#রঙীন ফানুস
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৩
__________________
—-“ভয়ে ভয়ে পরী এগিয়ে আসলো।
পরী বুঝতে পারছে না কি বলবে।
রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল পরীর।
মনে সাহস রেখে পরী শ্বাশুড়ির হাত কোমল স্পর্শে নিজের হাতে রাখলো।
পরী বিচলিত ভঙ্গিতে শ্বাশুড়ি কে বললো,আসলে মা রাজের কোন দূষ নেই।
আমি-ই ইতু কে বলেছিলাম আমাদের সাথে থাকতে।
ইতু তো আমাদের বাসায় নতুন এসেছে ভাবলাম ও হয়তো ভয় পাবে। তাই আমাদের সাথেই রেখেছি।
—” পরীর শ্বাশুড়ি রাজের দিকে এক নজর তাকিয়ে আরেক নজর ইতুর দিকে তাকালো।
পরীর মাথায় হাত রেখে বললো,ঠিক আছে আমি তোর কথা আজ মেনে নিলাম, কিন্তু শোন কাল কিন্তু মানবো না।
আমি চাই না ইতু তোর আর রাজের রুমে থাকুক। লোকে জানলে কি বলবে বলতো?
“রাজের মা ইতুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।তাছাড়া ইতুর যদি সত্যি ভয় লাগে দরকার হলে আমি ওর সঙ্গে থাকবো বুঝলি তো ।”
“রাজের মা রাজ কে বললো,ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে, অফিসে যেতে হবে। ”
যাওয়ার সময় উনি থেমে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন। ফিরে এসে ইতুকে বললেন, বাসায় আরো অনেকেই আছে, এসব খোলামেলা পোশাক যাতে আর না পড়ে।
” ইতু আমতা আমতা করে জবাব দিলো ঠিক আছে ।”
.
.
.
সবাই নাস্তা করতে বসলো।
রাজের খাওয়া প্রায় শেষ।
রাজ খেতে খেতে মাকে বললো,” মম অফিসে একটু তাড়া আছে। আমি যাই তাহলে।”
“ইতু রাজ কে ডেকে থামিয়ে দিলো।
রাজ কে আবেগ মাখা ভঙ্গিতে বললো,রাজ আমাকে একটু শপিংয়ে যেতে হবে, তুমি কী একটু ড্রপ করে দিতে পারবে?আসলে এতো তাড়াহুড়ো করে এসেছি যে প্রয়োজনীয় অনেককিছুই আনা হয়নি। ”
“রাজের মা ইতুর দিকে সরু চোখে তাকালো।
কিন্তু কিছুই বললো না।
” রাজ ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে ইতু কে জবাব দিলো, ” ওকে নো প্রবলেম! ”
“ইতু যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।
ইতু খুশিতে যেনো লাফিয়ে উঠলো।
ইতু আত্মহারা হয়ে উপরে চলে গেলো রেডি হতে।
” আর এদিকে যে পরীর মন খুব খারাপ সেটা কেউ একজনের চোখে ঠিকই ধরা পরলো।”
” ইতু রাজের হাত নিজের হাতে পেঁচিয়ে বের হয়ে গেলো।কেউ যে সামনে আছে সেদিকে তাঁর কোন তোয়াক্কা নেই।
পরী রাজের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
“রাজের মা পরীর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” তুই খুবি সাধারণ মেয়ে।
তোর স্বামী কে কেউ একজন নিয়ে বের হয়ে গেলো আর তুই কিছুই বললিনা?”
“” পরী শ্বাশুড়ির দিকে তাকালো।
মা কেমন হয় পরীর জানা নেই, কিন্তু পরীর শ্বাশুড়ির গায়ে কেমন কেমন মা গন্ধটা অনুভব করে ।”
“শুন মা মানুষ যতো সাধারণ হয়ে থাকে ততো তাকে ঠকানো হয় বুঝলি।পুরুষরা
চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়ে যায় এ কথাটা সব সময় মনে রাখবি।
পরীর শ্বাশুড়ি পরীর হাতটাকে নিজের হাতে নিয়ে বললো, পরী কথা দে মা, আমার ছেলেকে তুই সবসময় সুখে রাখবি।”
“পরীর শ্বাশুড়ির এতো আদর পেয়ে পরী যেনো খুশিতে আত্মহারা।
পরী হাত দিয়ে শ্বাশুড়ির পা ধরে সালাম করলো।মা আপনি আমাকে দোয়া করবেন আমি যেনো রাজকে ভালো রাখতে পারি। ”
” পরীর শ্বাশুড়ির অন্তর আত্মা খুশিতে আলোকময় হয়ে গেলো। পরী উঠ তোর জায়গা আমার পায়ে নয়, আমার বুকে বলে জড়িয়ে ধরলো পরী কে। ”
” পরীও আপন মনে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো। ”
,.
.
.
“ইতু বায়না ধরেছে, রাজ কে নিয়ে ঘুরতে যাবে। রাজ অনেক বার নিষেধ করা সত্বেও ইতু কিছুতেই মানতে চাইছে না।
” রাজ আর কোন উপায় না পেয়ে ইতু কে নিয়ে ঘুরতে গেলো সমুদ্রের ধারে।
সমুদ্র রাজের বরাবরই খুব পছন্দ।
ইতু বার-বার রাজ কে আঁকড়ে ধরছে কিন্তু রাজ বার-বার নিজেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে।
” রাজ মনে মনে পরী কে কল্পনা করছে। পরীর নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, কপালে নীল টিপ পড়ে একদম নীল পরী সেজেছে।
নীল আকাশের নিচে নীল পরী কে এক মায়াবতী পদ্মরানীর মতো লাগছে।
যাকে দেখলে রাজের বুকে সাগরের ঢেউ খেলে যায়,যার প্রেমের অসীম শক্তিতে হারাতে চায় রাজ, যার স্পর্শে শিহরিত রাজ সে আর কেউ নয়, সে হলো রাজের পরী।
“ইতুর বেশ বিরক্ত লাগছে, রাজের এভাবে চুপচাপ থাকাতে। ইতু চায় রাজকে নিজের করে পেতে। ইতু রাজ কে ধাক্কা দিয়ে বললো,কিরে রাজ তুই কি আমাকে ভুলে গেলি? ”
” ভুলে গেলাম মানে? কি বলতে চাইছিস তুই? একজন বন্ধু হিসেবে যতোটুকু মনে রাখার ততটুকুই তো রাখবো।”
” মুহুর্তেই ইতুর মুখ কালো হয়ে গেলো।
ইতু আমতা আমতা করে বলতে লাগলো আরে বোকা তুই তো দেখছি বিয়ের পর বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছিস!
পরী কি তোকে কোনো জাদু করলো?”
” পরীর নাম শুনে মুহুর্তেই রাজের মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।”
“ইতু এ সুযোগে রাজের হাত ধরে রাজের চোখে তাকিয়ে বললো, রাজ তুই কি আমাকে ভালোবাসবি?”
” রাজ পরীর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, কি যা-তা বলছিস? এখন যেতে হবেরে খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাজ অফিসে নেমে
ড্রাইভার কে দিয়ে ইতু কে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। ”
“ইতু তো বাসায় এসে বলে বেড়াচ্ছে সব ড্রেস রাজ পছন্দ করে কিনে দিয়েছে।
রাজ ইতু কে ঘুরতে নিয়ে গেছে।”
” ইতুর কথাগুলো পরীর ভালো লাগেনি।
পরী মন খারাপ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে পরীর।
ইচ্ছে করছে রাজের বুকে মাথা রেখে ভীষণ কাঁদতে। কেঁদে কেঁদে বিশাল আকাশে মুক্ত পাখির ন্যায় হারিয়ে যেতে।”
পরী ভাবছে রাজ কী সত্যি পরী কে ভালোবাসে?
না-কি পরীর এই অভিসাফের রূপের মোহে পড়ে আছে।
রাজ যদি সত্যি সত্যি ইতু কে নিয়ে ভালো থাকে তাহলে পরী পথের কাঁটা হয়ে থাকবে না। পরী অবশ্যই সরে যাবে।
কেঁদে কেঁদে পরীর চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে ভীষণ।
পরী আর পারছেনা, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। পরী ইদানীং শরীর আর মনের সাথে পেরে উঠছেনা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরী এসে বিছানায় শুয়ে পরলো।এক ঘুমে একদম সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
” ঘুমে পরী চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।
সকল ক্লান্তি যেনো শরীরে এসে ভর করেছে। পুরো শরীর ব্যাথা ব্যাথা লাগছে।
পরী উঠতে গিয়েও ওঠেনি শুয়ে পরলো।
কিছুক্ষণ পর পরীর শরীরটা ভীষণ ভারী ভারী লাগছে। নিভু নিভু দৃষ্টিতে পরী তাকালো।
এক ঝলক তাকিয়ে পরী চমকে গেলো।
রাজ পরীর উপর ভর দিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
চারদিকে যেনো নিস্তব্ধতার চাপা সুর,হিজল বনের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে চারদিক যেনো মুখরিত, শিউলি ফুলের সুভাসে মন যেনো আজ ঘরে নেই।”
” ” রাজ কে পরীর চোখে খুব খুব মায়াবী লাগছিলো। ধূসররঙে রাজ কে যেনো দূর আকাশের মেঘদূতের মতো লাগছিলো।
পরী রাজ কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কখন এসেছেন?”
” রাজ অভিমানী চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো, দিলে তো আমার স্বপ্নটা ভাঙিয়ে?
আমি সেই এক ঘন্টা ধরে তোমাকে দেখছি।
কিন্তু আমারতো এখনো মন ভরেনি, তুমি তো জেগে গেলে?”
” পরী লজ্জা পেয়ে রাজের বুকে মুখ লুকালো।
” রাজও আলতোভাবে পরী কে জড়িয়ে ধরলো। ”
” হঠাৎ হুড়মুড় করে ইতু ঘরে ঢুকলো।”
” রাজ পরী দু’জন উঠে দাঁড়ালো।”
“রাজ সরি আমি বুঝতে পারিনি।”
” রাজ একটু শক্তভাবেই উত্তর দিলো,ইতু কারো ঘরে ঢুকলে নক করে ঢুকতে হয়?”
” পরী রাজ কে থামিয়ে বললো,রাজ ঠিক আছে বাদ দাও, ও তো তোমার ফ্রেন্ডই।
রাজ তোমার সাথে ইতুর হয়তো খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
” ইতু রাজের দিকে খুশিখুশি চোখে তাকিয়ে বললো,” রাজ আমি খুব খুব খুশি হয়েছি, তুই আমার জন্য এতো সুন্দর একটা শাড়ি এনেছিস!
শাড়িটা দেখেই আমার মনটা ভরে গেলো।
আর আমি জানি যে, তোর পছন্দ বরাবরই খুব সুন্দর।
ইতু শাড়িটা বের করলো।”
” মুহুর্তেই পরীর চোখে জল চলে আসলো।
পৃথিবীটা যেনো দুভাগ হয়ে গেলো। ”
“এরপর রাজ যা উত্তর দিলো ইতু পরী দু’জনই স্তব্ধ। ”
#চলবে—-