#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১১
-‘ বস জুনায়িদ শেখ এর ঠিকানা জোগাড় করেছি।’
নীবদ্ধ কথাটা শুনে ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘ তা ভালো কথা।কিন্তু এভাবে হাপাচ্ছো কেন?মনে হচ্ছে কুকু*র দৌড়ানি দিয়েছে।’
জয় চোখ কপালে তুলে বলে,
-‘ আল্লাহ্ বস আপনি জানলেন কিভাবে?সত্যিই আমাকে কুকু*র তাড়া করেছিলো। যেই দৌড়ান দৌড়াইয়া যে এখানে আসলাম।’
জয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে নীবদ্ধ জোড়েসোড়ে ধমক লাগালো,
-‘ সাট-আপ জয়।ফাউল কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসো।’
জয় ধমক খেয়ে চুপসে গেলো।মুখটা কাচুমাচু করে বলতে লাগলো,
-‘ বস জুনায়িদ শেখ এখন আর এখানের থানার পুলিশ নেই।তাকে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়েছে।’
-‘ কোথায় করেছে ট্রান্সফার?’
-‘ বস চট্টগ্রাম ট্রান্সফার করানো হয়েছে।তার পেছনে কারনও আছে।তিনি যখন এখানে কর্মরত ছিলেন তার কারনে এখানে ক্রাইম খুব কম হতো।তিনি খুব অনেস্ট একজন পুলিশ অফিসার বস।তাই সরযন্ত্র করে তাকে চট্টগ্রাম ট্রান্সফার করানো হয়েছে।’
সবটা শুনে নীবদ্ধ ভাবুক গলায় বলে,
-‘ মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা রহস্য লুকিয়ে আছে সবখানে জয়।না জানি আর কি কি অজানা সত্য বের হয়ে আসে।এই রহস্যের শেকঢ় যে অনেক দূর অব্দি গিয়েছে তা আমি বেশ ভালোভাবে টের পাচ্ছি।’
জয় বলে,
-‘বস বুঝতেই তো পারছেন যে কেসটা কতোটা জটিল।বস কি দরকার এসব করার।আপনি এখনো এমপি হননি।এই একটা বছর যাক বস।আপনি এমপি হলে নাহয় এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাবে।’
জয়ের মুখে এমন কথা শুনে হিংস্র চোখে তাকালো নীবদ্ধ।জয় ভয় পেলো বেশ।নীবদ্ধ গর্জে উঠলো,
-‘ তোমার সাহস কিভাবে হলো জয় এসব বলার? তুমি আমার সেক্রেটারি জয়।আমার আন্ডারে কাজ করে এসব চিন্তা ভাবনা করলে কিভাবে? আমি এমপি হলেই যে এসব কাজ করবো তা চিন্তা করলে কিভাবে? আমি কি নেতা হওয়ার জন্যে লোভে লাফাচ্ছি তুমি মনে করছো? আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি।আমি এমপি হবো কি হবো না এটার ডিশিসন সম্পূর্ণ সাধারন জনগনের হাতে।তারা যাকে চাইবে তাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে। আমি যদি নির্বাচনে হেরেও যাই তাহলে কি আমি মানুষের সেবা বাদ দিয়ে দিবো? তাহলে তোমার ধারনা ভুল।আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি মানুষের সেবা করে যাবো।’
নীবদ্ধ’র প্রতিটা কথা শুনে যেন জয় মুগ্ধ হয়ে গেলো।লোকটার প্রতি সম্মান আরো দ্বিগুন বেরে গেলো।নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত গলায় বলে,
-‘ মাফ করবেন বস।আমি আপনাকে অতোটা আঘাত করে কথাগুলো বলতে চাইনি আসলে আপনাকে নিয়ে চিন্তা হয় খুব স্যার।এমপি হলে তখন আপনার নিরাপত্তার দিকটা আরো প্রখর হবে। এই জন্যে বলেছিলাম আরকি।তবে বস আর কখনো এইসব কথা বলবো না।আপনি কষ্ট পাবেন না বস।’
নীবদ্ধ চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস ফেললো।তারপর নিজেকে ঠান্ডা করে৷ শান্ত গলায় বলে,
-‘ এই প্রথমবার জয়। আর কখনো যেন এসব কথা তোমার মুখ থেকে না শুনি। আর হ্যা এই সব রহস্যের সন্ধান আর কালপ্রিটদের আমি খুঁজে তো বের করবোই আর তা আমি নির্বাচনে দাড়ানোর আগেই করবো।আমার কথা মিলিয়ে নিও।’
জয় ‘ হ্যা ‘ বোধক মাথা নাড়িয়ে নীবদ্ধ’র কথায় সম্মতি জানালো।
___________
বাড়িতে এসেও শুদ্ধতা একদন্ড শান্তি পাচ্ছে না।এদিক ওদিক পায়চারি করছে।নীবদ্ধ’র কথা বার বার মনে পরছে।চিন্তা হচ্ছে লোকটাকে নিয়ে।লোকটার গায়ে জ্বর। অসুস্থ অনেক লোকটা।আবার সকালে না খেয়ে বের হয়েছে বাসা থেকে।চিন্তায় শুদ্ধতার মস্তিষ্ক ফেটে যাচ্ছে।নিজের এমন কান্ডে শুদ্ধতা নিজেই অবাক হচ্ছে।সেই সকাল এগারোটা বাজে এসেছে সানাম শুদ্ধতাদের বাড়িতে।আর এখন বাজে দুপুর একটা।দুটোঘন্টা যাবত এখানে এসে সানাম শুদ্ধতাকে এমন ঝটফট করতেই দেখছে।শুদ্ধতা এমন অদ্ভুত ব্যবহার সহ্য হচ্ছে না সানামের। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার ও মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছে যে সমস্যাটা কি? কিন্তু এই মেয়ে বললে তো।সানাম এইবার আর না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো,
-‘ শুদ্ধতা আর একবার জিজ্ঞেস করবো ভালোই ভালোই বলছি তোর সমস্যাটা কোথায়?এইবার না বললে আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।তোর এসব দেখতে আমার ভালো লাগছে না।’
শুদ্ধতা ভড়কে গেলো সানামের এমন কথায়।চুলায় রান্নার আঁচটা একটু কমিয়ে দিয়ে।সানামের মুখোমুখি হলো।আমতা আমতা করে বলে,
-‘ আসলে হয়েছে কি ওই…’
-‘ তোর এইসব আসলে নকলে শুনতে চায়নি।ডিরেক্ট সোজাসাপটা সব বল।’
শুদ্ধতা মুখ ভার করে বলে,
-‘ উনার জন্যে চিন্তা হচ্ছে না।কাল রাতে উনার অনেক জ্বর ছিলো ভীষন দূর্বল তিনি।তাও আবার সকালে আমার সাথে রাগ করে না খেয়ে চলে গিয়েছেন কাজে।আমার ভালো লাগছে না।’
সামাম জানে শুদ্ধতার কার কথা বলছে।তাও জিজ্ঞেস করলো,
-‘ এই উনিটা আবার কে? আর রাগই বা হলো কেন তোর উপর?’
শুদ্ধতার রাগ লাগলো।সানাম যে ইচ্ছে করে ওকে খোচাচ্ছে তা বেশ ভালোভাবেই জানে।তাই রাগি গলায় বলে,
-‘ তোর নীবদ্ধ ভাই।তার কথা বলছি।’
তারপর আস্তে আস্তে সকালের সব ঘটনা খুলে বললো।শুদ্ধতার মুখে সবটা শুনে সানাম রাগ নিয়ে তাকালো।ফের বলল,
-‘ শাকচুন্নি মাইয়া এইসব কথা বললে তো ভাইয়া কষ্ট পাবেই। মিথ্যে হলেও একবার বলতি মানবতার খাতিরে কিছু বলিস নি। এখন তাহলে শুধু কাঁদছিস কেন?যা সর আমার সামনে থেকে।তোরে আমার সহ্য হচ্ছে না।’
শুদ্ধতা করুন গলায় বলে,
-‘ প্লিজ দোস্ত এমন করিস না।কিছু একটা আইডিয়া দে না।’
সানাম কোন কথা বললো না।শুদ্ধতা সানামের কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান শুরু করলো।অবশেষে না পেরে সানাম বলে,
-‘ ভাইয়াকে ফোন দে! কথা বল!’
চোখ উলটে ফেললো শুদ্ধতা।বলে,
-‘ তুই জানিস আমি এসব করতে পারবো না।আমার ভালো লাগে না।’
-‘ তাহলে কি ভালো লাগবে?আমার মাথা চিবিয়ে খেয়ে ফেল বা*ল!’
-‘ মুখ খারাপ করবি না সানাম!’
-‘ তো? তোরে পূজা করুম?মেজাজ গরম হইতাছে সর যা!’
শুদ্ধতা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো। একমনে বলছে একবার ফোন দিক লোকটাকে আবার ফোন দিতে গিয়েও কেমন একটা লাগছে।এই একটা বছরে নীবদ্ধকে ও কোনদিন সেধে ফোন দেয়নি। হঠাৎ সানামের একটা কথায় থমকে গেলো শুদ্ধতা।সানাম বলে,
-‘ এক কাজ করতে পারিস।ভাইয়া নিশ্চয়ই এখনো রেগে আছে।আর কিছু খাইওনি।তুই বরং ভাইয়ার জন্যে খাবার পাঠিয়ে দে।আজ তো আবার তুই রান্না করেছিস।ভাইয়া অনেক খুশি হবে।’
-‘কিন্তু কিভাবে?’
শুদ্ধতার প্রশ্নে সানাম কিছু একটা ভাবলো।তারপর বলে,
-‘ তুই তো জীবনেও যাবি না তা আমি জানি।তাই তোর দেবরকে ফোন কর।তাকে এখানে আসয়ে বল।তারপর তার কাছে খাবারটা দিয়ে বল ভাইয়ার জন্যে খাবারটা নিয়ে যেতে।’
শুদ্ধতার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ঝটপট ঐক্য ফোন লাগালো।ঐক্য খুব দ্রুতই ফোন রিসিভ করলো,
-‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি।’
-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ভাইয়া।ভালো আছেন?’
-‘ হ্যা ভাবি।ভাবি কোন দরকার ছিলো?ফোন দিলেন যে?’
-‘ কেন ভাইয়া আমি কি দরকার ছাড়া ফোন দিতে পারি নাহ।’
ঐক্য আমতা আমতা করলো।শুদ্ধতা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হালকা হেসে বলে,
-‘ আরে ভাইয়া টেন্সন করবেন নাহ।হ্যা একটু দরকারেই দিয়েছিলাম!’
-‘ কি দরকার ভাবি?’
শুদ্ধতা ইনিয়েবিনিয়ে বলেই ফেলে,
-‘আসলে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।’
-‘ কি কাজ?’
-‘ আপনার ভাইয়ের কাল রাত খুব জর এসেছিলো।আর উনি সকালে না খেয়ে কাজে চলে গিয়েছিলেন।তাই আমি কিছু রান্না করে আপনাকে দিতাম আপনি কি তা নিয়ে আপনার ভাইকে দিতে পারবেন? ‘
হেসে ফেললো ঐক্য। বলল,
-‘ কেন পারবো না।অবশ্যই পারবো।শুধু আপনি একটু কষ্ট আপনাদের বাড়ির পাশের গলিতে আসেন আমি সেখানে আসছি।’
-‘ আচ্ছা ভাইয়া ধন্যবাদ। ‘
-‘ উহুঁ! আপনাকে ধন্যবাদ ভাবি।ভাইয়ার জন্যে এতোটা চিন্তা করার জন্যে।আসছি আমি আপনিও আসুন।’
শুদ্ধতা ফোন রেখে দিলো। তারপর দ্রুত হাতে দুটো টিফিন বক্স রেডি করলো।খাবারের আইটেমে দিলো, খিচুরি,মরিচ ভর্তা,ইলিশ মাছ ভর্তা,শাক ভাজি, সরষে ইলিশ, ডিম ভাজা, আর গরুর গোস্ত।দুপুরের জন্যে এইগুলোই রান্না করেছিলো।দুটো টিফিন দিলো শুদ্ধতা কারন নীবদ্ধ তো আর একা খেতে পারবে না। আরো লোক আছে, ঐক্য আছে।সবার সাথে যে নীবদ্ধ ভাগাভাগি করে খাবে তা বেশ ভালোভাবেই জানে।সব রেডি করে শুদ্ধতা সানামকে নিয়ে চলে রওনা দিলো।
#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।