রূপসীর আচল পর্ব-০১

0
3289

#রূপসীর_আচল
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১

বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসে স্টেশনে দাড়িয়ে আছি,হটাৎ একটা বেঞ্চের উপরে চোখ আটকে গেলো,মনে হচ্ছে একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে,ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা তবে শুধু পা টা দেখা যাচ্ছে,পা টা ধূসর সাদা,না জানি মেয়েটা দেখতে কেমন হবে,কিন্তু এত সকালে মেয়েটা এখানে কি করছে,আমি বাদে স্টেশনে কোন মানুষ নাই,কারন এখনো ঠিক করে সকাল হয়নি, আমার একটু তারা আছে বাড়ি যেতে হবে তাই সকাল সকাল স্টেশনে চলে এসেছি..!

ভাবতে ভাবতে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম,কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটা ঠান্ডায় কুঁকড়াচ্ছে,আর কুঁকড়াবে না কেন শীতের সকাল অতিমাত্রায় শীত পড়ে,মেয়েটার জন্য নিজের মধ্যে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে,মেয়েটা ঠান্ডায় কত কষ্ট পাচ্ছে,গা থেকে কোর্ট টা খুলে ওর গায়ের উপরে দিলাম,যাতে করে একটু ঠান্ডাটা কম লাগে,

কিন্তু মেয়েটা খাপ করে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লো,আমি তো পুরো নির্বাক হয়ে গেছি মেয়েটাকে দেখে,এত সুন্দর রমনী আজ পর্যন্ত আমি আর বাংলার জমিনে কখনো দেখি নাই,মেয়েটার রুপ দেখে আমি আর নিজের মধ্যে নাই,এত ফর্সা যে মেয়েটা মনে হচ্ছে টোকা দিলে ওর গা থেকে রক্ত ঝড়ে পড়বে…!?

মেয়েটা,এই ছেলে এমন করে কি দেখেন হা,এর আগে কখনো মেয়ে দেখেন নাই….?
মেয়েটার কথায় হুঁশ ফিরে এলো..!

আমি,না মানে আসলে বলতে গিয়ে আটকে গেলাম..!

মেয়েটা,থাক বলতো হবে না,আর আপনি আমার গায়ের উপরে কোর্ট টা কেন দিলেন…?

আমি,আপনি শীতে কুঁকড়াচ্ছিলেন তাই খারাপ লাগছিলো আমার কাছে, তাই আপনাকে কোর্টটা দিয়েছি,যাতে করে শীতটা একটু কম লাগে…!

মেয়েটা,ঐ ঐ ছেলে কোন খারাপ মতলব নাই তো,কথাবার্তা শুনে আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে?

আমি,এই না না ছি ছি, আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছুই নয়, আমার ওসব ধরনের খারাপ কোন মতলব নেই…!

মেয়েটা,তাহলে ঠিক আছে,আচ্ছা যেহেতু উপকার করেছেন,আরেকটা উপকার করতে হবে আমার….?

আমি,জি বলেন…?

মেয়েটা,কিছু টাকা দিন আমাকে,আমার না খুব খিদে পেয়েছে,কাল রাত থেকে না খেয়ে আছি কিছু খাবো…..??

আমি,মেয়েটার কথা শুনে মায়া লেগে গেলো,আচ্ছা চলেন আমিও সকালে বাসা থেকে নাস্তা করে আসিনি,আমারো খুদা পেয়েছে আপনিও খাবেন আমিও খাবো।

আমি হাটতে লাগলাম মেয়েটাও আমার সাথে সাথে আসছে,একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলাম একটা দোকান খুলেছে,
আমি,চলেন ঐ যে দোকান টাতে যাই,মেয়েটাও আমাকে অনুসরণ করে করে দোকানে আসলো,তবে কেন জানি মাথার মধ্যে একটা গোলক ধাঁদা কাজ করছে,মেয়েটাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা উচ্চ বংশের কোন মেয়ে,কিন্তু মেয়েটা এভাবে স্টেশনের মধ্যে কেন শুয়ে আছে,এমন সময় দোকানদার মামা এসে জিগ্যেসা করলো কি খাবেন…?

আমি, আমার মত অর্ডার করলাম,কিন্তু মেয়েটা দেখি চুপ করে বসে আছে..!
এই যে আপনি এভাবে চুপ করে বসে আছেন কেন,কি খাবেন বলুন…?

মেয়েটা,যে কোন একটা কিছু দিলেই চলবে…!

মেয়েটার কথা শুনে মনে হলো খুব খিদে পেয়েছে মেয়েটার,আমি ভালো ভালো খাবার কিছু অর্ডার করলাম,দোকানদার মামা খাবার দিয়ে গেলো,আমি খাবার খাওয়া শুরু করে দিয়েছি,কিন্তু মেয়েটা এখনো খাবার গুলো সামনে নিয়ে বসে আছে..!

এই যে কি হলো আপনার না খুদা পেয়েছে তাহলে খাচ্ছেন না কেন…?

মেয়েটা,হা পেয়েছে তো খুদা, কিন্তু আমি তো নিজের হাতে খেতে পারি না,আম্মু সব সময় আমায় খাইয়ে দেয়…!?

আমি,তাহলে এখন কি করবেন,আপনার আম্মু তো এখানে নেই…?

মেয়েটা, নেই তো কি হয়েছে,আপনি তো আছেন আপনি খাইয়ে দেন..?

আমি তো আর আমার মধ্যে নাই,মেয়ে কি বলে এই সব,
আমি খাইয়ে দিবো মানে…?

মেয়েটা,আপনি খাইয়ে দিবেন মানি আপনি খাইয়ে দিবেন…!

আমি,কেন আপনাকে খাওয়াতে যাবো..?

মেয়েটা,প্লিজ এমন করেন কেন,একটু খাইয়ে দিলে এমন কি হয়?
আমি তো একা একা খেতে পারি না, না হয় নিজেই খেয়ে নিতাম…!

মেয়েটার মায়া ভরা কথাটা শুনে না করতে পারলাম না,খাবার গুলো হাতে নিয়ে মেয়েটাকে খাইয়ে দিলাম,মেয়েটা তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে,তবে নিজের মধ্যে কেমন যেন নার্ভাস ফিল হচ্ছে,খাইয়ে দিয়ে দোকানদার মামাকে বিল দিয়ে চলে আসলাম,মেয়েটাও আমার সাথে সাথে আসলো..!

আচ্ছা ভালে থাকবেন আমার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে,ট্রেন এখনি চলে আসবে,খোদা হাফেজ….!

মেয়েটা অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে,জি কিছু বলবেন..?

মেয়েটা,না কিছু না?

আচ্ছা তালহে যাচ্ছি,ট্রেন ও চলে এসেছে,এই স্টেশনে ১০ মিনিট ট্রেন থাকবে,ট্রেনে উঠে বসে আছি,কিন্তু কেন জানি মেয়েটার চেহারাটা চোখের মধ্যে ভাসছে,মেয়েটাকে এই কিছু সময়ের মধ্যেই মনে কল্পনা করে ফেলেছি,কিন্তু সব কল্পনা তো আর বাস্তব রুপ নেয় না,ইশ মেয়েটার নামটা জানতে ভুলে গেছি,এত সময় একসাথে ছিলাম নামটাই জিজ্ঞেসা করিনি কেমন গাধা আমি…!?

ট্রেন ছেড়ে দিছে,হুট করে কেউ একজন পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছে,আমিতো ঘাবড়ে গেলাম ,পিছনে ফিরে দেখি সেই মেয়েটা,আমি তো রীতিমতো অবাক?

আরে আপনি,আর এভাবে হাঁপাচ্ছেন কেন…?

মেয়েটা,এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে,প্লিজ আপনি আমাকে বাঁচান না হয় ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে?

আরে কি ধরে নিয়ে যাবে,কি হয়েছে আমায় বলুন তো,এমন সময় চলন্ত ট্রেনে কয়েকটা ছেলে উঠে পড়লো,চলন্ত ট্রেন বললে ভুল হবে,ট্রেন মাত্র রানিং স্টার্ট দিয়েছে,আর ছেলেগুলাকে দেখতে কেমন যেন মাস্তান টাইপের লাগছিলো,

মেয়েটা ছেলেগুলাকে দেখে আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,একদম বুকের সাথে লেপ্টে গেছে আমার,ওর ঠোঁট জোড়া আমার মরুর মত শুকনো বুকটার সাথে একদম লেপ্টে আছে,বুঝে গেলাম মেয়েটা কাদেরকে ভয় পাচ্ছে..!

এই মেয়ে শুনো আমি থাকতে তোমার কোন ভয় নাই,তোমার কিচ্ছু হতে দিবো না আমি,আর আমার একটা রোগ আছে সেটা হচ্ছে আপনি বলার ফর্মালিটিটা বেশিক্ষণ রক্ষা করতে পারি না আমি,তাও যদি কেউ হয় আবার বয়সে ছোট,মেয়েটাকে আমার ছোট মনে হচ্ছে,ছোট বলতে আমার থেকে ছোট আরকি,মানুষজন আমার দিকে শকুনের মত চেয়ে আছে,আর ট্রেনে যেই ছেলে গুলা উঠেছে তারা মেয়েটার খোজ করতে করতে এই দিকেই আসছে,কি করবো ভেবে পাচ্ছি না,এক দুইজন হলে কাভার করে ফেলতাম,কিন্তু পাঁচ থেকে ছয়জন কি ভাবে কি করবো,তাও আবার ট্রেনের মধ্যে,

এই মেয়ে চলো ট্রেন থেকে নেমে যাবো,মেয়েটাকে নিয়ে লাফিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম ছেলেগুলা দেখার আগেই,তারপর একটা সিএনজি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,মেয়েটাকে একা ছাড়া ঠিক হবে না, তাই সাথে করে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম,,আর মেয়েটার চোখ মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো মেয়েটা একটা নিরাপদ এস্থান খুজছিলো নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য…!

ধুর আর বাড়ি যাওয়া হলো না,তাই নিজের ভাড়া করা বাসার দিকে রওনা দিলাম,যেখানে আমি ভাড়া থাকি চাকরির সুবিধার জন্য,

সিএনজিতে বসে আছি,মেয়েটা আমাকে ভয়ে এখনো জড়িয়ে ধরে আছে,আমারো কেন জানি খুব ভালো লাগছে,তাই আর মেয়েটাকে কিছুই বলিনি,মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে আমিও ওকে আবদ্ধ করে রেখেছি…!

বাসার পৌঁছানোর পর,
এই যে নামেন বাসায় এসে পড়েছি,মেয়েটা এখনো আমাকে ছাড়ছে না,আল্লাহ কি যে করি এক মুসিবতে না পড়ে গেলাম,তার মধ্যে এলাকার বিবিসির জানালা কিছু সংবাদ পত্রের মহিলারা তাকিয়ে আছে ঘুটঘুট করে,যাদের কাজ খালি কোন একটা কিছু শুনলে বা দেখলেই হইছে পুরো মহল্লা করে ফেলবে সেই খবর…!

আল্লাহ কাম খালাস,আমি ১০০% শিউর যে বাড়ি ওয়ালা একটু পরেই এসে বলবে ঘর ছেড়ে দিতে?

চলবে…?