মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৩

0
430

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৩য় পর্ব”

— কেটে যায় দুদিন। রাশির সময় গুলো যাচ্ছে খুবই বোরিং। রিনা খানের সাথে গল্প, কখনো তাকে কোনো কাজে সাহায্য এইভাবে কেটে যাচ্ছে। আর বাদ বাকি সময় নিজের ঘরে বসে বই পড়া। ঢাকা শহরের কোথাও তেমন চেনে না রাশি। আবার না কোথাও ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে তার। রাশি বাড়ি ফিরে যেতে চেয়েছিলো৷ রেজাল্ট দেওয়ার পর আবার আসবে ঢাকা শহরে যদি তার কাঙ্ক্ষিত আশাটা পুর্ণ হয় তো। কিন্তু রিনা খান যেতে দেয়নি। তার মতে রাশি এখানেই থাকবে। যদি আশানুরূপ ফল হয় তাহলে এই বাড়ি থেকে রাশি পড়াশোনা করবে। রাশির বাড়িতেও এই কথা জানিয়ে দেয় রিনা খান।

–‘ রিনা খানের সাথে সকালের নাস্তা তৈরি করছে রাশি৷ রিনা খান বারণ করে রাশিকে এইসব না করতে৷ কিন্তু রাশি কি আর শুধু শুধু বসে থাকার মেয়ে। বাড়িতে থাকলে সারা গ্রাম জুড়ে একবার চক্কর দেওয়া হয়ে যেতো এতখনে৷ রাশি এখানে এসে খুব মিস করছে তার বাড়ি আর গ্রামকে। সেই খোলামেলা পরিবেশ। স্নিগ্ধ বাতাস, বাচ্চাদের সাথে দুষ্টামি সাথে তার ছোট বোন রাই’য়ের সাথে খুঁনসুটি। বাবার আদর, মায়ের শাসন। যদিও এখানে মায়ের অভাব রিনা খান আর বাবার অভাবটা সম্রাটের বাবা পূরণ করছে। তারপরও মন খারাপ তো একটা থেকেই যায়। রাশি তার বাবা -মাকে ছাড়া কখনো কোথাও থাকেনি একা৷ এই প্রথম তার এতদূরে আসা তাও পড়াশোনার জন্য। রাশি মনে করে! কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হয়। তাই মন খারাপ গুলো দল বেধে আসতে চাইলেও রাশি তাদের পাত্তা দেয় না।

— সম্রাট গাড়ির চাবিটা হাতের এক আঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে নিচে নেমে আসে৷ রাশি এতখনে টেবিলে নাস্তা সার্ভ করে ফেলেছে। এরপর সবাই মিলে নাস্তা করতে বসে।

–” সমু! মায়ের ডাকে সম্রাট তার দিকে তাকায় খাবার চিবোতে চিবোতে৷
— রাশি আজ ক’দিন হলো ঢাকা এসেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ঢাকা শহরের কোথাও যাওয়া হয়নি। সারাদিন ঘর বন্দী হয়ে আছে। তাছাড়া ও যেহেতু এখানে থেকে পড়াশোনা করবে সেহেতু সব চেনা প্রয়োজন।

– তো আমি কি করতে পারি তার জন্য? খাওয়া থামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে সম্রাট। রাশি বিমুঢ দৃষ্টিতে তাকায় সম্রাটের দিকে।
– তুমি তো ভার্সিটি যাচ্ছো সাথে রাশিকেও নিয়ে যাও। বাইরে গেলে ওর ভালো লাগবে৷ তাছাড়া ক’দিন পর তো তোমাদের ভার্সিটিতে ভর্তি হবে রাশি। আগে থেকে সব দেখেশুনে আসুক৷ চেনে রাখলে পরে গিয়ে সুবিধা হবে ওর ক্ষেত্রে।
– মা তুমি পাগল হয়ে গেছো৷ আমি ভার্সিটি যাচ্ছি! বেরাতে নয়। আর ওর সবে এডমিশন পরিক্ষা হয়েছে রেজাল্ট কি আসে দেখো৷ বুয়েটে পড়ব বললে তো আর পড়া যায় না। শান্ত কন্ঠে বলে সম্রাট। সম্রাটের ঠান্ডা মাথায় বলা শান্ত কন্ঠে অপমান রাশির গায়ে লাগে খুব। কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করে না।

-” আমার রাশির উপর ভরসা আছে৷ ও ঠিক চান্স পাবে দেখে নিস৷ যাই হোক আমি যেটা বললাম সেটা করো। রিনা খান কথাটা বলে আমার খাবার দেন মুখে।

– কিন্তু মা! আমি ওকে ভার্সিটি নিয়ে গিয়ে কি করবো। বন্ধুরা কি বলবে৷ আচ্ছা আমি ভার্সিটি থেকে এসে ওকে নিয়ে নাহলে বিকেলে বের হবো হতাশ কন্ঠে বলে সম্রাট।

–” সে তুমি চাইলে আবার বিকেলে ওকে নিয়ে বের হতে পারো৷ তবে এখন ও তোমার সাথে ভার্সিটি যাবে মানে ভার্সিটি যাবে৷ আমি আর দ্বিতীয় কথা শুনতে চাই না তোমার থেকে। কথাটা বলে রিনা খান উঠে যান। সম্রাট আহত চোখে তাকায় তার মায়ের চলে যাওয়ার দিকে। রাশি তো অনেক খুশি সম্রাটের এমন অবস্থা দেখে। ঠোঁট চেপে হাসে রাশি সম্রাটের আড়ালে।

-‘ বেশ হয়েছে৷ আমাকে কথা শোনানো না৷ অপমান করা কথায় কথায়৷ আজ দেখাবো রাশির খেল। সারাদিন বিরক্ত করে মারবো । তখন বুঝবি বেটা রাশিকে অপমান করার জ্বালা৷
– তুমি এখনো বসে কেনো? জলদি যাও রেডি হয়ে আসো৷ তোমার হাতে মাত্র ১০ মিনিট সময় আছে৷ এর মধ্যে না আসলে আমি তোমাকে রেখে চলে যাবো কথাটা বলে সম্রাটও উঠে যায়। সম্রাট যেতেই রাশি নেচে উঠে খুশিতে। এরপর ছুটে রুমে যায় রেডি হতে।

–” ভার্সিটির সামনে সম্রাটের গাড়ি এসে থামে। রাশিকে গাড়ির মধ্যে একটাও কথা বলতে দেয়নি আজ সম্রাট। যখনই কিছু বলতে গেছে সম্রাট ধমকিয়ে চুপ করে দিয়েছে৷ রাশি দাঁতে দাঁত চেপে সারাটা রাস্তা এসেছে। গাড়ি থামতেই রাশি ঝটপট নেমে যায়৷ আর একটু এমন ভাবে থাকলে! সে যেনো দম বন্ধ হয়ে মারা যেতো।
– আগের রাশি নামে এরপর সম্রাট। রাশিকে সম্রাটের গাড়ি থেকে নামতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। সম্রাটের বন্ধুরা ভার্সিটির মাঠের এক পাশে ছিলো৷ সেখান থেকে গেট দেখা যায়। রাশিকে দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহাত, হাসিব, সম্রাটের আরো ফ্রেন্ডরা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রাশির দিকে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তারা।
– রাশি মুখে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে পুরো ভার্সিটিটা একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। এটাই তো তার স্বপ্নের স্থান । ছোট থেকে যেটা লালন করে আসছে মনের মধ্যে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হবে তো? সত্যি পারবে তো সে? এইসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এর মধ্যে।

– সারাদিন কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? যদি থাকতে চাও তো থাকো আমি গেলাম৷ যত্তসব উটকো ঝামেলা। কথাটা আস্তেই বলে সম্রাট। কিন্তু রাশির কর্ণগোচর হয়ে যায় তারপরও৷ রাশি এতে একটুও মন খারাপ করে না।
– সম্রাট বড় বড় ধাপে এগিয়ে যায়। পেছন পেছন রাশিও ছুট লাগায়।

–‘ বন্ধুদের কাছে যায় সম্রাট। সাথে রাশিও।
– কি রে দোস্ত এত দেরি করলি যে? আর তোর সাথে মেয়েটা কে? মামা বিয়ে শাদি কি এর মধ্যে সেরে ফেললি আমাদের না জানিয়ে৷ মেয়েটা কিন্তু জোশ আছে মুচকি হেসে বলে হাসিব৷ ওর কথায় সম্রাট চোখ লাল করে তাকায়।
– আচ্ছা এটাই কি তোদের বাড়ির গেস্ট? ওই কি যেনো নাম একটু ভাবান্তর হয়ে বলে রাহাত।
– রাশি! হাসি মুখে বলে উঠে রাশি। রাশির কথায় রাহাত মৃদু হেসে বলে ও ইয়েস। রাশি।

— আপনারা আমাকে চিনেন? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে রাশি। রাশির কথায় সবাই ঘাবড়ানো দৃষ্টিতে তাকায় সম্রাটের দিকে।

– তুমি কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রি নও যে তোমাকে সবাই নেট সার্চ দিয়ে খুঁজবে৷ আমি একবার বলেছিলাম তোমার কথা। তাই ওরা জিজ্ঞেস করছে৷ নিজেকে এত প্রায়োরিটি দেওয়ার প্রয়োজন নেই ওকে। সম্রাটের কথায় রাশি একটা ভেংচি কাটে।

–” আচ্ছা আপনার ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন না?
– রাশির কথায় হাসিব মুখে চওড়া হাসি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সম্রাট কাটগলায় বলে, ওরা আমার ফ্রেন্ড হয় তোমার নয়। তাই ওদের সাথে আলাপ নাহলেও চলবে তোমার। সম্রাটের কথায় রাশি মুখটা মলিন করে থাকে। রাহাত পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করতে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, হাই আমি রাহাত। রাহাতের কথায় রাশির মুখের হাসিটা আবার ফিরে আসে। সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে আমি রাশি শুনেছেন নিশ্চয়? রাশির কথায় রাহাত ফিক করে হেসে উঠে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। এরপর হাসিব তারপর একে একে সবাই রাশির সাথে পরিচিত হয়।
– খুবই স্বল্প সময়ে রাশি ওদের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠে। আর হবে না কেনো৷ রাশি যে প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি মেয়ে। সবার প্রিয় হতে বাধ্য।

– আচ্ছা ভাইয়া আপনার ফ্রেন্ড এমন গোমড়া মুখো কেনো? সব সময় মুডি মুডি ভাব হুহ আরেকটা ভেংচি কেটে বলে রাশি আস্তে করে । রাশির কথায় রাহাত মুচকি হেসে বলে ও এমনই। কম কথা বলে। কিন্তু মনটা অনেক ভালো ওর।
-” রাহাত এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ক্লাসে যাবি? সম্রাট গম্ভীর স্বরে বলে।
– তুই কি রাশিকে নিয়ে ক্লাসে যাবি সমু? হাসিব কৌতুহলী হয়ে বলে।
– হোয়াট? ওকে নিয়ে কেনো ক্লাসে যাবো? ও এখানে থাকবে। একা একা ঘুরবে। ওর জন্য তো ক্লাস বাদ দিতে পারি না আমি। আমি তো আর বলিনি সাথে আসার জন্য। মা বলল আর নাচতে নাচতে চলে এসেছে ষ্টুপিড গার্ল।

– আহ সমু! এমন করে বলছিস কেনো? তাছাড়া মেয়েটা কিন্তু সত্যি অনেক ভালো। তুই অযথা রাগ করছিস ওর উপর। তাছাড়া এমন কিউট একটা মেয়ের উপর যে কেউ রাগ করতে পারে সত্যি তোকে না দেখলে জানতামই না।
– রাহাতের কথায় সম্রাট চোখ পাকিয়ে তাকালে রাহাত অন্য দিকে ফিরে।

– শুনো আমরা ক্লাসে যাচ্ছি। তুমি যেখানে খুশি যেতে পারো ঘুরতে পারো। তবে হ্যাঁ। ভার্সিটির বাইরে যাবে না। বাড়ি যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যাবো আমি।।আর একদম বিরক্ত করার চেষ্টা করবে না আমাকে। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো থাকবো ওকে। কথাটা বলে সমু বড় বড় ধাপ ফেলে চলে যায়।

— রাশি অসহায় চোখে সম্রাটের চলে যাওয়া দেখে। এরপর করুণ চোখে রাহাতের দিকে তাকালে রাহাত মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে, তুমি এখানেই আশেপাশে থাকো আমরা আসছি একটু পর ওকে। আসলে সমু ফাঁকি দেওয়া একদম পছন্দ করে না। আমাদেরও ক্লাসে যেতে হবে। এসে কথা হবে ওকে বলে রাহাত সবাইকে নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়।
– সবাই চলে গেলে রাশি একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফুকে ভাবতে থাকে সে একা একা কোথায় বা যাবে কি করবে? কেন যে আসতে গেলো এই রাক্ষসটার সাথে৷ এখন ভীষণ ভাবে আফসোস হচ্ছে রাশির৷ সম্রাটকে বিরক্ত করতে এসে! সে নিজেই এখন নিজের উপর বিরক্ত।

– দূর থেকে একজোড়া চোখ গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে রাশির দিকে। বেশ মুগ্ধতার সাথে দেখছে সে চোখ জোড়া।
– মেয়েটা কে রে? ভার্সিটিতে নতুন মনে হচ্ছে? আচ্ছা এইটা মেয়ে নাকি বারবিডল? দেখে মনে হচ্ছে আমার সামনে একটা সুন্দর কিউট পুতুল দাঁড়িয়ে। চোখ মুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বলে রনি। রনির কথায় শান ( রনির বন্ধু) হেসে বলে আমিও অনেকখন থেকে লক্ষ্য করছি মেয়েটাকে। সত্যি আসমানের পরী যেনো সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

– রাশি একটা পিংক কালারের থ্রিপিস পড়ে আছে। পিংক কালারটা যেনো রাশির গায়ে ফুটে পড়ছে এমন ভাব।
– চল আলাপ করে আসি৷ রনি বলে রাশির দিকে তাকিয়ে। রনির কথায় শান অবাকিত চোখে তাকায় রনির দিকে।
– তুই ওই মেয়ের সাথে কথা বলবি। আর ইউ সিরিয়াস রনি? যে ছেলে মেয়েদের পাত্তা দেয়না। মেয়েদের থেকে দূরে সরে থাকে। সে কি-না নিজ থেকে একটা মেয়ের সাথে কথা বলবে আজ। ভাই থাম আগে দেখে নিই সূর্যটা কোনদিকে আছে আজ। শানের কথায় রনি মুচকি হেসে বলে, ওই মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে জানিস? এক দেখায় আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওর মায়াবী চোখের চাহনি আমার ভেতরে তোলপাড় তুলে দিয়েছে। ওর কিউটনেস আমাকে বিভোর করে তুলেছে।

-‘ আচ্ছা আচ্ছা! থাক বাবা আর কিছু বলতে হবে না৷ চল দেখি৷ সুন্দরী মেয়েদের তো আবার দেমাক হয় বেশি৷ দেখ আবার ভাব দেখিয়ে না চলে যায়। শানের কথায় আর পাত্তা দেয় না রনি। রাশির দিকে এগিয়ে যায়। রাশি ভার্সিটির গার্ডেন পাশে দাঁড়িয়ে আছে মুখটা ভাড় করে।

,.. আসুন রনির পরিচয় দিয়ে রাখি…

— রনি এই এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে। দেখতে মাশা-আল্লাহ সাথে অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ। রনি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে। বড়লোকের ছেলে হয়েও কখনো অংহকার দেখায়নি। কিন্তু রনির সম্রাটের সাথে বনিবনা নেই। কথায় আছে না একই বনে দুইটা সিংহ কখনো রাজা হতে পারে না৷ রনি আর সম্রাটের ব্যাপারটাও এমন। দুজনেই ভার্সিটির লিডার পদে নিযুক্ত। কিন্তু কারো সাথে কারো কথা বা কাজে পড়ে না। তাই ভার্সিটির সবাই তাদের শত্রু রুপেই যানে৷ রনি এবং সম্রাট দুজনেই ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট। সমানে চলে দুজনেই। যার ফলে তাদের মধ্যে কম্পিটিশন লেগেই থাকে।

–” রাশি কোন দিকে যাবে বুঝে উঠে না৷ সম্রাটরা যে সেই গেছে আর আসার নাম নেই। রাশি ভাবে সামনের দিকে যাবে। তাই সামনে যেতে যাবে এমন সময় রনি এসে দাঁড়ায় রাশির সামনে। মুখে মৃদু হাসি।
– রাশি ভ্রু কুচকে তাকায় রনির দিকে। এরপর শানের দিকেও তাকায়।
– হাই আইম রনি। ইউ? হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে রনি। রাশি কৌতুহলী হয়ে ভ্রু কুচকে থেকে বলে, আসসালামু আলাইকুম। আমি রাশি। রাশির এমন বিহেভে রনির একটুও খারাপ লাগে না৷ বরং রাশির প্রতি সম্মান মুগ্ধতা আরো বেড়ে যায়। রনি সালামের জবাব দেয় সুন্দর ভাবে।

-. তুমি কি এই কলেজে নতুন? না মানে আগে তো কখনো দেখিনি তাই বললাম আর কি। আমতাআমতা করে বলে রনি। শান দাঁড়িয়ে রনি আর রাশির কথা শুনছে।

– রাশি কৌতুহলের মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলে সেটা আপনাকে বলন কেনো? তাছাড়া আপনি কে বলুন তো। যেচে কথা বলতে এসেছেন। আপনার ব্যাপার কি হুম? একটা ভ্রু নাচিয়ে বলে রাশি। রাশির বাচ্চাসুলভ কথা আর আচরণে রনি ফিক করে হেসে উঠে। রাশির এবার রাগ হয় একটু।
-‘ আচ্ছা আমার পরিচয় তো দিলামই। আমি রনি৷ এই ভার্সিটিতে পড়ি৷ আমি তোমাকে সম্রাটের সাথে দেখলাম৷ সম্রাট আর আমি সেম ইয়ার৷ ফ্রেন্ড বলতে পারো। তোমাকে দূর থেকে দেখলাম একা দাঁড়িয়ে থাকতে তাই আসলাম পরিচিত হতে৷ তুমি এতে কিছু মনে করোনি তো?

– একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন আর অমনি চলে এসেছেন কথা বলতে না? আপনারা ছেলেরা না সবাই এক। যেই একটা সুন্দর কিউট পিউট মেয়ে দেখেন অমনি তার পিছে লাগা শুরু করে দেন মুখ ঘুরিয়ে বলে রাশি।
– এই মেয়ে তুমি কাকে কি বলছো জানো? শান রেগে বলে কিছুটা।
– থাম শান। ও তো ঠিকই বলেছে৷ তাছাড়া একটা অচেনা ছেলে যদি একটা অচেনা মেয়ের সাথে এইভাবে কথা বলতে আসে তার কাছে উদ্ভট লাগবে স্বাভাবিক।
– রনির এই কথাটায় খারাপ লাগে রাশির। তাই সাথে সাথে বলে। আরে না খারাপ লাগেনি৷ আসলে একটু অবাক হয়েছি। এমন তো হামেশাই হয় কি-না। আচ্ছা কি যেনো বলছিলেন? আপনি সম্রাট ভাইয়ার ফ্রেন্ড?
– সমু তোমার ভাইয়া হয়? রনির হঠাৎ এমন প্রশ্নে রাশি ঘাবড়ে যায়৷ বিমুঢ় কন্ঠে বলে না মানে৷ ভাইয়া বলতে কাজিন ভাইয়া।

– ওহ। একটা দীর্ঘশ্বাসে সাথে বলে উঠে রনি।
– আমরা কি বন্ধু হতে পারি? যদি তোমার কোনো সমস্যা না থাকে। হুট করে বলে উঠে রনি। রাশি ভাবান্তর হয়ে তাকায় রনির দিকে। রনি আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে আছে রাশির উত্তর শোনার জন্য।

– কিন্তু ভাইয়া! আপনি তো আমার অনেক সিনিয়র। সিনিয়রের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হকেমন করে হয়?
– রাশির কথায় রনি ঠোঁট চেপে ধরে হাসে।
– কেনো হতে পারে না? মন থেকে চাইলে সবই হয়।।আমার তোমাকে অনেক ভালো লেগেছে আর তুমি সত্যি অনেক ভালো মেয়ে এইটুকু এতখনে বুঝেছি। তাই আমার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম। যদি আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো সমস্যা নেই। তবে যেটা করবে মন থেকে। জোর করে কোনো কিছু কখনো করবে না। রনির এই কথাটা রাশির অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া রাশি অনেক সরল মনের মেয়ে। তাই খটকায় পরে যায় কি করবে সে।

– তুই এখানে কি করছিস? তেজী কন্ঠে বলে সম্রাট। সম্রাটের কথায় রাশি আর রনি দুজনে তার দিকে তাকায়…

চলবে…