?শুধু তোমায় ঘিরে?
#মেঘা আফরোজ….?
#পর্ব-১….?
কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম আমার সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো আমার। কিন্তু সে হাসিটা বেশিসময় টিকলো না।
সামনে থাকা মানুষটি আমাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন এই মেয়ে যা পারিস না তা করতে যাস কেনো শাড়ি পড়েছিস নিজের পেটটা ঢাকতে পারিসনি?
ওনার কথা শুনে আমার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে আর কোনো দিকে না সোজা আমার পেটের দিকেই চোখ পড়তে হলো!!!!
কি হলো আমাকে কি ভেতরে যেতে দিবি নাকি মূর্তির মতো সামনে দাড়িয়ে থাকবি?
আমি মুখে ভেংচি কেটে সরে দাড়ালাম আর সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ধুর এতো কষ্ট করে শাড়িটা পড়লাম মনে উৎসাহ নিয়ে দরজাটা খুললাম কিন্তু ওই ইতরটা আমার আনন্দে এক বালতি পানি ঢেলে সব শেষ করে দিলো!!!! কোথায় মিষ্টি করে জানতে চাইবে কেমন আছি কখন এসেছি তা না করে আমাকে কথা শুনালো। একে তো একটু শাস্তি দিতেই হবে আমাকে এড়িয়ে চলা তাইনা।
.?
আপন মনেই বিড়বিড় করে চলেছি তখনি খালামনি ডাকলো””””””এই মেঘা ওখানে দাড়িয়ে কি করছিস এদিকে আয়। হুম বলো খালামনি?
যা না মা তাসিনের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে ওর ঘরে দিয়ে আয় ছেলেটা বিকেলে কফি খেতে ভালোবাসে। পারবি না?
কেনো পারবো না খালামনি খুব পারবো।
আচ্ছা যা তাহলে দেরি হলে আবার খাবে না।
রান্নাঘরে এসে আপন মনে কফি বানাচ্ছি হঠাৎ মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো কফির মধ্য গুনে গুনে পাঁচ চামচ লবন দিয়ে দিলাম। আমাকে কথা শুনানো তাইনা এবার বুঝবে এই মেঘাকে বকলে কি হতে পারে।
. ?
ওহ আপনাদের তো পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। আমি মেঘা আফরোজ বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। একটু আগে যে আমাকে কথা শুনিয়ে গেলো সে আমার খালামনির ছেলে তাসিন আহমেদ এ বছরি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। ওও আর একটা কথা তাসিন সম্পর্কে আমার ভাই হলেও সে আমার ক্রাশ। বাকী সব গল্পে জানতে পারবেন।
. ?
কফির কাপটা হাতে নিয়ে দরজার বাইরে দাড়িয়ে উকি মারছি কিন্তু রুমে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কিছু না ভেবেই রুমে ঢুকে পড়লাম। কফির কাপটা খাটের পাশে টেবিলে রাখতে যাবো তখনি তাসিন ভাইয়া ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি…….গোসলের পর কোনো ছেলেকে এতো সুন্দর লাগে বুঝি!!! খালি গায়ে গলায় টাওয়েল ঝুলানো ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে। উফ আমি আবারো ক্রাশ খেলাম ওনাকে এভাবে দেখে। উনি আমার সামনে হাতের তুরি বাজাতের হুস ফিরলো আমার।
মেঘা কারে রুমে আসতে হলে যে পারমিশন নিতে হয় সেটা জানিস না তুই? কিছুটা রেগেই বললো।
আর এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো শুনি?
না মানে কফিটা দিতে এসেছিলাম রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে কফিটা রেখে যাচ্ছিলাম।
তো রেখে যা বিদায় হো। চুল ঝারতে ঝারতে।
ভাইয়া আপনি আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না?সবার সাথেই তো হেসে কথা বলেন শুধু আমার সাথে কথা বলার সময় আপনার মুখ থেকে তেতো কথা বের হয়। মুখ গোমড়া করে বললাম।
আমি কার সাথে কিভাবে কথা বলবো সেটা কি তোর থেকে শিখতে হবে? আর কি বললি আমার মুখে তেতো? চোখ লাল করে বললো।
ওনার চোখ দেখেই তো ভয় করছে আমার এভাবে কেউ তাকায় আমার ভয় লাগে না বুঝি,আস্তো বজ্জাত একটা কেনো যে বেছে বেছে এর উপরেই ক্রাশ খেলাম আমি।
যাই হোক কফিটা আগে খাও ভাইয়া মজা বুঝবে,ইস কি যে করবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে।
মেঘা কফিটা কি ঠান্ড হয়ে গেলে দিবি আমাকে?
না না এই নিন,কফিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিটমিটে হেসে বেড়িয়ে আসতে নিলে তাসিন ভাইয়া ডাকলো মেঘা শোন। আমি অধির আগ্রহে ঘুরে বললাম জ্বি ভাইয়া।
শোন তোকে যেনো আর কখনো তোকে শাড়ি পড়তে না দেখি।
আমি কপালে ভাজ ফেলে বললাম কেনো?
তোকে শাড়ি পড়লে পেত্নির মতো দেখতে লাগে তাই।
কিহ আমি পেত্নি?
তোকে এতো কথা বলতে বলিনি পড়তে বারণ করেছি পড়বি না তাছাড়া শরীরের অর্ধেক অংশ তো বের করেই রাখিস।
ওনার কথা শুনে খুব রাগ হলো আমার ব্যাটা শয়তান আমাকে বলে পেত্নির মতো দেখতে লাগে আমি শরীরের অংশ বের করে রাখি!!!!
আমি আর কিছু বললাম না রেগে বেড়িয়ে আসলাম রুম থেকে।
. ?
নিচে নামার জন্য শিরিতে পা রাখতেই তাসিনের চিৎকার শুনতে পেলাম। ঠিক চিৎকার নয় জোরে জোরে মা বলে ডাকছে। তবে কেনো ডাকছে তা আর বুঝতে বাকী রইলো না আমার।
খালামনি রুম থেকে দ্রুত বেড়িয়ে তাসিনের রুমে গেলো আমিও গেলাম তবে রুমে ভেতরে নয় দরজার আড়ালে দাড়ালাম।
কি হয়েছে তাসিন এভাবে ডাকছিস কেনো?
তাসিন কফির কাপটা খালামনির সামনে ধরে বললো কফিটা কে বানিয়েছে? রেগে বললো।
খালামনি হেসে বললো কেনো রে ভালো হয়নি বুঝি আসলে বাচ্চা মেয়ে তো বুঝতে পারেনি।
বাচ্চা মেয়ে মানে?
হ্যা রে মেঘা বানিয়েছে।
তাসিন এবার আরো রেগে গেলো মা তুমি ওকে কেনো আমার জন্য কফি বানাতে দিয়েছো আর কি বললে ও বাচ্চা মেয়ে? ও যথেষ্ট বড় হয়েছে মা!
রাগ করিস না বাবা এবারের মতো খেয়ে নে।
কি করে খাবো তোমার সে বাচ্চা ভাগ্নিটা কি করেছে জানো লবন দিয়ে কফি করে এনেছে। চোয়াল শক্ত করে বললো।
. ?
রাতে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে মটু পাতলু কার্টুন দেখছি আমার আবার কার্টুন দেখতে খুব ভালো লাগে। এই কার্টুন দেখার কারনে মায়ের কাছেও অনেক বকা খেয়েছি।
হঠাৎ কেউ এসে আমার কার্টুন দেখার ১৩ টা বাজিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিলো। আমি রেগে পাশে তাকাতে নিজেই ভয়ে চুপসে গেলাম তাসিন রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে বসলাম।
ভা. . ভাইয়া আপপনি এভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে উনি আমার ডান হাতটা চেপে ধরলেন। দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন আমার কফিতে লবন মিশিয়েছিলি কেনো?
এইরে এবার আমি কি বলবো দেখে তো মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বলালাম আমি ভেবেছিলাম কফিতে হয়তো লবন দিতে হয় তাই দিয়েছিলাম। সত্যি বলছিস তো? না হ্যা হ্যা সত্যি বলছি।
উনি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাত ধরে উঠে দাড়িয়ে সামনে হাটতে লাগলো।
আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তুই আজকে আমাকে এতো টেষ্টি কফি খাইয়েছিস আমারো তো তোকে কিছু খাওয়ানো উচিৎ তাইনা।
মনেহ! না না ভাইয়া আমি কিছু খাবো না,ছাড়ুন আমাকে আমার ঘুম পেয়েছে।
চুপ আর একটা কথা বলবি তো খবর আছে। ধমক দিয়ে বললো।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। উনি আমাকে ছাদে এনে এক বক্স আইসক্রিম আমাকে দিয়ে বললো,নে এটা তোর জন্য এনেছি তুই তো আইসক্রিম খেতে ভালোবাসিস তাইনা। নে শুরু কর।
আইসক্রিম দেখে আমার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো,তবে একটা কথা ভাবছি উনি এতো নরমাল ভাবে কথা বলছে কেনো এই আইসক্রিমে কোনো গন্ডগোল নেই তো?
কি হলো মেঘা নে শুরু কর।
না আমি খাবো না এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
উনি মুখটা গোমড়া করে বললো আমি এনে দিয়েছি বলে খাবি না তাইনা?
. ?
ওনার এমন ফেস দেখে আমি কিছু না বলেই আইসক্রিমের বক্সটা ওনার হাত থেকে নিয়ে খুলে এক চামচ মুখে দিতেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
এটা তো আইসক্রিম নয় যেনো মরিচের গুড়োর গোডাউন মিশিয়ে দিয়েছে এতে।
কিরে মেঘা আইসক্রিমটা টেষ্টি না?
আমি মুখটা বন্ধ করে রাগি চোখে তাকালাম।উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গাল চেপে ধরলো আর কয়েক চামচ আমার মুখের মধ্য পুরে দিলো।
আমি কি করবো নিজেই বুঝতে পারছি না তাসিনকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই জব্দ হলাম।
ঝালে আমার গাল জ্বলে যাচ্ছে ওখানে আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে একছুটে নিচে নেমে আসলাম।
আমার এমন করুন অবস্থা দেখে তাসিন হেসে কুটিকুটি হয়ে পড়ছে।
?
#চলবে. . ?।