যতনে রাখিবো পর্ব-৩৭ এবং শেষ পর্ব

0
366

#যতনে_রাখিবো

৩৭_[শেষ]
রিয়ার জ্ঞান ফিরলেও সে ভয়ে উঠে যেতে পারছে না। তাথৈ কটমট চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরে বেচারি ঢোঁক গিললো। মাথার পেছনটা ফোলে ওঠে ব্যথায় টনটন করছে। লোপার অবস্থা দেখে রিয়া আরও বেশি ভয় পাচ্ছে। লোপার মতো একটা সাইকোকেও তাথৈ হারিয়ে দিয়েছে! তাথৈ যদি এখন আবার তাকে মারতে শুরু করে!
নোমানের আসতে বেশি সময় লাগলো না। সে এসে দুই মেয়ের এমন হাল দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারল না। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,

-ওদের এই হাল আপনি করেছেন ভাবী!

-নোমান সাহেব আমার হাত কিন্তু এখনও চুলচুল করছে। নাগিন দুইটাকে আমার চোখের সামনে থেকে সরান। নয়তো আমি কিন্তু আবার কিছু একটা করে ফেলবো।

লোপার দিকে তাকিয়ে নোমান হতভম্ব হয়ে গেল। কাকের বাসার মতো এলোমেলো চুল। ঠোঁটের কোনে রক্ত। মেকআপ লেপ্টে ভূতের মতো দেখাচ্ছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। লোপা নামটা একসময় নোমানের কাছে আতঙ্কের অপর রুপ ছিল। স্যারকে কলে না পেলে সব রাগ তার উপর দিয়ে ঝাড়ত। কিন্তু ভাবী তো পুরো ফাটিয়ে দিয়েছে। ভাবীর গায়ে কি আদোও এত জোর আছে? দুইটা মেয়েকে মেরে আলু ভর্তা বানিয়ে ফেলেছে।
তাথৈ নোমানকে পুলিশে কল দিতে বললেও নোমান তা করল না। স্যারের অনুমতি না নিয়ে সে এমন কিছুই করতে পারবে না। নোমান পুলিশে খবর না দিলে তাথৈ রেগে বলল,

-এরা দুইটা আপনার স্যারের সাথে কী করতে চেয়েছিল আপনি জানেন?

নোমান সত্যিই জানে না। তাই বোকার মতো জিজ্ঞেস করে বসলো,

-কী করেছে ভাবী?

-আমি বলতে পারবো না। তবে আপনার স্যারের সাথে এরা খুব ভালো কিছুও করেনি এটা জেনে রাখুন।

-ঠিক আছে ভাবী।

-এখনও কি আপনি এদের পুলিশে দিবেন না?

-ভাবী আপনি প্লিজ রাগ করবেন না। এখন পুলিশ এলে মিডিয়ায় জানাজানি হবে। জানেনই তো মিডিয়ার কাজই তিলকে তাল বানানো। ওরা ব্যাপারটাকে খুব বাজে রুপ দিবে। আপনি এখন স্যারকে নিয়ে বাসায় চলুন। যা করার স্যার নিজেই করবেন।

-আপনার স্যার কচু করবেন। বেহুশ হয়ে তো পড়ে আছেন।

লোপাকে পুলিশে না দিয়ে তাথৈ কিছুতেই যাবে না। নোমান অনেক কষ্টে তাথৈকে বোঝাতে সক্ষম হলো। এখন স্যার সেন্সে নেই। পুলিশ এলে উনার দিকের স্টোরিটা জানাতে পারবেন না। তাথৈ মেনে নিলো। নোমানের সাথে অভয়কে ধরে গাড়িতে নিয়ে এলো। অভয়কে সিটে শুইয়ে দিয়ে নোমান সামনে ড্রাইভারের সাথে বসেছে। তাথৈ অভয়ের মাথা তার কোলে তুলে নিলো। আজকের ঘটনা গুলো মনে পড়ে রাগও লাগছে আবার হাসিও পাচ্ছে। জামাই নিয়ে মারামারি করতে হবে এটা তাথৈ কখনও ভাবেনি। গাড়ি চলছে। অভয় এখনও অচেতন। তাথৈ অভয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-নায়ক সাহেব, সজ্ঞানে দূরে থাক নেশার ঘোরেও যদি আপনি কখনও আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের কাছে গিয়েছেন, তাহলে সেদিনই হবে আপনার জীবনের শেষ দিন। আপনার বউকে এখনও চিনেননি। খু*ন করে ফেলব একেবারে। আপনার এক্সের কী অবস্থা করেছি দেখেছেন তো?

বাসায় নিয়ে আসার পরও অভয়ের ঘুম ভাঙছে না। ঔষধের ডোজ বেশি দিয়ে ফেলেছে নাকি? তাথৈ অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পড়ল। এর মধ্যে নোমান ডাক্তারকে কল দিয়ে ফেলেছে। রাত অনেক হয়ে গেলেও ডাক্তার আসবেন জানিয়েছেন। তাথৈয়ের সব রাগ এখনও লোপার উপর। নাগিনটাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছে। হাত দুটো ভেঙে ফেললে উচিত শিক্ষা হতো। তাথৈকে চিন্তা করতে দেখে নোমান বলল,

-ভাবী ডাক্তার হয়তো পথেই আছে। আপনি টেনশন করবেন না।

-কাজটা কিন্তু আপনি ভালো করেননি নোমান সাহেব।

নোমান বুঝলো তাথৈ কোন কাজের কথা বলছে। তাই সে বলল,

-স্যারের চিন্তাভাবনার সামনে আমাদের চিন্তাভাবনা ছেলেমানুষি লাগবে। স্যার যে শাস্তি দিবে সেটার কথা আমরা ভাবতেও পারবো না। আমার উপর বিশ্বাস না করুন। কিন্তু স্যারের উপর বিশ্বাস রাখুন।

তাথৈ মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-দেখেছি তো আপনার স্যার কেমন। পুরুষ মানুষ হয়েও একটা মেয়ের কাছে ইজ্জত হারাতে বসেছিল।

—–
বেহুশ করা জাতীয় কোনকিছু বা ঘুমের ঔষধ না, অভয়কে ড্রাগস দেওয়া হয়েছিল। ড্রাগের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার কারণেই গোটা একটা দিন কেটে গেলেও অভয়ের হুঁশ ফিরছে না। যদিও ডাক্তার বলেছে এখন আর কোন রিস্ক নেই। দু-এক দিনের মধ্যেই অভয় ঠিক হয়ে যাবে। তবুও তাথৈয়ের লোকটাকে এরকমভাবে দেখতে ভালো লাগছে না। তাথৈ আপুদের কাউকে জানায়নি। ভাইয়ের প্রতি দুই বোনের ভালোবাসার কোন শেষ নেই। যদি জানতে পারে তাদের ভাইয়ের সাথে কী হয়েছে তাহলে দু’জন কী করবেন তাথৈও জানে না। সে অবশ্য অভয়ের যথেষ্ট খেয়াল রাখছে। অভয়ের মাথার পাশে বসে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে একা একাই কথা বলছে।

-আগে যদি জানতাম ওই লোপা কোপা আপনাকে ড্রাগস দিয়েছে তাহলে ওর চুল একটাও মাথায় অবশিষ্ট রাখতাম না। একেবারে টাকলা করে ছেড়ে দিতাম। কত্ত বড় সাহস!

-আমার মনে হয় তুমি ওকে যথেষ্ট শাস্তি দিয়ে এসেছ।

অভয় হঠাৎ কথা বলে উঠলে তাথৈ ভয় পেয়ে গেল। সে হুড়মুড়িয়ে দূরে সরে আসতে চাইলে অভয় তাথৈয়ের হাত ধরে ফেলল। তাথৈকে যেতে না দিয়ে আগের মতোই নিজেও শুয়ে রইল। তাথৈ সন্দেহের গলায় বলল,

-আপনি কখন জেগেছেন?

-যখন তুমি লোপার চুল ছেঁড়ার প্ল্যান করছিলে।

-আপনি সব শুনেছেন!

অভয় কিছু বলল না। তাথৈয়ের দিকে তাকালে তাথৈ চুপ হয়ে গেল। লোকটার উপর রাগ ছিল। কিন্তু এখন কেনই যেন রাগ দেখাতে পারছে না।

-তাথৈ।

-হুম।

অভয় হয়তো কিছু বলতো। কিন্তু তার আগেই অভয়ের ফোন বাজতে লাগলে তাথৈ বলল,

-আপনার এই ফোন এক সেকেন্ড চুপ করে থাকে না। আগে একে শান্ত করুন।

তাথৈ নিজে উঠে গিয়ে ফোন এনে অভয়ের হাতে দিল। স্ক্রিনে নাম্বারটা দেখে অভয় একটু সতর্ক হলো। শোয়া থেকে বসে কল রিসিভ করলো। তাথৈ যাচ্ছিল অভয়ের জন্য খাবার আনতে। সে দরজা পর্যন্ত যেতে অভয় ডাকল।

-তাথৈ।

-বলুন।

অভয় ততক্ষণে গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে ফেলেছে। তাথৈয়ের কাছে এসে বলল,

-আমার সাথে চলো।

তাথৈ অবাক হয়ে বলল,

-কোথায়?

অভয় কোন উত্তর দিল না। তাথৈয়ের হাত ধরে ওকে কোথাও নিয়ে যেতে লাগল। পথে তাথৈ অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে,

-আরে কী আজব! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটা তো বলবেন? আর হুট করে আপনার এত কী জরুরি কাজ পড়ে গেল। কিছু তো বলুন।

অভয় এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। তার বাসা থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব খুব বেশি না। তাই পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না। অভয় তাথৈকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমেই কাউকে খুঁজতে লাগল। তাথৈ ভেবে পাচ্ছে না অভয়ের মাথায় কোন গণ্ডগোল হলো নাকি। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজতেই অবশেষে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পেয়ে গেল। মিতু চলে যায়নি দেখে অভয় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। মিতুও অভয়কে দেখে খুশি হয়েছে। মিতুর দিকে এগোনোর সময় তাথৈয়ের মনে হচ্ছে সে এই মহিলাকে আগে কোথাও দেখেছে। ভীষণ চেনা লাগছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটাই মনে করতে পারছে না। অভয় তাথৈকে নিয়ে মিতুর সামনে দাঁড়ালে মিতু ওদের দেখে হেসে বলল,

-ভেবেছিলাম তোমাদের একসাথে দেখা হবে না।

-আজই চলে যাচ্ছ?

-হুম। তোমাকে জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তুমি মনে হয় ব্যস্ত ছিলে।

তীক্ষ্ণ চোখে তাথৈ মেয়েটাকে দেখছে। অভয় এই মেয়েকে চিনে? চিনলেও কীভাবে? মিতু তাথৈকে লক্ষ্য করেই হাসি আরও প্রসারিত করে বলল,

-আমাকে চিনতে পারছো না, তাই তো?

মিতু এবার তাথৈকে জড়িয়ে ধরলে তাথৈয়ের মনে পড়ল বাবাইয়ের স্কুলে উনার সাথে দেখা হয়েছিল। সেদিনও উনি তাথৈকে জড়িয়ে ধরেছিল। মিতু তাথৈকে ছেড়ে অভয়ের উদ্দেশ্যে বলল,

-তোমার বউটা কিন্তু ভীষণ মিষ্টি।

অভয় সামান্য হাসলো। মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে সে। না মিতুকে দুঃখী দেখাচ্ছে।

-তোমার হাজবেন্ড কোথায়?

-সামিকে একটু ঘুরিয়ে আনতে গেছে।

-ফ্লাইট কয়টায়?

-সাড়ে দশটা।

অভয় সময় দেখল। এখনও কিছু সময় বাকি আছে। দু’জনের কথার আগা মাথা তাথৈ কিছুই বুঝতে পারছে না। দু’জন দু’জনকে চেনে এটা বোঝা যাচ্ছে। উনারা কি আত্মীয়? পাড়াপ্রতিবেশি নাকি বন্ধু? মিতুর স্বামীকে আসতে দেখা গেলে মিতুর ধ্যান ওদিকে যেতেই তাথৈ নিচু গলায় অভয়কে জিজ্ঞেস করল,

-আপনারা কি বন্ধু?

অভয় উত্তর দেওয়ার আগেই মিতুর স্বামী চলে এসেছে। ভদ্রলোকের সাথে অভয়ের পরিচয় নেই। কিন্তু তাকে কে না চিনে? এটা অভয় খান বুঝতে পেরেই লোকটা কেমন বোকার মতো তাকিয়ে রইল। মিতুর ছেলে অভয়কে দেখেই উচ্ছাসে বাবার কোল থেকে নেমে পড়ল। মিতু স্বামীর সাথে অভয়কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল,

-বাবুর আব্বু। বাবা ছেলে দু’জনই তোমার ভীষণ ভক্ত।

অভয় হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেও লোকটা বোকার মতো দেখতেই থাকল। অভয় কিন্তু হাত ফিরিয়ে নেয়নি। এটা বুঝতে পেরে লোকটা কিছুটা লজ্জিত হয়ে অভয়ের হাত ধরে নিলো। মিতুর হাজবেন্ড গলায় বিস্ময় নিয়ে বলল,

-আপনার সাথে মিতুর পরিচয় আছে জানতাম না!

মিতু বলল,

-আমরা ইউনিভার্সিটিতে এক ডিপার্টমেন্টে ছিলাম।

মিতুদের ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে। আর বেশি দেরি করা যাবে না। যাবার আগে মিতু আরেকটি বার তাথৈকে জড়িয়ে ধরলো।

-তুমি ভীষণ চমৎকার একটি মেয়ে তাথৈ। সবসময় এরকমই থেকো।

তাথৈকে ছেড়ে অভয়ের দিকে দেখে বলল,

-আসি সামির। ভালো থেকো।

মিতুরা চলে যাচ্ছে অভয় ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাথৈ আবার অভয়কে দেখছে। মিতুরা কিছুটা দূরে চলে যেতেই তাথৈ বলল,

-মেয়েটা কে ছিল?

-ওর কথাতেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম।

কথাটা শুনে তাথৈ থমকে গেল। টলমল নয়নে পেছন থেকে মিতুকে যেতে দেখছে। উনার জীবনে এই মেয়ের গুরুত্ব এতটাই! তাথৈ ভুল বুঝতে পারে ভেবেই অভয় বলল,

-তোমাকে অনেককিছু বলার আছে তাথৈ। তুমি কি শুনবে?

রুদ্ধ গলায় জেদি ভাবে তাথৈ বলল,

-অবশ্যই শুনবো।

পাবলিক প্লেসে বেশিক্ষণ না থেকে দু’জন গাড়িতে চলে এলো। খুব ধীর গতিতে গাড়ি চলছে। তাথৈ অপেক্ষা করছে অভয় কখন বলবে।

-আমাদের দু’জনকে জড়িয়ে মিডিয়ার তখন অনেক জাল ঘোলা হচ্ছিল। আমি অবশ্য এসব পাত্তা দিচ্ছিলাম না। কারণ আগেও এমন পরিস্থিতির সামনা অনেকবারই করতে হয়েছে। দু’দিন পর সব নিজে থেকেই থেমে যায়। তখনই আমার দেখা মিতুর সাথে হয়। মিতুর সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটি লাইফ থেকে। সাত/আট বছর পর মিতু আমার সামনে এসে। আমাকে ওর শেষ ইচ্ছার কথা জানায়। দেশ ছাড়ার আগে আমার বউ দেখতে চায়। তখন আমার বিয়ে করার কোন প্ল্যান ছিল না। তবে মিতুর কথা ফেলা আমার জন্য সহজ ছিল না।

-তাই পাত্রী খোঁজা ঝুটঝামেলায় না পড়ে আমাকেই বলির বকরী বানালেন?

-তখন পরিস্থিতিটাই এমন ছিল।

তাথৈ রাগী গলায় বলল,

-খবরদার পরিস্থিতির দোষ দিবেন না।

-তুমিও তো বিয়েটা বাধ্য হয়েই করেছিলে।

-কিন্তু আমার মনে আপনার মতো কুটিলতা ছিল না।

-কুটিলতা আমিও করিনি তাথৈ। চাইলেই আমাদের বিয়েটা একটা এগ্রিমেন্টের মতো হতে পারত। তুমি নিজেও কিন্তু সেটাই চেয়েছিলে। তবে আমি চাইনি একটা কাগজের টুকরায় সই করে কয়েক মাসের জন্য দু’জন একসাথে থেকে বিয়ের মতো পবিত্র একটা সম্পর্কের অপমান করতে।

-এখন তো খুব মান করেছেন।

তাথৈ সবটা না বুঝতে চেয়েই অল্পতে রেগে যায়। যেমন এখন রেগে গিয়ে আসল কথাটাই বুঝতে চাচ্ছে না।

-এখন আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন? আপনার গার্লফ্রেন্ডের কথা রাখতে বিয়ে করেছেন। এখন তো গার্লফ্রেন্ড চলে গেছে এখন কি আমাকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন?

অভয় অবিশ্বাস্য চোখে তাথৈকে দেখছে। মানুষের ওভার থিংকিংয়েরও একটা লিমিট থাকে৷ কিন্তু তাথৈয়ের নেই।

-আমি শুধু তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম।

-কেন?

-কারণ তোমার সবটা জানা উচিত।

-কেন উচিত?

-তোমাকে নিয়ে আমি আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতো চাই।

তাথৈ রেগে ছিল। কথাটা শুনলেও তেমন খেয়াল করেনি।

-কেন শুরু করবেন?

-কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি বোকা।

মুখ ফসকে বলে ফেলে অভয় চুপ হয়ে গেল। তাথৈ বিস্ময়ে বড়ো বড়ো চোখে অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অভয় মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছে। মনের কথা এভাবে বলতে চায়নি। তাথৈয়ের মুখে দুষ্টুমির হাসি দেখা দিয়েছে।

-আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। বাংলাদেশের সুপারস্টার অভয় খান আমাকে ভালোবাসে! হাজারো মেয়েদের স্বপ্নের পুরুষ আমার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে!

তাথৈ মজা নিচ্ছে! এরকম একটা মুহূর্তেও কোন মেয়ে মজা নিতে পারে। অবশ্য তাথৈয়ের দ্বারা সবই সম্ভব। অভয় তাথৈয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-অভয় খানের বউ হয়েছ। অবশ্যই তার ভালোবাসা তুমিই পাবে। এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।

অসভ্য লোক একটু মজাও নিতে দিলো না। তাথৈ মুখ মুচড়িয়ে বলল,

-অভয় খানের বউ হয়েছি এটাই তো জীবনের সবথেকে বড় দুঃখ।

অভয় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

-দুঃখ!

-দুঃখ না? দু’দিন পরপর একটা করে এক্স বেরিয়ে আসে। একটু আগেও একজনকে দেখলাম। এখন আবার শুনি তার কথাতেই নাকি আমাকে বিয়ে করেছেন।

তাথৈয়ের বলার ধরন দেখে অভয় হেসে ফেলল। তাথৈ ফোঁস করে দম ফেলে বলল,

-এমন এক বেডাকে বিয়ে করেছি যাকে ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই।

-কিন্তু এই বেডা তো শুধু তার বউকেই ভালোবাসে।

অভয়ের মুখে এভাবে ভালোবাসার কথা শুনতে ভালো লাগার সাথে লজ্জাও লাগছে।
এসব ভালোবাসার কথার মাঝেও তাথৈয়ের অন্য একটা জিনিসে ধ্যান গেল। সে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল।

-এই থামুন।

এমনিতেই থামতে হতো। ওরা বাসায় চলে এসেছে। তাথৈ ঝট করে অভয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-ওই মেয়েটা আপনাকে কী নামে ডেকেছিল?

-কোন মেয়েটা?

-একটু আগে যে এয়ারপোর্টে দেখা হলো। কী যেন নাম? হ্যাঁ, মিতু। মিতু আপনাকে সামির নামে কেন ডেকেছে? আপনার নাম তো অভয়।

অভয় আজ আর লুকালো না। সত্যিটা বলেই দিল।

-আমার বাবা মা’র দেওয়া নাম কিন্তু সামির।

অভয়ের নাম সামির! এতদিনেও সে কীভাবে জানলো না? তাথৈ এবার হিসেব মিলিয়ে ফেলেছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই ওই রং নাম্বারের ছেলেটা অভয়ই।

-আপনিই তাহলে এতদিন রং নাম্বারে কল করে আমাকে জ্বালাতেন! আমি কী বোকার বোকা! আপনার কন্ঠও চিনতে পারিনি।

-আমার বউ যে এত গালি দিতে পারে সত্যিই জানা ছিল না। তবে গালি গুলো কিন্তু মিষ্টি ছিল।

তাথৈ আগুন চোখে তাকিয়ে অভয়কে ভস্ম করে দিতে চাচ্ছে। অভয় তাথৈয়ের রাগ দেখে হাসছে।

-আমাকে তুমি এত ভালোবাসো সেটা আমাকে ছাড়া দুনিয়ায় সবাইকে বলে বেরিয়েছ। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না।

-শয়তান লোক, আপনার সাথে আমি আর কথাই বলবো না। আপনি আগেই ধোঁকা দিয়ে আমার মনের কথা জেনে নিয়েছেন।

তাথৈ রেগে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরল। অভয় তার পেছন পেছন আসছে। তাথৈ ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

-আপনার মতো অসভ্য বদ লোক দুনিয়ায় আর একটা নেই। আমার মনের কথাগুলো জেনে নিয়েও কেমন আমার সামনে নাটক করে গেছেন। আপনার শাস্তি আগামী এক মাস আমি আপনার সাথে কথা বলবো না।

-একমাস তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমি এমনিতেই মারা যাবো। প্লিজ লক্ষ্মীটি এই শান্তি দিও না।

-কথা বলবেন না। তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়বে।

সমাপ্ত