সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০১

0
684

#সর্বনাশীনি_তুমি
#সূচনা পর্ব
#Mishmi_muntaha_moon

‘লিমন অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে’
ছোট চাচার মুখের কথা শুনে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।যার জন্য বউ সাজলাম সে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে।বুক ধুক করে উঠলো।কিছুক্ষন পরে রোকেয়া আন্টির কথায় আবারও বিস্মিত হলাম

“জাফর ভাই আপনি অমত না করলে উপমাকে আমি আমার ছেলে সেহরিশের বউ করে নিতে চাই।আপনার কাছে তো প্রস্তাব ও রেখেছিলাম কিন্তু আপনি আপনার ভাইয়ের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন বলে না করলেন এখন ভেবে দেখতে পারেন।”

সাথেই সাথেই মাথাটা ভো ভো করতে লাগলো।যার সাথে বিয়ে করে সংসার পাতার কল্পনা করলাম এখন আবার মুহূর্তেই নাকি জীবনসঙ্গী পালটে যাওয়ার কথা বলছে।আমাকে নিয়ে যেনো কোনো খেলা চলছে এই সমাবেশে।
আশে পাশে লোকজনের মধ্যে কলরব শুনা গেলো মাথায় যেনো আর কিছু ঢুকছে না।
আব্বুর মুখের গম্ভীরতা পরোখ করে কঠিন গলায় বললাম

‘আমি কোনো বিয়ে করবো না কারো সাথেই।’

বলে বড় চাচার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম বিয়ের শাড়িতেই।সাথে সাথেই আরিয়া আপুও আমার পিছে দৌড় লাগালো উদগ্রীব হয়ে। বড় চাচার বাড়ির কয়েকটা বাড়ি ছাড়িয়েই আমাদের বাড়ি।
বাড়িতে গিয়েই আম্মুকে নজরে পড়লো অশ্রুসিক্ত নজরে চেয়ে থাকলেন কিছু বললেন না।আমি ধীর পায়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলাম।কতক্ষন এভাবেই ছিলাম বলা দায়।হঠাৎ শ্বাস যেনো গলায় আটকে গেলো।জোরে জোরে দম ফেলেও শ্বাস নিতে পারছি না।ধীরে ধীরে যেনো আত্মা বেরিয়ে যাচ্ছে জোরে জোরে আওয়াজ করতে লাগলাম শ্বাস নেওয়ার বৃথা চেষ্টা তখনি বাহির আম্মু আর আরিয়া আপুর চেচামেচি শুনতে পারলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ দরজা ভেঙে ভিতরের ঢুকতেই আরিয়া আপু দৌড়ে ড্রয়ার থেকে ইনহেলার এনে আমার মুখে ধরতেই যেনো আত্মা ফিরে এলো।
জান ফিরে পেয়েই আম্মু আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো কিন্তু আমি তখনো স্বাভাবিক হতে পারলাম না।মন খুলে অশ্রুবিসর্জন করতে পারলাম না।সবাই কে রেখেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলাম।

সকলে ধীরে ধীরে চলে যেতেই আপু আম্মুকেও চলে যেতে বলল আম্মুও অমত করলো না কারণ নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় কে দেখতে পারে।
আপু ধীর পায়ে এসে আমার পাশে বসে একে একে গয়না,বালা সব খুলে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।

_______

‘ দেখুন রোকেয়া আপা আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি আপনিও তো উপমার ভালোর জন্য বলছেন কিন্তু বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় আমি একদমই আমার মেয়ের মতের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।’

জাফর সাহেব কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও মৃদু স্বরে বলল

‘আর তাছাড়া আপনার ছেলে রাজনীতির সাথে জড়িত আমি এই রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আমার মেয়েকে জড়িত করতে চাই না’

বলেই উঠে রোকেয়া বেগমকে সালাম দিয়ে মেইন গেটের সামনে যেতেই কালো পাঞ্জাবী পরিহিত সুদর্শন যুবক সেহরিশ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ কেটে চলে গেলো।

সেহরিশ আগের মতোই কঠিন গড়নেই গেট পেড়িয়ে নিজের রুমে যেতে নিতেই মা রোকেয়া বেগমের ডাকে সোফায় এসে মার বিপরীতমুখে বসলো।রোকেয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে কঠিন কন্ঠে বলে

‘ আর কতো এরাবি আমায়।তোকে আর কতো বলবো এই রাজনীতি ছেড়ে বাবার ব্যবসা মন দে।তোর ভালোর জন্যই তো বলি আমি।’

বলতে বলতে কাদতে লাগলো। সেহরিশ উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবীর উপরে পরা কোটি টা খুলে হাতে নিয়ে বলে

‘ আমাকে নিয়ে তোমার টেনশন করার কোনো প্রয়োজন পড়বে না।আর কথা আমার বিয়ের হলে আমার সাথে যাকে আমি নিজে জুড়ে নিয়েছি সে আমার থেকে পাড় পাবে না এই জীবন থাকতে।’

সেহরিশ তার নিজের রুমে চলে যেতেই রোকেয়া বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে হতাশ হয়ে বসে রইলেন।একমাত্র ছোট ছেলে সাদাত তার বাধ্য ছেলে আর সেহরিশ তো জেনো শান্ত থেকেও অশান্ত।আর ছেলেকেই কি বলবে নিজের স্বামীর জন্যই তো আজ সেহরিশের এই অবস্থা।

______

সকালে চোখ খুলতেই আপুকে পাশে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।এই বোনটাই তো তার মায়ের সম।যেকোনো পরিস্থিতি থাকুক আর যতই রাগ বর্ষাক না কেনো কখনোই একা ছারে না।আশেপাশে চোখ বুলাতেই আলমারির পাশে পরে থাকা বিয়ের শাড়িটা নজর পরতেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ গায়ে।আস্তে করে উঠে গোসল করে থ্রিপিস পড়ে বাহির হতেই আপুকে নজরে পড়ে বিছানা গুছিয়ে বসলো মাত্রই আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল

‘ আমাকে তুলবি না তোকে বিছানায় না দেখে তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুই বস আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি কাল রাত থেকে তোর পেট খালি’

বলেই হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।আপু যেতেই ফোন নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে মন খুলে শ্বাস নিয়ে মোবাইল সুইচ অন করতেই একে একে কিছু ক্লাসমেটের মেসেজ দেখতে লাগলাম যারা কিছুটা ক্লোজ তারা লিমন ভাই আর রিমুর ছবি দিয়ে জিজ্ঞাস করছে ঘটনা।
ছবিটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেই ভিতরের সত্তাটা বলে উঠলো “দেখ তোর লিমন ভাই তার বিয়ে করা বউকে নিয়ে কিভাবে ঠোট প্রসারিত করে হাসছে।আর তুই ডিপ্রেশন এ বুদ হয়ে আছিস শেম অন ইউ।”

মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সট্রাগাম,মেসেঞ্জার সব ডিলিট করে দিয়ে মোবাইল রাখতেই নাম্বারে কল আসায় আবার মোবাইল হাতে নিতেই জুই নামটা ভেসে উঠলো।
কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওর অস্থির বুলি শুনে ভ্রু কুচকে যায়।
ওরনা গায়ে জরিয়ে অস্থির পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।পিছুডাক শোনার সময় কই।

___

হাসপাতালে পৌছাতেই ইশফাকে হাতে বেন্ডেজ করা অবস্থায় আধশোয়া হয়ে থাকতে দেখে তারাতারি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।আমাকে দেখে কান্না করে জরিয়ে ধরতেই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম

‘কিচ্ছু হয় নি এতো কান্না করছিস কেনো পাগল।কই আমাকে তোরা শান্তবানী শুনাবি তার পরিবর্তে তোদের আমার শান্তবানী শুনাতে হচ্ছে হায় কপাল।’

বলে জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করলাম।ইশফা কিছুক্ষন গম্ভীর হয়ে থেকে আবারও কান্নাজড়িত কন্ঠে করে বলতে লাগলো

‘পরীক্ষার আর এক মাস বাকি। আমার হাত যদি ঠিক না হয় উপম’

ইশফার কথা শেষ হতেই আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই কেবিনে কেউ প্রবেশ করে ভারী কন্ঠে বলল

‘এক মাসের আগেই আপনার হাত ঠিক হয়ে যাবে সো এতো টেনশন করার কিছু নেই।ভালোভাবে যত্ন নিন আর কিছুদিন পর পর ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।’

কে বলল দেখার জন্য তাকাতেই সাদা পাঞ্জাবী গায়ে সেহরিশ ভাইকে নজরে পরে পাঞ্জাবী আপাতত এখন আর সাদা নেই কাদা আর কিছুটা রক্তে নষ্ট হয়ে গেছে।ভালো করে দেখতে হাতের বেন্ডেজ নজরে পড়ে।এলোমেলো চুল গুলো বেকব্রাশ করে পাশে থাকা একটি ছেলে কিছু ইশারা করে বেরিয়ে পরলো।আর যেই ছেলেকে ইশারা করলো সে এসে বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে ভরা একটি ব্যাগ রেখে চলে যায়।
আর আমি এখনো আনমনা হয়ে দরজায় তাকিয়ে আছি।আপনমনেই ভাবতে লাগলো
‘এই রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে বিয়ে,,, এই ইহজীবনেও না’

চলবে,,,,