সবটা অন্যরকম পর্ব-২১+২২

0
4056

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২১
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো দিবা আহনাফের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে
.
তুমি?
.
দিবা চমকে পিছনে ফিরে তাকালো,,এগিয়ে এসে বললো”আসলে আপনার হাতের ব্যাথা কমেছে কিনা দেখতে এলাম”
.
আহনাফ জায়নামাজ হাতে নিয়ে মাথায় টুপি দিয়ে বললো”আই এম ফাইন”
.
দিবা মাথা নাড়িয়ে চলেই যাচ্ছিলো তখনই আহনাফ ওকে থামতে বলে জিজ্ঞেস করলো ওর মাথার ব্যান্ডেজ কই
.
আসলে আমার অস্বস্তি লাগছিলো বলে খুলে ফেলেছি
.
অসুখের ঔষুধ খেতেও তো আমাদের অস্বস্তি লাগে তো তাই বলে কি আমরা ঔষুধ খাই না?ব্যান্ডেজটা একদিন ধরে লাগিয়ে রাখতে বলেছিল দোকানদার
এখনও গোটা একদিন হয়নি
.
দিবা চুপচাপ চলে আসলো নিজের রুমে,সকাল সকাল ঘাউড়ামি করে ঝগড়া করতে চায় না সে
আহমাফ ও আর বেশি কিছু বললো না,নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে
দিবা ছাদে এসেছে এই ভোরবেলায়,,হুট করে চোখ থেকে ঘুমটাই চলে গেছে ওর,সারারাত বসে বসে ঘড়ির কাঁটা দেখছিলো আর এখন এই ভোরবেলাতেও তার ঘুম নেই,,পুরো ছাদটা ফাঁকা,,দিবা ছাদের শেষ সীমান্তে এসে দাঁড়ালো,ওখান থেকে বাসার কাছের সেই পার্কটা স্পষ্ট দেখা যায়,এখনও কেউ পার্কটাতে আসেনি,,দিবা বসে বসে গাছ গুনছে,,,মৃদু বাতাসে ঠাণ্ডা শীতল পরশ অনুভব হয় গায়ে,,চোখ বন্ধ করলেই এসি এসি ফিলিং লাগে
শ্বাস নিলেও দারুন লাগে,ভোরবেলা এত মিষ্টি কেন?
আচ্ছা ছাদে এভাবে বসে না থেকে পার্কে গেলে কেমন হয়??মনটাও ভালো হয়ে যাবে তাহলে,একটু থেকে আবার নাস্তা বানাতে চলে আসবো আমি
.
দিবা তাই করলো,ছাদ থেকে একেবারে পার্কে গেলো সে
সেদিনের মাইক ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভর্তি হয়ে আছে
দিবা অনেকগুলো ফুল কুড়িয়ে নিয়ে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলো সব এসে তার মুখে পড়লো আবার,,
এরপর নিজেই হেসে ফেললো,,,হাসি থামিয়ে আবারও ফুল কুড়ালো ছুঁড়ে মারবে বলে
অনেকগুলো ফুল জোট করে উপরে মারলো সে
এবার পুরোটাই আহনাফের গায়ের উপর পড়েছে
আহনাফ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,,দিবা মুখে হাত দিয়ে একটু পিছিয়ে গেলো,,হুট করে এসময়ে আহনাফকে এখানে দেখবে সে জানত না একদমই,তখনই ওর মাথায় আসলো আহনাফ নামাজ পড়ে জগিং করতে বের হয় সবসময়,,আজ আবার সেই কালো পোশাক,আহনাফ কেন যে এত কালো পছন্দ করে কে জানে
সবসময় তার গায়ে কালো জ্যাকেট আর প্যান্ট থাকবেই থাকবে
এমন না যে তার খালি একটাই কালো জামা,আলমারি ভর্তি সব কালো পোশাক,একদিন একটা পরে
.
আহনাফ ব্রু কুঁচকে বললো”তোমার না শরীর খারাপ?এত সকাল সকাল এখানে কি করো তুমি?”
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”কে বলেছে আমার শরীর খারাপ,আমি বলেছি?”
.
না বলোনি,কাল যা হইছে তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে বিছানায় কাইত হয়ে শুয়ে থাকতো
.
আমার শরীর একদম ঠিক আছে
.
আহনাফ তার জ্যাকেটে আটকে থাকা ফুল ফেলে চলে গেলো,দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
ওমা ওর সাথে সাথে দেখি মিনিও যাচ্ছে,মিনি এতক্ষণ কই ছিলো,ওকে তো দেখলাম না,আজকাল আমার চেয়ে ওর আহনাফের প্রতি প্রেম ভালোবাসা বেশি,লোকটা এত ঝাড়ি দেয় ওরে আর ও কিনা সবসময় দেখে শুনে ঐ লোকটার সাথেই চিপকুর মতন লেগে থাকে
.
আহনাফ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গিয়ে ডানে বামে তাকালো,,তারপর বড় করে নিশ্বাস ফেলে বললো”যাক বাবা আজ আর ঐ আজাইরা বিড়াল আমার পিছু নেয়নি,উফ বাঁচলাম,হাইচ্চু!!”
.
আহনাফ নাক ডলে পিছনে তাকিয়ে দেখলো মিনি চোরের মতন তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
উফ!!এই বিড়ালটা আসলেই আজাইরা,,সবসময় আমাকেই তার ফলো করতে হবে,কিভাবে টাইম মেইন্টেন করে আল্লাহ খোদা জানে!
যাও তোমার বইনের কাছে,সে এখন ফুল নিয়ে খেলছে ওর কাছে গিয়ে খেলো যাও,য়াও
.
মিনি তার পাশে থাকা সবুজ ঘাসগুলোর দিকে তাকিয়ে সেগুলো চেটে নিলো,এমন ভাব করলো যেন সে আহনাফের কথা শুনলোই না,
আহনাফ এসুযোগে এক দৌড় দিলো
ওমা মিনিও ছুটেছে
দৌড় খেলা হচ্ছে এখন ফাঁকা পার্কে
দিবা ফুলগাছটার তলায় দাঁড়িয়ে আহনাফ আর মিনির দৌড়াদৌড়ি দেখছে,মিনি তো সেই লেভেলে ছুটে যাচ্ছে
আহনাফ হাসতে হাসতে বললো”দেখি কত দৌড়াতে পারো”
.
মিনির দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে গিয়ে আহনাফ এবার দিবার সাথে জোরেশোরে এক ধাক্কা খেয়ে দুজন মিলো ধপাস করে পড়লো মাটিতে
দিবা আবারও কপালে হাত দিয়ে ‘আউ’ করে এক চিৎকার দিলো
মিনি আহনাফের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আবার,আহনাফ মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আমি নাহয় মিনির দিকে চেয়ে ছুটছিলাম,তুমি দেখতে পাওনি আমি যে এদিকে আসছিলাম?”
.
আমি খেয়াল করিনি ঠিক
.
আহনাফ বিড়বিড় করে কি যেন পড়ে নিজেকে ফু দিলো তারপর দিবাকেও ফু দিলো এরপর বাসার দিকে চললো
দিবা পিছু পিছু আসতে আসতে বললো”কি পড়ে ফু দিলেন?আর কেনো?”
.
যাতে তোমার আমার আকর্ষণ সৃষ্টি নাহয়
.
কিহ!আমার আর আপনার?
আপনার মাথা ঠিক আছে??আমরা ভাইবোন হই,আমাদের আবার কিসের আকর্ষণ?
.
সেটাই তো,,সে জন্যই তো আমি একটা দোয়া পড়ে ফু দিলাম,,যাতে সকল খারাপ কিছু থেকে আমরা বিরত থাকতে পারি
.
ছিঃ!আপনি এত কিছু ভাবেন?
.
আহনাফ থেমে গিয়ে পিছন ফিরে দিবার দিকে তাকালো এরপর কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কবে বললাম আমি এসব ভাবি??আমি জাস্ট আগে থেকে সাবধান হচ্ছি,আমি চাই না আমার ওয়াইফ এসে জানুক যে আমি দিনে দুইশবার আমার খালাতো বোনের সাথে ঝগড়া করি,,তার আজাইরা বিড়ালের আজাইরা প্যাচালে পড়ে তার কাছাকাছি থাকি,ইত্যাদি”
.
এসব না ভাবলেই হয়,এসব ভাবলেই আকর্ষণ বাড়ে,,
.
আমার আর কাজ নাই যে আমি এসব ভাবতে যাবো,তোমাকে কাল কি বলেছিলাম??আমার চোখের সামনে আসবা না আর তুমি কিনা সকাল সকাল আমার চোখের সামনে সামনে থাকলা?
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনি এসে সবেমাত্র আমার গায়ে পড়েছিলেন তাও নিজের ভুলে
.
যা হচ্ছে সব তোমার ঐ বিড়ালের কারনে হচ্ছে,ওকে নিয়ে দূরে থাকবা তুমি,আমি যেন তোমাকে আর আমার সামনেও না দেখি,,খুব শীঘ্রই আমাদের বাসায় আমার ওয়াইফ এসে যাবে,তখন সে সবটা সামলাবে,তোমায় ও ধরে একটা পাগল ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো
ব্যস হয়ে গেলো
.
দেখুন!আপনি বিয়ে করলে করুন,আমি এখন করবো না,আমার পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নেওয়ার দরকার,,তারপর আমি সেই টাকা দিয়ে আমার বারান্দা সাজাবো,আরও কত কি দরকার আমার ওসব করবো
.
করো,যা খুশি করে,আপাতত আমার সামনে আসবে না তুমি
আর এই নাও পঞ্চাশ টাকা,,এগুলো দিয়ে আজ ভার্সিটিতে যাবা,আমি আর তোমায় আমার বাইকেও বসাবো না,কারণ ডিল ইজ ডিল
.
দিবা টাকার নোটটা উল্টালো পাল্টালো,,আহনাফ চলে গেছে
ভাড়া ৩০ টাকার বেশি যাবে না,বাকি বিশ টাকা দিয়ে একটা ফুল গাছ পাওয়া যাবে
ইয়াহু!!!
.
দিবা নাচতে নাচতে মিনিকে নিয়ে চললো বাসার দিকে
আহনাফ নিজের রুমে এসে বইখাতা গুছানোয় মন দিয়েছে,দিবা রান্নাঘরে ঢুকতে গেলো নাস্তা বানাবে বলে
খালামণি এমন ধমক দিলো আপাতত সে এখন নিজের রুমে
খালামণি ধমক দিলেন কারণ দিবা শরীর খারাপের ভেতরে এসেছে নাস্তা বানাতে,ধমক দেওয়ারই কথা
.
আহনাফ বইখাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফোন করলো জিসানকে যে নোট নিয়ে আসতে
জিসান ফোন ধরে যখন শুনলো আহনাফ ভার্সিটিতে আসছে তখন সে জানালো আজ সে মিশকাকে ঠিক করার মোক্ষম চাল চালবে
আহনাফ ওকে মানা করলো যেন ও কিছু না করে কারণ ও অলরেডি ম্যাটারটাকে ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে
.
দিবা বারান্দার কোন জায়গায় ফুল রাখবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছে
খুশিতে একটা ডান্স দিয়ে দিলো সে
পাগলু ডান্স,,নাচতে নাচতে ও দেখলো আহনাফ বারান্দায়, দড়িতে টাঙানো তোয়ালেটা নিতে এসেছিলো সে
দিবাকে দেখে মুখটা বোকার মতন করে তাকিয়ে ছিলো সে
দিবা এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো,,লজ্জায় মরে যাইতে ইচ্ছে করছে,ইস!আমি যেখানে থাকি লোকটা ঠিক সেখানেই এসে হাজির হয় সবসময়
.
দিবা!!আহনাফ,এসে নাস্তা করে যা,,তোদের তো আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে
.
আহনাফ ঘড়ি পরতে পরতে চেয়ার টেনে বসলো,দিবা বের হতে যেতেই ডিলের কথা মাথা এসে যাওয়ায় আর বের হলো না সে,বসে থাকলো বিছানায়
আহনাফ বুঝেছে দিবা ইচ্ছে করেই আসছে না,সে খুশি হলো এই ভেবে যে দিবা তার কথা রাখছে
.
কিরে দিবা আসছিস না কেন?শরীর খারাপ করছে তোর??আজকে ভার্সিটিতে না গেলে হয় না?
.
দিবা সাথে সাথপ বললো”না না,আজ মিস করা যাবে না,,
(ফুল গাছ কিনবো কি করে আজ না গেলে,আমার যে আর দেরি সয় না)”
.
কিরে?খাবি না?আর আহনাফ তুই উঠে কই যাস?দিবা তোর সাথে যাবে না?
.
দিবা বলেছে তার বাইকে উঠতে ভয় লাগে তাই ওরে আমি ভাড়া দিয়ে দিছি,ও রিকশা নিয়ে আসবে
.
ওহ,আচ্ছা তাও ভালো
.
দিবা উঁকি দিয়ে দেখলে আহনাফ চলে গেছে,,তার পরেই সে এসে বসলো নাস্তা করতে
.
খালামণি দিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন”শরীর এখন কেমন লাগে তোর?”
.
এখন ঠিক আছি আমি,,

দিবা জলদি করে নাস্তা সেরে বের হলো বাসা থেকে,,আজ সে আকাশী রঙের একটা থ্রি পিস পরেছে,,প্রচুর গরম,,এ সময়ে হালকা রঙের সুতির জামা পরাই ভালো
চুলগুলোকে খেজুর বেনি করে এপাশে এনে রেখেছে সে,,রিকশার খোঁজ করতে করতে সে এগিয়ে চলেছে অনেকটা পথ ধরে,,সেই কখন থেকপ বাইকের আওয়াজ কানের কাছে আসছে
দিবা বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেটা যে ওকে ভার্সিটির প্রথম দিন ডিস্টার্ব করছিলো
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো”যাবে নাকি?”
.
দিবা মুখ ঘুরিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো,,ছেলেটাও বাইক ওর সাথে সাথে নিয়ে চলছে
দিবা পথে কেনো রিকশাই পাচ্ছে না,,ছেলেটাও পিছু ছাড়ছে না,আজ আহনাফকে বলে ভালো পিটান পিটাবো এই অসভ্যটাকে
কিন্তু উনি তো বলেছিলেন উনার সামনে না আসতে,,তাহলে দিবা তুমি নিজেই নিজের সেফটিপিন হয়ে যাও
সেফটিপিনের কথায় মনে পড়লো আমার ওড়নায় তো সেফটিপিন আছে,আরে হ্যাঁ তাই তো!!
.
দিবা সেফটিপিনটা খুলে ছেলেটার দিকে ধরে বললো”খবরদার বলছি!”
.
হেহে,তুমি এটা আমার পেটে ঢুকাবে?আহারে তাইলে তো আমি মরে যাবো
বাঁচাও আমাকে,এই মেয়েটা সেফটিপিন আমার পেটে ঢুকাবে বলছে
.
কে বললো আমি সেফটিপিন আপনার পেটে ঢুকাবো?
.
তাহলে?
.
চোখে ঢুকাবো
.
দিবা কথাটা বলে সেফটিপিনটা ছেলেটার চোখের দিকে ছুঁড়ে মারলো
ছেলেটা চোখে হাত দিয়ে ফেললো আচমকা ভয় পেয়ে,সে ভাবলো দিবা সত্যি সত্যি তার চোখে সেফটিপিন ঢুকিয়ে দেবে
দিবা দিসে এক দৌড়,,পারলে চোখেই ঢুকিয়ে দিতো কিন্তু দেয়নি এত সাহস আবার ওর নাই,তবে ভয় দেখানোর মোক্ষম সাহস তার আছে,,ছুটতে ছুটতে রিকশাও পেয়ে গেলে দিবা
এখন রিকসায় বসে চিল করছে সে,,কপালের ঘাম মুছে আহনাফকে অজস্র গালি দিলো দিবা
কি হতো আমাকে বাইকে উঠালে?অসভ্য লোক একটা!!আমাকে এত বিপদে ফেললো আজ,,
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২২
Writer-Afnan Lara
.
দিবা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে যাওয়ার সময় একবার ক্যানটিনের দিকে তাকালো,,আহনাফকে দেখা যাচ্ছে
রাগে ক্ষোভে মন তো চাইছে গিয়ে মেরে আসি কিন্তু নাহ আমার এত সাহস নাই তাছাড়া উনার যখন আমাকে আর মিনিকে নিয়ে এত এলার্জি তো আমি উনার থেকে দূরে দূরেই থাকবো,হুহ!
.
দিবা আহনাফের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধাক্কা খেলো আবারও সাদাত স্যারের সাথে
সাথে সাথে কানে হাত দিয়ে জিভে কামড় দিয়ে বললো”সরি সরি,,স্যার আমি দেখতে পারিনি একদম”
.
সাদাত স্যার ক্যানটিনের দিকে তাকালেন যেদিকে তাকিয়ে দিবা আনমনা হয়েছিল,,আহনাফকে দেখা যায় সেখানে,,জিসান আর পিয়াসের সাথে কথা বলছে সে
স্যার মুচকি হেসে বললেন”সবসময় আহনাফকে দেখতে গিয়েই তুমি আমার সাথে ধাক্কা খাও,,তোমার বয়স কিন্তু প্রেম করার নয়,এসময়ে বেশি করে পড়াশুনাতে মন দিবা বুঝলে ছোট্ট মেয়ে?”
.
না স্যার,আপনি ভুল ভাবছেন,আহনাফ ভাইয়া আমার খালাতো ভাই হয়,আমি তাদের বাসায় থাকি
.
ওহ আই সি,,আমি তো ভাবলাম অন্য কিছু,,যাই হোক আজকের ক্লাস মিস করবে না আজ আমি অনেক চাপ্টার দাগিয়ে দেবো পরের মাসের ক্লাস টেস্টের জন্য
.
হাই অন্তিক স্যার
.
আরে উর্মি ম্যাডাম যে,,কি খবর?
.
ভালোই,,আচ্ছা দিবা আপনার কি হয়??চেহারায় এত মিল!!
.
তাই নাকি?আমার তো মনে হয় না,আমার আবার কি হবে,আমার স্টুডেন্ট হয়
.
হাহা,আমি ভাবলাম আপনার মেয়ে বুঝি,,
.
সাদাত স্যার মুচকি হেসে বললেন”আমার মেয়ে?বিয়েই তো করলাম না,,মেয়ে আসবে কই থেকে?”
.
কথাটা বলে স্যার চলে গেলেন,,দিবা এগিয়ে এসে বললো”বিয়ে করেননি কেন?”
.
সেটা নাহয় তুমি স্যারকেই আস্ক করো,,বাই দ্যা ওয়ে,তোমাদের তো ক্লাস শুরু হয়ে গেছে,জলদি করে ক্লাসে যাও
.
আচ্ছা যাচ্ছি

হ্যালো আদনান,,কি খবর,এসময়ে ফোন করলি?
.
তুই শাহবাগে আসতে পারবি?
.
এখন?আমি তো ভার্সিটিতে,,কেন বলতো?
.
আরেহ মণির বিয়ে তো পরের মাসে,,আর এই মাসের চারটা দিন বাকি,,পরের মাসের তিন তারিখে গায়ে হলুদ,চার তারিখে বিয়ে,,ফুলের অর্ডার দিয়ে রাখবো পরে যদি ঠিক সময়ে না পাই,সময় তো বেশি নেই,হুট করে জন্টুর পরিবার ডেট জানিয়ে দিলো,আমার আর বাবার উপর অনেক চাপ পড়েছে,,তুই হেল্প না করলে বিপদে পড়ে যাবো
কম্পিউটারে টাইপ করতে করতে তোর সাথে কথা বলছি
জব আর বোনের বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট কি একসাথে করা পসিবল??তাও আমি বসকে বলে একটু সময় নিয়ে মণিতার বিয়ের ফুল অর্ডার দিতে যাব,তুই আমার সাথে গেলে ভালো হতো
.
আচ্ছা আমি একটা ক্লাস করে আসছি,বারোটা নাগাদ শাহবাগে পৌঁছে যাব
.
ঠিক আছে

রেশমি সেই কখন থেকে সাদাত স্যার আর দিবাকে একসাথে দেখছে,,চেহারাই এত মিল কি করে হতে পারে,,কিছুটা কনফিউজড হয়ে রেশমি ফিসফিস করে বললো”এই দিবা শুনো তো”
.
দিবা নোট লিখছিলো স্যারের কথা মতো,,পাশে তাকিয়ে সে বললো”হুম রেশমি,,কি হয়েছে??”
.
বলছি সাদাত স্যার তোমার কিছু হয় নাকি?রিলেটিভ??
.
আরে না রে বোন,,সবাই খালি এক কথাই বলছে,উনি আমার কিছু কেন হবে,,আমি হলাম খুলনার মেয়ে
.
দিবা,রেশমি স্ট্যান্ড আপ!!!
.
তোমার জন্য আমি ফাঁসবো এবার,,কি স্যার?
.
তোমরা দুজন কি কথা বলছিলে?
.
কই কিছু না তো
.
দুজনে বের হও ক্লাস থেকে,,আমি হাসি হাসি কথা বলি তার মানে এই না যে আমি স্ট্রিক্ট না,,যেহেতু আমি একজন লেকচারার সেহেতু এনাফ স্ট্রিক্ট আমি,,সো কেউ আমাকে লাইটলি হ্যান্ডেল করবে না,,যাও তোমরা বাহিরে থাকো,দশ মিনিট পর আমি যখন বলবো তখন তোমরা ভেতরে ঢুকবে
.
দিবা আর রেশমি অসহায় মুখ করে বের হয়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে এখন
.
বাহিরে কোলাহল মুক্ত পরিবেশ,সব স্টুডেন্ট যার যার ক্লাসে তাই,করিডোর ও ফাঁকা,,মাঝে মাঝে পিয়নকে দেখা যায় হাতে ফাইল নিয়ে একবার দোতলায় আসে আবার তিন তলায় যায়,,পাশের রুম থেকে মিজান স্যারের কথা ও শুনা যাচ্ছে,,কাকে যেন বকছেন,,স্যারগুলো কেমন যেন,হুটহাট রেগে যায়,যখন রাগে তখন একেবারে বেশি করে রাগে
বিরক্তি নিয়ে দিবা ব্রু কুঁচকে বললো”কথাটা ব্রেক টাইমে বলতে পারলা না?এবার হলো তো!”
.
আহনাফ ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো পানি খাবে বলে,,ক্যামপাস দিয়ে যাওয়ার সময় সে দেখলো দিবা আর একটা মেয়ে করিডোরে দাঁড়িয়ে ক্লাসের দিকে উঁকিবুকি দিচ্ছে
.
আহনাফ একটু এগিয়ে এসে বললো”ঠিক হয়েছে”
.
দিবা চমকে নিচের দিকে তাকিয়ে আহনাফকে দেখতে পেয়ে আবারও আগের জায়গায় চলে আসলো,,
ইস রে কি লজ্জা,মানইজ্জত আর কিছু রইলো না আমার,ধুর ধুর
.
আচ্ছা দিবা আরেকটা কথা বলতে পারি?
.
আর কি বলবে?কিছু বলার বাকি রাখছো!
.
আহনাফ ভাইয়া তোমার কি হয়?
.
ভাইয়া হয়,আমি উনার খালাতো বোন
.
তাহলে ঠিক আছে,আসলে উনার প্রতি আমার দূর্বলতা কাজ করে একটু,,কিউট তো অনেক,তার উপর কালো পোশাকে যা লাগে না,,তাই হয়ত বেশির ভাগ সময় কালো পরে থাকে,তোমার রিলেটিভ হলে আমার কথা একটু উনাকে বলিও কেমন,বলবা যে রেশমি আপনাকে পছন্দ করে
.
উনি কেনো মেয়েকেই পছন্দ করেন না
.
কেন কেন?এটা আবার কেমন কথা,পছন্দ করে না কেন?
.
দিবা রেশমির কানে ফিসফিস করে বললো”উনার ফিলিংসে দোষ আছে,,মেয়ে দেখলেই উনার এলার্জি বেড়ে যায়,,তার উপর উনার ওড়না নিয়ে তো বিরাট বড়
ট্রমা হয়ে যায় সবসময়”
.
কেমন ট্রমা?
.
এই ধরো তোমার ওড়নাটা সরে গেলো,তা দেখে উনি খুব ক্ষেপে যাবে,তারপর ধুম করে…
.
মারবে?
.
নাহ,ধমক দেবে,আরও কত খারাপ দোষ আছে উনার,কি বলবো তোমায়
.
মাই গড!!দেখে মনে হয় না,, এত সুন্দর একটা ছেলের কিনা এত দোষ?
আচ্ছা ইটস্ ওকে,ক্রাশের একটা দুইটা দোষ থাকলে সমস্যা নাই,আই উইল ম্যানেজ
.
এই তোমরা দুজন?,বাহির করে দেওয়ার পরেও কথা বলতেছো,,দিবা তেমাকে আমি ব্রাইট স্টুডেন্ট ভেবেছিলাম বাট এখন দেখছি তুমি গসিপিংয়ে বপশি ইন্টারেস্টেড
.
সরি স্যার,,আর হবে না এমন,আমি আর রেশমির সাথেই কোনোদিন বসবো না,মে আই কাম ইন?
.
ঠিক আছে,দুজন দুই কিনারায় বসবে,তাহলে আসতে পারো
.
দিবা সোজা গিয়ে নিজের ব্যাগটা নিয়ে আরেক সিটে এসে বসলো

কিরে আদনান তুই কোথায়?আমি তো শাহবাগে এসে পড়েছি
.
আরে তোর পিছনে আমি,পিছনে তাকা
.
আহনাফ পিছনে তাকিয়ে আদনানকে দেখতে পেলো
সে সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে এদিকেই আসছে এখন
দুজন মিলে একটা ভালো ফুলের দোকানে ঢুকলো,,কি কি ফুল লাগবে তার বিষয়ে আলোচনা করলো দোকানদারের সাথে
দোকানদার মোট ফুলের সংখ্যা বলে দিলেন
সেই অনুযায়ী অর্ডারটা সেরে ফেললো ওরা,,
.
চল এবার চা খাবো
.
চল
.
দুজনে পাশের একটা চায়ের দোকানে বসলো চা খাবে বলে
আদনান চায়ে চুমুক দিয়ে দূরের একটা ফুলের টবের ভ্যানগাড়ীর দিকে তাকিয়ে বললো”আহনাফ দেখ তো,এটা দিবা না?”
.
আহনাফ আদনানের কথা শুনে সেদিকে চেয়ে দেখলো সত্যিই তাই,এটা দিবাই
ও এখানে কি করে?
.
আদনান চা শেষ করে ছুটে গেলো সেদিকে
আহনাফ চায়ের বিল পে করতে যেতেই আদনান থেমে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো”বিল আমি দিয়ে দিয়েছি”
.
আবার?তোর আর কাজ নাই?একদিন তো অন্তত আমায় বিল পে করতে দে
.
উহু,,এক বছরের বড় ছোট আমরা,সো বড় ভাইয়ের কথা শুন তুই
.
আগে বল ওদিকে কই যাস তুই?
.
দিবার কাছে,দেখতে হবে তো ও কি করছে
.
বাদ দে তো,চল আমরা অন্য কাজে যাই,ডেকোরেশনের জন্য তো আবার সেই রুটে যেতে হবে
.
দিবা ঘুরে ঘুরে ফুলের টব বেছে যাচ্ছে,,রেশমি বলেছিলো শাহবাগে ফুলের সন্ধান পাবো,সেটা ঠিক বলেছিলো তবে ফুল গাছ তো তেমন ভালো পাচ্ছি না আমি,এখন কি করি?সব তো ফুল আর ফুল,গাছ কই??
.
দিবা?তুমি কি করো এখানে?
.
দিবা চমকে আদনানের দিকে তাকালো,ওকে এখানে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো সে,,বুকে থুথু দিয়ে বললো”আপনি!! ”
.
ভয় পেলে?এই ভরদুপুরে আমাকে দেখে তোমার ভয় লাগলো?
.
না আসলে আচমকা দেখে ভয় পেলাম এই আর কি,,আমি আসলে ফুল গাছ কিনতে এখানে এলাম
.
তো চয়েস করো,আমি কিনে দিই

আরেহ না,,আমার কাছে বিশ…
না মানে আমার কাছে টাকা আছে,তাই তো কিনতে এলাম
আপনি কেন কিনে দেবেন?
.
আহনাফ কোমড়ে হাত দিয়ে আদনানের পাশে এসে বললো”তোর টাকা বেশি হয়েছে??
জমিয়ে রাখ,তোর বোনের বিয়েতে দুই হাতে খরচ করতে হবে তোকে
এর পিছনে খরচ করে লাভ নাই,কিছু হলেই ঝগড়া করতে পিছু পা হবে না
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে হাঁটা ধরলো,সামনেই আরেকটা ভ্যান গাড়ী নজরে পড়েছে ওটাতে ফুলগাছ দেখবে সে
.
দিলি তো দিবাকে রাগিয়ে,তুই ওর সাথে এমন ত্যাড়া কথা বলিস কেন বলতো?
.
তো আর কি করবো আমি,ওর স্বভাবই এমন যে মুখ দিয়ে ভালো কথা আসে না আমার
.
ভালো একটা মেয়ে,,এভাবে ট্রিট করিস না
চল ওরে ফুলগাছ কিনে দেবো
.
না তুই এমন করবি না,,
.
তাহলে তুই কিনে দে,,
.
তুই আমাকে ফাঁসালি!!!
.
আহনাফ পকেটে হাত ঢুকিয়ে একশো টাকার নোট বের করে দিবার কাছে গেলো,দিবা বিশ টাকা দিয়ে কোন ফুলগাছ কিনবে তাই ভাবছিলো গালে হাত দিয়ে
হঠাৎ আহনাফ ভ্যানের মালিকের দিকে একশো টাকা ধরে বললো”এই টাকা দিয়ে যত গাছ হবে এই মেয়েটার মাথায় উঠিয়ে দেন”
.
এক মিনিট!আন্দাজে ফুল গাছ নেবো না আমি,আমার পছন্দের লেভেল আছে,যেকোনো কিছু আমি নিই না,আর আপনাকে কে বললো একশো টাকা বের করতে?আপনার থেকে কিছু নিব না আমি
.
আহনাফ দেখলো আদনান আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে
আহনাফ দিবার ব্যাগটা খিঁচিয়ে টান দিয়ে ওকে সহ কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো”আমি চাই না আম্মুর সামনে আদনান কখনও বলে দিক আমি তোমায় দেখতে পারি না,আম্মু আমাকে বকলে আমার গায়ে লাগে,ও বলেছে তোমায় ফুলগাছ কিনে দিবে,আমার খালাতো বোন হও তুমি,ও নিজের পকেটের টাকা খরচ করবে তোমার জন্য এটা শুনে আমি মানা করবো না?
মানা করলাম তো আমায় ফাঁসাই দিলো
আর বাই দ্যা ওয়ে তোমার ঐ বিশ টাকাটাও আমার পকেটের টাকা,যেটা আজ সকালে তোমায় দিয়েছিলাম আমি”
.
তোহ?আমাকে দিলেন মানে টাকাটা আমার
আমি এই বিশ টাকা দিয়ে একটা ফুলগাছ নেবো,আর লাগবে না,পরে আবার টাকা জমালে আবার নিব,এখন আপনি যান,আমাকে বললেন না আপনার সামনে না আসতে?তাহলে এখন এখানে কি করেন?
.
ও হ্যাঁ তাই তো,ধরো একশো টাকা, যা মন চায় কিনো,বাই
.
আহনাফ চলে গেলো,আদনান ওকে পথে থামিয়ে বললো”কিরে?কিনে দিয়েছিস?”
.
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,ও কিনে নেবে,চল যাই,,তোকে ড্রপ করে দেবো স্টেশনে
.
দিবাকে একা রেখে যাবি?ও বাসা চিনবে?
.
চিনবে চিনবে,কেন চিনবে না,চল আমার সাথে
.
আহনাফ আদনানকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলে,দিবা একশো টাকার নোটটা ধরে উড়াধুরা নাচতে গেলো পড়ে ভাবলো পাবলিক প্লেসে এভাবে নাচা ঠিক হবে না,আমি বরং বাসায় গিয়ে নাচবো,এখন ফুলগাছ কিনে নিই
.
দিবা চারটা ফুল গাছ কিনলো,,তার মধ্যে একটা গোলাপ গাছ আর বাকিগুলো গাঁদা
সব একটা রিকসায় তুলে বাসার দিকে চললো সে
মনের আনন্দে নাচতে মন চাইছে বারবার
আজ আমার বারান্দা দেখতে এত ভাল্লাগবে যে আজ রাতে আমার ঘুমই হবে না,কিন্তু এগুলোর জন্য তো টব লাগবে,টব আনা অবদি এগুলো এখন যেমন আছে তেমনই রাখতে হবে,টবের বন্দবস্ত জলদি করে ফেলতে হবে
.
বাসার সামনে নেমে দিবা ফুল গাছ গুলো বুকে ধরে হাঁটা ধরলো,,লিফটে করে জলদি এসে গেলো,,কুনুই দিয়ে কলিংবেলে চাপ দিলো সে,খালামণি এসে দরজা খুলে দিলেন,,
.
কিরে!এত ফুল গাছ? কে কিনে দিলো?
.
আহনাফ ভাইয়া
.
বাহ!!তোর বুঝি বাগান করার শখ??যা নিজের বারান্দায় রাখ,,ছাদে রাখিস না ভুলেও,একটা ফুল ও আস্ত থাকবে না
.
সেটা জানি,আমার বারান্দাতেই রাখবো সব
.
মিনি আরিফের রুম থেকে ছুটে আসলো দিবার আওয়াজ শুনে,,দিবা ফুল গাছগুলো বারান্দায় রেখে বললো”ইচ্ছে পূরন হচ্ছে,আলহামদুলিল্লাহ ”
.
মিনি গাঁদা ফুলগাছের সাথে লেগে বসে আছে,,এবার থেকে সে এই জায়গায় বেশি সময় কাটাবে,,দিবার সাথে সাথে তার ও ফুল অনেক প্রিয়,,
চলবে♥