#শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্বঃ৪১
লেখিকাঃ#রুবাইদা_হৃদি
পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর মহত্ত্ব প্রকৃতি আর মানুষের স্বচ্ছ,আনন্দে ভরে উঠা মন ৷ সেই মনে যদি হাজারো শুভ্রতার ছোঁয়া থাকে নিসর্গ শান্তি সেই মানুষটার আশেপাশে থাকলে হয় ৷ মৃদু কম্পিত হাওয়ার তালে গাছের ডাল-পালা নৃত্য করে বেড়াচ্ছে ৷ আকাশের মস্ত বড় চাঁদের আলো সমুদ্রের বিশাল বালুরাশির মাঝে লুটোপুটি খাচ্ছে ৷ স্নেহের পরশে ল্যাপ্টে পরছে সর্বাঙ্গ! সমুদ্র থেকে ভেসে আসা গর্জন সেই সাথে সাদা বালুর চিকচিকে ভাব শরীর মন রোমাঞ্চিত করে তুলছে বারংবার৷ উনি অর্ধ কম্পিত চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘ ভার্সিটি থেকে এসেছিলাম শূন্য আর এখানে থেকে ফিরে গিয়েছিলাম পূর্ণ ভাবে ৷ ‘
আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে থেকে থেকে বিভিন্ন আকৃতির পাথর কুড়াচ্ছি ৷ কিছুক্ষণ বাদে উনি বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
–‘ বাচ্চাদের মতো বিহেভ কেন করছো?’
–‘ তিনদিনের আগামী আরো বারোঘন্টা আমি সিঙ্গেল শর্ত মোতাবেক৷ ‘
–‘ স্নেহ কি দোষ করেছে? ওকেও কোলে নিচ্ছো না খাওয়াচ্ছো না৷ ‘
–‘ কেন গত তিনমাস সব তো আমি একাই সামলেছি ৷ এখন ওর বাবাই আছে সে সামলাক৷ আমি তো শুধু বাচ্চামো করি ৷ সেটাই করছি৷ ‘
উনি বিরক্তিতে ‘ ক ‘ শব্দ উচ্চারণ করে থেমে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন ৷ আমার হাতের বাহু ধরর হ্যাঁচকা টান মেরে দাঁড় করিয়ে রাগী চোখে তাকালেন৷ চিল্লিয়ে বললেন,
–‘ হোয়াট’স ইজ ইউর প্রবলেম!ড্যাম… ‘ উনি বলতেই আমি হঠাৎ করেই উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম ৷ উনি ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
–‘ কি হয়েছে? ‘
–‘ আপনি জানেন আপনাকে কতোটা মিস করেছি আমি? নিয়ে গেলেন না কেন সাথে করে? ‘
–‘ আরে বাবা,তোমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশনের ঝামেলায় পরতাম৷ অবুঝের মতো করো কেন? ‘
–‘ তাই বলে আমাদের চেয়ে আপনার যাওয়া বেশি ইম্পোর্ট্যান্ট হয়ে গেলো? ‘
উনি চুপ করে গেলেন৷ আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ স্নেহের জন্মদিনের পরেরদিন মানে গতকাল আমাদের সাথে রাফিন,আদি,জান্নাতকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি৷ হুট করেই হওয়া প্ল্যানিং যদিও মাষ্টার মাইন্ড ওরফে স্নিগ্ধ আগে থেকেই সব প্ল্যান করে রেখেছিলেন৷ তবে আমি জোর করে কাবাব মে হাড্ডি নিয়ে এসেছি শাস্তিস্বরূপ৷ চিকচিকে আলোতে উনার ঠোঁটে হাসি ঝুলানো মুখটাতে হাজার টন ভালোবাসা মাখা৷ উনি আমার ঠোঁটে গাঢ় চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ ফার্স্ট অফ অল আমি মেডিসিন চেঞ্জ করতে গিয়েছিলাম আর তোমার শ্বশুড় বাবার অসুস্থার জন্য ৷ আমি এখনো বুঝতে পারছি না,তুমি সব জেনে বাচ্চাদের মতো কেন করছো?’
আমি উনার শার্টের কলার টেনে বললাম,
–‘ আই নিড ইউ৷ ‘
উনি ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
–‘ কি বললে?’
–‘ ধূর! চলুন ফিরে যাই৷ স্নেহ রাফিনের কাছে আছে৷ ঘুম থেকে উঠে আমাদের না দেখলে কান্নাকাটি করবে৷ ‘
উনি হুট করে পাজকোলে তুলে নিতেই আমি ভড়কে গিয়ে বললাম,
–‘ নামান ৷ আপনি পারবেন না৷ ‘
উনি বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ তোমার থেকে জানতে হবে,আমি কি পারি আর না পারি? আমি আমার বউকে কোলে তুলেছি৷ সো আই ক্যান ডু ইট৷ ‘
আমি আজও বিড়বিড় করে বললাম,’ আপনার বউ মানে তো আমি’ই আর আমি মানে আপনার বউ৷ ‘
উনি আজও হাসলেন৷ মন খুলে! সমুদ্রের গর্জনের সাথে হাসি তাল মিলিয়ে আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মধুর সুর তুললো৷ প্রিন্সেস চলে যাওয়ার একটা বেদনা গ্রাস করেছিলো আমায় আর সেটা সবাইকে এক চাঁদরে মুড়িয়ে দিয়েছিলো ৷ হঠাৎ করেই মনের কোণে ভেসে উঠলো সেই কলুষিত দিনটা৷ যেই দিনটায় একটা প্রিন্স পেয়েছিলাম আর একটা প্রিন্সেস কে হারিয়েছিলাম ।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। আর শুক্রবার মানেই মহাশয়ের ঘুম বার। উনি বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন আর আমি আস্তেধীরে স্নিগ্ধের পাশে এসে মাথায় হাত রাখতেই উনি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আবারো গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় ৷ গত সপ্তাহে ডাক্তার বলেছিলেন,কিছু কপ্লিকেশন আছে দুইটা বেবি এইজন্য ৷ সেইদিন উনার খুশি দেখেন কে! শুধু বলছিলেন,’ প্রিন্স আর প্রিন্সেস আসবে৷ ভাবো হৃদি আল্লাহ আমাদের দুইজনের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করছেন ৷ কতোটা ভাগ্যবান আমরা৷’ হসপিটাল থেকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়েছিলেন৷ তার যত্ন করা আরো বেড়ে যায় ৷ রাতে যখন আমার বিভিন্ন জিনিসের জন্য ক্রেভিং হতো নিজে প্রস্তুত করে দিতেন ৷ পায়ের ব্যথা টনটন করলে উনি মালিশ করে দিতেন ৷ আমি ভেবেই মুচকি উনার উদাম বুকে মাথা গুজে দিই৷ সে ঘুমের মাঝেও আলতো করে ধরেন ৷ কিছুক্ষণ পর আমি উঠতে গেলেই তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতেই তীব্র পেট ব্যথায় টনটন করে উঠে সব ৷ আমি মৃদু চিৎকার করে উঠতেই সে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে আমার কাছে আসে৷ ব্যথায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কাঁদছিলাম ৷ দুনিয়ার সব ব্যথা বোধহয় সেই ব্যথাকে হার মানায়৷ তবুও মনে চলছিলো,’ আল্লাহ দোহাই করো আমার সন্তানের উপর৷ আমি মরে গেলেও তারা যেন তাদের বাবাইয়ে কাছে ফিরতে পারে৷ ‘
সেদিন খুব করে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো,’ মায়েরা বুঝি এমন হয়? সবাই এমন? আমিও মা হচ্ছি এই জন্য বুঝি সন্তানের চিন্তা আগে করছি তোমার মতো? আম্মু সর্যি৷ অনেক সর্যি তোমাকে প্রত্যেকটা মূহুর্তে দেওয়া জ্বালতনের জন্য৷ ‘
আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি কাঁদছেন৷ তার চোখে পানি! সেই মূহুর্তে তীব্র ব্যথার মাঝেও আমার নিজেকে সবথেকে সুখী মনে হচ্ছিলো৷ উনার চুপসে যাওয়া চিন্তিত মুখমন্ডল খুব করে জানান দিলো, ‘ কিছু কিছু ব্যক্তিগত মানুষকে মাঝ পথে ফেলে যেতে নেই যদি সে হয় তোমার নিজস্ব ব্যক্তিগত মানুষটা৷ তার চোখের পানিতে আমার পরিপূর্ণ অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছিলাম ৷ এখন যে মরেও শান্তি! পরম শান্তি!’
উনি আমাকে হসপিটালে নেওয়ার শক্তিটুকু পাচ্ছিলেন না সেদিন৷ শুধু বলছিলেন,
–‘ আল্লাহ! সব ব্যথা আমার নামে করে দেও৷ আমার সব সুখ ওর নামে করে দেও৷ ‘
তার কথা আর কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলাম ৷ সে আমার অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে সবাইকে ফোন করে আসতে বলেন৷ এম্বুল্যান্স করে নিয়ে আসা হয় ঢাকায় ৷
এডমিট করার পর নাকি স্নিগ্ধকে আর খুজেই পাওয়া যায় নি৷ সে মসজিদে গিয়ে কান্নাকাটি করেছে ৷
বাচ্চাদের কন্ডিশন ভালো ছিলো না বলে সি-সেকশন করা হয়! বাবাই সুস্থ থাকলেও চাপ খেয়ে আমারদের প্রিন্সেস শ্বাস নিতে পারে নি ৷
আমার যখন জ্ঞ্যান ফেরে আমি তখন স্নিগ্ধের বুকে ছিলাম৷ উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখে আস্তেধীরে বলেছিলেন,
–‘ আল্লাহ সব কিছু কোনো না কোনো উদ্দেশ্য রেখেই করে৷ সবাই তো সব ভাবে পরিপূর্ণ হতে পারে না৷ আজ হয়তো আমরাও পারবো না…
বলতেই উনার গলা ধরে আসে ৷ আমার কঁপালে চুমু খেয়ে নিজেকে সামলে ভেজা কন্ঠে আবার বললেন,
–‘ আমার প্রিন্সেস বাঁচার তীব্র লড়াই করছে৷ টিকে থাকার লড়াই ৷ ডক্টর বলেছে হয়তো আর কিছু মূহুর্ত তারপরেই সে তার বাঁচার আকুতিতে হেরে যাবে ৷ ইউ ক্যান ফিল মাই পেইন হৃদি? আমি বাবা হয়ে অকপটে নিজের সন্তানের শেষ মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছি !’
আমি ফ্যালফ্যাল চোখে একজন বাবার আকুতি দেখছিলাম।মেডিসিন এর ডোজের কারণে সব কিছু ঝাপসা। যখন মনে হলো সত্যি আমার সন্তানের করুন অবস্থা তখন পাগলপ্রায় হয়ে উঠি । নিস্তেজ অবস্থায় কেঁদে উঠি। বুকের ভেতর হাহাকার আর নোনা ব্যথায় দুমড়ে মুচড়ে উঠে। আমি শুধু তাকে শেষ বারের মতো দেখার ইচ্ছা পোষণ করতেই উনি কারো কথা না শুনেই আদি ভাইয়ার হাতে স্যালাইন ধরিয়ে আমাক পাজকোলে করে নিয়ে প্রিন্সের কাছে নিয়ে যায়।সে ছিলো কিছুক্ষণ আগেও। কি ভাগ্য তার তার মা’কে না দেখেই আবার ফিরে গেছে তার দুনিয়ায়। সেদিন আসমান সমান কষ্ট সামনে ছিলো৷ হোক সে অল্পকিছুক্ষণের অথিতি কিন্তু সে তো ছিলো আমার আর উনার ভালোবাসার চিহ্ন৷ আমি বারবার জ্ঞান হারিয়েছি উঠে খুজেছি প্রিন্সেস কে ৷ শেষ বারের মতো কোলে নিয়ে অনেকটা সময় কেঁদেছি৷ আর তার বাবা মিইয়ে গিয়েছিলো ৷
স্নেহ কে পেয়ে কিছুটা কষ্ট লাঘব হলেও বারবার সেই ছোট প্রাণের কথা মনে হতো ৷ স্নিগ্ধ নিজেকে সামলিয়ে আমাদের সামলিয়েছে সেই সাথে তার কাজ ৷ এই সময়টুকু তার উপর দিয়ে কি গিয়েছে বুঝতে দেয় নি আমাকে ৷ হুট করে একদিন এসে বললেন,
–‘ বাবার কাছে যেতে হবে৷ উনি অসুস্থ! ‘
–‘ কি হয়েছে? ‘ আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই উনি বললেন,
–‘ জানি না তবে তার মতো স্বার্থপর হতে পারবো না৷ ‘
আমি তার সাথে যাওয়ার জেদ করলে জোর করে রেখে চলে যান এনজিওয়ের দায়িত্ব নোমান ভাইয়াকে দিয়ে ৷ আদি ভাইয়া তার সাথে যান! মূলত সে কাউন্সিলিং করাতে গিয়েছিলেন সাথে মেডিসিন আনতে ৷ আমার বিষন্নতা তাকেও গ্রাস করেছিলো ৷ শ্বশুর বাবাও অসুস্থ ছিলেন এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই সে সম্পূর্ণ বিষয় চেপে গিয়েছিলো ৷ আমি জানতে পারি স্নেহের জন্মদিনের কিছুদিন আগে ৷ সেই থেকে একরাশ অভিমান ভীড় করে ছিলো৷ আমি চেষ্টায় আছি স্নেহ আর স্নেহের বাবাইকে নিয়ে শুভ্র রঙে মাততে৷ এক পশলা ভালোবাসার আসর সাজাতে৷ শুভ্র রঙের প্রেমে ভাসতে৷
__________________
রোদের তেজ বাড়ছে৷ গরমে অস্থির হয়ে উঠা পরিবেশ৷ চারদিকে বাতাস নেই ৷ এই গরমের মাঝে ছুটোছুটি করে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি৷ শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে ধমকে বললাম,
–‘ তুমি কি মাম্মীর কাছে আসবে? না মাম্মী চলে যাবে দূরে? ‘
–‘ নো এঞ্জেল৷ আমি আসছি দাঁলাও৷ ‘
–‘ টু মিনিট’স! তারপর যদি না আসো তাহলে সত্যি এঞ্জেল চলে যাবে৷ ‘
–‘ হোয়াইট এঞ্জেল পঁতা ৷ আমি বাবাইয়ের কাছে বলে দিবো৷ ‘
আমি হাসলাম৷ তবে হাসি তাকে দেখানো যাবে না৷ আমি গম্ভীর মুখে বললাম,
–‘ স্নেহের বাবাই কি জানে তার বাবাইটা মাম্মীর কথা শোনে না? ব্যাপার টা জানাতে হচ্ছে তাহলে৷ ‘ আমি বলতেই স্নেহ কাবার্ডের পাশের ছোট জায়গা থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসে আমাকে ছোট ছোট হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো ৷ এর মাঝেই দরজার বাইরে থেকে জান্নাত বলে উঠলো,
–‘ হৃদিপু! ‘
–‘ তুই এখনো বাসায় কেন? তোর তো এখন পার্লারে থাকার কথা৷ ‘
আমি স্নেহ কে বেডে বসিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ আমি আন্টির সাথে কথা বলে আসছি ৷তুমি এখান থেকে এক পাঁ নড়বে না৷ বুঝলে? ‘
–‘ ইয়েস.. ‘ বলেই দুষ্টুমির চোখ করে চারদিক তাকিয়ে দেখে চলেছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম দরজা খুলতে ৷ দরজা খুলতেই লেহেঙ্গা পড়ে হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো জান্নাত ৷ জলদি করে দরজা আটকে দিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,
–‘ বিয়েটা কি করতেই হবে আপু?’
–‘ কিইইইই.. ‘
জান্নাত কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
–‘ বিয়ে ক্যান্সেল৷ তুমি তোমার দুইমাত্র দেবরকে ফোন করে৷ না না স্নিগ্ধ ভাইয়াকে বলো৷ তার ফ্রেন্ডকে বলে দিতে ৷ ‘
–‘ দুই বছর প্রেম করে এখন কাটতে চাচ্ছো কেন বেইব? আমি আমার দেবরের হয়ে মামলা ঠুকে দিবো তোমার নামে৷ ‘
জান্নাত আমার হাত ধরে বলল,
–‘ প্রেম হুট করে আদার সাথে হয়ে গেছে৷ কিন্তু বিয়ে! ভাবলেই আমার কেমন যেন লাগছে৷ তুমি ভাবো একবার.. ‘
–‘ ওকে তাহলে মানা করে দিচ্ছি! ‘ আমি বলে ফোন হাতে নিতেই ও কেঁড়ে নিয়ে বলল,
–‘ আরেএএ..বলতে বলেছি বলে বলবে নাকি? ফিলিংস বুঝো আমার ৷ ‘
–‘ ফিলিংস আসে না বেইব! কি করবো? ‘ আমি মুখ টিপে হেসে বলতেই ও লজ্জায় চোখ-মুখ খিঁচে ফেললো ৷ জান্নাতের কাজিনরা ওকে খুজতে আসলে আমি জোর করে পাঠিয়ে দিই ওকে৷ এখানে থাকলে একটু পর পর বলবে,’ হৃদিপু, আমার কি বিয়ে করা ঠিক হচ্ছে ওই পঁচা আদাকে৷’
দুইজন নিজেদের ভালোবাসবে ঠিক কিন্তু ঝগড়াঝাটি তে কেউ কাউকে ছাড় দিবে না৷ ওদের প্রেম হুট করেই এসেছিলো ঝড়ো হাওয়ার মতো সমুদ্র তীরে৷ আর আজ সেই দুই বছর পর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে৷ ভেবেই প্রগাঢ় সুখকর দীর্ঘশ্বসে সুপ্ত একরাশ ভালোবাসা নিগড়ে দোয়া বেরিয়ে এলো ওদের জন্য। ভালো থাক পৃথীবির সকল প্রেমিক যুগলদের যুগলবন্ধী ভালোবাসা।
.
.
চারদিকে আলো ঝলমলে পরিবেশ৷ স্নেহ আমার কোলে।তিন বছরের বাচ্চা এতো ম্যাচিউর! এইতো একটু আগে আমার শাড়ির পিন কাঁধে থেকে খুলে গিয়েছিলো৷ সে দূর থেকে লক্ষ্য করে আম্মুর কোলে থেকে নেমে দৌড়ে আমার কাছে এসে আদো আদো গলায় বলল,
–‘ মাম্মী কোলে উঠবো তোমার৷ ‘
আমি হাত বাড়িয়ে কোলে নিতেই সে তার হাতের মুঠোয় থেকে সেফটি পিন নিয়ে আমার আঁচল ঠিক করে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় ছিলো ৷ বিস্ময় হয় নি তবে অবাক হয়েছি।তার ব্যর্থ চেষ্টার মাঝেই কারো শক্ত হাতের টান পরে আমার হাতে ৷
আমি স্মিত কেঁপে উঠলেও চেনা স্পর্শ পেয়ে মুখ উঠিয়ে তাকাতেই সে দুর্বোধ্য হাসি দেয় ৷ স্নেহ লাফিয়ে তার বাবাইয়ের কোলে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘ আমি মাম্মীর খেয়াল আজ রাখতে পেলেছি বাবাই৷ এই দেখো.. স্নেহ পিন উঠিয়ে দেখালো৷ উনি ওর কঁপালে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ আই নো পারবে তুমি৷ কারণ তুমি তো আমার intelligent boy.’
উনি বলতেই স্নেহ খিলখিল করে হেসে উঠলো৷ স্নিগ্ধও হাসলেন৷ শুভ্র পাঞ্জাবিতে দুইজনকে পৃথীবির সবথেকে কোমল,নিষ্পাপ লাগছিলো৷ আমি মুগ্ধ চোখে দেখতেই উনি টেনে নিলেন আমাকে ৷ প্রথমে স্নিগ্ধের কঁপালে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ চোখ বন্ধ করো তো বাবাই! ‘ উনার কথা শুনে দুইহাতে মুখ ঢেকে রইলো সে ৷ তার বাবাইয়ের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা তার প্রথম কাজ৷ আমার ভাবনার মাঝেই সে ঝুকে এসে ভালোবাসার পরশ আঁকতেই আমি ছিটকে দূরে চলে আসি৷ কি নির্লজ্জ ভাবা যায়? ছেলে আছে তবুও! আমার লজ্জা মাখা মুখ দেখে উনি স্নেহকে জিজ্ঞেস করলেন,
–‘ বাবাই কিছু দেখেছো তুমি? ‘
উত্তর এলো না ৷ সে ঘুমিয়ে পরেছে কাঁধে মাথা রেখে৷ স্নেহের সাড়াশব্দ না পেয়ে আমাকে একহাতে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
‘ পবিত্রতায় ছেয়ে যাক সব
ভালোবাসায় সিক্ত হোক সব
এক পশলা বৃষ্টি হোক মনের আকাশে
তোমার আমার ভালোবাসা হোক শুভ্র রঙের প্রেমময়ে
একরাশ শুভ্রতা নামুক সবজুড়ে
ভালোবাসি শুভ্র পরী,শেষ ঠিকানায় শেষ নিশ্বাঃসে… ‘
সমাপ্ত
নোটঃ জানি না কেমন হয়েছে৷ আদেও শেষ করতে পেরেছি কিনা আপনাদের মন মতো৷ ভুল ক্রটি করেছি অনেক!অনেক জায়গায় মিস্টেক করেছি৷ আরো সাজানো আরো পসরা বাকি ছিলো হয়তো৷ মন্তব্য আশা করছি ৷ গল্পটা শুভ্র রঙের প্রেম এন্ডিং পাল্টেছি সত্যি আপনাদের জন্য৷ হোক কিছুটা অগোছালো দিনশেষে যারা অপেক্ষা করে থাকতো তাদের মুখে তো প্রশান্তি বইবে এইজন্য না হয় এই এন্ড থাক৷ শুভ্র প্রেমময় এন্ড!