রূপসীর আচল পর্ব-০৪

0
2303

#রূপসীর_আচল
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৪

আকাশ,আস্তে আস্তে করে ওর দিকে এগোতে লাগলাম,হিয়ার ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপতেছে,আমার তো ওর কোমল ঠোঁট জোড়া দেখে নেশা লেগে গেছে,তারপর হিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে করে নিলাম…!

প্রায় দশ মিনিট পর ছেড়ে দিলাম,দুজনেই হাঁপাচ্ছি,

হিয়া,কি হলো এটা…??

আকাশ,কই কি হলো বউকে আদর করলাম…?

হিয়া,ছিহ আপনার লজ্জা করে না,একটা মেয়ের সাথে এভাবে নোংরামি করতে,আর কি বললেন বউ..?
বউ মানে কিসের বউ কোথাকার বউ..?
দুজনেই একটা খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছি,আর সেটাকে আপনার কাছে বিয়ে মনে হয়,ছিহ আপনি এতটা নিচ সেটা ভাবতেই আমার ঘেন্না হচ্ছে,তার চেয়ে বরং নিজ ইচ্ছায় ঐ অসৎ লোকটার কাছে বিয়ে বসে সব বিলিয়ে দিতাম,তাহলে আজকের মত একটা দূর দিন দেখতে হতো না..!

আকাশ,প্লিজ হিয়া তুমি আমায় ভুল বুঝো না,আসলে আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না এত সময়,আমি আসলে এমন না, কিন্তু আজ কেন জানি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি…?

হিয়া,হয়েছে আর নিজের দোষ ঢাকতে হবে না,আপনি কেমন নরপশু সেটা আমার দেখা হয়ে গেছে,আর কয়েকটা দিন তারপর তালাক দিয়ে চলে যাবো বাবা-মায়ের কাছে,তারপর যদি ঐ নরপশু টাকে বিয়ে করতে হয় তাহলে সেটাই করবো….!

আকাশ,প্লিজ হিয়া এমনটা করো না,তোমার কাছে কুঁড়োজোড় ক্ষমা চাচ্ছি,জীবনে বিয়ে একবার এই হয় তোমার আম্মু সেটা বলেছে,আর আমিও সেটা বিশ্বাস করি,এরপর আর কোনদিন এমন ধারা অসৎ আচরন করবো না,তোমায় কখনো ছুঁয়েও দেখবো না, প্লিজ তাও এরূপ করিও না…!?

হিয়া,আপনি কি মনে করেছেন,আপনি আমাকে এসব বলে আটকাতে পারবেন,সেটা কখনোই না,আর আমি এই বিয়ে মানি না,এটা একটা দূর্ঘটনা..!

আকাশ,হিয়া আমি ভুল করেছি তার জন্য তো কুঁড়োজোড় ক্ষমা চাচ্ছি,আমি কি ক্ষমার যোগ্য না…?

হিয়া,প্লিজ স্টপ আপনার চেহারাও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার,আপনি আমার সামনে থেকে জান…!

আকাশ,আচ্ছা যাচ্ছি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো…!
তারপর বারান্দায় চলে গেলাম,নিজের কাছেই নিজের ঘেন্না হচ্ছে,কি ভাবে করতে পারলাম আমি এমন ধারা আচরন,আমি না হয় মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি,কিন্তু মেয়েটা তো আমাকে ভালোবাসা দূরের কথা আমাকে এক্সেপ্ট এই করতে পারেনি,এখন কি ভাবে কি করবো আমি,হিয়া যদি সত্যি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়,আমার কপালের ভাগ্য ওর মত একটা বউ পেয়েছি,চাই সেটা হোক ঘটনা চক্রে…!

কি করবো মাথায় যেন কিছুই কাজ করছে না,মেয়েটা আমার উপরে খুব রাগ করেছে,তার চেয়ে বড় কথা ভুল বুঝেছে,এখন ওর রাগ কমাবো কি করে,যে কাজ করেছি এরপর তো ওর সামনে গিয়েও দাঁড়াতে পারবো না?

ফোনটা বের করে সাজ্জাদকে ফোন দিলাম,কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না,জাবেদকে ফোন করলাম, দুই একবার রিং পরতেই রিসিভ করলো,জাবেদ আমার সাথেই জব করে একই অফিসে, আমার এই শহরে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে সাজ্জাদ আর জাবেদ এই আছে..!

জাবেদ,হা কিরে দোস্ত হটাৎ এত রাতে ফোন করলি…?

আকাশ,দোস্ত একটা সমস্যা হয়েছে এখন একটু দেখা করতে পারবি…?

জাবেদ,কি বলিস এত রাতে দেখা করবি মানে কিছু হয়েছে নাকি…?
আর তুই না বাড়ি গিয়েছিলি এক দিনেই এসে গেলি …?

আকাশ,প্লিজ দোস্ত দেখা করাটা খুব জরুরী, প্লিজ এখন একটু বাঁধে আয়,তারপর তোকে সব খুলে বলছি..!

জাবেদ,আচ্ছা পনেরো মিনিটের মধ্যে আসতেছি,বারান্দা থেকে উঠে বের হয়ে বাঁধে যাবো,রুম ক্রস করে মেইন ডোর খুলে বাহিরে যাবো এমন সময় দেখি হিয়া খাটের উপরে শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে কান্না করতেছে,কি করবো আমি এখন মেয়েটাকে যে কাঁদিয়ে দিয়েছি,মানুষ থেকে কখন যে শরীর খেকো হয়ে গেয়েছি নিজেও জানি না,নাহ কাঁদুক কিছু সময় তাহলে যদি কিছুটা স্বাভাবিক হয়,কারন আমার করা অস্বাভাবিক আচরন হয়তো এখনো ভুলতে পারেনি…!

আমি,মেইন ডোর খুলে বের হয়ে এলাম,হিয়া তার আভাস ও পেলো না,বাঁধে গিয়ে বসে আছি,একটু পর জাবেদ আসলো..!

জাবেদ,কিরে এত জরুরী তলব করলি যে..?
কি হয়েছে বল…?

আকাশ,জাবেদকে শুরু থেকে শেষ সমস্তটা খুলে বললাম,
আর এটাও বললাম আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি..!?

জাবেদ,দোস্ত এত কিছু হয়ে গেলো, আর আমি আভাস ও পেলাম না,
আর তুই যা করেছিস সেটা করা তোর উচিত হয় নি,হোকনা সেটা ঘটনা চক্রে বিয়ে, কিন্তু মেয়েটাকে কিছুটা সময় দেওয়া দরকার ছিলো তোর সাথে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য,কিন্তু তা করিস নি..!

আকাশ,দোস্ত এভাবে বলিস না,আসলে নিজেকে সংযত রাখতে পারি নি,কিন্তু এখন কি ভাবে কি করবো কিছু একটা বলে দে..?

জাবেদ,কি ভাবে কি করবি?
হা দাঁড়া পেয়েছি,শোন তারপর একটা ফরমুলা বলে দিলো,পাঠক রা শুনিয়েন না,গল্পের সাথে থাকলে এমনিতেই শুনতে পাবেন…!

ধন্যবাদ বন্ধু,এভাবে আরো কিছু সময় কথা বলে বাসার দিকে রওনা দিলাম,কারন বেশ রাত হয়েছে,জাবেদ ও চলে গেলো…!

অন্যদিকে,হিয়া এখনো খুমায় নাই,মনে মনে ভাবতে থাকে মানুষটাকে মনে হয় একটু বেশিই কথা শুনিয়ে ফেলেছি,ধুর মাথা ঠিক ছিলো না,কিন্তু লুচুটা কোথায় গিয়ে দেখি,ডিভোর্স দিবো সেটা না হয় পরে দেখা যাবে,কিন্তু লোকটা তো আমার উপকার করেছে,সেটা কি করে ভুলি,আর উনি তো ইচ্ছা করে আমায় বিয়ে করেনি,দোষ তো উনার না..!

তারপর উঠে বারান্দায় চলে গেলো,কিরে বারান্দায় তো নাই,তারপর কিচেন রুমে খোজ করে সেখানেও নাই,কিরে লোকটা গেলো কোথায়,সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুজো কিন্তু আকাশের কোন নাম নিশানাও নাই,হটাৎ দরজার দিকে চোখ পড়ে দরজাটা হালকা একটু খোলা, তার মানে কি লোকটা আমায় রেখে বাহিরে চলে গেছে,ইশ আমার উপরে মনে হয় খুব রাগ করেছে,আল্লাহ এখন যদি আর ঘরে না আসে,বা আমায় রেখে যদি কোথায় চলে যায়,হিয়ার মনে ভয় কাজ করতে শুরু করে দিলো..!

সারা বাড়িতে হিয়া একা,হিয়ার খুব ভয় ও করছে,অনেকটা সময় হয়ে গেছে আকাশের আসার কোন নাম নিশানা নাই দেখে হিয়া কান্না করে দেয় ভয়ে,এমন সময় আকাশ দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে…!

হিয়া,আকাশকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে আকাশকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে,আর হু হু করে কান্না করে দেয়..!

আকাশ,আকাশ এই এই কি করছো কি হা ছাড়ো,হিয়াকে নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে,কি হয়েছে এভাবে কান্না করার কি আছে..?

হিয়া,কোথায় গিয়েছিলেন আপনি কান্না করতে করতে..??

আকাশ,কেন তুমি জেনে কি করবা..?

হিয়া,আমার খুব ভয় করছিলো একা একা..?

আকাশ,তো আমি কি করবো,তখন মনে ছিলো না,যখন বলেছিলে চোখের সামনে থেকে চলে যেতে…!

হিয়া,চুপ করে আছে,ঠিকিই তো বলেছে তখন এভাবে না বললে তো আর যেতো না.. ?

আকাশ,যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো…!

হিয়া,আপনি ঘুমাবেন না…?

আকাশ,আমায় নিয়ে তোমার না ভাবলেও মনে হয় চলবে…!

হিয়া,ঘুমানোর জন্য চলে গেলো,আর শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো,হুহ কেমন করে লুচু টা,ভেবেছি সরি বলবো,কিন্তু মুড নিয়ে আছে পুরো একদম, আমিও মুড নিয়ে থাকবো…?

আকাশ,গিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লো, সকাল বেলা তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে নিলো,তারপর রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে নিলো কারন আজ থেকে আবার অফিসে যেতে হবে,এমন সময় হিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে আকাশ রেডি হচ্ছে কোথায় যেন যাবে…!

হিয়া,এই এই কই জান,আমাকে রেখে চলে যাচ্ছেন নাকি..?

আকাশ,অফিসে যাবো,

হিয়া,আমি তাহলে একা একা ঘরে কি করবো,আমিও আপনার সাথে যাবো☺

আকাশ,তুমি পাগল হয়ে গেছো দেখে আমি পাগল হয়ে যাই নাই,তোমাকে নিয়ে অফিসে যাবো কোন পাগলে কামড়েছে আমাকে..??

হিয়া,তাহলে সারাদিন আমি একা একা থাকবো কি করে…?

আকাশ,সেটা তুমি জানো,আমি কি ভাবে বলবো..?

হিয়া,হুহ ভাব নেয় কত দেখ না,লাগবে না আমাকে নেওয়ার আমিও একা একা থাকতে পারবো, কারোর সাহায্যের দরকার নাই হুহ?

আকাশ,তাহলে তো ভালোই আমি গেলাম,আর হা নাস্তি বানিয়ে রেখেছি খেয়ে নিও..!

হিয়ার,এবার মনে হয় ৩০০০ বোল্ডের ঝাটকা লাগলো গায়ে,আল্লাহ নাস্তা খাবো কি করে আমি,উনি আমায় খাইয়ে না দিলে?

আকাশ চলে যাবে হিয়া আবার পিছন থেকে ডাক দিলো,এই এই শুনেন না?

আকাশ,কি হয়েছে আবার..?

হিয়া,আমায় নাস্তা খাইয়ে দিবে কে..?
আপনি তো চলে যাচ্ছেন..?

আকাশ,এখন কেন তুমি না বললে তোমার কারোর কোন সাহায্যের দরকার নেই?
এখন আবার নাস্তা খাইয়ে দিতে হবে…!?

হিয়া,এমন করেন কেন,আমি তো ঐ টা অন্য কারনে বলেছি?

আকাশ,আচ্ছা চুপ চাপ ফ্রেশ হয়ে এসো,আমি নাস্তা রেডি করে তোমায় খাইয়ে দিবো,তাড়াতাড়ি যেতে হবে না হয় অফিস টাইম লেইট হয়ে যাবে,হিয়া ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর ওকে খাইয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম…!

অফিসে এসে কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে গিয়েছে,খাওয়ার জন্য ব্রেক দিয়েছে,কেন্টিনে খেতে যাবো এমন সময় হিয়ার কথা মনে পড়লো,আল্লাহ মেয়েটা কি খেয়েছে কে জানে,

স্যারকে বলে বাসায় চলে গেলাম ছুটি নিয়ে,কারন হিয়াকে খাইয়ে দিতে হবে,আর ঘরে কোন খাবার এই রান্না করা নাই কি খাবে মেয়েটা,বাসায় এসে কলিংবেলটা চাপ দিচ্ছি কিন্তু দরজা খোলার কোন নাম গন্ধ নাই,দরজা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো,
আল্লাহ সারা বাড়ি অন্ধকার কেন,দিনের বেলা তাও জানালার পর্দা সব টেনে রেখেছে হিয়া,রুমের লাইট ও অফ,দিন না রাত বুঝার কোন উপায় নাই,তারপর লাইটের সুইচ টা অন করতেই ফ্লোরের দিকে নজর গেলো,সারা ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে,আর এটা দেখে আমার চোখ তো চড়কগাছ,আল্লাহ হিয়ার কিছু হয়নি তো…?

চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন…..!