রহস্যাময়ী লেডি কিলার পর্ব-২৩

0
349

#রহস্যাময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_২৩

“অবনীর কাছে যেতেই আকাশ দেখতে পায়, অবনীর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে হতে আশেপাশের অনেকটা জায়গা রক্তে লাল হয়ে আছে। যেটা দেখে আকাশের মাথা ঘুরে উঠে। কারন রক্তের পরিমাণটা অনেক বেশি। আকাশ অবনীর মাথা থেকে এমন রক্ত পড়তে দেখে মুহূর্তের জন্য সে ভুলে যায় যে অবনী একটা বেঈমান। তাই সে অবনীকে হাত দিয়ে নাড়িতে ডাকতে আরম্ভ করে। তখনি আকাশ অনুভব করে অবনী মরে গেছে। সে আর নিশ্বাস ফেলছে না। তার উপরে নড়াচড়াও করছে না। একদম মূর্তির ন্যায় এক জায়গায় ছিটকে পড়ে আছে। যেটা দেখে আকাশের বুকের ভিতরে খা…খা করতে আরম্ভ করে। যার কারনে সে ধ্রামম করে অবনীর পাশে হাত-পা গুটিয়ে বসে পড়ে। তার ভিতরে দুনিয়ার সমস্ত অস্বস্তি এসে ভর করেছে। অবনী যে তার প্রাণের শত্রু, সেটা তার মনেই নেই। অবনীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে আকাশের অসীম মনোবলে যেনো ভাঁটা পড়েছে। সে পুরো শকট হয়ে অবনীর দিকে তাকিয়ে আছে! তার এমন অবস্থা দেখে পাশ থেকে রাজ আকাশের হাত সঙ্গের তাড়নায় ঝাপটে ধরে। আকাশের হাত ঝাপটে ধরার পর রাজ আকাশকে বলে,

–ভাই আমি জানি আপনার ভিতরে এখন কি চলছে। আমি যতোই আপনাকে বুঝ দেই না কেন, বা অবনী ভাবী যতোই বেঈমানী করুক না কেন, তার পরেও তার এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে রাখা দুষ্কর। কিন্তু ভাই কি আর করার, নিয়তিতে যা ছিলো তাই হয়েছে। আপনি প্লিজ এসব বিষয় নিয়ে ভেঙ্গে পড়বেন না। কারন আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি।
.
আকাশ রাজের কথার কোনো উত্তর দেয় না। কারন সে অবনীর মৃত দেহ দেখে হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আকাশের চোখ থেকে টলমল করে পানি ঝরছে। আকাশ যে মনের দিক থেকে অনেক শক্ত বা নিষ্ঠুর একটা মানুষ, সেটা সে অবনীর উচ্ছিষ্ট দেহ দেখে ভুলেই গেছে। তার মাথায় ও নেই সে একটা বেঈমানের জন্য চোখের পানি ছেড়ে কান্না করছে। অবশ্য এই কন্ডিশনে আকাশের কেন, যে কোনো মানুষ এই হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে পারবে না। কারন একটা মানুষের উপরে ততো সময়ই প্রতিশোধ নেওয়া যায়, যতক্ষণ না তার শরীরে প্রাণ থাকে। কিন্তু একটা মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার উপরে প্রতিশোধের পালাও শেষ হয়ে যায়। উপর ওয়ালা প্রতিটা মানুষকে সৃষ্টি করার সুত্রেই তার ভিতরে রাগ,জেদ,অভিমান সব কিছুই ঢুকিয়ে দেয়। আর সেই অভিমানের যাত্রাপালা চলে সেই ব্যক্তিটার শেষ নিশ্বাস অব্দি। তেমনি ভাবে আকাশের ও অবনীর উপরে কঠোর রাগ বা অভিমান ছিলো। কিন্তু বর্তমানে অবনীর মৃত দেহ দেখে তার ভিতর থেকে সমস্ত রাগ-অভিমান দূর হয়ে গেছে। তাই সে প্রতিটা মানুষের মতন বিদায় লক্ষ্যে অবনীর জন্য নিজের চোখের পানি ঝরাচ্ছে। “অপরদিকে রাজ প্রথমবার আকাশকে বাঁধা দিলেও এবার আর দেয় না। কারন কিছু সময় মানুষ যেটা করতে চায়, তাকে সেটা করতে দেওয়া উচিৎ। না হয়তো তার ভিতরে সেটার রেষ থেকে যায়। তাই রাজ আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এভাবেই কিছুক্ষণ সময় অতিক্রম হয়। সবাই পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুপচাপ অবনীর জন্য করা আকাশের পাগলামো দেখছে। ঠিক তখনি আকাশ হুট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর চোখের পানি মুছে নিয়ে সবাইকে বলে,

–এই সবাই সুরঙ্গের পথ ধরে সামনে আগা। আর অবনীকে এভাবেই এখানে পড়ে থাকুক।
.
আকাশের কথা শুনে রাজ আকাশকে বলে উঠে,

–ভাই কোনো মানুষ মারা গেলে তার মৃত্যুর ক্রিয়াধারা করা উচিৎ। সেখানে অবনী ভাবী তো আপনার খুব কাছের একজন মানুষ ছিলো। আমার মতে তিনার মৃত্যুর কাজ সম্পন্ন করে আমাদের সামনে যাওয়া উচিৎ।

–রাজ নিয়মনীতি যাক জাহান্নামে। তোরা সবাই অবনীকে এভাবেই ফেলে রেখে সামনে আগা। কারন এটা একটা সুরঙ্গ বা টার্নাল। আমরা অবনীর লাশের ক্রিয়াধারা করতে গেলে ঝামেলা পেকে যাবে। দেখা যাবে আমরা এই সুরঙ্গের ভিতরে ফেঁসে গেছি। না হয় এই সুরঙ্গকে হারিয়ে ফেলেছি। তাই যেটার সুত্রপাত করেছিস, সেটা ধরে সামনে আগা। বেঁচে থাকলে ফিরে এসে ওর মৃত্যুর কাজ সম্পন্ন করবো।

–ঠিক আছে ভাই তাহলে।
.
আকাশের কথা মতন সবাই সামনের দিকে এগোতে থাকে। রাজ সবাইলে লিড করে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর আকাশ রাজের পিছন পিছন হাঁটছে। তারপর আকাশের পিছন পিছন সবাই একই ভাবে যাত্রা শুরু করেছে। তারা সেই সুরঙ্গের পথ ধরে আধঘন্টা খানিক হাঁটার পর তারা একটা জায়গায় এসে পৌঁছায়। যেই জায়গায় পৌঁছানোর পর আশেপাশে তাকাতেই তাঁদের সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়! বিশেষ করে আকাশের। কারন সে তার লোকজন নিয়ে অন্য একটা ডাইমেনশনে চলে এসেছে। তারা যেই জায়গায় এসেছে, সেই জায়গার অবস্থা দেখে কোনো ভাবেই মনে হচ্ছে এটা পৃথিবী। মনে হচ্ছে যেনো এটা পৃথিবীর বাহিরের কোনো একটা জায়গা। সবাই চোখ বুলিয়ে আশেপাশে দেখতে থাকে। তখনি মুজাহিদ আকাশকে বলে উঠে,

–ভাই আমার মনে হচ্ছে আমরা পৃথিবী ছেড়ে ভিন্ন কোনো গ্রহতে চলে এসেছি। কারন এই জায়গার অবস্থা দেখে কোনো ভাবেই এটাকে পৃথিবী বলে মনে হচ্ছে না।

–মুজাহিদ আমি নিজেও বেশ অবাক হয়ে আছি!
কিন্তু জায়গাটা দেখে এভাবে চিন্তাধারা করা ঠিক হবে না।

–ভাই চিন্তাধারা না করে কি করবো বলেন?
একে তো বিশাল বড় একটা জায়গা। যেই জায়গার আগে পিছে যেদিকেই তাকাচ্ছি, সেদিকে সূর্য আর কাঁচের রিফলেকশন দেখা যাচ্ছে। তার উপের আপনি একবার মাথার উপর সাইডে খেয়াল করে দেখুন টুকরির মতন বড় বড় কি যেনো ঝুলে আছে। আমার তো মনে হচ্ছে এসব এলিয়েনের বাচ্চা।

–মুজাহিদ তোর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছি না! তবে হ্যাঁ ঠিক এই জায়গার পরিবেশ দেখে আমারো মনে হচ্ছে আমরা ভিন্ন কোনো ডাইমেনশনে চলে এসেছি। তবে তার মানে যে সেই ভিন্ন ডাইমেনশনটা এলিয়েনদের জগৎ হবে সেটাতে আমি একমত না। কারন সত্যিকারত্বে এলিয়েন এগজিস্ট করে কিনা সেটাই তো শিওর বলতে পারি না। তাহলে কি করে তুই এটাকে অদ্ভুত প্রাণীর গ্রহ বলে দাবী করছিস?

–ভাই হতে পারে আমার কথার কোনো লজিক নেই। তবে আমি বিভিন্ন মুভিতে দেখেছি এমন সিন। তাই হুট করে উদ্ভট কথাটা বলে ফেলেছি।

–আচ্ছা বাদ দে এখন এসব টপিক। আর সবাই মিলে রাস্তা খোঁজার ট্রাই কর। কারন সামনে খালি কাঁচের রিফলেকশন দেখা যাচ্ছে। তাই আমার মনে হয় আশেপাশে কোথাও কোনো রাস্তা আছে। আর তাছাড়া আমরা সবাই মিলে চাইলে সামনে যেতে পারি, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সামনের দিকে ট্রাপ বিছানো আছে। তাই তোরা আশেপাশেই রাস্তা খুঁজতে আরম্ভ কর।
.
আকাশের কথা মতন সবাই রাস্তার খোঁজার জন্য লেগে পড়ে। কারন সামনে কোনো গন্তব্য দেখা যাচ্ছে না।
তার উপরে তারা সুরঙ্গের পথ ধরে এখান পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। কিন্তু সামনে যাওয়ার আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। তাই আকাশের আদেশে সবাই কাজে লেগে পড়ে। রাজ রাস্তা খোঁজার উদ্দেশ্যে কয়েক কদম সামনে এগোতেই সে হুট করে মাটির ভিতরে ঢুকে যায়। যেটা দেখে সবাই রাস্তা খোঁজা বাদ দিয়ে রেখে রাজের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই জমিনের মাটি রাজকে নিজের কবলে নিয়ে চলে গেছে। রাজের গায়েব হয়ে যাওয়া দেখে আকাশ সবাইকে বলে,

–এই তোরা সবাই এই জায়গাটা খোদাই করার ব্যবস্থা কর। কারন এই জায়গা দিয়ে রাজ মাটির নিচে ঢুকেছে।
.
আকাশের কথা শুনে মুজাহিদ বলে উঠে,

–ভাই মাটি খোদাই করার দরকার নেই। আমি এখানে একটা মাইন বসিয়ে দিচ্ছি। তাতে করে খোদাইয়ের কাজ হয়ে যাবে।

–আচ্ছা তাইলে তুই তাই কর।

–হুম ভাই করছি।
.
আকাশের সম্মতি নিয়ে মুজাহিদ একটা মাইন বসিয়ে দেয় মাটির উপরে। যেই জায়গা দিয়ে রাজ মাটির নিচে ঢুকে গিয়েছে। মুজাহিদ মাইন বসানোর কিছু সময় পর সেই মাইনটা ফুটে যায়। যেটাতে করে মাটি খোদাইয়ের কাজ হওয়ার সাথে সাথে সেই জায়গা দিয়ে আবারো একটা টার্নাল হয়ে যায়। যেটা দেখে আকাশ সবাইকে আদেশ করে টার্নাল বা সেই সুরঙ্গটার ভিতর দিয়ে একে কে সবাইকে প্রবেশ করতে। আকাশের কথা মতন সবাই সেই সুরঙ্গটা দিয়ে প্রবেশ করে। আকাশ ও বাকি সবার সাথে সুরঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করেছে। সুরঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে রাজ সেই সুরঙ্গের ভিতরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। যেটা দেখে সবাই খুশি হয়ে যায়। পরবর্তীতে আকাশ রাজ এবং সবাইকে নিয়ে সেই সুরঙ্গের কাঁচা রাস্তা ধরে আগের ন্যায় সামনের দিকে এগোতে আরম্ভ করে। এভাবে পনেরো বিশ মিনিট যাত্রা করার পর হুট করেই সুরঙ্গটা কাঁপতে আরম্ভ করে। যার কারনে সবাই ঢুলে মাটিতে পড়ে যায়। সুরঙ্গটা এখনো ঢুলছে। আকাশ আর বাকি সবাই মাটি থেকে উঠে দাঁড়ানোর প্রয়াস করে। এরমধ্যে আবার সুরঙ্গের মাটি ফেটে বড় বড় টুকরো হয়ে হাওয়ায় ভাসতে আরম্ভ করে। এবং সাথে আকাশের লোকজনকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। যেটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু আকাশ সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বলে ভয় না পেতে। তাই সবাই নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না যে কি হচ্ছে! তখনি মাটির বড় বড় টুকরো গুলো লিফটের মতন হাওয়ায় ভেসে আকাশের লোকজনকে নিয়ে উপরের দিকে আরোহন করতে আরম্ভ করে। যেটা দেখে সবাই বুঝে যায় যে মাটির টুকরো গুলো হয়তো কোনো এক ধরনের লিফট। সবাই সেই মাটির টুকরো গুলোতে আরোহন করে জমিনের উপরে এসে পৌঁছেছে। জমিনের উপরে পৌছাঁতেই সবাই আবার অবাক হয়ে যায়! তবে আগের বারের চাইতে এবার আরো বেশি অবাক হয় সবাই। কারন তারা সুরঙ্গের ভিতর থেকে মাটির লিফটের সাহায্যে বিশাল বড় একটা সাইন্সল্যাবে এসে পৌঁছেছে। যেই সাইন্সল্যাবের কোনো পরিসীমা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেনো এটা কোনো সাইন্সল্যাব না। এটা যেনো একটা অন্য দুনিয়া। কারন না দেখা যাচ্ছে কোনো গাছপালা। না দেখা যাচ্ছে আকাশ। আর না দেখা যাচ্ছে সূর্য। তবে তার চাইতেও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো তাঁদের চোখের সামনে অনেক বড় বড় যন্ত্রপাতি দেখতে পাচ্ছে তারা। আর একদল লোক তাঁদের থেকে কিছুটা দূরে ডক্টরের পোশাক-আশাক পরিধান করে এদিক সেদিক ঘুরঘুর করছে। আকাশ সেই লোক গুলোকে দেখতে পাওয়া মাত্রই আন্দাজ করে নেয়, এরাই হয়তো সেই সাইন্সল্যাবের ডক্টর। যারা কিনা মানুষের দেহের সাথে উদ্ভট কর্মকান্ড করে তাঁদেরকে মানুষ থেকে নরপশু বানিয়ে দেয়। তাই আকাশ সবাইকে আদেশ করে,

–এই তোরা কয়েকজন বেটাদেরকে গুলি করে মেরে ফেল। আর তাঁদের থেকে একজনকে ধরে নিয়ে আমার সামনে আন।
.
আকাশের কথা মতন কয়েকজন ডক্টরদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তাঁদেরকে গুলি করে মেরে ফেলার জন্য। এমন সময় মাঝ পথে অনেক কয়জন লোক অদৃশ্য থেকে তাঁদের সামনে এগজিস্ট করে। যেটা দেখে তারা আর সামনে এগোয় না। আর আগাবে কি করে, তাঁদের পথ যে আঁটকে দিয়েছে। সেই অদৃশ্য লোক গুলো এগজিস্ট করা মাত্রই আকাশের লোকজনের উপরে চাবুকের মতন এক জাতীয় কিছু একটা দিয়ে আঘাত করতে আরম্ভ করে। যার ফলে আকাশের পাঠানো লোকজনের থেকে অনেক কয়জনের হাত কব্জি থেকে আলাদা হয়ে যায়। কারন তারা যেটা দিয়ে আঘাত করেছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ রয়েছে। আকাশ তার লোকজনের এই অবস্থা দেখে তার মাথা পুরো বিগড়ে যায়৷ তাই সে বাকিদেরকে এখানে থাকতে বলে সে গুলি হাতে নিয়ে একাই অদৃশ্য থেকে হুট করে এগজিস্ট করা লোক গুলোর দিকে এগোতে থাকে তাঁদেরকে মারবে বলে। আকাশের এগোনো দেখে অপর পাশের লোকজন ও আকাশের দিকে এগিয়ে আসে তাকে মারার জন্য। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সেই লোক গুলা আকাশের কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে তারা আবার পিছাতে শুরু করে। আকাশ তাঁদের এইরূপ আচরণে কারোর উপস্থিতি উপলব্ধি করে সজোড়ে হাসতে আরম্ভ করে…..

চলবে…..

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।