শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব-১৬+১৭

0
227

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (১৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________

আরাফের ওটুকু কথা যথেষ্ট ছিলো আমার নির্বাক হওয়ার জন্য৷ আরাফ অনাথ! আর আমি ওকে এতো কথা শুনালাম পরিবার নিয়ে! নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হলো। ছেলেটাকে নিজের অজান্তেই আ’ঘাত করে ফেললাম। তাও তার দুর্বল জায়গায়! আমি মাথা নিচু করে নিলাম। কি করবো বা কি বলবো বুঝে উঠলাম না। আরাফের নিষ্প্রাণ দৃষ্টি যেনো আমাকে আরো পু’ড়াচ্ছিলো। নিজেকে অসহায় মনে হলো। আরাফ এগিয়ে আসে আমার কাছে। আমি চোখ তুলে তাকালাম তার দিকে। আরাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আমার একটা হাত ধরে। কেঁপে উঠলাম আমি। ব্যস্ত হাতে তার হাত ধরলাম। আপনমনেই হাত চলে গেলো আরাফের কপালে। ভেতরটা অস্থির হলো। ব্যস্ত গলায় বললাম,

‘আপনার তো ভীষণ জ্বর। গা পু’ড়ে যাচ্ছে। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কিভাবে! এসব কি পাগলামো আরাফ? আপনার জ্বর কত? ওষুধ খাননি?’

আরাফ অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘ঠিক আছি আমি। সিহাবকে আনতে দেড়ি হয়ে যাবে। চলুন এগোই!’

আমি অবাক হলাম। ছেলেটার গায়ের তাপমাত্রা এতোটাই বেশি যে আমার হাত ছোঁয়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছিলো হাত জ্ব’লতেছে। তারপরও বলতেছে ঠিক আছে! রাগ হলো মুহুর্তেই। কিন্তু নিজেকে শান্ত করে নিলাম। কন্ঠ গম্ভীর করে বললাম,

‘আপনার কোথাও যেতে হবে না। এক্ষুণি বাড়ি যান। জ্বর ভালো না হলে যেনো আপনাকে আর না দেখা যায় এখানে।’

‘আপনার এই যে অস্থিরতা আমাকে নিয়ে! এটুকুতেই আমি অর্ধেক সুস্থ।’

ছেলেটার যে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই। নিশ্চয় জ্বরের ঘোরে ভুল বকতেছে। আমি আর দাঁড়ালাম না। আরাফের হাত শক্ত করে ধরে এগোতে শুরু করলাম। আরাফের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছে। অদ্ভুত প্রশান্তি তার ঠোঁটের কোণে। চোখে মুখে অদ্ভুত মুগ্ধতা। আমি এড়াতে পারলাম না তা। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে দুরে সরে যাবো কিন্তু যে কারণে দুরে সরতে চেয়েছিলাম সেইটা বাস্তবতাতে তো নাই। তার পরিবার নেই। আর সমাজ! সে তো সারাবছরই পিঠপিছে কথা বলবে। কিন্তু এই সত্যিকারের মানুষটা হারালে আমি হেরে যাবো। জীবন যুদ্ধে হারিয়ে ফেলবো ভালোবাসা। আমি সমাজের জন্য ভালোবাসা হারাতে চাই না। মুচকি হেঁসে আরাফের হাত আরো শক্ত করে ধরলাম। মনে মনে আওড়ালাম,

‘এই মানুষটার হাত যেনো আজীবন আমার হাতের মুঠোতেই থাকে আল্লাহ। জীবনে যত যা হারিয়েছে আমি মেনে নিয়েছি শুধু এই মানুষটাকে আর কেড়ে নিবেন না।’

আরাফকে নিয়ে রাস্তা পার হলাম। আরাফ হাঁটতে হাঁটতে ডাকে, ‘মায়া!’

আমি শুধু ছোট্ট করে ‘হু’ বললাম। আরাফ নিজে থেকেই বলতে শুরু করে, ‘যাদের জন্য আমার হতে ভয় পাচ্ছিলেন তারা অনেক ছোট বেলাতেই আমাকে ছেড়ে আকাশের তাঁরা হয়ে গেছিলো। এরপর আমি বড় হয়েছি অনাথ আশ্রমে। বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া একটা ফ্ল্যাট, ব্যাংকের টাকা আর কিছু সম্পত্তি ছিলো আমার নামে। তারা মা’রা যাওয়ার আগেই আমার নামে রেখে গেছিলেন। যা আমি ১৮ বছর হওয়ার পরই পাবো। আমার বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে আর ওগুলো নিয়ে আমার খালামনি আমাকে অনাথ আশ্রমে রেখে যায়। কাগজ গুলো আশ্রমের একজন কর্মকর্তার কাছে ছিলো। ভাগ্য ভালো ছিলো বলে তিনি বড় হওয়ার পর কাগজ গুলো আমাকে দিয়ে দেন। ১৮ বছর হওয়ার পর আমাকে অনাথ আশ্রম থেকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। চলে আসলাম নিজের ফ্ল্যাটে। তারপর থেকে পার্টটাইম জব, পড়াশোনা আর বাবা-মার স্মৃতি নিয়েই জীবন চলছিলো। কখনো কোনো মেয়েকে জীবনে আনার পরিকল্পনা ছিলো না। ওই ফুটপাতটা ছিলো আমার আড্ডা দেওয়ার সঙ্গী৷ আর ওখানেই আপনাকে পেয়ে গেলাম। আপনার ওই মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আজীবন কাটিয়ে দেবো মায়া। আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমার হয়ে থেকে যান না! হয়তো আমি আপনাকে খুব বেশি কিছু কখনোই দিতে পারবো না কিন্তু পৃথিবীর সব সুখ আপনার পায়ে এনে দেওয়ার চেষ্টা করবো আজীবন। আপনাকে ভালোবেসে আমি আজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো৷ আমার তো কেউ নেই মায়া। আমার হয়ে যান না! হবেন আমার?’

কি বলবো বা কি উত্তর দিবো বুঝে উঠলাম না। তার চোখে মুখে অসহায়তা। তার কন্ঠে আবেদন, ভালোবাসা। তার চোখ পরিষ্কার বলে দেয় সে আমাতে কতটা তৃপ্ত। আমাকে কতটা ভালোবাসে তা তার চোখেই স্পষ্ট। আমি জবাব দিলাম না। শুধু হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকলাম। এতেই হয়তো তার বুঝা হয়ে গেলো আমার উত্তর। সে হাসলো। প্রশান্তি নিয়ে হাসলো। মানুষটা হাসলে মনে হয় তার চোখ মুখও হাসছে। কি মিষ্টি লাগে তখন! আমি আরাফকে বললাাম,

‘আপনার বাড়ি কোনদিকে?’

আরাফ উল্টো দিকে হাত দিয়ে ঈশারা করে বললো, ‘ওদিকে।’

আমি আর না এগিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। আরাফ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে বললাম, ‘আপনি এখন বাড়ি যান। সুস্থ হলে কাল আসবেন নয়তো আসার দরকার নাই।’

‘আপনি?’

‘সিহাবকে নিয়ে চলে যাবো।’

‘আরেকটু থাকি?’

আমি কাঠকাঠ গলায় বললাম, ‘না।’

এরপর উনি আর কিছু বলেনি। শুধু বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে সিএনজি নিয়ে চলে যায়। উনার কান্ড দেখে আমার হাসি পেলো ভীষণ। একদফা হেঁসেও নিয়েছি। এ মানুষটাকে আগলে রাখার দায়িত্ব আমার। আমি উনাকে হারাতে চাই না আর ইন শাহ আল্লাহ হারাবোও না। মানুষটাকে আমিও ভালোবাসি৷ হ্যাঁ আর স্বীকার করতে ক্ষ’তি নেই৷ এই ঠুনকো সমাজের জন্য আমি ভালোবাসার হাত ছাড়বো না। আমার পুরো অতীত জেনেও সে আমাকে ভালোবাসতে পারলে আমি সামান্য তার হাত ধরে রাখতে পারবো না? আলবাত পারবো। পারতে হবেই।

___________
বাড়ি এসে ফুরফুরে মেজাজে গোসল করে নিলাম। কিন্তু খারাপ লাগছিলো আরাফ অনাথ এটা ভেবে। আমি তো কেবল ৪ বছর থেকে বাবা-মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত সে তো গত কয়েক বছর থেকে বাবা-মা হারা। বড় হয়েছে অনাথ আশ্রমে। বাবা-মায়ের আদর ছাড়া। আনমনে এসব ভাবছিলাম তখনই মাহমুদা ধাক্কা দেয়। আমি চমকে উঠি। মাহমুদা ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘আজকাল মন কোথায় থাকে বুবু? তোমাকে কতবার ডাকছি সে খেয়াল আছে নাকি অন্য কারোর কাছে চলে গেছে!’

ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘এমন মা’র মা’রবো না বুবুর সাথে ফাজলামি বের হয়ে যাবে। ডেকেছিস কেনো হুহ?’

মাহমুদা ব্যস্ত গলায় বলে, ‘বুবু তিন্নি আপার শরীরটা না তেমন ভালো না। উনার নাকি ৭ মাস চলতেছে। এই সময়গুলো তে অনেক রিস্ক থাকে। তুমি একটু যাও না!’

আমি ওর কথা শুনে দ্রুত পায়ে তিন্নির ঘরের দিকে গেলাম। তিন্নি পেটে হাত রেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আমি ওর পায়ের কাছে বসে বললাম,

‘তিন্নি বেশি কষ্ট হচ্ছে?’

তিন্নি চোখ মেলে তাকায় আমার দিকে। হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘নাহ গো। তেমন কষ্ট হচ্ছে না। এসময় বাবু একটু বেশিই নড়াচড়া করে তো তাই ব্যাথা হয়। সমস্যা নেই৷ ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কখনো আসছো?’

‘একটু আগে এসে গোসল করছি শুধু। সোহান ভাই কই?’

‘উনি না ২ দিনের জন্য একটা কাজে গেছে। যেতে চায়নি কিন্তু উনি না গেলে নাকি হবে না তাই বাধ্য হয়ে গেছে। তাতে কি! মিনিটে মিনিটে কল দিচ্ছে নয়তো টেক্সট দিচ্ছে। এতো চিন্তায় যে কেমনে কাজ করবে কে জানে!’

বলেই হাসে। বিষয়টা আমার ভালো লাগলো না। এমনিতেই আগের মাসে ওর পেটে অনেক ব্যাথা হয়েছিলো এখন আবার কোনো ভাবে সমস্যা হলে আমি একা সামলাবো কিভাবে! আর এসময়ও তো আরো পাশে থাকার কথা সোহান ভাইয়ের। তারপরও নিজেকে বুঝ দিলাম এটা ভেবে যে সোহান ভাইয়ের তো কাজ আছে। এর মধ্যেই মাহিদও চলে আসে। ফল হাতে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

‘আপু আপনার ফলমূল। ভাইয়া কালই চলে আসবে আপনি কিন্তু একদম অনিয়ম করবেন না।’

আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বুবু আজ তুমি আর মাহমুদা এখানেই থেকে যাও।’

আমিও এটাই ভাবছিলাম। তিন্নিকে একা রাখাটা ঠিক হবে না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘হ্যাঁ আমিও এটাই ভাবছিলাম। আজ আমি, মাহমুদা আর মাইশা একসাথে থেকে যাই। মাইশা আবার একা থাকবে না তো।’

তিন্নি বলে, ‘থাক না মায়া। আমি থাকতে পারবো সমস্যা নাই।’

‘তুমি থাকতে পারলেও আমরা থাকবো। আর তোমার সমস্যা না থাকলেও আমাদের আছে। বুঝছো!’

তিন্নি হেঁসে মাথা নাড়ায়। আমি মাহিদকে ঘরে গিয়ে খেয়ে নিতে বললাম৷ তাছাড়া মাহমুদাও আছে। তিন্নি আর আমি গল্প জুড়ে দিলাম। তিন্নি কথায় কথায় বলে, ‘তোমরা আমার আপন না হয়েও কত খেয়াল রাখো! অথচ আমি প্রেগন্যান্ট জেনেও আমার ভাইয়া ভাবি একটাবারও দেখতে আসলো না।’

তিন্নির মন খারাপ হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম। আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, ‘ওহহ তাই তো। আমরা তো তোমার কেউ না তাই না। ঠিকই আছে৷ বুঝছি।’

তিন্নি কপাল চাপড়ে বলে,, ‘বেশি বুঝলে মাথা কে’টে ফেলবো।’

দুজনেই হেঁসে দিলাম। রাতে আমি, মাহিদ, মাহমুদা, তিন্নি লুডু নিয়ে বসলাম। পাশ থেকে সিহাব আর মাইশা আমাদের হয়ে চেচাচ্ছে। আমি আবার বরাবরই লুডুতে জিততে পারি না। তাই জিতে গেলো মাহিদ। জিতে গিয়ে তো তার খুশি শেষ হয় না। খেলায় খেলায় তিন্নিও কিছুটা সময়ের জন্য ব্যাথাটা ভুলে গেলো। কিন্তু আমার চিন্তা কমলো না। এমনিতেও তো বাচ্চাটার পজিশন ভালো না তারওপর এই ৭ মাসেই কোনো ভাবে ডেলিভারি করতে হলে সমস্যার শেষ থাকবে না। সারা রাতের বেশিটা সময় আমি জেগে থাকলাম। এরপর মাহমুদা জাগলো। আমার ডিউটি আছে বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

________
সকাল থেকেই মনটা কেমন খচখচ করছে। মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে৷ এতো করে মনকে বুঝানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। তিন্নিকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে এসেছি আর মাহমুদাকে বলেছি কোনো সমস্যা হলেই যেনো কল দেয়। ফুটপাতে এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো আরাফকে। ছেলেটা আজও এসেছে! আমি এগোলাম তার দিকে। সে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। আমি কন্ঠ কড়া করে বললাম,

‘প্রতিদিন এখানে কি? জ্বর কমেছে? নাকি আজও জ্বর নিয়ে চলে এসেছেন!’

আরাফ মাথা খানিকটা এগিয়ে দেয় আমার দিকে। ঈশারা করে বলে, ‘নিজেই দেখে নিন ম্যাম। জ্বর কমে গেছে।’

আমি ভড়কে পিছে সরে গেলাম৷ আরাফ ঠোঁট চেপে হাসে। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম। আরাফ হাঁসা বন্ধ করে বলে, ‘এভাবে তাকানোর কি আছে! আমি ভয় পাবো তো।’

‘জ্বর কমে গেছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা আপনার কোনো কাাজ নেই? প্রতিদিন দুই বেলা এখানে কেনো?’

আরাফ ঠাট্টার স্বরে বলে, ‘কাজ তো আছে। এই ফুটপাতে মনে হয় আমার প্রেমিকা আছে তাই তার টানে টানে চলে আসি।’

আমি কিছু বললাম না। আরাফ হেয়ালি ছেড়ে সিরিয়াস হয়ে বললো, ‘আপনার কি হয়েছে আজ? দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে।’

প্রথমে ভাবলাম বলবো না। পরে কি মনে করে বললাম, ‘আসলে আমার একটা বোন আছে। মানে পাশের বাসার আর কি! সে ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট কিন্তু কাল থেকে ওর ব্যাথা বাড়ছে। আমার মন কেমন যেনো করতেছে! বোঝেনই তো।’

‘উনার কাছে কেউ নাই? উনাার হাজবেন্ড বা ফ্যামিলির কেউ?’

‘নাহ। উনার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে থাকে না আর ভাইয়া কাজের জন্য শহরের বাহিরে গেছে। তবে আমার বোন আছে।’

‘আচ্ছা চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আমি মাথা নাড়িয়ে চলে আসতে নিলে পেছন থেকে আরাফ ডাকে। বলে, ‘আপনার কাছে ফোন আছে?’

আমি মাথা নাড়ালাম। সে ফের বলে, ‘নাম্বারটা দেন।’

আমি ভড়কে গেলাম। ফোন দিচ্ছি না বলে আরাফ মুখের দিকে তাকালো। আশ্বাসের স্বরে বলে, ‘আরেহ আমি প্রয়োজন ছাড়া কল করবো না। আর এখন নাম্বার নিচ্ছি আপনার নিজের জন্যই। কোনো সমস্যা হলে বা আমার হেল্প লাগলে আপনি কল দিয়েন৷ তাও বিশ্বাস না হলে শুধু আমার নাম্বার নিয়ে যান।’

কি করবো না করবো ভেবে পেলাম না। শেষ পর্যন্ত ফোন বের করে দিলাম৷ আরাফ নিজের নাম্বার আমার ফোনে দিয়ে আবার সেইভও করে দিলো। আমি ফোন নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

কাজে বসার ২ ঘন্টা পরই হঠাৎ করে তিন্নির নাম্বার থেকে কল। আমি দ্রুত কল রিসিভ করতেই মাহমুদা ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘বুবু তিন্নি আপার ভীষণ ব্যাথা করতেছে। আর প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি আসো।’

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (১৭)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________

মাহমুদার কথা শুনে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। কি রেখে কি করবো মাথায় আসলো না। মাহমুদা ওপাশ থেকে দুবার ‘বুবু’ বলে ডেকেছে। আমি কোনো রকমে নিজেকে শান্ত করে ব্যস্ত গলায় বললাম,

‘মাহমুদা তুই তাড়াতাড়ি মাহিদকে কল দে। এখনি বাড়ি যেতে বল। তিন্নিকে একা ছাড়িস না৷ আমি এখনি আসতেছি।’

মাহমুদার জবাব নাা শুনেই কল কেটে দিলাম। তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে আগে ছুটলাম ম্যানেজারের কাছে। মনে মনে আল্লাহকে ডেকে চলেছি। এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না৷ ম্যানেজারের কাছে গিয়েই একদমে বলতে শুরু করলাম,

‘স্যার! আমার ছুটি লাগবে স্যার। আমার বোনের অবস্থা ভালো না ওকে এখনি হাসপাতাল নিতে হবে। আমি নাা গেলে ওকে হসপিটালে নেওয়া হবে না।’

ম্যানেজার বিরক্তির কন্ঠে বলে, ‘এখনই কিসের ছুটি? মাত্র তো ২ ঘন্টা আগে আসলে। আর তোমার বোনের কাছে বাড়ির কেউ নেই?’

‘আছে। কিন্তু ওর স্বামী শহরের বাহিরে গেছে। বাড়িতে শুধু আমার ছোট ছোট ২ টা বোন। প্লিজ স্যার আমাকে ছুটি দেন নয়তো বোনকে আর বাঁচাতে পারবো না।’

সেই মুহুর্তে ছুটে আসে হেনা। আমাকে আকুতি মিনুতি করতে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়ছে মায়া? এমন করছিস কেনো?’

হেনা আপাকে আঁকড়ে ধরে ব্যস্ত গলায় অস্থির ভাবে বললাম, ‘আপা তিন্নির হঠাৎ করে খুব ব্যাথা করতেছে আর প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। মাহমুদা কল দিয়েছিলো। ওকে হসপিটাল না নিলে যা তা হতে পারে। সোহান ভাইও বাড়িতে নেই।’

হেনা আপা নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন৷ ম্যানেজারের বোধহয় আমার কথাতে মায়া হলো৷ সে দিয়ে দিলো ছুটি। কোনোরকমে দৌড়ে বের হলাম গার্মেন্টস থেকে। পিছন পিছন হেনা আপাও আসলো। দুজনে একসাথেই ছুটলাম। সিএনজিতে উঠে আগে কল দিলাম মাহিদকে। দুবার রিং হওয়ার পরই মাহিদ কল রিসিভ করে। ওপার থেকে ব্যস্ত গলায় বলে,

‘বুবু তিন্নি আপার অবস্থা ভালো না। আমি বাড়িতে চলে আসছি। কিন্তু কি করবো!’

‘তুই তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে রাস্তায় আয়। আমি সিএনজিতে আছি। মাহমুদাকে নিয়ে আয় আর মাহমুদাকে বলবি রিপোর্ট গুলো আনতে। তুই পারবি না তিন্নিকে আনতে?’

‘পারবো পারবো। আমি আসতেছি।’

সিএনজিওয়ালা বোধহয় বুঝলো আমরা বিপদে পড়েছি। সে যত টুকু পারে দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে আসে। আমরা আসতে আসতে মাহিদ তিন্নিকে নিয়ে চলে এসেছে। মাহিদ, মাহমুদাকে বললাম সোহান ভাইকে কল দিয়ে জানাতে আর অন্য একটা সিএনজি নিয়ে আসতে। মাহিদ আর মাহমুদা সম্মতি জানালো। সিএনজি ওয়ালা চাচা বললেন,

‘মা উনার তো মনে হয় সময় হয়ে গেছে। হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে চেষ্টা করে একবার দেখবেন?’

হেনা আপাও বললেন, ‘হ্যাঁ মায়া। আমার মনে হয় তিন্নির ডেলিভারির সময় হয়ে গেছে।’

‘আমিও বুঝতেছি আপা। কিন্তু তিন্নির কেবল ৭ মাস তারওপর ওর বাচ্চার পজিশন ভালো না। নরমাল ডেলিভারি করতে গেলে দুজনেরই অবস্থা খারাপ বয় কি ভালো হবে না। সিজার করতে হবে।’

সিএনজি ওয়ালা চাচা আর থামলেন না। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো শুরু করলেন। তিন্নি সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কাঁদতেছে। চোখ মুখ ব্যাথায় নীল হয়ে গেছে। কোনোরকমে আমাকে শক্ত করে ধরে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘আমি মনে হয় বাঁচবো না মায়া। তোমার ভাইয়াকে আসতে বলো। আমি উনাকে দেখবো।’

আমি কি বলবো কিছু বুঝলাম না। শুধু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকলাম। তিন্নি আমার বুকে মুখ গুজে দিয়ে গোঙাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলাম হাসপাতালে। পিছনে মাহিদের সিএনজিও এসে দাঁড়ালো। মাহিদ দ্রুত ভাড়া দিয়ে এসে তিন্নিকে কোলে তুলে নেয়। ততক্ষণে তিন্নির ব্যাথা বেড়ে গেছে। মাহিদের পেছন পেছন আমরা সবাই আসলাম। ইমার্জেন্সিতে রাখতেই একজন ডাক্তার ছুটে আসলেন। ১ মাস আগের রিপোর্ট গুলো তাকে এগিয়ে দিতেই তিনি বললেন,

‘উনার অবস্থা খুব একটা ভালো না। ইমার্জেন্সি সিজারের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনারা দ্রুত উনার ফর্মালিটিজ সব পূরণ করুন। আর উনার হাজবেন্ড কই?’

‘ভাইয়া তো শহরের বাহিরে। আসতে অনেকটাই দেড়ি হবে।’

ডাক্তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে। রিসিপশনে গিয়ে সব ফর্মালিটি পূরণ করে আসুন।’

ডাক্তার চলে যায়। আমি আর মাহিদ দ্রুত ছুটলাম রিসিপশনের দিকে। ওদিকে তখনো তিন্নির চেঁচানোর আওয়াজ পাচ্ছি। বার বার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেছি যেনো কোনোভাবেই তিন্নি আর ওর বাচ্চার কোনো ক্ষ’তি না হয়। তিন্নির ফোনে বার বার কল আসছে সোহান ভাইয়ের। কি রেখে কি করবো, কি বলবো আমার মাথা কোনো ভাবেই কাজ করতেছে না। সব ফর্মালিটি পূূরণ করলাম। রিসিপশনে এখনই ১৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। টাকা না দিলে কোনো ভাবেই ওটিতে নিবে না তিন্নিকে। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। মাহিদ নিভে যাওয়া কন্ঠে বলে,

‘বুবু টাকা!’

আমি ওর বাহুতে হাত রেখে দ্রুত কন্ঠে বললাম, ‘তুই এখনই বাড়ি যা। যেখানে যে টাকা আছে যা আছে সবটা নিয়ে আয়। আমরা আরো ২ মাস কষ্ট করে চলবো কিন্তু কোনোভাবেই তিন্নির কিছু হওয়া যাবে না। দ্রুত যা! এখনই যা।’

মাহিদকে ঠেলে পাঠালাম। হেনা আপা ডাকলেন মাহিদকে। তিনিও সাথে গেলেন। আমি আর মাহমুদা তিন্নির কাছে থাকলাম। ওকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেয়েটার ব্লিডিং কমতেছে না। ওর কষ্ট দেখে আমার নিজেরই কান্না পেলো। নিজেকে সামলে তিন্নিকে সামলানোর চেষ্টা করলাম। তিন্নি শুধু বার বার ওর বাচ্চা আর সোহান ভাইয়ের কথা বলতেছে। ‘ও’ ধরেই নিছে হয়তো ‘ও’ আর বাঁচবে না। একজন নার্স এসে দ্রুত বললেন,

‘আপনারা এখনো টাকা জমা দেননি? যা করার দ্রুত করুন। পেশেন্টের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।’

করুণ গলায় নার্সটির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘টাকা আনতে গেছে। আপনারা প্লিজ ওর চিকিৎসা শুরু করুন। মেয়েটাকে আর এভাবে রাখবেন না দয়া করে।’

নার্স শুধু অসহায় চোখে তাকালো। আজ ভীষণ করে নিজেদের অসহায়ত্বের ওপর অভিযোগ করতে ইচ্ছে করলো। টাকার জন্য মেয়েটার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। ডাক্তাররা নাকি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে! যদিও আল্লাহ তায়ালাই হায়াতের মালিক তারপরও তাদের উছিলাতেই তো মানুষ সুস্থ হয়। কিছু টাকার জন্য দুটো প্রাণ ফেলে রেখেছে। এরা কি মানুষ! এদের মনুষ্যত্ব কি একদমই হারিয়ে গেছে! আমার ভাবনার মধ্যেই ডাক্তার নিজেই আবার আসলো। আমাদের এখনো এ পরিস্থিতিতে দেখে তাড়া দেওয়া ভঙ্গিতে বললেন,

‘আপনারা এখনো পেশেন্টকে ফেলে রেখেছেন কেনো? উনার তো অবস্থা খারাপ হচ্ছে।’

পাশ থেকে নার্স জবাব দিলেন, ‘ম্যাম উনারা এখনো পেমেন্ট করেননি।’

আমি ব্যস্ত কন্ঠে বললাম, ‘ম্যাম আমার ভাই টাকা আনতে গেছে। ‘ও’ আসলেই পেমেন্ট করে দিবো। দয়া করে ওর চিকিৎসা শুরু করুন। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ম্যাম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা পরিশোধ করে দিবো। প্লিজ ওর চিকিৎসা শুরু করুন।’

ডাক্তার ম্যাম আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর নার্সের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘উনাকে এখনি ওটিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করো।’

ম্যামের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালাম। এই বিপদের সময় উনি এভাবে সাগায্য করবেন বুঝতে পারিনি। তিন্নির চিৎকার ততক্ষণে আরো বেড়ে গেছে। ব্লাড যাচ্ছে হু হু করে। মনের কোণে ভীষণ ভয় জমে গেলো। নার্স ওকে ওটিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে আরেকজন নার্স এসে আমাদের কাছে বর্ন পেপার দিলেন। অপারেশনের সময় তিন্নির বা ওর বাচ্চাটার কিছু হয়ে গেলে কতৃপক্ষ তার দায় নিবেন না। অভিভাবক হিসেবে সোহান ভাইকে লাগলেও সে না থাকায় সাইনটা আমিই করলাম। ওটিতে নেওয়া হলো তিন্নিকে। আমি আর মাহমুদা নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। হাসপাতালে আলাদা ভাবে নামাজের জায়গা থাকায় সেখানে মাহমুদা নফল নামাজ পড়তে গেলো। আমি বসে রইলাম। কিছুক্ষণ বাদেই হেনা আপা আর মাহিদ আসে। কিছু টাকাা হেনা আপার আর কিছু টাকা আমাদের। সব মিলিয়ে হাতে কিছু রেখে রিসিপশনে টাকা জমা দিয়ে আসলাম।

প্রায় ১ ঘন্টা পর ওটি থেকে একজন নার্স আসলেন। সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটলাম তার কাছে। নার্স ব্যস্ত গলায় বললেন,

‘পেশেন্টের প্রচুর ব্লিডিং হয়ে গেছে। দ্রুত বি পজিটিভ রক্তের জোগাড় করুন। ৩ ব্যাগ রক্ত লাগবে। উনার আর বাচ্চার অবস্থা খুব একটা ভালো না।’

হেনা আপা এগিয়ে এসে বলে, ‘আমার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। আমি পারবো উনাকে রক্ত দিতে?’

নার্স মাথা নাড়ালেন। মাহিদও এগিয়ে বললো, ‘ম্যাম আমার রক্তের গ্রুপও বি পজিটিভ। আমি কি রক্ত দিতে পারবো?’

‘বয়স কত আপনার?’

‘১৮।’

‘ঠিক আছে দুজনই জলদি আসুন। আপনারা আরো ১ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করুন।’

আমার আর মাহমুদার রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। আমি একবার টেস্ট করিয়েছিলাম তখন জেনেছিলাম। আর মাহমুদা, মাহিদ ওদের স্কুলে দরকার ছিলো রক্তের গ্রুপ তখন পরীক্ষা করিয়েছিলো। এখন এক ব্যাগ রক্ত কোথায় পাবো ভেবে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মাথায় এলো আরাফের কথা। আচ্ছা উনি আমাকে সাহায্য করবে না! কোনো কিছু ভাবলাম না। দ্রুত কল লাগালাম উনার ফোনে। উনি বোধহয় বুঝেছিলেন আমার সাহায্যের দরকার পড়তে পারে তাই তো তার নাম্বার সেইভ করে দিয়েছিলো। প্রথম বার উনি ফোন তুললেন না। কিন্তু ২য় বারের বেলায় কল তুললেন। উনাকে কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত বললাম,

‘আরাফ আমি মায়া। আপনার সাহায্য দরকার আরাফ। আমাকে একটু রক্তের ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।’

‘শান্ত হোন প্রথমে। কার লাগবে রক্ত? কি গ্রুপ? আর কতটুকু্?’

‘তিন্নির মানে আমার বোনের। সকালে যার কথা বললাম ওর। বি পজিটিভ রক্ত, ১ ব্যাগ লাগবে।’

‘আচ্ছা ঠিকানা দিন আমি আসতেছি।’

আমি উনাকে ঠিকানা দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকলাম। মাহিদ আর হেনা আপা রক্ত দিয়ে বের হওয়ার পরপরই আরাফ ছুটে আসে। আমি উনাকে দেখে আগে উনার কাছে ছুটে গেলাম। আরাফ আমাকে দেখে বলে,

‘আপনি চিন্তা করবেন না। চলুন আমি রক্ত দিচ্ছি।’

‘আপনি!’

খানিকটা অবাক হয়েই তাকালাম। ছেলেটা চেনে না জানে না অথচ আমাদের জন্য সত্যি নিজের রক্ত দেবে! আরাফ বললেন,

‘হ্যাঁ আমিই দেবো। আমার রক্তের গ্রুপও বি পজিটিভ। জলদি চলুন।’

উনাকে নিয়ে নার্সের কাছে গেলাম। নার্স রক্ত নিতে শুরু করলেন। আমি হেনা আপা আর মাহিদর কাছে আসলাম৷ মাহিদ আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওটা কে বুবু?’

আমি কি উত্তর দেবো ভেবে পেলাম না৷ মাথা নিচু করে নিলাম৷ মাহিদ নিজেও আর প্রশ্ন করলো না। মাহিদ আর হেনা আপাকে কিছু খাওয়াতে বলেছে। তাই আমি জলদি হাসপাতালের নিচে নেমে কিছু খাবার, পানি আর ফল কিনে নিলাম। হেনা আপা আর মাহিদকে খাওয়ালাম। এই পরিস্থিতিতে কারো গলা দিয়ে কিছু না নামলেও খেতে তো হবেই। মাহমুদা আমাকে বললো,

‘বুবু! সোহান ভাই কল দিতেছে একটু পর পর। উনি গাড়িতে আছে। আসতে আর ১ ঘন্টা লাগবে। কিন্তু পাগলের মতো করতেছে। আমার চিন্তা হচ্ছে না জানি উনার কিছু হয়ে যায়!’

‘এবার কল দিলে বলবি সব ঠিক আছে। আপনি ধীরে সুস্থে আসুন।’

মাহমুদা মাথা নাড়ালো। আরো প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর বাচ্চাার কান্নার আওয়াজ পেলাম। আরাফ তখনো হসপিটালেই আছে। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললাম। নার্স এসে একটা তোয়ালেতে জড়ানো বাচ্চা আমার কোলে দিলেন। কাঁপা কাঁপা হাতে তাকে কোলে নিলাম। মেয়ে হয়েছে। একদম তিন্নির মতো দেখতে। তিন্নির কথা মাথাতে আসতেই নার্সের দিকে তাকালাম। আরাফ আমার আগেই জিজ্ঞেস করলেন,

‘বাচ্চার মা?’

‘কোনোরকমে উনার ব্লিডিং বন্ধ হয়েছে। উনাকে কেবিনে দেওয়া হবে একটু পর।’

নার্সের কথা শুনলেও মনে শান্তি পেলাম না। একদম ছোট্ট একটা বাচ্চা। একটুখানি হয়েছে। সময়ের আগে হয়েছে বলেই মনে হয় এতটুকু। তিন্নির যদি কিছু হয়ে যায় এই বাচ্চাটার কি হবে! সোহান ভাই নিজেই তো পাগল হয়ে যাবে। ভেতরের অস্থিরতা কমলো না। আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকলামম শুধু। তিনিই একমাত্র ভরসা।

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)