শশেষ প্রান্তের মায়া পর্ব-১৪+১৫

0
248

#শশেষ_প্রান্তের_মায়া (১৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_____________

আরাফের কথার মধ্যকার অধিকারবোধ দেখে না চমকে পারলাম না। ছেলেটা এখনো আমার হাত ধরে আছে অথচ আমি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। ছেলেটার মধ্যে আমাকে দেখতে না পারার উদ্বিগ্নতা স্পষ্ট। আসলেই কি এতোটা ভালোবাসে নাকি এগুলো শুধুই অভিনয়! আমি নিজেকে সামলে নিলাম। আরাফের থেকে হাত ছুটানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,

‘আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আজব তো। আরে ছাড়ুন হাত। সিহাব দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য।’

আরাফ ফিরে তাকালো আমার দিকে। দৃষ্টি অদ্ভুত, এলোমেলো। পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলাম তার অবস্থা। চোখের নিচে কালো দাগ, ফর্সা মুখটাই দাড়ি বেড়ে গেছে, চুলগুলো অগোছালো, এলোমেলো। শার্টের এক হাতা গোছানো আরেক হাতা এলোমেলো করে রাখা। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগে নাকি না ঘুমিয়ে বুঝতে পারলাম না। কিন্তু আরাফের শান্ত দৃষ্টিতে চমকালাম ঠিকই। নিজেকে সামলে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

‘দেখুন আমাকে ছেড়ে দিন। আমার যেতে হবে।’

‘আমি নিশ্চয় আপনাকে কি’ড’ন্যা’প করে নিয়ে যাচ্ছি না। সিহাবের স্কুলের দিকেই যাচ্ছি কিন্তু আপনার সাথে আমার কথা আছে।’

উনি হাতটা ছেড়ে দিলেন। আমি হাত গুটিয়ে নিয়ে চুপচাপ হাঁটতে শুরু করলাম। আরাফ পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। হেঁটেই সিহাবের স্কুল পর্যন্ত আসতেই আরাফ বলে,

‘আপনি এই কয়দিন আসেননি কেনো? বলবেন!’

তার কন্ঠে এক আকুলতা। আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। তাকিয়ে দেখলাম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রথম বারের মতো দৃষ্টিটা এড়াতে পারলাম না। রোবটের মতো বলে ফেললাম,

‘গ্রামে গেছিলাম। ওখানে এক্সিডেন্টের জন্য ৩ দিন হসপিটালে ছিলাম।’

আরাফ ব্যস্ত হয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি দু পা পিছোলাম। সে আমার গালে হাত দিতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে নিলো। তবে ব্যস্ততা কমালো না। উদ্বিগ্ন গলায় বললো,

‘আপনি এক্সিডেন্ট করেছিলেন মানে! কখন? কিভাবে? কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন? ঠিক আছেন তো আপনি? একটু দেখে শুনে চলতে পারেন না! কতটা আঘাত পেয়েছেন? কপালে লেগেছে? দেখি একটু!’

ড্যাবড্যাব করে শুধু চেয়ে রইলাম। বলার মতো কোনো শব্দ আসলো না ভেতর থেকে। ছেলেটা আমাকে চিনে প্রায় ৫/৬ মাস! এর মধ্যেই আমার প্রতি তার অনুভূতি, আমার আঘাতে তার ব্যস্ততা দেখে কেমন যেনো লাগলো। মনে হলো আমার জন্যও কি কেউ কষ্ট পেতে পারে! কারো কষ্ট হতে পারে! এটা কি সম্ভব? আরাফের ডাকে ধ্যান ভাঙে। কোনোরকমে নিজেকে সামলে হাতের ব্যাগ চেপে ধরলাম। তাড়াতাড়ি বললাম,

‘ঠিক আছি আমি৷ কিছু হয়নি।’

আর দাঁড়ালাম না। দ্রুত সরে আসলাম। আরাফ পেছন থেকে নিভে যাওয়া কন্ঠে বলে, ‘আপনি এমন কেনো মায়া? আমাকে এভাবে অবহেলা করবেন না। আমার ভেতরটা পু’ড়ে যায় মায়া। একটু তো বুঝুন।’

আমি শুনেও শুনলাম না। দ্রুত পা ছুটিয়ে এগোলাম। সিহাবের স্কুল থেকে সিহাবকে নিয়ে বের হয়ে দেখি আরাফ তখনো দাঁড়িয়ে। ছেলেটা কি সত্যিই এতোটাই ভালোবাসে আমাকে? নাকি এটা তার মোহ! আরাফ শুধু আমার মুখের দিকে চেয়েছিলো। আমি চোখ নামিয়ে দ্রুত একটা গাড়ি নিয়ে বাড়ির পথে চললাম। মাথায় থেকে গেলো এক আকাশ সমান চিন্তা ভাবনা। এই অপরিচিত ছেলেটার আমার প্রতি উদ্বিগ্নতার চিন্তা!

______
বাড়ি এসে কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলাম। চোখে মুখে পানি দিলাম। কাজ থেকে ফিরে রান্না করতে হলো না। বাড়ির কোনো কাজও করতে হলো না। কমবেশি সবই মাহমুদা করে নিয়েছে। মেয়েটা কয়েকদিন হলোই সব কাজ করে। ওকে নিষেধ করেও কোনো লাভ হয় না। আমি গোসল করে এসে চুপ করে বসে থাকলাম। মাহমুদা তখন কাপড় গোছাচ্ছিলো। শুকনো কাপড় গুছিয়ে আলনায় রাখছিলো। আমার অন্যমনষ্কতা খেয়াল করে বলে,

‘বুবু! কিছু ভাবছো?’

আমি চোখ তুলে তাকালাম ওর দিকে। মাহমুদা উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। আমি ঘোরের মধ্যেই বললাম, ‘আচ্ছা মাহমুদা কেউ যদি আমার জন্য কষ্ট পায়! আমাকে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে যায়! একটু আঘাতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে! তাহলে কি সে আমাকে ভালোবাসে?’

মাহমুদা কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাহমুদা ধীর গলায় বললো, ‘কাউকে ভালোবাসো বুবু?’

ওর প্রশ্নে আমি চমকালাম। কি বলে ফেলেছি তা বুঝতে পারলাম। ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে উঠলো। আমি কোনোরকমে দৃষ্টি এদিক ওদিক করলাম। কি বলবো বুঝতে পারলাম না। মাহমুদাকে এটা কি বলে ফেললাম আমি! মেয়েটা এখন কি ভাববে ওর বুবুকে! আমার ভাবনার মাঝেই মাহমুদা শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আমি তাকালাম ওর দিকে। মাহমুদা হাসতে হাসতেই এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে বলে,

‘বুবু তুমিও না। ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করছো ‘সে তোমাকে ভালোবাসে’ কি না! তোমার বোন মনে হয় ভালোবাসায় পিএইচডি করে এসেছে। আমি অতো শতো ভালোবাসা বুঝি না বাবা। তুমি বরং তিন্নি আপুকে জিজ্ঞেস করো। তার তো প্রেমের বিয়ে।’

বলেই আবার হাসলো। আমি তাকিয়ে থাকলাম ওর মুখের দিকে। মেয়েটাা কত সহজে আমার অস্থিরতা, আমার অনুশোচনা কমিয়ে দিলো। এক ঝটকায় বুঝিয়ে দিলো সে তার বোনকে খারাাপ কিছু ভাবে না আর ভাববেও না। আমি হুট করেই জড়িয়ে ধরলাম ওকে। মাহমুদা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই আমাকে আগলে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

‘তোমাকে খারাপ ভাবার কথা আমি কল্পনাতেও ভাবি না বুবু। তুমি আমার কাছে কি তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আর যদি আসে তোমার কাউকে ভালোবাসা বা ভালো লাগার কথা তাহলে আমি বলবো আমি তাতে ভুল দেখি না৷ সারাটাজীবন তোমার একা থাকতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তোমারও অধিকার আছে সুখ পাওয়ার। তোমারও অধিকার আছে কারো ভালোবাসার পাওয়ার, কাউকে ভালোবাসার। আমাদের জীবন কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না। আর ইন শাহ আল্লাহ থেমে থাকবেও না। যারা তোমাকে অসুখী দেখবে বলে ছুড়ে ফেলে গেছে তাদের তুমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দাও তুমি সুখে আছো। আর সবসময় থাকবে।’

আমি অবাক হলাম৷ বয়স হবে ১৬ অথচ মেয়েটার কি সুন্দর কথা। কি সুন্দর করে বুঝালো জীবনকে আরো একবার সুযোগ দিতে। এমন বোন যার আছে সে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। নাহ নাহ শুধু বোন না! এমন ভাই বোন যার আছে সে ভাগ্যবান। আমি সুখী। পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষদের মধ্যকার একজন। এমন ভাই-বোন যে পায় সে সুখী নয়তো কি! আমি মাহমুদাকে ছেড়ে ওর চোখ মুখে হাত ছুইয়ে দিয়ে হেঁসে বললাম,

‘খুব তো পাকনা পাকনা কথা বলছিস! তা তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো নাকি?’

মাহমুদা ‘বুবু’ বলে নাক ফুলায়৷ আমি হেঁসে দেই। পেছন থেকে তিন্নি আর মাইশা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে, ‘ওর বিয়ে তো পরে খাবো তার আগে তোমার বিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি কিন্তু অনেককিছু শুনেছি।’

আমি কপাল চাপড়ালাম। তিন্নির মাথায় গাট্টা মে’রে বললাম, ‘তুমি যতটা বেশি ভাবছো ততটা নয় বুঝছো! আমার দ্বারা ওইসব ভালোবাসা টালোবাসা হবে না। ৪ বছরের সংসারে স্বামীকেই কখনো বুঝিনি সেখানে ভালোবাসার মতো প্যাচ আমার মাথায় ঢুকবে না গো।’

তিন্নি, মাহমুদার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। মাইশা নিজেও মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সবার মধ্যে যখন পিনপতন নীরবতা তখন রুমে আসে মাহিদ। হাসি মুখে বলে,

‘ওমন চ’রি’ত্র’হী’নকে বুঝাটা তো কঠিনই বুবু তবে ভালোবাসা বুঝাটা তার থেকে সহজ। আর ভালোবাসার মানুষটা যদি হয় সঠিক তবে নিজেই বুঝে যাবে। অতো কষ্ট করতে হবে না।’

ছোট ভাইয়ের থেকে এমন কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেলো। ভাই কিন্তু এক মিনিটও দাঁড়ায়নি। বরং আমি যাতে লজ্জা না পাই তাই সাথে সাথেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে। তিন্নি আর মাহমুদা একসাথে হাসতে থাকে। তিন্নি দম নিয়ে নিয়ে হাসে। সোহান ভাই একবার আমাদের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে গেছে৷ বেচারার আবার কাজ থেকে এসে বউ না দেখলে তার জানে পানি থাকে না। তিন্নির সমস্যা হবে ভেবে চুপচাপ এসে দেখে আবার চলে গেছে। তিন্নিকে বললাম,

‘সোহান ভাই এসে দেখে গেলো।’

‘কি বলো! উনি আসছে তো ডাকলো না কেন! আমি যাই।’

মাহমুদা তিন্নির হাত ধরে বলে, ‘তুমি আস্তে ধীরে যাও৷ ভাইয়া তো এখন গোসলই করবে তাহলে একটু পরই যাও। আর তুমি কিন্তু একদমই সাবধানে থাকো না। বুবু আপুকে কিছু বলো! আজ সারাদিন ছুটে বেড়িয়েছে৷ নিজের খেয়াল রাখতে যেনো তার কষ্ট হয়!’

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম তিন্নির দিকে। তিন্নি মাহমুদার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোকা হাসি হেঁসে আমাকে বলে, ‘মায়া এই মেয়েটা মিথ্যা কথা বলতেছে। আমি এমন করতে পারি বলো! ছিহ ছিহ। অসম্ভব।’

বলেই ধীরে ধীরে উঠে পালালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে নিজের কপাল চাপড়ালাম। মেয়েটা মনে হয় কোনোদিন আর ভালো হবে না।

_______
রাতেই মাহিদকে বলেছি যেনো কয়েকদিন সিহাবকে কষ্ট করে নিয়ে যায়। আমার কয়েকদিন ওভার টাইম হবে। মাহিদ বলেছে রাতে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আজ আকাশের অবস্থা তেমন ভালো না। আমি কোনোরকমে গার্মেন্টসের রাস্তায় হাঁটা লাগালাম। হঠাৎ করেই মনে হলো আরাফকে দেখলাম। হাঁটা থামিয়ে পাশে তাকাতেই দেখি আসলেই আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। সচারাচর উনি তো এই সময় থাকে না তাহলে আজ উনি এখানে কেনো? আরাফের উদ্ভ্রান্তের মতো দৃষ্টি দেখে আমার কেমন লাগলো। চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে আসলো। আরাফ এগিয়ে আসে আমার কাছে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অদ্ভুত কন্ঠে বলে,

‘আজ ছুটির পর একটু আমার সাথে কথা বলবেন মায়া?’

আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উত্তর দিলাম না। ঘুরে চলে আসতে নিলাম৷ দুপা এগোতেই কি মনে করে থেমে গেলাম। পেছনে না ফিরেই বললাম,

‘আমার ওভার টাইম চলবে। ছুটি হবে রাত ৮ টায়। আপনি অপেক্ষা করবেন না।’

আর দাঁড়ালাম না। হাঁটা শুরু করলাম। পেছনে ফিরে তাকালে হয়তো আরাফের হাসি মুখ টাই চোখে পড়তো। নিজের অজান্তেই তার হাসির কথা ভেবে ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো৷ ভুলে গেলাম পুরো সমাজ, বাস্তবতা, আর অতীত।

চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (১৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________

আজই আমার ওভার টাইমের শেষ দিন। প্রতিদিনই রাত ৮ টা পর্যন্ত কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বের হতাম। বাহিরে এসে দেখতাম মাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখলেই, ওর হাসি দেখলেই আমার ক্লান্তির অবসান হয়ে যেতো। প্রতিদিন কষ্ট করে ‘ও’ নিজেই সিহাবকে নিয়ে যেতো আবার আমাকেও নিতে আসতো। অদ্ভুত ভাবে ঠিক প্রতিদিন ওই সময় আরাফও দাঁড়িয়ে থাকতো। তার দৃষ্টি থাকতো আমার চোখের দিকে। প্রথম দুদিন দেখে বেশ অবাক হলাম। ভাই সাথে থাকাই কোনো কিছু বলতেও পারলাম না। পরেরদিন সকালে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস, করেছিলাম,

‘আপনি রাতে আসেন কেনো? আর ওভাবে তাকিয়ে থাকেন কেনো?’

উনার সহজ স্বীকারোক্তি, ‘প্রথম দিন ভেবেছিলাম রাতে একা যাবেন পরে দেখলাম একটা পিচ্চি ছেলের সাথে যাচ্ছেন। আর আপনাকে না দেখলে আমার হাসফাস অবস্থা হয়, দম আটকে আসে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যই আসি।’

কথার পৃষ্ঠে বলার মতো কিছুই খুঁজে পাইনি। চুপচাপ চলে এসেছিলাম। এরপর থেকে প্রতিদিনই দেখতাম দাঁড়িয়ে আছে। আমি শুধু একবার তাকাতাম। তবে না তাকিয়েও বলতে পারতাম সে তাকিয়ে আছে। তার গভীর দৃষ্টিতে তাকানোটা আমি বুঝতে পারতাম৷ আরাফের কথা ভাবতেই ঠোঁট প্রসারিত হয়ে গেলো। মিতা আর আমি একসাথে বের হচ্ছিলাম। হুট করেই আমাকে হাসতে দেখে মিতা ঠাট্টার স্বরে বলে,

‘ব্যাপার কি মায়া? মুচকি মুচকি হাঁসা হচ্ছে যে! প্রেম প্রেম গন্ধ মনে হচ্ছে।’

আমি ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। মিতা শব্দ করে হাসতে থাকে। আমি মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলাম। সামনেই মাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে হেঁসে ওর কাছে গেলাম। মিতা বিদায় নিয়ে চলে যায়। আমি তাকালাম আশে পাশে। কিন্তু কোথাও আরাফকে চোখে পড়লো না৷ চোখ দুটো হুট করেই ছোট ছোট হয়ে গেলো। আজ আসেনি উনি! প্রতিদিনই তো আসে তাহলে আজ এলো না কেনো! আশে পাশে খুব ভালো করে দেখলাম কিন্তু সে নেই। অজান্তেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। উনাকে না দেখতে পাওয়াই কি মন খারাপ হওয়ার কারণ! নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলাম। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। মাহিদ আমার অস্বাভাবিকতা খেয়াল করে বলে,

‘বুবু তোমার কি শরীর খারাপ? এমন করছো যে! কাউকে খুঁজছো? কেউ আসবে?’

আমি তাকালাম ওর দিকে। চোখ পিটপিট করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম৷ হাঁসার চেষ্টা করে বললাম, ‘নাহ তো। চল বাড়ি যাই। ওরা অপেক্ষা করছে।’

মাহিদ মাথা নাড়ালো। আমি ওর সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। নিজের চিন্তা ভাবনা থেকে কিছুতেই দুরে সরাতে পারলাম না আরাফকে। এমন কেনো হলো! আমি কি ছেলেটার ওপর দুর্বল হয়ে গেলাম! ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি এসব! নাহ নাহ। এটা অসম্ভব। আমার আর আরাফের কোনো ভাবেই কোনো কিছু সম্ভব না। মাথাটা ঘুরিয়ে আসে। মাহিদ আগলে নেয়। ব্যস্ত গলায় বলে,

‘কি হয়েছে বুবু? মাথা ঘোরাচ্ছে? খারাপ লাগতেছে খুব?’

আমি কোনো রকমে দুদিকে মাথা নাড়ালাম। মাহিদ তবুও হাত ছাাড়লো না। শক্ত করে হাত ধরে রাস্তা পার হলো। গন্তব্য বাড়ি হলেও মনটা যেনো পড়ে রইলো এই ফুটপাতে। আচ্ছা আরাফের কি মোহ কেটে গেছে! এই জন্যই কি আজ আসেনি! একদিনে কি কারো মোহ কেটে যায়? হতেও পারে। হয়তো আমার থেকে ভালো, সুন্দর কাউকে পেয়েছে। আর সে তো আমার থেকে ভালো কাউকেই ডিজার্ভ করে। নিজের মনকে হাজারটা বাহানা দিয়ে মানানোর চেষ্টা করলাম। পুরো রাস্তা মাথায় শুধু এলোমেলো ভাবে আরাফের কথা ঘুরে গেলো। বুঝে গেলাম আমি ফেঁসে গেছি। ২০ বছরে এসে বাস্তবতা জেনেও কিশোরীর মতো প্রেমে পড়ে গেছি। নিজের ওপর কি প্রচন্ড রাগ হলো আমার। এতো বড় ভুল কিভাবে করলাম! কিভাবে ভুলে গেলাম বাস্তবতা, অতীত, সমাজ! কিভাবে অচেনা একটা ছেলের ওপর হুট করে এতো টান আমার! মাথা চেপে ধরলাম। নিজেকে শক্ত করলাম। যত যায় হয়ে যাক এই সত্যি আমি কখনো কাউকে জানতে দেবো না। আমি যে ডিভোর্সী। আমার যে ভালোবাসার অধিকার নেই।

_______
পরের দিন আমার ছুটি গেলো। তবুও সিহাবকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসার সময় একবার ফুটপাত থেকে ঘুরে গেলাম। তাকে চোখে পড়লো না। মনে মনে নিজেকে মানিয়ে নিলাম যে সে আর আসবে না। বিকেলে গিয়েও তাকে পেলাম না। পরেরদিনও তাকে দেখা গেলো না। পুরোপুরি ভাবে মেনে নিলাম তার মোহ কেটে গেছে। আরাফের কথা ভাবতে ভাবতেই গার্মেন্টস চলে আসলো। আমি সিএনজি থেকে নেমে সামনেই তাকাতেই দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকালাম ওর দিকে। পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই বুঝলাম তার অবস্থা খুব বেশি ভালো না। কোনো রকমে দ্রুত পা চালিয়ে যখন তার সামনে দাঁড়ালাম তখন তার ঠোঁটে অদ্ভুত এক প্রাপ্তির হাসি। লাল টকটকে হওয়া চোখ গুলোও যেন শীতল হয়ে গেলো। চোখ মুখ শুকিয়ে একদম একটুখানি হয়ে গেছে। শুকনো ঢোক গিললাম। আরাফ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুখের দিকে। একবার ভাবলাম কিছু বলবো না পরমুহূর্তেই মনে হলো তাকে দেখে ঠিক সুস্থ মনে হচ্ছে না। তাই সব জড়তা কাটিয়ে প্রশ্ন করে বসলাম,

‘কি হয়েছে আপনার? এমন লাগতেছে কেনো? অসুস্থ আপনি?’

আরাফ ভীষণ শীতল কন্ঠে আওড়ায়, ‘গত ৩ দিন থেকে ভীষণ জ্বর মায়া। তবুও যেনো আপনাকে দেখার তৃষ্ণা মেটে না। তাই দুচোখ ভরে দেখার জন্য চলে আসলাম। কয়েকটা মিনিট থাকবেন?’

শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। জ্বর নিয়েও আমাকে দেখতে ছুটে এসেছে আর আমি তাকে নিয়ে মনে মনে কতকিছু ভেবে ফেলেছি! তার এই শীতল চাহনী, শীতল কন্ঠস্বর শুনলেই ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠে। কোনোরকমে হাতের ব্যাগ চেপে ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। উনার সামনে কিছুতেই নিজেকে প্রকাশ করবো না৷ আমার আর কষ্ট পাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। আমি শক্ত কন্ঠে বললাম,

‘অসুস্থ শরীর নিয়ে এ কেমন পাগলামো আপনার! এসব ছেড়ে বাড়ি যান।’

উনাকে এসব বললেও অদ্ভুদ ভাবে আমি ওখান থেকে একটুও নড়িনি। আরাফ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে, ‘আপনাকে দেখি আরেকটু!’

আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না। চুপচাপ নিজের মতো রাস্তা ধরলাম। আরাফ পেছন থেকে বললো, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি মায়া। আমাকে বিয়ে করবেন? জ্বর নিয়ে যখন ভীষণ তৃষ্ণা পাবে আপনাকে দেখার তখন আপনাকে দেখার সুযোগ করে দিবেন? ভালোবাসবেন আমাকে?’

পা দুটো আপনা আপনি থেমে গেলো। এই মুহুর্তে আমি এটা আশা করিনি। তাই হয়তো আমার এতো অবাকতা। তবে এটা হবে তা আমি ৩ দিন আগে পর্যন্ত মানতাম। মাঝখানের ৩ দিন আমি ভেবেছিলাম এসব ভাবনাই আমার ভুল। আমি তাকালাম না আরাফের দিকে। যত দ্রুত সম্ভব সরে গেলাম সেখান থেকে। মানুষটার কন্ঠে এক অদ্ভুত মাদকতা আছে যা শুনলেই আমার সব উলোট পালোট লাগে। মায়া তুই নিজের সর্বনাশ নিজেই আরো একবার করলি! নিজের প্রতি নিজের ভয় হতে শুরু করলো। আরাফের ভালোবাসায় সাড়া দেওয়া আমার জন্য বোকামি। ওর পরিবার কখনোই এসব মানবে না। তাছাড়া আরাফ অবিবাহিত। একটা অবিবাহিত ছেলে ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করবে বিষয়টা যেমন ওর পরিবারের কাছে দৃষ্টিকটু তেমনই পুরো সমাজ এর জন্য আমাকেই দায়ী করবে। বরাবরই সব দোষ মেয়েদের হয় কোনোদিনও কোনো মানুষ ছেলেদের দিকে আঙুল তোলে না। আমি নিজেকে সামলে গার্মেন্টসের ভেতরে ঢুকলাম। ক’দিন আগে নতুন একটা মেয়ে জয়েন করেছে৷ মেয়েটা একদম চুপচাপ। কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলে না৷ নিজের কাজ নিজে করে চুপচাপ চলে যায়। আমি এসে নিজের জায়গায় বসতেই মিতা আর হেনা আপা আমাকে চেপে ধরলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ওরা কি আরাফের সাথে কথা বলতে দেখেছে নাকি! কি ভাববে ওরা! কিন্তু ওরা আমাকে এসব ভাবার থেকেও বড় একটা শকড দিলো। ভ’য়ং’কর রকম একটা কথা বলে আমাকে নিশ্চুপ হতে বাধ্য করে। মিতা অসহায় কন্ঠে বলে,

‘মেয়েদের সাথেই সবসময় এমন হয়!’

আমি ওর দিকে তাকালাম। দৃষ্টি সরিয়ে নতুন মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটার নাম সোমা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমি ওদের এড়িয়ে সোজা সোমার কাছে এসে দাঁড়ালাম। সোমা এক পলক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। আমি কয়েকবার ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

‘সবাই এসব কি বলছে সোমা? তুমি কাউকে কিছু বলছো না কেনো? তুমি জানো না কিছু?’

সোমা আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসে৷ বলে, ‘শুনেছি একটু একটু। ওরা তো আর ভুল কিছু বলছে না। আমি ধ’র্ষি’তা এটাই বলছে। তবে এসবের অভ্যাস আছে আপু।’

আমার শরীর কেঁপে ওঠে। আমি ডিভোর্সী এটুকু শুনতেই আমার কষ্ট হতো৷ সেখানে এই মেয়েটা! আমার কি হলো কে জানে হুট করেই সোমাকে জড়িয়ে ধরলাম। সোমা প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিলো। হেঁসে বলে, ‘মায়া হচ্ছে মায়াপু?’

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। সোমা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আমাকে। বলে, ‘সেই ঘটনার পর এই প্রথম আমাকে কেউ এভাবে জড়িয়ে ধরলো আপু।’

দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ থাকলাম। সোমা আমাকে ছেড়ে নিজেই বললো, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। একটা ছেলে এতো বেশি ভালোবাসা দেখিয়েছে যে নিজেই কখন কিভাবে গলে গেছি বুঝতে পারিনি। বাবা-মা যখন বিয়ে ঠিক করলো তখন বোকার মতো পালিয়ে গেলাম ছেলেটার সাথে। ফলাফল সে ধ’র্ষি’তা ট্যাগ লাগিয়ে বাড়ির সামনে ফেলে গেলো। বাবা-মা আর মেনে নেয়নি আমাকে। আমার জন্য তাদের মুখ পু’ড়ে’ছে। আমার প্রতি রাগটা তাদের ভীষণ স্বাভাবিক। যত দিন যেতে লাগলো তত সমাজটা আমার জন্য বি’ষাক্ত হয়ে গেলো। সবথেকে মজার কথা কি জানো! এই সমাজ একটা বারও তার দিকে আঙুল তোলেনি যে আমাকে এই ট্যাগটা দিয়েছে। পুলিশের কাছে যখন গিয়েছিলাম তখনও তারাই আমাকে কু’প্র’স্তাব দিয়ে খা’রা’প খা’রা’প কথা বলেছে। সেদিন নিজেকে এতো অসহায় মনে হয়েছিলো যা বুঝানোর মতো নয়। নিজেকে একসময় নিজেরই কেমন বি’ষ বি’ষ মনে হতো। নিজের দিকে তাকালেই ঘৃ’ণায় গা গুলিয়ে আসতো। আ’ত্ম’হ’ত্যা করতে গেছিলাম তবে সাহস পাইনি। সব ছেড়ে ছুড়ে দুরে একটা ঘর নিলাম। সেখানে থাকি আর এই গার্মেন্টসে কাজ নিলাম। ব্যাস!’

মেয়েটার চোখ মুখ কেমন নীল বর্ণ ধারণ করেছে৷ হয়তো কষ্টে! আমাদের সমস্যাটা হলো যাকে ভালোবাসি তাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেই। এটা আমাদের জন্য কত বড় ভুল তা বোধহয় সোমার থেকে জানা উচিত। কাউকে ভালোবাসলেই তার সাথে চোখ বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। সবাই এক না তবে এটাও দেখতে হবে যার সাথে যাচ্ছি সে আদৌও আমাদের বিশ্বাসের যোগ্য কি না! তাকে আদৌও ভরসা করা যায় কি না! আমাদের কিছু হলে কখনোই কোনো ছেলেকে দোষ দেওয়া হবে না। সব দোষ সবসময় মেয়েদেরই হয়। সব ক’ল’ঙ্ক শুধু মেয়েেদরই হয় কোনো ছেলেকে কেউ কখনো খা’রাপ বলে না। কোনো ছেলের নামের সাথে কখনো ক’ল’ঙ্ক যুক্ত হয় না। কোনো মেয়ে ডিভোর্সী হলেও সমাজ সম্পূর্ণ দোষ তার দেয়। তারা ভুলে যায় কখনো কোনো মেয়ে নিজের হাতে নিজের সংসার ভাঙে না। কোনো মেয়ে বিধবা হলেও তাকে আঙুল দিয়ে দেখানো হয় আর বলা হয় ‘মেয়েটা অ’পয়া তাই অল্প বয়সে স্বামী হারাইছে।’ তারা ভুলে যায় কোনো মেয়ে কখনো নিজ থেকে বিধবা হতে চায় না। কোনো মেয়ে রে’প হলে প্রথমে তার দিকেই আঙুল তোলা হয়৷ তাকে দেখে হেঁসে হেঁসে গু’জব করা হয়। অথচ সমাজ ভুলে যায় কখনো কোনো মেয়ে নিজ থেকে তার স’তী’ত্ব হারাতে চায় না। এই সমাজের চিন্তা ভাবনা প্রচন্ড নিচে নেমে গেছে। সমাজটা ভরে গেছে আবর্জনায়। এই আবর্জনা থেকে বাঁচতে হলে সমাজকে এড়িয়ে চলতে হবে। তুমি কেমন সেইটা তুমি খুবই ভালো করে জানো তাই কারোর কথায় কান না দিয়ে নিজেকে গড়ো। সাফল্য এনে সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দাও। বাঁচতে হলে সমাজকে এড়াতে হবে। তবেই তুমি সুখী।

___
কাজ শেষ করে বের হতেই দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার কি মাথা খারাপ! এই জ্বর নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে! সামনে এগোতে গিয়ে হুট করেই সোমার কথা মনে পড়ে যায়। এক পলক তাকায় আরাফের মুখের দিকে। একদম নিষ্পাপ মুখ অথচ যদি সেও সোমার সেই ভালোবাসার মানুষটার মতো হয়! দম আটকে আসে আমার। কোনো রকমে নিজেকে সামলে দ্রুত পায়ে হাঁটা লাগালাম। আরাফ ভীষণ অসহায় কন্ঠে ডাকে,

‘মায়া! একটু দাঁড়ান!’

নিজে না চাইলেও দাঁড়ালাম। আজ আরাফকে বাস্তবতা আঙুল দিয়ে না দেখিয়ে দিলে সে বার বার এভাবেই আসবে। নিজেকে শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ালাম তার দিকে। সে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। বলে,

‘আমার উত্তর!’

হাত বগলদাবা করে দাঁড়ালাম। শক্ত কন্ঠে বললাম, ‘কি উত্তর চাই আপনার? আপনাকে বিয়ে করবো কি না?’

আরাফ মাথা উপর নীচ নাড়ায়। মনে মনে কয়েকবার কথা গুলো আওড়ে কঠিন কন্ঠে বললাম,

‘একটা ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করবেন! জ্ঞান বুদ্ধি কি সব হাঁটুর নিচে থাকে? আপনার বয়স আবেগের নয় তবুও এতো আবেগ কিসের আপনার? কিসের এতো মোহ? কি চান আপনি? আপনি একটা অবিবাহিত ছেলে আর আমি ডিভোর্সী। চার বছরের সংসার ছিলো আমার। ওরা আমাকে মা’র’তে মা’র’তে শুধু বাহির না ভেতরটাও প’চি’য়ে ফেলেছে। আপনি বিয়ে করতে চান আমাকে! আপনার পরিবার মানবে? মেনে নিলাম আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে তারা বিয়েটা মেনে নিলো কিন্তু যখন আপনি থাকবেন না তখন ঠিকই আমাকে ঠে’স মে’রে কথা বলবে। যখন কিছু নিয়ে তর্ক হবে তখন প্রথমেই বলবে, ‘তুই তো একটা ডিভোর্সী! তোর এসব স্বভাবের জন্যই তোর প্রথম স্বামী তোকে ছেড়ে দিয়েছে। তোকে আমার ছেলে বিয়ে করেই ভুল করেছে।’ তখন আমার কাছে বলার মতো একটা শব্দও থাকবে না। আর আপনি! কত বছর মানতে পারবেন আমাকে? কত বছর থাকবে আপনার এই প্রেম, ভালোবাসা? ২ বছর, ৪ বছর, ৫ বছর! এর বেশি থাকবে না। আপনিও মা আর বউয়ের ঝা’মেলার মধ্যে পড়ে আমাকে ছাড়তে বাধ্য হবেন। আর সমাজ! তারা আমাকে সরাসরি বলবে ‘মনে হয় তাবিজ করে বিয়ে করছে ছেলেটাকে!’ এসব সহ্য করার মতো ক্ষমতা নেই আমার। এসব অশান্তির চেয়ে ভালো আপনি আমার থেকে দুরে থাকুন।’

এক দমে সব বলে শেষ করলাম। আরাফ নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। আমার কথার মধ্যে একটা কথাও বলেনি৷ আমি তার দৃষ্টিতে এলোমেলো হয়ে গেলাম। যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই আরাফ নিভে যাওয়া কন্ঠে বলে,

‘আমি অনাথ মায়া। আমার এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ নেই।’

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)