শানুর সংসার পর্ব-১১

0
368

#শানুর_সংসার (১১)

স্ত্রী শানুর সামনে প্রেমিকা মেহুকে নিয়ে কখনো মুখোমুখি হতে পারে, এমন চিন্তা কখনো আসিফের মাথায় আসেনি। অতি সাবধানে বর্ণচোরা সেজে দুটো জগতকে সে আলাদা করে রেখেছে। মেহু শানুকে চেনে। তবে, শানুর কছে মেহু অপরিচিত। কোলের শিশুটিকে আসিফ এর ভেতর আয়ার কাছে দিয়ে দিয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সে কিছুটা হতচকিত। প্রেমিকাকে কি পরিচয় দেবে ভেবে পেলো না। শানুর অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টিতে আসিফের প্রতি এক রাশ অভিযোগ। যে মহিলা চোখ তুলে কথা বলতে ভয় পেয়েছে, আজকে তার পরিষ্কার নজরকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আসিফের নেই।

মেহু আধুনিক মহিলা। বিবাহিত পুরুষ আসিফের সাথে সম্পর্ক নিয়ে মেহু মোটেও বিচলিত নয়। তার সমাজ বা সোসাইটিতে এটা অন্তর্বাসের ন্যায় নিত্য দরকারী বা প্রয়োজনীয় সাধারণ বিষয়। মেহু তাই আসিফর হয়ে উত্তর দিলো,

‘আমরা লিভ ইন রিলেশনশিপে আছি, অনেক বছর। এটা আমার বাচ্চা, আসিফের না। তুমি বোধ হয় শানু। আসিফের কাছে অনেক শুনেছি। টিপিক্যাল হাউজওয়াইফ হয়ে পুরুষকে বেঁধে রাখা যায় না, শানু। বি স্মার্ট, আসিফ আমার কাছ থেকে প্রচুর সুবিধা পায়। তোমাদের প্রাচুর্য, সাংসারিক খরচ সহ আরো অনেক কিছু। আসিফ আমার বাচ্চাকে আদর করে। বয়স হলেও হি ইজ মাচ মোর একটিভ ইন মাই বেড দ্যান আ ইয়াং ম্যান। কিছু মনে করো না। আমরা একে অন্যের প্রয়োজন পূরণ করছি। ‘

আসিফ শানুর হাত ধরে ছিলো, স্বামীর হাত ছাড়িয়ে শানু ছুটতে শুরু করে। তার কান ঝা ঝা করছে। শরীর রিরি করে উঠেছে। বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু যেনো সমস্ত শরীরে কিলবিল করে হেঁটে চলেছে একত্রে। রক্তচোষা জোক তার কলিজায় কামড়ে কামড়ে খুবলে খাচ্ছে বিশুদ্ধ লৌহকনিকাদের। শানু সারা শরীরে হাত দিয়ে ঝেড়ে ঝেড়ে অদৃশ্য কীটদের ফেলতে থাকে। শানু চিৎকার করতেও পারে না। প্রবল কষ্টে তার কন্ঠ রোধ হয়েছে। এই শরীর মাত্র কিছুদিন আগে আসিফ ছুঁয়ে গেছে। আসিফের স্পর্শ লাগা শানুর শরীর পঁচে যাক। গলে পরুক রাস্তায়। শানুর নিজের কাছে নিজেকে ঘেন্না লাগে, অচ্ছুৎ মনে হয়।

আসিফ শানুর পেছন পেছন ফিউচার পার্কের বাহিরে চলে এলো। শানু রোজীর গাড়িতে ওঠার আগে আবার স্বামীকে দেখে নেয়। মেহু আসিফকে হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো। আসিফ তখনো শানুর দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িতে উঠা মাত্র শিউলি শানুকে জড়িয়ে ধরে। শানু বান্ধবীর হাত ছাড়িয়ে দেয়। তার দু’চোখে অশ্রু টলমল করেও কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসেনি। শানুর মনে পরে, আসিফের প্যান্টে প্রায়ই কনডম পেতো। যে সব ফ্লেভার শানুর সাথে একান্ত মুহূর্তে আসিফ কখনো ব্যবহার করতো না। আসিফের দেয়া প্রতিটি উপহারের কোন প্যাকেট থাকতো না। সেই কবে একটা সোনার চেন পরিয়ে দিয়ে ছিলো শানুকে। শানু যাকাত দেবার জন্যে চেনটা মাপাতে চেয়েছে, আসিফ তাকে অনুমতি দেয়নি। গলায় থাকা চেন এক টানে ছিড়ে ফেলে শানু। রোজী গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারকে আইসক্রিম কিনতে পাঠালো।

‘আমাকে ইচ্ছে করে এখানেই নিয়ে আসলি কেনো তোরা।আসিফের কথা আগে থেকে জানতি?’

শানুর মুখ দেখে মিথ্যে বলার সাহস পায় না রোজী। রাজুর মুখোমুখি সেদিনের পার্টিতে ওরা দু’জনে পরতে গিয়েও পরেনি। আসিফকে ঐ পার্টিতে দেখে রোজী নিজে নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছিলো। প্রিয় বান্ধবীর স্বামীর এত বড় প্রতারণার কথা কাউকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরাসরি শানুকে জানাবার।
‘জানতাম, তোকে কোন মুখে কিভাবে বলবো। তাই, দেখাতে নিয়ে এসেছি।’
‘আমি যদি বুক ফেটে মরে যেতাম?’

শিউলি শানুর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। শানু নরম, শানু কোমল, শানু ভীষণ মায়াবী এক মানুষ। কিন্তু, শানু অক্ষম নয়, শানু দূর্বল নয়। সেই শানুর মুখে মরে যাবার কথা আসছে কেন।

‘এসব কি বাজে কথা বলিস, শানু। মরে যাওয়া এত সহজ নাকি’।
‘বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া আর বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া মনে মরে যাওয়ার সমান। ‘
‘রাজু ভাইয়ার বিষয়টা জানে। তুই ওকে দিয়ে ডেলিভারিতে পাঠিয়ে ছিলি, মনে কর। পার্টিতে আসিফ ভাইকে মেয়েটা সবার সামনে নিয়ে আসে। ‘
‘সম্পর্ক চলছে অনেকদিন ধরে। আসিফ ভাই চাকরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামছেন। জামানতদার হিসেবে ঐ মেয়ে থাকবে। ‘
‘তুই ঠিক জানিস?’
‘আমার জামাইয়ের ব্যাংকে এলো নামকাওয়াস্তে লোনের জন্য। আমি পাশের সোফায় বসে আছি। নরমাল পার্টনারশীপ হলে সবার সামনে মা গী কে চুমু দেবে নাকি?’
‘তোরা সবাই এত কিছু জেনে বসে আছিস। অথচ, আমি কিছু জানি না।’

শানু শীতল কন্ঠে কথা বলে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। শীতাতপনিয়ন্ত্রকের জন্যে জানালা দিয়ে বাইরে দেখা যায় না। ঘোলা গ্লাসে কাটাকুটির খেলা আঁকে শানু। টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রোজী খুব করে বলছে, শানুকে তার বাড়ি আজ রাতটা থেকে যেতে। শানু জানে, তাকে ফিরে যেতে হবে। রাজু, মিশু অপেক্ষা করছে। বাবারা সহজেই বাইরে রাত কাটিয়ে আসতে পারে। বাবারা চাইলে আরেকটা জীবন যাপন করতে পারে। শানু কাটার ঘরে শূন্য বসিয়ে লম্বা করে দাগ টেনে হাতের তেলো দিয়ে খেলাঘর মুছে দেয় শার্সি থেকে। প্রাণ থেকে এমনি করে কাউকে অচির মুছে ফেলা যায় না। জীবন ঠিক কোথা থেকে কেটে দিলে আবার নতুন করে শুরু করা যায়?

আলেয়া আক্তার ঝড়ের বেগে হাতের তসবী ঘোরান। কাশিফ তাকে আগামীকাল রাত্রে নিয়ে যেতে আসবে। ভাইয়ের পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে কাশিফ। আসিফের সাথে ঐ সব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চরম অপমানিত হয়েছে সে। আলেয়া আক্তারকে ফোন করে সেই রাগ ঝেড়েছে। ছোট ছেলের অভিযোগ চুপ করে শুনেছেন তিনি। তার কি বা বলার বা করার ক্ষমতা আছে। আসিফ যা করার করে বসে আছে। এখন সবটা শানুর হাতে।

আসিফ বাসায় ঢুকে মায়ের রুমে বসলো। এখনো, নিজের ঘরে যায়নি। শানু বাড়ি ফিরে আলেয়া আক্তারের সাথে দেখা করতে আসেনি। মিশু এসে চা দিয়ে গেছে। বাটিতে বড় বড় করে ফজলী আম কাটা, তার পাশে সিরিঞ্জ পিঠা ভেজে আখের সিরা দেয়া। আলেয়া আক্তার ছেলের দিকে পিঠা এগিয়ে দেন। আসিফ পিঠা ভেঙে মুখে দিতে গেলে ঝুরঝুর করে পিঠার অংশ পরে যায়। ওদিকে তাকিয়ে আসিফের মনে হলো, এ সংসারে তার সম্মানটাও হয়ত, পিঠার মত খসে পরতে চলেছে। এবার সাবধানী হয় আসিফ। শানুকে বুঝ দিতে হবে৷ মেহুর ওপর দোষ দিয়ে নিজেকে একপাশে নিয়ে গিয়ে দরকারে একটা কিছু ভেবে নেবে। কিন্তু, সমস্যা হলো শানু সামনে আসছে না। আসিফের চা খেতে ইচ্ছে করছে। মেহুর সাথে ডিনার করা বাদ দিয়ে বাসায় ফিরেছে। মেহুর সামনে থেকে বউয়ের পেছনে ওভাবে দৌড়ে আসা মেহু পছন্দ করেনি। আসিফ বসে বসে পা নাচায়। তার টেনশন লাগছে। পরিচিত লোকজন, এত দিনের মান সম্মান, রেপুটেশন সব এই বোকা শানুর জন্য জলের মধ্যে ডুবে যেতে বসেছে।

‘মিশু, বাবাকে চা দিয়ে যাও। ‘ গলা চড়িয়ে দেয় আসিফ। শানু বুঝুক, কোন কিছু ঘটেনি৷ আলেয়া আক্তার শানুকে ডাকতে উঠে যান। আসিফের মুখ দেখতে ইচ্ছা করছে না। রুম্পা তার জন্য দুটো কাজের লোক ঠিক করেছে। শানুকে সপ্তাহে দুই বার কাশিফের বাসায় নিয়ে এদের ট্রেনিং দিতে হবে। কিন্তু, কাশিফের বাসায় তাকে যেতে হবে কেনো। তিনি এখানে থাকবেন। শানু ম্যানেজ করে নেবে।

আলেয়া আক্তারের শানুর ঘর পর্যন্ত যাওয়া লাগলো না। শানু চা নিয়ে এলো। আলেয়া আক্তার দেখলেন, শানুর চুল খোলা। গালে জলের দাগ শুকিয়ে বসে আছে৷ চোখ দুটো টকটকে লাল ভাটার মতো জ্বলছে। তিনি ভয়ে ভয়ে ছেলের বউকে প্রশ্ন করলেন,

‘চুল আচড়াওনি, শানু। আসিফ এসেছে। ওর আসার আগে একটু ঠিক হয়ে থাকবে না?’

আসিফ চায়ে চুমুক দেয়। সব ঠিকঠাক আছে। শানু তার জন্য বানানো চায়ে এলাচ দিতে ভোলেনি।

‘আম্মা, অনেক গুলো ডেলিভারীর অর্ডার এসেছে। আগামীকাল থেকে বাসায় দুইজন মহিলা আসবে। আমার কাজের সহকারী হিসেবে। ‘
‘তুমি না কাজ বন্ধ করে দিবা বললা? আবার অর্ডার নিলা কেনো।’
‘করে দেবে আম্মা। শানুর হাতে হয়ত এসব শেষ অর্ডার ছিলো। ঠিকাছে, এগুলো দিয়ে আর নিও না।’

আসিফ মায়ের কথার ওপর দিয়ে শানুর পক্ষে ন্যায় ঠেলে। শানু এতে খুশি হবে। আসিফ তার জন্য ভাবে এটাও চিন্তা করতে পারে।

‘শেষ না শুরু। আমি ব্যবসায় হাত দিয়েছি। এখন থেকে অর্ডার আসতে থাকবে। ব্যবসা বন্ধ হবে না। ‘
‘বেয়াদবি করবে না শানু। রুমে চলো। ‘

শানু হাত টেনে চুল খোঁপা করে নেয়। আসিফের চা খাওয়া শেষ। শানু আস্তে করে চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলো। আলেয়া আক্তার শানুর দিকে চেয়ে আছেন। শানুকে অন্যরকম লাগছে। চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে শানু কথা শুরু করে।

‘এই যে কাপটা দেখছো, আসিফ। এটা আমার বিয়েতে পাওয়া উপহারের কাপ। ভাঙতে ভাঙতে একটা কাপ পিরিচে এসে ঠেকেছিলো। তুমি উপহার খোলার সময় এই সেটটা দেখে বললে, বাহ! কি সুন্দর। শানু তুমি রোজ আমাকে এই কাপে চা দেবে। গত বিশ বছর ধরে আমি তোমাকে এই কাপে চা দিচ্ছি। নিজে মেজে ধুয়ে চকচকে করে রাখতাম। অন্য কারো হাতে দিতাম না। পাছে, ভেঙে যায়। ‘

শানু হাত থেকে চায়ের কাপ পিরিচ মেঝেতে আঁছড়ে ফেলে দিলো। ঘর ময় কাঁচের ছোট ছোট টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে। আলেয়া আক্তার হায় হায় করে উঠলেন। শানুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷

‘এসব কি করছো, তুমি। এই রাজু, মিশু এদিকে আয়। তোদের মাকে সামলা।’
‘ওরা এমনি ও আসবে, আম্মা। আপনি জানেন না কি হয়েছে?’

আলেয়া আক্তার এবার আঁতকে ওঠেন। গত কয়েক মাস ধরে যে আতঙ্ক নিয়ে তার রাত দিন কাটছে, অবশেষে বুঝি সে ক্ষণ উপস্থিত হলো। শানুর অমন রূপ কি সে জন্যেই?

‘আসিফ, তুমিই বলো কি হয়েছে। আমার মুখে শুনলে, তুমি বলবে, ছোটলোকের ছোটলোকি ভাবনা। তুমি বিশাল বড়লোক মানুষ। বাহিরের মহিলা তোমাকে পয়সা দিয়ে পালে। তার সাথে শোবার বিনিময়ে তুমি রঙ বেরঙের পার্টিতে যাও। নতুন গাড়ি তোমার অফিসের নিচে থাকে। কোথায় কোথায় বেড়াতে চলে যাও। আমি কম শিক্ষিত মেয়েলোক। সংসার ছাড়া কিছু জীবনে বুঝিনি। তোমার পকেট থেকে টাকা নিয়ে সাধ আহ্লাদ পূরণ করেছি৷ তুমি বরং বলার কাজ সারো। এই আমি বসলাম।’

শানু চেয়ার টেনে বসে পরে। তার বুকের ভেতর দামামা বাজছে। সে আওয়াজ বাইরে থেকে শুনবার উপায় নেই। তবে, যদি সত্যি সেখানে মঞ্চের ন্যায় বিশালাকার মাইক লাগানো যেতো, আজ ধরণীর বুকে কষ্ট নামের বজ্রপাতে পুড়ে যেতো গোটা শহর। রাজু এসে শানুর পাশে দাঁড়ালে আসিফ ঠোঁট চাটে। ছেলে মেয়ে সব মায়ের পক্ষে এক জোট হয়েছে। আলেয়া আক্তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকান।

‘হয়েছেটা কি। আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। মানুষই তো ভুল করে নাকি।’
‘কি ভুল করেছো বাবা? এ বয়সে স্ত্রী সন্তান রেখে আবার বিয়ে করে বাচ্চা জন্ম দেয়া কোন ভুলের পর্যায়ে পরে?’

মিশু কাঁদছে। তার ভয় হচ্ছে। স্কুলের এক মেয়ের বাবা আরেকটা বিয়ে করায় তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। ওরা এখন বস্তিতে থাকে। মেয়েটা গার্মেন্টস এ কাজ করে। মিশুর সাথে দুই দিন রাস্তায় দেখা হয়েছে৷ মিশুরা কোথায় গিয়ে থাকবে? কি খাবে? মায়ের সাথে বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে কে ওদের ভরনপোষণ করবে।

‘বিয়ে করিনি। রাজু, তুমি যাও। আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলবো।’
‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে কি কথা বলবে সেটা তোমার বিষয়। আমার মায়ের সাথে কথা বলতে হলে, আমার সামনে বলবে।’
‘ চড়িয়ে তোমার দাঁত ফেলে দেব, বেয়াদব। শানু, এই শিখিয়েছো ছেলেকে।’
‘তোমার ছেলে বেয়াদব হয়েছে, এ তো কম বাবা। তোমার মতো দুশ্চরিত্র হয়নি।’

শানু রাজুর হাত চেপে ধরে। মিশুর সামনে এসব কথা বলা ঠিক হচ্ছে না। মিশু দাদীকে জিজ্ঞেস করে, আসিফ কি করেছে। আলেয়া আক্তার বললেন,

‘তোমার মা ভালো জানে।’
‘আপনি জানেন না, আম্মা? কাশিফ আপনাকে, রুম্পাকে সব বলেছে। সবাই সবটা জানেন। আমি আসলেই বোকা। এতদিনে জানতে পারলাম। শোন, মিশু তোর বাবার আরেকটা সংসার আছে। ওখানে বউ বাচ্চা আছে। ‘

মিশু কাঁদতে কাঁদতে দেয়ালের কোনায় বসে পরে। স্কুলে সবাই এবার তাকে নিয়ে হাসবে। মজা করবে। মহল্লায় বেরোলে লোকে আঙুল তুলে দেখাবে।

‘আমার এখন সত্যি বোরখা পরতে হবে, বাবা। মুখ লুকিয়ে না চললে, সবাই তোমার কথা জানতে চাবে। ‘

আসিফ মিশুর কথার উত্তর দিতে পারে না। সবার চোখে শানু এভাবে তাকে দোষী বানিয়ে তুলেছে। সব প্রি প্লান করে রাখা। আসিফ এবার গর্জে ওঠে।

‘চুপ, একদম চুপ। একটা কথাও আর কেউ বলবে না। রাজু যাও। মিশু তুমিও যাও। শানু ঘরে চলো। তোমার সাথে আলাদা করে কথা আছে।’
‘কোন ঘরে যাবে, আসিফ। কার ঘর?’
‘কার ঘর মানে? আমার ঘর, আমার ঘরে চলো।’
‘আমার ঘর কোনটা তাহলে।’

আসিফ এবার শানুর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। শানু প্রায় পরে যেতে যেতে উঠে দাঁড়িয়ে আসিফের কলার চেপে ধরে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে স্বামীকে ঝাঁকড়ায়,

‘এটা আমার ঘর। এটা আমার সংসার। এখানে তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। এই ঘরের প্রতিটা কোন আমি সাজিয়ে তুলেছি। তুমি কি করেছো, আসিফ? মাস শেষে চাল আর তেলের পয়সা দিয়েছো। ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ দিয়েছো। আর বাসা ভাড়া জুগিয়েছো। আমি কি দিয়েছি, জিজ্ঞেস করবে তো? আমি আমার বিশ বছরের জীবন এই সংসারে দিয়েছি। তোমাকে করা অগাধ বিশ্বাস দিয়েছি। তোমার সন্তান গর্ভে নিয়ে শরীরের রক্ত মাংস এক করে তাদের জন্ম দিয়ে বড় করেছি। তুমি আবারো পয়সা দিয়ে গেছো। আমি তার কানা কড়ির হিসেব দিয়ে তোমার কাছে বিশ্বস্ত থেকেছি। আজকে তুমি কি না আমাকে এক টানে সবার সামনে বিবস্ত্র করে দিলে? ‘

‘কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো, শানু। বিবস্ত্র হলে কোথায়। পুরুষ মানুষের বয়স হলে পরিবর্তন দরকার হয়। এক বাসী ডাল ভাত খেতে কত আর ভালো লাগে। তুমি সপ্তাহ শেষে আমাকে বাসায় রেখে মার্কেটে যেতে না? তোমাকে কোনদিন মানা করেছিলাম? তোমার শখ আর আমার শখ আলাদা। আমার মতন একটা পুরুষ মানুষের আলাদা চাহিদা আছে। তুমি এসব বুঝবে না। এটা খুব নরমাল শানু। এখন হাই সোসাইটির ট্রেড এসব। তুমি কুয়োর ব্যাঙ, কুয়োতে থাকো।’

(চলবে)