মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০২

0
413

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“২য় পর্ব”

–“‘ কলিং বেজে উঠলে রিনা খান এসে দরজা খুলে দেয়। সম্রাট কাক ভেজা হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিনা খানের। আসার পথে বৃষ্টিতে ধরে সম্রাট’কে। সম্রাট মোমবাতির প্যাকেট’টা তার মায়ের হাতে দিয়ে ভেতরেই আসতেই রাশির গগনবিদারী চিৎকার শুনতে পাই। চমকে উঠে রিনা খান এবং সম্রাট। দুজন দুজনের দিকে চমকানো চোখে তাকিয়ে থাকে।

– মা রাশি কোথায়? ওর চিৎকার মনে হলো না? সম্রাটের কথায় রিনা খান চিন্তিত কন্ঠে বলে, ও তো আমার সাথেই ছিলো এখানে৷ ওয়াসরুম যাবে বলে রুমে গেলো আর তুই আসলি। সম্রাট আর দেরি না করে রাশির রুমের দিকে ছুটে যায়। পেছন পেছনে রিনা খানও দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়।
– সম্রাট রাশির রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই রাশি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে সম্রাট’কে। ভয়ে পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে রাশির। সম্রাট’কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাশি৷ সম্রাট যেনো থ মেরে গেছে রাশির কাজে৷ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য তার অনুভূতি গুলো যেনো লোপ পাই। এই প্রথম কোনো মেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে৷ আর এত কাছে এসেছে৷

— রিনা খান কৌতুহলী হয়ে বলে, কি হয়েছে রাশি মা। চিৎকার করছিস কেনো? রিনা খানের কথায় সম্রাট নড়েচড়ে উঠে। রাশি এখনো সম্রাটকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে৷ ভীষণ ভয় পেয়েছে বেচারি।
– কি হয়েছে রাশি? এমন করছো কেনো? দেখো আমরা এখানে আছি। রাশি এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। যার জন্য সম্রাট মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রাশিকে কান্না করতে দেখে সম্রাটের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে।
– সম্রাট রাশির মাথাটা তুলে দুই গালে হাত রেখে রাশিকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। রিনা খান একটা গ্লাসে পানি নিয়ে এসে রাশিকে দেয়। রাশি সেটা হাতে নিয়ে এক নিশ্বাসে শেষ করে।

— কি হয়েছে রাশি বলো? ভয় পেয়েছো? কিছু কি দেখেছো? সম্রাটের কথায় রাশি ভয়ার্ত গলায় বলে এখানে কিছু একটা আছে। আমি রুমে আসতেই আমার গায়ে লাফিয়ে পড়েছে। এখানে ভূত আছে আছে আন্টি। রাশির কথায় সম্রাট ভ্রু কুচকে বলে হোয়াট? ভুত! ভুত বলে কিছু হয় ষ্টুপিড।

– না না আমি সত্যি বলছি। এখানে কিছু একটা আছে৷ আমি এখানে থাকবো না৷ ওরা একা পেয়ে আমাকে নিয়ে যাবে কান্না করতে করতে বলে রাশি।
– রিনা খান সম্রাটের দিকে তাকায় করুণ চোখে। সম্রাট ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।
– আসলে কি হয়েছে বলো তো? তুমি তো দেখতে একদম শাকচুন্নির মতো। তাই তোমাকে দেখার পর ওদের মনে হয়েছে তুমি ওদের প্রতিবেশী। তাই দেখা করতে এসেছে হয়তো। কথাটা বলে সম্রাট ঠোঁট চেপে হাসে। রিনা খান সম্রাটের দিকে রাগী লুকে তাকায়। রাশি করুণ চাহনি নিয়ে বলে, আপনি মজা করছেন আমার সাথে। আমার বিপদে আপনার হাসি পাচ্ছে তাই না৷ আপনাকেও যখন ভুতে ধরবে তখন বুঝবেন হুহ৷ খুব খারাপ আপনি। অনেক পঁচা বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় রাশি।

– আচ্ছা দেখি তোমার ভূত কোথায় আছে। খাটের নিচে অপেক্ষা করছে নিশ্চয়। তারপর সম্রাট ফ্লোরের দিকে তাকাতে দেখে রাশির ফোনটা পড়ে আছে ফ্লোরে। টর্চ জ্বালানো আছে ফোনের। সম্রাট রাশির ফোন তুলে ফ্লোরে মারতেই দেখে একটা টিকটিকি পড়ে আছে সেখানে৷
– এই দেখো তোমার প্রতিবেশী ভূত পেয়ে গেছি। এইটাই তোমার ভূত ছিলো তাই না? সম্রাটের কথায় রাশি অবাক হয়ে তাকায় টিকটিকির দিকে। রিনা খান টিকটিকি দেখে একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে৷

– টিকটিকি ছিলো ওইটা রাশি। তাছাড়া ভূত বলে কিছু হয় নাকি। পাগলী মেয়ে কথাটা বলে রিনা খান রাশির মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
– সম্রাট হাত দিয়ে টিকটিকিটা ধরে দেখে সেটা মারা গেছে।
– আসলে রাশি যখন রুমে আসে৷ তখনই টিকটিকিটা উপর থেকে তার গায়ে পড়ে। টিকটিকি পড়ায় রাশি লাফাতে থাকে তখনই টিকটিকিটা নিচে পড়ে যায় আর রাশির পা উঠে যায় তার উপর। যার ফলে টিকটিকিটা তখনই মারা যায়।

–“”বেচারা টিকটিকি তোমার চিৎকার সহ্য করতে না পেরে স্টোক করেছে মনে হয়। ইসস এমন নিরীহ একটা টিকটিকি তুমি মেরে ফেললে রাশি! উপহাস করে বলে সম্রাট। রাশি রাগী লুকে তাকায় সম্রাটের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে৷ রাশির এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে সম্রাটের গলা টিপে দিতে।

– আহ সমু! কি হচ্ছে এইসব। মেয়েটা এমনি ভয় পেয়ে গেছে৷ তুই আবার মজা করছিস। তাছাড়া অন্ধকারে এমনভাবে আচমকা কিছু পড়লে ভয় পাবে স্বাভাবিক।
– ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক মা। তাই বলে ভূত আছে এটা বলা একদম বোকামি। তাছাড়া তোমার বোনজি সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে ভূতে বিশ্বাস করে ভাবতেই আমার হাসি পাচ্ছে। আসলে ও নিজে শানচুন্নি তাই ওর আশেপাশে সবাইকে এমনই ভাবে৷ কথাটা বলে সম্রাট বেরিয়ে যায়৷ রাশি অসহায় ফেস করে রিনা খানের দিকে তাকায়।
– ওর কথায় কিছু মনে করিস না মা। ও এমনই। আচ্ছা খেতে আয়৷ আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। আজ মনে হয় কারেন্ট আসবে না। বাইরে বৃষ্টি’টাও বেড়ে চলেছে। এরপর রিনা খান উঠে চলে আসে রাশিও তার পিছু পিছু বেরিয়ে আসে৷ রুমে একা থাকার মতো সাহস আপাতত তার নেই।

–” সকালে…
– মা তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও। ভার্সিটি যেতে হবে। কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে নামে সম্রাট। একদম রেডি সেডি হয়ে আসে সে। রাশি তার রুমেই ছিলো৷ আজ রাশির এডমিশন পরিক্ষা আছে। তারই প্রিপারেশন নিচ্ছে সে।

– সমু রাশির আজ পরিক্ষা আছে৷ তুই ওকে পরিক্ষা কেন্দ্রে রেখে তারপর ভার্সিটি যাবি ওকে। মায়ের কথায় সম্রাট অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে, আমাকেই কেনো মা? ও একা চলে যেতে পারবে।
– ঢাকা শহরে রাশি নতুন সমু। ও এখানকার কিছু চেনে না। তাছাড়া তুমি তো ভার্সিটি যাচ্ছো। ওইদিক দিয়ে রেখে যাবে সমস্যা কি? এর মধ্যে রাশি আসে।
– আমি একাই যেতে পারবো আন্টি। আমার সাথে কাউকে যেতে হবে না। কথাটা অভিমান নিয়ে বলে রাশি।

– তুই সমুর সাথেই যাবি রাশি। এরপর সম্রাটের বাবা আসে৷
– গুড মর্নিং বাবা! বাবাকে দেখে বলে উঠে সম্রাট। তার বাবাও হাসি মুখে জবাব দেয়। এরপর রাশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বসেন টেবিলে। (সম্রাটের বাবার নাম সাজ্জাদ খান)

–” ব্যবসার কাজের জন্য আমাকে বাইরে যেতে হবে তিনদিনের জন্য এই দিকটা তুমি সামলিও সমু। বাবার কথায় সমু মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে খাওয়াই মনোযোগ দেয়।
– নাস্তা শেষ করে সম্রাট রাশির জন্য অপেক্ষা করে বাইরে গাড়ির কাছে। রাশি রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে। সম্রাটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ক্লান্ত চোখে তাকায়।এরপর এগিয়ে আসে। কিন্তু রাশি সম্রাটের কাছে না গিয়ে সোজা বেরিয়ে আসে। এতে সম্রাট অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
– ও হ্যালো! ওই দিকে কোথায় যাচ্ছো? গাড়ি এইদিকে। চোখে দেখো না নাকি? সম্রাটের কথায় রাশির রাগ উঠে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে “তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আপনি চলে যেতে পারেন। আমি একাই যাবো। এই শহরে আপনি ছাড়া অনেকে আছে যে আমাকে আমার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। আপনার ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনি এগুতে পারেন বলে রাশি সামনে এগিয়ে যায়।
– রাগে সম্রাটের মুখশ্রী লালাভ হয়ে উঠে। তাকে ইগ্নোর করে যাওয়াটা কোনো ভাবেই যেনো মানতে পারছে না সম্রাট।
– ষ্টুপিড গার্ল। কথার ফুলঝুরি একদম। কাজের বেলায় তো অষ্টরম্ভা। যাক না একা আমার কি৷ শহরে একা চলাচল করা এতো সোজা নাকি। এরপর সমু সানগ্লাস পরে গাড়িতে উঠে যায়।

–” রাশি রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু একটাও রিকশা চোখে পড়ে না তার৷ বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে৷ ১০ টাই পরিক্ষা তার এখন বাজে ৯ টা ৩৫। যেতে ২০ মিনিট মতো লাগবে৷ সময় মতো রিকশা না পেলে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে৷ রাশির এখন আফসোস হয় সম্রাট কে ফিরিয়ে দিয়ে।

–‘ ধুর ভাল্লাগেনা৷ কেন যে ভাব নিতে গেলাম এতো। এখন তো রিকশাও পাচ্ছি না। সময় মতো যদি না যেতে পারি তাহলে? উনি শুনলে আবার একগাদা কথা শোনাবে নিশ্চিত। গ’ন্ডার একটা!সুযোগ পেলে হয় কথা শোনাতে ছাড়বে না৷ জীবনে বউ পাবি না বেটা দেখে নিস আর বউ পেলেও তোরে দিয়ে পা টিপিয়ে নেবে, অনেক অনেক কাজ করিয়ে নেবে হুহ৷ আমিও রাশি যা বলি তাই হয়। রাশির ভাবনার মাঝে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠে। হঠাৎ জোরে হর্ণ বাজায় রাশি লাফ দিয়ে উঠে। ভয় পাওয়া চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে সম্রাট গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। সম্রাট কে দেখে ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে তাকায়।

–‘ পরিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে আছে? নাকি সারাদিন এখানেই থাকতে চাও৷ যদি এখানে থাকতে চাও আমার কোনো সমস্যা নেই। এই সময় রিকশা পাওয়া যায়না এখানে। তাই সারাদিন দুইহাত তুলে মোনাজাত করলেও গাড়ি আসবে না। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে৷
– সম্রাটের কথায় রাশি কিছু বলার জন্য উদ্যোগ নিবে তখনই সম্রাট হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে নো মোর টক! গাড়িতে উঠো ফাস্ট। সম্রাটের কথায় রাশি মুখটা গোমড়া করে গাড়িতে উঠে।

-‘ শুনো একদম বকবক করবে না৷ চুপচাপ বসে থাকবে৷ তোমার টেপরেকর্ডার চালু করলে আমি মাঝপথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো বলে রাখছি।
– কিহ আমার কথা টেপরেকর্ডার। আমার তো বয়ে গেছে আপনার সাথে কথা বলতে হুহ।

– উ’জবুক, রা’ক্ষস, হ’নু’মান গোমড়া মুখো গাড়িতে তুলে অপমান করছে। আমি কি তোকে বলেছি আমাকে গাড়িতে নে৷ নেহাতই বিপদে পড়েছি তাই৷ নাহলে এই রাশি কারো কথা শোনার মেয়ে নয়৷ কথা শোনায় হুহ। মনে মনে বলে কথা গুলো রাশি।

–” গাড়ি এসে থামে রাশির গন্তব্যে। গাড়ি থামা মাত্র রাশি ঝটপট নেমে দাঁড়ায় গাড়ি থেকে। ভেতরে যাওয়ার জন্য হাঁটা দেবে এমন সময় সম্রাট পিছন থেকে বলে, রেখে যাচ্ছি বলে ভেবোনা আবার নেওয়ার জন্য আসবো। পরিক্ষা শেষ করে রিকশা ধরে বাড়ি ফিরে যাবে! এরপর সম্রাট এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। রাশি রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে সম্রাটকে বকতে বকতে ভেতরে যায়।

–” সময়টা যাচ্ছে বর্ষাকাল। যখন তখন হঠাৎই বৃষ্টির আগমন। আর যখনই বৃষ্টি হোক না কেনো! ঝুম বৃষ্টি হয়ে তবে নিস্তার। রাশির বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে। তার মতে বৃষ্টি সৃষ্টির একটা বড় নিয়ামত। যেটা সব কিছু ধুয়েমুছে একদম পরিষ্কার করে দেয়। নতুন করে সব কিছু শুরু করতে শেখায়। বৃষ্টি দেখলে রাশি নিজেকে ধরে রাখতে পারে না৷ সেটা হোক দিনের আলোয় কিংবা রাতের আঁধার। রাশি পরিক্ষা দিয়ে দুপুরের দিকে ফিরে এসেছে। এখন সময়’টা বিকেলে। চারিদিকে ঘনোমেঘ। এখনই আকাশ থেকে টুপ করে বৃষ্টি খসে পড়বে৷ রাশি বারান্দায় থেকে এই সময়টা বেশ উপভোগ করছে। রাশির পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে৷ যার ফলে তার মনটা অনেক ফুরফুরে মেজাজে আছে। তার সাথে যোগ দিয়েছে এমন পরিবেশ।

–” হঠাৎ আকাশ ফেঁটে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। সাথে মেঘের মৃদু গর্জন। বৃষ্টির প্রতি ফোঁটার সাথে রাশির মনটাও নেচে উঠে। বৃষ্টিতে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ায় বড় সাধ জাগে৷ আর কোনো বাধ’বিচার করে না রাশি৷ ছুটে চলে যায় ছাদে। রিনা খান এই সময়টা নিজের রুমে বিস্রাম করছিলেন৷ যার ফলে রাশিকে তার চক্ষুগোচর হয়না৷

-” ভার্সিটি শেষে ক্যানটিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো সম্রাটরা সবাই। এরপর একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরে সে।
– বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে থামতেই চোখ যায় ছাদে৷ সাথে সাথে দেখতে পাই একজন বৃষ্টি বিলাসীকে। যে পরম আবেশে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করছে। বৃষ্টির ছন্দে সারা ছাদ জুড়ে থইথই করে ঘুরছে।

— চোখ আটকে যায় সেখানে সম্রাটের। মুগ্ধতায় ঘেরা চাহনিতে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে।

–“আচ্ছা এই মুহূর্তে কি নাম দেওয়া যায় এই বৃষ্টি বিলাসীর? বৃষ্টি পরী! নাকি প্রকৃতির রাণী? নাহ কোনোটাই যায় না ওই পরীর সাথে। যা নাম দেয়না কেনো! কম মনে হবে৷ নিজের ভাবনায় নিজে হেসে উঠে সম্রাট। এরপর গাড়ি নিয়ে ভেতরে চলে আসে। কারণ রাশিকে এতখন ভিজতে দেওয়া ঠিক হবে না৷ শরীর খারাপ করতে পারে৷

–” সম্রাট বাড়ির মধ্যে আসতেই রিনা খান চিন্তিত গলায় বলে, রাশিকে কোথাও দেখছি না৷ ঘরেও নেই মেয়েটা৷ এই বৃষ্টির মধ্যে মেয়েটা গেলো কোথায় বলতো?
মায়ের কথায় সম্রাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, তোমার গেস্ট অসুস্থকে ওয়েলকাম করতে উপরে গেছে মা। সম্রাটের কথায় রিনা খান অবাক হয়ে বলে মানে রাশি ছাদে? সে-কি ভিজতে গেছে। এই সময় বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে তো। যদি কিছু হয় ওর তাহলে ওর মাকে কি জবাব দেবো আমি। তাছাড়া রাশির বাবা ভীষণ রাগী আর কেয়ারিং মানুষ। উনি অনেক ভরসা করে রাশিকে আমার কাছে দিয়েছেন। এই মেয়েটাও না আমাকে পাগল করে ছাড়বে। কথাটা বলে রিনা খান ছাদের দিকে যেতে গেলে সম্রাট থামিয়ে দেয়।

– আমি যাচ্ছি মা। তোমার এমনি শরীর খারাপ। বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে আরো শরীর খারাপ করবে। কথাটা শেষ করে সম্রাট গটগটে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যায়।

– ছাদের দরজার কাছে এসে থমকে যায় সম্রাট। রাশি দুইহাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির পানি গায়ে মাখছে। মুহূর্তটা দারুণ লাগছে সম্রাটের কাছে৷ ইচ্ছে করছে এই সময়টাকে এখানেই আটকে রাখতে। সম্রাটের মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি উদয় নেই। সাথে সাথে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন টা বের করে ক্যামেরা বন্দি করে নেয় রাশির বৃষ্টি বিলাসের মুহূর্তটা। সম্রাট জানে কারো অনুমতি ছাড়া এই কাজটা করা ঠিক নয়। তারপর সম্রাট যেনো নিজেকে বোঝাতে পারে না৷ তাই রাশির অগোচরে কাজটা করে বসে।

–” হঠাৎ বিকট শব্দে বিদুৎ চমকে উঠে। এতে রাশির মন-সংযোগ নষ্ট হয়। চট করে চোখ খুলে সামনে ঘুরতেই সম্রাটকে তার দিকের তাকিয়ে থাকতে দেখে।
– ভেজার ফলে রাশির পোশাক শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। মুখের উপর বৃষ্টির পানি বিন্দু বিন্দু জমে আছে। এতে রাশিকে আরো স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে। রাশি দুইহাত দিয়ে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা করে। ওড়নাটা ভালো করে টেনে ঠিক করে। সম্রাট চোখ ফিরিয়ে নেয় রাশির দিক থেকে।

– এক মিনিটের মধ্যে নিচে দেখতে চাই তোমাকে। কথাটা বলে সম্রাট দাঁড়ায় না আর সেখানে৷ আবারও গটগটে পায়ে চলে আসে৷ রাশি মুখটা ফ্যাকাসে করে নিচে চলে আসে।

— চলবে…