রোদের_পর_বৃষ্টি
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০১
শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আসাদ খানের একমাত্র ছেলে জারিফ খান। ওর সবকিছুর প্রতি নেশা থাকলেও ওর বড় নেশা হলো মেয়েদের দেহ। একরাতের জন্য লাখ লাখ টাকা দিয়ে নামি-দামি মেয়েদের হায়ার করে। আবার মাঝে মাঝে কাউকে পছন্দ হলে তাকে যেভাবে হোক পটিয়ে বিছানায় নিয়ে আসে। ঠিক যেমন আজকে নওরিন নামে একটা মেয়েকে নিয়ে যাবে। এ যাবৎ কত মেয়ের দেহ ও ভোগ করেছে তাঁর কোন হিসেব নেই। তবে জোর করে কাউকে ও আজ অবধি ভোগ করে নি। যারা নিজ ইচ্ছায় ওর কাছে এসেছে তাদের একজনকেও ও ছাড়ে নি।
জারিফ ওর নিজের আলাদা বাড়িতে থাকে। ওর মা নেই। বাবা বিজনেস নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে ছেলের গতিবিধির কোন খেয়াল তাঁর নেই। অধিকাংশ সময়ই সে দেশের বাইরে থাকে। জারিফ সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে গা মুছে ব্ল্যাক জিন্স আর ব্লু টিশার্ট পরে নিলো। হাতে রোলেক্সের সবচেয়ে দামি ঘড়ি। কানে এয়ার পড লাগিয়ে বিএমডব্লিউ গাড়ির চাবিটা নিয়ে গায়ে পারফিউম মেরে চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস পরে বেড়িয়ে পড়ে ক্লাব কুলাবার উদ্দেশ্য। সেখানে নওরিন ওর অপেক্ষা করছে। জারিফের এই লেটেস্ট মডেলের বিএমডব্লিউ গাড়িটা সবাই চিনে। পুরো দেশে একমাত্র ওর কাছেই এই মডেলের গাড়িটা আছে। কারণ ও কখনো এমন গাড়ি ইউস করে না যেটা অন্য কারো কাছে আছে বা কেউ কিনতে পারবে। লাউড হোলারে পুরো রোড দাপিয়ে ক্লাব কুলাবায় গিয়ে পৌঁছায় জারিফ। গাড়ি থেকে নামতেই বডিগার্ডরা এসে জারিফকে ভিতরে নিয়ে আসে। ভিতরে ঢুকতেই নওরিন এসে জারিফকে জড়িয়ে ধরে একটা হাগ দেয়। জারিফ হাসি দিয়ে নওরিনকে নিয়ে বারের দিকে যায়। অনেক মেয়েরা জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে। শহরের কোটিপতি বাবার ছেলেমেয়েরা এই ক্লাড কুলাবাতে আসে। এই ক্লাবের মেম্বার হতে হলে প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে হয়। সেখানে জারিফ একা দেয় দু লক্ষ টাকা। যার জন্য জারিফ হলো তাদের গোল্ডেন কাস্টমার।
বারটেন্ডার জারিফিরের জন্য স্পেশাল ড্রিংক বানিয়ে এগিয়ে দেয়। জারিফ এক সিপ খেয়ে ওর পকেট থেকে ভ্যাপটা বের করে একটা টান দিয়ে ধোয়া গুলো নওরিনের দিকে ছোড়ে। এরপর সানগ্লাসটা চোখ থেকে নামিয়ে টি-শার্টে ঝুলিয়ে নওরিনের দিকে তাকায়। নওরিন বলে,
~ তোমাকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে বেবি।
জারিফ নওরিনের গালে হাত দিয়ে বলে,
– তাই নাকি। থ্যাংকস।
~ ওয়েলকাম।
– বুঝলা, তোমাকে যেদিন পার্টিতে দেখি সেদিন থেকেই তোমাকে পাওয়ার জন্য লেগে পড়ি। এতো সহজে তুমি রাজি হবে এটা আমি ভাবি নি।
~ আরে তোমাকে পাওয়ার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল। আমি তো অনেক লাকি।
– বেবি তুমি শুধু আজকের রাতটাই আমাকে পাবে। এরপর কিন্তু আমাদের মাঝে আর কথা হবে না।
~ এতো সস্তা ভাবো আমাকে? এতো মজা দিবো তোমাকে যে শুধু আমাকেই চাইবে। আর কারো কথা ভাববে না।
জারিফ আরো এক সিপ নিয়ে উচ্চ হাসি দিয়ে বলে,
– বাব্বাহ! ওভার কনফিডেন্স। বাই দ্যা ওয়ে এই কথাটা কেন জানি সবাই আমাকে বলে। হাহা। দেখা যাক। তুমি আজ কেমন পারফর্ম করো। হাহা।
~ তাহলে দেরী কেন চলো।
– দাঁড়াও দাঁড়াও। আগে একটু ইঞ্জয় করি। নাহলে তো তোমার ১২ টা বাজবে। হাহা।
এরপর গানের তালে তালে জারিফ নওরিনকে নিয়ে অনেকক্ষণ নাচানাচি আর ড্রিংকস করে উপরে চলে যায় ওর স্পেশাল রুমে। আর দরজার বাইরে ঝুলিয়ে দেয় ডোন্ট ডিস্টার্ব।
পরদিন সকালে,
নওরিন জারিফের বুকের উপর পড়ে আছে। দুজনেই জেগে আছে। নওরিন জারিফের বুকে নখ দিয়ে আস্তে আস্তে দাগ কাঁটতে কাঁটতে বলে,
~ কি মন ভরে গেল? আর নিশ্চয়ই আমাকে চাই না?
– নাহ! সত্যি বলতে মন ভরলো না। আরও চাই তোমাকে।
~ হাহা৷ জানতাম। আমার জীবনের প্রথম পুরুষ তুমি। কীভাবে আমাকে একরাতেই ভুলবে! আরও কত রাত যে এভাবে কেটে যাবে দেখো।
– তাই নাকি। তাহলে তো ভালোই। অনেক মেয়ের জীবন বেঁচে যাবে। হাহা।
~ অন্য মেয়ের কাছে আর যেতে হবে না। আমাকে রেখে দিও। তুমি যেমনটা চাইবে ঠিক তেমনই আমি থাকবো।
– আগুনে হাত দিচ্ছো নওরিন। আমি আগুন৷ জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবা। এখন উঠি। চলো নাস্তা করবো।
~ হুম। (কিছুটা কষ্ট নিয়ে)
নওরিনকে সাধারণ কোন মেয়ে মনে হলেও ও সাধারণ কোন মেয়ে না। ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে। আজ থেকে দশ দিন আগে ক্লাব কুলাবাতেই জারিফের সাথে ওর দেখা হয়। জারিফের চোখ যেমন ওর প্রতি আঁটকে যায় তেমনি নওরিনের চোখও জারিফের উপর আঁটকে যায়। এরপর ওরা ধীরে ধীরে অনেক মেলামেশা করতে থাকে। দুজন ফ্রী হয়। আর গতকাল জারিফের ইচ্ছাটা পূরণ হয়। নওরিন বেশ সুন্দরী আর কুমারী হওয়ায় ও ভেবে ছিলো জারিফকে ওর সৌন্দর্য্য দিয়ে আঁটকে রাখবে। কিন্তু জারিফের কথা শুনে মনে হচ্ছে হয়তো তা পারবে না। ওর একটু খারাপ লাগলেও এটা ওর কাছে নরমাল। নওরিন মনে করে জীবনে ফ্যান্টাসি না থাকলে জীবনটা ইঞ্জয় করবে কি করে। তাও যদি জারিফ খানের মতো কেউ হয়।
এরপর ওরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নওরিনকে বাসায় দিয়ে জারিফ ওর বাসাতে এসে ঘুম দেয়। হঠাৎই জারিফের ঘুমন্ত মুখের ওপর কে যেন এক জগ পানি ঢেলে দেয়। জারিফ প্রচন্ড রেগে বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা বের করে তাক করে তাকিয়ে দেখে সিয়াম।
– শালা তুই!
– ভাইরে তুই আমাকে গুলি করবি শেষমেশ! এই বন্ধুত্ব?
– সত্যিই করতাম। যদি তোর জায়গায় অন্য কেউ হইতো। গায়ে পানি ঢালছোছ ক্যান? (বিরক্ত ভাব নিয়ে)
– বেটা সেই কখন থেকে ডেকেই চলছি তোর কোন খবর নাই। তাই পানি ঢালতে বাধ্য হলাম।
– ওহ! জিনিস খেয়ে খেয়ে ঘুম দিসিলাম। মাম্মাহ এটা দেখ। নতুন জিনিস। একবার খেলে সেই পিনিক। নে নে তুইও নে।
– না রে দোস্ত। সরি। সানজিদা না করছে। ওকে প্রমিজ করছি। আর একবার ড্রাগস নিলে ওকে হারাবো।
– আররে ব্যাটা ও কি জানবো নাকি? নে নে।
– না দোস্ত। ও ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে কল দেয়। আর ওকে ভালবাসি অনেক সো চিটিং করতে চাই না। আগে যা করছি করছি।
জারিফ বেড ছেড়ে তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,
– এরজন্যই এসব প্রেম ভালবাসা করি না। শালা লাইফটা ইঞ্জয় করবি তা না একজনকে নিয়া বসে আছোছ। আরে একজনের চেয়ে দশ জনে অনেক স্বাদ অনেক মজা। তাতো জানিসই। হাহা।
– না দোস্ত। আমি এখন পর্যন্ত সানজিদাকে ছুয়েও দেখিনি। একদম বিয়ের পর সব। আর না। একটা অন্ধকার জীবনে ছিলাম। এখন ভালো আছি।
জারিফ পুরো হতভম্ব। আশ্চর্যের শেষ সীমানায়। ও অবাক হয়ে বলে,
– ভাই তুই কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সিয়াম? নাকি অন্য কেউ? কি বলতাছছ? মানে কী?
– ব্রো দিস ইজ রিয়েল লাভ। যখন কাউকে সত্যি ভালবাসবি তখন বুঝবি। শুধু একজনকেই ভালো লাগবে আর কাউকে না।
– *** ইউর লাভ ব্রো। নওরিন আমার জন্য ওয়েট করতাছে। ব্রো মেয়েটা সেই। তুই চাইলে আসতে পারিস। শেয়ার করতে সমস্যা নাই আমার।
– ভাই বাদ দে না প্লিজ এগুলা। আর কত? একটু ভয় কর। উপরে একজন আছে।
– তুই যাতো। মুড টা নষ্ট করিস না। আর আসছিলি ক্যান সেটা বল।
– সারাদিন তো মেয়ে আর ড্রাগস নিয়া থাকিস। দেখা সাক্ষাৎ তো সব বন্ধ। তাই দেখা করতে আসলাম। আর তুই..
জারিফ হাসি দিয়ে সিয়ামকে একটা হাগ দিয়ে বলে,
– ব্রো ডোন্ট মাইন্ড। আমার এসব ভালো কথা ভালো কাজ ভালো লাগে না। সো আর বলিস না। তুই তোর মতো থাক। আমি আমার মতো। ওকে?
– দেখিস ঝড় আসবে একদিন। প্রকৃতিতে না। তোর জীবনে। তোর সব খারাপ অভ্যাস উড়িয়ে দিবে সেই ঝড়।
জারিফ উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। আর বলে,
– ভাই আর হাসাইস না। এটা বাস্তব জীবন। সিনেমা না। আমি অলয়েজ এভাবেই চলবো। আমার একজনে মন ভরে না। যাই সাওয়ার নিবো। তুই থাকলে থাক। আমি আসি।
– আমিও যাচ্ছি। ভালো থাক।
– যা। পরে কথা হবে।
জারিফের মতো এরকম একটা জীবন একসময় সিয়ামও পার করতো৷ কিন্তু হঠাৎ একদিন সানজিদা এসে ওর অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দেয়। সানজিদা সিয়ামের সব কিছুই জানতো। সিয়ামের অনেক রিকোয়েস্ট এর পরে সানজিদা সিয়ামকে মেনে নেয়। সিয়াম এখন সানজিদাকে ছাড়া কাউকে চিনে না। এবং চিনতেও চায় না। ও চায় জারিফের জীবনে এমন একটা ঝড় আসুক। ও জানে না সে ঝড়টা কবে আসবে।
রাত ১১ টা,
জারিফ গাড়ি চালিয়ে ক্লাব ঝুলাবার দিকে যাচ্ছে। সামনের দুইটা মোড় পরেই ক্লাব কুলাবা। রেস্ট্রিকটেড এলাকা হওয়ায় আশেপাশে তেমন কেউ নেই। জারিফ আনমনে গাড়ি চালাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎই একটা মেয়ে এসে জারিফের গাড়ির সামনে পড়ে। জারিফ মুহূর্তেই ব্রেক কষে। আর একটু হলেই মেয়েটা চাকার নিচে পড়তো। জারিফের মেজাজ অসম্ভব ভাবে খারাপ হয়ে যায়। রাগে কপালের রগ দুটো খাড়া হয়ে যায়। দ্রুত গাড়ি থেকে বের হতেই মেয়েটা জারিফের কাছে একপ্রকার লুকায়। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে জারিফ মেয়েটার ভীতু ফেইসের দিকে তাকায়। মেয়েটা জারিফের দিকে তাকিয়ে ভীতু গলায় কান্না কান্না করতে করতে বলে,
~ প্লিজ আমাকে বাচান। ওরা আমার সাথে খারাপ কাজ করতে চাচ্ছে। প্লিজ হেল্প করুন।
জারিফ মেয়েটার দিক থেকে নজর সরিয়ে রাগী ভাবে তাকিয়ে দেখে ৫ টা ছেলে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। জারিফ ফুল চিল মোডে পিছন থেকে ওর পারসোনাল পিস্তলটা বের করে দুইটা ফাঁকা গুলি করে আকাশের দিকে। ব্যাস। রাস্তা পরিষ্কার। জানোয়ার গুলো সব দৌঁড়ে পালায়। জারিফ আবার মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। এবার জারিফ…
চলবে…?