#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব___১৬
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা
__কবুল বলার সময় ঘুমিয়ে থাকলে এমনই হওয়ার কথা।
__মানে কি বলতে চান আপনি?
__কিছুনা
__দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে রিতিমত ইনসাল্ট করতেছেন। এমনেই আমি এই সিচিউশনে ভারি চিন্তায় আছি কি থেকে কী হয়ে গেলো আমার সাথে। এখন কী করা যায়!আর আপনি,,
__তোমার যদি তাই বলে মনে হয় তাহলে তাই।এখন আর কি করা যাবে সব তো অলরেডি শেষ হয়ে গেছে,,,,
জায়ান খাটের উপর কাত হয়ে শুয়ে চোখ বুঝেই বলল,,,,,
___ আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনার ভাইয়া হঠাৎ পালালো কেন! বিয়ে করতে চায় না সেটা সবায়কে বললেই তো পারত।তার কী আগে কোনো রিলেশন ছিলো?
__সেটা আমি কি করে জানবো।পালানো আগে মনে হয় আমাকে সব বলে জানিয়ে পালিয়েছে! যে আমি জানবো?
চোখ খুলে নাভিলার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
__আজীব এইভাবে কথা বলছেন কেন। সুন্দর করে ও তো শান্ত ভাবে বুঝিয়ে বলা যায়।যে আপনি কিছুই জানেন না।
__আর সুন্দর ভাইয়া পালিয়ে তো আমার লাইফ টা একদনই শেষ করে দিলো।বাই দ্যা ওয়ে সকালে তো শুনেছি তোমার সাথে ভাইয়ার দেখা হয়েছিলো?
__হুম তো,
__বাই এনি চান্স তুমি তাকে কিছু উলটা পাল্টা বলনিতো?
সন্দেহ চাহনিতে জিগ্যেস করল,,,
__হ্যাঁ বলেছি তো! বলেছি এই যে শুনছেন নয়ণ আপনি একটু পালিয়ে আমাকে ধন্য করবেন এই জীবনে ভাই?না মানে্ আমি না কখনো কাউকে এত কাছ থেকে পালাতে দেখিনি তাই আরকি আপনাকেই বলছিলাম,,,
দাঁতে দাঁত চেপে বলল
ভারি অদ্ভুত কথাবার্তা তো আপনার।মনে হচ্ছে বিয়ে আমার না আজ শুধু আপনারই একা হয়েছে।এইইই শুধু আপনার লাইফ কি শেষ হয়েছে? সাথে সাথে আমার লাইফ ও কি হয় নি।যখন শুনেছিলাম আপনার ভাইয়া পালিয়েছে তখন যে কি খুশি লাগছিল বলার বাহিরে। ভেবেছিলাম আপাতত বিয়ে নামক চ্যাপ্টার টা এই যাত্ররায় শেষ হবে। কিন্তু হয়ে গেল তার উল্টো।যত নষ্টের গোড়া মূল আপনার গুনোধর ভাই। নিজে তো একা এই সব থেকে বেটা পালালো সাথে আমার জীবনকে শেষ করে দিলো। সকালে এত সুন্দর করে গুছিয়ে তাকে কী সব বুঝলাম আর তার প্রতিদান সরুপ হিসেবে আমাকে এই দিলো।আগে জানলে তাকে কিছুই বলতামই না।
“জায়ান এভার সন্দেহ দৃষ্টিতে নাভিলার দিকে তাকিয়ে শুয়া থেকে উঠে আঠুতে ভর দিয়ে বসে বলে উঠল”
_এমন কি বলেছিলে শুনি?
ভ্রু খাদ করে জিগ্যেস করলো,,
__ তেমন কিছুই না। আচ্ছা শুনুন,,,
__জ্বী বলুন
__আপনার ভাই পালালো কি করে! না মানে উনি কি আমাদের বাসায় আসেই নি!
__আবার সেই একই টপিক।বার বার গুরে ফিরে তোমার এখানেই আসতে হয়!এইইই তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার হতে হতে হতে না পারা বর এর জন্য।
__ হ্যাঁ হচ্ছে তো সেইইই অনেক হচ্ছে আপনি আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন না। আজীব আমাকে আজাইরা কামে না খোঁচালে আপনার হয় না। না জ্বালিয়ে আপাতত যা জিগ্যেস করেছি তা বলুন।
কমোড়ে দুই হাত চেপে বলল,
_এসেছিলো। একটা ফোন এসেছিলো ভাইয়ার ফোনে তা উঠে এটেন্ড করার জন্য বাহিরে গিয়েছিলো এর পর আর ফিরে আসেনি।পরে ভাইয়াকে ফোন করলে ভাইয়ার ফোন সুইচ অফ আসে।
__আচ্ছা ধরুন কাল পরশু মধ্যে যদি আপনার ভাই বাই এনি চান্স বাসায় ফিরে আসে তাহলে তখন কি হবে।
_তেমন কিছুই হবে না
_কিন্তু কেন! উনিতো বাসা থেকে পালিয়েছিলো? তাহলে কেন হবে না,,,,,
“জায়ান এভার কিছুটা বিরক্ত হল। বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল”
__ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি এর আগে দুই চার বার বাসা থেকে এই ভাবে হুটহাট পালিয়েছিলাম।তাই আমার কম বেশী এই সব ব্যাপারে এক্সপ্রিএন্স আছে।এটাকে কি আপাতত তোমার কোনো নাটক সিনেমা বলে মনে হচ্ছে ! যে বাসা থেকে পালিয়েছে বলে তেজ্য টেজ্য করে দিবে!বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবে! আর আসতেই দিবে না।হ্যাঁ আজ মানবে না কিন্তু দুইদিন পর বাসায় আসলে ঠিকই তারা মেনে নিবে।যতোই হোক ফ্যামিলি বলে কথা।
আমি ক্লান্তি হয়ে খাটের একপাশে বসে পড়লাম আপাতত আর কিছু বলতে আর ভালো লাগছেনা। এক দিনেই আমার জীবনেই ছয় ঋতুরাজ সব আবহাওয়া দেখা হয়ে গেছে,,,, শুধু অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলাম
__ হুহ,,,,
জায়ান বিপরীতে কিছু আর বলছে না সে ও চুপ করে আছে।মাথা একটু ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো আস্তে আস্তে টানছে।হঠাৎ মাথা ব্যাথা এসে গ্রাস করেছে। নাভিলা খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। দুজনের মুড খারাপ।ওরা কেউ ভাবেনি এমনটা কখনো আচমকা তাদের সাথে হয়ে যাবে।ভাগ্যে খেলায় পরিহাসে তারা এত পাশাপাশি ও কখনো আসবে।রাত বাড়ছে গবিরতা ও অনেক বাড়ছে। ঘড়িতে আপাতত চারটে কাছাকাছি বাজবে।কিন্তু ওরা এখনো পূবের ন্যায় ওভাবেই বসে আছে।কাউর মুখে কোনো কথা নেই।দুইজনই চুপ। ঘুমে নাভিলার চোখ কেমন লেগে আসছে। তার পর ও সে একই ভাবে বসে বসে ঝিমাচ্ছে জায়ান সেটা আড়চোখে খেয়াল করল ,,,,,
__আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।
এই বলে জায়ান বেডের একপাশে গিয়ে শুয়ে ও পরলো।
__ এই আমার ও খুব ঘুম পাচ্ছে,,,, আমিও ঘুমাবো কিন্তু কোথায়!আপনার রুমে তো লাইব্রেরি তাক ছাড়া আর কিছুই দেখছি না। আপনার রুমে তো কোনো সোফার সেট ও নেই।থাকলে তো সেখানে আপাতত আমি একটু ঘুমাতে পারতাম।
__সোফার সেট যে বাধ্যতা মূলক রুমে থাকতেই হবে এমন কোনো কথা আদৌ কোথাও নিদিষ্ট করে গোটা অক্ষরে বলা আছে! ওগুলা নাটক, সিনেমাতেই থাকে।বাস্তব জীবনে কেউ রুমে সোফা সেট নিয়ে রাখতে চায় না।
__তাহলে উপায় আমি এখন কোথায় ঘুমাবো?ভাষন না দিয়ে উপায় বলুন।
“জায়ান কিছু না বলে বেডের মাঝ বরাবর একটা বালিশ রেখে বলল,,,,
__আপাতত তুমি চাইলে এভাবে ঘুমাতে পারো সকাল হতে বেশী সময় কিন্তু আর নেই। এখন তোমার ইচ্ছা তুমি ঘুমালে এখানে ঘুমাও বসে থাকলে বসে বসে এভাবে ঝিমাও এটা পুরো পুরি তোমার ব্যাপার আমি ঘুমালাম।
এই বলে জায়ান গুরে কাত হয়ে শুয়ে পরলো।
“নাভিলা আর কথা না বলে খাটের একদম কিনার ঘেষে চেপে শুয়ে পরলো তার আপাতত প্রচণ্ড ঘুম পেয়েছে। তাই অযথা তর্কে না গিয়ে ঘুমানো শ্রেয় বলে তার কাছে মনে হল।
।
।
জানালা বেদ করে মৃদু বাতাসে পর্দার ফাঁকে ফাঁকে রোদের এক চিলতে ফালি রুমে এসে প্রবেশ করে জানান দিচ্ছে সকাল হয়ে গিয়েছে।এক টুকরো রোদের ফালি নাভিলার চোখের উপর আছড়ে পরতেই সে চোখ কুঁচকে আড়মোড়ে পিটপিট করে তাকায়।তাকাতেই সেই সাথে সাথেই ৪৪০ হাই ভোল্ড এর ঝাটকা খায়।ভয়ে থতমত খেয়ে দেখে সে আপাতত জায়ানের বাহুডোর উপর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তার আর জায়ানের মাঝে বিন্দু মাত্ররো কোনো জায়গায় অবশিষ্ট নেই।কোলবালিশ নামক কোনো বস্ত ও আপাতত তাদের মাঝে নেই। জায়ানের এত কাছে আসায় নাভিলার কেমন জানি অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মনে। হঠাৎ জায়ানের হার্টবির্ট থেকে কেমন জানি ধুক ধুক ধুক মিষ্টি শব্দ আওয়াজ শুনতে পেলো নাভিলা।নাভিলা কান পেতে কাছে গিয়ে সে আওয়াজ শুনার চেষ্টা করলো।কিন্তু জায়ানের ঘন ঘন ভারি গরম নিশ্বাস কপালে এসে পরতেই নাভিলা চমকে মাথা উঁচু করে জায়ানের দিকে তাকায়।
এই মুহূর্তে আমার কাছে ঘুমন্ত জায়ানকে দেখতে অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে কেন জানি। ছেলেটা এত সুন্দর কেন! কিসের এত স্নিগ্ধ তার মাঝে আমি বার বার খুঁজে পাই। আজ তার এত কাছে এসে তাকে কাছ থেকে কেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছে জাগ্রত করছে। সিল্ক চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ফর্সা কপালে আছড়ে ছিটিয়ে। ঘন ঘন পাপড়িযুক্ত চোখের উপর রোদ আসতে কপালটা কেমন নিমিষেই কুঁচকে ফেলছে।নাভিলা নিঃশব্দে হাসলো জায়ান কুঁচকানো কপাল দেখে। সরু নাকটা কিছুটা লাল ও হয়ে আছে বটে।গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো কিছুটা বড় হয়েছে।কিন্তু এত বেশ মানিয়েছে। আমি তার দিকে কিছুক্ষন অপলক ভাবে তাকিয়ে থেকে চট করে চোখ সরিয়ে নিলাম।জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম চোখ বুঝে।কেমন জেনো লজ্জা লাগছে আমার।দ্বিতীয় বার তার দিকে চোখ মেলে তাকাতে যেমন ভারি লজ্জা করছে। এই ছেলে কাছে আসলেই আমার সব কেমন জেনো গুলিয়ে যায়। নিশ্বাস গুলো কেমন আটকে শ্বাস -প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।দম ছাড়তে ও তখন ভারি শ্বাস কষ্ট হয়।
জায়ান উঠে লজ্জাজনক এই দৃশ্য দেখার আগেই এখন আমাকে উঠতে হবে । আমি আস্তে আস্তে জায়ানের হাত থেকে মাথা সরিয়ে নিলাম। ধীরেসুস্থে ওঠতে যাবো তখনই জায়ান আমাকে পিছন থেকে কমোড়ে জড়িয়ে ধরলো।মুহূর্তে মধ্যে আমি জমে গেলাম। মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে আমি আপাতত ভুলে গেছি। নিহাত ঘুমের ঘোরে আছে বেটা তাই এমন করছে। নয়তো এই খচ্চোর এই জীবনে আমাকে জড়িয়ে ধরবে, জীবনেও না। পারলে আমাকে কাচা চিবিয়ে চাবিয়ে খাবে।যাই হোক এখন আমাকে উঠতে হবে, তাকে হালকা ধাক্কা দেয়াতেই জায়ান কিছুটা নড়েচড়ে আমার থেকে সরে উল্টো দিকে গুরে কাত হয়ে আবার ও শুয়ে পরলো। ছাড়া পেতেই আমি সস্তি নিশ্বাস ত্যাগ করলাম।
এমন সময় দরজায় কড়ায় টোকা পড়লো নাভিলা খাট থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখল,,,
চলবে,,,,,,,,,,,