রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-১২

0
443

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১২
বাড়ির পাশে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুদ্ধতা আর সানাম।শুদ্ধতার হাতে দুহাতে দুটো টিফিনবক্স।মূলত ওরা ঐক্য’র জন্যে।রোদ উঠেছে প্রখরভাবে।সানাম বিরক্তি নিয়ে এইবার বলে,
-‘ তোর দেবর কখন আসবে? আর কতোক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?’

শুদ্ধতা ঘড়িটা একপলক দেখে বলে,
-‘ আশ্চর্য! এসেছি দশমিনিটও হয়নি।অথচ তুই এমন একটা ভং ধরছিস মনে হচ্ছে আমরা একঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি।পথেই আছে ভাইয়া।আসতে সময় লাগে না?’

-‘ তুই এখন তোর এখনো না হওয়া দেবরের পক্ষ নিচ্ছিস?আমি এখন তোর এতোটাই পর হয়ে গেলাম?’

ন্যাকা কান্না করে বলে সানাম।শুদ্ধতা চোখ উল্টে ফেলে।এই মেয়ে এতো অভিনয় করতে পারে।শুদ্ধতা বলে,
-‘ এমন অভিনয় কিভাবে করতে পারিস? তোকে তো অস্কার দেওয়া উচিত!’

সানাম দাঁত কেলিয়ে হাসলো।এমন সময় বাইক নিয়ে আসলো ঐক্য।শুদ্ধতা আর সানামের সামনে বাইকটা থামিয়ে বাইক থেকে নেমে হাসি মুখে এগিয়ে আসলো।বললো,
-‘ ভাবি দুঃখিত একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।’

-‘ ইট্স ওকে ভাইয়া। সমস্যা নেই। তা আপনার ভাই কোথায় আছে জানেন?’

-‘ ভাইয়া অফিসেই আছে। আমিও সেখানেই যেতাম।আর আপনি ফোন দিয়ে দিলেন।’

শুদ্ধতা মিষ্টি করে হাসলো।টিফিনবক্স দুটো ঐক্য’র দিকে এগিয়ে দিতেই ঐক্য তা নিজের হাতে নেয়।মুখটা হা হয়ে যায় ঐক্য’র। অবাক হয়ে বলে,
-‘ দুটো টিফিনবাক্স।তাও আবার এতো বড় বড়।এতো খাবার কেন ভাবি?’

শুদ্ধতা হালকা হেসে বলে,
-‘ শুধুই কি আপনার ভাইয়ের জন্যে খাবার দিয়েছি নাকি।আপনি আছেন আরও মানুষ থাকতে পারে।জয় ভাইও থাকবেন।সবার জন্যেই দিয়েছি।’

-‘ ধন্যবাদ ভাবি।তবে আসি?’

-‘ আচ্ছা।’

ঐক্য বাইকে উঠে বসলো।বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে একপলক তাকালো সানামের দিকে।সানাম ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো ঐক্যকে এভাবে তাকাতে দেখে হকচকিয়ে গেলো।দৃষ্টি নত করে নিলো।আবারও কি মনে করে যেন কোণাচোখে ঐক্য’র দিকে তাকাতেই ঐক্য চোখ টিপে দিলো সানামকে।সানামের মুখটা হা হয়ে গেলো।ঐক্য দুষ্টু হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো।ঐক্য যেতেই শুদ্ধতা বাড়ি যাওয়ার জন্যে তাড়া লাগালো।

-‘চল সানাম।দেরি হয়ে গিয়েছে গোসল করা বাকি।নামাজ পরবো তারপর খাবো।’

শুদ্ধতা তাকিয়ে দেখলো সানাম হা করে সামনের দিক তাকিয়ে আছে।ওকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে তাকালো শুদ্ধতা।সানামের বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
-‘ কিরে? কি হয়েছে তোর?এমন হা করে কি দেখছিস?’

সানাম হরবরিয়ে উঠলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে স্থির করলো।জোড়পূর্বক হেসে বলে,
-‘ নাহ কিছু হয়নি।চল বাড়ি চল।’

শুদ্ধতার সন্দেহ কমলো না।তবে আর কথা বাড়ালো না সানামকে নিয়ে চলে গেলো বাড়িতে।

_____________

চট্টগ্রামের যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নীবদ্ধ। যেহেতু দুদিন থাকবে সেখানে অথবা আরও দেরিও হতে পারে তার কোন গ্যারান্টি নেই।এইজন্যে যেই কাজগুলো সে ছাড়া আর কারো করা সম্ভব না সেগুলো কমপ্লিট করছে।এখানের কাজ শেষ করে আবার পার্টি অফিসে যেতে হবে।মিটিং আছে জরুরি।জ্বর নিয়ে এইভাবে নিজের শরীরে প্রেসার ক্রিয়েট করাতে শরীরটা ভেঙ্গেচুরে আসছে।সামনে খাবারের প্লেটে বিরিয়ানি রাখা অথচ ওর এসব খেতে ইচ্ছে করছে না। জয় নিজেও খাচ্ছে না নীবদ্ধ খাচ্ছে না দেখে।এইবার না পেরে বলে,
-‘ বস খাচ্ছেন না কেন?আপনার চোখ মুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে।আপনার কি শরীর ভালো নেই বস?’

নীবদ্ধ একবার তাকিয়ে কোন জবাব না দিয়ে আবারও কাজে মন দিলো।হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লো জয়।এমন সময় রুমের ভীতর প্রবেশ করে ঐক্য।ঐক্য’কে দেখেই জয় দাঁড়িয়ে গেলো।হাসি মুখে বলে,
-‘ আরে ঐক্য আসো আসো।’

ঐক্য সোজা এসে সামনে রাখা সোফার উপর বসে পরলো।ঐক্য বড়সড় দুটো টিফিনবক্স টেবিলের উপর রাখতেই জয় অবাক হয়ে সেগুলো দেখলো।তারপর বলে,
-‘ বাহ বাহ! এমন বড় বড় দুটো টিফিনবাক্স।তা এগুলো কি খালি না ভীতরে কিছু আছে?’

ঐক্য বলল,
-‘ কি যে বলো না তুমি জয়।খালি হবে কেন?এগুলো এখানে এনেছি নিশ্চয়ই খালি আনবো না?’

-‘ হ্যা হ্যা তা ঠিক।তা এগুলো নিয়ে কোথা থেকে আসলে?’

জয় কিছু বলার আগে নীবদ্ধ এসে ওর পাশে বসলো।ঐক্যকে বলে,
-‘ এখানে যে?ক্লাস নেই?’

-‘ নাহ ভাই।আজ মাত্র দুটো ক্লাস ছিলো।’

-‘ খেয়েছিস কিছু?’

-‘ নাহ খায়নি।তাই তো তোর সাথেই লাঞ্চ করার জন্যে এসেছি। দেখ কতো খাবার এনেছি।’

ঐক্য ইশারা করলো নীবদ্ধ’কে টেবিলের দিকে।টেবিলের দিকে তাকাতেই নীবদ্ধ ভ্রু-কুচকে ফেললো।প্রশ্ন করলো,
-‘ এগুলো?’

ঐক্য আলতো হেসে বলে,
-‘ ভাবি নিজ হাতে রান্না করে পাঠিয়েছে।তোর নাকি জ্বর এসেছে কাল রাতে।আর সকালে তুই না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিস। এইজন্যেই আমাকে ফোন করে বলে তাদের বাড়িতে এসে খাবারগুলো নিয়ে যেতে।কিন্তু আমি বাড়ি যায়নি তাদের বাড়ির পাশে গলির ওখানে ভাবিকে আসতে বলে দিয়েছিলাম তারপর সেখান থেকেই নিয়ে এসেছি।’

নীবদ্ধ যেন সাত আসমান থেকে পরলো।এমন বড় ঝটকা খেলো কথাটা শুনে যে ও কি রিয়েকশন দিবে তাই ভুলে গেলো।শুদ্ধতা ওর জন্যে রান্না করে খাবার পাঠিয়েছে? এইগুলো কি ও সত্যি শুনছে?না কি ঐক্য শুধু শুধু ওর সাথে মজা নিচ্ছে।নীবদ্ধ ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ আমার সাথে কি তুই ফাইজলামি করছিস?’

ঐক্য আশ্চর্য হওয়ার ভান ধরে বলে,
-‘ ও মা ভাই তুই এসব কি বলছিস?আমি মজা করবো কেন?’

নীবদ্ধ চুপ করে রইলো আর কিছু বললো না।ঐক্য আর জয় নীবদ্ধ’র অবস্থা দেখে হাসলো।তারা বেশ বুঝতে পারছে নীবদ্ধ বড্ড অবাক হয়েছে এইভাবে শুদ্ধতা তাকে খাবার পাঠিয়েছে জেনে।জয় খাবার বারতে লাগলো। এতো পদের রান্না দেখে জয় বলে ,

-‘ বস ভাবি যে এতো সুন্দর রান্না পারে জানতামই না।আপনি আগে বলবেন না আমাদের?তাহলে ভাবিদের বাড়ি গিয়ে রোজ ভাবির হাতের রান্না খেয়ে আসতাম।কি সুন্দর ঘ্রান আসতেছে।’

নীবদ্ধ নিজেও হা করে সব দেখছে।শুদ্ধতা যে এতো ভালো রান্না পারে তা আগে জানতো না নীবদ্ধ।নীবদ্ধ বিরবির করে বলে,
-‘ আমি নিজেই তো জানতাম না আমার শুদ্ধতা এতো ভালো রান্না করে।’

নীবদ্ধ প্লেট হাতে নিলো। খাবারটুকু মেখে মুখে দিতেই চোখ বুঝে নিলো নীবদ্ধ।এতো মজা হয়েছে রান্নাটা বলার বাহিরে।জ্বরের মুখে ঝাল ঝাল ভর্তা গুলো দিয়ে খিচুরি খেতে বেশ ভালো লাগছে।একে একে সবগুলো খাবারই খেলো নীবদ্ধ।ওর আরো খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পেটে আর জায়গা নেই একটুও।নীবদ্ধ,ঐক্য আর জয় চেটেপুটে খেয়ে নিলো সব।ঐক্য খাওয়া শেষে বলল,
-‘ ভাবির হাতে জাদু আছে।আল্লাহ্ আমি বেশি খেয়ে ফেলেছি।’

জয়ও বলে,
-‘ হ্যা আমি অনেকগুলো খেয়ে নিয়েছি।’

নীবদ্ধ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে।ওর যে ঠিক কতোটা আনন্দ হচ্ছে ও বলে বুঝাতে পারবে না কাউকে।জয় আর ঐক্য নীবদ্ধ’র অবস্থা বুঝতে পেরে নীবদ্ধকে একা রেখে চলে গেলো।নীবদ্ধ শুদ্ধতার কাছ থেকে আচানক এতোটা ভালো ব্যবহার পেয়ে অনেকটা শক পেয়েছে কারন শুদ্ধতা এক বছরে কখনো নীবদ্ধ’র সাথে ভালোভাবে দুটো কথা বলেনি। আর সেই শুদ্ধতা নাকি আজ নীবদ্ধ’র জন্যে রান্না করে পাঠিয়েছে।বেচারা অবাক তো হবেই।নীবদ্ধ সোজা হয়ে বসলো।পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা টাইপ করে শুদ্ধতাকে মেসেজ পাঠিয়ে দিলো।

___________
মাত্রই পুরো ফ্যামিলির সাথে লাঞ্চ করতে বেসেছে শুদ্ধতা। মনটা আনচান করছে ওর।বড্ড জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ওযে খাবারগুলো পাঠিয়েছে তা লোকটা খেলো কিনা।আর খেলেও কি তার পছন্দ হয়েছে? আর লোকটার জ্বরটাও কমলো কি না কে জানে? বার বার নীবদ্ধ’র ফোনে কল কর‍তে গিয়েও ফিরে এসেছে শুদ্ধতা।কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করে ওর মাঝে।শুদ্ধতা সবে একলোকমা খাবার মুখে পুরেছে আর তখনই ওর ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠে।শুদ্ধতা খাবার চিবুতে চিবুতে মেসেজটা ওপেন করতেই খাওয়া দামিয়ে দেয় শুদ্ধতা।সেখানে লিখা,

‘Thank you Suddhata for cooking and sending such delicious food.’

#চলবে_________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।