#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৮
হঠাৎ নাবিলার ডাকে ছেড়ে উঠে বসলো। কিন্তু আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে আছে। নাবিলার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ভেতরটা জ্বলতেছে তাই আমি বললাম,
—শুভ্র কোথায় জানি একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেছে।
শুভ্র কথাটা বুঝতে পেরে মুখ টিপে টিপে হাসতেছে।নাবিলা তো আরো রেগে গেলো এটা শোনে তাও দেখছি চুপ করে আছে।
—তোদের সাথে আমার কথা আছে।
—হে নাবিলা আপু বলেন আমরা শোনতেছি।
—আসলে আমি যা করছি ভুল করেছি ক্ষমা করে দেও প্লিজ। আমার ভুল যদি ক্ষমা না করো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো কোন মুখে তোমাদের সামনে আসবো বলতো।
—আরে আপু এমন ভাবে বলছেন কেনো, আমরা ক্ষমা করতে জানি।
—অহনা তুমি জানো না নাবিলা আবার এমন করতে পারে।
—বিশ্বাস কর শুভ্র আমি আর কখনো এমন ভুল করবো না।
অনেক্ষন এভাবে আকুতি মিনুতি করলো ক্ষমা না করে পারলাম না।
শুভ্র কে রেডি হয়ে নিচে আসলো, দুজনে বের হবো এমন টাইমে নাবিলে এসে বলতেছে,
—তোমরা দুজন একা যাচ্ছো কেনো,আমি ও যাবো। আমি তোমাদের সাথে গেলে কী খুব বেশি প্রবলেম হবে।
—আরে কী বলেন আপু চলে আসেন, সবাই মিলে যাওয়াটা ই তো ভালো।
আসো বাছাধন বুঝবে মজাটা,
শুভ্র আর আমি পিছনে বসলাম। নাবিলা ও দেখি আমাদের সাথে পিছনে ই বসলো। নাবিলাকে দেখি ই শুভ্র এক হাত দিয়ে কোমর জরিয়ে ধরে। আজকে আমি ও ছাড়ানোর চেষ্টা করছি না, যেমন আসছে এখন জ্বলো।
শুভ্র আমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো, কপালে চুমু খেয়ে আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
নাবিলা এসব সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ বলে উঠলো,
—অহনা আসো তো দেখো আমার আর শুভ্রর খুব সুন্দর একটা পিক।
শুভ্র আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে ই বললো,
— তোকে আর আমাকে সামনাসামনি দেখছে, ছবি দেখতে হবে না।
নাবিলা আর কিছু বললো না চলে আসলাম শপিং মলে। দুজনের জন্য ম্যাচিং করে ডৃরেস নিলাম। নাবিলা আমাদের তেমন কেনো ডিস্টার্ব করতেছে না। ভালো ই সাথে সাথে ঘুরতেছে।
রাতের বেলা,
তিনজন মিলে অনেক শপিং করলাম। ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই শুভ্র নাবিলাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে বাসার উদ্দেশ্য। আমি শুভ্র কাধে মাথা রেখে শোয়ে আছি, বাসায় সামনে আসার পর শুভ্র বললো,
—শোনো কাল থেকে অনেক বিজি থাকবো, তুমি সাবধানে থেকো কোনো প্রবলেম হলে আমাকে কল দিয়ো।
—ভালোবাসা থাকলে হাজার ব্যস্ত থাকার পর ও কথা বলা যায় দেখা করা যায়। দেখা যাক কী করতে পারেন আমার জন্য
এইটা বলে চলে আসলাম, রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়তে ই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে।
—এই অহনা উঠ এতো ঘুমাতে হয় নাকি।
— আরে মা কী হয়েছে ঘুমাতে দেও তো, আর একটু।
— উঠে দেখ কে এসেছে।
হঠাৎ শুভ্র বলে উঠলো আম্মু আপনি নিচে যান আমি অহনাকে নিয়ে আসছি।
—আচ্ছা বাবা তাহলে আমি নিচে যাই তুমি নিয়ে আসো।
শুভ্র দরজাটা লক করে চুপটি করে গিয়ে অহনার ঠোঁট দুটো দখল করে নেয়।ঘুমের মধ্যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অহনা শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। শুভ্র বিছায়ায় শোয়ে হাসতেছে।
শুভ্রকে দেখে তো অহনা অবাক হয়ে যায়।
—এই এই আপনি এখানে কেনো।
—আমার বউ এর কাছে আমি থাকবো না তো কে থাকবে।
—কালকে না বললেন আজকে অনেক কাজ আছে বিজি থাকবেন সারাক্ষণ এই কী আপনার বিজি থাকার নমুনা।
—কালকে রাতে আমাকে কী যেনো বলেছিলে””ভালোবাসা থাকলে হাজার ব্যস্ততা থাকলে ও দেখা করা যায় কথা বলা যায়””” আমি তো ভালোবাসি তাই হাজার ব্যস্ততার মাঝে ও তোমাকে পাশে রাখবো।
এখন বলো তুমি কী নিজের ইচ্ছে থেকে নিচে যাবে নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো।
— এই নাহ্ আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর নিজে ই যাবো আপনি বসেন।
—হুম দ্রুত করো।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম দুজন দেখলাম শুভ্রর আর আমার আম্মু দুজনে বসে কথা বলছে।
—এসেছো তোমরা দু’জন বসে এইখানে।
বসার পর শুভ্র মা বলতে শুরু করলো,
দেখো অহনা তোমার বাবা নেই, টাকা পয়সার ও একটা ব্যপার আছে, তোমার মা একা হাতে সব সামলাতে হিমশিম খাবে। সোজা ই বলি আমি চাচ্ছি তোমাদের বিয়ে টা আমাদের বাড়িতে হক।
শুভ্র কালকে রাতে এটা আমাকে বলছে আমার আগে ই ভাবা উচিত ছিলো। সব গুছিয়ে নেও গাড়ি নিয়ে আসছি একবারে নিয়ে চলে যাবো। আমি জানি আমার উপর দিয়ে তুমি কোনো কথা ই বলবা না।
আমি চুপ করে বসে আছি চোখ দিয়ে পানি আসতেছে।সত্যি ই তো আম্মু অনেক চিন্তিত ছিলো বিয়ে নিয়ে আল্লাহ ই রক্ষা করে।
সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। লোক দিয়ে ব্যাগগুকো গাড়িতে তোলা হলো, সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম কিন্তু দেখলাম রনি ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।
—কী হলো ভাইয়া আপনি দাড়িয়ে আছেন কেনো।
—আমি বাসায় চলে যাবো। তোরা যা আমি দোয়া করি ভালো থাকিস।
এটা শোনে শুভ্রর মা বললো,
–সেকী বাবা তুমি চলে যাবে কেনো।তুমি ও আমার ছেলের ই মতো আমি নিজে দেখে তোমাকে ও বিয়ে করাবো চিন্তা করো না চলো।
মা রনিকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো আপন গতিতে। শুভ্র ডাইভ করছে আমি পাশে বসে বসে নিখুঁত ভাবে দেখছি। ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো চকচক করছে। আমাকে এভাবে দেখে শুভ্র হাসতেছে। হঠাৎ শুভ্র বলে উঠলো।
—লজ্জা না থাকলে মানুষের যা হয়। কীভাবে দেখছে আমাকে। আল্লাহ তুমি আমার ভাগ্যে এটা কী রাখলে এতো নির্লজ্জ।
এই কথা শোনে আমার চোখ দুটো বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলাম কেউ কিছু শোনালো নাকি। নাহ্ শোনে নাই কথা বলতেছে উনারা।
শুধু এইটুকু বললাম,
—দেখে নিবো পরে।
— রাগ করলে পেতনীর মতো লাগে। করো রাগ ভূত এসে বউ ভেবে নিয়ে যাবে।
— বজ্জাত হনুমান কথাকার গাড়ি থেকে নামতে দেও তারপর সুযোগ বুঝে তোমার শোধ নিব।
কিছুক্ষণ পর ই চলে আসলাম,
গড়িতে বসা অবস্থায় ই আম্মু মামাকে বলে দিয়েছে সব গেস্টরা জেনো শুভ্রদের বাসায় চলে আসে।
আমাদের থাকার জন্য বাসার এক সাইডে ফিক্সড করে দিয়েছে। সীমানা দিয়ে দিছে আমার শাশুড়ী মা কেউ কারো সীমন্ত অতিক্রম করতে পারবে না।
আমি আমাদের দেওয়া রুমে চলে গেলাম। আস্তে আস্তে গেস্টরা চলে আসলো। নিধি এসে ই আমাকে জরিয়ে ধরেছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব খুশি।
কিছুক্ষণ পর,
আমি বসে বসে সবার কথা শোনছি। হঠাৎ নিধি আমাকে চোখে ইশার দিচ্ছে যাওয়ার জন্য। আমি বুঝতে পেরে গেলাম।নিধি আমার হাত ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে আসলো, এসে দেখি শুভ্র দাড়িয়ে হাসতেছে।
—শালিকা তুমি এখন দেখো কেউ আসে নাকি, কেউ আসলে আমাকে বলবা।
নিধি পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করছে, নিধি যেতে ই শুভ্র আমার দুহাত শুভ্র হাত দিয়ে চেপে ধরে আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে।
এই সুযোগ প্রতিশোধ নেওয়ার আমাকে নির্লজ্জ বলছো এখন বুঝবা কেমন লাগে,
—এই যে মা নিচে দেখে যাচ্ছে এখন বলি আমার সাথে চুরি করে দেখা করতে আসছেন যে।
চলবে,