সঞ্চারিণী পর্ব-৩৭+৩৮

0
575

সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৩৭.
শাওন বারান্দার গ্লাস সরিয়ে ভেতরে পা রাখতেই রশ্নিকে দেখতে পেলো।ঠিক সে অবস্থায় যে অবস্থায় রশ্নিকে সে শেষবার দেখেছিল।পোড়া শরীর।মেধা এই কারণেই ভয় পাচ্ছিল তাহলে।
শাওন এগিয়ে এসে ওকে ধরতে যেতেই ও দূরে সরে দাঁড়িয়ে বললো,’আমাকে আর ভালবাসো না তাইনা?’

-‘এমনটা নয়। আমি তোমাকেই ভালেবাসি।কেন অন্য কিছু ভাবছো?’

রশ্নি শাওনের হাত ধরে বললো,’চলো দূরে কোথাও চলে যাই।পারবেনা?’

শাওন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।মেধা রুম থেকে বেরিয়ে সবাইকে খুঁজতে খুঁজতে সামনের দিকে গেছে।শাওনের বাবা -মা তাদের রুমে কথা বলছেন।আরিফা কার্টুন দেখছে সোফায় বসে।
আর বুয়া রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছেন।
মেধা আবার ফেরত আসতে যেতেই দেখলো শাওন হনহনিয়ে ওর সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।মেধা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো।আগাগোড়া কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।তাই পিছু পিছু গিয়ে বললো,’কোথায় যান আপনি?’

.
শাওন পেছনে তাকিয়ে বললো,’রশ্নিকে নিয়ে দূরে কোথাও।বাবাকে বলবে অফিসে গেছি’

কথাটা কান দিয়ে ঢোকার পর মেধার গায়ে হালকার উপর ঝাপসা করে জ্বলে উঠেছে।কেন তা সে জানেনা।শাওন চলে যাওয়া পর্যন্ত চেয়ে রইলো সে।তারপর মুখটা গম্ভীর করে পুনরায় বাসায় ফিরে আসলো।আজ তৃনার বৌভাত,শাওন মেধারও বৌভাত।
বাবা মা বললেন আজকে তৃনার বৌভাত হয়ে যাক।কাল ঘটা করে শাওন আর মেধার বৌভাত অনুষ্ঠান করে নেবে।
মেধাকে শাওনের মা একটা শাড়ী ধরিয়ে দিয়ে বললেন পরে নিতে।আবার মেধাকে বলে শাওনকে জলদি আসতে বলে দিয়েছেন।
মেধা সব ফেলে ব্যাংকে গেছে তার ক্লিপ ঠিক আছে কিনা দেখবে বলে।এসে দেখলো সব ঠিক আছে। তাহলে রকি মিথ্যে কেন বললো সেটা ওর মাথায় আসলোনা।
-‘রকি খুব চালাক।হয়ত সে এই প্ল্যান করেছে আমি ক্লিপটাকে কোন জায়গায় রেখেছি তা জানার জন্য।একদম তাই।তাহলে ক্লিপ এটা তো আর এখানে রাখা যাবেনা।এতক্ষণে তার লাগানো লোক দিয়ে জপনেও গেছে আমি এই ব্যাংকে এসেছি।কি করা যায়!’
—–
মেধা ক্লিপটা সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।এটাকে জায়গামতন লুকাতে হবে।ভাবার আর সময় পেলোনা।শাওনের বাবা এসে জিজ্ঞেস করলেন শাওন কখন আসবে।মেধা থতমত খেয়ে বললো,’আমি তো জানিনা কখন আসবেন।উনার ফোন বন্ধ’

বাবা মুখটা ফুলিয়ে চলে গেলেন।মনে হচ্ছে শাওনকে পেলে কাঁচা চিবাবেন।মেধা তাড়াতাড়ি করে ফোন নিয়ে শাওনকে দুবার কল দিলো।সত্যি সত্যি তার ফোন বন্ধ।
-‘রশ্নিকে নিয়ে কোন হানিমুনে গেছে কে জানে।বুঝিনা এই ভূতটা ইদানিং বেশি বাড় বেড়েছে কেন।এতদিন তো ভালোই ছিল। এই তো সেদিন আমার হাতে পায়ে ধরে বলছিল আমি যেন শাওনকে নিজের করে নিই।তাহলে এখন আবার তার কি এমন সুবুদ্ধি হলো যে একেবারে শাওনকে নিয়ে ভেগে গেছে।
যাক গে! গেছে ভালো।আমি আমার লাইফ আগের মতন লিড করতে পারবো।’

-‘মেধা মা শুনো’

-‘জ্বী বলুন’

-‘আমার একটা ভাইয়ের ছেলে আসবে আজকে।লন্ডন থেকে।ও আমাদের বাসাটা চিনেনা।দেখলে তো আমি কত ব্যস্ত?? তুমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে?’

-“আচ্ছা সমস্যা নেই।’

-“আরিফাকেও নিয়ে যাও তাহলে’

আরিফার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বাবা চলে গেছেন।মেধা জানেও না কি হতে যাচ্ছে।আরিফাকে নিয়ে বিমানবন্দরে এসে সে খুঁজছে লাল শার্ট পরা কেনো ব্যাক্তি।আরিফা তার চেয়েও ব্যস্ত।
সে দূরবীন হাতে পুরো জায়গাটা ঘুরঘুর করে দেখে যাচ্ছে।হঠাৎ কি যেন দেখতে পেয়ে কানে ফোন ধরে বললো,’বাবা পেয়ে গেছি।জলদি আসো।দূরে সিটে বসে আছে ভাইয়া’

মেধা আরিফার দিকে তাকিয়ে বললো,’কি পেয়েছো?বাবা কল করেছে?জিজ্ঞেস করো তো উনার ভাইয়ের ছেলের নাম কি?’

-“ইয়ে মানে কলটা কেটে গেছে মনে হয়।বাবা নিজেই আসছে’

-‘ওহ!ঠিক আছে।চলো তাহলে আমরা ওখানে বসি’

-‘আচ্ছা’
——
শাওনের বাবা, মা,এমন কি মেধার বাবা মা ও এসে হাজির।সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুটো ট্রলি ব্যাগ।আবার পাসপোর্ট ও আছে।
মেধা বুঝলোনা।জিজ্ঞেসও করলোনা।কারণ তার মাথায় ঘুরছে শাওন এই মূহুর্তে কোথায়, কি করছে।বাবা ভীড়ের ভেতরে ঢুকে দশ মিনিট পর শাওনের কান ধরে নিয়ে আসলেন।মেধা চমকে বললো,’আপনি এখানে?’

-‘জ্বী।আপনার স্বামী এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশ যাচ্ছিল।জানেন না?এক রাতে ভূত তাড়াতে পারলেননা?উল্টো ভূতের সঙ্গে পালানো ধরছিল এই বলদ।’

জনাব ফেরদৌস শাওনের বাবাকে বললেন,’তোমাকে আগেই বলেছিলাম মেধা এসব পারবেনা।শুধু শুধু ওকে এমন একটা কাজ দিলে যেটা সে পারবেই না’

শাওন রাগে কটমট করছে।ওর বাবা ব্যাগ দুটো সামনে ধরে বললেন,’তোমার পাসপোর্ট তো তোমার কাছে আছেই।আরও সময় অপেক্ষা করে মেধাকে সঙ্গে নিয়ে যাও যেখানে যাবার।তোমার ঐ ভূত সম্বন্ধীয় কিছু শুনতে চাইনা আমি।’

-‘বাবা প্লিজ আমি কোথাও যাবনা’

কথা শেষ না করতেই বাবা এমন একটা ধমক দিলেন শাওনের মুখের কথাই গায়েব হয়ে গেছে।মেধা মুখ ঘুরিয়ে বললো,’আমি যাবনা।রেদোয়ানের কেস ঠিক না করে আমরা ট্যুরে যেতে পারিনা’

-‘রেদোয়ানের কেস নিয়ে তোমাদের ঠিক কতটা আগ্রহ আছে তা আজ শাওনের পালানো দেখেই বোঝা গেছে।আমি বুঝিনা কি দিনকাল পড়লো।ছোটরা বড়দের কথা শোনেইনা।নিজেরা যা মনে করবে তাই!কিন্তু আমি ঐসব বাবা না যারা ছেলেদের কথা মানে।হয় আমার কথা শুনে মেধাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে আর নয়ত কখনও আমার সামনে আসবেনা’

শাওন হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।মেধা তার বাবার চোখে চোখ রেখে ভয় পেয়ে সেও মাথা নিচু করে ফেললো
শাওন বললো মেধার বিদেশের টিকেট রেডি করতে অনেক সময় লেগে যাবে।
বাবা দুজনের হাত থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে বললেন, ‘তাহলে বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসো।খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙামাটি,কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন।টিকেট আমি কেটে দিচ্ছি,তোমরা বেরিয়ে পড়ো।’

ফটাফট বাবা একটা ক্যাব ও ডেকে দিলেন।শাওন বাধ্য হয়ে উঠলো।মেধাও এসে উঠেছে।
গাড়ী ছাড়তেই শাওন মেধার হাত টেনে ধরে বললো,’তুমি এয়ারপোর্টে কেন এসেছিলে?’

-“আরে আমি কি জানতাম আপনি এখানে?ভূতুড়ে প্রেমিকাকে নিয়ে কেউ বিদেশ ভ্রমণ করে?আপনার আসলেই মাথাটা গেছে।কি হবে আপনার কে জানে!!
যাই হোক,বাবা বলেছেন উনার ভাইয়ের ছেলে আসবে।তাকে রিসিভ করতে এসেছিলাম’

-“তা ভালো।আরিফা বিচ্ছুটাকে সাথে করে আনতে গেছো কেন?জানো না? ও সব প্ল্যানে পানি ঢালতে অস্কারপ্রাপ্ত?? ‘

-‘বাবা জোর করে ধরিয়ে দিছেন।আমি এতসব জানতাম নাকি?আশ্চর্য! আর আপনার কি হলো বলুন তো??আমাকে কাল বিয়ে করে আজ সকাল সকাল রশ্নিকে নিয়ে ভাগলেন??ফিউচার নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
রশ্নিকে ধরতে গেলেই যে সে উধাও হয়ে যায় তা কি ভুলে গেছেন?নাকি তার চেহারা দেখে জীবন কাটানোর কথা ভাবছেন?’

-“জানিনা।সামনে যা হতো দেখা যেতো’

-‘তো কই আপনার প্রেমিকা??তারে বলেন আসতে।আমি আমার ট্যুর প্লেস বদলে নেবো’

-“জানিনা।সে তো নিজে থেকে আসার কথা’

মেধা ক্যাব থামিয়ে নিজে নেমে ব্যাগ বের করে বললো,’আপনি যেখানে যাবেন যান।আমি এখানে হোটেল একটাতে কয়েকদিন থাকবো’

শাওন মাথা নাড়িয়ে কি মনে করে বললো,’না থাক।চলে আসো।তোমার সেফটি প্রয়োজন।এভাবে একা থাকাটা ঠিক হবেনা’

-“যখন চলে যচ্ছিলেন বিদেশ তখন এটা মনে ছিলনা?’

-“তখন তোমায় আমার পরিবারের কাছে রেখে গেছিলাম।এখন তো তুমি একেবারেই একা।তাই চলে আসো যা বলছি’

মেধা মানা করলো।মানতে চাইলোনা।শেষে শাওন ও নেমে গেছে।
দুজনে এখন ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।মেধা চেঁচামেচি করছে কেন শাওন নেমেছে তা নিয়ে।শাওন ভাবছে রশ্নি কোথাও নজরে আসছেনা কি কারণে।
তার কারণ হলো মেধা শাওনের কাছাকাছি তাকলে এখন আর রশ্নি শাওনের সামনে আসতে পারবেনা।
চেয়েও এখন সে শাওনের সামনে এসে দাঁড়াতে পারছেনা।
মেধা রাস্তায় বসে পড়ে বললো,’আজ তৃনা আপুর বৌভাত, চেয়েও যেতে পারবোনা।আবার ধরা খাবো আপনারা বোন ছোটটার জন্য’

-“ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি।এখন কি করবে বলো?’

-“আমি যদি বলি হানিমুন করবো তখন?’

-“মজা করছিনা।
আচ্ছা ঢাকার কোনো একটা হোটেলে গিয়ে উঠি আপাতত। এভাবে রোডে তো বসে থাকা যায়না।বাবা বা অন্য কেউ দেখে ফেললে ঘুরফিরে আবারও ঝাড়ি খেতে হবে আমাদের
কি ঝামেলা!বিয়ে থেকে শুরু করে ঝামেলার কোনো শেষ নেই।’
—-
মেধাকে নিয়ে আশেপাশের একটা নাম করা হোটেলে এসেছে শাওন।
মেধা শুধু অপেক্ষা করছে কখন রশ্নিকে দেখবে আর ইচ্ছেমতন গালিগালাজ করবে।ওর কারণেই সব হচ্ছে। এখন সে মাঝখান থেকে গায়েব।

শাওন তার আর মেধার ব্যাগ নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে।মেধা পিছু পিছু আসছে রশ্নিকে খুঁজতে খুঁজতে।রুমে এসে এদিক সেদিক দেখতে গিয়ে শাওনের সাথে দুম করে এক ধাক্কা খেলো।
শাওন পেছনে ফিরে বললো,’কি??কোনদিকে থাকে মন?’

-“সরি।আসলে ভাবলাম আপনার প্রেমিকাকে দেখছিনা কেন?
নিরবতা ঝড়ের পূর্বাভাস কিনা!’

চলবে♥

সঞ্চারিণী
আফনান লারা

৩৮.
শাওন দরজা লাগিয়ে এসে বিছানায় বসে বললো,’আমার মনে হয় বিয়েটা হবার পর থেকে রশ্নি চেয়েও কাছে আসতে পারছেনা।মনে হয় দেয়াল দাঁড়িয়ে পড়েছে একটা।’

কথা বন্ধ করে সোজা গিয়ে বারান্দায় পা রাখতেই রশ্নিকে সাথে সাথে দেখতে পেলো শাওন।
সে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে সেংানে।শাওন ওকে ধরতে যেতেই ও বললো,’হয়ত একটা সময় আসবে যেদিন তুমি আমার সামনে দাঁড়ালেও আমায় দেখবেনা।
কেন এমন হয় শাওন??বিয়েটা কি এমন হলো যে তোমাকে আমার থেকে এত দূরে করে দিলো।?’

মেধা এগিয়ে এসে বললো,’এখানে কি রশ্নি আপু আছে?’

মেধা যতটা এগোলো ততটাতেই রশ্নি শাওনের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে।
মেধা জিজ্ঞেস করলো রশ্নি কই।ওর সাথে জরুরি কথা বার্তা আছে।শাওন ফিরে এসে বললো,’তুমি আমার পাশে থাকলে রশ্নি আমার সামনে থাকবে না’

-‘কেন কেন?’

-‘জানিনা।রাখো ওসব।নুহাশ ফোন করেছিল??রকিকে পাচ্ছিনা।কোথায় থাকতে পারে জানো?’

-‘জানলে কি আর বসে থাকতাম?একবার এক জায়গায় উঠে।এমন জায়গায় উঠে যে কল্পনাও করা যায় না’

-“গুড আন্সার।তার মানে সে এমন একটা জায়গায় যেটা আমাদের কল্পনার বাহিরে ‘

-‘তোহ?’

-‘তো যেটা কল্পনার বাহিরে সেটাতে গিয়ে উঠতে হবে।ধরো আমরা ভাবতেই পারবোনা সে এখন ঢাকায় আছে।অথচ সে এখন ঢাকাতেই আছে’

মেধা বিছানায় পা তুলে বসে কিঞ্চিত মশকরা করে বললো,’এর আগের বার তাকে আমরা ঢাকাতে পেয়েছি।এবারও সে ঢাকায় থাকবে?বিয়ে হবার সাথে সাথে আপনার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে’

-‘আমি কি ঝামেলায় আছি তো যদি তুমি বুঝতে।ডান পাশে বাবা টানে।বাম পাশে রশ্নি।আর তুমি টানো উপরের দিকে।
কোথায় যাব বলোতো?’

-‘আমি আপনাকে টানিনা।মিথ্যে অপবাদ দিবেননা’

শাওন কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেছে।মেধা রশ্নিকে বারান্দায় দেখতে পেলো ঠিক সেসময়ে।এবার ভয় না পেয়ে কোমড়ে শাড়ীর আঁচল গুজে মেধা হনহনিয়ে বারান্দার দিকে গেলো।শাওন থাকলে রশ্নির কাছে যেতে পারতোনা সে।
শাওন নেই বলেই পেরেছে।তারা দুজন একসাথে থাকলে রশ্নিকে দেখতে পাবেনা
মেধা বারান্দায় এসে আঙ্গুল তুলে বললো,’তোমার সমস্যা কি?ঐদিন না বলেছিলে প্লিজ প্লিজ শাওনকে নিজের করে নাও।তাহলে আমাদের বিয়ের পর থেকে এরকম করতেছো কেন?আসলে কি চাও তুমি?’

-‘আমি যা বলেছিলাম আবেগের বশে বলেছিলাম।আমি শাওনকে অনেক ভালোবাসি।ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা’

-‘তো নিয়ে যাও না সাথে।এভাবে আমার হাসবেন্ড করে রেখে তুমি প্রেম করবে তা তো হয়না।
নিলে একেবারে নিয়ে যাও।আমার নাম করে রেখে সব সুখ তুমি নিবা তা তো হয়না।আমার লাইফ নষ্ট করছো কেন?আর আমার চোখের সামনে দেখা দিবেনা!শাওনের সামনে গিয়ে নিজের ভূতের চেহারা দেখাও।আমার সামনে আসবেনা একদম’

-‘সবার মাঝে একমাত্র শাওন আমাকে দেখতে পেতো।তুমি কেন দেখতে পাও জানো সেটা?কারণ তুমি নিজেও শাওনকে ভালোবেসে ফেলেছো!শাওনের আগেই!!!
বারবার শাওনকে বাঁচাও এমনি এমনি নয়।তুমি ওকে অনেক আগেই ভালোবেসে ফেলেছো।
অফিসে জয়েন হবার আগে তুমি ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলে।তোমাদের ট্রেনিং স্পটে শাওন পাশের হোস্টেলেই ছিল।ওর ও ট্রেনিং চলছিল।একদিন হিল ক্লাইম্ব করার সময় শাওন তোমায় বাঁচিয়েছিল।মনে আছে?
ঠিক সেদিন থেকে শাওনের নামটা তোমার মধ্যে গেঁথে আছে।শাওন তোমার চেহারা মনে রাখেনি কারণ তোমার মাথায় হেলমেট ছিল।সে তোমার মুখ দেখতে পায়নি।
আ তুমিও পরে হয়ত ভুলে গেছো ঘটনার কথা।নাকি ভুলো নাই কে জানে।
আমি সব দেখেছি ঐদিন।তারপর তোমাদের সব জায়গায় একসাথে থাকাটা ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়েছে।
তুমি শাওনকে ভালোবাসো বলেই শাওন যেটা দেখে সেটা তুমিও দেখতে পাও!এই জন্য আমি তোমায় বলেছিলাম শাওনকে বিয়ে করে নাও।
কিন্তু ভুল করেছি। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা’

-‘তাহলে চলে যাও ওকে নিয়ে।আমি কি ধরে রেখেছি?’

-“জানিনা কেন এমন হচ্ছে।তবে আমার আন্দাজ বলছে শাওনও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে।নাহলে আজ পর্যন্ত যেটা হয়নি সেটা কেন হচ্ছে???কেন আমি তোমরা একসাথে থাকলে তোমাদের সামনে আসতে পারিনা??কেন আমি শাওনের বেডরুমে পা রাখতে পারিনা?’

-“শাওন স্যার আজও তোমাকে ভালোবাসে।নাহলে তোমার হাত ধরে বিয়ের পরেরদিন সকালে বেরিয়ে যেতো না সব ছেড়ে’

-“এগুলো তো চোখে দেখা।যেটা মন জানে সেটাই তো প্রকাশ পাচ্ছে।’
———
-‘মেধা আমার তোয়ালেটা দাও তো।ভুলে গেলাম’

মেধা রশ্নির দিকে তাকাতে তাকাতে রুমে এসে ব্যাগ খুলে তোয়ালে নিয়ে শাওনের হাতে দিয়ে আবারও রশ্নির সামনে এসে বললো,’তুমি কি চাও?’

-‘তুমি কি চাও সেটা আগে বলো?’

-‘আমি উনাকে ভালোবাসিনা।তোমার ভুল ধারণা এসব।আর উনিও আমায় ভালোবাসেননা।শুধু শুধু ভুল বুঝে তোমার আর উনার সম্পর্কটাকে নষ্ট করবানা’

-‘ওকে ঠিক আছে।আমি এখন শাওনকে বলবো এই জায়গা ছেড়ে আমাকে নিয়ে অনেকদূরে চলে যেতে’

-“বলো!’

মেধা ফিরে এসে কানের দুল আর গলার হারটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের দিকে ছুড়ে মেরে ধপ করে বসলো বিছানায়।মাথায় আর টেনসন ঢুকছেনা।মাথায় অলরেডি এত টেনসন ভরে ছিল এখন বারতি টেনসনের জায়গা নেই।
এক প্রকার অস্বস্তি কাজ করছে মনের ভেতর।
-‘রশ্নির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। শাওন স্যার আমায় ভালোবাসতে যাবে কোন দুঃখে?’

মেধা মাথার শুকনো চুলগুলোকে টেনে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো সাদা বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে।শাওন গোসল করে বের হয়ে বারান্দায় তাকানোর আগে ওর চোখ গেলো মেধার দিকে।মেধা চোখ বুজে ছিল।শাওন ওর কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ ওকে দেখে আবার ফিরে আসলো এদিকে।তোয়ালেটাকে বারান্দায় ঝুলাতে যেতেই রশ্নি সামনে এসে দাঁড়ালো ওর।শাওন তোয়ালেটাকে একপাশ করে রেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।রশ্নি বলে দিলো সে এখন চলে যেতে চায় শাওনকে নিয়ে।শাওন যেন আর কোনো কথা না বলে।
শাওন থ হয়ে ওর কথা শুনে হেসে বললো,’এখন কি সমস্যা? ‘

-‘সমস্যা মানে??আমি চাচ্ছি আমরা দুজন আলাদা কোথাও থাকতে।এখানে মেধার সাথে নয়’

-‘মেধাকে একা রেখে যাওয়া মোটেও ঠিক হবেনা।’

-‘তুমি চাচ্ছো না আমার সঙ্গে আসতে??’

-‘তুমি বুঝতেছোনা।বাচ্চামি করবেনা।মেধাকে একা রেখে গেলে ওর বিপদ হতে পারে।সবসময় সে নিজের রক্ষা করতে পারবেনা’

-‘তার মানে তুমি আমায় আর ভালোবাসো না?

-‘এখানে ভালোবাসার কথা আসছে কেন?’

মেধা উঠে বসে শাওনের কথা শুনছে।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।শাওন আসলে কাকে ভালোবাসে?

শাওন রাগ করে রুমে ফিরে এসে মেধাকে দেখে বললো,’আমি তোমার আর রশ্নির জ্বালায় একদিন মরে যাব’

-‘আমি কি করলাম? ‘

কথার উত্তর না দিয়ে শাওন লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে মেধার পাশে।চিত হয়ে শোয়ায় তার পিঠটা এখন উপরের দিকে।মেধা শাওনের পিঠের দিকে এক মিনিট তাকিয়ে থেকে নিচে নামলো বিছানা ছেড়ে।সোজা বারান্দায় এসে রশ্নির‍ দিকে তাকিয়ে বললো,’তোমাকে ধাক্কা মারলে তুমি পড়বেনা।কিন্তু আমি পড়তে পারি।তাহলে উনি তোমাকে বাঁচাতে যাবেন কেন??
তুমি উনার মনের একটা ভ্রম।একদিন মুছে যাবে।তুমি টেরও পাবেনা।যেমনটা দেয়াল গড়ার আগ পর্যন্ত টের পাওনি।
আমি আসলে নিরপেক্ষ। তবে উনি যেটাই চান না কেন,আমি সাঁই দিব।হতে পারে তিনি সত্যি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন।তবে আমি সেটা অনুভব করার অপেক্ষায় রইলাম।তোমায় বুঝতে হবে তুমি বাস্তবে নেই।উনি বাস্তবে আছেন,আমি আছি।
তুমি বাস্তবে না থেকে উনার কেয়ার করতে চেয়েও পারবেনা।ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়েও পারবেনা।এটা তুমি মাথায় ঢুকিয়ে নাও’

চলবে♥