#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩০.
দুদিন যাবৎ হাসপাতাল থেকে ফিরেছে রুশা। কিন্তু এখনো ঠিকমতো সুস্থ হয়নি। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে। শুধু ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় বিছানা থেকে নামে। আদ্রিশ ওর তত্ত্বাবধানের জন্য একজন নার্স রেখে দিয়েছে। ও যতটুকু না অসুস্থ তার চেয়ে আদ্রিশ ওকে বেশি অসুস্থ বানিয়ে দিয়েছে।
বেবি সারাক্ষণ আদ্রিশ, সেজান, কথা আর মিজান চাচার কাছে থাকে। ওরাই ওর দেখভাল করে। সারাক্ষণ ওদের কোলে কোলে থাকে। খাওয়ার সময় শুধু রুশার কাছে দেয়। রুশা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বেবির কিছুই ওকে করতে দিবে না আদ্রিশ। ও কিছুদিনের জন্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আদ্রিশ ছেলেকে যত দেখে ততই অদ্ভুত অনুভূতি হয়। একটা মায়া আচ্ছন্ন করে রাখে। সন্তান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। আদ্রিশ জানতো ও ওর বাচ্চাদের খুব ভালো বাসবে কিন্তু এতটা ভালো বাসবে জানা ছিল না। চোখের আড়াল হতে দিতে ইচ্ছে করে না। আদ্রিশ কিছুদিন আগেও ভাবতো রুশার চেয়ে বেশি কাউকে ভালো বাসতে পারবে না কিন্তু এখন মনে হয় এই ছেলের চেয়ে বড় কেউ নেই, কিছু নেই, ওর জন্য সব পারবে। ছেলে যখন কাঁদে মনে হয় ওর কলিজাটা কেউ কেটে ফেলছে। দিনে কম করে একশো চুমু দেয় ওর গালে, চোখে, কপালে, নাকে। সেজান হিসেব রাখে আর হাসাহাসি করে। আদ্রিশ তখন ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
রুশা ছেলেকে খাইয়ে কপালে চুমু দিলেই কথা বলল,
“আপু, ওর নাম চুমু কুমার রেখে দেও। যে হারে তুমি আর ভাইয়া ওকে চুমু দিচ্ছো তাতে ওর আসল নাম হারিয়ে যাবে। নাম হবে চুমু কুমার। যখন কলেজে যাবে মেয়েরা পেছনে লাইন মারবে আর ডাকবে ওগো আমার চুমু কুমার!”
রুশা ওর কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আদ্রিশ ওর হাসির মাঝে ঘরে ঢুকে। ছেলে হাত পা নাড়াচ্ছে। বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে। গভীর ভাবে মাথার উপরের ছাদটা দেখছে। আদ্রিশ ওর কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“আমার বাবাটা কী করে?”
কথা রুশার দিকে তাকাল। রুশা আবারও হাসতে লাগল। কথা সামনের ডাবল সোফায় বসে ছিল। বসা থেকে উঠে বলল,
“লে, প্রতি লাইনে একটা করে চুমু। আমি তোমাদের চুমু দেখতে দেখতে ক্লান্ত। না জানি বাচ্চা ছেলেটার কী অবস্থা। আমি শিওর, ও না পারছে বলতে আর না পারছে সইতে।”
কথা বিরবির করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আদ্রিশ কথার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। ওর মাথায় কিছুই ঢুকল না। রুশার হাসি থামছে না।
আদ্রিশ রুশাকে হাসতে দেখে দিল এক ধমক।
“এত হাসছো কেন? অপারেশনের জায়গায় টান পড়ছে না? হাসি থামাও। নয়তো এক মাসের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসব।”
রুশা হাসি থামিয়ে দিল। ওর অপারেশনের জায়গায় আসলেই একটু ব্যথা করছে। রুশা ঠিক করে শুয়ে পড়ল। আদ্রিশ ওর কুঁচকানো
মুখ দেখে কিছু বুঝল। তারপর বিছানার অপর পাশে গিয়ে বসল। রুশাকে কিছু না বলেই ওর জামায় হাত দিল। রুশা চোখ বড়বড় করে বলল,
“কী!”
আদ্রিশ ওর কথার উত্তর না দিয়ে জামা তুলে পেট দেখল। এখনো ঘা শুকায়নি। আদ্রিশ ওর ঘায়ের স্থান দেখে চমকে উঠে। কত বিভৎস ভাবে মানুষ মেরেছে। কখনও ভয় লাগেনি। রুশা জামা নামিয়ে ফেলল।
“এখনো শুকাচ্ছে না কেন? আর কতদিন লাগবে?”
রুশা মিনমিন করে বলল,
“একটু সময় লাগবে। আমার জন্য তোমাকে এত ভাবতে হবে না।”
আদ্রিশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি আমার ছেলের জন্য ভাবছি। ওকে তো এখনো কোলে নিয়ে হাঁটলে না।”
“তাতে কী? ওকে কোলে নেওয়ার মানুষের অভাব আছে? তাছাড়া আমাকে বিছানা থেকে নামতে দিলেই হয়। আমি ঢের ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারব।”
“পায়ের পাতা মেঝেতে রাখতে পারো না। হাঁটবে কী করে? ভালো করে খেয়ে দেয়ে শরীরের দূর্বলতা কমাও। তারপর নাহয় বড় বড় কথা বলবে।”
আদ্রিশ ছেলের দিকে একবার চেয়ে ঘর থেকে চলে গেল। রুশা বিরবির করে বলছে,
“মুখে স্বীকার করবে না। মুখে স্বীকার করলে ইগোর কম পড়ে যাবে না।”
.
কেটে গেছে দুই মাস। রুশা এখন পুরোপুরি সুস্থ। ওর ঘরে শিফট হয়ে গেছে। ছেলের নাম রেখেছে রওনক আফসান আর্দ্র। আদ্রিশ মনে করে ওদের ছেলে ওদের ঘরে রওনক নিয়ে এসেছে। রুশা আর ওকে একসাথে করেছে। তাই ওর নাম রওনক আফসান রেখেছে৷ আর রুশা আদ্রিশের নাম মিলিয়ে রেখেছে আর্দ্র। আর্দ্র ঘুমাচ্ছে। রুশা আর্দ্রের ছোট ছোট জামাগুলো ভাজ করছে। আদ্রিশ অফিসের কাজ করছে। ছেলের অজুহাতে এই ঘরেই থাকে। দীর্ঘদিন অফিসে যাওয়া হয় না। সেজান সব দেখাশোনা করে। আদ্রিশ ঘরে বসে অফিসের তদারকি যতটুকু সম্ভব করছে।
কথা এখন এখানেই থাকে। রুশা ওকে রেখে দিয়েছে। আশ্রমে অন্য শিক্ষিকার ব্যবস্থা করেছে। কথা আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। ইউনিভার্সিটিতে যায়। ওদের ঘরের দরজা খোলাই ছিল। কথা দরজায় টোকা দেয়। কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। পুরোটা দিন আর্দ্রকে কোলে নেয়নি। তাই ফ্রেশ হয়েই চলে এসেছে ওকে দেখতে।
রুশা মুচকি হেসে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“খালা মনির আর্দ্র ঘুমাচ্ছে। খালা মনি ভার্সিটি থেকে এসেছে এখন একটু রেস্ট নিক।”
কথা দরজায় হাত রেখে বলল,
“ও উঠলে আমাকে ডাকবে কিন্তু।”
“আচ্ছা, ডাকব। মাত্র ঘুমিয়েছে। এখুনি উঠবে না নিশ্চিত থাকো।”
কথা মন খারাপ করে ঘুরে চলে যেতে নেয় তখনই আর্দ্র উঠে যায়৷ চোখ মেলে চারপাশ দেখছে। চারপাশে দেখে যখন পরিচিত কোনো মুখ দেখতে পেল না তখন কান্না শুরু করে দিল। ওর এই অভ্যাস। ঘুম ভাঙার পর চারদিক দেখবে তারপর কাঁদতে শুরু করবে।
ওর কান্নার শব্দ শুনে কথা হেসে ফেলল। তারপর ঘুরেই দৌঁড়ে রুশা কোলে নেওয়ার আগেই কোলে নিয়ে নিল। কোলে নিয়ে কান্না থামাচ্ছে।
রুশা মুচকি হেসে বলল,
“তোমার কোলে যাওয়ার জন্যই উঠেছে, খালা মনি যে এসেছে সেটা স্বপ্নে পেয়েছে।”
রুশা বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগল। কথা সেসব পাত্তা না দিয়ে আর্দ্রকে আদর করছে। নানান কথা বলছে। আদ্রিশ এক পলক দেখে আবার কাজে মনোযোগ দিল। কিছুক্ষণ পরে সেজান এসে হাজির। ওকে দরজার সামনে দেখে রুশা ভেতরে আসতে বলল। কথা এক পলক সেজানকে দেখল। তারপর আবার আর্দ্রের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
সেজান আড়চোখে একবার কথার দিকে চেয়ে রুশাকে বলল,
“ভাবি, আর্দ্রকে আমার কোলে দিতে বলো। গতকাল থেকে ওকে কোলে নেই নি। দেখিও নি।”
কথা জবাব দিল,
“লাইনে থাকুন। আমি আজকে সারাদিন ওকে কোলে নেইনি। মাত্র নিলাম। আমার মন ভরে গেলে আপনি আসবেন।”
“তুমি তো নিয়েছো। আমি গতকাল থেকে ওকে নেইনি। এমনকি দেখিনি।”
“আমি এতকিছু জানি না। আমি দেব না ওকে।”
“দেব না মানে কী? ভাবি কিছু বলেন। আর্দ্র কী ওর বাচ্চা? আমার ভাইয়ের ছেলে আমি নেব। ওকে বিয়ে করে নিজের বাচ্চা নিয়ে বসে থাকতে বলুন।”
কথা রেগেমেগে আর্দ্রকে দিয়ে দিল সেজানের কাছে। তারপর গাল ফুলিয়ে রুশাকে বলল,
“আপু, তুমি না আমার জন্য ছেলে দেখেছিলে সে কি বিয়ে করে ফেলেছে? যদি করে ফেলে তাহলে অন্য ছেলে দেখো। আমি বিয়ে করব। আমার বাচ্চা চাই। তারপর নিজের বাচ্চা সারাদিন কোলে নিয়ে থাকব। কেউ এত কথা শোনাতে পারবে না। কোল থেকেও নিতে পারবে না।”
রুশা বিছানায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বলল,
“যদি সেজান ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেই? না সেজান ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে দু’জন বাচ্চা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিবে। তার থেকে অন্য ছেলে দেখি। কি বলেন সেজান ভাই?”
সেজান আদ্রিশের সামনে এসব বলায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ল। গলা খাকাড়ি দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“আমি কী জানি।”
আদ্রিশের কেমন উদ্ভট লাগছে সবকিছু। এছাড়া মনে হচ্ছে কিছু একটা চলছে যা ও জানে না। সেজানের ভরকে যাওয়া মুখ, রুশার মুখ টিপে হাসা, কথার লজ্জা পাওয়া। কথা লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে চলে গেল। সেজানও আর্দ্রকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে চলে গেল।
আদ্রিশ উৎসুকভাবে রুশার দিকে চেয়ে আছে। রুশা ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
“কী?”
“কী চলছে?”
“আমি কী জানি।”
রুশাও ঘর থেকে চলে গেল। আদ্রিশের মাথায় কিছু একটা ঘুরছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না।
.
গভীর রাত। রুশা আর্দ্রের উপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছে। কাজ শেষ করে আদ্রিশ ঘুমাতে এসেছে। চোখ পড়ল রুশার দিকে। অদ্ভুত মায়াবী লাগছে। ওকে ছুয়ে দেওয়ার লোভ জাগল মনে। আদ্রিশ নিজের অজান্তেই রুশার কাছে চলে গেল। রুশার ঘুমন্ত মুখ দেখে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। ওর গালে কিস করল। রুশা সাথে সাথে চোখ মেলল। আদ্রিশ হকচকিয়ে গেল। ও জানে রুশার ঘুম পাতলা তবুও এমন একটা ভুল করে ফেলল। সরে যেতে গেলেই রুশা ওর কলার চেপে ধরল। এতে দু’জন আরো কাছাকাছি চলে এল। দু’জনের উষ্ণ নিশ্বাস একে অপরের উপর পড়ছে।
রুশা দাঁত খিচিয়ে বলল,
“কী চলছে এসব? তুমি এখানে কেন?”
আদ্রিশ নিজের কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করল।
“ছেলে জেগে যাবে।”
“জেগে যাক। তুমি এখানে কেন? আমার গালে কিস করলে কেন?”
আদ্রিশ থমথমে মুখে বলল,
“করেছি তো কী হয়েছে? নিজের বউকেই করেছি। অন্য কেউ নয়।”
“কীসের বউ? এখানে আনার পর তো বলেছিলে সম্পর্ক সব শেষ। তাহলে এখন কীসের বউ আমি?”
“জানি না আমি। তোমাকে ঘৃণা করার কথা হলেও ঘৃণা করতে পারি না। কি করব আমি?”
রুশা আদ্রিশের কলার ছেড়ে দিল। ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে চেয়ে আছে। আদ্রিশ আচমকা রুশাকে জড়িয়ে ধরল। রুশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল না। ফিসফিস করে বলল,
“তুমি সব সময় আমাকে ভালো বেসে এসেছো। ইনফ্যাক্ট এখনো বাসো। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য তো? তুমি আমার অনেক ক্ষতি করেছো। ওসব নাহয় বাদ দিলাম তুমি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছো। এমনকি নিজের বাচ্চাকেও….।”
রুশার গলা ধরে আসছে৷ আদ্রিশ ওকে ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এল।
কথা ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে। সেজান ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। কথা গুনগুন করছে। ওর খোলা চুল এলোমেলো হয়ে উড়ছে। কথা কারো অস্তিত্ব অনুভব করে ভয় পেয়ে ঘুরে দাঁড়াল। সেজানকে দেখে ভয়টা কমে গেলেও বুকটা ধুকপুক করছে। ভেবেছিল কে না কে।
সেজান ওর ভয়ার্ত মুখটা না দেখেই বলল,
” কি করছো এখানে এত রাতে?”
“কিছু না। এমনি এসেছিলাম। গুড নাইট।”
কথা ওকে পাস কাটিয়ে চলে গেল। সেজান ওকে পেছনে থেকে দাঁড়াতে বলছে। কথা দাঁড়াচ্ছে না। ছাদ থেকে নেমে বিরক্তি নিয়ে কথা বলল,
“কী চাই আপনার? বিরক্ত লাগছে।”
“কথা, তুমি এভাবে আমাকে এভয়েড করো কেন? আমার কথা তো শোনো। আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম।”
“আমি আপনার উপর কেন রাগ করব? এসব আপনার ভুল ধারণা। আমার ঘুম পেয়েছে। পেছনে পেছনে আসবেন না। রাতের বেলায় পেছনে আসতে পারেন অথচ দিনের বেলায় চিনেনই না। বহুরূপী লোক।”
কথা রাগ দেখিয়ে চলে গেল। সেজান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হতাশ হয়ে নিজের ঘরে যাবে তখনই আদ্রিশকে দেখতে পেল। আদ্রিশকে দেখে আমতা আমতা করছে। সেজান বুঝতে পারছে না আদ্রিশ কতটুকু শুনেছে আর কি বুঝেছে।
“ভাই, আপনি?”
আদ্রিশ উত্তরে বলল,
“তাহলে এই ব্যাপার?”
সেজান মাথা নিচু করে নিল।
চলবে…..
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩১.
আদ্রিশ মিনি টেবিলের উপরে কাচের ছোট গ্লাসে বরফের কুচি রাখছে। সেজান ওর বরাবর একটা চেয়ারে মাথা নুইয়ে বসে আছে। অস্বস্তিতে মাথা তুলতে পারছে না। এটা প্রথম বার নয় ও আদ্রিশের সাথে ড্রিংক করতে বসেছে৷ আদ্রিশ গ্লাসে মদ ঢেলে সেজানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“কতদিন ধরে এসব চলছে?”
সেজান অস্বস্তিতে আরো নুইয়ে পড়ছে। কিছুই বলতে পারছে না। আমতা আমতা করে গলা ঝেরে বলল,
“ভাই, আপনাকে মিথ্যা বলব না। আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছু নয়। আমাদের মধ্যে একটা ভালোলাগা ছিল সেটা দুজনেই অনুভব করতাম কিন্তু কেউ কাউকে বলিনি। আমাদের এই অনুভূতি কোন পরিনতি পায়নি। কিন্তু আমরা দুজনেই জানতাম আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। জাস্ট এটুকুই।”
আদ্রিশ কপাল কুঁচকে কিছু ভাবল তারপর গ্লাসে চুমুক দিল। তখনও ভাবনা থেকে বের হয়নি।
“যদি তাই হবে তাহলে মান-অভিমান কীসের? অনুভূতির পরিনতি পায়নি কেন? সমস্যা কী ছিল?”
সেজান শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলল,
“ভাবি একবার আপনাকে বলতে গিয়েছিল কিন্তু আপনি নেগেটিভ রিয়েকশন দিয়েছিলেন। তাই আর আগাইনি।”
আদ্রিশ থমকে গেল। মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা। আর্দ্রের জন্মের অনেক আগে রুশা সেজানের বিয়ের কথা বলতে এসেছিল। আর তখন সম্পূর্ণ কথা না শুনেই আদ্রিশ রিয়েক্ট করেছিল। সেদিনের জন্য আদ্রিশ অনুতপ্ত হলো। এতগুলো দিন সেজানকে কষ্ট দিয়েছে আর সেজান চুপচাপ সব মেনে নিয়েছে। নিজে থেকেও কিছু বলেনি। নিজে থেকে কিছু না বলার কারণে আদ্রিশ কিছুটা রেগে গেল।
“ওহ শিট! সেজান তোমার কি মনে হয় না একবার এসে আমাকে বলা উচিত ছিল? আর রুশাও তো আমাকে তেমন কিছু বলেনি। ওর উচিত ছিল তোমার আর কথার সম্পর্ক আই মিন অনুভূতির কথা আমাকে জানানো।”
সেজান মাথা নিচু করে বলল,
“ভাবির দোষ নেই। আমি ভাবির কাছে সব অস্বীকার করেছিলাম তাই ভাবি আর এ নিয়ে ঘাটতে যায়নি। আর কথাও এ কারণে আমার উপর অভিমান করে আছে।”
আদ্রিশ শক্ত কন্ঠে বলল,
“তোমার একবার জানানো উচিত ছিল। তুমি না বললে আমি কী করে বুঝব? আমি তখন ডিপ্রেসড ছিলাম। রুশার করা প্রতারণার জন্য আমি ভেঙে পড়েছিলাম তাই চাইনি তুমি এমন একটা সম্পর্কে জড়াও আর কষ্ট পাও। তাই আমি ওমন রিয়েক্ট করেছিলাম।”
“ভাই, বাদ দিন। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ঠিক আছি।”
“এখন আর চাইলেও বাদ দিতে পারব না। আমি আগামীকাল রুশার সাথে কথা বলব। কথাকে চাইব তোমার জন্য।”
সেজান আদ্রিশের কথার পেছনে কথা না বলে গ্লাসে চুমুক দিল। আদ্রিশ সেজানকে চুপ দেখে বলল,
“সব ঠিকঠাক হলে খুব শীঘ্রই তোমাদের এনগেজমেন্ট করে ফেলব। রুশার ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করে তোমাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেব। আমি চাইনা কোন প্রকার টেনশন নিয়ে তোমাদের বিয়েটা হোক। তাই ওই চ্যাপ্টার ক্লোজ করা প্রয়োজন।”
সেজান উৎসুকভাবে প্রশ্ন করল,
“কিছু ভেবেছেন?”
“হুম ভাবা শেষ। এখন শুধু এক্সিকিউট করা বাকি। তবে অতি সাবধানে আগাতে হবে। কাউকে সন্দেহ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। সাজ্জাদ চৌধুরীর দলের প্রতিটি সদস্যকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হবে।”
“হ্যা, হতে পারে পদ পাওয়ার জন্য কেউ উনাকে সরিয়ে দিয়েছে যেমনটা উনার বাবার সাথে হয়েছিল।”
আদ্রিশ ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল,
“রুশার পস্তানোর সময় চলে এসেছে। ওর বোঝার সময় হয়ে গেছে ও এই গেমের খেলোয়াড় নয় বরং সামান্য একটা গুটি। তখন আপসোস করা ছাড়া ওর কাছে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।”
সেজান বিষন্ন স্বরে বলল,
“ভাবি খুব ভেঙে পড়বে। উনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। আপনার সাথে করা অন্যায় উনাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। এতদিন আপনার ক্ষতি করা, আপনাকে ভুল বোঝা, আপনাকে হার্ট করার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। ভাবিকে কী করে সামলাবেন?”
আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“এটুকু ওর প্রাপ্য। ভুল যখন করেছে শাস্তি পেতেই হবে। ওর উচিত ছিল কান চিলে নিয়ে গেছে শুনে চিলের পেছনে ছোটার আগে অন্তত একবার ভাবা, কানটা দেখা। এভাবে অন্ধ বিশ্বাস এবং অনুকরণ করা উচিত হয়নি। সব যদি ঠিক থাকে রুশা অনেক বড় শিক্ষা পাবে যা ওর ভবিষ্যতের জন্য সুফল বয়ে আনবে। পরবর্তীতে সাবধান হবে। অন্যকে নয় নিজের উপর ভরসা করবে।”
“এই জন্য প্লান সাকসেস হওয়া জরুরি। আমাদের অতি সাবধানে কদম রাখতে হবে। সব কিছু ভাবির সামনে আনতে হবে। তবেই তার এই ভুল ধারণা ভাঙবে।”
“হুম, গুটি আমাদের দিকেও ঘুরে যেতে পারে তাই যা করার সাবধানে করতে হবে। সেজান,কাক পক্ষীও যেন এ খবর না পায়।”
“জি ভাই নিশ্চিত থাকুন। কেউ জানবে না।”
.
~পরের দিন নাস্তার টেবিল~
সেজান নাস্তা করছে আর আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। ওর মন উসখুস করছে। রুশা তাড়াহুড়ো করে নাস্তা করছে। ছেলে কখন কান্না শুরু করে দেয় বলা তো যায় না।
আদ্রিশ সেজানের অবস্থা বুঝে বলল,
“রুশা, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
রুশা আদ্রিশের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,
“আমার সাথে আবার কী কথা ছিল?”
আদ্রিশ ভনিতা না করে বলল,
“আসলে আমি সেজানের জন্য কথাকে চাইছি। আমি ওদের বিয়ে দিতে চাইছি।”
রুশা আদ্রিশের কথা শুনে রীতিমতো শকড। রুশা বিস্ময় নিয়ে সেজানের দিকে তাকাল তারপর আবার আদ্রিশের দিকে। রুশা মনে মনে খুশি হলেও এতগুলো দিনের কথা মনে করে রাগি ফেস করে বলল,
“মানে? কথাকে কেন? সেজান ভাইয়ের জন্য অন্য মেয়ে দেখুন।”
“ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।”
“তো? এতগুলো দিন যে সেজান ভাই কথাকে এত কষ্ট দিল তার কী হবে? সেজান ভাইয়ের সাথে কথাকে বিয়ে দেব না। আমি প্রস্তাব রিজেক্ট করছি।”
সেজান অসহায় মুখ করে বলল,
“ভাবি!”
“কিসের ভাবি? এতদিন ভাই ভাই করে কথাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। আমাকে আর কথাকে মিথ্যা বলেছেন। এখন ভাবি ভাবি বলে লাভ হবে না।”
“ভাবি প্লিজ।”
“আমাকে এসব বলে লাভ হবে না। আপনার কী মনে হয় কথা এতকিছুর পরেও রাজি হবে? আমি ওকে ফোর্স করতে পারব না আর না কাউকে ফোর্স করতে দেব।”
“কেউ ওকে ফোর্স করবে না। আমি শুধু আপনার সাপোর্ট চাই। আমি আপনার কাছে কখনো কিছু চাইনি প্লিজ ভাবি।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। কথাকে রাজি করান। আমার আপত্তি নেই।”
“থ্যাংকস ভাবি। আমি বাকিটা ম্যানেজ করে নেব। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।”
কথা ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে এসে তরিঘটি করে নাস্তার টেবিলে জয়েন করল। ওর দেরি হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে প্লেটে নাস্তা নিচ্ছে৷ সবার দৃষ্টি ওর দিকে। কথা প্লেটের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“সিরিয়াস কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বুঝি?”
রুশা উত্তর দিল,
“হ্যা, তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছি।”
কথা রুশার কথা শুনে চমকে উঠে। রুশার দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে বলল,
“বিয়ে! আপু, আমি তো গতকাল মজা করেছিলাম। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন? আমি এখুনি বিয়ে করব না। মাত্র ভার্সিটিতে এডমিশন নিলাম। পড়াশোনা শেষ করি আগে৷ পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করতে চাই তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবব। এখুনি আমি বিয়ে করব না। প্লিজ আপু। প্লিজ প্লিজ।”
সেজান বিরবির করে বলছে,
“শ্বাস নিয়ে ভাবির পুরো কথা তো শুনো।”
রুশা মুচকি হেসে বলল,
“সেজান ভাই হলেও না?”
কথার ভ্রু প্রসারিত হয়ে এল। চোখ বড়বড় করে বলল,
“কী বললে?”
“আদ্রিশ, সেজান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”
কথা ঘোরের মধ্যে চলে গেল৷ রুশা কি বলছে বুঝতে পারছে না। একবার আদ্রিশের দিকে চেয়ে সেজানের দিকে তাকাল। সবাই সিরিয়াস লুক নিয়ে চেয়ে আছে। কথা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। তাড়া দেখিয়ে উঠতে উঠতে বলল,
“আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি আপু।”
কথা সবার চোখের সামনে দিয়ে দ্রুত চলে গেল কিন্তু কেউ ওকে দাঁড়াতে বলল না। সবাই ওর যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।
রুশা সেজানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সেজান ভাই, নাস্তা অনেক করতে পারবেন, এই মুহুর্তে আপনার কথার পেছনে যাওয়া উচিত।”
সেজান যাওয়ার জন্য বসা থেকে দাঁড়াতেই আদ্রিশ বলল,
“সব সময় ছেলেরাই কেন মেয়েদের পেছনে পেছনে যাবে?”
সেজান থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা টেডি স্মাইল দিয়ে বলল,
“এটাই রুলস।”
তারপর সেজানের দিকে দিকে চেয়ে বলল,
“এই ভাইয়ের কথা শুনলে কথা কেন কোন মেয়ে জুটবে না৷ যাই করুন না কেন অন্তত প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে ওর কথা শুনবেন না। নিজের মনের কথা শুনুন।”
সেজান আদ্রিশের দিকে তাকাল। রুশা যাওয়ার জন্য ইশারা করল। সেজান চেয়ার সরিয়ে এক দৌঁড় দিল। আদ্রিশ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশা আদ্রিশকে পাত্তা না দিয়ে খেতে লাগল।
কথা গাড়িতে ওঠে বসেছে। সামনের সিটে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। কথা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ওর বুক ঢিপঢিপ করছে। আচমকা সেজান গাড়িতে ওঠে বসে কথার পাশে। কথা চোখ বড়বড় করে ওর দিকে তাকায়। সেজান ওকে পাত্তা না দিয়ে ড্রাইভারকে বলল গাড়ি স্টার্ট দিতে।
“কথা আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।”
“আমি কোন কথা বলতে চাই না। নামুন গাড়ি থেকে। আমি এখন ভার্সিটি যাব৷ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“গাড়ি তো চলছে সমস্যা কী?”
“সমস্যা আপনি।”
“কথা, প্লিজ। আমার কথা শুনো। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি তো। আমি জানি আমি তোমাকে অনেক হার্ট করেছি। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার কিছু করার ছিল না। আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি।”
কথা কাঠ গলায় বলল,
“আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? নিজেকে নিজে দিয়েছেন তাই আমাকে শোনাতে আসবেন না।”
“আমি শুনাচ্ছি না জাস্ট বুঝাচ্ছি আমি কিসের মধ্যে ছিলাম। তুমি তো জানো ভাই আমার জন্য কি। আমার জন্য কি কি করেছে সব জানো। রুশা ভাবির প্রতারণায় ভাই একদম ভেঙে পড়ে। এতটাই ভেঙে পড়ে যে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে এসবের প্রতি বিশ্বাস চলে যায়। ঘৃণা করতে শুরু করে। আর তখনই ভাবি ভাইয়াকে আমার বিয়ের কথা বলে। বুঝতেই পারছো পরিস্থিতি কি ছিল। পরিস্থিতির কাছে আমি অসহায় ছিলাম। তাই তোমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।”
“অন্য ভাবেও সমাধান করা যেত।”
“তোমাকে পাওয়ার আশা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাই তোমাকেও আশা দিতে চাইনি। এতে তোমার কষ্টটা বেড়ে যেত। তাই চেয়েছিলাম আমাকে ভুলে যাও। আমাকে ভুলে সুখে থাকো।”
“হ্যা, তাই হয়েছে। আমি আপনাকে ভুলে গেছি।”
সেজান রাগি কন্ঠে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামালে সেজান গাড়ি থেকে নেমে কথাকে জোর করে গাড়ি থেকে নামায়।
“আর ইউ শিওর তুমি আমাকে ভুলে গেছো?”
কথা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।”
সেজান কথার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“গুড! আমি গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছি। তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো কি আর করার।”
কথা ওর কথা শুনে চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে। ও ভালো করেই জানে এসব ওর ড্রামা। সেজান ধেয়ে আসা গাড়ির দিকে ইশারা করে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের মানুষ ওদের দেখছে। কথার ভীষণ রাগ হচ্ছে আবার ভয়ও লাগছে।
“দেখুন আমি জানি আপনি নাটক করছেন। ফাজলামি করতে গিয়ে দেখা যাবে সত্যি সত্যিই একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাবে। সবাই দেখছে। কিছুক্ষণ পরে ভিডিও করতে শুরু করবে। তারপর সবাই ট্রল করবে।”
“আই ডোন্ট কেয়ার।”
সেজান থামছে না। রাস্তার মাঝে চলে যাচ্ছে প্রায়। কথা বাধ্য হয়ে চেঁচিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, মেনে নিচ্ছি আপনাকে ভুলি নি। ক্ষমা করে দিয়েছি। এইবার নাটক বন্ধ করুন।”
সেজান মুচকি হেসে থেমে গেল। দৌড়ে কথার
কাছে এসে মিটমিট করে হাসতে লাগল। রাগে কথা ফোঁসফোঁস করছে। সেজানকে একটা ধাক্কা মেরে চলে গেল।
~~~~
আজকে কথা আর সেজানের এনগেজমেন্ট। আদ্রিশ কোন কিছুর কমতি রাখেনি। নিজে ঘুরে ঘুরে ডেকোরেশন দেখছে। রুশা তৈরি হচ্ছে। আর্দ্রকে আগেই রেডি করে আদ্রিশ নিয়ে গেছে। রুশা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে। লাল শাড়িতে আবৃত করেছে নিজেকে। আজকে অনেক দিন পরে এভাবে পার্টির জন্য সেজেছে। কথা তৈরি হয়েছে কিনা দেখতে চলে গেল। কথা পার্পল কালার গাউন পরেছে। সাথে ডায়মন্ডের নেকলেস। নিজেকে রাজকন্যা লাগছে। ওর চোখ ছলছল করছে। কখনো ভাবেনি নিজেকে এই সাজে দেখবে। যার বাবা-মা নেই তার এমন স্বপ্ন দেখতেও নেই। রুশা ওর ঘরে এসে ওকে দুচোখ ভরে দেখে বলল,
“মাশাল্লাহ! একদম পরীর মতো লাগছে।”
“সব তোমার জন্য আপু। আজ আমি যেখানে সবকিছু তোমার জন্য।”
“বোকা মেয়ে, আমার জন্য কেন হবে? তোমার ভাগ্য গুণে তুমি এখানে। নিজের ভাগ্যের ক্রেডিট মানুষকে দেওয়া ঠিক না। তুমি যা ডিজার্ভ করো তাই পেয়েছো এবং পাবে। এখন চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”
রুশা কথাকে নিয়ে নিচে গেল। সেজান কথাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রুশা আংটি বদলের আগে ওদের একা ছেড়ে দিল। ওর চোখ আদ্রিশকে খুঁজছে। আদ্রিশকে পেয়েও গেল। ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদ্রিশকে বরাবরের মতোই ড্যাশিং লাগছে৷ রুশা চোখ সরিয়ে নিল। মেহমানদের সাথে কথা বলতে লাগল। হঠাৎ করে আদ্রিশের চোখ পড়ে রুশার দিকে। রুশার দিকে ওর চোখ আঁটকে যায়। মেহমানদের ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে এসে রুশার পাশে দাঁড়ায়। রুশার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। রুশা ওর দৃষ্টি বুঝতে পারছে। এত মানুষের সামনে ওকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে।
রুশা গলা ঝেরে বলল,
“আংটি পরানোর সময় হয়ে গেছে। আর্দ্রকে চাচার কাছে দিয়ে ওদের কাছে চলো। আংটি পরাতে হবে৷ ওরা অপেক্ষা করছে।”
রুশা কথা আর সেজানের কাছে গিয়ে ওদের ডেকে আনে।
আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে সুখময় পরিবেশে ওরা আংটি বদল করে নিল। কথার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। সেজান ওর চোখের পানি মুছে হাতটা শক্ত করে ধরে জানান দিল স্বপ্ন নয় সত্যি।
চলবে….