#মেঘকন্যা☁️
#Part_22
#Writer_NOVA
বিশাল বড় লোহার দরজায় মস্ত বড়ো একটা তালা।কি আছে এখানে?হাত বাড়িয়ে তালাটা স্পর্শ করতে গেলেই অদৃশ্য একটা শক্তি আমাকে ধাক্কা মেরে দূরে ফেলে দেয়।আমি ছিটকে অনেকটা দূরে চলে যাই।শব্দ পেয়ে প্রহরীরা ছুটে আসে।দ্রুত মোটা পিলারের পেছনে আমি লুকিয়ে পরি।রাজপ্রাসাদে ঘুরতে ঘুরতে এই দরজার সামনে এসে আমার চোখ আটকে যায়।কারুকাজ খচিত ইয়া মোটা দরজার অপাশে কি আছে?আমার বহু কাঙ্খিত বস্তুটা নয় তো?
আমিঃ কি আছে এখানে?সামান্য কিছু থাকলে তো আমার ধাক্কা খেয়ে পরার কথা নয়।মনে হলো বিদ্যুতের শক খেলাম।হাতটা ঝিমঝিম করছে। এ দরজার সামনে এত প্রহরী বা কেন?ভাগ্যিস তারা এখানে ছিলো না।নয়তো আমাকে ধরেই ফেলতো।
প্রহরীরা এদিক সেদিক খুঁজে কিছু পেলো না।দুইজনকে পাহারায় রেখে বাকি একজন অন্য দিকে চলে গেল।আমি আড়াল থেকে তাদের ওপর নজর দিতে লাগলাম।বেশ কিছু সময় পর ঐ প্রহরীটা ময়ূর রাজ ওয়াহাবকে নিয়ে ফিরলো।ওয়াহাব এসে ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে দেখলো।তারপর প্রহরীদের সাথে কি জানি কি কথা বললো।দেখতে পেলাম তারা চলে গেল।ওয়াহাব এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা।আমি পিলারের থেকে ঈষৎ মাথা বের করে তার ওপর কড়া নজরদারি রাখছি।ওয়াহাব দরজার একদম কর্ণারের কাছে ছোট দুটো সুইচ টাইপের দেখতে হাতের আঙুল স্পর্শ করলো।সাথে সাথে দরজার সামনে থেকে অদৃশ্য শক্তিগুলো হালকা নীল হয়ে মিলিয়ে গেল। তারপর তালায় হাত রাখতেই সেটা খুলে গেল।আমি দুই হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে অদৃশ্য হয়ে গেলাম।দরজা বন্ধ হওয়ার আগে জলদী তার পিছু নিলাম।
বিশাল বড় কক্ষ।চারিদিকে হিরা,মণি,মুক্ত,স্বর্ণ,রুপার গহনায় ছড়াছড়ি। তার মানে এটা কোষাগার।ওয়াহাব বারবার পিছনে তাকাচ্ছিলো।হয়তো ও টের পাচ্ছে ওর সাথে কেউ আছে।ধীর পায়ে কোণার দিক গিয়ে একটা বিশাল মনি,মুক্তো ভর্তি ঘড়া সরালো।সাথে সাথে দেয়াল সরে একটা সরু দরজা সমেত সিঁড়ি দৃশ্যমান হলো।সিঁড়ি দিয়ে নেমে ভেতরে প্রবেশ করতেই একটা ছোট কুঠুরি দেখতে পেলাম।যেখানে সোনালি ও রুপালি রঙের সিন্দুকে পরিপূর্ণ। এদের মাঝে একটা রংচটা বিবর্ণ দেখতে ছোট সিন্দুক। ওয়াহাব সেটা বের করলো।সবটায় তালা দেওয়া থাকলেও সেটায় ছিলো না। সিন্দুকটা খুলতেই আমার চোখ ছানাবড়া। আরে এটাই তো সেই ছোড়া।যাতে ইশালের মৃত্যু হবে।
ওয়াহাবঃ নাহ্,ছোড়া তো ঠিকই আছে। তাহলে আমার কেন মনে হলো এটা ঠিক নেই। এটার মাঝে কি আছে আল্লাহ জানে? আব্বাজান কেন এটাকে এতো যত্ন করে রাখতে বলেছে তাও জানি না। এটা নাকি কারো সর্বনাশ।কিন্তু কার?(নাক টেনে)কারো শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ পাচ্ছি। আমার সাথে তো কেউ নেই। তাহলে এই মিষ্টি ঘ্রাণটা কোথা থেকে আসছে।
আমিঃ এই রে এই ওয়াহাব ব্যাটা কিছু বুঝে গেলো না তো।বজ্জাতটার নাকটা একটু বেশি বড়।বিটকেল শয়তানটা।নিজের কাজ কর না।ছোড়াটা থেকে আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। তার মানে এটাকে এখন এভাবে ছোঁয়া যাবে না।তাহলে হাত ঝলসে যাবে।কি করলে এটা স্বাভাবিক হবে?
ওয়াহাবঃ মিষ্টি ঘ্রাণটা নাকে মৌ মৌ করছে।আমিতো বেহুশ হয়ে পরবো।আগেও তো অনেকবার এসেছি। কিন্তু কোথায় আগে তো পাইনি।অনেকক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিলো আমার সাথে কেউ আছে। তাহলে কি তার শরীরের ঘ্রাণ পাচ্ছি আমি?
ওয়াহাব সিন্দুকে থাকা ছোড়াটাকে হাত ছোঁয়ালো না।সামনের দেয়ালে বর্গাকার কোর্ট করা একটা জায়গায় হাত দিয়ে চাপ দিলো।যাতে করে ভেতর থেকে একটা গুপ্ত ড্রয়ার বের হলো।সেখান থেকে একটা চিমটা বের করলো।সেটা দিয়ে ছোড়াটাকে উঠাতেই সেটার আলো নিমিইয়ে গেল।ওয়াহাব হাতে নিয়ে ছোড়াটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
ওয়াহাবঃ দেখে তো কোন সামান্য ছোড়া মনে হয়।কিন্তু এতো যত্ন ও পাহারা দিয়ে রাখার মানেটা কি?আব্বাজান বলেছিলো এটাকে নিতে কোন রাজ্য থেকে নাকি রাজপুত্রের বিবি আসবে?সে ছাড়া কেউ এটাকে ব্যবহার করতে পারবে না।আমাদের কাছে ছোড়াটাকে সামান্য মনে হবে।তার কোন কার্য ক্ষমতা থাকবে না।কিন্তু সঠিক মানুষের হাতে ঠিক কাজ করবো।কিন্তু কে আসবে এটা নিতে?সে কি আদোও এই ছোড়ার খবর পেয়েছে? তাহলে নিতে কেন আসছে না?এই সামান্য ছোড়া নিয়ে আমার এত চিন্তা ভালো লাগে না। কবে যে এই আপদটা আমার থেকে দূর হবে।(বাঁকা হেসে)
🌨️🌨️🌨️
ওয়াহাবের হাব-ভাব আমার কাছে ঠিক লাগছে না।মুখে শয়তানি হাসি রেখে চোখ ছলছল করে কথা বলছে সে।আমি তখন আপন মনে বলে উঠি।
আমিঃ ওরে বেকুব, তোর বাপ আমার কথা বলেছে।তোর বাবা-মা বেঁচে থাকলে আমার কি এরকম লুকিয়ে থাকতে হতো।তাদের বললেই আমাকে দিয়ে দিতো। কিন্তু তুই থাকায় আমার বিপত্তি ঘটেছে। তোমার কাছে চাইলেই যে তুমি দিয়ে দিবে এমনটা কিন্তু নয়।তুমি ঢং কম করো।তোমাকে আমি ভালো করে চিনে গেছি।এসব শুনিয়ে আমাকে বোকা বানানোর ধান্দা। তুই ব্যাটা ভালো করেই জানিস এটা কি কাজে লাগে?তুমি ভারী ধূরান্দাজ।তুমি এতটা বোকা নও, আমি জানি।এখন একটু ভাব নিচ্ছো।
হঠাৎ ওয়াহাব অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।আমার দুই কান তালা লাগানোর জোগাড়। আমি কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ওয়াহাব শায়তানি হাসি দিয়েই যাচ্ছে। থামার নাম নেই।
ওয়াহাবঃ আমি জানি এটা কি কাজে ব্যবহৃত হবে।সব খবর পেয়ে গেছি আমি।এত সহজে আমি এটাকে হাতছাড়া করবো না।মেঘরাজ্যের মেঘপুত্রের বিবি মেঘকন্যাকে আমার কাছে আসতেই হবে।সে এলে তাকে আমি সারাজীবনের জন্য নিজের দাসী বানিয়ে রাখবো।এই ছোড়া আমি কিছুতেই দিবো না। এতটা বোকা আমি নই।শতহোক ঐ মেঘকন্যার রূপের বিবরণ শুনে তার ওপর তো কবেই ফিদা হয়ে গেছি।কিন্তু আপাতত মেঘপরীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নেই। মেঘপরী রাজী না হলে ওকে জোর করেই নিজের করে নিবো।যে ওয়াহাব নিজের রাজ্যের জন্য বাবা-মাকে বন্দী করতে পারে তার কাছে অন্য কিছু কিভাবে অসম্ভব হতে পারে? বন্দী অবস্থায় আমার পিতা নিজের জীবন দিয়ে দিলো তারপরেও মেঘকন্যার নামটা বলে গেল না।কবে আসবে তাও বললো না।এই বুড়ো পিতা-টাই তো যত ভেজাল লাগিয়েছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা ইন্তেকাল করেন। কিন্তু পিতা মেঘকন্যার ব্যাপারে মুখ খুলেনি।আমার ছোট বোনটা ও রাজ্যের মানুষ জানে তাদের রাজা-রানি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। যদিও প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি।এই ভুয়া খবরটা বিশ্বাস করাতে আমার বহু কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।
অঙ্গরাজ্যের রাজপুত্রকেও আমার পায়ে পরতে হবে।কারণ তার মৃত্যুর হাতিয়ার আমার হাতে।নিজেকে বিশেষ মানুষ মনে হচ্ছে। সবাই এখন আমার ওপর নির্ভরশীল।
আমিঃ আল্লাহ এতটা নিচ এই ব্যাটা।রাজ্যের লোভে নিজের বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বন্দী করেছিলো।কারাগারে তাদের ওপর অত্যাচারও করেছে। কি পাষাণ ও লোভী। ইশালের সাথে সাথে তোর মৃত্যুও ঘনিয়ে এসেছে শয়তান। আগে আমি কোনমতে এই ছোড়া টাকে তো হাতে করি।তারপর তোর ব্যবস্থা করবো।হারামী,নিজের পিতা-মাতার সাথে বেঈমানী করেছিস।তোর শাস্তি নিশ্চিয়ই হবে।
ইচ্ছে করছিলো শয়তানটাকে মেরে ছোড়া টাকে নিয়ে পালাই।কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।আমি আমার কাজ হাসিল করেই ছারবো।পিছনে পেছাতে গিয়ে হাতের সাথে বেজে একটা সিন্দুক নড়ে উঠলো। ওয়াহাব হাতের থাকা ছোড়া রেখে সিন্দুক আটকে জিজ্ঞেস করলো।
ওয়াহাবঃ কে কে ঐখানে?কে আছো?
আমি দিকপাশ না তাকিয়ে দৌড়ে নিজের কক্ষে চলে এলাম।এসে দৃশ্যমান হোলাম।পালঙ্কে বসে জোরে জোরে হাঁপাচ্ছি।এতটুকু দৌড় দিয়ে হয়রাণ হয়ে গেছি।
🌨️🌨️🌨️
মেঘরাজ্য……..
মেঘরাজ্যে চারিদিকে থেকে চিৎকার, চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সবাই ছোটাছুটি করছে।পঙ্খীরাজ ঘোড়া ছুটিয়ে প্রবেশ করলো অঙ্গরাজ্যের সৈন্য ও রাজপুত্র ইশাল। চারিদিকে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে। সৈন্যরা সারা রাজ্যে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। অন্দরমহলে বসে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছিলো রাজা,রাণী,মন্ত্রী, আয়িশ ও রাকিন।হঠাৎ চিৎকার,হুলস্থুলের শব্দ পেয়ে তারা অবাক হয়ে যায়।তখনি এক প্রহরী দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে খবর দেয়।
প্রহরীঃ আসসালামু আলাইকুম মহারাজ।
রাজাঃ অলাইকুম আস সালাম। কি খবর প্রহরী?বাইরে এতো হৈ-হুল্লোড় কেন?কি হয়েছে?
(চিন্তিত সুরে)
প্রহরীঃ ঘোরতর বিপদ ঘনিয়ে এসছে মহারাজ।অঙ্গরাজ্যের রাজপুত্র তার দলবল ও সৈন্য নিয়ে আমাদের রাজ্যে আক্রমণ করেছে।তারা সারা রাজ্য লন্ডভন্ড ও আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মন্ত্রীঃ এট কিরকম কথা?পূর্ব কোন বার্তা ছাড়া তার আমাদের রাজ্য আক্রমণ করে কিভাবে?যুদ্ধের তো এখনো ঢেঢ় সময় বাকি আছে। এর মধ্যে আক্রমণ করা মানে যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করা।
রাকিনঃ ওরা আবার কবে এসব নিয়ম মানলো মন্ত্রী মশাই ?এরা তো পারেই পেছন থেকে কাপুরুষের মতো আক্রমণ করতে।এখন আমাদের এখানে বসে থাকলে চলবে না। সব সৈন্যকে প্রস্তুত করতে হবে।
আয়িশঃ এই শয়তানটা বড্ড বেশি বেড়ে গিয়েছে। ও হয়তো ভুলে গেছে পিপীলিকার পাখা গজায়, মরিবার তরে।তেমনি ওর মরণের পাখা গজিয়ে গিয়েছে। রাকিন জলদী সৈন্যদের লড়াই করতে পাঠিয়ে দে। আমাদের এক মিনিটও নষ্ট করলে চলবে না।
রাণীঃ আল্লাহ, এই বিকালে কি রকম অমঙ্গলের ছায়া নেমে এলো রাজ্যের বুকে।আল্লাহ তুমি রক্ষা করো।ঐ শয়তানটা যাতে আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে।
রাজাঃ রাণী তুমি নিজ কক্ষে চলে যাও।এখানে থাকা তোমার জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।আমরা আক্রমণ থামাতে যাচ্ছি।
সবাই কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগেই সেখানে ইশাল তার সৈন্য নিয়ে হাজির হলো।ওর পরনে কালো পোশাক। হাতে কুচকুচে কালো তলোয়ার।কক্ষে ঢুকে চারিদিক দিয়ে ওর সৈন্য সবাইকে ঘিরে ধরলো।সৈন্যরা তাদের আটকে ফেললো।
ইশালঃ কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?আমিতো এখানে।আপনাদের সাথে এত কষ্ট করে দেখা করতে এলাম আর আপনারা আমার থেকে লুকিয়ে যেতে চাইছেন।
রাজাঃ না জানিয়ে হঠাৎ করে আক্রমণ করার মানে কি ইশাল?এটা যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করা হয়।তোমারা কিছু দিন পর আমাদের সাথে লড়াই করবে বলেছিলে। তাহলে আজ এভাবে কাপুরুষের পরিচয় কেন দিলে?(রেগে)
ইশালঃ আমি এসব নিয়ম মানি না।আমার নিয়ম আমি নিজে তৈরি করি।আমার যখন যা মন চায় তাই করি।কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
আয়িশঃ ইশাল বড্ড বেশি বেড়ে গিয়েছিস তুই। তোর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। তুই অনেক বড় ভুল করলি আমাদের রাজ্য আক্রমণ করে।এর মাশুল তোকে কড়ায় গন্ডায় দিতে হবে।
🌨️🌨️🌨️
ইশাল ঝড়ের বেগে সামনে এসে ওর হাতের কালো তলোয়ারটা আয়িশের গলায় ধরলো।আয়িশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।আয়িশের মাঝে ভয়ের লক্ষ্মণ না দেখে ইশাল তলোয়ার সরিয়ে ফেললো।
ইশালঃ তোরা এখন আমার কাছে বন্দী।কি করবি বল আমায়?আমি এখন তোদের এমন জায়গায় নিয়ে আটকে রাখবো যে কোন কাকপক্ষীও টের পাবে না। তুই মেঘাকে ময়ূর রাজ্য পাঠিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিস।তার মাশুল দিতেই তোদের এভাবে আটকে রাখা হবে।আমি কিছু দিন পরেই যুদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই মেঘাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে ময়ূর রাজ্যে পাঠিয়েছিস বলে রাগটা দমন করতে পারলাম না।এখুনি আক্রমণ করতে চলে এলাম।
রাকিনঃ তুই নিজেকে খুব চালাক ভাবিস?আসলে তুই একটা আহাম্মক। আমাদের যেখানেই আটকে রাখিস আমাদের মেঘকন্যা ঠিক আমাদের খুঁজে নিবে।আর তোকে খুব শীঘ্রই হত্যা করবে।
ইশালঃ ঐ মেঘকন্যাকে পাওয়ার জন্যই তো তোদের আটকালাম।এখন তোদের নিয়ে আমার ডেরায় আটকে রাখবো।সেই খবর পেয়ে মেঘা সুড়সুড় করে নিজে আমার কাছে ধরা দিবে।
আয়িশঃ তোকে আমি জ্যন্ত পুঁতে ফেলবো,শয়তান।তুই অনেক জ্বালাচ্ছিস।তোর বিনাশ খুব শীঘ্রই হতে চলছে। একটু অপেক্ষা কর।(রেগে)
আয়িশ তলোয়ার কোষমুক্ত করতে করতে ইশালের সামনে আসতে নিলে ইশালের চারটা সৈন্য ওকে ধরে ফেলে।যাতে আয়িশের রাগটা আরো বেড়ে যায়।জোর করে ওর থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নেয়। রাকিন সুযোগ বুঝে তলোয়ার কোষমুক্ত করে আক্রমণ করতে নিলে ইশাল দ্রুত গতিতে ওর থেকে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ।
ইশালঃ তা রাজা মশাই আপনারা কি আমার সাথে যাবেন?নাকি সারা রাজ্য আগুনে জ্বালিয়ে দিবো।অবশ্য এর মধ্যে অনেকটা জ্বালানো হয়ে গেছে। আপনারা যত দেরী করবেন আমার সাথে যেতে ততই আপনাদের রাজ্য ও রাজ্যের মানুষের ক্ষতি।চারিদিকে কালো ধোঁয়ায় ভরপুর হয়ে গেছে। একটু পর সারা মেঘরাজ্য কয়লায় পরিণত হবে।ধোঁয়ার গন্ধের সাথে লাশের গন্ধও নাকে ভেসে আসবে।
রাজাঃ তুমি তোমার সীমা লঙ্ঘন করছো।আমরা তোমাকে ঠিক দেখে নিবো।কন্যার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।নিশ্চয়ই তোমার জন্য খারাপ কিছু আছে।যার জন্য পরে তুমি পস্তাবে।আল্লাহ আমাদের সহায় আছে। তিনি যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করেন।
ইশালঃ আপনার বক্তৃতা দেওয়া বন্ধ করুন।আপনাদের সামনে আমি মেঘাকে বিবাহ করবো।ততদিন পর্যন্ত আপনারা বেঁচেই থাকবেন।তারপর না হয় ওপরের থেকে বাকি কিছু দেখেন।
শয়তানি হাসি দিয়ে সবার দিকে চোখ বুলালো ইশাল।তারপর সৈন্যদের আদেশ করলো সবাইকে বন্দী করে তাদের সাথে নিয়ে যেতে।সৈন্যরা আদেশ পেয়ে তাদেরকে নিয়ে চললো।রাকিন ও আয়িশ রাগে ফুঁসছে। রাণী আচলে মুখ গুঁজে গুণগুন করে কাঁদছে। রাজা ও মন্ত্রী বিষন্ন মনে তাদের সাথে চলছে।সবাইকে নিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়িতে উঠানো হয়।
এতকিছুর মধ্যে ইশাল কুহুকলির কথা বেমালুম ভুলে গেল।কুহুকলি এতক্ষণ গাছের ডালের আড়ালে বসে সব দেখছিলো।সে সামনে আসেনি।সামনে আসলে হয়তো ইশালের শয়তানি শক্তিতে সেও আটকা পরে যেত।পুরো রাজ্যের অবস্থা দেখে সে ছুটলো মেঘকন্যার কাছে।যাওয়ার আগে সে ভিন্ন দেখতে অনেকটা টিয়া পাখির মতো রূপ নিয়ে নিলো।উড়ে চলতে লাগলো তার গন্তব্যে।কুহুকলির গন্তব্য এখন ময়ূর রাজ্য।দেরী না করে সে ছুটে চললো।
কয়েক মুহুর্তে পুরো মেঘরাজ্য কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়।সারা রাজ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় পরে আছে।অথচ মাত্র আধা ঘণ্টা আগেও সবকিছু ছবির মতো সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ছিলো।রাজ্যের মানুষ বিলাপ করা শুরু করেছে। তাদের রাজা,রাণী, মন্ত্রী সবাইকে বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কি হবে?সবার ভরসা এখন মেঘকন্যা।কিন্তু মেঘকন্যা কি পারবে সবাইকে রক্ষা করতে?নাকি সেও জীবন দিবে ইশালের কাছে?
#চলবে