই তো তোকে নিয়ে যাই।”

-“হয়েছে আর মাখন মারা লাগবে না চল। গরমে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।”

-“আচ্ছা বাবা তোকে মলে যেয়ে কাশ্মীরি ফালুদা খাওয়াবো।একদম ঠান্ডা হয়ে যাবি।”

একটা রিকশা ডেকে দুই বান্ধবী চলে গেল শপিং মলের দিকে।

ব্যাস্ত শহরের ট্রাফিক ঠেলে ক্যাম্পাসে এগিয়ে চলছে আরজু আর জারা।এই দুজন এক সাথে হলে যেনো কথার বহর ছুটে।গলায় গলায় ভাব এদের।ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই জারার সাথে বন্ধুত্ব হয় তার। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট তারা।এদের বন্ধু মহল আবার বেশ বড়ো।পুরো গাং নিয়ে চলে।আজকাল এদের মধ্যে সিনিয়র সিনিয়র ভাব চলে এসেছে।মাঝে মাঝে জুনিয়রদের রাগিং দিতে দেখা যায়।ঠিক যেমনটা তারা ফেস করেছিলো যখন ফ্রেশার ছিলো।

ক্যাম্পাসে পৌঁছেই দেখলো মাঠে বসে আছে ফুয়াদ, রামিম,শুভ আর সাবিহা।শুভ আর আরজু স্কুল ফ্রেন্ড।সেই ছোট থেকেই তাদের বন্ধুত্ব।ভাগ্যক্রমে তারা একই ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে চান্স পেয়েছে।বাকি সবার সাথে এখানে এসেই পরিচয়।

জারা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।তার বাবা একজন শিল্পপতি।মা ডক্টর।ছোটবেলা থেকেই সে অতি আদরে বড়ো হয়েছে।লেখাপড়ায় তার তেমন মন নেই।ছোটবেলা থেকেই তার মডেলিংয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল।সে বেশ কয়েকটা টিভিসি তে কাজ করেছে।সে ভীষণ ফ্যাশন সচেতন।

সাবিহা উচ্চ মধ্যোবিত্ত পরিবারের মেয়ে।বাবা মায়ের বড়ো সন্তান সে।তার ছোট একটা বোন আর ভাই আছে।বাবা একজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।বেশ সচ্ছল তার পরিবার।বাবা মায়ের আদরের মেয়ে সে।জীবনে কোনদিন কোনো অভাব তাকে ছুঁতে পারেনি।বন্ধু মহলে সবাই তাকে বেশ পছন্দ করে।

ফুয়াদ কয়দিন পর পর প্রেমে পরে।কিন্তু কোনো সম্পর্কই তার দুই তিন মাসের বেশি চলে না।গ্রুপে সবাই তাকে প্লে বয় বললেও সে নিজেকে প্রেমিক পুরুষ দাবি করে।আসলে সে কখনোই সিরিয়াস রিলেশনে যায়না। প্রেম জিনিসটা তার কাছে সম্পূর্ণ টাইমপাস।তার গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়।এই শ্যাম বর্ণের সুদর্শন ছেলেটার পেছনে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।ফ্লার্ট করতে সে উস্তাদ।তাছাড়া ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে।

আরজু আর জারাকে দেখেই রামিম বললো
-“এইতো এসে পড়েছে দুই বান্দর।”

জারা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো
-“শালা মেল ফিমেল বুঝে না। বান্দর হবেনা বান্দরনী হবে।”

শুভ মুচকি হেসে বললো
-“যাক এটাতো এগ্রি করলি যে তোরা বান্দরনী।”

-“তুই একটা হুতুম পেঁচা।”

আরজু বিরক্ত হয়ে বললো
-“এই থামবি তোরা?আসতে না আসতেই ঝগড়া শুরু।”

রামিম হেসে বললো
-“আজ কি তোদের ক্লাস করার ইচ্ছা আছে নাকি মাঠে থাকবি।”

ফুয়াদ বললো
-“আজ কাউকে রেগিং দিতে মন চাইছে।অনেক ফ্রেসার পোলাপান ঘুরে বেড়াচ্ছে।একটু এদের ভার্সিটিতে উঠার ফিল দিতে হবে।”

আরজু বিরক্ত হয়ে বললো
-“তোদের সমস্যা কি? বাচ্চা গুলোকে ফেসাদে ফেলে কি মজা পাস?”

জারা মুচকি হেসে বলল
-“আরজু তুই চুপ যা।আমাদের ও সিনিয়ররা অনেক প্যারা দিছে। এখন আমাদের ও দিন এসেছে।”

ঠিক তখনই তাদের সামনে এসে দাড়ালো রিমি।তাদের গ্রুপের একমাত্র সিরিয়াস আর পড়ুয়া মেয়ে।চশমা পড়ে যার জন্য পরুয়া ভাবটা বেশ ভালো বুঝা যায়। তার বাবা একজন সিনিয়র আর্মি অফিসার হওয়ার দরুন তাকে ছোটবেলা থেকেই বেস ডিসিপ্লিন মেনটেইন করে চলতে হয়েছে। অত্যন্ত মেধাবী একজন স্টুডেন্ট।তাকে দেখে ফুয়াদ বললো

-“চলে এসেছে আমাদের বিদ্যাসাগর।কিরে আজ এতো দেরি কেনো?বই পড়তে পড়তে কি রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিস?”

রিমি বিরক্ত হয়ে বললো
-“বাজে কথা বন্ধ কর।আমি না পড়লে তোরা সব ফেল মারতি।তোদের নোটস করে না দিলে ফার্স্ট ইয়ারেই পড়ে থাকতে হতো।”

শুভ মুচকি হেসে বললো
-“একদম ঠিক।তুই ছাড়া আমরা আসলেই অচল।”

এই কথায় রিমি একটু লজ্জা পেলো।শুভর প্রতি তার অদ্ভুদ একটা অনুভুতি কাজ করে।এই অনুভূতিটা ঠিক সেদিন থেকে যেদিন শুভ প্রথম এসে তার সাথে বন্ধুত্ব করে।
আজও তার মনে আছে সে দিনের কথা।

রিমি ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট একটা মেয়ে। কথা কম বলে,মানুষের সাথে সে খুব সহজে মিশতে পারে না। যার কারণে স্কুল লাইফ থেকেই তার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা নিতান্তই কম। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরও সে সবার সাথে ঠিক ভাবে মিশতে পারতনা। ক্লাস শেষ করে সারাক্ষণ লাইব্রেরীতে বই নিয়ে পড়ে থাকত। বেশ কিছু দিন পর্যন্ত ভার্সিটিতে কারো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।

এক দিন লাইব্রেরীতে বসে সে কিছু নোটস লিখছিলো। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। রিমি বসে কিছুক্ষণ বৃষ্টি উপভোগ করে তারপর আবার নোটস লিখায় মনোযোগ দিল। হঠাৎ করেই তার পাশের চেয়ারে কেউ একজন বসে পড়ে। রিমি পাশে তাকাতেই কিছুটা থমকে যায়। উজ্জল শ্যাম বর্ণের একজন পুরুষ তার পাশের চেয়ারে বসে সামনের চুল গুলিতে বেশ কয়েকবার হাত বুলাচ্ছে। শুভ্র রঙের শার্ট টি তার গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। তার মুখে বিন্দু বিন্দু পানি। চুল গড়িয়ে কয়েক ফোটা পানি পড়ছে। রিমি বুঝতে পারলো ছেলেটার বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা। হঠাৎ করে ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সে হাসিতে কি ছিলো রিমির জানা নেই কিন্তু সেদিন সে বুঝতে পেরেছে কারো হাসি তার মনে গভীর দাগ কেটেছে। সেই মুহুর্তেই তার মনে হয়েছে সামনে বসা পুরুষটি তার জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ সুদর্শন পুরুষ।
রিমির ঘোর কাটে ছেলেটির কথা।

-“বৃষ্টি আমার ভীষণ অপছন্দ। রাস্তাঘাট কাদায় মাখামাখি ছি! কি বিচ্ছিরি লাগে।”

রিমি তখনও অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটি আবার বলেছিল
-“বাই দ্যা ওয়ে তুমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের না?”

রিমি তখনও বোকার মত তাকিয়ে ছিল।
ছেলেটি আবার বললো
-“আরে সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের কিনা?”

রিমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
-“আমি শুভ। তোমার নাম কি মিস চশমিশ?”

-“জি আমি রিমি।”

এভাবেই তার সাথে শুভর অনেকক্ষণ কথা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে শুভর একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর শুভ্র মাধ্যমে সেই পুরো গ্রুপের সাথে জয়েন হয়ে যায়। এই উচ্ছ্বসিত মানুষগুলোর পাশে থেকে সে নিজেও অনেকটা বদলে গেছে। এই মানুষগুলোকে পাশে পেয়ে সে জীবনটাকে উপভোগ করতে শিখেছে। সবার সাথেই তাঁর বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কিন্তু শুভর প্রতি তার অনুভূতি তা অত্যন্ত প্রখর।
___________________
ফুয়াদ জারাকে ধাক্কা দিয়ে গেটের দিকে দেখালো।আর বললো
-“আজকের মুরগী পেয়ে গেছি।”

ফুয়াদের কথায় সবাই গেটের দিকে তাকালো।দেখলো একটা লম্বা করে ছেলে ঢুকছে। জারা পলকহীন সে দিকে তাকিয়ে রইলো।অতি সুদর্শন এক ছেলে।পরনে ধূসর শার্ট।সাবিহা বললো
-“চেহারা তো পুরাই বাচ্চা।একে ছার।মনে হচ্ছে কিছু বললেই কেদে দিবে।”

জারা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো।একটা জুনিয়র ছেলের দিকে এই ভাবে সে তাকিয়ে ছিল ভেবেই অবাক হলো।ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো

-“কিসের বাচ্চা?গেটআপে মনে হচ্ছে কোনো ধনীর দুলাল।এই গুলা আবার নেকা হয়।কিছু বললে দেখবি বাপের কাছে কেদে নালিশ দিবে।”

বলেই হেসে ফেললো।ফুয়াদ বাঁকা হেসে বললো
-“ঠিক তোর মতো তাই না?”

জারা রেগে বললো
-“আমি নেকামি করি?”

-“না তো।তুই হলি নেকার রানী।”

জারা ফুয়াদের পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলো।ফুয়াদ ‘ আহহ ‘ শব্দ করে উঠলো।মনে মনে জারাকে কয়েকটা গালি দিয়ে চোখ গরম করে তাকালো।
তারপর সেই ছেলেটাকে হাতের ইশারায় ডাকলো।ছেলেটা সামনে আসতেই ফুয়াদ বললো

-“নাম কি?”

ছেলেটা কয়েক পলক সবার দিকে তাকালো।তারপর বললো
-” নাহিয়ান জাহিদ।”

-“কোন ডিপার্টমেন্ট?”

-“বিবিএ”

-” গুড।চেহারা তো ভালই। গফ আছে?”

ছেলেটা মুচকি হেসে বললো
-“না ভাই।”

ফুয়াদ এবার বাঁকা হেসে বললো
-“ব্যাপার না।আমরা সিনিয়র ভাই ব্রাদার্সরা কেনো আছি?প্রেম করার টেকনিক শিখিয়ে দিব। ওই জারা এই দিকে আয়।”

জারা কপাল কুঁচকে তাকালো।ফুয়াদ মুচকি হেসে বলল
-“ঝটপট বড় আপুকে প্রপোজ করে দেখাও তো। দেখি তোমার স্কিল কেমন?”

জারা ক্ষিপ্ত হয়ে ফুয়াদের দিকে তাকালো।এই ফাজিল এই ভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে?শেষে কিনা জুনিয়র ছেলেকে প্রপোজ করতে বলছে।

ছেলেটা একপলক জারাকে পর্যবেক্ষণ করে জারার দিকে এগিয়ে গেলো।জারা নিজেও আগ্রহী এই ছেলে কি করে দেখার জন্য।তার বিশ্বাস এই ছেলে কিছুতেই তাকে প্রপোজ করতে পারবে না।কিন্তু তাকে অবাক করে দিকে ছেলেটা তার একদম কাছাকাছি দাড়িয়ে বললো

-“তোমার চোখজোড়া ভীষণ মায়াবী।পলকহীন আমার দিকে তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি জোড়ায় সারা জীবন আটকে থাকতে চাই।ঠিক সেই মুহূর্তের মুগ্ধতা সারা জীবন তোমার দৃষ্টি জোড়ায় দেখতে চাই।ঠোঁটের নিচের তিলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।হবেকি আমার প্রিয়তমা?”

কথাটা বলেই জারার হাত ধরে চুমু খেলো। মুহূর্তেই জারার পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো।জারা এতক্ষণ অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এই ছেলে তো অনেক সেয়ানা।মুখে ইনোসেন্ট ভাব থাকলে কি হবে আসলে বেশ চতুর।পরক্ষণে একটু লজ্জা পেলো।সে তখন এই ছেলের দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে ছিলো যা ছেলেটা খেয়াল করেছে।সে দ্রুত দূরে সরে দাড়ালো।আরজু ,রিমি ,সাবিহা তারাও অবাক।তারা তো ভেবেছে এই ছেলে প্রপোজ করতেই পারবে না।তার আগেই ভৌ‌ দৌড় দিবে।কিন্তু এই ছেলেটা পুরাই আগুন।সোজা হাতে কিস করে দিলো।ফুয়াদ বুজলো এই ছেলে সহজ জিনিস না।দেখে মনে হয় ভেজা মাছ উলটে খেতে জানে না।কিন্তু এই ছেলেটা ফ্লার্ট করতে তার থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে।জারার মুখ দেখে ফুয়াদের ভীষণ হাসি পেলো।বেশ আতংকে আছে বেচারী।

শুভ মুচকি হেসে জাহিদের কাধে হাত রেখে বলল
-“ছোট ভাই তোমার ক্লাসের কোনো প্রয়োজন নেই।তুমি উল্টো আমাদের ক্লাস নিতে পারবে।”

জাহিদ বাঁকা হেসে জারার দিকে তাকালো। জারা এখনো আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে আছে।জাহিদ ফুয়াদকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“ভাইয়া সে কিন্তু আর আমার দৃষ্টিতে বড়ো আপু নেই।”

কথাটা শুনেই ফুয়াদ হো হো করে হেসে উঠলো।এই ছেলে যে জারার পিছু সহজে ছাড়ছে না তা সে বেশ বুঝতে পারছে।তবে বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং হবে।

জাহিদ যাওয়ার আগে জারাকে একপলক দেখে চোখ টিপ মেরে চলে গেলো। জারা এই ছেলের কাণ্ডে থতমত খেয়ে গেলো।

আরজু হেসে জারাকে বললো
-“এই পোলা তো সেই দোস্ত।তোর সাথে বেশ মানাবে।”

জারা রেগে আগুন হয়ে আরজুর দিকে তাকালো।যেনো এই চোখ দিয়েই জারা সবাইকে ভৎসো করে দিবে।
____________________
পরদিন ক্যাম্পাসে ঢুকেই তাদের হাঁটার গতি কমে গেলো।সামনে স্টুডেন্ট দের ভীড়। জারা কপাল কুঁচকে বললো

-“ক্যাম্পাসে কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি?”

আরজু বললো
-“এ আর নতুন কি প্রায়ই তো হয়।”

তারা নিজেদের কৌতহল কমাতে একটু সামনে এগুলো।ভিড়ের মাঝে ঠেলে ঢুকেই দেখলো একটা ছেলেকে কয়েকটা ছেলে মিলে বেদম পেটাচ্ছে।ছেলেটার নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।ছেলেটা তাদের সিনিয়র।ছেলেটার নাম রিপন।ভীষণ বেপরোয়া ভাবে চলে এই ছেলে।কয়েকদিন আগেও আরজুকে রাস্তায় বেশ বিরক্ত করেছিলো।ছাত্র রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।বড়ো বড়ো নেতাদের সাথে তার পরিচয়।প্রায় সময়ই ক্যাম্পাসের মেয়েদের সাথে মিস বিহেভ করে,মেয়েদের উত্যক্ত করে। কিন্তু তার ক্ষমতার জন্য কেউ কিছু বলতে পারে না।

ঠিক তখনই তাদের পেছনে এসে দাড়ালো ফুয়াদ।মুখে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে মুচকি হেসে বলল

-“যা বাবা আজ তাহলে এই রিপন ব্যাটার উইকেট পড়ল।এই শালাকে দেখলেই আমার শরীরে আগুন ধরে যায়।সিনিয়র বলে কিছু বলতে পারিনা।কিন্তু আজ শিক্ষা হবে।একমাত্র নাহিদ ভাইয়ের পক্ষেই সম্ভব একে শিক্ষা দেয়া।”

কথাটা সোনা মাত্রই আরজুর বুক ধকধক করতে লাগলো।সে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো।হঠাৎ চোখ আটকে গেলো কয়েকটা ছেলের পেছনে চেয়ারে বসা মানুষটির দিকে।শুভ্র পাঞ্জাবী পরিহিত একজন সুপুরুষ পায়ে পা তুলে বসে ফোন কথা বলছে।কথা বলার সময় বার বার হাত নাড়ছে।মানুষটির মুখে রাজ্যের বিরক্তি।

জারা আরজুর কাধে ধাক্কা দিয়ে বললো
-“সপ্নের রাজ্যে থেকে ফিরে আয়।”

জারার কথায় আরজুর ধ্যান ফেরে। জারা বলে
-“সামনে ক্রাশ কে দেখে ফিট খাসনা।আমি তখন সামলাতে পারবো না।”

আরজু বিরক্ত হয়ে বললো
-“ডিস্টার্ব করিস না তো।”

-“তোর নেতা সাহেব তো দিন দিন আরো আকর্ষণীয় হয়ে যাচ্ছে।”

-“খবরদার নজর লাগাবি না।”

জারা মুখ ভেংচে বললো
-” আমাকে ধমকে লাভ আছে?তোর নেতা সাহেবকে দিনে হাজার হাজার মেয়ে নজর লাগায়।”

আরজুর মুখটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে গেলো।আসলেই এই মানুষটার দিকে হাজারো মেয়ের নজর।সে নিজেও সেই কাতারের।এই গম্ভীর মানুষটিকে দেখলেই তার সব এলোমেলো হয়ে যায়।অদ্ভুত অনুভুতির সৃষ্টি হয়। যার কোনো কূল কিনারা নেই।

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_2

নিবরাস নাহিদ একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ।বর্তমানে এই সিটির মেয়র। এক্স এমপি নিজামুল হকের নাতি সে।অত্যন্ত সৎ এবং আদর্শবান ব্যাক্তি ছিলেন নিজামুল হক।নিজামুল হক বেশ কয়েক বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।তার দুই ছেলে এক মেয়ে।তার বড়ো ছেলে নাঈম মাহমুদ একজন প্রভাবশালী শিল্পপতি।আর ছোট ছেলে নকীব মাহমুদ একজন মেজর জেনারেল আর্মি অফিসার।

নাঈম মাহমুদের বড়ো ছেলেই নাহিদ।ছাত্র জীবন থেকেই সে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।তার একমাত্র অনুপ্রেরণা ছিলো নিজামুল হক।দাদাকে দেখেই তার পলিটিক্সে আসা।কয়েক বছর আগেই সে সিটির মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।রাজনৈতিক পরিবারের হওয়ায় খুব অল্প বয়সেই সে এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে। অত্র এলাকায় তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।তরুণ প্রজন্মের কাছে তার ক্রেজ একটু বেশি।কারণ হাজারো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের মাঝে এমন সুদর্ষণ তরুণ নেতা খুব সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।
নাহিদ অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ।অনেকেই তাকে ভীষণ ভয় পায়।কারণ সে বদরাগী।ছাত্র জীবনে বেশ কয়েকবার জেলে গেছে সে।মিটিং,মিছিল,মারামারি আরো অনেক কারণেই।তার দাদাজান বলতেন জেলের বাতাস গায়ে না লাগলে নাকি নেতা হওয়া যায়না।

******
এই মুহূর্তে চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।শুধু রিপন নামক ছেলেটির আর্তনাদ ভেসে আসছে।আরজু এখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে।যেনো চারপাশে কি হচ্ছে সে জানেই না।এই মানুষটাকে দেখলেই সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।এইযে হাত নেড়ে হাজারো বিরক্তি নিয়ে নাহিদ কথা বলছে, এতেও সে মুগ্ধ হচ্ছে।

পাশে দাঁড়িয়ে জারা মুচকি মুচকি হাসছে। তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী যে নেতা সাহেবের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তা অনেক আগে থেকেই জানা তার। ইসস!! এই নেতা সাহেব যদি সত্যিই তাদের জিজু হয়ে যেত তাহলে বিষয়টা বেশ ভালই জমে যেত। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব?

নাহিদ কল কেটে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।রিপন নামের ছেলেটি পাশে এসে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো।ততক্ষনে রিপনের কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে।নাক মুখ থেতলে গেছে।সে ভীত চোখে নাহিদের দিকে তাকালো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

-” ভ..ভাই মাফ করে দেন।”

নাহিদ বিরক্তি নিয়ে বললো
-“তোর বুকের পাটা আছে বলতে হয়। আমার এই এলাকায় দাঁড়িয়ে তুই মেয়েদের ডিস্টার্ব করিস? আর কেউ কিছু বলতে আসলে ছেলেপেলেদের গায়ে হাত তুলিস? তোর পিছনে কত বড় নেতারা দাঁড়িয়ে আছে এবার সেটা আমিও দেখতে চাই।”

নাহিদ এবার দাড়িয়ে সবার উদ্দেশে বললো
-“আমার এলাকায় এই ধরনের অন্যায় কাজ করার আগে অবশ্যই এই ছেলের পরিণতির কথা ভেবে নিবে।”

কথাটা বলেই সে চোখে সানগ্লাস পরে নিলো।আর পাশের ছেলেটাকে ডেকে বললো
-“আকাশ!”

-“জী! ভাই।”

-“এই বেয়াদবের চিকিৎসার ব্যবস্থা কর।আর তোকে দায়িত্ব দিলাম।অত্র এলাকায় যদি কেউ মেয়েদের ডিস্টার্ব করে বা কোনো অন্যায় করে তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যাবস্থা করবি।”

-” জী!! ভাই ,অবশ্যই।”

নাহিদ আর একমুহূর্ত দেরি করলো না।দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো।আর কয়েক সেকেন্ডে মধ্যে তিনটা গাড়ি সাই সাই করে বেরিয়ে গেল।

আকাশ রিপনকে ধরে নিয়ে গেলো হসপিটালের দিকে।ধীরে ধীরে আসে পাশের ভীর কমতে শুরু করলো। জারা মুচকি হেসে আরজুকে বললো

-“আজব ক্যারেক্টার নেতা সাহেবের। নিজেই ছেলেপেলে দিয়ে মার খাইয়ে আবার হসপিটালে পাঠিয়েছে। আমি তো ওনার কাজকর্ম কিছুই বুঝিনা।”

-“উনি একজন ভাল নেতা।আর ভালো মানুষ ও।”

-“ভালো মানুষ! তোর আইডিয়া আছে উনি কতবার জেলে গেছে?”

-“তাতে কি?”

ফুয়াদ জারার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো
-“ফিসফিস করে কি বলিস? আজকে ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা নাই?”

জারা মাথা ঘষতে লাগলো আর কপাল কুচকে বললো
-“শালা মাথায় মারিস কেন? এমনি আমার এই মাথায় পড়ালেখায় স্থায়ী থাকে না। তার উপর আবার মাথায় মারিস? ইসস!! এবার নিশ্চয়ই পরীক্ষায় ফেল করবো।”

কথাটা বলেই জারা হন হন করে কলেজের দিকে চলে গেল।ফুয়াদ বোকার মত সেদিকে তাকিয়ে আরজুর
উদ্দেশ্যে বললো

-“কেমন ফাজিল দেখছিস? এই বান্দরনী তো এমনি তেই পরীক্ষায় ফেল করবে অথচ দোষটা আগেই আমার ঘাড়ে দিয়ে রাখলো।”

-“আরে বাত দে।ক্লাসে চল।”

ক্লাস শেষ করে সকলে মিলে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতে বসলো। এটা তাদের জন্য রোজকার ঘটনা। ক্লাস শেষে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা বাজি না করলে এদের কারো পেটের ভাতই মনে হয় হজম হয় না।রামিম একটা স্যান্ডউইচে বাইট দিতে দিতে বললো

-“এই প্রেক্টিকাল করতে করতে জীবনটা তেনা তেনা হয়ে যাচ্ছে।এই সাইকোলজি পড়তে পড়তে একদিন আমি নিজেই সাইকো হয়ে যাবো।”

জারা হেসে বললো
-“তুই সাইকো হবি কি?অলরেডি কতজন সাইকো হয়ে বসে আছে?সেই তুলনায় তুই বেশ ভালো আর সুস্থ আছিস।”

ফুয়াদ চোখ গরম করে তাকালো জারার দিকে।বাকি সবাই মিটি মিটি হাসছে।জারা যে কথাটা ফুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেছে সেটা সবার জানা।এই দুজনের মধ্যে সপে নেউলে সম্পর্ক।
আরজুকে চুপ থাকতে দেখে শুভ বললো

-“কীরে তোর আবার কি হলো?মুখটা এমন ভেটকি মাছের মতো করে রেখেছিস কেনো?”

জারা হেসে বললো
-“আরে আমাদের ম্যাডাম তার ক্রাসকে বহুদিন পর দেখে তব্ধা খেয়ে গেছে।তাই সে আজকে বিরহ দিবস পালন করছে।”

শুভর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সে জানে আরজুর একমাত্র ক্রাশ নিবরাস নাহিদ।আর আজকে নাহিদ যে এসেছিলো সেটাও তার জানা।পরমুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো।কারণ মেয়র সাহেবের উপর অলমোস্ট সব মেয়েরাই ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।আর আরজু ও সেই দলে।তাই সে বিরক্তি নিয়ে বললো

-“কীরে?রিপন বাবাজির ধোলানি দেখে ক্রাশ কে আজ বাঁশ মনে হচ্ছে?”

আরজু মুখ গুমরা করে বললো
-“মোটেও না।বরং আমি আরো ইমপ্রেস হয়ে গেছি।”

ফুয়াদ পেটে কোল্ড ড্রিংকস চালান করে একটা ঢেঁকুর তুলে বললো
-“আমাদের সিনিয়র আপু তানিয়ার কথা ভুলে গেছিস?”

সাবিহা বললো
-“কোন তানিয়া?”

-“আরে আমরা যখন ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন উনি ফোর্থ ইয়ারে ছিলো।”

রিমি চশমা ঠিক করতে করতে বললো
-“যেই আপুটা আমাদের মেয়র সাহেবকে প্রপোজ করে রাম ধমক খেয়েছিল তার কথা বলছিস?”

ফুয়াদ কিঞ্চিৎ হেসে উৎসাহ নিয়ে বললো
-“একজ্যাক্টলি। এই কারণেই তোকে আমি ব্রিলিয়ান্ট বলি। তোর ব্রেন যে ভীষণ শার্প সেটার প্রমাণ তুই আবারো দিলি। যাই হোক।ওই আপু তো ধমক খাইছে।কিন্তু আমাদের আরজুর কপালে চার পাঁচটা থাপ্পড় লিখা আছে।”

আরজু বিরক্ত চোখে ফুয়াদের দিকে তাকালো।জারা বলে উঠলো
-“থাপ্পড় দিবে কেনো?আমাদের আরজু কি অসুন্দর নাকি?আরজুর মতো সুন্দরী মেয়ে একটা খুঁজে দেখাক না ওই মেয়র।”

-“তুই ওর মাথাটা খারাপ করে রাখছিস।তাছাড়া এই সব নেতাদের ক্যারেক্টার নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”

আরজু বিরক্ত হয়ে বললো
-“উনাকে কখনো কোনো মেয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়াতে শুনেছিস?না জেনে উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।উনি কি তোর মতো মাসে মাসে গফ চেঞ্জ করে নাকি?”

ফুয়াদ খিল খিল করে হেসে উঠলো আর বললো
-“ইসস!!! দেখ কেমন জ্বলে যাচ্ছে।ওই নেতা ফেতা ছার।আমার মতো হ্যান্ডসাম কোনো পোলা পছন্দ হলে বল লাইন করে দিবো।”

আরজু রেগে টেবিল ছেড়ে দাড়িয়ে বললো
-“আমার লাইন আমি নিজেই ক্লিয়ার করতে পারি।তোর হেল্প এর কোনো প্রয়োজন নেই।গন্ডার একটা।”

কথাটা বলেই আরজু ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলো।জারাও যেতে যেতে ফুয়াদকে দুয়েকটা গালি দিয়ে গেলো।
ফুয়াদ বিরক্তি নিয়ে বললো

-“আরজুর চামচি একটা।”

রামিম মুচকি হেসে বলল
-“মাঝে মাঝে আমার মনে হয়ে আরজু নেতা সাহেবকে নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস।”

ফুয়াদ হেসে বললো
-“আমার তেমন মনে হয়না।ওর জাস্ট অ্যাট্রাকশন কাজ করছে। তাছাড়া মেয়র সাহেবের চার্ম টাই এমন যে সব মেয়েদের আকর্ষণ করে। আরজু নিশ্চয়ই এতটাও বোকা নয় যে এরকম অসম্ভব কিছু নিয়ে সিরিয়াস হবে।”

শুভ ভিশন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। সে জানে আরজুর মধ্যে একটা ইনফ্যাচুয়েশন কাজ করছে। যেটা সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তবু তার ভীষণ খারাপ লাগে। কারণ আরজু তার প্রত্যেকটা অনুভূতির সাথে মিশে আছে।তার প্রথম বন্ধু,প্রথম ভালোবাসা সবটাই আরজু।এই মেয়েটার চঞ্চলতা তাকে বহু আগেই ঘায়েল করেছে।স্কুল লাইফ থেকে সে এই মেয়েটাকে ভালোবাসে।কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে বলতে পারেনি।কেমন যেনো একটা জড়তা কাজ করে।তবে আজকাল তার ভয় হয়। এর আগে সে আরজুকে কখনোই কোনো ছেলের প্রতি এতটা অ্যাট্রাক হতে দেখেনি। তবে আরজু যেটাতে আটকে আছে তা কখনোই সম্ভব না।কারণ নিবরাস নাহিদ অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে।আর আরজু মদ্যবিত্ত পরিবারের।

*****
বাসার ডোর বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো অবনি।আরজু জুতা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সোফার উপর ব্যাগ ছুড়ে ফেলে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। সূর্যের তীব্র রশ্মিতে তার মুখগহ্বরে লালিমা একে আছে।সে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

অবনি এক গ্লাস লেবু পানি এগিয়ে দিলো আরজুর দিকে।আরজু আড়চোখে তাকালো।অবনির মতলব কিছুই বুঝতে পারলো না।তবুও আরজু দ্রুতই সেটা সাবার করলো। এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।গরম তার কোনো কালেই সহ্য হয়না।অবনি তার পাশে বসে বললো

-“বুজলে আপু, সূর্যি মামাকে একটা ইমেইল করে জানতে হবে এই ধরণীর বুকে একজন অতি সুন্দরী রমণী তার তীক্ষ্ণতা সহ্য করতে পারে না।একদম স্ট্রবেরির মতো লাল হয়ে যায়।তার একটু তাপ কমানো উচিৎ।”

আরজু মুচকি হেসে বললো
-“হে!! সূর্যি মামা তো তোর মায়ের আপন ভাই হয় তাইনা?তোর কথা মতো নিজের তাপ নিয়ন্ত্রণ করবে।তা সূর্যি মামার ইমেইল এড্রেস জানিস তো?”

-“তো কি করবো?আমার পরীর মতো আপুকে red evil বানিয়ে ফেলছে।”

-“evil!!! ভালো তো। এখন তেল কম মার।আমি গোসলে গেলাম।সারা শরীর ঘেমে যা তা অবস্থা।”

-“জলদি আসো আপু খুব ক্ষুদা লেগেছে একসাথে লাঞ্চ করব।”

-“আচ্ছা আসছি।”

একটুপর খেতে খেতে আরজু বললো
-“খালামণি কখন আসবে?”

-“আম্মু তো বললো অনেক রাত হবে।”

-“খালামনির এই প্রফেশন আমার একদমই পছন্দ না। কাজের কোন টাইম লিমিটেশন নাই। দিন-রাত 24 ঘণ্টাই এক।”

-“হুম।আপু একটা হেল্প করবা?”

-“এইটা আমি লেবু পানি দেখেই আন্দাজ করেছি।এমনি এমনি তো আর আমার সেবা করবি না?”

অবনি করুন চোখে তাকিয়ে বললো
-“এমনটা বলতে পারলে?আমি কি তোমার খেয়াল রাখি না?গত মাসেও তোমার জন্য আমি লেবু পানি করে দিছিলাম।”

-“একদম মনে আছে।তার বিনিময়ে আমার পছন্দের ঝুমকো নিয়েছিলি।স্বার্থ ছাড়া তুই আমার জন্য কিছুই করিস না।”

-“এমন করছো কেনো?আমি মোটেও এমন না।তুমি আমার একমাত্র বোন।”

-“কি চাস সেটা বল?”

-“আসলে আপু সামনের মাসে আমাদের কলেজ থেকে পিকনিকে সিলেট নিবে।আমার সব ফ্রেন্ডরা যাবে।তুমি আম্মুকে একটু রাজি করাও।”

-“এতোদূর?খালামণি রাজি হবে কিনা সন্দেহ আছে।”

-“প্লিজ প্লিজ প্লিজ আপু। তুমি ঠিক রাজি করাতে পারবে।”

-“আমি পারবোনা।”

এবার অবনি কিছুটা রেগে গেলো।সে গম্ভীর মুখে বললো
-“তুমি যে মেয়র সাহেবের ঠিকানায় প্রতি সপ্তাহে চিঠি পাঠাও সেটা কিন্তু আম্মুকে বলে দিবো?”

আরজু অবাক হয়ে অবনি দিকে তাকালো।এই মেয়ে এই খবর জানলো কি করে?সে তো শুধু জারাকে বলেছিল।নিশ্চই এই ফাজিল তার ড্রয়ারে হাত দিয়েছে।সে অগ্নি চোখে অবনি দিকে তাকিয়ে বললো

-“তুই আমার ড্রয়ারে হাত দিয়েছিস কেনো?”

-“ফালতু কথা ছাড়ো।আম্মুকে রাজি করাবে কিনা বলো?”

-“ফাজিল মেয়ে একটা।আমি ঠিকই বলি,স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝিস না।”

অবনি খিল খিল করে হেসে উঠলো।সে যে সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছে। এখন ঠিক তার কাজ হয়ে যাবে।আরজুকে ব্ল্যাকমেইল করতে পেরে সে ভীষণ মজা পেলো।সে বুঝতে পারেনা তার বোন এমন পাগলামি কেনো করে।নাহলে সিটির মেয়রের ঠিকানায় প্রেম পত্র কে পাঠায়?

আরজু অনেকক্ষণ যাবত বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে।তার দু চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না।বার বার সে সপ্ন পুরুষটির চেহারা ভেসে আসছে।এই মানুষটি হঠাৎ করেই তার সমস্ত সত্তার সাথে মিশে গেছে। এখনো মনে পড়ে তাদের প্রথম দেখার কথা।

**********
আরজু তখন সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।শুভ স্কুল ফ্রেন্ড হলেও বাকি সবার সাথে তার নতুন বন্ধুত্ব।সেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখ।সকলে মিলে সেজে গুঁজে ভার্সিটিতে এসেছিলো।সারাদিন প্রোগ্রাম করে সন্ধ্যেবেলা সে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়েছে।শুভর কাজ থাকায় সে আগেই বেরিয়ে গেছে।আরজু চিন্তা করছে আজ তাকে খালামণি আস্ত রাখবে না। এতো দেরি হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি।আরজু ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাড়িয়েছে রিকশার জন্য।রাস্তাটাও অনেক টা জনশূন্য হয়ে আছে।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ তার কানে গোঙানোর শব্দ ভেসে আসলো।আরজু ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না এই শব্দ কোথা থেকে আসছে।সে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।পাশের গলিতে ঢুকতেই সে কিছুটা থমকে গেলো।একটা ছেলে রাস্তায় পরে আছে।ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখলো রাস্তা রক্তে ভিজে একাকার।মুহূর্তেই আরজুর সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো।তার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ সে বুঝে উঠতে পারছে না।
আরজু আর সময় ব্যায় না করে ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেলো।ছেলেটি তখনও মৃদু শব্দ করছে।আরজু দ্রুত ছেলেটির পাশে বসে বলতে লাগলো

-“আপনি ঠিক আছেন?কি ভাবে হলো এইসব?”

ছেলেটি কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু বলতে পারছেন না।আরজু খেয়াল করলো ছেলেটির মাথায় ক্ষত।যেখান থেকে রক্ত ঝরছে।আরজু দ্রুত ব্যাগ থেকে রোমাল বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে ছেলেটির মাথায় বেধে দিলো।কারণ এই ভাবে রক্ত ঝরলে ছেলেটা মারা যাবে।

আরজু আশেপাশে তাকালো।কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না।এই মুহূর্তে ছেলেটাকে হসপিটালে নেওয়া প্রয়োজন।সে তোতলাতে তোতলাতে ছেলেটিকে বললো

-“আ…আপনি প্লিজ চোখ খোলা রাখুন।আমি দেখছি কা….কাউকে পাই কি না।আপনাকে এখনি হসপিটালে নিতে হবে।”

আরজু সামনে এগিয়ে তেমন কাউকেই পেলো না।ভয়ে তার সারা শরীর শিউরে উঠলো।সে গলি ছেড়ে মেইন রাস্তায় এসে দাড়ালো।ততক্ষনে আরজুর নীল পাড়ের সাদা শাড়ী রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে।সে কি করবে, কার কাছে সাহায্য চাইবে কিছুই বুঝতে পড়ছে না।মুহূর্তেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো অতীতের কিছু স্মৃতি।

চলবে