লাভ গেম পর্ব-১৫

0
676

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

১৫.

রুশা ডাইনিং টেবিলের উপরে দুহাত ভর করে বসে আছে। ওর সামনে খাবার কিন্তু সেদিকে ওর খেয়াল নেই। মুখ ভার করে কিছু একটা ভাবছে। আদ্রিশ অফিসের জন্য তৈরি হয়ে চেয়ার টেনে খেতে বসল। সার্ভেন্ট ওকে নাস্তা দিচ্ছে। ওর চোখ রুশার দিকে। রুশার ফ্যাকাসে মুখের দিকে চেয়ে থেকে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর পাশে গিয়ে বসল। রুশা একটু নড়ে-চড়ে বসল।

“তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো? আজকে তাহলে আমি অফিসে না যাই। তোমার সাথে থাকি?”

রুশা আরেকটু নড়ে-চড়ে ইতস্তত করে বলল,
“না দরকার নেই। আপনি অফিসে যান। আমি ঠিক আছি।”

“আর ইউ শিউর?”

“হ্যা, নাস্তা করে একটু রেস্ট করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি নাস্তা করে অফিসে যান। আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

আদ্রিশ গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। রুশা আদ্রিশের দিকে একবার চেয়ে কাটা চামচ হাতে তুলে নেয়। আদ্রিশও নিজের খাওয়ায় মন দেয়। আদ্রিশ নাস্তা শেষ করে টিস্যু দিয়ে হাত মুখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। রুশা তখনও খাচ্ছে। আদ্রিশ রুশার অবাধ্য চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে গালে কিস করে বলল,
“আমি অফিসে গিয়ে বারবার তোমাকে কল করব। আর বাসায় ফিরে সন্ধ্যা বেলায় লং ড্রাইভে নিয়ে যাব। ওকে?”

রুশা জবাবে মুচকি হাসে। আদ্রিশ অফিসের জন্য চলে গেছে। রুশা বারান্দায় গিয়ে রকিং চেয়ারে গিয়ে বসল। জীবনটা কোথায় এসে পৌছালো। বিয়ের দুইমাস চলছে। আজ থেকে আট মাস আগেও জীবনটা অন্য রকম ছিল। হাসিখুশি স্বাভাবিক একটা জীবন ছিল।

.

রুশা ওর শান ভাইয়াকে কল করল। রিসিভ করছে না। নিশ্চয়ই রাগ করে আছে। শান ছোট থেকেই এমন। যেটা চায় না সেটা যদি কেউ করে তবে রেগে যায়। নিজের পছন্দের জিনিস আদায় করে নেয়। রুশার অস্থির অস্থির লাগছে। রুশা ভাবল রকিকে কল করা যাক। যে ভাবনা সে কাজ। রকিকে কল করতেই রিসিভ করে নিল।
“হ্যালো পিউ, কি খবর?”

রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ভালো।”

রকি রুশার ছন্দছাড়া কন্ঠস্বর শুনে বলল,
“কি হয়েছে পিউ? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

“মন খারাপ। বাবা-মার কথা মনে পড়ছে।”

“ওসব কেন মনে করো?”

“মানে?”

“না, মানে তোমার মন খারাপ হয় তাই বললাম।”

“তাই বলে বাবা-মাকে মনে করব না?”

“আচ্ছা, সরি সরি। বের হবে?”

“না, আদ্রিশ যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।”

“ও চলে আসলে তো আমরা জানতে পারব। সমস্যা কি? ও আসার আগেই চলে যাবে।”

“মুড নেই।”

“ওহ।”

রুশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“রকি, আমার ধারণাই ঠিক। আদ্রিশ মানসিক রোগী যাকে বলে সাইকো।”

“আর ইউ শিউর?”

“ইয়েস। আ’ম শিউর। মিজান চাচা বলেছেন। আমাকে গতকাল উনি সব বলেছেন।”

“ওহ মাই গড! এইজন্যই ও আর ওর কাজগুলো এত ভয়ানক। একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে এসব একদম সম্ভব না। এখন তো তোমার জন্য আমার আরো বেশী ভয় করছে। না জানি তোমার সাথে কখন কি করে দেয়।”

রুশা কনফিডেন্সের সাথে বলল,
“ও কিছু করবে না আমার সাথে। হি ইজ ম্যাডলি লাভ উউথ মি।”

“এটা আরো বড় সমস্যা। যাকে এত বিশ্বাস করে, ভালোবাসে সে এত বড় গেম খেলেছে জানতে পারলে সবচেয়ে ভয়ানক মৃত্যুটা তোমাকেই দেবে।”

“ওসব নিয়ে ভাবছি না।”

“তাহলে কি নিয়ে ভাবছো তুমি?”

“ভাবছি ওর ট্রিটমেন্ট করা গেলে কেমন হতো। ভালো একটা সাইকিয়াট্রিস্ট সম্পর্কে ইনফরমেশন দিতে পারবে?”

“পিউ, তুমি কি ওর ট্রিটমেন্ট করতে গিয়েছে? কি চলছে তোমার মাথায়? তুমি হঠাৎ ওর ট্রিটমেন্ট নিয়ে পড়লে কেন? রুশা ব্যাপারটা আমার ভালো ঠেকছে না। সত্যি করে বলো তো কি চলছে?”

রুশা থতমত খেয়ে গেল। তারপর আমতা আমতা করে বলল,
“কি চলবে? আমি ওর ট্রিটমেন্ট করতে চাইছি যাতে আমি ওর থেকে সেফ থাকি।”
রুশা একটা বোকা টাইপ উত্তর দিল।

রকি হেসে বলল,
“পিউ, এখন আমার মনে হচ্ছে তুমিই পাগল হয়ে গেছো। তুমি কি ওর সাথে সারাজীবন থাকার প্লান করেছো? তুমি ওর সাথে কিছুদিন থাকার জন্য গিয়েছো। তাই ওর সুস্থতা নিয়ে তোমার ভাবার প্রয়োজন নেই।
তুমি যে কাজ করতে গিয়েছো তাতে মন দেও অথবা চলে এসো। তোমার নেক্সট প্লান কি?”

রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আপাতত কোনো প্লান নেই। একচুয়েলি মাথায় আসছে না।”

“মাথায় আসছে না? তোমার মাথায় প্লান আসছে না এটা কি করে হতে পারে? নিশ্চয়ই মাথাটা অন্য কাজে লাগাচ্ছো?”

রুশা রেগে গেল। তেজ দেখিয়ে বলল,
“অন্য কাজে মানে? আরে আমিও মানুষ, রোবট নই। সব সময় মাথা প্লান নিয়ে তৈরি থাকবে তা তো নয়। তোমাকে কল করাই ভুল হয়েছে। রাখছি।”
রুশা কল কেটে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

নিচে যেতেই রুশার মোবাইল আবারও বেজে উঠল। আদ্রিশ কল করেছে। রুশা রিসিভ করতেই আদ্রিশ বলল,
“কি করছো?”

“নিচে যাচ্ছিলাম।”

“তোমার জন্য কিছু গিফট পাঠিয়েছি।”

“কেন? আজ কি আমার জন্মদিন? না-কি বিবাহ বার্ষিকী?”

আদ্রিশ ওর কথা শুনে হেসে ফেলল।
“এমনে দেওয়া নিষেধ?”

“না, তবে,, আসলে এমনিতেই বলেছি।”

“আচ্ছা, গিফটগুলো দেখো। আমি পরে কল করছি।”

রুশা কল কেটে ড্রয়িংরুমে গেল। সেখানে অনেকগুলো বক্স। সবগুলো র‍্যাপিং করা। কতগুলো ফুলের বুকে। রুশার ফুল দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। আরেকটা বক্সে কতগুলো চকলেট। রুশার ভাইয়া প্রতিদিন ওর জন্য চকলেট কিনে আনতো। চকলেট খেতে খেতে ওর দাঁতে পোকা হয়ে গিয়েছে তারপর থেকে ওর ভাই ওকে আর চকলেট খেতে দিতো না। প্রথম প্রথম কান্নাকাটি করত পরে সয়ে গেছে। রুশা মুচকি হেসে প্যাকেট খুলে চকলেটে কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করল।
নাকের মধ্যে একটা সুগন্ধি ভেসে এল। রুশা চমকে গিয়ে পেছনে ঘুরে। একটা লোক মুখ বাঁধা দাঁড়িয়ে আছে। রুশার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। সব ঝাপসা দেখছে। মেইন ডোর দিয়ে বাইরে তাকাল। হুড়মুড়িয়ে কতগুলো লোক ঢুকে গেল। বাইরে আদ্রিশের দুই এক জন্য গার্ডকে পড়ে থাকতে দেখতে দেখতে ও নিজেও পড়ে গেল মেঝেতে।

রুশার যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে একটা চেয়ারে হেলান দেওয়া অবস্থায় পেল। ধরফরিয়ে উঠে বসে। একটা লোক ওর বরাবর বসে আছে। তার পূর্ণ নজর ওর দিকে। রুশা চারদিকে তাকাল। ওকে অন্য কোথাও নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু কোথায় আর এরা কারা বুঝতে পারছে না। রুশা সবাইকে একবার দেখল। এরা কেউ ওর পরিচিত না। এটা শিউর হলো ওদের দলের কেউ না। তবে আদ্রিশ! রুশার বুকটা কেঁপে উঠে। পরক্ষণেই মনে পড়ল আদ্রিশের লোক হলে এখানে কেন আনবে? আর ও নিজের গার্ডদের নিশ্চয়ই মারবে না। তবে এরা কারা?

“আপনারা কারা? আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”

বরাবরের লোকটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল,
“ভয় পেও না। তোমার স্বামী দ্রুত চলে আসবে। তুমি আর তোমার স্বামী আজকের জন্য আমার মেহমান।”
রুশা ভয়ে ভয়ে তাকাল। আদ্রিশের পুরনো কোনো শত্রু না তো?

.

আদ্রিশ রুশাকে বারবার কল করছে। কল বেজে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না। আদ্রিশ বাড়ির নাম্বারে কল করল। কেউ রিসিভ করছে না। ওর কেমন সন্দেহ হচ্ছে। কিছু একটা গোলমেলে লাগছে। আদ্রিশ সেজানকে জানাল। ওরা দ্রুত বাড়িতে চলে এল। আদ্রিশ গাড়ি থেকে নেমে স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর গার্ডরা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আদ্রিশ আর সেজান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। তারপর এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকল। সার্ভেন্টদের সবার হাত পা বাঁধা। সেজান তাড়াতাড়ি মিজান চাচার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিল।
তিনি ছাড়া পেয়ে বলতে লাগল,
“ওরা অনেকগুলো লোক ছিল। হঠাৎ করেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। রুশা মাকে নিয়ে গেছে।”
আদ্রিশ হাত মুঠো করে থরথর করে কাঁপছে। চোখগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। পাশের
দেয়ালের দিকে চোখ গেল। একটা কাগজে রক্ত দিয়ে লেখা জারিফ! রক্ত উপর থেকে নিচের দিকে বেয়ে পড়ার চিহ্ন। প্রায় শুকিয়ে এসেছে। আদ্রিশ গালি দিয়ে বলল,
“জারিফ! তুই যদি রুশার গায়ে ফুলের টোকাও দিস তবে সব চেয়ে ভয়ানক মৃত্যু আমি তোকে দেব। তোর আত্মা কেঁপে উঠবে।”

আদ্রিশ ফোন কলের জন্য অপেক্ষা করছে। সেজান ওদের দলের লোক একত্র করছে। আদ্রিশের কাঙ্ক্ষিত কল এসে পড়েছে। দ্রুত কল রিসিভ করল। জারিফ পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,
“অনেকদিন পরে দেশে ফিরলাম। তোর সাথে দেখা না করলে কি হয়? তোর বউকে নিয়ে চলে এসেছি। তুইও এসে পড়। একা আসবি। শান্তি মতো পুরনো হিসেব নিকেশ করব। চালাকি করলে তোর বউয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ পাবি।”

আদ্রিশ চিৎকার করে গালি দিয়ে বলল,
“ওর কাছ থেকে দূরে থাকবি। ওর কিছু হলে আমি তোর সব কিছু ধ্বংস করে দেব। কোথায় আসতে হবে বল! আমি আসছি।”

“আমার লোক রেডি আছে। তোকে নিয়ে আসবে। তোর বাড়ির সামনে গাড়ি অপেক্ষা করছে চলে আয়।”

আদ্রিশ সেজানকে সব প্লান বুঝিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি যাচ্ছি।”

“ভাই, সাবধানে।”

রুশা ভীত ভীত দৃষ্টিতে সবাইকে দেখছে। আর সবাই ওকে লোভাতুর খাদ্য হিসেবে দেখছে। ইচ্ছে করছে নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা বোকামি হবে। এতগুলো মানুষের সাথে পারবে না। চার-পাঁচ জন হলে এক মিনিট ভাবতো না। রুশা জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,
“আদ্রিশের সাথে আপনার কি শত্রুতা? আর আমাকে কেন তুলে নিয়ে এসেছেন?”

“তোমার গন্ধ শুকতে শুকতেই তোমার স্বামী এখানে আসবে তাই তোমাকে তুলে এনেছি। তোমাকে খুব ভালোবাসে কি-না। এই ভালোবাসাই আজ ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে। ওকে ধরা আমার জন্য অসম্ভব ছিল কিন্তু ভালোবাসাটা ওকে ধরার জন্য সহজ করে দিল।”
লোকটা হাসতে লাগল। রুশা ভাবতে লাগল এই লোকটা জারিফ নয়ত?

রুশার বিরক্ত আর ভয় দুটোই ললাগছে। আদ্রিশ কি আসবে? যদি আসেও তবে এখানে কি হবে সেটা ভাবতে লাগল। আদ্রিশকে ওরা মেরে দিবে আর ওকেও ছাড়বে না। রুশার হাতে বাঁধন নেই। নিজেকে সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে একজনকে ঠেলে ঠেলে ভেতরে আনা হচ্ছে। রুশা মুখ না দেখেও বুঝে গেল এটা আদ্রিশ। আদ্রিশের মুখের উপর থেকে কাপড় সরাতেই রুশা বসা থেকে উঠে আদ্রিশের দিকে দু’পা এগুতেই একজন ওর হাত চেপে ধরল। আদ্রিশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হাতের দিকে চেয়ে আছে।
“ওর হাত ছাড়!”

লোকটা ছাড়ছে না। আদ্রিশ জারিফের দিকে একবার চেয়ে ঘাড় কাত করে ওই লোকটাকে একটা লাথি মারল। লোকটা ছিটকে দূরে পড়ে গেল আর রুশাও ছিটকে দূরে সরে গেল। জারিফের লোকেরা ওর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে ঘিরে ধরল। আদ্রিশ দাঁড়িয়ে গেল। রুশা এখন সত্যিই ভয় পাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে বলল,”আদ্রিশ!”

জারিফ দাঁত খিচিয়ে বলল,
“শালা! এখানে একদম রংবাজি করবি না। আমার ডেরায় আছিস ভুলে যাবি না। আজ তুই কিংবা তোর বউ কেউ বেঁচে ফিরবি না। দুটোই আজ শেষ হয়ে যাবি। তুই হবি জন্তুজানোয়ার খাদ্য আর তোর বউ হবে আমার এই ছেলেগুলোর খাদ্য।”

এই কথাটা শুনে আদ্রিশ স্থির থাকতে পারল না। জারিফের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু জারিফের চুলও বাঁকা করতে পারল না। সবাই ওকে ঝাপটে ধরল। আদ্রিশ রুশার দিকে চেয়ে বলল,
“তুমি ভয় পেও না। আমি আছি।”

রুশা কি করবে বুঝতে পারছে না। ও আদ্রিশের ভরসায় আছে। কিন্তু আদ্রিশ নিজেই সেফ না। আদ্রিশ রুশার জন্য নিজেকে ঠান্ডা করল। এতগুলো মানুষের সাথে পারা সম্ভব না। তবুও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতো না। লড়াই করত, শেষ পর্যন্ত লড়ে যেত কিন্তু এখন রুশার কথা ভেবে চুপ আছে। ওরা যদি ওকে মেরেও ফেলে তবুও পালটা জবাব দেবে না। কিছুতেই রুশাকে ওদের হাতে ছেড়ে দেবে না। জীবন দিয়ে দিবে তবুও স্ত্রীর মানহানি হতে দেবে না। তাই সেজান না আসা পর্যন্ত চুপ থাকবে।
“দেখ, জারিফ তোর শত্রুতা আমার সাথে। আমাকে যা খুশি কর। রুশাকে যেতে দে। ওকে ছেড়ে দে৷ প্রয়োজনে আমার জীবন নিয়ে নে।”

জারিফ শব্দ করে হাসছে। হাসি থামিয়ে বলল,
“ভালোবাসা তোর মতো নিষ্ঠুর, পাষান হৃদয়কেও হার মানিয়ে দিল? শুনেছি অন্ধ ভালোবাসা জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে। তোরও দেখছি একই অবস্থা। অন্ধ ভালোবাসা তোর জন্য মৃত্যু ডেকে আনল।”

আদ্রিশ মৃদু হেসে বলল,
“আক্ষেপ নেই।”

রুশা কাঁদছে। এই লোকটা ওকে এত ভালোবাসে কেন? যে কারো কাছে মাথা নত করেনি সে ওর মতো একটা মেয়ের জন্য হার মেনে মৃত্যুকে মেনে নিচ্ছে। আবার বলছে আক্ষেপ নেই?

জারিফের লোকেরা আদ্রিশকে মারতে লাগল। রুশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশ মার খাচ্ছে আর বলছে ওকে ছেড়ে দে। রুশাকে বলছে ভয় পেও না। আমি মরে গেলেও তোমার চুল বাঁকা করতে পারবে না। সেজান তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।
জারিফ চিৎকার করে বলছে,
“তোকে আমি এত সহজে মারব না। তিল তিল করে কষ্ট দিয়ে মারব।”
তারপর ওর লোককে ইশারা করল। ওরা পাঁচজন পাঁচটা স্টিক হাতে নিল। আদ্রিশকে অনবরত আঘাত করছে। রুশা স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ওর নাক, মুখ, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। আদ্রিশ যখন মেঝেতে পড়ে যায় রুশার হুশ। আদ্রিশ বলে চিৎকার করে ওর কাছে ছুটে যায়৷ কিন্তু ওরা ওকে যেতে দেয়নি। আঁটকে দেয় রুশাকে। রুশা ছটফট করছে আর কাঁদতে থাকে আদ্রিশের কাছে যাওয়ার জন্য। আদ্রিশ পিটপিট করে রুশার দিকে তাকায়। রুশা কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছু করা দরকার নয়তো ওরা আদ্রিশকে মেরে ফেলবে। আদ্রিশ উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ওরা আদ্রিশের পায়ে অনেক মেরেছে। তাই পা সোজা করতে পারছে না।
আদ্রিশ একটু উঠার চেষ্টা করলে ওর পিঠে মারতে লাগল। জারিফ রিভলবার বের করে বুলেট চেক করল। রুশার চোখ সেদিকে গেল। জারিফ আদ্রিশকে গুলি করার প্লান করছে। রুশার পাশের লোকগুলো বেখেয়ালি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দৃষ্টি আদ্রিশের দিকে। রুশা ছুটে গিয়ে রিভলবার কেড়ে নিয়ে জারিফের মাথায় ঠেকায়। কেউ এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। রুশা এমন কিছু করবে ভাবতেও পারেনি।
জারিফ মৃদু হেসে বলল,
“মামনি এটা খেলনা নয়। তুমি চালাতে পারবে না।”

রুশা দাঁত খিচিয়ে বলল,
“তাই না-কি?”
রুশা পায়ের পেছনে মেরে ওকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“কেউ আগাবে না। তবে গুলি করে দেব। আদ্রিশের গায়ে আর একটা টোকা পড়লে তোমাদের বস উপরে চলে যাবে। বিশ্বাস হচ্ছে না?”

রুশা দূরের একজনের পায়ে গুলি করে দিল। লোকটা চিৎকার করে বসে পড়ল। পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারপর বলল,
“এটা আমি খুব ভালো করে চালাতে জানি কাকু। আদ্রিশের অর্ধাঙ্গিনী আমি। দূর্বল ভাববে না। ও আমাকে সব শিখিয়েছে।”

আদ্রিশ কথা বলতে পারছে না। কিন্তু চোখে যা দেখছে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। খুব চেষ্টা করে খোলে রেখেছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। রুশাকে নয় অন্য কোনো রুদ্রাণীকে দেখছে।

চলবে….