শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৬

0
2916

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-৬…..?

?

পরের দিন সকালে জানালার পর্দা ভেদ করে আসা রোদের আলোটা আমার মুখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। মাথাটা কেমন ভারি ভারি লাগছে। চোখ মেলে তাকাতেই আমি কিছুটা অবাক হলাম। এটা তো তাসিনের রুম এখানে আমি কি করে এলাম!! হঠাৎ করেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো আমার আমি তো শিরির পাশের ওই রুমটাতে ছিলাম তাসিনের সাথে।
তখনি পাশে থেকে তাসিনের গলা শুনতে পেলাম।
..এই যে ম্যাম কি এতো ভাবছেন হুমম?কেউ যে পাশে বসে আছে সেদিকে একটু তাকান। এমনিতে কাল রাতে যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।
তাসিনের কথায় আমার ঘোর কাটলো আমি ডানদিকে ঘুরে তাকাতেই তাসিনের হাসি মুখটা দেখতে পেলাম।
..আপনি এখানে কেনো?
..যাহ বাবা বলে কি এ মেয়ে!!আমার রুম আমার বিছানা দখল করে বলছে আপনি এখানে কেনো। এইজন্যই কারো উপকার করতে নেই।
..কি উপকার করেছেন আমার!!আর আমি আপনার রুমে ঘুমাচ্ছিলাম কেনো?
..কাল রাতে তো সেন্সলেস হয়ে আমার বুকেই লুটিয়ে পড়লি জানিস কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি!! জোরে জোরে তোকে ডাকছিলাম কিন্তু কোনো সারা পাইনি। ভয়ে আমার কলিজাটা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
আমি যে তো…..
তাসিন ভাইয়া আরো কিছু বলতে নিলে মা আর খালামনি রুমে ঢুকলো উনি আর কিছু না বলে থেমে গেলো।

. ?

মা আর খালামনি দুজনে আমার পাশে বসলেন মা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন
..মেঘা এখন কেমন লাগছে শরীর ঠিক লাগছে এখন??
আমি কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না,এমনিতেই তাসিনের রুমে আছি তার উপর আবার মা এ কথা বলছে। তাহলে কি তাসিন সব বলে দিয়েছে সবাইকে??
আমি কিছু বলছি না দেখে খালামনি বললো
..মেঘা তুই কিরে হ্যা রাতেও কি তোর বাচ্চাদের মত ছুটতে হয়? কি করতে গিয়েছিলি ওই রুমে? তাসিন যদি ওদিকটাতে না যেতো তাহলে তুই ওইখানেই পড়ে থাকতি।
মা বলে উঠলো
..কি হয়েছিলো রে মেঘা,হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলি কেনো ভয় পেয়েছিলি কিছু দেখে??

মা খালামনি তো একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে কি উত্তর দিবো এদেরকে? অসহায় দৃষ্টিতে তাসিনের দিকে তাকালাম। ওমা উনি দেখছি মিটমিট করে হাসছে!!উনার এমন হাসি দেখে কিছুটা রাগ হচ্ছিলো আমার।
উনার জন্যই তো এমন টা হয়েছে আর এখন আমার এই করুন অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছেন উনি। আমারো সুযোগ আসবে তখন আমিও মজা নিবো হুহ।

তাসিন নিজের হাসি হাসি মুখটা একটু কালো করে মা আর খালামনিকে বললো,,,,
..আচ্ছা মা তোমরা কি করছো হুম এখনি সব জানতে হবে তোমাদের? দেখছো না মেঘা চুপ করে আছে হয়তো কথা বলতে ভালো লাগছে না।
..ঠিকআছে পরে শুনে নিবো মেঘা তুই রেস্ট কর। মা বললো।
..মা আমি এখন ঠিকআছি।
তখনি খালামনি বললো
..কোনো কথা নয় চুপচাপ শুয়ে থাক শরীরের কি অবস্থা করেছিস সে দিকে খেয়াল করেছিস।

এতো পড়লাম আর এক বিপদে আমি এখানেই শুয়ে থাকবো নাকি!! খালামনিকে বললাম…..আচ্ছা রুমে গিয়ে রেস্ট করি এটা তো ভাইয়ার রুম। খালামনি চোখ পাকিয়ে বললেন
..তাতে কি হয়েছে তাসিন কি তোকে খেয়ে ফেলবে আর ও তো একটু পরেই বেড়িয়ে যাবে।
খালামনি আর মা চলে গেলো আমি বোকার মতো ওদের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। তখনি তাসিন আমার মাথায় একটা চাটি মেরে আমার গা ঘেষে বসে পড়লেন।
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি একটা চোখ টিপ মারলো। আমি একটু সরে এসে বসতে নিলে উনি আমার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো। হঠাৎ এভাবে ছোয়াতে কিছুটা কেঁপে উঠলাম।
..কি করছেন ভাইয়া! ছাড়ুন আমাকে।
উনি আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে
..উহু আমাকে আর কখনো ভাইয়া বলবি না কেমন।
আমি উনার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে নিলাম। মাথা নিচু করেই বললাম।
..আচ্ছা মা খালামনিকে কি বলে বুঝিয়েছেন আপনি?
..কি আর বলবো,,,তোর মা মানে আমার খালামনিকে বলছি খালামনি তোমার মেয়ে আমাকে হারানোর বিরহে কাতর হয়ে পড়েছিলো তাই তো ওর আজকে এই অবস্থা। বাকা হেসে বললো।
আমি রাগি চোখে তাকালাম উনার দিকে
..আরে আরে আমার মেঘকন্যা যে রেগে গিয়েছে। উফফ মেঘা তোর এই রাগি ফেসটাকে কি দারুন দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।

এবার আমার চরম রাগ হয়ে গেলো নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে দুরে সরে আসলাম রেগেই বললাম
..আপনি কি আসল কথাটি বলবেন??
..ওকে ওকে বলছি এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো,,,,,,,,কাল রাতে তোর ওমন অবস্থাতে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই মাকে আর খালামনিকে ডেকেছিলাম। আমার মায়ের তো ডাক্তারি বিষয়ে কিছুটা ধারনা আছে। মা কি যেনো একটা ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিলো তোকে।
..ওনারা জানতে চায়নি আমি আর আপনি ওখানে কি করছিলাম?
..হুম জানতে চাইবে না আবার। আমি বলেছি আমি ছাদের দিকে যাচ্ছিলাম কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে ওই রুমে গিয়ে দেখেছি তুই পড়ে আছিস।
..কি এতো বড় একটা মিথ্যে বলে দিলেন!!
..তাহলে কি সত্যিটা বললে ভালো হতো ঠিকআছে বলে দিচ্ছি মাকে ডাকি কেমন।
..না না কিছু বলতে হবে না। আচ্ছা আমি আপনার রুমে কেনো?
..নিয়ে এসেছি এখানে তাই।
..নিয়ে এসেছেন মানে কিভাবে?
..কিভাবে আবার কোলে তুলে।
..কিহহ আমাকে আপনি কোলে তুলে নিয়ে এসেছেন!
..হুমম আমার মেঘকন্যা। আমার গাল টেনে বললেন।
..আমাকে মেঘকন্যা কেনো বলছেন?
..তোর খুব ইচ্ছে তোর সে তোকে আদর করে এ নামে ডাকবে। আমিই তো তোর সে তাইনা!
..আপনাকে আমার সে মানতে বয়েই গেছে। ভেংচি কেটে বললাম। তারপর সেখান থেকে উঠে আসতে নিলে তাসিন আমার হাত টেনে ধরলেন আমি তাকাতেই, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো……সত্যিই ভালোবাসি তোকে। আমি প্রতিউত্তরে কিছু বললাম না হেসে চলে আসলাম।

. ?

আমার দিনগুলো ভালোই কাটছে তাসিনের সাথে। আমাদের সম্পর্কের কথা শুধু তিশা জানে।
রাতে ঘুম আসছিলো না তাই বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলাম হঠাৎ ফোনের ম্যাসেজ টন বেজে উঠলো ফোনটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখা ছিলো সিম কোম্পানির ম্যাসেজ ভেবে উঠলাম না। প্রায় ৫ মিনিট পর আবারো ম্যাসেজ আসলো। এবার না উঠে পারলাম না হয়তো তাসিন ম্যাসেজ করছে।
ফোটটা হাতে নিয়ে তাসিনেরি ম্যাসেজ দেখলাম ২ টাই ওপেন করতেই দেখলাম…..১ম ম্যাসেজ এ লেখা,মেঘা ৫ মিনিটের মধ্য ছাদে আয়। ২য় টাতে লেখা,কি হলো কোথায় তুই আমি কিন্তু তোর রুমে চলে আসবো এখন।

ম্যাসেজ দুটো পড়ে আমি কিছুটা অবাক হলাম এটা তো আমাদের বাড়ি তাসিন আমাদের ছাদে এতো রাতে কি করে আসলো!!মোবাইলে টাইম দেখলাম ১১ টা বেজে ৫৪ মিনিট। আমি তাসিনের নাম্বারে ডায়েল করতে যাবো আবারো ম্যাসেজ আসলো…..এবার কিন্তু আমি সত্যিই তোর রুমে আসবো।
আমি আর দেরি না করে ফোনটা বিছানার ওপর রেখে ছাদে চলে আসলাম। কিন্তু একি ছাদে তো লাইট দেওয়া থাকে এতো পুরোই অন্ধকার। তাসিন কোথায়!!
অন্ধকারে কিছু দেখতেও পারছি না ফোনটাও আনি নি যে উনাকে ফোন দিবো।
আচমকা কেউ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি চমকে উঠেও নিজেকে সামলে নিলাম কারন এ ছোয়াটা যে আমার খুব পরিচিত। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রেখে বললেন…..
..কি ব্যাপার মেঘা পাখি ভয় পাও নি??
..ভয় কেনো পাবো আপনার ছোয়াটা যে আমার খুবই চেনা।

উনি আর কিছু না বলে আমাকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে কিছুটা সামনে এগোলেন হঠাৎই লাইট জ্বলে উঠলো।
সামনে চোখ পড়তেই আমি চরম পর্যায় অবাক হলাম।
গাদা ফুল আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড় করে লাভ আকানো তার মধ্য গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা…..হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মেঘকন্যা।
আমি বিষ্ময় চোখে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাসিনের দিকে তাকালাম। আজ আমার বার্থডে আমিই তো ভুলে গিয়েছি তাসিন ঠিক মনে রেখেছে!! উনি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে রাখা চেয়ার টা থেকে একগুচ্ছো গোলাপ হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বললেন,,,,,,,শুভ জন্মদিন মেঘা।

আমার চোখের কোনে পানি জমে গেলো এটা দুঃখের নয় সুখের। আমি মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে তাসিনের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বললাম…..ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে এতো সুন্দর ভাবে উইস করার জন্য।
..ধুর পাগলি নিজের মানুষকে ধন্যবাদ দিতে হয় নাকি। তারথেকে বরং অন্য কিছু দাও।
..অন্য কিছু কি দিবো?
..উমম আমি কি বলবো তুমি জানো।
..আচ্ছা পরে না হয় কিছু দিয়ে দিবো।
তাসিন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিছু বললো না।

. ?

উনি নিজের হাতটি বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে আমি মুচকি হেসে তাসিনের হাতে হাত রাখলাম।
..চলো এবার কেকটা কাঁটা যাক অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম
..এতো কিছু কিভাবে করলেন আপনি?
তাসিন মুচকি হেসে আমাকে পাশের বিল্ডংটা দেখিয়ে বললো….ওই বিল্ডিংটাতে আমার একটা ফ্রেন্ড থাকে ওর সাহায্য নিয়েই করেছি।
..কে বলেছে এতোটা,রিস্ক নিয়ে এসব করতে যদি কোনো অঘটন ঘটে যেতো!!
..ঘটে তো নি তাছাড়া আমাদের ভালোবাসার প্রথম সিজন চলছে আর এটা তোমার প্রথম বার্থডে এই সিজনে আর আমি এটুকু করবো না তা কি করে হয় হুমম।
..ভালোবাসার প্রথম সিজন মানে?ভ্রু কুঁচকে বললাম।
..এমনি এমনি তো বলি না গোবর আছে তোমার মাথায়। প্রথম সিজন মানে হলো আমাদের এ নতুন পথচলা তো মাত্র শুরু হলো আর আমাদের এ নতুন সম্পর্কে এটাই প্রথম জন্মদিন ছিলো তোমার বুঝলে এবার?
..হুমম বুঝেছি।
..পরবর্তী সিজন গুলো কি বলবো?বাকা হেসে বললো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে উনার এমন হাসি দেখে বললাম না থাক আমার আর জানতে হবে না।
উনি জোরে হেসে উঠলেন আমার কথায়।
..আজব তো হাসছেন কেনো পাগলের মতো??
..তোমার প্রেমে আমি আমি পাগল হয়ে গেছি গো তাই হাসছি।
তারপর দুজনে মিলে কেক কেটে ছাদে কিছু ক্ষণ সময় কাটিয়ে তাসিন চলে গেলো আমিও রুমে চলে আসলাম।

. ?

আমি আর তিশা ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি। আমাদের সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো আমরা দুুজনেই তাকিয়ে আছি সেদিকেই। গাড়ির দরজাটা খুলে বেড়িয়ে আসলো আবির। আমাদের সামনে এসে বললো
..হেই মেঘা কেমন আছো??
..আমি কেমন আছি তা জেনে আপনি কি করবেন?
..কি আর করবো কিছুই না।
..ঠিকআছে তাহলে যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানেই যান।
..আমি তো তোমার কাছেই এসেছি।
..কেনো!কি দরকার আমার কাছে?
..তুমি যাকে ভালোবাসো সে কখন কোথায় যাচ্ছে কি করছে তার খেয়াল কি রাখো তুমি?
..কি বলতে চাইছেন আপনি?
..তাসিন আর তোমার সম্পর্কের কথাটা আমি জানি। আর এটাও জানি তাসিন তোমাকে ঠকাচ্ছে।
..কি বলছেন কি আপনি! তাসিন না আপনার ফ্রেন্ড ওকে নিয়ে আপনি উল্টো পাল্টা বকছেন?
..হুম ও আমার ফ্রেন্ড কিন্তু তোমার সাথে ও প্রতারণা করছে এটা জেনেও আমি চুপ থাকবো।

আমার গলাটা যেনো শুকিয়ে আসছে আবির তাসিন সম্পর্কে কি বলে চলেছে এসব! তিশাও অনেকটা অবাক হচ্ছে এসব শুনে। তিশা আবিরকে বললো
..শুনুন তাসিন ভাইয়াকে আমি চিনি আর যতটা জানি উনি মেঘাকে খুব ভালোবাসে ঠকানোর তো প্রশ্নই আসে না।
আবির মৃদু হেসে বললো
..ঠিকআছে আমার সাথে চলো তোমরা নিজের চোখেই দেখবে।
আমি যেনো নরতে পারছিলাম না কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে আমার বিশ্বাস আছে তাসিন এমন কিছু করবে না।
আমি আর তিশা আবিরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম ভেতরে ঢুকে একটু আড়াল থেকে আবির আমাকে সামনে তাকাতে বললো।
আমি সামনে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ কি দেখছি আমি! আমার হাত পা থরথর করে কাপতে লাগলো পড়ে যেতে নিলে তিশা আমাকে ধরে ফেললো।
আবির পাশে থেকে বলে উঠলো….. কি এবার বিশ্বাস হলো তো আমার কথা?
আমি আর একমুহুর্ত ওখানে দাড়ালাম না বেড়িয়ে আসলাম তিশাও আমাকে পেছন পেছনে আসলো।

?

#চলবে. . . ?