#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
হাসিনা খান মনমরা হয়ে নিজের রুমে বসে রয়েছেন। একমাত্র পুত্রবধূকে নিয়ে তার কতই না স্বপ্ন ছিল। দিশা নি:সন্দেহে সুন্দরী একজন। কিন্তু উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে ও নয়। ওদের সমাজের মানুষের পাশে দিশা বড্ড বেমানান। সামলাতে পারবে তো এখানকার নিয়ম কানুন?
রাহাত খান ভেতরে এসে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালেন। মুখ গোমড়া করে হাসিনা খান বললেন, কী দেখছ?
-তোমাকে। এখনো রাগলে আগের মতোই সুন্দর লাগে।
-আমি এখন একদমই রোমান্টিক মুডে নেই।
-ঝগড়া করার মুডে আছ?
-কেন তুমি ওদের সম্পর্কটা মানলে?
তার পাশে বসে রাহাত খান বললেন-
ছেলে হারানোর ভয়ে।
-মানে?
-রাদিন ও দিশার চোখে একে অপরকে পাওয়ার যে আকুতি আমি দেখেছি তা ভয়াবহ। ওরা একে অপরের সঙ্গে থাকতে যেকোনো কিছু করতে পারে।
-রাদিনের টাকা না থাকলে ওই মেয়ে দু’দিনও থাকবে না।
-রাদিনের একাউন্ট এ অনেক টাকা রয়েছে। এসব তো আর আমার মুখের কথায় আমার কাছে চলে আসবে না। তাছাড়া ও শিক্ষিত ছেলে। আমার রেফারেন্স দিয়েও যেকোনো কোম্পানিতে ভালো জব নিয়ে নেবে।
এইবার একটু শান্ত হোন হাসিনা খান। রাহাত খান আরও বললেন-
একমাত্র ছেলে ও আমার। এসব করলে আমার মানহানি হবে। তার চেয়ে আমরাই বরং সবটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিনা খান বললেন, মন থেকে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
-কেন ভিলেন হতে চাইছ?
-এই গল্পে নাহয় আমিই ভিলেন হলাম!
এই বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান হাসিনা খান। রাহাত খান আপনমনে বললেন, আমি যা করেছি আমাদের ভালোর জন্যই করেছি।
-আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে তোমার বাসায় আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে।
দিশার কথা শুনে রাদিন বলল, আমিও!
-ধরা খাওয়ার পর ভেবেছিলাম সব শেষ।
-এত সহজে শেষ হতে দিয়েছি? প্রয়োজনে সবকিছু ছাড়তে রাজি ছিলাম আমি।
-এত ভালোবাসো আমায়?
-অনেক।
দিশা ওর মা কে রুমে আসতে দেখে তড়িঘড়ি করে ফোন রেখে দিলো। দিলোরা খাতুন কাছে এসে বললেন, এত বড়ো ঘরের ছেলে তোকে পছন্দ করে। সবটা বাসায় জানালেই পারতি?
-ভয় পেয়েছিলাম মা।
-যা হওয়ার হয়েছে। এখন বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই বাঁচি। রাদিনকে বল বিয়ের তারিখ দেওয়ার জন্যে। আবার যদি ওর মতিগতি পাল্টে যায়!
দিলোরা খাতুনের কথা শুনে শুনে বোঝা যাচ্ছে, তিনি অনেক খুশি নিজের মেয়ের জন্য। ওমন একটা বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন যে প্রায় মেয়েরই থাকে।
রাদিন তারিখের কথা জানানোর আগেই দিশা ওকে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বলল। অবাক করার বিষয় হলো, খুব দ্রুত বিয়ের তারিখ ঠিক করে রাদিন। ও কোনো এনগেজমেন্ট এর আয়োজন করতে চায় না জানায়। একেবারে ধুমধামে বিয়ের আয়োজন শুরু করতে বলে বাসায়। যা শুনে হাসিনা খান বেশ হতাশ হোন। বিয়েটা কোনোমতে আটকানো যাবে না ভেবে মনটা একবারেই ভেঙে যায় তার।
মা বাবা বিয়ের তারিখে দ্বিমত পোষণ করেনি বলে খুশি হয় রাদিন। ও নিজের রুমে দিকে পা বাড়ায়। পথিমধ্যে রাইদাকে দেখে বলল, প্রস্তুতি শুরু করে নে। এক মাত্র ভাই এর বিয়ে বলে কথা।
রাইদা ভ্রু কুচকে বলল, কত নাম্বার প্রেমিকা এটা তোর?
-মানে?
-আমাকে সে ছবি দেখিয়েছিলি এই মেয়ে তো সেই মেয়ে নয়।
হালকা কেশে রাদিন বলল, কাল মেকআপ ছিল বলে বুঝিসনি।
-তাই?
-আরে প্রেমিকা যেই হোক, বউ আমার দিশাই হচ্ছে। ভাবী তোর ও ই হবে। সো রেডি হয়ে নে।
এই বলে রাদিন চলে যায়। রাইদা বিড়বিড়িয়ে বলল, ঠিকই তো! আমার ভাবী দরকার তা পেলেই হলো।
ফুয়াদ ও আইরার বিয়ের তারিখও ঠিক হয়েছে। বিয়ের শপিং শুরু করবে জানায় ফাতেমা বেগম। তবে তিনি ফুয়াদ ও আইরাকে নিজেদের পছন্দ মতন একসঙ্গে কেনাকাটা সেরে নিতে বলেন। এটা মূলত ফানজিয়ার কথাতেই করেন তিনি। কেননা ফানজিয়া চায়, ফুয়াদ আইরার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুক। এতে করে বিয়ের সময়ে ওর মনটা খারাপ থাকবে না। ফানজিয়াকে সবটা না জানালেও ফুয়াদ এতটুকু জানায়, এই বিয়েটা মা এর খুশির জন্য করছে সে। মন তো পড়ে আছে অন্য কোথাও!
এদিকে আইরার মাও ভাবে, এনগেজমেন্ট যেহেতু আইরা করেই নিয়েছে এখন আর পিছপা হবে না। এই ভেবে তিনিও এই কথায় রাজি হয়ে যান। ফুয়াদ ও আইরা আজ শপিংমল এ আসে বিয়ের শপিং করতে। আইরার বাসার সামনে থেকেই ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে ফুয়াদ। অবাক করার বিষয় হলো, কেমন আছ বাদে কোনো কথাই আর ও বলল না। সারা রাস্তা দু’জনে চুপচাপ বসে কাটিয়েছে। শপিংমল এ আসলে ফুয়াদ বলল, কিনুন যা পছন্দ হয় আপনার।
-আপনার যেমন পছন্দ নিয়ে দিন।
একথা শুনে ফুয়াদ তাকালো আইরার দিকে। বেশ সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু চোখের নিচে পড়েছে কালি। মুখেও ফোলা ভাব। মনে হচ্ছে অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে ও। বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের কতই না স্বপ্ন থাকে। আর এই মেয়ে কিনা বলছে যা ফুয়াদের পছন্দ তা নিয়ে দিতে।
ফুয়াদ হেসে বলল, বিয়ের পোশাকের জন্য কত বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছি। আর আপনি কি না আমার উপরেই ছেড়ে দিতে চায়ছেন সব?
এই প্রথম ফুয়াদের হাসিমুখটা দেখে ভালোই লাগলো আইরার। ও বলল, মনে হচ্ছে আপনার চয়েজ ভালো হবে।
-আপনাকে চয়েজ করেছি বলে এমন বলছেন নাকি?
আবারও হাসে ফুয়াদ। আইরা ও হেসে ফেললো। ও বলল, আমাকেই চয়েজ করতে বলছেন তো? তাই হবে।
-লেহেঙ্গা না শাড়ি?
-শাড়ি।
ওরা শাড়ি পছন্দ করতে শুরু করে। ফুয়াদ ভাবলো, ওর জীবনে যা ঘটেছে তাতে আইরার কোনো হাত নেই। ওর সঙ্গে মুখ ভার করে কষ্ট দিয়ে লাভ কী! তার চেয়ে বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাক। ফানজিয়াও ওকে বলেছে, মন দিতে না পারুক অন্তত মেয়েটার মনটা খারাপ না করুক। একটা মেয়ে অনেক আশা নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসে। সেই আশা যেন ফুয়াদ ভঙ্গ না করে।
এই ভেবে আইরার সঙ্গে কথাবার্তা বলে সহজ হতে থাকে ফুয়াদ।
নিজের পছন্দ মতো একটি শাড়িও কিনে নেয় ও। হঠাৎ সামনের দোকানে চোখ পড়তেই চমকায় আইরা। প্রিন্সকে দেখতে পায় ও। সাথে রয়েছে একটি মেয়ে। ওরাও কেনাকাটায় ব্যস্ত। আইরা ওদের দেখে নিজেকে আড়াল করে নেয়। হতে পারে প্রিন্সের বর্তমান ও।
এই ভেবে আবারও কেনাকাটায় মনোযোগ দেয় আইরা। হঠাৎ ফুয়াদকে দেখতে না পেয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করে ও। দোকান থেকেই বেরুতেই ফুয়াদের দেখা পায় ও। ফুয়াদ সেই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছে যার সাথে প্রিন্সকে দেখেছে। ওদের কথা শেষে ওখানে আসে আইরা। বিষণ্ণ মন নিয়ে ফুয়াদ দাঁড়িয়ে রয়েছে। আইরা বলল, কে ও?
-স্কুলের জুনিয়র। পূর্নমিলনীতে পরিচয়।
-ও আচ্ছা!
একটু থেমে আইরা বলল, কার সাথে এলো এখানে?
-হবু হাজবেন্ড। বিয়ের শপিং করতে। আমাকে বিয়ের দাওয়াতও দিলো। মজার কথা কী জানো? ওদের বিয়ে আমাদের বিয়ের দিনই।
একথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না আইরা। ওয়াশরুমে যাবে বলে ও সরে যায়। ওয়াশরুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে ও।
ডিভোর্স পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও কিছুদিন সময় রয়েছে। এর পরেই বিয়ের তারিখ দুজনেরই।
আইরা নাহয় নিরূপায় হয়ে বিয়েটা করছে। কিন্তু প্রিন্স! ও কী তবে এই মেয়ের জন্যই আইরার সাথে এমনটা করেছে?
.
চলবে