শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
648

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
অন্তিম পর্ব

মানুষের পাপের পরিমাণ যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন তার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। মানুষ ক্ষণস্থায়ী প্রাণী,পৃথিবীতে এদের আগমন ঘটেছে কিছু সময়ের জন্য অথচ পার্থিব ভোগ বিলাসে অন্ধ হয়ে এরা কতকিছু করে ফেলে।ক্ষমতা,অর্থ বা রূপের অহংকারে নিরীহ মানুষের উপরে এরা অত্যাচার করে। আলোর ফোন পেয়ে লোকেশন জানতে শ্রাবণের কয়েক মিনিট লেগেছে। শহরের উত্তরে পুরাতন কালী মন্দীরের পেছনে একটা পরিত্যক্ত গ্যারেজ আছে। আলোর লোকেশন ওখানে দেখাচ্ছে। শ্রাবণ রাহিনকে নিয়ে ওখানে ছুটলো। পেছনে অমি ছিল সে স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে সবটা বলে দিলো। ওদের পৌঁছাতে আধা ঘন্টা লেগেছে। গাড়ি চলছে হাওয়ার গতিতে। জোড়া পুকুরের কাছে গাড়ি থামিয়ে শ্রাবণ কারো সঙ্গে কথা বললোনা। দৌঁড়ে গিয়ে দরজায় লাথি বসাতে শুরু করলো। বুদ্ধি করে যে সাটার উঠাতে হবে ওইটা ভুলে গেছে। রাহিন এসে তুললো। বকুল গাছের নিচে কয়েকজন ছেলে বসে ছিল ওরা উঠে আসলো। সকলের হাতে লা*ঠি। শ্রাবণের হাতে কিছু নেই। কোনোরকমে দরজা খুঁলে ভেতরে এসে মাস্ক পরা ছেলেটার মুখ বরাবর ঘু*সি বসিয়ে দিলো। লোকটা ছিঁটকে পড়ে উঠতে পারলোনা আবারও মারলো। শ্রাবণ হুঙ্কার ছাড়লো,

> কু*ত্তার বাচ্চা খুব কানামাছি খেলার সখ হয়েছে তাইনা? আমাকে চিনতে তোর ভুল হয়েছে। এবার ঠিকঠাক চিনবি। এমন হাল করবো ম*রার পরেও আমাকে তুই ভুলতে পারবিনা।

শ্রাবণ পরপর অনবরত লা*থি চ*ড় থা*প্পড় লাগিয়ে পাশে রাখা লাঠিয়ে উঠিয়ে লোকটার কপাল বরাবর জোরে দুইটা আঘাত করলো। ফিঁনকি দিয়ে র*ক্ত ঝরছে। বাইরে পুলিশ এসে গেছে। যে যেভাবে পেরেছে দৌঁড়ে পালাচ্ছে। শ্রাবণ থামলোনা। দ্রুত গতিতে টেবিলের উপরে রাখা ইনজেকশন তুলে নিয়ে লোকটার হাতে ঢুকিয়ে দিলো। রাহিন দৌঁড়ে এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করলো,

> পাগল হয়েছিস? মরে যাবে ছাড়। পুলিশ এসেছে। ভাবিকে হাসপাতালে নিতে হবে।

শ্রাবণ থামলোনা। ছেলেটা গড়াগড়ি করছে। এখনো মুখে মাস্ক দেওয়া আছে। শ্রাবণ গিয়ে সেটা টেনে খুঁলে নিলো। ঝটকা লাগার মতো অবস্থা।চরম অবাক হলো দুজনে । এটা মিতুর সৎ ভাই রাহাত। পাক্কা নে*শাখোর পাতি ম*স্তান। কিন্তু এসবের সঙ্গে জড়িত সেসব কেউ জানতোনা। শ্রাবণ গিয়ে ওর জেল দিয়ে সেট করা চুলগুলো মুঠোয় পুরে নিয়ে টেনে তুলে বলল,

> বাপ ঘুসখোর আর ছেলে নেশাখো চমৎকার কম্বিনেশন। তোর জন্মের যে ত্রুটি আছে সে তোর মুখ দেখে বুঝেছি। এখন বাপ ছেলে জেলে গিয়ে আয়েশ করবি। মুখ ঢেকে পাপ করলে বুঝি পাপ শরীরে লাগে না? শা*লা।

শ্রাবণ ভয়ঙ্কর গালি দিয়ে পূণরায় লা*থি দিলো। রাহাত উল্টে পড়লো গাড়ির উপরে। পুলিশ তখন ভেতরে আসলো। শ্রাবণ ওকে ছেড়ে আলোকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। পাশে নাইলনের দড়ি পড়ে আছে। আলোর মুখটা চুপসে আছে। হাতে কালচে দাগ,র*ক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। এলোমেলো চুল। অচেতন হয়ে পড়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে বুকের মধ্যে মুচড় দিয়ে উঠলো। অপেক্ষা করলোনা কোলে তুলে নিয়ে বাইরে ছুটলো। পুলিশ বাকীটা দেখবে। রাহিন গিয়ে গাড়ি ছাড়লো। অনি এখানে থেকে সবটা ভিডিও করছে। আলোকে গাড়িতে তুলে শ্রাবণ ওর কামিজের গলা হতে ক্যামেরা খুলে নিলো। রাহিন পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,

> মুখে পানির ছিটাফোঁটা দিলে ভালো লাগবে। বাড়িতে কি বলবি? আন্টিকে বলবো?

শ্রাবণ ওর এড়িয়ে গিয়ে পানির বোতল নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,

> ওকে ড্রাগস দেওয়া হয়েছে। সহজে জ্ঞান ফিরবেনা। কু*ত্তা বাচ্চাদের আমি খু*ন করবো। হা*রা*মির বাচ্চার পেছনে কে কে আছে সবগুলোকে বের করবো। পাশের রুমে ওদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে?

> হয়েছে তবে পরিচয় পাওয়া যায়নি। মফস্বলের ভিবিন্ন জায়গা থেকে ওদেরকে তোলা হয়েছে। কিছু নে*শা*খোরদের বড় অংকের টাকা দিয়ে এসব মেয়েদের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। হয়তো পাচারের জন্য আনা হয়েছে।

শ্রাবণ আলোর মুখে পানি ছিটিয়ে কাঁধের সঙ্গে মাথা রেখে বলল,

> রাহাত একা না এখানে বড় কোনো মাথা আছে। ওই মাথাটা আগে কাঁ*টতে হবে। দেশপ্রেমী সেজে রাষ্ট্রের মাথায় চড়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আঙুল নাচানো বক্তার মুখে আমি আ*গুন দিব। রেবা মা*র্ডার সাধারণ কোনো রেপ কেসের মতো না। এর পেছনে কাহিনী আছে। কেউ একজন বিগড়ে যাওয়া ছেলেদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। মুখোশ পরা এসব কু*ত্তাদের মুখোশ খুলতে যা কিছু করতে হয় আমি করবো। সব বাপের তালুকে বসে জমিদারি করছে ভাবছে না? খানিকটা সময় লাগবে জাষ্ট।

শ্রাবণের মুখ খুঁলে গেছে । অকথ্য ভাষায় যা ইচ্ছা বলতে শুরু করলো। রাহিন আজ ওর কথায় সাড়া দিচ্ছে। শ্রাবণ আলোকে নিয়ে পেছনের গেট দিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করলো। আগে থেকে সবটা রেডি ছিল অসুবিধা হলো না। আলোকে বেডে রেখে পাশে বসলো। ডাক্তার আছে অতিরিক্ত হিসেবে লিখন এসেছে। ওকে রাহিন টেক্সট করেছিলো। আলোকে তাড়াতাড়ি সেলাইন লাগিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হলো। নার্ভ দুর্বল নিশ্বাস পড়ছে খুব ধীরগতিতে। লিখন ব্লাড টেষ্ট করতে পাঠিয়ে দিলো। রিপোর্ট আসা অবধি অপেক্ষা করতে হবে। শ্রাবণের ফোনে অনবরত ফোন আসছে। ওদিকে আলোর মুখোশে ভিন্ন এক মেয়েকে পুলিশে আটক করেছে। শ্রাবণ আপাতত সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না। প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার ঘন্টা দুই পরে রিপোর্ট আসলো। শ্রাবণ স্থির নেই। বারবার ডাক্তারের সঙ্গে ঝামেলা করছে। ইকবাল মাহমুদকে ফোন দিয়ে আসতে বলে লিখনের সামনে গেলো। ছেলেটা মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট দেখছে। কয়েক সেকেন্ড পর শ্রাবণ প্রশ্ন করলো,

> কি সমস্যা বলবি? জানি ড্রাগস প্রয়োগ করেছে কিন্তু কি ধরণের সেটা বল।

লিখন গম্ভীর বেশ। আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

> দোস্ত শান্ত হয়ে শোন তারপর রিয়েক্ট করিস। ভাবিকে অভার ডোজ ড্রাগস দেওয়া হয়েছে এটাতো জানিস? কিন্তু ওকে যে ধরণের ড্রাগস দেওয়া হয়েছে ওটা কোনো সাধারন ইয়া*বা কিংবা হে*রো*ইন না।ভয়ংকর এই ড্রাগসের নাম ফ্লাকা। ফ্লাকা হচ্ছে নতুন ধরণের একটি সিনথেটিক ড্রাগ। এর পোষাকি নাম আছে যেমন সালভা, স্পাইস, ফাইভ ডলার ইনস্যানিটি ইত্যাদি। ফ্লাকার বড় ভাই হলো বাথ সল্ট (Bath sault) নামক আরেকটি ড্রাগ। যা ২০১১ সালেই ব্যান হয়ে যায়। বাথ সল্টের ওপর আরো অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর চেয়েও অনেক শক্তিশালী একটি ড্রাগস আবিষ্কৃত হয়, এবং তা পরবর্তীকালে ফ্লাকা নামে পরিচিতি লাভ করে। ফ্লাকা’র উৎপত্তি যে যৌগটি থাকে তার নাম হলো- আলফা পিভিপি (alpha-PVP). এ্যামফিটামিন থেকে উৎপন্ন হতো ভয়ংকর ড্রাগ বাথ সল্ট, সেই এ্যামফিটামিনেরই নতুন রূপ হলো আলফা পিভিপি, যার ক্ষমতা পূর্বসরীর চেয়ে অনেক বেশি। বাথ সল্টের ইনগ্রিডিয়েন্ট এ্যামফিটামিন ২০১১ সালে ব্যান হলেও ফ্লাকার ইনগ্রিডিয়েন্ট আলফা পিভিপি অনেকদিন পর্যন্ত ব্যান হয় নি। তাই প্রোডাকশন চলেছে। এখনও অবশ্য ড্রাগস হিসেবে তেমন পরিচিতি লাভ করে নি ফ্লাকা, অনেক দেশে এখনও ব্যবহার শুরু হয় নি। শুরু হলে যে কী হবে তা আমাদের কল্পনাতীত। এটা আমাদের দেশে একদম নতুন।

শ্রাবণের চোখ গোলগাল হয়ে গেলো। জিঞ্জাসা করলো,

> এতে ভুক্তভোগীর কি কি সমস্যা হতে পারে? মানে আলো ঠিক হবে তো?

> উদাহরণ দিয়ে বলি, তোর মুখে গুলি লেগেছে। রক্তক্ষরণে মারা যেতে পারিস এমন অবস্থা। কিন্তু এটা নিলে তুই কোনো ব্যথা আর অনুভব করতে পারবি না। হয়ে যাবি সুপার হাইপার। ভুতে পাওয়া ব্যক্তির মতো পিঠ ধনুকের মত বাঁকা করে উলটো হয়ে হাঁটবি, আর ক্রমাগত অর্থহীন কথা বলতে শুরু করবি।সব হয়ে থাকে ফ্লাকার (Flakka) ওভারডোজে। কিন্তু ভাবির শরীরে দুই ধরণের ড্রাগস প্রয়োগ হয়েছে। একটা অতিরিক্ত পাওয়ারফুল আর অন্যটি দেশীয় কোকেন। মানতে তুই বাধ্য ফ্লাকার ভয়াবহতার কাছে বর্তমানে প্রচলিত ভয়ংকর ড্রাগসগুলোর ক্ষমতা একদম নস্যি।এটি কোকেনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষমতাধর। ভাবির বয়স অনুযায়ী এই দুইটা ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি। ফলাফল হিসেবে ও অচেতন হয়ে পড়েছে। জ্ঞান ফিরবে কিন্তু দুঃখজনক ভাবির মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করবে না। হয়তো তোকে চিনতে নাও পারে। অদ্ভুত আচরণ করবে। লাইফ রিস্ক আছে। জ্ঞান ফিরবে কতক্ষণে বলা যাচ্ছে না। অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই। কেস টা খুবই ভয়ংকর। এধরণের ড্রাগস বাংলাদেশে কিভাবে এসেছে জানিনা তবে এর পেছনে ছোটখাট কেউ নেই।

শ্রাবণ মাথায় হাত রেখে বসে পড়লো। আলোর মুখটা ডান দিকে কাত হয়ে আছে। নিশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে তাই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শ্রাবণ দুহাতে মাথার চুলগুলো টেনে বলল,

> ও বাঁচবে কি এইটুকু ভরসা দে। বাকীটা আমি দেখে নিবো।

লিখন ওর মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,

> ইনশাআল্লাহ ভাবি সুস্থ হয়ে উঠবে। জাষ্ট একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। আমরা চেষ্টা করবো। বাকীটা ওর নিয়তি।

শ্রাবণ তেড়ে উঠলো। ওর হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,

> একদম মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে আসবিনা। আমি বাচ্চা না। আমার মেয়েটা এতিম হয়ে যাচ্ছে অথচ আমি কিছু করতে পারছি না।

শ্রাবণ উন্মাদ প্রায়। বাড়িতে ঘন্টা খানিকটা আগ অবধি জানতোনা। কিন্তু কথাটা আর চাপা নেই। বিভিন্ন রিপোর্টার গিয়ে উল্টোপাল্টা রিপোর্ট করছে। অনলাইন অফলাইন সবখানে এখন হট টপিক আলো কিডন্যাপ। গ্রাম থেকে লোকজন এসে জুটলো হাসপাতালের বারান্দায়। লিমা বেগম ইশাকে নিয়ে ছুটে এসেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রতন নতুন বউকে নিয়ে এসেছে। বাইরে বসে দুজনে খোশমেজাজে গল্প করছে। রাহিন এদিক ওদিক দৌঁড়ে চলেছে। শ্রাবণ বসে ছিল হঠাৎ ওর বড় চাচি গিয়ে বলল,

> শ্রাবণ বাবা, আমার লাষ্ট একটা কথা শোনো। দয়াকরে তুমি আলোকে ত্যাগ দাও। বুঝতে পারছি মেয়েটার দোষ নেই কিন্তু একটা দিন এভাবে পর পুরুষের নিকটে ছিল। লোকজন আর সমাজ আমাদের দিকে আঙুল উঠাবে। বাড়িতে ছোট বাচ্চারা আছে। ওদের বিয়ে দিতে হবে। লোকজন খারাপ বললে কেমন লাগবে? বাবা ওকে ওর ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দাও।

শ্রাবণ শান্ত মস্তিষ্ক বেশিক্ষণ শান্ত রাখতে পারলোনা। তবে মেজাজ হারালোনা। ওষ্ঠ কামড়ে উত্তর দিল,

> আপনি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের পরিবারের সব ছেলেদেরকে ডাবল বিয়ে করাবেন? সমাজ লোকজন ওসবের তোয়াক্কা শ্রাবণ করেনা। সম্মান নিয়ে আর অহংকার করতে আসবেন না। আমার মাথা ঠিক নেই। আপনাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে মন সাড়া দিচ্ছে না। আপনি বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করুন।

ভদ্রমহিলা রেগে উঠলেন। ধমক দিয়ে বললেন,

> তোমাকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি। সামান্য মিতুর বিয়েকে কেন্দ্র করে তুমি আমাকে অপছন্দ করতে শুরু করলে। অথচ আমি আজীবন তোমার ভালো চেয়ে এসেছি। বদনাম নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কিভাবে সংসার করবে শুনি?

শ্রাবণ নিরুত্তাপ ভাবে চেয়ে থেকে বলল,

> একটা অচেনা অজানা মেয়েকে বাচ্চাসহ বিয়ে করার মতো ক্ষমতা থাকলে নিজের স্ত্রীর কলঙ্ক আমি ঠিক মাথায় নিয়ে চলতে পরবো। আপনি অযথা আমাকে নিয়ে ভাবছেন। আমি আলোকে ওর ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো তবে সেটা আপনার জন্য না। এটা আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

শ্রাবণ অপেক্ষা করলোনা। বেরিয়ে আসলো। ফায়জুকে ফোন করে বলে দিলো আলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
**********
ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। আলোর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু কাউকে চিনতে পারছেনা। অদ্ভুত আচরণ করছে। নিজের শরীর নিজে খামচে ধরছে। ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ফায়জু আর বীণা বেগম এসেছে আলোকে নিয়ে যেতে। লিমা বেগম রাজি হচ্ছে না। বরং শ্রাবণকে ধমক দিলেন,

> আলো এখানে আমার কাছে থাকবে। আমি ওর দেখাশোনা করব। তুই কেনো ওকে পাঠিয়ে দিতে চাইছিস? কি সমস্যা তোর?

শ্রাবণ পাত্তা দিলোনা। আলোকে গাড়িতে তুলতে দিলো। ইশার কপালে চুমু দিয়ে বলল,

> ওকে যেতে হবে মা। অযথা ঝামেলা করোনা। এখন থেকে ও ফায়জুর সঙ্গে থাকবে। ওখানকার কলেজে ভর্তি হবে। ইশাকে দেখতে ইচ্ছা হলে দেখে এসো কিন্তু দয়াকরে আলোকে এখানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করোনা। আমার কথার বাইরে গেলে ফল ভালো হবে না।

লিমা বেগম দমে গেলেন।শ্রাবণ যখন বলেছে তখন আলোকে এখানে রাখা যাবেনা। উনি সরে গেলেন। বীণা বেগম গ্রাম থেকে একজন কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছেন। আলোকে ঢাকা মেডিকেলে কিছুদিন রাখতে হবে তারপর বাসাই নিয়ে যাবেন। শ্রাবণ আজ কঠোর। কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। আলোকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে দিয়ে কেবিনের নির্জন কক্ষের দরজা বন্ধ করলো। অচেতন অবস্থায় আলো জানতেও পারলোনা শ্রাবণ নামক মানুষটার নিকট হতে ওকে কতটা দূরে যেতে হচ্ছে। কখনও আর স্বামীর গৃহে ফিরতে পারবে কি ওটাও অজানা। ফায়জুকে সরকারি কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছে আলো সেখানে থাকবে। গাড়ি প্রধান গেট হতে বেরিয়ে যেতেই অন্য একটা গাড়ি এসে ভেতরে প্রবেশ করলো। গ্রাম থেকে মিতু এসেছে। নিকটস্থ শপিংমলে একটা দোকান ভাড়া নিয়েছে সেখানে ফ্যাশন হাউজ তৈরির কাজকর্ম চলছে। আজ থেকে ও এখানে থাকবে সেটা শ্রাবণের বড় চাচি ইকবাল মাহমুদের থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়েছেন। সবটা যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। কেউ কারো স্থানে নেই। শহর জুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে। আলো নিভুতে বসেছে।যে যার মতো স্বার্থের পেছনে ছুঁটে চলেছে।

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। জানি এলোমেলো হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো। নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছি আমার জন্য দোয়া করবেন। সময়টা আমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। লেখালেখিতে বেঁচে থাকলে ফিরতে পারবো। মানিয়ে নিতে আর নিজেকে বোঝাতে আমার সময়ের প্রয়োজন। আমি ঠিকমতো লেখাতে মনোযোগ দিতে পারছিনা।