#রাগি_বউ
শামিয়া খানম জিনিয়া
৬ষ্ঠ,৭ম_পর্ব
আমাকে চিন্তিত থাকতে দেখে ও আমাকে বললো,
” সাদিয়া অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে ওর দিংগুলা কাটায়,,,,,,এজন্য আমাদের বিয়েতে ও হয়ত আসতে পারিনি……….!!!!”
মাহাদির কথায় সেদিন সন্তুষ্ট হতে পারিনি……….
বাবার বাড়ি আর বেশিদিন থাকা হলোনা চলেই আসলাম শশুর বাড়িতে…..
এটা শশুর বাড়ি বলা যায়না, শশুর শাশুড়ি যে আমার মা বাবাই…….
কাউকে নিজের বলে ভেবে নিলেই সে নিজের হয় অন্যথায় নয়……
একদিন আমার শাশুড়ি আর ননদ আত্নীয় বাড়িতে বেড়াতে গেল, তাই রান্নাঘর এ আমাকেই ঢুকতে হলো…..
বিয়ের পর প্রথম রান্নাঘর এ ঢুকেছি।।
যেহেতু শাশুড়ি মা নেই, তাই আমাকেই রান্না করতে হবে। রান্না করে, নামাজ পড়ে ঘরে এসে বসলাম। পুরা বাড়িতে আমি একা……
মাহাদি ও নেই বাড়িতে, সে ব্যবসার কাজে বাইরে গেছে…..
কি করবো বুঝে উঠতে না পেরে ইউটিউব এ গিয়ে গান শোনা শুরু করি।
এই ছেলেটার জন্য তো একটু গান শোনার ও উপায় নাই…….
গানের প্রতি আমি এতটাই মগ্ন হয়ে গেছিলাম যে ও কখন বাড়িতে ঢুকেছে সেটা খেয়াল ও করিনি………
তাড়াতাড়ি ওকে দেখে গান অফ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওর চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কি রাগ ছিল সেই চেহারার মধ্যে…..
” আচ্ছা আপনার আবার কি হলো??? নিজেই তো বলেন এত রাগ ভালোনা…..”
” তুমি গান কেন শুনছো???”
” তার জন্য এত রাগ? মনে হচ্ছে আপনার কোনো বড় ক্ষতি করেছি আমি…….”
“ক্ষতিই তো করেছো, অনেক বড় ক্ষতি!”
” মানে কি? বুঝিয়ে বলুন”
” গান শুনা হারাম।একদা ইবন উমার (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে তাঁর কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেন। তিনি সেখান থেকে দূরে গিয়ে আমাকে বলেনঃ হে নাফি! তুমি কি এখনও কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছ। আমি বলিঃ না। তখন তিনি তাঁর কান থেকে আঙ্গুল বের করে বলেনঃ একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি এরূপ শব্দ শুনে-এরূপ করেন। আবু দাউদ ৪৮৪৪
যেখানে আমাদের নবী বাদ্যযন্ত্র শুনে কানে আঙুল দিতেন, সেখানে তোমার সাহস কি করে হল গান শুনার। হাদিসে আরো আছে,
‘মিউজিক ‘ঘন্টা বা ঘুঙুর হল শয়তানের বাঁশি।’’ (মুসলিম ২১১৪, আবূ দাঊদ ২৫৫৬, আহমাদ ২/৩৬৬, ৩৭২, বাইহাকী ৫/২৫৩’
আর এতে আমার ক্ষতি টা কি করেছে জানো???
তুমি আমার স্ত্রী, আর তোমার ক্ষতি মানেই তো আমার ক্ষতি……
আজ যদি এইই অবস্থাতেই তোমার মৃত্যু ঘটতো????
যদি আমি আসার আগেই তুমি বিদায় নিতে এই দুনিয়া থেকে???
তখন আল্লাহরর কাছে কি জবাব দিতে???”
মৃত্যুর কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছিলাম,,,,,,,,
সত্যিই তো মারা গেলে তো কিছুই আমার সাথে যেতনা, সব ফেলে রেখেই অজানা দেশে পাড়ি দিতে হত আমায়,,,,,,,
মাহাদির কাছে ক্ষমা চাই আমি!!!
ও আমায় বলল,
” আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে তো লাভ হবেনা। ক্ষমা চাইতে হলে চাও ওই মহান রবের
কাছে। আমার কাছে নয়।”
আল্লাহর কাছে সেদিন অনেক তাওবা করেছিলাম,,,,,
মাহাদিকে দুপুরের খাবার খেতে রান্নাঘর এ ডাক দিই,,,
মাহাদি একটু বেশিই এক্সাইটেড ছিল। কারন আমার রান্না তো আগে কখনো খাইনি। প্রথম রান্না করেছি।
ওকে খাবার খেতে দিই, তারপর ও আমাকে মুচকি হেসে বলে,
“রাগি বউ! মাশ আল্লাহ, রান্না সুন্দর, কিন্তু একটু লবন আর ঝাল বেশি হয়ে গিয়েছে।”
কথা বলতে বলতেই ও বাকি খাবার গুলা খেয়ে ফেলেছিল। আমি জানি আমায় খুশি করার জন্য ও ওমন করেছিল। ইচ্ছা করে যে লবন আর ঝাল মিশিয়েছিলাম, সেটা ওকে বলিনি।
প্রতিদিন রান্না করতে হবে এই ভয়ের কারনে ওমন কাজ করেছিলাম।
পরে অবশ্য ওর জন্য খারাপ লেগেছিল। এমন টা করা আমার উচিত হয়নি।
এদিকে আমার শাশুড়ি মা বাড়ি আসলো…….
ওনি আমায় দেখে বললেন,
” মা’রে! কটা দিন তোকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা???”
” না মা! আপনি কেন কষ্ট দিবেন? আপনার ছেলেটাই তো আমায় কষ্ট দিয়েছে। ওকে বলেছিলাম একটু হোটেল থেকে খাবার কিনে আনতে, তো আনলইনা।”
ও পাশ থেকে বলে উঠে,
” মা’ তুমি তো জানো হোটেলের খাবার আমি একদম খেতে পারিনা। তাছাড়া তোমার বউয়ের রান্না তো মাশ আল্লাহ ভালো, প্রথমদিন একটু লবন আর ঝাল বেশি দিয়েছিল। তারপর থেকে তো আমিই ঝালের ও লবনের পরিমাণ দেখিয়ে দিতাম।”
” ঠিক আছে বউমা! তোমার তো বয়স কম এখন ও। তোমাকে এক্ষুনি অত কষ্ট করতে হবেনা।”
” মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা বাঁচা গেল।”
ওকে বললাম,
” কি হলো মায়ের সামনে বেশি প্রশংসা করে? সেই তো আমিই জিতে গেলাম।”
” হ্যা! তুমি তো মায়ের আদরের বউমা। যাও যাও তোমার হাতের রান্না খাবইনা।আড়ি তোমার সাথে।”
” হুম আড়ি। ”
” এই তোরা দুটোতে কি শুরু করলি বলতো???
ঘরে যা তো……….!!!!”
” হুম মা যাচ্ছি! আপনার ছেলেকে খেয়ে নিতে বলুন, আমি খাবোনা ওর সাথে।”
” হ্যা! যাও খেতে হবেনা। আমি ও খাবোনা তুমি না খেলে।”
” নে হয়েছে! আর ঝামেলা করিস না তো! ”
” তোমার বউমাকে চুপ করতে বল মা।”
হাসি, খুনসুটিতেই আমাদের সুখের সংসার চলছিল। ধীরে ধীরে মাহাদির প্রতি আমার ভালোবাসা টা বেড়ে যেতে থাকে……..
হঠাৎ ই বড় ধরনের ডেঙ্গু জ্বর আমাকে ঘিরে ফেলে। সারারাত জেগে মাহাদি আমার খেয়াল রাখতো। জ্বরের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল। কমার কোন লক্ষন দেখছিলাম না।
মনের ভিতরে মৃত্যু ঝনঝনানি শব্দ বাজতে থাকে আমার। ভাবিনি ওই জ্বর থেকে মুক্তি পাবো। আমি যে সেদিন ইচ্ছা করে তরকারিতে ঝাল মিশিয়েছিলাম, সেটা ওকে বলে ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। ও আমাকে বলেছিল এভাবে প্রতারনা করা মুসলমানের বৈশিষ্ট্য না। আমি ক্ষমা চেয়েছিলাম ওর কাছে।
বাড়ির সবার বুঝতে খুব কষ্ট হত আমি অসুস্থ নাকি ও অসুস্থ………????
” আমিই উলটে ওকে বুঝ দিতাম। বিপদে ধৈর্য হারা হওয়া উচিত না।”
আমার অসুস্থতা আমাকে বদলে দিয়েছিল। আমার প্রভুর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করেছিল।
এমতাবস্থায় আমার বড় ননদ আমাদের বাসায় চলে আসে……..
আমাদের ঘরে ঢুকেই ও সালাম দিল। ওর চোখ দুটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। যেমন ভাই তার তেমনি বোন………
আমি ওকে বলি
“কয়টা দিন থাকতে হবে কিন্তু। কোন অজুহাত শুনবনা আমি………!!!!”
” কেন ভাবি আমায় একেবারে রাখা যাবেনা……….???
কয়টা দিন কেন……..???”
” মানে কি…….???”
” এমনি ই বললাম!”
জানিনা সাদিয়ার চাহনি বড় অদ্ভুত ছিল। ওর কথায় খুব সন্দেহ ছিল। কি হতে চলেছে আসলে………???
চলবে……
# রাগি_বউ_
৭ম_পর্ব
আমার জ্বর একটু কমতে থাকে……..
মাহাদি আমাকে যে কথা বলেছিল, তা শুনে সত্যিই বড় লজ্জিত হয়েছিলাম আমি। ও আমাকে বলল,
“রাগি বউ! আল্লাহর জন্য তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এমন কথা ও আমাকে এর আগে কখনো বলিনি। ও আবার ও বলা শুরু করলো,
” বিয়ের প্রথম রাত্রেই আমি তোমাকে এ কথা বলে দিতে পারতাম। কিন্তু কেন বলিনি জানো???
যদি কাউকে ভালোবাসতেই হয় সেটা আল্লাহর জন্য। কিন্তু তুমি তো তখন পরিপুর্ন ইসলামের পথে ছিলেইনা। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি তোমার মধ্যে পরিপুর্ন দ্বীনদারিতা দেখেছি। আমার মনের মতোই তোমাকে আমি পেয়েছি……
আল্লাহর রহমতে আমি পুরাপুরি সুস্থ হয়ে যায়……….
একদিন ঘর বাড়ি ঝাড়ু দিতে দিতে যখন সাদিয়ার ঘরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয় তখন দেখি,
সাদিয়ার চোখে পানি, আমায় দেখে সাথে সাথে তার আচলের মধ্যে কিছু একটা লুকিয়ে ফেলে, জানিনা কি লুকিয়েছিল।
আর সাথে তার চোখের জল ও মুছে ফেলে দেয়…….
আমি ওকে বললাম,
” কি হয়েছে তুমি কাঁদছ কেন বোন????”
” না ভাবি, মা……মা……মানে কিছু হয়নি তো আমার???”
” কই দেখি হাতের মধ্যে কি ওটা???”
আমার পিড়াপীড়িতে সাদিয়া একটা আংটি বের করে।
” ভাবি আসলে এটা ওর দেওয়া গিফট তো এজন্য এটা দেখলে ওর কথা মনে পড়ে অনেক বেশিই।”
কথা বলতে বলতেই আমাকে জড়িয়ে ধরব সাদিয়া অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। হারিয়ে ফেলে কথা বলার শক্তি।
কান্না থামিয়ে আবার ও বলতে শুরু করে,
” জানো ভাবি ও আমাকে একদম ভালোবাসেইনা। ও খুব ভাল ছিল। আগে খুব ভালবাসত আমায়। ইসলামের সব নিয়ম কানুন মেনে চলতো। কিন্তু যেদিন থেকে ঘরে Android ফোন ঢুকলো সেদিন থেকেই
সংসারে আগুন লেগেছে।
ও সারাক্ষণ ফোন নিয়ে পড়ে থাকত। আমি ওকে বলতাম,
” মেয়েদের সাথে চ্যাট করোনা।”তার বদলে আমায় বলত,
“আমি তো বোন হিসাবেই চ্যাট করছি।”
” কিন্তু তুমি কি জানোনা, ইসলামে গায়্রে মাহরাম মেইন্টেন করতে বলা হইছে।”
“আরে সোনা বউ, এসব নিয়ে টেনশন করে নাকি???”
আমায় সান্ত্বনা দিয়ে ও আমায় রেখে দিত। কিন্তু হঠাৎ ই একদিন ওর ফোনটা বেজে ওঠে। ও পাশে না থাকায় ওর ফোন টা আমি রিসিভ করি।
“আসসালামু আলাইকুম ”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম,কে বলছেন?”
“আমি নাহিদের স্ত্রী।”
“ও, আচ্ছা তার মানে তুমিই সেই গুণধর স্ত্রী?
আমি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড!”
“এই মেয়ে নাহিদের কোন গার্ল ফ্রেন্ড থাকতে পারেনা। ও খুব ভাল ছেলে।”
” এ বাবা বড্ড বিশ্বাস দেখছি তোমার নাহিদের উপরে। তো মেসেঞ্জার টা ওপেন করে দেখো তো। তাহলেই সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
মেয়েটার কথা মত নাহিদের মেসেঞ্জার চেক করি আর দেখি মেয়েটার কথা সত্যি………
জানো ভাবি! কথাটা বিশ্বাস করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। নাহিদ ওমন করার ছেলেইনা। কিন্তু নিজের চোখে দেখা জিনিস মিথ্যা তো আর হতে পারেনা……….
নাহিদ বাড়ি আসলে ওকে সব বলেছিলাম। আমার কাছে ও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল। ব্লক করে দিয়েছিল সব মেয়েদের……..
কিন্তু না জানি আবার ও সেই ব্লক ও খুলে দিয়েছিল। আর তারপর আর লুকিয়ে নয় প্রকাশ্যেই ও কথা বলতো মেয়েদের সাথে। শুধু চ্যাট না, ফোনে ও কথা বলতো। আর ওকে কিছু বললেই আমায় মার খেতে হতো। দিন দিন আমার উপর ওর অত্যাচার বেড়েই যাচ্ছিল……
মেনে নিয়েছিলাম সব কিছু। আর ওকে বারবার নিষেধ করতাম মেয়েদের সাথে কথা বলতে শুনতইনা। আমাকে উলটে আরো বলত তোমার ইচ্ছা থাকলে তুমি ও কথা বলো……..
” সাদিয়া তুমি টেনশন করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ”
” ঠিক আর কি হবে ভাবি যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে”
“মানে কি???”
” আর কিছু ঠিক হবার নেই ভাবি। ও আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।”
কথাটা শুনে যেন মনে হলো আমার ই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল। ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যখন হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন ই আমার রব আমাকে স্বরণ করিয়ে দেয় কুরআনে বর্ণিত সেই আয়াত……..
‘আর তোমরা নিরাশ হয়োনা এবং দুঃখ কোরোনা। যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে তোমরাই জয়ী হবে। (সূরা আল-ইমরান ১০৯)’
হ্যা সত্যিই তো আল্লাহ মানুষকে হতাশ হইতে নিষেধ করেছেন। সাদিয়াকে সান্ত্বনা দিলাম রবের বলা কথা দ্বারাই। ওকে বললাম,
” আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকেই বিপদ দিয়ে পরিক্ষা করেন। নিশ্চয় তুমি উত্তম কোন প্রতিদান পাবে।”
সাদিয়ার সাথে কথা বলার পর বুঝেছিলাম যে শয়তান কত বড় চালাক। সে মানুষকে কিভাবে ধোকা দেয়। সেদিন মাহাদি কেন আমায় ব্লক করেছিল, আর কেনইবা ও সব গায়্রে মাহরাম দের এড়িয়ে চলতো তা আর বুঝতে বাকি রইলনা আমার………..!!!
সাদিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সকাল ১০ঃ০০ বেজে যায় তা খেয়াল ও করিনি। বেচারি মাহাদি টা বোধ হয় নিজে নিজেই খাবার বেড়ে খেয়ে চলে গেছে……….
তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে মাহাদির কাছে ফোন করি। ওকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে বলি। কারন আমি নিজের পাপের প্রতি বড়ই অনুতপ্ত ছিলাম। মাহাদি আমার ফোন টা রিসিভ করে বলে,
” আমি গাড়ির মধ্যেই আছি, একটা জরুরি কাগজ বাড়িতে রেখে এসেছি।”
মাহাদির সাথে কথা বলতে বলতেই একটা অপ্রীতিকর শব্দ কানে এসে ফোন টা কেটে যায়। কানের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর শব্দ বাজতে থাকে……..!!!!
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলাম, আল্লাহ কে বলছিলাম হে আল্লাহ! ওকে তুমি ভাল রেখো……….!!!
নিজের করা ভুলগুলোর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। মাহাদির ফোন অফ বলছে………
কি যে করি বুঝতে না পেরে ঘরে এসে রাসূল সাঃ এর জীবনী পড়া শুরু করি………!!!
কত অভাব, অনটনের মধ্যে আমাদের নবী দিন কাটিয়েছেন। আবার তিনিই ছিলেন মুসলিমজাতির নেতা, শুধু মুসলিম নয় সব ধর্মের মানুষের নেতা ছিলেন। স্বভাবতই শাসকরা হয় আরামপ্রিয়, কিন্তু এ যে আমার প্রিয় নবী, আলাদা ছিল তার জীবনকাহিনী।
অত্যাচার, শাসন, জুলুম, আর রক্তমাখা সেই ইতিহাস। যা পড়লে কোন মানুষ নিজের অশ্রুকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। আমি কেঁদে ফেলি প্রিয় নবীর সেই রক্তমাখা ইতিহাস পড়ে। লজ্জিত হয় নিজের করা বিলাসিতার কথা ভেবে। ধিক্কার জানায় নিজের বিবেক কে,
‘বলি, এই নাকি আমি নবীর উম্মাত? এই নাকি নবীর অনুসারী? ‘
হৃদয় দুয়ার খুলে যায় আমার। শাশুড়ি মা’কে গিয়ে সাদিয়ার সব কথা খুলে বলি। ভাবনা তে ছিল সব কথা শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়বেন। কিন্তু নাহ! আমার ভাবনা কে মিথ্যে করে দিলেন আমার শাশুড়ি মা। বুকের মধ্যে কষ্ট লুকিয়ে আমায় বললেন,
” মা রে জানিস আকাশের মালিক তার বান্দাদের কষ্টে ফেলে, দুঃখে ফেলে পরিক্ষা করেন। আমাদের উচিত তার পরিকল্পনা কে মেনে নিয়ে ধৈর্য ধারন করা।”
ওনার কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই। পাশ থেকে পিচ্চি ননদ টা এসে আলতো করে ছুয়ে বলে,
“ধৈর্য কি গো ভাবি???”
” ধৈর্য তো এমন ই জিনিস। যা হাজার কষ্টের মাঝে মানুষকে সান্ত্বনা দেয়। ও তুমি বুঝবেনা, বড় হও নিশ্চয় বুঝবে……….!!!
মায়ের দিকে অনুসুচনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,” মা গো! আমায় কি ক্ষমা করা যায়না???”
” এমন কথা কেন বলছো? তুমি তো কোন অন্যায় করোনি”
” না মা অনেক কষ্ট দিয়েছি। আজ পর্যন্ত রান্নাঘর এ পর্যন্ত আসার প্রয়োজন ই মনে করিনি কখনো। এটা তো আমার করা উচিত হয়নি।”
” আরে পাগলি মেয়ের কথা শোন। তুমিই তো সব করবে। এখন তো তোমার বয়স কম। সময় হলে করবে ইনশাআল্লাহ। ”
আমাদের কথোপকথন এর মধ্যেই বাইরে থেকে অচেনা দুই লোকের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে কানে………..
শিউলিকে পাঠায় বাইরে তারা কি চায় জানার জন্য। শিউলি বাইরে থেকে এসেই আর স্বাভাবিক থাকতে পারিনি। ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদে আর ভাইয়া, ভাইয়া করে………!!!!
নিজেকে কালো কাপড়ে আবৃত করে ছুটতে থাকি বাইরে। এক অজানা ভয় নিয়ে বাইরের দিকে এগোতে থাকি………….
চলবে………
ইনশাআল্লাহ…..