মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-১৫

0
5452

#মুগ্ধতার__ভিরে🥀
#পর্ব_____১৫
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

এএএএএএএএএএএএএএএএএএএ,,,,,,

__হুসসসস,,,,
দ্রুত কাছে এসে এক হাত দিয়ে মাথার পিছনে চুলগুলো আঁকড়ে ধরে হিচরে কাছে টেনে আর এক হাত দিয়ে শক্ত করে মুখে চেপে ধরে বলল,,

_ ইউউউ ইডিয়েট,, এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন!!
ফিসফিস করে বলল,,,

_উম্মম্ম,,,উম্মম্ম,,উম্মম,,
এভাবে আচমকা শক্ত করে গাল চেপে ধরায় ব্যাথায় ভয়ে থরথর করে কাঁপছে নাভিলা। চোখ দিয়ে টোল টোল করে গরিয়ে অবাধ্য নোনাজল গুলো পরছে।

_এখন চুপ কেন!গলার ভলিউম কই গেলো। সব ফুসস ! কথা বলছো না যে! আর উম্মম উম্মম কী!ইডিয়েট কোথাকার।
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,

“বলতে আমারে আর দিলিই কই!বেটা খচ্চোর আমার মুখ থেকে তো আগে তোর পাথড় ঘাটের শক্ত হাত সরাহ্। তার পর নাহয় বলছি।আমার গালকে তো তোর কাছে আর গাল বলে মনে গণ্য হচ্ছে না।পুরো গালকে ভর্তা বানিয়ে ফেলছে আমুউউউউউউ”(মনে মনে)

_উম্মম,,,,,,,, উম্মম উম্মম,,,,,,
নাভিলার আবার ও ব্যাথায় কুকরিয়ে কিছুটা ছটফট করে উম্ম উম্ম শব্দ বলে উঠল,,

_আবার ও সেই উম্মম ! কী উম্মম উম্মম করছে তখন থেকেই,,,
জায়ান এভার কিছুটা বিরক্ত নিয়ে নাভিলার দিকে রুক্ষচোখে ঝুকে নিচে তাকালো বারান্দার মৃদু আলোয় তে তার হিংস্র চেহারা এভার পুরোপুরি ভাবে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ,,,

“হঠাৎ এতো কাছে আসাতে নাভিলা এভার ভয়ে এক শুকনো ঢোক দিল।হুটহাট এত কাছে আসতে হৃদপিন্ডের কম্পন জোড়ে বাড়তে লাগলো। হার্টবির্ট গুলো কেমন ডাক ঢোল বাজাছে।
ক্রমশয় কেমন ধুক ধুক ধুক করে লাফাচ্ছে মনে হচ্ছে এইতো এখনই বের হয়ে আসবে । মনে মনে যতসব দোয়াদরুদ জানা আছে তা দ্রুত পরতে লাগলো। ব্যাথা আর সহ্য করতে না পেরে শেষে কাঁদোকাঁদো হয়ে জায়ানকে এভার তার চোখ দিয়ে মুখের দিকে তাকাতে ইশারা করলো। জায়ান বিরক্তি নিয়ে নাভিলার ইশারায় ভ্রু খাদ করে মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো এতক্ষন উম্মম্ম উম্মম করার কারন।সে চট করে নাভিলার মুখ থেকে হাত নামিয়ে নিলো।এক হাত জায়গায় করে কিছুটা সরে ও দাঁড়ালো। কিন্তু নাভিলার দিকে তার তীক্ষ্ণ নজর এখনো ট্যাগ করে তাকিয়ে আছে”

ছাড়া পেতেই নাভিলা বুকে এক হাত গুঁজে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। আর একটুর জন্য মনে হচ্ছিলো এই বুঝিই এই যাত্ররায় মরেই যেতো। হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে জায়ানের উদ্দেশ্য বলে উঠল,,,

__এই ভাবে কেউ কাউকে চেপে ধরে! যদি দম আটকে বাই এনি চান্স আমি মরেই যেতাম!তখন!

_হোয়াট নোনসেন্স সামান্য মুখ চেপে ধরায় কেউ মরে যায় না ওকে।যদি এত ইজিলি মুখ চেপে ধরায় মানুষ মারাই যেতো তাহলে আর এত শত কষ্টে প্লানিং করে কাউকে নিখুঁত ভাবে মার্ডার করার মত প্লান করতে হতো না।আর আমি অতো ও জোড়ে তোমাকে ধরিনি।
স্টান হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা এ্যাটেটিউড আফতার নিয়ে বলল,

__যায় যায় তা আপনার মত শক্ত চামড়ার গন্ডার দানব বুঝবে কি করে।আপনাকে কী কখনো কেউ এই ভাবে ধরেছিলো যে বুঝবেন!কতোটা ঠিক কষ্ট হয়।আমার মুখকে তো আর অবশিষ্ট মুখ রাখেননি । একদম ফ্রিতে পেয়ে চটিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলিছেন।বাবাগো বাবা ভাবা যায় কী শক্ত আপনার হাত।

_ হোয়ায়ায়ায়ায়ায়াট কিহহহহ বললে তুমি আমাকে আমি,,,,,, আমি গন্ডার!!! ইউউউউউ
কিছুটা কাছে তেড়ে এসে বলল,,,

“নাভিলা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে দুই কদম পিছাতেই অনুভব করলো দেওয়ালের সাথে তার পিঠ একদম ঠেকে গেছে।এই যাত্ররায় বাঁচার আর উপায় তার আর নেই।পিছে কোথাও যাওয়ার আর কোনো জায়গায় ও অবশিষ্ট বাকী নেই। দেওয়ালে দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ার্ত সুরে বলে উঠল,,”

_এ এ ইইইই আ অ য়য়য় পনি এএএ এইভাবে বার বার এ,এএত আ আগাচ্ছেন কেনো? আগে তো আমার সাথে ভুলে ও কখনো এমন করতেন না।

__তুমি এইভাবে পিছাচ্ছো কেনো? আগে তো তুমি ও ভুলে ও এইভাবে পিছাতে না।আর এইভাবে তোতলাচ্ছো কেনো?

__আ আয়য়য়পনি আ আ,গাচ্ছেন বলেই তো,,,,,,ওয়েট ওয়েট,,,,ওয়েট
ফট করে দ্রুত বলে উঠল,,

__হোয়াট!

“নাভিলা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ভালো করে পরিবেশ খুঁটিয়ে দেখে অবিশ্বাস সুরে কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠল,,,,,,,”

__ ম্রিস্টার নিহান্ত!রাইট?
চোখ বুঝে ঘন ঘন পাপড়িযুক্ত চোখে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

__আপনি এই মুহূর্তে এত রাত্ররে ঠিক এখানে কী করছেন। এই এক মিনিট দাঁড়ান । আমি কী বাই এনি চান্স কোনো ভুল কিছু দেখছিনা তো?হ্যাঁ এমনই হবে।এই ছাড়া আর কী বা হবে! শুনেছি মানুষ অতি শকে কাতর হলে তার সাথে এমন কিছু উল্টা পাল্টা মস্তিষ্কে হয়।কিন্তু আমার মস্তিষ্ক আপাতত আচমকা আপনাকেই কেনো বার বার জানান দিচ্ছে! কী ভয়াবহ সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার দেখছেন! যে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। কারনে অকারনে এত জ্বালায় অপমান করে আমি তাকেই আমার দূরবিক্ষ সময় আমার পাশে এত কাছে দেখছি!ভারি অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা। বলি দেশে কি লোকের ভারি অভাব পরেছে।তাই হবে।
নাভিলা কিছুটা বিস্মিত চাহনিতে ক্লান্তি সুরে বলে উঠল,,,

__আসলেই তো মিসসসসস অহ সরি মিস তো আর এখন হবেই না। তাই থুক্কু মিসেস জোহরা আমি এই মুহূর্তে ঠিক এখানে আপনার সামনে কী করছি? ভারি অদ্ভুত ব্যাপার তো?উঁহু ভুলে এসেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।
গালে হাত দিয়ে ভাবা ভঙিতে বলল,,,
ডোন্ট টেল মি তুমি এই সবের কিছুই জানোনা! আমাকে একদমই এই রুমে এক্সপেক্ট ও করনি। এত রাত্ররে ড্রামা করছো আমার সাথে?বুঝে ও না বুঝার নাটক করছো?
ডান ভ্রু কিছুটা উঁচু করে বলল,,,

“নাভিলা এভার সন্দেহ দৃষ্টিতে বড় বড় চোখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে দ্রুত ডানে বামে মাথা দুই দিকে দুলালো যার অর্থ না সেই আসলেই এই সবের কিছুই জানে না।”

“জায়ান বিপরীতে কিছু না বলে গম্ভীর হয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে নাভিলার দিকে তাকিয়ে থেকে চট করে সরে আসলো। ডেসিং টেবিল এর সামনে থেকে আলমারির কাছে এসেই রুমের লাইট অন করলো। সাথে সাথে পুরো রুমে আলোকিত হয়ে গেলো।

নাভিলা চুপচাপ এতক্ষন থ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুরু থেকে শেষ সব বুঝার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কিছুই আর বুঝে উঠতে পারছে না। তার তো আজ বিয়ে হয়েছে এটা ও আসিফ আংকেলের ছেলের সাথে তাহলে!জায়ানই বা কী বলছে তাকে! জীবনের প্রথম তার কাছে এই হিসাবনিকাসটা ভারি উল্টোপাল্টা লাগছে।কিছুতেই কিছুর সাথে কিছু মিলতে যেমন পারছে না।সব কিছু হিসাববিজ্ঞান এর অনিশ্চিত হিসাব বলে মনে হচ্ছে।জায়ান হঠাৎ লাইট অন করাতে ভাবনায় ছেদ পরে। নাভিলা থমমত হয়ে ফট করে আশেপাশে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে রুমের সব কিছু তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। আশেপাশে দেওয়ালের জায়ানের কিছু ও ছবি দেখেতে পেল সাথে একটা ফ্যামিলি ছবি ও দেখতে পেল।যেখানে অহনা,আসিফ আংকেল, জায়ান আর নয়ণ উপস্থিত আছে। মুহূর্তে মধ্যে এটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো যে সে আপাতত কোনো ভুল স্বপ্ন দেখছে না। ভাবনায় থেকে বের হয়ে সে এভার তার সামনে দাঁড়ানো সুর্দশন ছেলের দিকে বিষ্মত ভাবে তাকায় । নীল ক্লারের পাঞ্জাবীতে পরিহিত জায়ানের দিকে আলমারি থেকে হাতে একটি টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে দিকে অগ্রসর হচ্ছে।ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাস করে আওয়াজ তুলে দরজায় লাগিয়ে দিলো। বুঝাই যাচ্ছে সে আপাতত রেগে আছে।

এটা তাহলে বাস্তব। আমি তাহলে আসলেই জায়ানের সাথেই আছি। হাউউউউউ দিস পসিবল!!! হাউউউউ!নাভিলা এভার মাথায় দুই হাত চেপে ধরে ধপাস করে বেডে উপর বসে পরলো।আজ কী তাহলে তার জাতীয় সর্কট খাওয়ার দিবস?এমন কোনো আদৌ দিবস ও হয় তাহলে! হ্যাঁ হয় তার জন্য হয়।বাই এনি চান্স তার সাথে কী তাহলে আজ জায়ান,,,,, আর কিছু ভাবতে আর পারছে না। মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা এসে গ্রাস করছে।

.

.
মিনিট দশ পর ওয়াশরুম থেকে ভিজা চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো জায়ান । নীল পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে কালো টাউজার উপর সাদা টি-শার্ট পরেছে।চুল মুছেতে মুছতে আড়চোখে নাভিলার দিকে একবার তাকালো। সে আপাতত মাথা দুই হাত গুঁজে নিচে দিকে তাকিয়ে আছে।ঘুমিয়ে আছে না জেগে আছে কিছুই বুঝা সম্ভব হচ্ছে না।লালছে এলোমেলো কোঁকড়া চুল দিয়ে মুখমণ্ডল পুরো ডেকে আছে।জায়ান কিছু না বলে হাতের টাওয়ালটা চেয়ারে উপর রেখে চুপ চাপ বেডের অপর পাশে গিয়ে শব্দবিহীন ভাবে শুয়ে পরলো।

.
নাভিলা মুখ থেকে হাত সরিয়ে আচমকা তার পাশে জায়ানকে শুতে দেখে চট করে উঠে দাঁড়ালো। মুহূর্তে ইতদস্ত করতে লাগলো। ডান হাত দিয়ে বাম হাত কচলাচ্ছে। আমতা আমতা করে সাহস সঞ্চয় করে বলে এভার বলে উঠল,,,

_শুউ উউউ উ সু,,,,
আর কিছু বলতে এই মুহূর্তে আর পাচ্ছে না সুর যেমন গলায় নিচে এসে সব আটকা পরে গেছে।জিভ দিয়ে ঠোটঁ হালকা মৃদু ভিজিয়ে আবার ও বলে উঠল,,

_ভাইয়া!!এই যে ভাইয়া শুনছেন! এই যে! ভাই

“জায়ান তার ডাকে কোনো সাড়া দিলো না।নাভিলা ভারি বিরক্ত লাগছে এখন এমন একটা সিরিয়াস মেটার্সে কিছু না বলে মানুষ নিচিন্তায় ঘুমাতে ও পারে?হাউউউউউ দিসস পসিবল ভাই? তার তো টেনশনে রিতিমত মাথা ফেটে যাচ্ছে আর উনি মহাশয় আরামে ঘুমাচ্ছেন। এটা কী করে সম্ভব। আশেপাশে আবার ও নজর দিতে রুমের মধ্যে আলমারি পাশে আর বেডের সাইডে পুরো রুমে তিনটে বুক শেলফ এর দিকে নজর পরলো। যার মধ্যে ঠাসানো মোটাগাটা বই দিয়ে পুরো তাক ভর্তি। নাভিলার কাছে এটা ঘর কম আপাতত কোনো লাইব্রেরি হিসেবে মনে হচ্ছে বেশী।কী অদ্ভুতুড়ে রুম। হঠাৎ নয়ণের বলা সকালে সেই কথা মস্তিষ্কে আসলো।


আপনার কথাগুলো কিছুটা আমার ছোট ভাইয়ের মত মনে হলো। ও সারাদিন বেশীরভাগ সময় মোটাগাটা বইয়ের মধ্যে ডুব দিয়ে থাকে আর আমার সাথে ঠিক এই ভাবেই আপনার মত কঠিন শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে।

তাহলে উনি এই বেয়াদবটারই কথা বলছে।আল্লাহ্‌ গো গুরে ফিরে এই বেয়াদবটাই আমার কপালেই লিখে ছিলে তুমি।কিন্ত কেন!আর কেউ কী আমার জন্য ছিলো না?নাভিলা এভার রেগে জায়ানের দিকে তাকিয়ে উচ্চশুরে বলে উঠল,,,

_ম্রিস্টার নিহান্ত,,,,,,,, শুনছেন।

_হুম বল,
অস্পষ্ট সুরে নড়েচড়ে এভার সাড়া দিলো,

_বলি আপনি এভাবে ঘুমাচ্ছেন কী করে! আপনার কী কোনো টেনশন হচ্ছেনা?ভারি অদ্ভুত তো আপনি!

_আপাতত আমি বড্ডো ক্লান্তি ঘুমাতে দাও। আর নিজেও চুপচাপ শুয়ে পরো।এত পেচপেচ করো না।তোমার না হতে পারা জামাই আর তোমার জন্য আজ আমার যথেষ্ট শক্তি নষ্ট হইসে।তাই আপাতত তোমার মত আজাইরা টপিকে টেনশন করার জন্য আমার কোনো মুড অবশিষ্ট বাকী নাই।

_হোয়াট ডু ইউ মিন ব্যায় আজাইরা টপিক?আপনার কাছে এই টপিকটা আজাইরা বলে মনে হচ্ছে?

_তো কী?

_তো মানে! আপনি এত অসাভাবিক রিয়েকশন কি করে দিচ্ছেন ভাই।আর এত শান্ত ভাবে কী করে কথাগুলো বলছেন?আমার তো মাথাই এটাই কিছুতে আসছেনা!

_কবুল বলার সময় ঘুমিয়ে থাকলে এমনই হওয়ার কথা।

_মানেহ্ কী বলতে চান আপনি?

_কিছুনা,,,,

চলবে,,,,