রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-১৩

0
601

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৩
চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে নীবদ্ধ।ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচে নামতেই আয়েশা রহমানের মুখোমুখি হলো নীবদ্ধ।এদিকে ছেলেকে এমন ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখে আয়েশা রহমান অস্থির হয়ে যান।উদ্বিগ্নতার সাথে জিজ্ঞেস করে,
-‘ বাবা? কই যাচ্ছিস তুই? আমাকে তো কিছু বললি না বাবা?’

নীবদ্ধ জোড়ে শ্বাস ফেলে বলে,
-‘ মা চিন্তা করো না। আমি কয়েকদিনের জন্যে বাড়ি থাকবো না। কাজে কাজে যাচ্ছি।আমি তোমাকে বলতে পারছি না কোথায় যাচ্ছি।তবে একদম চিন্তা করবে না ঠিক আছে?’

-‘ তাই বলে এমন হুট করে কোথায় যাচ্ছিস? আমাকে তো একবার বললিও না বাবা? ‘

-‘ মা প্লানটা হুট করে হয়েছে।আসছি মা দোয়া করিও আমার জন্যে।’

নীবদ্ধ আর কথা বাড়ালো না।ফারুক এহসান,ঐক্য,ঈশান কাউকেই বলে গেলো না।কারন একবার যদি কেউ জানতে পারে ও কোথায় যাচ্ছে তাহলে ব্যাপারটা স্বাভাবিক থাকবে না। সমস্যা হবে অনেক। নীবদ্ধ বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।জয়’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ গাড়ি ঠিক করেছো জয়? ‘

জয় ড্রাইভ করতে করতে উত্তর দেয়,
-‘ জি বস।আমি চিন্তা করবেন নাহ।’

-‘ ফোনের সিম চেঞ্জ করেছো? একদম কোন রকম গাফিলতি করা যাবে না জয়।’

-‘ জি বস সব করেছি যেমনটা আপনি বলেছেন।’

নীবদ্ধ জয়ের কথায় একটু স্থির হলো।গাড়ি ধানমন্ডি আসতেই নীবদ্ধ’র গাড়ি থেকে নেমে জয় আর নীবদ্ধ অন্য একটা গাড়িতে উঠলো।মূলত এটা থেকেই প্লান করা। নীবদ্ধ’র গাড়ির ফলো করতে পারে কারন ওর গাড়ির নাম্বার সবার জানা।তাই এই ব্যবস্থা।অতঃএব গাড়ি চলতে লাগলো নিজ গতিতে।নীবদ্ধ চোখ বন্ধ করে নিলো। জুনায়িদ শেখ এর কাছ থেকে অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসবে।অনেক অজানা তথ্য।শুধু ঠিকঠাক তথ্য নিয়ে বেঁচে ফিরতে পারলেই হলো।
____________
সানামকে নিয়ে হাটছে শুদ্ধতা।উদ্দেশ্য একটাই ঐক্য’কে খুঁজে বের করা।এদিকে সানাম বিরক্ত খুব শুদ্ধতার কাজে।সে এই নিয়ে হাজারবার বলে ফেলেছে যে ও যাবে না শুদ্ধতার সাথে।ওই লোকটার সামনে তো একেবারেই না।লোকটা কেমনভাবে যেন তাকায়।বুক ধরফর করে ওই চোখের চাহনী ওর উপর পরলে।শুদ্ধতা এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজছিলো।অবশেষে ঐক্য’কে খুজে পেলো শুদ্ধতা।ঐক্য’র কাছে যেতেই ঐক্য সহ ওর বাকি বন্ধুরা সবাই সালাম জানালো।ঐক্য বলে,
-‘ ভাবি কিছু দরকার?’

শুদ্ধতার অসস্থি লাগছে কেমন যেন।তাই আওয়াজ খাঁদে নামিয়ে বলে,
-‘ একটু সাইডে আসবে ভাইয়া? জরুরি ছিলো!’

ঐক্য শুদ্ধতার কথায় ওর বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে শুদ্ধতার সাথে সাইডে আসলো।শুদ্ধতা কিভাবে কথাটা জিজ্ঞেস করবে ভেবে পাচ্ছে না।সানাম অসহ্য হয়ে বলে,
-‘ বলে ফেল এমন করার কি আছে আজব?’

শুদ্ধতা মুখটা কাচুমাচু করে বলেই ফেলে,
-‘ আপনার ভাই কি সত্যি খাবারগুলো খেয়েছিলো ভাইয়া? আর কেমন আছে উনি?জ্বর কমেছে উনার?’

ঐক্য হাসতে গিয়েও হাসলো না।উত্তর দিলো,
-‘ হ্যা ভাবি খেয়েছে ভাইয়া।অনেক মজার ছিলো খাবার গুলো।আর ভাইয়া মেডিসিন ও নিয়েছিলো তাই জ্বরও সেরে গেছে।’

সস্থির নিশ্বাস ফেললো শুদ্ধতা।এতোক্ষন লোকটার খবর জানার জন্যে কেমন যেন ছটফট লাগছিলো। শুদ্ধতা ঐক্য’কে ধন্যবাদ জানিয়ে চলেই আসছিলো এমন সময় ওদের থেকে জুনিয়র একজন এসে খবর দেয় শুদ্ধকাকে একজন প্রফেসর ডাকছে। শুদ্ধতা আর সানাম ঐক্যকে বলে সেদিকে চলে গেলো।শুদ্ধতা প্রফেসরের রুমে একা গেলো।সানাম বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো।এমন সময় হুট করে সানামের পেছনে এসে কেউ বলল,
-‘ একটু কথা বলা যাবে মিস?’

সানাম চমকে পিছনে তাকালো।কিন্তু ঐক্যকে দেখতেই ভড়কে গেলো।ঐক্য আবারও বলে,
-‘ রিলেক্স! এতো হাইপার হওয়ার কিছু হয়নি।’

-‘ আপনি এখানে কেন?’

ঐক্য নির্বিকার চিত্তে বলে,
-‘ তুমি ভালো করেই জানো সানাম। আমি এখানে ঠিল কি কারনে আসতে পারি।’

-‘ নাহ জানি না।আর জানতেও চাই না।’

সানামের সোজা-সাপটা উত্তরে হাসলো ঐক্য। বলে,
-‘ তুমি আর ভাবি একেবারে সেম সেম।ভাইয়াকেও আমার ভাবি লাইক করতো না।আর তুমিও একই ভাবে আমাকে অত্যাচার করবে।’

তেতে উঠলো সানাম।বলে,
-‘ অত্যাচার মানে?আমি আপনাকে কিসের অত্যাচার করছি হ্যা?’

-‘ এইযে কিভাবে আমার সাথে কথা বলছো।এটা কি ঠিক?’

-‘ দেখুন ফাউল কথা বাদ দিন।যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।’

ঐক্য দুহাত পকেটে পুরে তাকালো সানামের দিকে।এই মেয়েটাকে কখন কিভাবে যে ভালোবেসে ফেলেছে ঐক্য। নিজেও জানে না।ঐক্য নিষ্প্রভ কন্ঠে বলে,
-‘ ভালোবাসি তোমাকে।আই লাভ ইউ।’

চমকে উঠলো সানাম।অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো যেন।সানামের পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ঐক্য’র এই একটা কথায়।থরথর করে কাঁপছে সানাম।এমন ভয়ানক বাক্যগুলো কেন বললো ওকে ঐক্য।কেন বললো? সানামের চোখ ভরে উঠলো।ছলছল চোখে ঐক্য’র দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।এদিকে সানামের যাওয়ার পথের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ঐক্য। তার কপালেও যে তার ভাইয়ের মতো অবস্থা লিখা আছে তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে ঐক্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো ঐক্য।

____________
সানামকে খুঁজে চলেছে শুদ্ধতা। মেয়েটাকে বলেছিলো বাহিরে ওর জন্যে অপক্ষা করতে।কিন্তু শয়তান মেয়েটা কোথায় চলে গেছে কে জানে? মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে শুদ্ধতার। রাগে সারাশরীর জ্বলছে।ফোন বের করে কল করলো সানামকে।ফোন তুলছে না সানাম।হাটতে হাটতে ভার্সিটির পুরান ভবনের পিছনে চলে এসেছে শুদ্ধতা।রাগে যে কখন এদিকটায় চলে এসেছে তা খেয়ালই করেনি শুদ্ধতা।বিরবির করে বলে,
-‘ বান্দর মাইয়াটাকে পেলে দুটো থা*প্পড় লাগাবো। অস*ভ্য মেয়ে।’

শুদ্ধতা যেই না চলে আসতে নিবে এমন সময় কারো আওয়াজ শুনতে পায় শুদ্ধতা।অবাক হয় বেশ শুদ্ধতা। এই সময়ে এখানে কেইবা হতে পারে?আর কোন মেয়ের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছে শুদ্ধতা।খুব সাবধানে আস্তে আস্তে আওয়াজটার দিকে অগ্রসর হয় শুদ্ধতা।কিন্তু গিয়ে যা দেখলো চোখ কপালে উঠে গেলো শুদ্ধতার। দুটো মেয়ে মাটিতে বসে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে।আর সামনে চেয়ারে বসা লোকটার পা জড়িয়ে ধরে কিছু একটা চাইছে।লোকটা মাস্ক পরা তাই তার চেহারা দেখছে না শুদ্ধতা।লোকটা একটা চেয়ারে বসে আছে।আর তার দুপাশে দুটো লোক।মেয়ে দুটোর কান্না দেখে তিনটে লোকই হাসছে। শুদ্ধতা খারাপ কিছুর আভাস পাচ্ছে।তাই দ্রুত নিজের ফোনের ভিডিও অপশন অন করে ওদিকে তাক করে নিলো।আর খুব সাবধানে ওদের নজরে যেন না পরে সেই অনুযায়ী লুকিয়ে নিলো।শুদ্ধতা আবারও তাকালো। এইবার তাকাতেই শুদ্ধতা যেন বিশাল বড় ঝাটকা খেলো।চেয়ারে বসা লোকটাকে মাস্ক খুলতে দেখেই মূলত শুদ্ধতার এমন অবাক হয়েছে কারন চেয়ারে বসা লোকটা আর কেউ না ওর বোনের স্বামি জাহিদ।শুদ্ধতার চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।জাহিদকে দেখে ওর রক্ত যেন টগবগিয়ে উঠেছে।ছুটে গিয়ে জাহিদের গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পরে চুপ করে রইলো শুদ্ধতা।প্রচন্ড রাগ নিয়েও সবটা দেখতে লাগলো শুদ্ধতা।
জাহিদ মেয়েদুটোর দিকে তাকিয়ে পৈচাশিক হাসি দিলো।ফের বলে,
-‘ টাকা ছাড়া তো মাল দেওয়া যাবে না সোনামুনিরা।টাকা দেও মাল নেও।’

মেয়ে দুটো ঝটফট করছে।বার বার জাহিদের পা ধরছে।আর বলছে,

-‘ প্লিজ দিয়ে দিন না স্যার। আমরা টাকা দিয়ে দিবো আপনাদের প্রমিস।তাও দিয়ে দিন। আর যে সহ্য হয়না আমাদের।’

জাহিদ আবারও হাসলো।দুপাশে দাঁড়ানো ছেলেদুটোকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ কিরে তোরা কি বলিস?’

ডানপাশে দাঁড়ানো ছেলেটা বলে,
-‘ বস এইভাবে বাকিতে মাল দেওয়া বিশ্বাসযোগ্য না।বলি কি আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।’

-‘ দেখি বল দেখি তোদের কি বুদ্ধি!’

ছেলেটি এমন একটা কথা বললো।কথা শুনে সাথে সাথে জাহিদ কামুক দৃষ্টিতে মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর মেয়ে দুটো উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ মা*ল চাই তো?’

মেয়ে দুটো পাগলের মতো করে বলে,
-‘ হ্যা হ্যা চাই চাই।’

-‘ আমি বাকিতে মা*ল দেই না।তোদের কাছে যেহেতু টাকা নেই।তাই মা*লের বিনিময়ে আজ তোরা দুটো এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমাকে বিনোদন দিবি।তোদের দুটোকে দিয়ে আমার দেহের জ্বা*লা মিটিয়ে টাকা উশুল করবো।বল রাজি?’

মেয়ে দুটো একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো।জাহিদ নিজের হাতে থাকা ড্রা*গসগুলো নাড়িয়ে চাড়িয়ে মেয়েদুটোকে আরো লোভ লাগাচ্ছে।উপায় না পেয়ে তারা বলে,
-‘ আমরা রাজি।আমরা রাজি।’

মেয়ে দুটোকে উঠে দাড়াতে বলে জাহিদ। তারা তাই করে।জাহিদ নিজের গায়ের টি-শার্ট খুলে একটা মেয়েকে টেনে কাছে এনে ওখানে উপস্থিত সবার সামনেই গভীর চু*ম্বনে লিপ্ত হয়।হাত বাড়িয়ে অপর মেয়েটাকেই কাছে টেনে আনে।মেয়েটার বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলাতে লাগে।পাশে দাঁড়ানো ছেলে দুটো হাসছে। জাহিদ মেয়েদুটোকে নিয়ে পাশেই থাকা ঝোপের মাঝে চলে যায়।ব্যস, এটুকু পর্যন্ত ভিডিও করে সরে আসে শুদ্ধতা। চাই চাইতেও এসব জ*ঘন্য দৃশ্য দেখতে হয়েছে ওকে।দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় শুদ্ধতা। একেবারে ভার্সিটির ওয়াশরুমে চলে যায় ও।গিয়েই গড়গড় করে বমি করে দেয় ও।ঘৃনায় এতোক্ষন গা গুলিয়ে আসছিলো।এখন একটু ভালো লাগছিলো। নিজেকে ফ্রেস করে বেড়িয়ে আসলো শুদ্ধতা।প্রচন্ড রাগে মন চাচ্ছে আশেপাশে সব ভস্ম করে দিতে।নিজের বুবু*র উপর প্রচন্ড রাগ হয় শুদ্ধতার।রাগে বিরবির করে বলে,
-‘ তোমার মতো একটা মানুষ এমন জঘ*ন্য, চরিত্রহীন লোককে কিভাবে ভালোবাসতে পারে বুবি?কিভাবে পারলে ভালোবাসতে?আবার এই লোকের জন্যে নিজের মূল্যবান জীবনটা শেষ করে দিলে বুবু।কেন করলে বুবু?কেন করলে?’

#চলবে__________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।