সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৭
রাগিয়ো না আমায় এই বলে দুই বাহুতে চেপে ধরে আমি জোরে হাত ছিয়ে নেই। এতে শুভ্র বেশ অবাক হয়।
—নাবিলার সাথে গিয়ে এসব করবেন। আমাকে আর ছুয়ার চেষ্টা করবেন না।
শুভ্র বুঝতে পারলো অহনাকে কেউ কিছু বলেছে তাই সিদ্ধান্ত নিলো রাগ টা একটু কন্ট্রোল করে অহনাকে বুঝাবে।
অহনা লক্ষী বউ আমার শোনো তোমাকে কে কী বলেছে আমাকে বলো তো। নাবিলে অনেক আগে থেকে ই আমাকে পছন্দ করে বিয়ে ও করতে চায়। কিন্তু আমি তোমাকে চাই। নাবিলাকে আমি শুধু বোন হিসেবে ই দেখি অন্য কিছু না।
নাবিলা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পরছে না তাই আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করতেছে। একটা ছেলের সাথে তোমার অনেকগুলো পিক দেখিয়েছে, এগুলো থেকে তো আমি তোমাকে অবিশ্বাস করনি।
এসব খুব শান্ত ভাবে শোনলো অহনা, সব কিছু শোনে অহনা বলতে শুরু করলো,
আপনার কী মনে হয় আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি। নাহ্ আমার এসব ব্যবহারের একটা ই কারন আপনি যেনো সব কিছু আমাকে নিজের মুখে বলেন।
আপনি ভারি চাপা স্বভাবের। আমাকে কিছু ই বলতে চান না।আপনি যদি এই কথাগুলো আগে আমাকে বলতেন তাহলে নাবিলা কখনো ই পাড়তো না কালকে আমার সামনে এই কথাগুলো বলতে।
শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাছে আসতে আসতে বললো,
—কালকে তোমাকে কী বলছে, নাবিলা।
— বলবো সব, আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন, যা বলার সবার সামনে বলবো।
শুভ্র একমুহূর্তের জন্য ও দেরি না করে আমাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সাথে আমার আম্মু ও ফোন দিয়ে বললো শুভ্রদের বাসায় আসার জন্য
বাসায় পৌঁছানোর পর,
শুভ্র আমাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আমি আাসছি দেখে নাবিলা তো অবাক হয়ে গেছে।
আমাকে দেখে শুভ্র মা দ্রুত পায়ে রুমে এসে বললো,
—কেমন আছিস মা। কী হয়েছে শুভ্র রেগে আছে মনে হয়।
— সবাই আসুক উনারা বলবো মা। ডাকো নাবিলা আর তার মা কে।
শুভ্র বেড সাইডে বসে আছে। মা নাবিলা আর নাবিলার মাকে ডাকলো।
আমার আম্মু রুমে ডুকলো সাথে নাবিলা আর তার মা ও। শুভ্র বললো
—কী বলবা এখন বলো,
নাবিলা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
—এই মেয়ে তুমি আবার এসেছো কালকে না বললে তুমি আমাদের সামনে আসবে না।
শুভ্র সাথে সাথে দুটো থাপ্পড় দেয় নাবিলাকে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। সাথে সাথে ফুপি মানে নাবিলার মা। এসে শুভ্র কে কথা শোনাতে লাগলো।
—শুভ্র তুই আমার মেয়ে কে এতো জোরে মারলি কেন। কী করেছে নাবিলা তোদের।
—কী করেছে শোনতে চাও। তোমার মেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে আমার আর অহনার সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য। নাবিলা নিষেধ করার কে অহনা আমার বিবাহিত স্ত্রী। নাবিলার থেকে এই বাড়িতে ওর অধিকারটা ই বেশি।
শুভ্র কে থামিয়ে আমি বললাম,
— কালকে নাবিলা আপু আমাদের বাসায় গিয়ে অনেক কিছু বলেছে। শুভ্র আর নাবিলা আপুর নাকি অনেক দিনের সম্পর্ক, তারপর আরো অনেক কিছু ই বলেছে।
আমি সহ্য করতে না পেরে ঐ টাইমে নাবিলা আপুর মুখ বন্ধ করার জন্য বলেছিলাম। আমি শুভ্র আর নাবিলা আপুর জীবন এ আর আসবো না।
ঐটাইমে এই কথা ছাড়া আর কিছু ই মাথায় আসছিলো না। আমি প্রথমে এতো কিছু শোনে আমার আম্মু আপমান শোনে কিছুক্ষণের জন্য বোকার মতো হয়ে গেছিলাম।
বুঝতে পেরেছিলাম এটা মিথ্যা তাই আমি শুভ্র কাছ থেকে সব কিছু শোনতে চেয়েছিলাম। সব শোনেছি ও।
সব কিছু শোনে আমার শাশুড়ী মা বললো আমি আর দেরি করতে চাইনা সামনের চারদিন এর ভিতরে তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে করে তোমাকে ঘরে তোলতে চাই।
উনি আর কিছু না বলে আমার আম্মুকে নিয়ে চলে । নাবিলাকে তার মা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সবাই যাওয়া পর আমি শুভ্র পাশে গিয়ে বসলাম।অচমকা শুভ্র আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকে,
—কী হলে কী দরজা খোলা আছে কেউ চলে আসবে।
—আসুক না আমার কী। তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখে ও আনবা না।
—হুম, কিন্তু নাবিলা যদি আবার জামেলা করে।
—চিন্তা করো না এই জন্য ই মা আমাদের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য শাশুড়ী মাকে নিয়ে গেলো।
হঠাৎ ডাক পরে আমাদের।শুভ্র মা আমাদেরকে নিয়ে নিচে যায় গিয়ে দেখি এই বাসার সব উপস্থিত।
— আমার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি অহনা তোমার আম্মু ও রাজি আছে তোমাদের কোনো আপওি থাকার কথা না। আগামী চার দিন এর ভিতরে তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান।
শুভ্র মা কথা বলা শেষ করার আগে ই রিমি বলে উঠলো,
—এক বাড়িতে দুই বোন মানুষ কী বলবে। আমি চাইনা এই বিয়ে হক। অহনার থেকে ভালো মেয়ে শুভ্র পাবে সব সময়।
—এই মেয়ে তোমার সাহস তো অনেক। তোমার আপন বোন না অহনা। আর তুমি ও আমার ছেলের বউ না। আমার একটা ই ছেলে আমার ছেলের জন্য আমি মেয়ে ঠিক করবো তুমি না। আমার ছেলের বউ এর ব্যপারে আর কোনো কথা তোমার মুখ থেকে শোনতে চাই না। যার যার রুমে যাও।
আমি শুধু ভাবতেছি রিমি আপুর কী সমস্যা। আমি এবাড়িতে বউ হয়ে আসলে। উনি আমার মামাতো বোন। রিমি আপুর তো আমাকে নিয়ো কোনো সমস্যা থাকার কথা না তো কেনো এমন করছেে।
ঐদিন মতো আমি বাসায় চলে আসলাম আম্মু সাথে। শুভ্র কোনো কাজে বাহিরে বের হয়েছিলো তাই আসার সময় দেখা হয়নি।
রাতের বেলা,
বাসায় এসে শরিরটা খুব ক্লান্ত লাগছে তাই বেশি রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুমের মধ্যে ই হঠাৎ বুঝতে পারলাম কেউ আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে আছে। সেই চেনা পারফিউম এর গন্ধ সেই চেনা মানুষ টা আমার। ঘুম ঘুম চোখে বললাম,
—এই আপনি কখন এলেন, এভাবে কেউ জরিয়ে ধরে নাকি।
—তুমি আমাকে না বলে চলে আসলে কেনো।তাই আমি তোমার কাছে চলে এলাম। জানো ই তো বউ ছাড়া আমি আবার থাকতে পাড়ি না।
আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম আমি ধরলে যখন এতো ই প্রবলেম।
আমি বেড সাইডে আধশোয়া হয়ে বসলাম, শুভ্র আমাকে এভাবে দেখে বুকে মাথা দিয়ে শোয়ে পড়লো। আর বলতে লাগলো,
—কালকে সকালে বাসায় যাবে, আমাকে ঘুম থেকে উঠাবে তুমি, তারপর আমরা শপিং এ যাবো।
— ঠিক আছে, ফুপি আর কী আমি চলে আসার পর কিছু পর কিছু বলেছে, আমার খুব ভয় হচ্ছে বিয়েতে যদি আবার কোনো সমস্যা করে।
শুভ্র তো কিছু বলছে না।বুঝতে পারলাম ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই আর ডাকি নাই। আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা,
উঠে দেখলাম প্রায় দশটার মতো বাজে অনেক বেলা হয়েছে শুভ্র নাই,চলে গেছে। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রনি ভাইয়া আর আম্মু বসে কথা বলছে আমাকে দেখে আম্মু বললো,
—এতোক্ষণ রনি বসে ছিলো তোর জন্য, নাস্তা করে নাই। এতো বেলা করে উঠলি যে যা দুজন ই নাস্তা করেনে।
এই রনি ভাইয়া টা অদ্ভুত মানুষ জানে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাও কেনো এসব পাগলামি করে আল্লাহ জানে। শুধু শুধু যেনে বুঝে কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম,
—ভাইয়া আপনি তো সব জানেন তাহলে কেনো আমার জন্য অপেক্ষা করেন।
—আমার ব্যাপার টা বাদ দে তো। তোদের কথা বল। তোর বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু আমার কোনো চিন্তা করিস না।
বুঝতে পারলাম রনি ভাইয়া বলতে চায় না তাই আর কথা বাড়ালাম না। খাবার শেষ করে চলে গেলাম রুমে।
রেডি হয়ে শুভ্রদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
বাসায় যাওয়ার পর, আমার শাশুড়ী মা বললো শুভ্র নিজের রুমে ই আছে তাই রুমে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম বজ্জাত টা এখনো ঘুমাচ্ছে তাই আমি নিচ থেকে গিয়ে লবন নিয়ে আসলাম,
লবন টা দিয়ে দিলাম মুখে অমনি ঘুম থেকে উঠে পড়লো, আমাকে দেখে হ্যাচকা টান দিয়ে শুভ্র উপর ফেলে দিলো,
—মুখে লবন দিলা তো এখন তোমার ও লবন খেতে হবে এটা বলে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আমি হাত পা নাড়াচ্ছি কিন্তু ছাড়ার নামই নেয়।
হঠাৎ নাবিলার ডাকে ছেড়ে উঠে বসলো। কিন্তু আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে আছে। নাবিলার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ভেতরটা জ্বলতেছে তাই আমি বললাম,
—শুভ্র কোথায় জানি একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেছে।
চলবে।