যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৯

0
59

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz

ক’টা দিন কেটে যায়। আইরা ও ফুয়াদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়৷
ফুয়াদ ওর বাড়ির একমাত্র ছেলে। ওর মা এর ইচ্ছে, ছেলের বিয়েতে কয়েকটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ছেলের বিয়েতে কোনো কমতি তিনি রাখতে চান না। তাই এনগেজমেন্ট এর আবদার করে বসেন আইরার পরিবারের কাছে। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা এত ভালো না। এটা বিবেচনায় ওরা ঠিক করে ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমে ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠান করার।
এনগেজমেন্ট এর শপিং ফুয়াদের পরিবার ওদের পছন্দ মতনই করে। মিষ্টি রঙের একটি শাড়ি আনা হয়েছিল আইরার জন্য। যা পরিধান করার পর আইরাকে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। মাথায় সাদা রঙের একটি ঘোমটা দেয় ও।
আইরাদের ড্রয়িংরুমটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়। সোফায় বসানো হয় ফুয়াদকে। আইরা আসে। ও খেয়াল করে, এখনো ওর দিকে তাকালো না ফুয়াদ। ফাতেমা বেগম ও ফানজিয়া বেশ আদর যত্ন করছে আইরার।
সেদিন বান্ধবীর কথা অনেক ভাবে আইরা।
আইরা এখন অসহায়। কিছুই করার নেই ওর। বাচ্চাটার কথা ভেবে এত বড়ো একটা অন্যায় করতে ও রাজি হয়ে যায়। জানে না সামনে কী অপেক্ষা করছে ওর জন্যে। কিন্তু বর্তমানে নিজের অংশটির ক্ষতি ও ভাবতেই পারছে না।

হঠাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। সবাই বলাবলি করছে, অসময়ে আবহাওয়া এমন হয়ে গেছে কেন! আইরা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। স্মৃতিতে ভাসতে থাকে বিদ্যুৎ চমকানো এমন একটা মুহুর্তের কথা। যেদিনটার ভুলের মাশুল আজ গুণতে হচ্ছে ওকে।

প্রিন্সের কথায় ওর সঙ্গে হোটেল রুমে আসতে বাধ্য হয় আইরা। প্রিন্স কিছুতেই এই সম্পর্ক চালিয়ে যেতে রাজি নয়৷ এদিকে আইরা অনেক ভাবে চেষ্টা করে চলেছে সম্পর্কটা রক্ষা করার। তাই আজও প্রিন্সের ডাকে এখানে আসতে রাজি হলো ও।

এখানে আসার সময় হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় আইরা। বাইরে বৃষ্টি পড়ায় রাস্তাঘাট কাদায় ভরে ছিল। তাই ওর শরীরে কাদামাটি লেগে যায়। যার কারণে এসেই গোসল সেরে নেয় আইরা৷ কাপড়ও ওকে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। যদিও প্রিন্সকে নতুন কাপড় কিনে নিয়ে আসতে বলে। খানিকবাদে বেরুবে বলে প্রিন্স ভুলেই যায় কাপড় আনার কথা। এদিকে তোয়ালে প্যাচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুলো আইরা।
আরামে সোফার উপরে প্রিন্সকে বসে থাকতে দেখে বলল, কাপড় আনোনি তুমি?

প্রিন্স চোখ-মুখ কুচকে বলল, শিট! মনেই নেই।
-থাকবে কিভাবে! এখন আমাকে ভালো লাগে না তাই আমার গুরুত্বও নেই। আগে বলার আগেই সব পেতাম। এখন হাজার বলেও পাই না।

আইরাকে উত্তেজিত হতে দেখে প্রিন্স উঠে এল। ও বলল, এনে দিচ্ছি।

তখনি আকাশে মারাত্মকভাবে বিদ্যুৎ চমকায়। আইরা ঘাবড়ে যায়। জড়িয়ে ধরে প্রিন্সকে। আবারও বিদ্যুৎ এর শব্দে প্রিন্সকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ও।
অসাবধানতার বশত আইরার তোয়ালে মেঝেতে পড়ে যায়। আইরার নরম শরীরের ছোয়া পেয়ে প্রিন্স এর মনে যেন মাতাল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আইরা ওকে ছেড়ে তোয়ালে নিতে যাবে, তখনি তাকে বাধা দেয় প্রিন্স। আইরা ওর দিকে চোখ তুলে তাকায়। প্রিন্স ওকে কাছে টেনে নেয়। সেই রাতে আবারও দু’জনে দু’জনের কাছাকাছি আসে।

সকালে আইরার ঘুম ভাঙলে ও তোয়ালেতে নিজেকে প্যাচিয়ে নেয়। ওর কাপড় শুকিয়ে গেছে দেখে সেসবই পরে নেয়। ঘুমন্ত প্রিন্সের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় ও। অনেকদিন পর প্রিন্সের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে ও। মনে হলো, হাজার বছর পর শান্তির একটা ঘুম ও দিলো। প্রিন্স ওকে এখানে ডেকেছে, কাছে টেনে নিয়েছে। ও সবটা ঠিক করতেই ওকে ডেকেছে এমনটা ভাবেওনি। ভেবেছে সম্পর্কের ইতি টানতেই ডেকেছিল। এই ভেবে প্রিন্সের প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করলো আইরা।

খানিকবাদে ঘুম ভাঙে প্রিন্সের। নিজের দিকে আইরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে উঠে ও। কালকের কথা ভাবতেই তড়িঘড়ি করে বসে পড়ে ও বলল, কালকের রাতের জন্য আমি অনেক সরি। তুমি কাছে আসাতে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।

আইরা হেসে বলল, এই আর নতুন কী!
-আমাদের সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে আর এর মধ্যে এমনকিছু…

এই বলে থেমে যায় প্রিন্স। আইরা চমকায়। ও বলল, আমি বুঝলাম না তোমার কথা!

প্রিন্স বিছানা ছেড়ে উঠে। নিজের ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে বলল, এই নাও ডিভোর্স পেপার। এটা দিতেই তোমাকে ডাকা।

আইরা কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলে। ছলছল চোখে ও তাকিয়ে থাকে প্রিন্সের দিকে।
ও বলল-
আমি সাইন করেছি। তোমারটা বাকি। আমাদের তিন মাস সময় দিয়েছে এটা নিয়ে ভাবার৷ তিন মাস পর আমরা আলাদা হয়ে যাব এটাই ফাইনাল। ওকে?

আইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শক্ত করে নেয়। পেপারটা নিয়ে ও সাইন করে বলল, দ্বিতীয়বার ভাবার কোনো সুযোগই নেই। আলাদা হচ্ছি এটাই ফাইনাল।

এই বলে আইরা বেরিয়ে আসে। নিজের প্রতি রাগ হয় ওর প্রিন্সের মতো কাউকে ভালোবেসেছে বলে! কাল রাতেও ওকে ভোগ করে আজ ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিলো! শুধুমাত্র ভোগের জন্যই হয়তো বিয়েটা ওকে গোপণে করেছিল প্রিন্স।
আইরা বাচ্চা না হওয়ার মেডিসিন খেয়ে নেয়। তবুও কেন এমনটা হয়ে যায় ও বুঝতে পারে না। তাই তো প্রথমে ও বিশ্বাসই করতে পারছিল না ও গর্ভবতী!

-হাতটা আগে বাড়াও মা!

ফাতেমা বেগমের কথা শুনে স্মৃতির শহরে বিচরণ বাদ দেয় আইরা। হাত বাড়িয়ে দেয় ফুয়াদের দিকে৷ এই প্রথম ফুয়াদ ও আইরার চোখাচোখি হয়। ফুয়াদের মুখে হাসি নেই। মলীন মুখ নিয়ে হয় আংটি বদল। আইরা বেশ বুঝতে পারছে, দুটি বিষণ্ণ মন জোড়া বাধতে চলেছে। ফুয়াদের দু:খ কী ওর চেয়েও বেশি!

রাদিন নানারকম লেহেঙ্গা ও গহনার ছবি পাঠায় দিশাকে। গোপণে বিয়ে করলেও দিশাকে বউ সাজাবে জানালো ও৷ নানা রকম ভাবে ওকে রাজি করতে থাকে বিয়ের জন্য। দিশাও রাদিনের ভালোবাসা দেখে ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। দু’জনে মিলে করে নেয় বিয়ের শপিং। ঠিক করে দ্রুত বিয়েটা সারার। তাই পরের দিনই ওরা বেছে নেয় বিয়ের দিনের জন্য।
দিশার পছন্দ মতোন পার্লার থেকে সেজে নেয় ও। এরপর ওরা রাদিনের দু’জন বন্ধুকে সাক্ষী বানিয়ে চলে আসে কাজি অফিসে। কিন্তু এসেই দেখলো, এখানে বসে রয়েছে রাদিনের বাবা। কাজি সাহেবই তাকে খবর দিয়েছেন। তিনি রাহাত সাহেবের পরিচিত। তাই রাদিনকে চিনে তাকে ফোনে দ্রুত খবর দিয়ে দেন। বাবাকে দেখে ঘাবড়ে যায় রাদিন। কিছু বলার আগেই ওর গালে কষে একটি চড় বসান তিনি। যা দেখে দিশাও ভয় পায়। ও মাথা নিচু করে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। রাহাত সাহেব দু’জনকে নিয়েই উনার বাড়ি চলে আসেন। হাসিনা খান এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, তার ছেলে এমন একটা কাজ করে বসেছেন।
দিশার মা বাবাকেও খবর দিয়ে আনা হয়। দিশার বাবা ওকে মারধর করতে চাইলে রাদিন ঢাল হয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। ও চ্যাচিয়ে বলল, কেউ আমাদের আর কিছু বলবে না। কেউ না! হোটেলে যেয়ে ধরা খাইনি। বিয়ে করতে গিয়েছিলাম। তোমরা মানতে পারছ না তোমাদের বিষয়৷ আমরা একসাথে থাকব এটা আমাদের বিষয়।

দিশার মা দিলোরা খাতুন বললেন, পাগলামি ছাড়ো বাবা। তোমাদের বাসার লোক কখনো আমার মেয়েকে মেনে নেবে না। দেখেছোই তো কত অপমান করলো!

আকবর হক বললেন, আরে আমি নিজেই এই বাড়িতে মেয়ে দেব না। দোষ কী তাদের ছেলেও করেনি! তারা কীভাবে শুধু দিশার দোষ দেয়?

হাসিনা খান বললেন, এই মেয়েই আমার ছেলের মাথা খেয়েছে। নাহলে ও এমন না। কিছুতেই এই মেয়েকে আমি মেনে নেব না।

রাহাত দিশার মা বাবার সামনে এসে বলল, আমি শিক্ষিত ছেলে। ভালো জব করে চলব। আপনারা অন্তত মেনে নিন আমাদের সম্পর্কটা। একবার বলুন শুধু, সব ছেড়ে চলে আসব দিশার জন্য।

আকবর হক বললেন, তোমার পরিবারকে রাজি করাতে পারলেই এসো।

দিলোরা জামান বললেন-
ওগো শোনো? মেয়ের বদনাম তো হয়েই গেল৷ এই ছেলেকেই মেনে নাও৷ বলেছেই তো জব করবে।

ঘটনা বেগতিক দেখে মুখ খুললেন রাহাত খান। তিনি বললেন, দিশা ও রাহাতের বিয়ে হবে। কিন্তু সব নিয়ম মেনেই। ঝাকজমক বিহীন ছেলের বিয়ে আমি দেব না।

একথা শুনে রাদিন, দিশা ও ওর পরিবার খুশি হলেও হতাশ হোন হাসিনা খান। তিনি কিছু বলতে চাইলে বাধা দিলেন রাহাত খান। রাদিন খুশিতে জড়িয়ে ধরে বাবাকে।
এদিকে ভাই এর খুশিতে রাইদা খুশি হলেও গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে ও। অনেক আগেই ওকে রাদিন ভালোবাসার মানুষটির ছবি দেখিয়েছিল। স্পষ্ট মনে আছে সেই চেহারা। ভাই এর দেখানো ছবির মেয়েটির সাথে এই মেয়ের মিল নেই কেন?
.
চলবে