সম্পর্কের মায়াজাল পর্ব-৩১

0
2996

#সম্পর্কের_মায়াজাল
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৩১

একমাস পর……

সন্ধ্যা এখন দিনের বেশির ভাগ সময় সমুদ্রের সাথে কথা বলে। আগের থেকে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে সে। সন্ধ্যা এখনও সমুদ্রকে চাদর নামেই চিনে। একদিন সন্ধ্যা ও সমুদ্র কথা বলছে…..

—” তোমার নাম চাদর না রেখে বাঁদর রাখা উচিৎ ছিল। কি অদ্ভুত নাম! ”

সন্ধার কথায় সমুদ্র মুচকি হাসলো। সমুদ্র জানে, চাদর নামটা সন্ধ্যার একদম পছন্দ না। সন্ধ্যাকে রাগাতে সমুদ্র বলল…..

—” তুমি আমাকে চাদর নামে না ডেকে আদর বলে ডাকলেই তো হয় সন্ধু।”

—” সন্ধ্যা ডাকবে সন্ধু কি হ্যাঁ? বাদ দেও এইসব। তোমার সাথে কথা বললেই ঝগড়া। শুনো,বাবুর নাম ঠিক করেছি, ছেলে হলে রাখবো উদয়, মেয়ে হলে রাখবো ঊষা। কেমন হলো নামগুলো?”

সাধনার বাচ্চার নাম ঠিক করছে সন্ধ্যা। প্রথমে সমুদ্রকে বলেছে সুন্দর নাম বলার জন্য কিন্তু সমুদ্র মজা করে ফানি কিছু নাম বলেছে সেই জন্য রাগে সন্ধ্যা নিজেই নাম ঠিক করলো।
.

সমুদ্র সন্ধ্যার নামগুলো শুনে বলল…..

—” তুমি রেখেছো খারাপ কি বলা যায়? তাছাড়া আমার রাখা নাম তোমার পছন্দ হবে না। যেখানে আমাকেই পছন্দ করো না সেখানে আমার নাম।”

—” হবে কিভাবে? তুমি তো ছেলের নাম জ্যাকেট আর মেয়ের নাম সুয়েটার রাখবে। নিজের নাম যেমন অদ্ভুদ। সাধনা আপুর বাচ্চার নামও রাখবে অদ্ভুদ।”

সমুদ্র পারছে না জোরে হাসতে। চাদর নামের জন্য তার নিজেরই হাসি পায় কিন্তু ও হাসলে তো সন্ধ্যা সন্দেহ করতে পারে সেই জন্য মিটমিট করে আস্তে হাসে। সন্ধার কথার পর সমুদ্র উত্তর দিলো একটু মজা করেই।

—” শীত আসলে কিন্তু এই চাদর,জ্যাকেট,সুয়েটার দিয়েই শীত নিবারণ করো। ভুলে যেও না আমি তোমার শীত নিবারণ করার এক মাত্র আশা আর সেই আশার নাম হলো চাদর।”

—” অসভ্য মানুষ একটা। আচ্ছা শুনো তোমার সাথে আমি দেখা করতে চাই প্লিজ করবে দেখা?”

সমুদ্র এইবার কি বলবে যদি দেখা করার পর সন্ধ্যা তাকে চিনে যায় তখন যদি খারাপ কিছু ঘটে এই রিস্ক সে নিতে চায় না। সন্ধ্যা আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ্য পাশাপাশি ডক্টরের চিকিৎসায় আছে তাই সমুদ্র মিথ্যা কথা বলল…..

—” এখন দেখা করতে পারবো না সন্ধ্যা। তোমার সাথে আমি হুট করে চলে আসবো। এখন আসলে আমাদের দু’জনের মনের মাঝে দেখা করার যে আশা সৃষ্টি হয়েছে তা শেষ হয়ে যাবে আমি কিন্তু সেই আশাটা শেষ করতে চাই না তুমি আর কিছুদিন ওয়েট করো খুব শীগ্রই দেখা হবে আমাদের।”

সন্ধ্যা মন খারাপ করা সত্বেও সমুদ্রের কথার যুক্তি আছে বলে আর কিছু বলল না।

অন্যদিকে……

স্পন্দন আজ মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছে। একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে। চোখ দুটি রক্ত লাল। শুভ্রতা বারান্দায় গিয়ে সিগারেটের ধোঁয়ায় কাঁশতে শুরু করলো। স্পন্দন একবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আবারো তার সমস্ত মনোযোগ সিগারেটের দিকে আকর্ষণ করলো……

শুভ্রতা ওরনা দিয়ে নাক মুখ চেপে ধরে ভ্রু জোড়া কুচকে জিজ্ঞাসা করলো…..

—” কি হয়েছে আপনার হটাৎ এত রেগে আছেন কেন? সব ঠিক আছে তো?”

—“…….

স্পন্দনের চুপ থাকা দেখে শুভ্রতার মনে ভয় নামক শব্দটি সৃষ্টি হলো। হটাৎ হাসি খুশি থাকা ছেলেটির কি হয়ে গেল এক নিমিষেই। বুঝার বা জানার জন্য মন তার ছটপট করছে কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না। স্পন্দন যেমন তাকে পাগলের মত ভালোবাসে শুভ্রতা তেমন স্পন্দনের রাগকে বাঘের মত ভয় পায়।

ভয়ে ভয়ে শুভ্রতা চলে যেতে নিলে স্পন্দন শুভ্রতার নাম ধরে ডাক দিলো…..

—” শুভ্রতা…..”

শুভ্রতা পিছন ফিরে স্পন্দনের দিকে তাকালো…..

—” হুম।”

—” তোমার সন্দেহ ঠিক শুভ্রতা।”

শুভ্রতা বুঝতে পারছে না কিসের সন্দেহ কি ঠিক তাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের চোখের দিকে স্পন্দন তখন বলল……

—” সন্ধ্যা অনেক বছর যাবত ড্রাগস ইউজ করতো। তোমার দেওয়া চকোলেট গুলো যখন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় তখন তার রিপোর্ট ঠিক আসে। আমি কিছুদিন যাবত সন্ধ্যার পরিবর্তন দেখে অনেক চিন্তা মুক্ত হই। আগের বাচ্চা মেয়ে সন্ধ্যা আর বাচ্চা নেই অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে ও কিন্তু আমার অনেক দিন ধরে একটা জিনিষ নজরে আসছে সন্ধ্যা আগের থেকে চকোলেট খুব কম খাচ্ছে। যে মেয়ে একটার পর একটা চকোলেট মুখে দিয়েই রাখতো সেই মেয়ে সকালে একটি চকোলেট খেলে সারাদিন তার হাতে আর কোনো চকোলেট পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে খায় কি না তাও বুঝা যায় না। ব্যাপারটা প্রথম প্রথম ভালো লাগল তাই খুশি হয়ে ওকে আমি চকোলেট কিনে দেই বাট আমার দেওয়া চকোলেট ওর মুখে না-কি ভালো লাগে না তাই একদিন ওর হাত থেকে চকোলেট মুখে দিয়ে আমার অস্বস্তি বোধ করা শুরু করলো ঠিক সেদিনের খাওয়া চকোলেট গুলোর মত যখন তুমি জোর করে সন্ধ্যার হাত থেকে নিতে বলেছিলে। ”

কিছুক্ষণ দম ছেড়ে আবারো বললো স্পন্দন……..

—” তারপর আমি সন্ধ্যার রুমে যাই আর সামনে থাকা চকোলেট মুখে দেই জানো ওই চকোলেট গুলো একদম স্বাভাবিক চকোলেট গুলোর মত ছিল। তখন আমি সন্ধ্যার কাছ থেকে জানি যে সামনে, যে চকোলেট ও রেখেছে ও না-কি সেগুলো খায় না ওর চকোলেট আলাদা তখন ওর ওই চকোলেট থেকে একটা চকলেট বক্স হাতে নিয়ে আবারো ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য দেই আর জানতে পারি চকোলেটে ড্রাগস ব্যাবহার করা হয়।”

শুভ্রতা স্পন্দনের কথা শুনে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বসে পরে আর বলতে থাকে……

—” তাহলে সন্ধ্যার ডক্টর তা ধরতে পারে নাই কেন? উনি তো সন্ধ্যার চিকিৎসা করছিল।”

—” ওই লোক ইচ্ছা করেই কথাটা বলে নাই। আমার মনে হয় লোকটি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই কথাটা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে এসেছে। ”

—” কিন্তু কে করেছে এইসব?”

—” যে লোক সন্ধ্যাকে এই চকোলেট দিতো সেই এইসব করেছে। ওই লোকটি কে আমাকে তো জানতেই হবে।”

শুভ্রতা এতদিন সন্ধ্যার ওই আপুর কথা ভুলেই গিয়েছিল হটাৎ আজ মনে আসাতে বলে ফেলল…..

—” সন্ধ্যার এক আপু না-কি তাকে এইসব চকোলেট গিফট করে। এইসব কাজ ওই আপুর।”

—” কোন আপু?”

—” আমি জানি না সন্ধ্যা জানে আমি অনেক জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু ও বলে নাই। আপনাকে বলতে পারে ট্রাই করে দেখতে পারেন।”

স্পন্দন সিগারেট গুলো সোফায় রেখে হনহন করে সন্ধ্যার রুমের দিকে হাটা শুরু করলো। শুভ্রতা স্পন্দনের পিছন পিছন যাচ্ছে,……

সন্ধার রুমে আসার পর…….

—” সন্ধ্যা আছিস?”

স্পন্দনকে দেখে সন্ধ্যা দৌঁড়ে আসলো।

—” ভাইয়া তুই এসেছিস? আয় ভিতরে আয়। এখন তো ভুলেই গিয়েছিস আমাকে। সারাদিন চাদরের সাথে কথা বলে টাইম পাস করি আমি। কথা বলার মত আর কেউ নেই আমার। আব্বু আম্মু তো ওদের মত বিজি একজন বই আরেকজন পান। তুই আর ভাবী অফিস। সাধনা আপুর সাথে কম কথা বলি আপুর মন বেশি ভালো থাকে না তাছাড়া শুনেছি এই অবস্থায় এত কথা বলা ভালো না। তাই আমার এক মাত্র কথা বলার সঙ্গী হলো চাদর। রাত দিন ওর সাথেই কথা বলি আমি।”

স্পন্দন আর শুভ্রতা ভেবেছে গাঁয়ে দেওয়া চাদরের সাথে সন্ধ্যা রোজ কথা বলে। সমুদ্র যে ফেক নাম বলে সন্ধ্যার সাথে কথা বলে তারা জানে না। স্পন্দন সন্ধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…..

—” ভাইয়াকে তো কোনোদিন মিথ্যা কথা বলিস নি আজও বলবি না কেমন?”

—” হুম ভাইয়া।”

—” তোকে চকোলেট কে গিফট করে?”

—” আমার আপু।”

—” কোন আপু?”

সন্ধ্যা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। শুভ্রতা আর স্পন্দন সন্ধ্যার উত্তরের জন্য জন্য আকুল হয়ে তাকিয়ে রইল।

—” তাজরীন আপু। ওই তো আমাকে চকোলেট গিফট করে খুব ভালো আপু ।”

তাজরীন নামটা শুনে স্পন্দন কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হচ্ছে নামটা শুনে সে খুব অবাক হলো। স্পন্দনকে দেখে মনে হচ্ছে এই নামের ব্যাক্তি-টি এমন কিছু করতে পারে এইটা বিশ্বাস করা তো দুর ভাবাও ইম্পসিবল। স্পন্দনের মুখের দিকে তাকিয়ে শুভ্রতা বলল…..

—” হটাৎ কি হলো। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পুরনো এক্সের নাম শুনে অবাক হলেন। ব্যাপার সেপার তো ভালো ঠিকছে না ।”

স্পন্দন শুভ্রতার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালো শুভ্রতা এই দৃষ্টি দেখে ভয়ে চুপসে গেল। স্পন্দন সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো……

চলবে……

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।