সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০২

0
340

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:২
#Mishmi_muntaha_moon

আপুর লাগাতার কলে অতিষ্ঠ হলাম।ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই আপুর অস্থির কন্ঠ

‘কিরে উপম কই তুই এভাবে বেরিয়ে গেলি যে।ঠিক আছে তো সব!’

আপুর কথায় আশেপাশে একবার পরোখ করে নিলাম।ইশফা শুয়ে আছে।পাশেই ওর মা,বাবা,ভাই সকলেই চিন্তিত হয়ে কেউ বেডের পাশে চেয়ার পেতে তো কেউ কর্নারের চেয়ারে বসে আছে।জুই,লাবিবা,মারজিয়া ও দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইশফার আম্মু সবাইকে চলে যেতে বলেছিলো।কিন্তু ওরা না করলো। সূর্য অস্ত যাচ্ছে পরিবেশ ধীরে ধীরে লাল আভায় আচ্ছন্ন হচ্ছে।
আরিয়ার তাড়া দেয়ায় উপমা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশে চোখ রেখে বলল

‘ইশফার এক্সিডেন্ট হয়েছে গুরুতর ভাবে হাতে চোট লেগেছে। হসপিটালে আছি আপাতত। ‘

আমার কথার বিপরীতে আপু আম্মুকে আবার রিপিট করলো মোবাইলের অপর পাশ থেকেই শুনলাম।আম্মু তো শুনে কিছুটা রেগে গিয়ে আপুকে বলল
‘ওর নিজের অবস্থাই তো ভালো না।আর ইশফা এক্সিডেন্ট করেছে দেখতে যাবে ভালো কথা কিন্তু এখন তো বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ওর ফ্যামিলিরা কি আসে নি।ওকে আসতে বল’

আরিয়া আপু আবার রিপিট করতে নিতেই আমি ধীর কন্ঠে বললাম
‘শুনেছি আমি আবার রিপিট করার দরকার নেই।দেখি আসছি আমি,রাখি।’

বলেই কল কেটে ইশফার বেডের পাশে গিয়ে দাড়াতেই ওর আম্মু আবারও আমাদের সব ফ্রেন্ড দের তাড়া দিয়ে বলল
‘আমরা ইশফার কাছে আছি তোমরা বাড়িতে যাও।রাত হছে যাচ্ছে তো।’
ইশফার মার কথায় উপমা বিনয়ী স্বরে বলল
‘জ্বী আন্টি এখন তো যেতেই হবে আম্মুও বলছিলো।’

আবারও জুই,মারজিয়া,লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলল
‘তোরা কি এখন যাচ্ছিস নাকি আরেকটু পরে।’

জুই পাশের টেবিল থেকে ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল
‘হুম আমিও যাই তোর সাথে ওরা আরেকটু পরে যাবে।’

ইশফার আম্মু আব্বুকে বিদায় দিয়ে আমি আর জুই বেরিয়ে পড়লাম।
রিকশায় বসে জুইকে জিজ্ঞাসা করলাম
‘কিরে এমন হলো কিভাবে। আর ইশফার হাতে কিভাবে ব্যাথা পেলো?’

‘আরেহ কি বলবো কলেজের সামনে গ্যাঞ্জাম পাকিয়ে গিয়েছিলো।সেহরিশ আর আরেকটা দলের মাঝে।সেইখানেই মারামারি লাগে তার মাঝেই পাশ দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম দুরেই ছিলাম তবুও কোথা থেকে একটা মাঝারি সাইজের কাঠের মোটা লাঠি ইশফার উপর পরতে যাচ্ছিলো বেচারি ভয়ে হাত দিয়ে নিজেকে বাচাতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়।’

ওর কথায় মন টা বিষিয়ে উঠলো।এই উনাদের ঝামেলার জন্য ইশফা ভাগিদার হলো। আরও মানুষও তো কতোভাবে আহত হয়েছে কোনো খবর আছে।মুখের রাশভারী রেখেই বললাম
‘উনাদের এই ঝামেলায় মাঝে জনগন আহত হয়।এই রাজনীতিতে মানুষের ক্ষতি ছাড়া ইদানীং কিছুই কাজের হয় না’

‘আরে নাহ সবাই তো আর এক না।যেমন সেহরিশ উনি তো রাজনীতির মাধ্যমে ভালো কাজ করে আবার আরেক দল ওরা অলওয়েজ গ্যাঞ্জাম পাকায়।সবাই এক না বুজলি।ভালো খারাপ সব কিছুর মধ্যেই আছে।’

ওর এতো ভাষন শুনে চোখ ফিরিয়ে অন্য জায়গায় ধ্যান দিলাম।

_
বাড়িতে পৌছেই ক্লান্ত পায়ে হেটে রুমে গিয়ে বসতেই আম্মু এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো
‘নিজের অবস্থা ভালো নেই কিন্তু অন্যজনের চিন্তায় বাচে না।আরে নিজে বাচলে তো বাপের নাম।’

আম্মুর কথায় বিরক্ত হলাম।জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললাম
‘আচ্ছা বুজলাম এইবার যাও তো রেস্ট নিবো।আর আব্বু কোথায়?’

আব্বুর কথা জিজ্ঞাসা করতেই আম্মুর মুখটা ছোট হয়ে এলো।কিছু না বলেই চলে গেলো।কিছুই বুজলাম না কি হলো।
কিছুক্ষন পর আপুকে দেখে জিজ্ঞাসা করায় আপুও আমতা আমতা করছিলো। অনেকক্ষণ জোর করায় বলল
‘আব্বু বড় চাচার বাড়িতে গেছে কিছু প্রয়োজন ছিলো হয়তো তুই খেয়ে নে ভাবিস না ওইসব’
বলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

আপুর কথা শুনে আমারও মুখটা ছোট হয়ে গেলো কেনো গেলো আবার আব্বু উনাদের বাড়ি আর কি প্রয়োজন রয়ে গেছে এখনো।বুক ভারী লাগতেই রুমের পাশের জানালা টা মেলে দিয়ে বসতেই আপু খাবার নিয়ে কিছুটা খেয়ে নিলাম।

___
ঘুম থেকে উঠতেই বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখি আব্বু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভিতে খবর দেখছে আর আম্মু গোমড়া মুখে বসে আছে।আমিও গিয়ে বসে আপুর কথা জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম আপু চলে গেছ্র আজকে সকালেই হঠাৎ উনার ননাসের আগমনের কারণে।

‘আম্মু আমি কলেজে যাবো আজকে। আর এক মাস আছে মাত্র পরীক্ষার সব নোটস গুলো ও কালেক্ট করতে হবে।’

আম্মু আমার কথায় রাজি হয়ে বলল
‘হুম তোর আব্বু দিয়ে আসুক’

আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম
‘নাহ প্রয়োজন নেই আমি চলে যেতে পারবো।’

রুমের দিকে পা বাড়াতে নিতেই আব্বু বলল
‘আমি বড় ভাই এর বাড়িতে গিয়েছি বলে তুইও রেগে আছিস নাকি?’

আব্বুর কথায় আমি মুচকি হেসে বললাম
‘আরেহ না কি যে বলো না আমি কেনো রাগবো তোমার ভাই হয় সম্পর্ক তো একেবারে এভাবে ভেঙে ফেলা যায় না জানি আমি।’

আমার কথা শুনে আব্বুও হেসে কাছে আসতে বলে হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে
‘হুম ভালোই বুদ্ধিমান দেখছি আমার মা টা।খেয়ে নে তারপর যা কলেজে।’

খেয়ে দেয়ে বিদায় নিয়ে নিচে গিয়ে জুই কে কল দিয়ে মোবাইল কানে নিয়ে উপমা রিকশায় উঠতে নিবে তখনি নিজের নাম শুনে কল কেটে দাড়াতেই কালো রঙের গাড়ির ভেতরে বসে থাকা সেহরিশ কে নজরে পড়লো। সাথে সাথে অস্বস্তিতে মিইয়ে যায়।
সেহরিশ আবারও তাড়া দেওয়ায় কাছে গিয়ে দাড়াতেই উপমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
‘কলেজে যাচ্ছো নাকি?’

‘হুম’ উপমার এককথায় জবাব

সেহরিশ আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘রাস্তাঘাটে এখন অনেক ঝামেলা চলছে বসো আমি পৌছে দেই। ‘

‘না না আমি তো রিকশা থামিয়েছি রিকশা দিয়েই চলে যাবো আপনার কষ্ট করার দরকার নেই।’

সেহরিশ কিছুক্ষন উপমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ চোখের সানগ্লাস টা খুলে বিনয়ী সুরে বলল

‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন।’

উনার কথায় উপমা হচকচিয়ে গেলো।কাকে সালাম দিচ্ছে দেখার জন্য পিছে তাকাতেই দেখলো ওর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে।আম্মুকে উপমা ভ্রু কুচকে বলল
‘তুমি নিচে কি করো।’

‘তোকে হলরুম এর জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাম।আরেহ সেহরিশ বাবা তুমি এখানে কি করছো?’

‘জ্বী আন্টি আমি তো এইখানে দিয়ে যাচ্ছিলাম উপমা কে দাড়য়ে থাকতে দেখে ভাবলাম পৌছে দেউ কলেজে। ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তো।’

উনার কথা শুনে আম্মু যেনো ভীষণ খুশি হলো।হাসি মুখে এটে রেখেই বলল
‘বাহ ভালো তো।কিরে উপমা যা সেহরিশ পৌছে দেক তাছাড়া রাস্তাঘাট ও তো ততোটা ভালো। যাহ যাহ তারাতারি। আচ্ছা বাবা আমাদের বাড়িতে তোমার আম্মুকে নিয়ে এসো কোনো একদিন।আমি আসি তাহলে।’

বলে আম্মু চলে গেলো।বুঝি না আমি আমার আম্মু আব্বুদের। এইখানে উনাকে আব্বু ততোটা পছন্দ করে না আর আম্মু যেনো পারে না,,, থাক আর বলতে হবে না সেই বিপাকের কথা।
কোনো রকম চোখ নামিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।উনাকে আগে থেকেই আমার ভয় লাগতো এই মারপিট জঞ্জালের জন্য এখন তো সাথে অস্বস্তি ও যোগ হয়েছে।
উনার গাড়িতে বসতেই উনি ভ্রু বাকিয়ে কিছু ইশারা করলো যার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম। না বুঝিয়েও একটা বোকা মার্কা হাসি দিলাম। কারণ মাঝেমধ্যে হাসির মাঝেও তো অনেক কথার জবাব হয়ে যায় আপনাআপনি।হাসি দিয়ে দুই হাত মিশিয়ে কচলাতে লাগলাম।হার্টবিট যেনো সাধারনের তুলনায় কিছুটা বেশি ধুকপুক করছে।
হঠাৎ উনার হাসির আওয়াজে তাকিয়ে দেখি উনি তখনো জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে হাসছে আমাকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বলল
‘সিটবেল্ট লাগাতে বলেছি।না বুঝলে জিজ্ঞাসা করতে হয় বোকার মতো না হেসে।’

উনার কথা ইন্সাল্ট ফিল করলাম।মুখে বললে যেনো কথা ফুরিয়ে যেতো, ইশারাবাজি করে যত্তসব!

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই❤️❤️।:’