সম্মোহনী সেই মেয়েটি পর্ব-২১+২২+২৩

0
494

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সবাই মিলে রাতের খাবার খাচ্ছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।শান্তা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন।অনিলাও সবার সাথে বসে খাবার খাচ্ছে।তার এক্সাম শেষ হয়েছে দুইদিন হয়ে গেছে।মোটামুটি হয়েছে পরীক্ষা টা।হইতো টেনেটুনে পাস টা করবে।তা যায় হোক পরীক্ষায় যে বসতে পেরেছে সে এটাই অনেক।এতে অবশ্য নিশা ও জুনইদ তাকে খুবই সাহায্য করেছে।খেতে খেতে রমিজ আহমেদ বলে উঠলেন,

“তা জুনইদ তুমি কি ভাবলে তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে?”

কথাটা শুনতেই জুনইদ জোরে শোরে একটা বিষম খেলো।কারণ সে তার বাবাকে খুব ভয় পাই।এমনিতে সে খুবই সাহসী কিন্তু বাবার কাছে গেলেই তার হাটু কাপে।কারণ তার যত অন্যায় আবদার মায়ের কাছে চলে আর কাকু তো বন্ধুর মতো কিন্তু তার বাবা খুবই কড়া মেজাজের মানুষ।

শান্তা বেগম ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”আচ্ছা খাওয়ার সময় এসব কথা এখন থাক না।খাবার পর আলোচনা করা যায় না নাকি।খেতে খেতে এসব কথা কেন,খেতে দাও ওঁকে।”

রমিজ আহমেদ ক্ষীপ্ত কন্ঠে বললেন,
“নাহ ‘,আমার ওতো টাইম নেই।এখানে বেকার দের মতো আড্ডা দিলে তো আর আমার চলবে না।আমাকে ঘরে গিয়ে আবার কাজ করতে হবে।”

জুনইদ ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর বাবার টার্গেট ও নিজেই।জুনইদ আমতা আমতা করে বললো,”কাল থেকে অফিস জয়েন করবো ভাবছি!আর কিছু?”

আলতাফ আহমেদ বললেন,জুনইদ তোকে এতো তাড়া কে দিয়েছে?একটু ভেবে চিন্তে পরে জানাস।”

নিশা বলে উঠলো, “আর তোমার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি হবে ভাইয়া?”

জুনইদ বেজার মুখেও আলতো হেসে বললো,”এক জীবনে সব কিছু হয় না।ছাড় তো ওসব।”

“তাই বলে মাঝ পথে ছেড়ে দিবি নাকি?”

“মা তাহলে তোমরাই বলো আমি কি করবো?স্বপ্ন আর ক্যারিয়ার এক সাথে দুটোর সঙ্গে তো আর কম্প্রোমাইজ করা যায় না।এক সঙ্গে গড়া কি সম্ভব। আর স্বপ্ন দিয়ে কি হবে?” তারপর জুনইদ ওর বাবা কে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আর কিছু জানতে চাও তুমি?”

রমিজ আহমেদ সন্তুষ্টির স্বরে বললেন,”নো!গুড ডিসিশন!”

বাবার কথা শেষ হতেই জুনইদ টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেলো।

শান্তা বলে উঠলেন,”সব কাজে তোমার এতো বাড়াবাড়ি কেন বলো তো?এতো তাড়া কিসের।ছেলেটা আর কিছু দিন পর অফিস জয়েন করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো বলো তো?”

“তোমরা মহিলারা না এসব বুঝবে না।ছেলেকে তো দিন দিন লাই দিয়ে মাথায় তুলেছো।এখন আমরা থাকতে থাকতে যদি সব কিছু বুঝে না নেই তাহলে পরে একা একা কি করে সামলাবে।আমরা আর কত দিন বলো।আর এই ইঞ্জিনিয়ারিং করে হবে কি।সেই তো অফিস জয়েন করতেই হবে।নিজেদের বিজনেস রেখে অন্যের আন্ডারে কেন কাজ করতে যাবে।”

রমিজের কথা শুনে আলতাফ আহমেদ বলেন ,”ভাইজান তোমার জুনইদের জন্য চিন্তা অমুলক নয়।কিন্তু ছেলেটা তো সেই ছোট থেকেই বলে আসছে ইঞ্জিনিয়ারিং করতে চাই।ইঞ্জিনিয়ারিং টা ওর স্বপ্ন। আর কিছু দিন টাইম দেওয়াই উচিত ছিলো ওঁকে।আমার যা মনে হয়!”

রমিজ আহমেদ বলে উঠলেন,”হ্যাঁ আমি টাইম ওঁকে দিয়েছিলাম।কিন্তু সব কিছুরই না একটা সীমাবদ্ধতা আছে।এতো দিন একা ছিলো যা খুশি করে বেরিয়েছে।কিন্তু এখন তো আর ও একা নয়।এখন একটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে ও।সেটা তো যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে।বুঝতে হবে তো ওঁকে যে এখন সে একা নয়।তার দায়িত্ব বেড়ে গেছে।অনিলার ও কিছু আবদার আছে,এক্সপেক্টশেন আছে সেগুলোও তো ওঁকে পুরন করতে হবে নাকি।সেটা কি ও আমাদের এসে বলবে যা বলবে সেটা তো মেয়েটা জুনইদ কেই বলবে নাকি?তাই ওঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে এবার!”

এতক্ষণ অনিলা উঠে যেতেও পারছিলো না আর না খেতে পারছিলো।চুপচাপ সবকিছু শুনছিলো নিরব হয়ে।এখন যেহেতু তার কথা উঠেছে সেহেতু ও কথা বলতেই পারে।তাই সে মাথা নত করেই মোলায়েম গলায় বললো, “জানি না এর মধ্যে আমার কথা বলা ঠিক হচ্ছে কিনা বাবা।কিন্তু আপনার ভাবনাকে সম্মান জানিয়েই বলছি,আমার মনে হয় আমার দিক থেকে কোনো অসুবিধা হবে বলে।আমার ওতো এক্সপেক্টশন নেই।বাকিইইটা আপনার যা ভালো মনে হয়।

“না মা সেটা নয়।তোমার ও ক্যারিয়ার আছে।তুমি শুধু তোমার ক্যারিয়ার টা দেখো।বাকিটা আমি তুমি কেন ভাববে।তার মানে এই নয় যে আমরা তোমার দায়িত্ব নেবো না।এখন তো আমরাই তোমার গার্জিয়ান।সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু তার আগে জুনইদ কেও তোমার ভালো মন্দ টা বুঝে নিতে হবে।আমাদেরই তো দায়িত্ব তোমাদের সঠিক ভাবে দাড় করানো তাই না?”

“বুঝেছি বাবা।আপনারা কথা বলুন আমি এই ব্যাপারে আপনার ছেলের সাথে কথা বলবো!”

“হ্যাঁ আমি জানি তুমি বুঝাতে পারবে ওঁকে।একমাত্র তুমিই ওকে বুঝাতে পারবে৷”

অনিলা মাথা নেড়ে চলে এলো সেখান থেকে।
অনিলা ঘরে এসে দেখলো জুনইদ নেই ঘরে।ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো জুনইদ রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর মন খারাপ বুঝতে পেরে হঠাৎ করেই অনিলা জুনইদের দু হাতের মধ্যে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

জুনইদ তো শকড।অনিলা ওঁকে জড়িয়ে ধরেছে।জুনইদ অনিলার ডান হাতটা ধরে সামনে এনে ওর কমোড় ধরে ব্যালকনির রেলিঙের উপর বসিয়ে দিলো।তারপর দুই হাত ধরে বলে উঠলো,”কি ব্যাপার মেডাম!রোমান্টিক মুডে আছেন মনে হচ্ছে?”

“কিচ্ছু রোমান্টিকতা নয়।যদি কেউ মুখ ফুলিয়ে মুড অফ করে বসে থাকে তাহলে কি করবো?”

জুনইদ ঠোঁট গোল করে বললো, “ওওওহ আমার মুড অফ দেখে যদি কেউ রোমান্টিক মুডে থাকে তাহলে তো আমি চব্বিশ ঘন্টায় মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবো।কোনো অসুবিধা নেই।কিন্তু আমার মুড নেই এখন আমি ঠিক আছি।”

“আপনি যদি ঠিকই থাকতেন তাহলে এতক্ষণ আমাকে লেকপুল করা শুরু করে দিতেন।”

“ওও তাহলে তুমি যেচে আমাকে ইনভাইট করছো তোমাকে লেকপুলিং করতে।”

“বাদ দেন না এসব।আপনি আর কলেজে যাবেন না তাই না?”

“নাহ কাল থেকে তো অফিস করবো তুমি খুশি হও নি?”

“নাহ!”

“কেন?আমি তো ভাবলাম আমি অফিস জয়েন করলে সব থেকে বেশি খুশি তুমিই হবে!”

“হ্যাঁ হতাম।কিন্তু আমার জন্য আপনি যদি আপনার সমস্ত খুশি গুলো বিসর্জন দিলে কি করে খুশি হবো।ইঞ্জিনিয়ারিং আপনার স্বপ্ন না?”বলেই অনিলা বসে থেকেই জুনইদ কে জড়িয়ে ধরলো।

” পাগল নাকি!কে বলেছে তোমাকে?আমার স্বপ্ন বিসর্জন দিচ্ছি তোমার জন্য?”

#চলবে

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২২(বোনাস পার্ট)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

” পাগল নাকি!কে বলেছে তোমাকে?আমার স্বপ্ন বিসর্জন দিচ্ছি তোমার জন্য?”

অনিলা অবসন্ন কন্ঠে বলে,”খুব কষ্ট হচ্ছে না আপনার?”

জুনইদ আলতো করে অনিলার পিঠে হাত রেখে ফিচেল হেসে বললো,”আরে বাবা কষ্ট কেন হতে যাবে!”

“তাহলে ঠিক করে খেলেন না কেন?”

“এমনি,খিদে ছিলো না।তাছাড়া বাবা তো আরও অনেক আগে থেকেই আমাকে অফিস জয়েন কর‍তে বলে।আসলে সেভাবে কোনো দিন চাপ পরেনি তো তাই জোরাজোরি কিছুই করেনি।আমিও কিছু ভাবিনি।এখন তো কাজ বুঝে নিতেই হবে তাই না।এখন থেকে কাজ বুঝে নিবো আমি।”জুনইদের শেষের কথা গুলো কেমন ভারি শোনালো অনিলার কাছে।

“হুম আগে বলেনি কিন্তু এখন আমার জন্য আপনার এক্সট্রা দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।আমার খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে আমার জন্য আপনার স্বপ্ন টা*।”

অনিলার কথা শেষ না হতেই জুনইদ বলে উঠলো,”ধুর বোকা।তোমার জন্য কেন হতে যাবে আমার স্বপ্ন শেষ।”

“এখন যদি আপনি বিয়েটা না করতেন তাহলে তো আর আমার দায়িত্ব আপনার কাধে পরতো না তাই না।আর আমার জন্যই আপনার স্বপ্ন টা শেষ হতে যাচ্ছে এখন।”

“হুম কিন্তু বিয়েটা তো আমি করেছি তোমাকে তাই নাকি।সেজন্য তোমার খারাপ লাগবে কেন?এই জানো তুমি পাগলই ভালো ছিলা।যা বলতাম তাই শুনতে,খাইয়ে দিতাম,গো*সল করিয়ে দিতাম।এই সুযোগ গুলো আর পাবো না।চুপচাপ সব কথা শুনতে।এখন শুধু বাজে বকো।”জুনইদ আফসোস এর সাথে বললো কথা গুলো।

অনিলার মন ক্ষুন্ন হলো কিছু তিক্ততা এসে ঘিরে ধরলো।মনে পরলো সেই খারাপ স্মৃতি গুলো।চোখ ঝাপসা হয়ে এলো ওর।ভেসে উঠলো চোখের সামনে সেই নোংরা লোকটার তিক্ত স্পর্শ গুলো।গা গুলিয়ে এলো কথা গুলো ভাবতেই।সেদিন সে হাতের নাগালে কিছু ক্ষুদ্র পাথর হাতরে পায়।বড় একটা পাথর পেয়ে এক হাত দিয়ে লোকটা কে মেরেছিলো।কিন্তু লোকটাকে দামাতে পারেনি। ওই নোংরা লোকটা জোর করে তাকে ধ*র্ষন করে ছিলো।সে পারেনি শত চেষ্টা করেও নিজের সতিত্ব রক্ষা করতে।এই মানুষ টা ছিলো বলেই সে আজ বেচে আছে।তার আবছা আবছা মনে আছে কিভাবে জুনইদ তাকে কোলে করে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলো।

স্ট্রুয়ার্ট তখন স্টেশন থেকে উড়ে উড়ে চলে গেছিলো সামনের পুলিশ স্টেশনে।রেইল স্টেশন থেকে কিছুটা দুরেই ছিলো পুলিশ স্টেশন।স্ট্রুয়ার্ট উড়ে উড়ে সেখানে পৌঁছে একটা জেলের কুঠরীর একটা চাবি নিয়ে উড়তে উড়তে চলে আসে অনিলার কাছে।স্ট্রুয়ার্ট কে চাবি নিয়ে ছুটতে দেখে কিছু কন্সেন্টপল স্ট্রুয়ার্ট এর পেছন পেছন যেতে থাকে। টর্চ হাতে অনুসরণ করে তারা স্ট্রুয়ার্টকে।তারা ভেবে পাচ্ছে না সামান্য একটা পাখি কারাগারের চাবি নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।এক সময় স্টেশনের কাছে এসেই স্ট্রুয়ার্ট দাঁড়িয়ে পরে।সেই শুনশান রাস্তায় রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু মাত্র একটা চাপা আর্তনাদ আসছে সেখান থেকে।স্ট্রুয়ার্ট বলে উঠলো, “বিপদ,বিপদ, বাচাও,আমার অনিকে, অনিকে!”

পুলিশ টি হাতের টর্চ সামনের দিকে ধরতেই দেখলো একটা মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।সারা শরীরের বেহাল অবস্থা।স্ট্রুয়ার্ট অনবরত চিৎকার করে চেচাচ্ছে।পুলিশ গুলো বুঝতে পারে যে আসলে কি হয়েছে মেয়েটির সাথে।সেখানে কেউই নেই।মেয়েটি গোঙ্গাচ্ছে।আর তাদের সাথে কোনো মহিলা কন্সেন্টেপলও নেই এখন।একজন কন্সেন্টেপল বলে উঠলো,

“স্যার মেয়েটিকে কে এভাবে ধ*র্ষন করলো বলুন তো।আর এই পাখিটা নিশ্চয়ই মেয়েটিরই হবে।”

অপর জন বললেন,”হ্যাঁ তার মানে এই জন্যই পাখিটা আমাদের চাবি নিজের ঠোঁটে করে নিয়ে এসেছে।যাতে আমরা ওর পিছু নিয়ে এই অব্দি আসতে পারি।মেয়েটি এখনো বেচে আছে।জলদি এম্বুলেন্স এ ফোন করো।”

পুলিশ এম্বুলেন্স এ ফোন করেছে তখনই একটা ছেলেকে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসতে দেখে তারা।উনারা কিছু বুঝে উঠতে না পারার আগেই ছেলেটা মেয়েটির মাথাটা তুলে নিয়েছে নিজের পায়ের উপর।

“এই মিস সুনামি।তোমার কি হয়েছে বলো।তোমার সাথে এটা কে করলো শুধু একবার বলো।আমি তাকে খুন করে ফেলব।কে করেছে এটা।”চিৎকার করে উঠলো জুনইদ।

অনিলা কোনো রকমে চোখ খুলে আবছা আলোই দেখলো জুনইদকে।কাতরাতে কাতরাতে বলে,

“এ-এ-একটা পা-পা-গল লোক।

পুলিশ কথা টা শুনেই একজন কে হুকুম দিলো চারপাশে খুজে দেখার জন্য।যেই হোক না কেন বেশি দূরে যেতে পারে নি এখনো।

দেখুন আপনি শান্ত হোন আমরা দেখছি ব্যাপার টা।নিশ্চয়ই লোকটা বেশি দূর যেতে পারে নি।আমরা ঠিক খুজে পেয়ে যাবো।

আসলে অনিলার ডায়াল লিষ্টে প্রথম জুনইদের নাম্বার টাই ছিলো।অনিলা জুনইদ কে আগেই জানিয়েছিলো যে সে আজকে ট্রেইনে করে ফিরছে।তাই যখন ফোন টা সে রিসিভ করলো তখনই কিছু আওয়াজ পাই আর অনিলার করা আর্তচিৎকার।জুনইদ বুঝতে পারে যে অনিলার ঘোর বিপদ হয়েছে।তাই সে তক্ষুনি ছুটে বেরিয়ে আসে গাড়ি নিয়ে।আর এসেই এখানে আলো দেখেই ছুটতে ছুটতে চলে এসেছে।তখনও অনিলার ফোন কাটে নি জুনইদ।উম্মাদের মতো করে অনিলার রক্তাক্ত দেহ টি দেখেই গায়ের শার্ট টা খুলে অনিলাকে জড়িয়ে দিয়ে ওর ফিনফিনে দেহ টা দুই হাতের মুঠোয় তুলে নিলো সে।অনিলাকে দেখেই ওর বুঝতে বাকি থাকে না আসলে কি হয়েছে।পুলিশ জুনইদ কে ধরতে মানা করে।কিন্তু জুনইদ ক্ষ্যাপা পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে।পুলিশ হতভম্ব হয়ে যায় জুনইদ কে দেখেই।অনিলার একটু একটু জ্ঞান আছে তখনও।থরথর করে কাপছে সে। মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বের হয়,

“মি-মি-ষ্টা-র ল-ল-ল্যাম্পপোস্ট ওও-ই পাগল লোকটা আমাকে বাচতে দিলো না।” বলেই অজ্ঞান হয়ে যায় অনিলা।

জুনইদ চিৎকার করতে থাকে অনিলা বলে আর ছুটতে থাকে।একজন পুলিশ পেছন পেছন ছুটে আসে জুনইদের।স্ট্রুয়ার্ট ও উড়ে উড়ে আসে জুনইদের সাথে।অনিলা কে হসপিটালের ভর্তি করিয়ে সে মায়াবী কে ফোন করে সব টা জানাই।কারণ মায়াবীর নাম্বার ছাড়া আর কারোর নাম্বার নেই।অনিলার এই খবর শুনে ফাহাদ কে সাথে নিয়েই পাগলের মতো ছুটে আসে মায়াবী।তার বাবা মাকেও ফোন করে জানানো হয়।উনারা প্রায় পাগল হয়ে যায় মেয়ের ওমন দুর্ধর্ষ অবস্থার কথা শুনে।জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অনিলা বেচে উঠে কিন্তু ভারসাম্যহীন হয়ে পরে।

“আরে এই অনিলা কি হলো তোমার।তখন থেকে চুপ করে আছো।কি এতো ভাবছো তুমি?”

অনিলার ধ্যান ফিরলো জুনইদের মৃদু ধাক্কায়।চোখ ভর্তি জল গড়িয়ে পরলো তার।জুনইদ অস্থির হয়ে গেলো তা দেখে।

“আরে তুমি কাদছো কেন বলো তো।ঠিক আছে তুমি বলো আমি কি করলে তুমি খুশি হবে আমি তাই করবো।তাও এভাবে কেদো না প্লিজ।তুমি কি চাও বলো শুধু একবার?”

অনিলা নিজেকে শ্বান্ত করলো।চোখের পানি মুছে ফিচেল গলায় বলে,

“আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।আমার লাইফে আপনি আছেন বলে আমি ধন্য।আপনার জন্য আমি আজ এখানে সুস্থ অবস্থায় বেচে আছি।আর আমি কি করে চাইবো আপনার স্বপ্ন এভাবে ভেঙে যাক।”

“আবার বাজে কথা।আর কৃতজ্ঞতা নয় ভালোবাসা বুঝেছো।আর আমিও তো তোমাকে পেয়ে পূর্নতা লাভ করেছি।আমি যদি তোমাকে বিয়ে না করতাম তাহলে আমার জীবন টা অপুর্নতায় ভরপুর হয়ে যেতো।আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া যে একটি গাছের পাতাও নরে না।আল্লাহ হইতো আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন এভাবেই।ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষ কে যেকোনো পরিস্থিতিতে মেনে নেওয়া যায়।আর তুমি হলে আমার সেই ভালোবাসা,সেই পুর্নতা।

অনিলা মুগ্ধ হয়ে গেলো।প্রসন্ন নয়নে তাকিয়ে রইলো জুনইদ এর দিকে।মানুষ টা যে তাকে নিজের সব টা দিয়ে ভালোবাসে তা সে বুঝতে পেরেছে।সে শক্ত করে আবারও জুনইদ কে জড়িয়ে ধরলো।অনিলা ওকে জড়িয়ে ধরেই বলে, “আমার আপনাকে কিছু কথা বলার আছে।”

“হুম বলো?”

“এখানে নয় ঘরে চলুন।”

“ওকে চলো।”বলেই জুনইদ অনিলাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলো।

জাষ্ট আ’ মিনিট। এটা বলে জুনইদ ব্যালকনি ও ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো।লাইট অফ করে অনিলার পাশে শুয়ে পরলো।অনিলাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধর‍তে ধরতে বললো,”হুম হয়েছে, এবার বলো কি বলবে বলছিলে?”

অনিলা জুনইদের গালে হাত রেখে বলে,
“আমি যা বলবো তা আপনি রাখবেন তো?”

“কি এমন বলবে যে ব্যালকনি থেকে বেড এ টেনে আনলে তাও হচ্ছে না।তার আগে এতো ইমোশনাল করে ফেলছো আমাকে।”

“আপনি না কোনো দিন ও শুধরাবেন না জানেন তো।আর ইমোশন মানে কি হুহ।আর হ্যাঁ কথা বলার জন্য আমি কিছু করছি না।এমনিতেই আমি আপনাকে ভালোবাসি না।কথা শেষ করেই অনিলা জিব কেটে দিলো।কি বলে ফেলেছে সে বুঝতে পারলো।

জুনইদ সন্দিহান গলায় বললো,”সত্যিই?আরেকবার বলো?বিশ্বাস হচ্ছে না তো।”

“ধুর ভাল্লাগে না।আমি থাকবো না এখানে।বাজে ছেলে একটা।”অনিলা উঠে বসলো আর চলে যেতে নিলো।

অনিলা উঠে যেতে নিলেই জুনইদ হাত টা ধরে বলে, “এতো সহজ?তুমি চলে যাবে বললেই আমি যেতে দেবো বুঝি।”

জুনইদ অনিলাকে এক টানে ওর বুকের উপর এনে ফেললো।এক হাতে অনিলার কমোড় পেচিয়ে ধরলো।অনিলা কেপে উঠলো তাতে।রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে গেলো যেনো তাতে।জুনইদ উঠে অনিলাকে ওর কোলে বসিয়ে দিতেই অনিলার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে উঠলো।জুনইদ আস্তে আস্তে অনিলার হাতের পিঠে চুমু দিলো।তারপর কপালে, দুই চোখের পাতায় চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে মুখ নিতেই থেমে গেলো সে।অনিলা জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।

জুনইদ ছেড়ে দিলো অনিলাকে।আস্তে করে ওঁকে শুইয়ে দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো।অনিলা চোখ খুলে তাকালো জুনইদের দিকে।অনিলা শুকনো ঢুক গিলে বলে উঠলো,

“এ-এখন না।আমার কথা শুনুন আগে?”

জুনইদ অপ্রাকৃতস্থ হয়ে বললো,”হুম বলো?”

“আমি চাই আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং ও করেন আর সাথে বাবার অফিস ও জয়েন করেন।”

“এক সাথে দুটো কিভাবে করবো?”

“কেন সকালে কলেজ যাবেন আর ফেরার সময় অফিস এ যাবে।আর সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরবেন।জানি কষ্ট হবে আপনার।তাও এই কয়েকটা মাস একটু কষ্ট করুন প্লিজ!”

ওকে ফাইন আমি ইঞ্জিনিয়ারিংও করবো বাবার অফিসও জয়েন করবো।খুশি এবার।

“হ্যাঁ খুব।”বলেই জুনইদকে জাপ্টে ধরলো অনিলা।কিছুটা লজ্জাও পেলো নিজের এই কাজে।

#চলবে

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সকাল বেলা চড়ুইপাখির কলরব,শালিকের জুটি গুঞ্জন তুলছে এদিক-সেদিক।সুর্যের তেজস্বী স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় রোদ গড়িয়ে পড়ছে অন্দরে।সকালের রোদ হলেও যেনো তেজ দ্বিপ্রহরের ন্যায়।নীরদ বরণে চোখ ঝলসানো রোদ্দুর খেলা করছে আপন মনে।অনিলার চোখ মুখ কুচকে এলো এতে।ঘুমের রেশ কেটে যেতেই বুঝলো আজকে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে।জুনইদের ক্লাস ও আছে আজকে দেরিতে।অনিলা সরাসরি ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিয়ে একটা প্লাজো,কুর্তি সেট পরে ব্রেকফাস্ট তৈরি করার জন্য কিচেনে চলে আসে।ব্রেকফাস্ট তৈরি হয়ে গেলে অনিলা খাবার গুলো টেবিলে সাজাচ্ছে।এমন সময় কলিং বেল টা বেজে উঠলো।অনিলা গিয়ে দরজাটা খুলতেই তার বয়সি একটা সুদর্শণা তরুনীকে দেখতে পেলো।অনিলা চিনতে না পেরে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেই তার নাম তাহরিমা।বাকিটা ভেতরে এসে বলতে চাইলো।মেয়েটার এরকম উত্তরে অনিলা অনেক টা অবাক হয়ে যায়।

তাহরিমা নামের মেয়েটি দরজা থেকে সোজা হেটে এসে জুনইদ কে জড়িয়ে ধরে।জুনইদ উঠে ফ্রেশ হয়ে চলেও এসেছে ব্রেকফাস্ট টেবিলে।তাহরিমার এমন আচমকা জ’ড়ি’য়ে ধরাতে জুনইদ একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এদিকে অনিলা তো এই দৃশ্য দেখে পুরাই ‘থ’।জুনইদ কোনো রকমে তাহরিমার পিঠে আলতো করে হাত রেখে ওঁকে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে।

এতক্ষনে তাহরিমা বলে উঠলো,”হ্যেই হাউ আর ইউ?”

জুনইদ আড় চোখে একবার অনিলাকে পরখ করে নিলো।বেশ বুঝেছে মেয়েটা হেব্বি চটেছে তাহরিমা জড়িয়ে ধরায়।সে মিলিয়ে যাওয়া মুখে জোর পুর্বক হেসে বলে,”ইয়াহ আ’ম ফাইন।

এর মধ্যে জুনইদের মা এসে দাঁড়ালো।তাহরিমাকে দেখে তো জুনইদের মা ও অবাক।শান্তা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন,”তুমি তাহরিমা না?”

তাহরিমা বলে,”একদম ঠিক চিনেছো আন্টি।”

“ঠিক আছে এসো বসো।তা এতো দিন পর।সব কিছু ঠিক ঠাক আছে তো?”

“হ্যাঁ আন্টি সব ঠিক আছে।”

“তোমার মুখ টা এতো শুকনো লাগছে কেন মা?”

“ডায়েটে আছি তো তাই আন্টি।”

তাহরিমার ডায়েটের কথা শুনে শান্তা বললেন,
“আজকাল ছেলে মেয়েদের খালি ডায়েট আর ডায়েট।”

“আপনার শরীর ভালো তো আন্টি।আপনিও অনেক শুকিয়ে গেছেন।খাওয়া দাওয়া করছেন না তাই না ঠিক করে?”তাহরিমা কিছুটা আহ্লাদী কন্ঠে প্রশ্ন করলো শান্তা বেগম কে।

শান্তা বেগম কিছু টা প্রসন্ন বোধ করে বললেন,
“হ্যাঁ ভালো আছি মা।শরীরের আর কি দোষ। বয়স হচ্ছে তো তাই।”

“কি যে বলেন না আন্টি।আপনাকে এখনো সুইট সিক্সটিন লাগে।এখনো রুপ যেনো উপচে পড়ছে!”

শান্তা কিছুটা লজ্জা পেলেন।তাহরিমার কথায় খুশিও হলেন একটু।এতো দিন পর কেউ তো একটু তাকে সুন্দর বললো।

অনিলা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফেটে পরছে এসব আদিখ্যেতা দেখে।প্রথমে তারই সামনে তারই স্বামীকে জড়িয়ে ধরলো এই মেয়েটা।এখন আবার তার উপর তার শাশুড়ীর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।তার শাশুড়ী শুধুই তার সাথে এভাবে কথা বলবে এই মেয়ের সঙ্গে এতো কি কথা।তার শাশুড়ীকে এই মেয়ে টা পটানোর চেষ্টা করছে না তো যাতে ছেলের বউ হতে পারে।ফুসফুস করে উঠলো ভেতর টা রাগে।সবে তার শাশুড়ীর সঙ্গে একটু ভাব হয়েছে তার।সে তো জুনইদ কে দেখে নেবে পরে কিন্তু সে তো আর শাশুড়ীর মধ্যে ভাগ বসাতে দেবে না এই মেয়েকে।কিছুতেই না।রাগে তার মনে হচ্ছে মেয়েটার চু’ল কা*চি দিয়ে কে*টে কু*চি কু*চি করে দিতে।অনিলা বিরবির করলো, “আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে জড়িয়ে ধরছে দেখো কিভাবে।তার শাশুড়ী মা সে এখনো এভাবে মিশতে পারলো না আর বাইরের একটা মেয়ে কিভাবে, অবশ্য তাকে হইতো এখনো মেনেই নিতে পারেন নি তার শাশুড়ী মা।”

শান্তা খেয়াল করলেন অনিলা কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে তাহরিমার দিকে আর বিরবির করছে।উনি ভাবছেন,এই মেয়েটা কি তাহরিমা দেখে রাগ করছে নাকি আমার সঙ্গে কথা বলছে বলে।তিনি অনিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”ওহ তুমি তো আগে তাহরিমাকে দেখো নি।ও হচ্ছে জুনইদের বাবার বন্ধুর মেয়ে।

ভদ্রতা বজায় রাখতে অনিলা বলে উঠলো,”ওওওও আচ্ছা।হাই তাহরিমা!কেমন আছো?”

তাহরিমা শুধু অনিলার দিকে তাকিয়ে প্রতিউত্তরে হাসলো।রমিজ আহমেদ, আলতাফ আহমেদ, নিশা ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে এলো।

নিশা বলে উঠলো,”এটা আমি কাকে দেখছি?তুমি তাহরিমা না?

“হ্যাঁ! সবাই দেখছি আমাকে খুব ভালো করেই মনে রেখেছে।”

আসলে তাহরিমাকে কয়েক বছর আগে দেখেছে তাই চিনতে একটু দেরি হচ্ছিলো।চেহেরাটাও একটু খারাপ হয়ে পরিবর্তন এসেছে ওর।এভাবে সবাই কথা বলতে বলতে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে পরলো।কথায় কথায় রমিজ আহমেদ তাহরিমার এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাহরিমা জানায় যে এখানে ও কিছুদিন থাকতে এসেছে।তাহরিমা এক্সপ্লেইন করে বলে,

“একচ্যুয়েলি বাড়ি থেকে কলেজ এটেন্ড করাটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।কলেজের কাছাকাছি হোস্টেলের কথা বলেছি যদি সেটা না হয় তাহলে ভাড়া বাড়ি দেখতে হবে।কলেজ টা যেহেতু এখান থেকেই কাছাকাছি হয় সেহেতু নতুন বাড়ি না হওয়া অব্দি এখানেই থাকতে হবে।তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না তো?”

রমিজ আহমেদ বলেন, এটা কোনো কথা হলো নাকি।আর তুমি ভাড়া বাড়ি কেন খুজতে যাবে?আমরা কি তোমার কেউ হয় না?তোমার বাবা নেই বলে কি আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই বুঝি?সোহান তো কত দিন থেকেই যেতে এখানে।কোনো ভাড়া বাড়ি খুজতে হবে না।যতদিন কলেজ কমপ্লিট না হয় তুমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করবে।”

“হুম বাবা তো বলেই গেছিলো এই শহরে যেকোনো রকম অসুবিধা হলেই তোমাকে যেনো জানায়।”

“একদম ঠিক করেছো তুমি।”

অনিলা ভ্রু সংকুচিত করে বললো,”বাবা বলে গেছিলো মানে?”

জুনইদ নরম গলায় বললো,”তাহরিমার বাবা নেই।আসলে মাস ছয়েক আগে তাহরিমার বাবা একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।

অনিলার একটু খারাপ লাগলো।সে ছোট্ট করে বললো, “ওহ! আ’ম সো স্যরি!”

ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট হয়ে গেলে জুনইদ ঘরে চলে আসে এটা ভেবে যে অনিলা হইতো একবার আসবে।কিন্তু অনিলা ঘরে না গিয়ে ডাইনিং এ বসে তাহরিমা ও নিশার সঙ্গে কথা বলতে থাকে।তাহরিমা একের পর এক এতো কথা বলছে যে জুনইদ এর চিন্তা ওর মাথারতেই আসে নি।জুনইদ বিরক্ত হয়ে অনিলার নাম্বারে কল করে দেখে অনিলা ফোন টা ঘরেই ফেলে রেখে গেছে।জুনইদ ভাবছে একবার অনিলা ঘরে এলে ওঁকে একবার হা’গ করে গুড বাই বলে তারপর বেরোবে।কিন্তু অনিলা না আসাতে জুনইদ রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।এমন কি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওর পাশ দিয়ে গেলেও ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে,মা আসছি বলে বেরিয়ে গেলো।সেটা অনিলা সহ তাহরিমার ও চোখে পরলো।এটা দেখে অনিলার একটু অবাক লাগলো।প্রতি দিন সকালে হা’গ করে, কপালে একটা চু’মু একে দিয়ে তবেই যায় জুনইদ।এর আগে তো জুনইদ ওঁকে বলেই যেতো তাহলে আজ কি হলো।অনিলার মন খারাপ হলো।মনে জমা হলো অভিমান।

দুপুরে জুনইদ খেয়েছে কিনা জানার জন্য অনিলা কল করতে গিয়ে দেখে জুনইদ এর মিসড কল সকাল দশটাই।তার মানে সে যখন গল্প করছিলো তখন জুনইদ তাকে কল করেছিলো।এর জন্যই তবে সকালে ওইভাবে বেরিয়ে গেলো।অনিলা জুনইদ কে কল করে কথা বললো।জুনইদ ফোনের অপার থেকে বলে উঠলো,

“হ্যা বলো?”

“লাঞ্চ হয়েছে আপনার?”

“নাহ!তুমি করে নাও।”বলেই ফোন টা কেটে দিলো জুনইদ।

অনিলা ফোন কান থেকে নামিয়ে বলে,
“ওরেহ বাপরে এতো রাগ।আপনি কতক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেন সেটাও দেখছি।অনিলা স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে গিয়ে বলে, ”দেখলি স্ট্রুয়ার্ট আমার বর টা কত্তো রাগী!ঠিক তোর মতো।যেভাবে তুইও একটুতেই এত্তো বড় বড় রাগ করিস আমার উপর।”

স্ট্রুয়ার্ট মিহি শব্দে বলে উঠলো,”ভালোবাসা, ভালোবাসা, এটাই ভালোবাসা!”

“ওরেহ বাপরে খুব পেকেছিস তুই দেখছি।এসব কথা নিশ্চয়ই তোকে আমার বর ই শিখিয়েছে তাই না।”

“ছেলেটা, সেই ছেলেটা,”

অনিলা হেসে দিলো স্ট্রুয়ার্ট এর কথায়।

সন্ধ্যা বেলা জুনইদ অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে অনিলাও ঘরে চলে আসে।জুনইদ অনিলার দিকে না তাকিয়েই বিছানায় শার্ট টা খুলে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।অনিলা সেটা দেখে জুনইদ কে আর একটু রাগানোর জন্য বলে উঠলো,”ওকে আমি বাইরে গেলাম।আপনার কিছু লাগলে বলবেন কিন্তু ডেকে।”

জুনইদ ওয়াশ রুমে থেকে বলে উঠলো,

“তোমাকে লাগবে!”

“কিহ! কি লাগবে?”

“কানে শুনতে পাও না?টাওয়াল টা দাও।”

“টাওয়াল তো ভেতরেই আছে।আমি তো অন্য কিছু শুনলাম।”অনিলা দুষ্টুমি করে বললো।

“এটা ভিজে গেছে।আরেকটা নিয়ে আসো।”

অনিলাও আর কিছু না বলে বলে,”ঠিক আছে আমি নিয়ে আসছি।”

ওয়াশরুমের দরজা টা জাষ্ট লাগানো ছিলো।তাই অনিলাও অন্য দিকে তাকিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে টাওয়াল হাতে নিয়ে হাত টা এগিয়ে দিলো।জুনইদ ও এটার ই অপেক্ষা করছিলো যেনো।অনিলা হাত দিতেই এক টান দিয়ে অনিলাকে সোজা শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো।শাওয়ার টা অনই ছিলো।আর অনিলা ভি’জে গেলো।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো জুনইদের দিকে।এরকম কিছু করবে জুনইদ অনিলার ভাবনার ও বাইরে ছিলো।জুনইদ ওর দুই বা’হু চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।অনিলা কটমট করে বললো,

“এটা কি হলো।আপনার মনে এই ছিলো।ছাড়ুন আমাকে।ঠান্ডা লেগে যাবে তো আমার ভোর সন্ধ্যায় এভাবে ভিজলে।”

“লাগুক।আজ আর ছাড়ছি না।”

“আপনি সকালে ওই ভাবে পালিয়ে গেলেন কেন?গেলেনই যখন আর লাঞ্চ টাইমে আর আসা হলো না।

“তুমিও তো ঘরে আসো নাই গল্প করছিলে।খুব ভালো লাগে বুঝি আমাকে কষ্ট দিতে!”

“আচ্ছা স্যরি।বুঝতে পারিনি!”

“শুকনো স্যরি তে কাজ চলবে না মেডাম!কি’স মি!”বলে জুনইদ ও শাওয়ারের নিচে অনিলার সঙ্গে চে’পে দাঁড়িয়ে ভি’জতে লাগলো।

অনিলার মুখ থেকে রা’ টিও বের হচ্ছে না।অবাক হয়ে বলে উঠলো,

“হোয়াট?”

“ইয়েস!ইউ হ্যাভ ডু কি’স মি ফার্স্ট!”

লজ্জায় মুর্ছে গেলো অনিলা।এমন খাপছাড়া কথা শুনে।এমন বেলাজ কবে হলো লোক টা।নির্বিশেষে চোখ বন্ধ করে নিলো অনিলা।মনে হচ্ছে এক্ষুনি দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে পারলে ভালো হতো।

জুনইদ অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে অনিলার ভে’জা মুখশ্রীর পানে।এই মুখের দিকে তাকালেই তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেতে বাধ্য।এই মেয়েটি বুঝি তাকে এভাবেই তার এমন মায়াময়রূপ,সম্মোহনী রুপে পা*গল করে মে’রেই ফেলবে।জুনইদ মিচকে হেসে বললো,

“কি হলো?কি’স করবে না-কি এভাবেই ভে”জা শরীরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবা।”

জুনইদের কথা শুনে অনিলার ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো কিন্তু ও জানে এখন জুনইদ তাকে কিছু তেই ছাড়বে না।তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই অনিলা সিদ্ধান্ত নিলো জুনইদ কে কি’স করবে।অনিলা সবে মাত্র মুখ টা এগিয়েছে ওমনি বাইরে তাহরিমার গলার আওয়াজ পেয়ে দুজনেরই হুস ফিরলো।

“জুনইদ তুমি কি ঘরে আছো?”

জুনইদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,”ওহ শিট!এই মেয়েটা আর আসার সময় পেলো না।একবারে সারে বারোটা বাজিয়ে দিলো আমার রো’মান্সের!”

আর অনিলা কুটকুট করে হাসছে জুনইদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে।মুখে হাত চে’পে হেসে একেবারে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে অনিলা।যদি পারতো একেবারে ঘর ফাটিয়ে হাসত এখন সে।কিন্তু এটা করলে তাকেই ভীষণ ল’জ্জায় পরতে হবে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।