শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-২০

0
388

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে : লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব :২০

চোখের সামনে বস থাকা নিকৃষ্টতম ছেলেটাকে দেখে শ্রাবণের মুখ থামেনি। অটোমেটিক চলতে আছে। ওর গালিগালাজ শুনে অমি হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। লিজার সঙ্গে হওয়া কাহিনী ভেবে শ্রাবণের মেজাজ চড়া হয়ে আছে। মেয়েটার বুদ্ধি হালকা। ক্ষণকালের ভালো লাগাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করেছে। কিছু মেয়েদের মন অতি কোমল হয়। এদের হৃদয়ে একবার প্রবেশ করতে পারলে বের হওয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে এরাই বেশি ঠকে যায়। অতিরিক্ত বিশ্বাস আর ভবিষ্যতের চিন্তা না করলে যা হয়। আগে থেকে সাবধান থাকা উচিৎ। কেউ ছবি চাইলো আর অমনি নাচতে নাচতে ছবি পাঠিয়ে তার চোখের জ্বালা জুড়িয়ে ভালোবাসার প্রমাণ করলাম এটাও ঠিক না।রাহিন পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে শ্রাবণের দিকে চেয়ে বলল,

> তুই থামবি? দয়াকরে মুখটা সামলে রাখ। গালিগালাজ করে কি তুই পরিস্থিতি সামলাতে পারবি? পুলিশ আসছে তো ভাই।

শ্রাবণ কড়া চোখে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

> চুপ করে কি এই কু*ত্তা*র বা*চ্চার পচে যাওয়া ইউজলেস মুখে চুমু খাবো? ওর বাপ কাশেম আলী আর চাচাকে ফোন কর। থানা সেক্রেটারি না ওর চাচা? বিশ্বাস কর আমার ইচ্ছা করছে সবগুলোকে পু*তে রাখতে। আমার বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছে। ওর চৌদ্দ গোষ্ঠীকে আমি রাস্তায় নামাবো। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ওর মুখটা চিনে রাখতে পারে আমি সেই ব্যবস্থা করবো।

আরাফ মাথা নিচু করে বসে আছে। খেপাটে শ্রাবণের সম্পর্কে ওর যথেষ্ট ধারণা আছে। লিজার সঙ্গে সম্পর্কে গিয়েছিল নেহায়েত কাকতলীয়ভাবে। এক বন্ধুর সাহায্যে যোগাযোগ হয়েছিল। লিজার পরিবার সম্পর্কে ওর কোনো চেনাশোনা নেই। হবেই বা কিভাবে? দুই মাসের প্রেম। মেয়েটার সঙ্গে শুধু কিছু ছবি আছে। সেগুলো আবার এপস দিয়ে আরও খোলামেলা করে থ্রে*ড দেবার মতো তৈরী করে নিয়েছে। এখনো অবধি একাকিত্বে পাওয়া হয়নি। অনেক চেষ্টার পরেও মেয়েটা ভয়ে এসব এড়িয়ে চলেছে। শেষমেশ আশা ছেড়ে এমন করতে বাধ্য হতে হলো। যদি একবার জানতে পারতো লিজা শ্রাবণের বোন কখনও এই ভুলটা করতে যেতোনা। শ্রাবণের চ্যানেলের দেশ জুড়ে নামডাক আছে। পূর্বে লোকে ওকে বখাটে বলে যতই গালমন্দ করুক বর্তমানে ওর জনপ্রিয়তা প্রচুর। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে শ্রাবণ নামটা অতি আবেগের নাম। রেবা হ*ত্যা থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কেসটা অতি দক্ষতার সহিত সামলে নিয়েছে। এমন বেপরোয়া ভাব না থাকলে জীবনে কিছু করা যায় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হয়। জনগণ পেছনে ঠিক আপনা আপনি এসে যায়। আরাফ মৃদু কণ্ঠে বলল,

> আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি এমন কাজ আর করবো না। এবারের মতো প্লিজ ভাইয়া।

শ্রাবণ ঠোঁট কামড়ে ধরলো। কপালে কয়েকটা ভাজ ছিল সেখানে বিন্দু বিন্দু ঘুম এসে জুটেছে। পাশের কক্ষে কয়েকজন কান লাগিয়ে আছে দেয়ালের সঙ্গে। শ্রাবণ সেসব পাত্তা দিলোনা ধমক লাগিয়ে বলল,

> দুজন মেয়েকে আগে জীবিত করবি তারপর ক্ষমা চাওয়ার জন্য মুখ খুলবি। তার আগে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ঠোঁট নাড়িয়ে দেখ প্রমিজ করছি তোর ওইটা আমি কেটে নিবো।

অমি শব্দ করে হেসে উঠলো। শ্রাবণের ইঙ্গিত কোনদিকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ও নিজের মতো বুঝে নিয়েছে। রাহিন ফোন শেষ করে বিরক্ত হয়ে অমির দিকে চেয়ে ইশারা করলো চুপ থাকতে। এতো কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে হাসি আসে ওর মাথায় আসছে না। অমির বয়স ওদের থেকে কয়েক বছরের কম। ছেলেটা অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছে। সখের বসে এখানে কাজ করা। তাছাড়া ক্যামেরামেনের কাজ খুব দক্ষতার সহিত করে। শ্রাবণের ভীষণ প্রিয়পাত্র। গোপন মিশনের সঙ্গী। শ্রাবণ হাতের লাঠি পাশে রেখে রাহিনকে টেক্সট করলো,

“এখানে আলো লিজা বা ওর বন্ধুদের নাম এড়িয়ে বাকিটা করবি।সবটা খেয়াল রাখবি। প্রতিটা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা কর। ওদেরকে আমার নাম বলে রাজি করা। রাতের মধ্যে যেনো থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করে। বাকীটা আমি দেখে নিবো। অভয় দিবি ওদের পরিবারকে শামিল করা হবে না”

রাহিন টেক্সট পেয়ে শ্রাবণের দিকে চাইলো। ওর বলার আগেই রাহিন প্রতিটা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। নয়টা মেয়ে রাজি হয়েছে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে। ইতিমধ্যে হয়তো অনেকে দিয়েছেও। বহুদিনের রাগ জমিয়ে রেখেছে ওরা।তাছাড়া আরাফের থেকে মুক্তির একটা উপায়ন্তর পেতে বরং খুশী। রাহিন রিপ্লাই করলো,

” হয়ে গেছে। কিন্তু ভাই পূবালীর ভিডিওটা?”

শ্রাবণ আরাফের দিকে চেয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলল,

> আরাফ প্রস্তুত তো বোন আর মায়ের এডাল্ট ভিডিও দেখার জন্য? তোর বোনের ভিডিও অবশ্য এডিটিং করার প্রয়োজন নেই। তোদের শোরুমের ম্যানেজার ছমির আছে না? কয়েকটা ভিডিও ওর আইডি হ্যাক করে পেয়ে গেছি। আসলে গতকাল থেকে তোর পরিবারের প্রতিটা সদস্যের চুলচেরা তথ্য আমি নিজের কাছে খুব যত্নে সংগ্রহ করেছি। রাহিন ভিডিও প্লে কর আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। শরীরের ক্ষতচিহ্নের থেকেও হৃদয়ে ক্ষত অধিক কষ্টের হয়। জানিনা ওর মধ্যে বিবেক এখনো বেঁচে আছে কিনা। তবুও চেষ্টার ত্রুটি আমি পছন্দ করবো না।

শ্রাবণ উঠে আসলো। আরাফ না না বলে চিৎকার করছে। বোনের সম্পর্কে জানার পর থেকে মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একবার ছাড়া পেলে বাড়িতে গিয়ে ওকে পু*তে ফেলতে দু’বার ভাববে না। এখন সেই ভিডিও দেখতে হবে ভেবে শরীর থরথর করে কাঁপছে। কোনো ভাইকি পারে বোনের এডাল্ট ভিডিও দেখতে? অথচ বাইরের মেয়েদের সঙ্গে নোংরামি করতে সামান্যতম বিবেকে বাঁধেনা।
*****************
পায়ের আওয়াজ পেয়ে হুড়মুড় করে রবিন আর ইরিনা চেয়ারে এসে বসে পড়লো। আলোর বুকের মধ্যে ধুকপুক করছে। নিজ থেকে কিচ্ছুটি আর করবে না ভেবেও আরেকটা কাজ ঠিক করে ফেলেছে। অজান্তে ভেতরে থাকা ঘুমন্ত সত্বা অন্যায় দেখলে জাগ্রত হয়ে উঠে। এখানে ওর কি দোষ? শ্রাবণ ভেতরে প্রবেশ করলো। দাপট দেখিয়ে সামনের আসন দখল করে আলোর দিকে পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি মেলে চাইলো। মেয়েটার নাক লাল হয়ে আছে। কপালের চুল ঘামে ভিজে মুখের সঙ্গে লেপ্টে আছে। অথচ এখানে এসি চলছে। পরনে সাদা রঙের গাউনের সঙ্গে কালো হিজাব ওড়নার মতো ঘোমটা দেওয়া। আলো বাইরে বোরখা ছাড়া বের হয়না অথচ আজ ভিন্ন সাজে। হয়তো কি*ডন্যা*প প্লান সুক্ষভাবে সফল করার জন্য নিজেকে অন্যরকম সাজিয়ে তোলা। মেয়ের বুদ্ধির অভাব নেই। কিন্তু অতিরিক্ত সাহস ভালো নয়। যদি খারাপ কিছু হতো? শ্রাবণ পুরুষালী কঠোর আওয়াজ তুলে ধমক দিলো,

> কোন সাহসে তোমরা আইন ভেঙেছো? জানো কি*ডন্যা*পের জন্য তোমাদের কি শাস্তি হতে পারে? যেমন রাণী তেমন তার মন্ত্রী উজির। আলোর এক কথায় তোমরা কি*ড*ন্যাপ করতে চলে গেলে?

শ্রাবণের ধমক শুনে সকলে ভয় পেলো। কোনো ঝামেলা হলো কি বুঝতে পারছে না। আলো উত্তেজিত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> কোনো ঝামেলা হয়েছে? প্লিজ আপনি শুধুমাত্র আমার নামটা ওখানে বলবেন। আমার বন্ধুদের এই ঝামেলায় জড়াবেন না। বাসা থেকে জানলে খুব অসুবিধা হবে।

শ্রাবণ শান্ত হলো। টেবিল গড়িয়ে আলোর হাতটা টেনে নিয়ে চেক করলো। কব্জিতে চিকন করে সুক্ষ ক্ষতচিহ্ন আঁকা। ফর্সা হাতে সেটা বেমানান দেখতে লাগছে। কয়েক ফোঁটা র*ক্ত গড়িয়ে শুকিয়ে আছে। শ্রাবণ ভ্রু কুচকে বলল,

> কথাটা আগে মাথায় রাখা উচিত ছিল। যাইহোক ভয়ের কিছু নেই। আমি দেখে নিবো। ধন্যবাদ সবাইকে। আগামীকাল আমার পক্ষ থেকে কেএফসিতে তোমাদের জন্য ট্রিট রইলো।

শ্রাবণ কথা শেষ করতেই ইরিনা আর সিয়াম খুশীতে চিৎকার করে উঠলো। রবিন অমায়িক হেসে বলল,

> আমি জানতাম আপনি ঠিক সামলে নিবেন। ভাইয়া থাকতে আমাদের চিন্তা কি?

শ্রাবণ থামতে ইশারা করলো। পাশের কক্ষে আরাফ আছে। কি*ড*ন্যাপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম সামনে আসলে ঝামেলা অনেক। এদের ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। থানায় অভিযোগ পড়লে ক্ষতি হবে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনে আসলে অনায়াসে বাদ পড়বে। শ্রাবণ ড্রায়ার থেকে ওষুধ বের করে কাটা জায়গাটা পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। সকলে সেটা গোলগাল চোখ করে দেখলো। শ্রাবণ আলোর মধ্যাকার রসায়ন সম্পর্কে এলোমেলো ধারণা ওদের। আলো আনরোমান্টিক ভুত অন্যদিকে শ্রাবণ গোমড়া মুখো। এদের প্রেম আর বাঘ সিংহের বন্ধুত্ব সমান। কোনো মিল নেই কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তেমন না। লুবনা বোকাবোকা চেয়ে ফিসফিস করে সিয়ামের কানে কানে বলল,

> এদের ব্যাপারটা বুঝেছিস? উপর থেকে ভাব ভালোবাসা নেই অথচ কি টান? শ্রাবণ ভাইয়া ভালোবাসার কথা বলতে জানে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। খটখটে মন নিয়ে কিভাবে আলো রাণীর কাছাকাছি আসে?

সিয়াম ধমক দিলো।

> চুপ থাক ভেবলি। মাথায় বুদ্ধি জ্ঞান নেই। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি হাটে বাজারে বলে বেড়ানোর জিনিস?

দুজনের মধ্যে খুনসুটি লেগে গেলো। এদের ভাব যেমন ঝগড়াও তেমন। লুবনাকে ও ভেবলি ডাকে সেটা নিয়ে টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকে। রবিন ইশারা করলো চুপ করতে। আলো হাতটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,

> ভাইয়াকে বলেছি ও থানায় যোগাযোগ করবে। আমি আপনাকে পাইনি দোষ কি আমার? এবার কিন্তু বোকামি করিনি।

আলো গাল ফুলিয়ে আছে। শ্রাবণ শান্ত হলো। এখন বকাবকি করলে মেয়েটা আবার প্যানিক করবে। এমনিতেই ঘেমে একাকার। হাত মৃদু মৃদু কম্পন হচ্ছে সেটা আগেই বুঝেছে।

> বাইরে লোকজন এসেছে। আমি আসা অবধি তোমার এখানে থাকবে।ভুলেও বাইরে আসবে না। মুভি দেখতে পারো ভালো লাগবে। চিন্তা করোনা বাকীটা আমি সামলে নিবো। ফায়জুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই। কারো উপরে সামান্য আঁচড়ও পড়বে না।

শ্রাবণের কথা শুনে আলোর হৃদয়ে প্রশান্তিময় প্রজাপতি ডানা মেললো। বাকীদের মুখে হাসি ফুঁটলো। হৈহৈ করে মুভি বাছাইয়ের জন্য লেগে পড়লো। শ্রাবণ দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো। বন্ধুত্ব এমনিই হয় এখানে স্বার্থের কোনো বেড়াজাল নেই।তবে সব বন্ধুত্ব সমান হয়না। মিছরির ছু*রির মতো। মুখে মধু অন্তরে বি*ষ
***********
কাশেম আলী ছেলের চিন্তাতে দিশাহারা অবস্থা। উনি ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ছুঁটে এসেছেন। শহরের নামকরা ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে উনারা একজন। স্থানিয় বাসীন্দা হওয়ার দরুন চেনাশোনা প্রচুর। সঙ্গে কয়েকজন পাতি নেতাদের সঙ্গে এনেছেন। রাহিন সবাইকে হল রুমে বসতে দিয়েছে। থানার দারোগা আজিম হক কয়েকজন কনেস্টবল নিয়ে কিছুক্ষণ মধ্যে হাজির হলেন। হল রুম জুড়ে নীরবতা বিরাজ করছে। শ্রাবণ চুপচাপ ভেতরে প্রবেশ করলো। আজিম হক ওর সঙ্গে আলাপ করে বললেন,

> শ্রাবণ সাহেব আসামী কোথায়?

শ্রাবণ ইশারা করলো দরজার দিকে। অনি আর দুজন ছেলে আরাফকে সঙ্গে এনে সামনে দাঁড়া করিয়ে দিলো। ছেলেটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পানির ফোয়ারা। শ্রাবণের নির্দেশ পেয়ে রাহিন সত্যি সত্যি পূবালীর ভিডিও ওর সামনে চালু করে রেখেছিল। বাঁধা হাতের জন্য না পেরেছে কানে আঙুল দিতে না পেরেছে উঠে আসতে। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিলো।। ওকে এভাবে দেখে কাশেম আলীর হৃদয় কেঁপে উঠলো। শ্রাবণের দিকে তেড়ে এসে বলল,

> তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার? চিনো আমাকে? সামান্য চ্যানেল খুঁলে আমার সঙ্গে টক্কর দিতে এসেছো? আমার সোনার টুকরো ছেলের নামে তুমি বদনাম করতে চাইছো? তোমার অফিস আমি ভে*ঙে গুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমি রাখি।

লোকটার দাপট দেখে রাহিম আতঙ্কে চমকে উঠলো। লোকটার জন্য দুঃখ হচ্ছে। বহুত কষ্টে শ্রাবণের মুখটা বন্ধ হয়েছিল আবারও চালু হবে। রাহিন হতাশ হলো। শ্রাবণ ঠান্ডা মাথায় সরল চোখে তাকিয়ে বলল,

> কুকুর বেড়ালের মতো বাচ্চা পয়দা করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখলেই কি সেগুলো মানুষ হয়? একটু শাসন করতে হয়। আপনার পয়দা করা সোনার টুকরোর কূটকর্ম দর্শন করবেন না? এ্যাই রাহিন এখানে মনিটার সেট কর। ভদ্রলোকের আজ মাথা ঠান্ডা করা কিছু ভিডিও দেখাবো। অবশ্য গরমও হতে পারে। সোনার টুকরোর কৃতকর্ম বলে কথা।

রাহিন লজ্জায় লাল হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সব রেডি ছিল শুধু সংযোগ ঠিকঠাক করে অপেন করলো। প্রথমে আরাফের স্বীকারউক্তি পরে ওর বেশ কিছু এডাল্ট পিকচার আর ভিডিও। ভিডিও দেখে কারো মুখ আর উঁচু নেই। মাথা নিচু করে আছে। শ্রাবণ নির্বাকভাবে চেয়ে আছে কাশেম আলীর দিকে। ভদ্রলোক ছেলের দিকে তেড়ে গিয়ে জুতা খুঁলে মারতে চাইলো। কেউ আটকানোর চেষ্টা করছে না দেখে মারলোনা। মুখের সামনে হম্বিতম্বি করে জুতা নাচিয়ে বাকাবকি করছে। শ্রাবণ হাসলো। ভদ্রলোকের মতিগতি বোঝা শেষ। ভাবছে শাসনের নাম করে নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরিকল্পনার মধ্যেতো সেটা পড়েনা। শ্রাবণ আজিম হককে উদ্দেশ্য করে বলল,

> দুজন মেয়ের মা*র্ডার কেসের চার্চশির্ট লিখতে হবে পারবেন না? নয়জন মেয়ের লিখিত অভিযোগ,উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ সবটা আছে। আরও কিছু লাগবে? লাগলে বলুন ব্যবস্থা করছি। এর পর কি করতে হবে বাকীটা আশাকরি বলতে হবে না?

আজিম হক শ্রাবণের কথা শুনে হাসলেন। একজন বড় মাপের পুলিশ কর্মকর্তা ইতিমধ্যে উনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেসটা নিয়ে গড়মিল করলে ঝামেলা আছে। উনি এগিয়ে যেতেই আরাফের চাচা এগিয়ে আসলেন। ভদ্রলোক থেমে থেমে অনুরোধ করলেন,

> দেখো যা হয়েছে বাচ্চামো থেকে হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিতেছি এমন আর হবে না। ঝামেলা এখানে মিটিয়ে ফেলো। শ্রাবণ বিষয়টা তো তোমার নিজের না। এর মধ্যে তুমি মাথা ঘামিওনা।

শ্রাবণ মেজাজ হারালো। এতোক্ষন শান্ত ছিল। ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তর দিলো,

> দুজন মেয়েকে আ*ত্ম*হত্যা করতে বাধ্য করাকে আপনার বাচ্চামো মনে হচ্ছে? আপনাকে থানার সেক্রেটারি কে করেছে মশাই? আইনের আ জানেন না আবার থানার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। আইন কি আপনার বাপ দাদার সম্পত্তি? এভাবে চুমকো দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবেন? বিশটা মেয়ের মধ্যে একজন আমার অতি আপনজন। বে*জ*ন্মার জন্য দরদ উথলে পড়ছে।মেয়েগুলোকে ট্রাপে ফেলে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেগুলোকে বাচ্চাদের কাজ বলে? আপনার মেয়ের সঙ্গে যদি আমি এমন করি আপনি চুপ থাকবেন? আমার ভাষাগত সমস্যা আছে। দয়াকরে আর আ*বা*লের মতো কথাবার্তা বলবেন না।

আজিম হক ইশারা করলো থেমে যেতে বাকিটা উনি দেখছেন। কিছু সাংবাদিকেরা ঠিক পেয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে। শ্রাবণ এখানে কাউকে আসার অনুমতি দিলোনা। ঝামেলা আছে। রাহিন সেটা দেখছে। আজিম হক প্রমাণ সংগ্রহ করে আরাফকে নিয়ে বের হলেন। অনেক অনুরোধ করেও আটকানো গেলোনা। শ্রাবণ কৌশলে ঠিক লিজা আর আলোকে বাঁচিয়ে নিলো। ঝামেলা শেষ করে আলোদের কক্ষে প্রবেশের পূর্বে বাসা থেকে ফোন আসলো। বাড়িতে বিপদ। এখুনি যেতে হবে। শ্রাবণ হন্তদন্ত হয়ে আলোকে নিয়ে বের হলো।

চলবে