সবটা অন্যরকম পর্ব-৪৩+৪৪

0
3954

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪৩
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ দরজা খুলে সিঁড়ির রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দিবার অপেক্ষা করছে
দিবা মিনিকে তার রুমে রেখে এসে বাহিরে দিয়ে দরজা লক করে আসলো এদিকে
দিবাকে দেখে আহনাফ ছোট করে একটা হাসি দিয়ে মেইন দরজাটা লক করলো
দুজনে সিঁড়ি দিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে এখন।তাদের মাঝখানের দূরুত্ব দুই বিঘের মতন
আহনাফ মাথর চুলগুলোকে নেড়েচেড়ে দিয়ে হাঁটার ছলে দিবার হাতটা ধরার চেষ্টা করলো দুইতিনবার।তাও পারলো না
কারণ দিবা হাতটাকে বারবার নড়াচড়া করছিল
ছাদে এসে এক কোণাতে দুজনে মিলে দাঁড়ালো এবার
আহনাফ বললো”তোমার কি ঘুম আসছে?”
.
-নাহ তো।
.
-আচ্ছা তোমার মা যদি নিজে দায়িত্ব নিয়ে একটা ছেলে ঠিক করে তোমার জন্য।ধরো কয়েক বছর বাদে।তখন কি করবে তুমি?বিয়ে করে নেবে?
.
দিবা হাসলো।তারপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো”মা??ওহ হ্যাঁ মা।আমার জন্মদাত্রী মা।যে কিনা আজ একটা মাস হয়ে গেলো আমার কথা শুনতেও তার মন চায় না।জানেন আমি ভাবতাম মা অন্তত আমায় ভালোবাসে।এখন দেখছি তিনিও আমায় দূরে ঠেলে দিয়ে বেশ আছেন”
.
-খালামণি মায়ের কাছে তোমার কথা রোজ জিজ্ঞেস করে
.
-আমার খোঁজখবর নেওয়া তাও দূরে ঠেলে দিয়ে?? আপনি বুঝবেন না।বাদ দিন
.
আহনাফ দিবার হাতের কব্জি ধরে বললো”বুঝবো না?”
.
দিবা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।ওর তাকানো দেখে আহনাফ ওর হাতটাই ছেড়ে দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে
দিবা অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়ালো।আহনাফের চোখে চোখ রাখা যায় না।
.
আহনাফ জিভে কামড় দিয়ে বললো”সরি। এমনি হাত ধরেছিলাম
ভাবিনি তুমি বিষয়টাকে ওভাবে নেবে।তবে আমি কিন্তু এর আগেও তোমার হাত অনেকবার ধরেছিলাম”
.
-হ্যাঁ ধরেছিলেন।তবে এরকম পরিস্থিতি ছিল না তখন
.
আহনাফ আড় চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো”তো এখন কি কানে ধরে উঠ বস করতে হবে আমায়?তাও হাত ধরার অপরাধে?”
.
কথা শেষ করে আহনাফ পকেটে হাত ঢুকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে বললো”আমার কাছে হাত ধরাটা নরমাল ছিল।ধরবো না কান!!কি করবে তুমি?”
.
দিবা মুচকি মুচকি হাসছে আহনাফের কথা শুনে।তারপর হালকা কেশে গলাটা ঠিক করে বললো”মা যদি ছেলে দেখেও আমার জন্য তবে আমি তাকে না করে দেবো”
.
-কেন?কেন?
.
-কারণ মায়ের চয়েস ভালো না।যাকে ভালোবেসেছিল পছন্দ করেছিল সে এমন ঠকান ঠকিয়েছে তাকে যে আমি এখন তার মেয়ে হয়ে সমুদ্রে ভাসছি
সুতরাং আমার লাইফ নিয়ে রিস্ক নেবো না
.
-তোমার চয়েস যদি খালামনির মতন হয়ে যায়?
.
দিবা ভ্রু কুঁচকে দূরের দিকে যেতে যেতে বললো”না ওসব হবে না
বাদ দিন তো।আমি এত জলদি বিয়ের পিড়িতে বসছি না
আপনার কথা ভাবুন
খালামণি তো খুব জলদি আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেবে।ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলার ছিল আপনাকে।আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে আছে।নাম হলো রেশমি।”
.
-তো?
.
-তো ও আপনাকে অনেক অনেক পছন্দ করে।বলেছে এই কথাটা আপনাকে বলতে।কাল ভার্সিটিতে গেলে ওর সাথে সামনা সামনি কথা বলিয়েন
.
-ঐ যে তোমার সাথে ঐদিন করিডোরে দাঁড়িয়েছিল। সাদাত স্যারের দেওয়া পানিশমেন্ট পেয়ে। সে?
.
-বাহ!চেনেন তাহলে
.
-ওরে চিনবো না?ও তো আমাকে দেখেই চুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে।আরও কত কি করে।মেয়েদের আচরণ দেখলেই বুঝা যায় সে সামনের লোকটার থেকে আসলেই কি আশা করে
তবে ওর সাথে আমার হবে না
.
-কেন?
.
-কারণ ওর মুখে পানি পড়লে ঝলক মেরে ওঠে না
.
দিবা যেন আকাশ থেকে পড়লো কথাটা শুনে।বাপের জন্মে এমন কথা সে আগে শোনেনি।আরেকটু এগিয়ে এসে সে বললো”ঝলক মেরে ওঠে মানে?”
.
-মানে ও এক গাদা মেকআপ করে আসে।পানি পড়লে মেকআপ নষ্ট হয়ে পেত্নির মতন লাগে ওরে তখন
.
-তো এরকম মেয়ে পাবেন কোথায় আপনি
.
-অলরেডি পেয়ে গেছি
.
-কি বললেন?লাস্টের কথাটা ওরকম মুখের ভেতর রেখে বললেন কেন।আমি ভালোমতন বুঝতেই পারিনি
তা ওরকম মেয়ে খুঁজে পাবেন কি করে শুনি?
.
-তোমার এত ভাবতে হবে না।আমার ওয়াইফ আমি নাহয় খুঁজে বের করবো।এখন চলো বাসায়
ঘুমাতে হবে।কাল যে জলদি ভার্সিটিতে যেতে হবে সে খেয়াল আছে?তুমি তো আবার শাড়ীটাড়ি পরবা।
.
-আমার শাড়ী পরতে পাঁচ মিনিট ও লাগে না।
.
দিবা হাঁটা শুরু করে দিয়েছে কথাটা বলে।আহনাফ ও পিছু পিছু আসছে
বাসায় ঢুকার পর দিবা আর তাকায়নি ওর দিকে
আহনাফ ও ডাকেনি।দিবার হয়ত মাথায় ঘুরছে কাল সবার আগে তৈরি হয়ে যাওয়া নিয়ে
আর আহনাফের মাথায় ঘুরছে সে দিবাকে উল্টো পাল্টা বলে দেয়নি তো আবার।
.
পরেরদিন সকাল সকাল দিবা শাড়ী পরে বসে আছে বিছানার উপর
-হুহ!!আহনাফ ভাইয়া ও দেখুক আমি কত জলদি তৈরি হতে পারি
কিন্তু অনেকক্ষণ তো হলো।আমাকে বলতে আসছে না কেন যে দিবা কোরআন শরীফ পড়তে বসো
কি ব্যাপার?উনার তো জলদি ওঠার অভ্যাস
.
দিবা বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে উঁকি দিলো আহনাফের রুমের ভেতর
আহনাফ কোরআন শরীফ রেখে পাশে তাকাতেই দিবা লুকিয়ে পড়লো সাথে সাথে
আহনাফ ওকে না দেখলেও ওর হাতটা দেখে ফেললো।
আর এসময়ে এখানে দিবা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না তা ওর ভালো করে জানা আছে
দিবা রুমে এসে ভাবলো আহনাফ ওকে দেখে ফেলেনি তো?অবশ্য দেখে ফেললেই ভালো হতো।উনি দেখতেন যে আমি রেডি হয়ে গেছি।হুহ!!
রেডি তো হয়েছি কিন্তু আমায় তো এখন আবার নাস্তা বানাতে যেতে হবে
.
শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে দিবা রান্নাঘরের দিকে গেলো
মিনি দরজার কাছে বসে আহনাফের অপেক্ষা করছে জগিংয়ে যাবে বলে।
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে মেইন দরজার দিকে যেতে যেতে দিবার রুমটাকে ফাঁকা দেখলো। তার মানে দিবা রান্নাঘরে
সত্যিই তাই।ও রান্নাঘরেই আছে।সেই শাড়ীটা পরায়।আহনাফ অর্ধেক পথ হেঁটে থেমে গেছে।মুচকি হেসে দিবাকে শাড়ী পরে রান্না করতে দেখছে সে।পাকা গিন্নি লাগছে তাকে
আহনাফ মিষ্টি করে হেসে আরিফের রুমের দিকে তাকালো।রুমের দরজা বন্ধ, তার মানে ও এখনও ঘুমায়।মায়ের আর বাবার রুমের থেকে ওয়াসরুমের আওয়াজ আসছে।মানে মা ওয়াসরুমে।আর বাবা ঘুমায় মনে হয়
আস্তে আস্তে আহনাফ রান্নাঘরে পা রাখলো
দিবা কাঁচামরিচ কাটলো ভাজিতে দেবে বলে।সেটা রেখে পেঁয়াজ কাটছিল তখন।আহনাফ দিবার দুপাশ দিয়ে হাত নিয়ে তাকের উপর হাতগুলো রাখলো
দিবা ঘাঁড় ঘুরিয়ে ওকে একবার দেখে নিলো।দিবার চোখে পানি দেখে আহনাফ হাত সরিয়ে বললো”আই এম সরি।আর কখনও এমন করবো না।তাও কেঁদো না।আমি তো তোমার কোমড় ধরিনি,জাস্ট হাত তাকের উপর রাখলাম”
.
দিবা নাক টেনে আহনাফের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি আবার কি করেছেন?
আমি তো পেঁয়াজ কাটছিলাম”
.
-ওহ হো!আমি আরও ভাবলাম!!ওকে বাই
.
আহনাফ ছুটে চলে গেলো।দিবা নাক মুছে ওর চলে যাওয়া দেখছে।আগামাথা কিছুই বুঝলো না সে

নয়টা বাজার পরেও মায়ের কোনো রিয়েকশান না দেখে আহনাফ মাকে জিজ্ঞেস করলো মা কি আজ তাদের সাথে যাবে না?
.
মা চমকে বললেন”কেন যাব?”
.
-কেন যাবে মানে।মজা করতে যাবে।তুমি জানো আমি এক্সট্রা টাকা পে করেছি তোমার জন্য।যে খাবার দিবে সেটার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়।বাসায় থেকে কি করবে তুমি?
.
-মিনির কি হবে।আরিফ ও তো বাসায় থাকবে না।আর তোর বাবার কথা তো জানিস।সারাদিন দোকানে থাকে
.
-মিনিকে সাথে করে নিয়ে যাব নাহয়।তুমি যাও রেডি হয়ে আসো।আমি কিছু শুনতে চাই না।জীবনে আমার ভার্সিটি দেখতে যাওনি তুমি, এবার যেতেই হবে।জানতাম তুমি মানা করবে তাই আগে থেকে টাকা পে করে দিছি
আমার সব ফ্রেন্ডসরা তোমার সাথে পরিচিত হতে চায়।দিবা তুমি কিছু বলো না কেন?
.
-হ্যাঁ।খালামনি চলো না।ভালো লাগবে তোমার।আমরা ঘুরবো, মজা করবো।কতজনের সাথে আলাপ ও হয়ে যাবে তোমার।আর শুধু যে তুমি গার্ডিয়ান হয়ে যাচ্ছো তা কিন্তু নাহ।আরও অনেকেই তাদের ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে আসবে
.
-আচ্ছা ঠিক আছে।আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি, তোরা ও রেডি হয়ে নে
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আমি তো রেডি আছি সেই ভোর বেলা থেকে।কিছু কিছু ছেলেরা শুধু তৈরি হতে দেরি করে এই আর কি”
.
আহনাফ ব্রু কুঁচকে তার রুমে চলে গেলো।খালামণি ও গেছেন
দিবা আহনাফের চলে যাওয়া দেখে ভাবছে তার কথার বিরুদ্ধে আহনাফ কিছু বললো না ক্যান।ভাবতে না ভাবতেই আহনাফ তার লাল পাঞ্জাবিটা নিয়ে হাজির।
দিবার সামনে এসে সে বললো”কাউন্ট ডাউন করো।দশ থেকে এক”
.
দিবা জিজ্ঞেস করলো”কেন?”
.
-তোমায় দেখায় দিব আমার রেডি হতে কত সময় লাগে
.
দিবা ঘড়িটা এক নজর দেখে এরপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো
আহনাফ তার গায়ের শার্টটা খুলে দিবার মুখে মেরে পাঞ্জাবিটা পরে নিচ্ছে
দিবা চুপ করে তাকিয়ে আছে।পাঞ্জাবি পরা শেষ হওয়ায় সে বললো”আমাকে দেখিয়ে পরার কি আছে?আপনার কি লজ্জা লাগলো না?”
.
-কেন লাগবে?জাস্ট প্রুফ দিলাম।আমার রেডি হতে দশ সেকেন্ড লাগে অনলি
.
-ভেতরে গেঞ্জি পরা থাকে না কেন আপনার?
.
-টিশার্টের ভেতর কেন গেঞ্জি পরা থাকবে?পাঞ্জাবিতেও লাগবে না।পাঞ্জাবি মোটা আছে
তোমার এত লজ্জা লাগে কেন?তুমি তো চোখ ঢেকে ছিলে।
.
-একটু একটু দেখছি
.
আহনাফ দুষ্টু করে হেসে বললো”আবার আমাকে দেখাতেও নজর ছিল।বাহ!”
.
-ধরুন আপনার টিশার্ট। খালামনি আসছে
.
-চল তোরা।মিনি কোথায়?
.
-ঐ তো দরজার কাছে গিয়ে বসে আছে।
.
দিবা কাছে এসে মিনিকে কোলে তুলে নিলো।সে আর খালামণি রিকশায় করে আসবে
আহনাফ মিনিকে নিয়ে আসবে বাইকে
ভার্সিটিতে এসে আহনাফ গেছে হাওয়া হয়ে।দিবা খালামনিকে একটা সিট খুঁজে বসিয়ে দিয়ে আহনাফকে খুঁজছে কারণ মিনি ওর কাছে।মিনিকে বেশ কিছুক্ষন না দেখলে প্রচুর চিন্তা হয় দিবার।এখনও হলো তাই
আহনাফ দিবার শাড়ীর রঙ মনে করে লাল খুঁজছে চারিদিকে
শেষে এক জায়গায় পেয়ে গেলো দিবাকে।দিবাও ওকেই খুঁজছিল
.
-ধরো তোমার মিনি।মা কে বসিয়েছো?
.
-হ্যাঁ।
.
-তাহলে আমি যাই। আমার ফ্রেন্ডদের সাথে বসবো। তুমি মায়ের কাছে থাকো
.
-ওকে
.
দিবা এসে খালামণির পাশে বসলো মিনিকে কোলে নিয়ে।দূর থেকে কলি ইশারা করে ডাকছে ওকে।পিঠে হাত দিয়ে ডাকছে নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে।দিবা খালামণিকে বলে তার হাতে মিনিকে দিয়ে উঠে ওদিকে গেলো
খালামণি স্টেজের দিকে চেয়ে বসে আছেন।সাদাত স্যার আসছেন ভাষণ দিতে।
খালামণি মুখের ঘাম মুছে নড়েচড়ে বসলেন।সাদাত স্যার চশমা ঠিক করে মাইকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন উপস্থিত সবাইকে।শুভ সকাল ও জানালেন
সাদাত স্যারকে কাছ থেকে দেখে খালামণি চমকে উঠেছেন।
-চশমাটা সরালে একদম সাদাতের মতো দেখতে হবে লোকটাকে।এ কি আসলেই সেই সাদাত নাকি চেহারায় মিল হতে পারে!!বিশ্বাস হয় না।এটা হতে পারে না!!দেখে একদম সাদাতই মনে হচ্ছে।যেমনটা ছবিতে দেখেছিলাম
.
-এখানে আপনারা যারা আছেন তারা হয়ত অনেকেই আমায় চেনেন না কারণ স্টুডেন্টর পাশাপাশি আমি কিছু গার্ডিয়ানকেও দেখছি।আমি তাহলে আমার পরিচয়টা দিয়ে আজকের স্পিচটা দিয়ে দিচ্ছি।বেশি সময় নেবো না কারণ আরও কজন আছেন যারা স্পিচ দেওয়ার জন্য লাইনে আছেন
.
কথাটা বলে স্যার হাসলেন
.
-আমি অন্তিক সাদাত।এই ভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান লেকচারার হিসেবে আছি।নবীণদের মধ্যে অন্য ডিপার্টমেন্টের হয়ত অনেকেই এখনও আমায় চেনো নাই ঠিকমত।আস্তে আস্তে চিনে যাবে ব্যাপার না।
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪৪
Writer-Afnan Lara
.
খালামণি উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।আরেকটু কাছে এসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি।
-একদম সাদাতের মতন দেখতে লোকটা।নাম ও সাদাত বললো।দিবাকে জানাতে হবে আমায়।এক্ষুনি
.
সাদাত স্যার মাইকটা ধরলেন কথা বলার জন্য ঠিক সেসময়ে তার চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটির উপর।তাকে স্যার ভালো মতন চেনেন।
-উনি তো মৌসুমীর বড় বোন মৌ আপা।উনাকে তো আমি চিনি!কতবার দেখেছি।উনি এখানে!!
.
খালামণি ছুটে গেলেন দিবাকে খুঁজতে।সাদাত স্যার ও মাইক রেখে ছুটলেন ওদিকেই
.
-দাঁড়ান মৌ আপা!!
.
খালামণি থেমে পিছন ফিরে তাকালেন।সাদাত স্যার ছুটে আসতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেলেন।হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন”আপনি মৌ আপা না?”
.
খালামণি কপালের ঘাম মুছে বললেন”হ্যাঁ”
.
-কেমন আছেন আপনি?
.
-ভালো!
.
খালামনি কিছু বলতে পারছেন না।কি থেকে কি শুরু করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না উনি।সাদাত স্যার হেসে বললেন”আমায় চিনতে পেরেছেন নাকি চেনেন নাই”
কথাটা বলে সাদাত স্যার তার চোখের চশমা খুললেন
এরপর আবারও হেসে বললেন”আগের সাদাত তো পরিপাটি ছিল এখনকার সাদাত বড়ই বেসামাল লোক”
.
দিবা কলির কাজটা করে এদিকে এসে বললো”স্যার কেমন আছেন?”
.
-আরে দিবা যে
.
-স্যার,উনি আমার খালামণি।।খালামণি ইনি হলেন আমাদের সাদাত স্যার।
.
“খালামণি” কথাটা শুনে সাদাত দিবার দিকে চোখ বড় করে তাকালো।এরপর চোখটা নামিয়ে নিয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন”মৌসুমীর মেয়ে তো ভারী সুন্দর।তবে ওর চেহারার মতন লাগে না।দেখতে একদম….
.
কথা শেষ না করতেই সাদাত দিবার গায়ে থাকা লাল শাড়ীটার উপর নজর রাখলো।যত প্রশ্ন আছে সব ঘুরপাক খাচ্ছে চোখের সামনে।খালামণি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছেন।
দিবা কৌতুহল নিয়ে বললো”স্যার আপনি আমার মাকে চেনেন?”
.
সাদাত স্যার মুচকি হেসে বললেন”হুম চিনি,খুব ভালো করেই চিনি”
.
খালামণি ঢোক গিলে দিবার হাতে মিনিকে দিয়ে বললেন”সাদাত!!জানো ও কে?”
.
-মৌসুমীর মেয়ে।তাই তো?বেশ দেখতে হয়েছে।শাড়ীটাতে ভালোই লাগছে।কিন্তু জসিমের মতন লাগে না।কার মতন হয়েছে?ওর দাদুর মতন নাকি?
.
খালামণি দিবার কাঁধে হাত রেখে বললেন”ও তোমার আর মৌসুমীর মেয়ে”
.
সাদাত স্যারের হাতে থাকা চশমাটা পড়ে গেলো নিচে।দিবা খালামণির দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো তারপর দূরে সরে গেলো।তার মানে এই সেই সাদাত
.
সাদাত স্যার ছলছল চোখে দিবার দিকে তাকিয়ে আছেন
খালামণি হেসে বললেন”আশ্চর্য হলে??নাকি বিশ্বাস করতে চাও না?
আমার বোনের সাথে কি কি করেছো তা তো তুমিই জানো।সেটার ফল স্বরুপ দিবা এই পৃথিবীতে এসেছে এবং আজ তোমার সামনে সে।
জসিমের মেয়ে নয় বরং ও তোমার নিজের মেয়ে।তোমারই রক্ত।
.
দিবার চোখে পানি।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে।মাথা ঘুরছে তার।বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিতেই আহনাফ এসে ধরলো ওকে
.
-কি হলো দিবা?তুমি ঠিক আছো?
.
দিবা মাথা ধরে বললো”আমায় এখান থেকে নিয়ে যান প্লিস”
.
আহনাফ মায়ের দিকে তাকালো।মা ইশারা করলেন চেয়ারের দিকে।আহনাফ ওকে নিয়ে চেয়ারে বসালো
দিবা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে।সাদাত স্যার দিবার থেকে চোখ সরাতে পারছেন না।পাঁচ মিনিট ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে দিবার কাছে এসে দাঁড়ালেন
হাঁটু গেড়ে নিচে বসলেন।দিবার হাত আলতো করে ছুঁয়ে সাদাত স্যার বললেন”সত্যিই কি তাই মানুষ বলতো তোমার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে কিনা?কথাটা তাহলে সত্যি?এই কথাটা মৌসুমী আমায় জানায়নি কেন?”
.
কথাটা চিৎকার করে বললেন স্যার
.
দিবা উঠে পিছিয়ে গিয়ে বললো”কেন বলতো??কাকে বলতো?যে তাকে ঠকিয়েছিল?বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল??যার ভুলের মাশুল আমার মাকে অন্য একটা বিবাহিত লোককে বিয়ে করে দিতে হয়েছিলো???
যার কারণে আমার মায়ের মুখের হাসি চলে গেছে চিরজীবনের জন্য??”
.
সাদাত স্যার কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছেন না।হাউমাউ করে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন তিনি
খালামণি এগিয়ে এসে বললেন”দিবা তো ঠিকই বলছে।তুমি মৌসুমীকে বের করে দিয়েছিলে আর ও কনসিভ করার কথা তোমায় বললে তুমি তোমার মাকে উপেক্ষা করে বুঝি আবার মৌসুমীকে ঘরে তুলতে??
মাকে যখন এতই ভয় পাও তো কি দরকার ছিল মৌসুমীকে নিয়ে যাওয়ার?”
.
দিবা চোখ মুছে মিনিকে ঝাপটে ধরে চলে গেলো গেটের দিকে।বাসায় ফিরে যাবে সে।এখানে আর এক মূহুর্ত ও থাকা তার পক্ষে সম্ভব নাহ
.
আহনাফ ছুটে গিয়ে ওকে থামালো
.
-কি?আমি বাসায় যেতে চাই।পথ ছাড়ুন আমার
.
-না।এতদিন পর তোমার বাবাকে পেয়েছো।একবার জড়িয়েও তো ধরতে পারো
.
-উনি আমার বাবা নন।কোনো অধিকার নেই তার আমার উপর।নামেই বাবা উনি।এতদিন পর এসে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলে আমি গলে যাব?আপনি জানেন না কত বাজে সিচুয়েশনে আমি বড় হয়েছি।
.
-জানি।তোমার কষ্টের দিন শেষ দিবা।
.
-না শেষ নয়।উনাকে দেখে আমার সেই কষ্ট গুলোর কথা মনে পড়ে বুক ফেটে কান্না আসছে।আমি থাকতে চাই না এখানে
.
দিবা হনহনিয়ে চলে গেলো বাহিরের দিকে
আহনাফ ফোন বের করে আরিফকে ফোন করলো ভার্সিটিতে এসে মাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য
ও দিবাকে আনতে যাচ্ছে
আরিফ ঠিক আছে বলে রওনা হয়েছে
এদিকে আহনাফ দিবাকে আটকানোর চেষ্টা করছে শুধু
.
সাদাত স্যার নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খালামণির সামনে এসে বললেন”মৌসুমী কোথায়?”
.
-খুলনাতে।
.
-তাহলে দিবা এখানে কেন?
.
-সে অনেক কাহিনী।একটা বাবা হারা মেয়ের জীবন কেমন তা দিবাকে দেখলেই মানুষ বুঝতে পারবে।মৌসুমীর চেয়েও দিবা বেশি স্ট্রাগল করেছে এবং করছে ওর জীবনে
তার সব দায়ভার শুধু তোমার
তোমার করা একটা ভুল মৌসুমীর জীবনের সাথে সাথে দিবার জন্ম থেকে সব সুখ নষ্ট করে ফেলেছে।মেয়েটা বাধ্য হয়েছে আমার বাসায় এসে থাকতে।
.
-আমি জানতাম না দিবার কথা।কখনও শুনি ও নাই।জানলে কিছু একটা করতাম আমি।মৌসুমীর দরকার ছিল আমায় কথাটা জানানোর।দিবা আমার মেয়ে!!
.
-জানাবেই বা কিভাবে।তুমি ওকে বের করে দেওয়ার পরে বাবা জোর করে ওকে জসিমের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় এরপর ও যে খুলনায় গেলো আর কখনও ওকে দেখিনি আমরা।এমনকি দিবার কথা আমি জানলাম এক মাস হলো
.
-এত অভিমান!!এত অভিমান যে ও আমায় আমার মেয়ের কথা জানালো না?
.
-এর চেয়েও কঠোর শাস্তি তোমার প্রাপ্য ছিল।আসি আমি
.
-মৌ আপা দাঁড়ান প্লিস।দিবা আমায় ভুল বুঝছে।আমায় ওর সাথে কথা বলতে দিন একটু।আমি ওকে বুঝাবো
.
-কি বুঝাবে?ও নিজের চোখে নিজের আর নিজের মায়ের কষ্ট দেখেছে সেই ছোট বেলা থেকে।ওসব ভুলাতে পারবে তুমি?
বাচ্চা মেয়েটাকে একদিনে এত কষ্ট দিও না।ও তোমায় দেখে কষ্ট পেয়েছে।
.♣
-দিবা?
.
আপনি কেন এমন করছেন।আমায় একটু একা থাকতে দিন।হাত ছাড়ুন আমার
.
-না ছাড়বো না।মিনিকে এমন করে ধরছো কেন তুমি?বাপের উপর রাগ ওর উপর দিকে ঝাড়বা??আর একটুর জন্য বেচারা পড়েই যাচ্ছিলো।আসো বাইকে বসো।তোমায় বাসায় দিয়ে আসব আমি
.
-না।আমি একা যাব
.
-আর বেশি কথা বললে চড় খাবা।বাসায় গিয়ে নিজের রুমে বসে সারাদিন ধরে কান্না করিও।আমার কিছু না
তবে বাহিরে এরকম উন্মাদের মতন ঘুরবে না।
তুমি একা নও সাথে একটা ফুটফুটে আজাইরা বেড়ালও আছে।
.
-মিঁয়াও
.
-দেখো।ও সাঁয় ও দিলো।নিজেকে সে ফুটফুটে ভাবে।
আসো আমার বাইকে উঠে বসো
.
আহনাফ দিবাকে টেনে বাইকের কাছে নিয়ে আসলো।দিবা চোখ মুছে উঠে বসলো সেখানে
আহনাফ মিনিকে সামনে এনে বসিয়েছে
চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে সে এখন।দিবা বারবার নাক টানছে।সাদাত স্যার তার বাবা হয় সে তা জানলো আজ
-অথচ ভেতরের ক্ষোভের কারণে একটিবার জড়িয়েও ধরতে পারলাম না
এভাবে দেখা হয়ে যাবে জানতামই না।এখন এরকম করে কেন।উনি কি উনার দ্বিতীয় সংসারে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি করবেন নাকি।আমি কখনও যাব না।আমি এখানে ভালো আছি।
.
-জানো আমি ভাবছি সাদাত স্যার আবার তোমায় নিয়ে যেতে না বলে
.
-আমি যাব না।ঐ লোকটাকে আমি ঘৃনা করি
আচ্ছা উর্মি ম্যাডাম বলেছিলেন স্যার বিয়ে করেননি।এটার সত্যতা কতটুকু?
.
-তুমি একটা বোকা!!সেদিন স্যারের বাসায় কোনো মহিলাকে দেখেছো স্যারের মা ছাড়া?
.
-হয়ত উনার ফ্যামিলি এখানে থাকে না
.
-না।সাদাত স্যার বিয়ে করেন নাই।আমি এখন বুঝলাম স্যার কেন বিয়ে করেন নাই।খালামণিকে অনেক ভালোবাসেন উনি।এরকম লাভার আজকাল পাওয়াই যায় না
.
-এতই যখন মাকে ভালোবাসত তখন আমার মাকে একা বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন কেন?
.
-ঐ যে তোমার ডাইনি দাদুর কারণে
.
-ডাইনি বলবেন না।উনি কত ভালো ঐদিন দেখছিলাম
.
-তাহলে তোমার বাবা ভালো না।বাকি সব ভালো
.
-না বাবাও ভালো
.
আহনাফ ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”কি বলছো ভেবে বলছো তো??সবাই যদি ভালো হয় তো এমন কাঁদছো কেন তুমি?তোমার তো হাসা উচিত।ইনফ্যাক্ট, চলো আমরা সাদাত স্যারের বাসায় যাই পার্টি দিতে”
.
-আপনি এত বকরবকর করেন কেন। আমাকে কাঁদতে দিন একটু
.
-কাঁদো।জোরে জোরে কাঁদো।আমি তো যাই বলি তাই দোষ
কাঁদলে কি তোমার বাবা ছাড়া কাটানো সেসব বছরগুলো ফিরে আসবে?নাকি এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা ঠিক হবে?
.
-কেঁদে মন হালকা করতে চাই।এটা তো বাসায় যাওয়ার রাস্তা না আপনি কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন?
.
-আমরা বাসায় ফিরছি না।প্রথমে ভাবলাম বাসায় ফেরা উচিত।পরে ভেবে দেখলাম, নাহ!!অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে তোমার মনটা ভালো করা জরুরি আগে
.
-কোথায় যাবেন?
.
-দেখতে পাবে
.
দূরের একটা লেকের কাছে এসে আহনাফ বাইক থামালো।দিবাকে নামিয়ে হাত ধরে নিয়ে গেলো লেকের পাশে।তারপর জোর করে ঘাসের উপর বসিয়েও দিলো ওকে।মিনিকে নিয়ে সে নিজেও বসলো।মিনি সবুজ ঘাস পেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে তার উপর।শুয়ে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে এখন
আহনাফ দিবাকে একটা ঠেলা দিয়ে বললো”চা খাবে?আইস্ক্রিম?বাদাম?ছোলা?”
.
-আপনার মাথা খাব
.
-যদিও আজ শেম্পু করিনি।আচ্ছা তাও খেতে পারো
.
-ভালো লাগছে না আমার।মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।ইভান ভাইয়াকে ফোন করে বলেন না মাকে ফোনটা দিতে
.
-ইভান এখন অফিসে।খালামণিকে কি করে কল দেবে?
.
হুম তাই তো।
.
আহনাফ দিবার মাথায় হাত রেখে ওর চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো”আমি আছি না?তোমার খালামণি আছে না?তাহলে কেন এত কাঁদছো?ধরে নাও কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আসলে ঘটেইনি।আগে যেমন ছিলে তেমনি লাইফ লিড করতে থাকো সব ঠিক হয়ে যাবে”
.
দিবা আহনাফের দিকে ঘুরে বসলো”আচ্ছা আমার কি করা উচিত সত্যি করে বলুন?”
.
-আপাতত আইস্ক্রিম খেয়ে মাথা কুল করা উচিত।ওয়েট এ মিনিট।আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।ম্যাঙ্গো অর চকলেট?
.
-ভ্যানিলা
.
-ওকে।মিনি তো আইসক্রিম খাবে না।ওর জন্য কি আনি?
.
মিনি আহনাফের পিছু পিছু হাঁটা ধরলো।দিবা লেকের পানির দিকে চেয়ে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে।তারপর গায়ের শাড়ীটার দিকে চেয়ে বললো”শাড়ীটাকে লাকি বলতাম নাকি কুফা বলতাম??”
চলবে♥
(গল্পে কোথাও আহনাফ-দিবার জায়গায় শান্ত- আহানা দেখলে বুঝে পড়ে নিবেন।বইয়ে প্রকাশিত হবে বলে প্রেমের পাঁচফোড়নের পাণ্ডুলিপি সকালে লিখি
আর সবটা অন্যরকম রাতে লিখছি। তাই মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাচ্ছে)
চলবে♥