#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ৪
শুভ্র গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে নিজের রুমে যেতে, যেতে বললো!”
—-” রিনি এক কাপ ব্লাক কফি দিয়ে যাও,
রিনি শুনতে পেয়ে বললো।”
—-” ওকে স্যার,
এরপর রিনি কিচেনে চলে গেলো। আর শুভ্র নিজের রুমে এসে। গানটা বিছানায় রেখে ওয়াসরুমে চলে গেলো। রিনিও কফি বানিয়ে শুভ্রর রুমে এলো। দরজা খোলা তবুও রিনি বললো!”
—-” আসবো স্যার?”
শুভ্র সেটা শুনতে পেলো না। রিনি একটু উকি দিয়ে আবার বললো,
—-” স্যার আমি কি আসবো?”
শুভ্র এবারও শুনতে পেলো না। তাই রিনি আর না ডেকে রুমে চলে এলো। রুমে এসেই রিনির চোখ গেলো বিছানায়। রিনি শুকনো ঢোক গিলে। কফির মগটা টি টেবিলে রেখে। ধাপধুপ পা ফেলে চলে গেলো। শুভ্র কতক্ষণ পর বেরিয়ে এলো। এরপর গানটা ড্রয়ারে রেখে। কফি খেতে, খেতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। ল্যাপটপ অন করতেই। ওয়ালপেপারে রোজের হাসি মাখা একটা ছবি এলো। রোজ একটা লাল আর সাদা পাড়ের শাড়ি পড়া। হাত ভর্তি লাল কাচের চুরি। পায়ে মোটা করে আলতা নেওয়া। পায়ের পাঁচ আঙুলেও আলতা নেওয়া। আর এক জোড়া নুপুর পড়া। চোখে মোটা করে কাজল দেয়া। ঠোটে টকটকে লাল লিপস্টিক। ঠোটের নিচে মিচমিচে কালো তিল। ফ্লোরের উপর বসে আছে রোজ। শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” আমার রেড রোজ। কি আছে তোমার মাঝে? কি এমন নেশা আছে তোমার মাছে? যেই নেশা এত করে আমাকে তোমার কাছে টানে। আমি আটকা পড়ে গেছি তোমাতে। তোমার ওই কাজল কালো চোখে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। তোমার ওই কালো তিল। ওটা আমাকে তোমার আরো বেশী কাছে টানছে। ইচ্ছে করছে ওই তিলটা ছুয়ে দিতে। তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি শুভ্রর রাজ্যর রানী বানাবো। রোজ শুধুই শুভ্রর রাজ্যর রানী,
শুভ্র হঠাৎ চমকে বলে উঠলো!”
—-” এগুলো কি বলছিলাম আমি? আমি তো এমন টাইপ ছিলাম না। আমি রোমান্টিক কথা বললাম নাকি?”
শুভ্র নিজেই হেসে উঠলো। এরপর নিজের কাজে মন দিলো। কয়েকটা প্রজেক্ট ঠিকঠাক করে রাখলো। এরপর ল্যাপটপ রেখে বেরিয়ে গেলো। কোথায় গেলো সেটা শুধু শুভ্রই জানে,
রোজ মোবাইলে নাটক দেখছে। এক পা সোফায় আরেক পা ফ্লোরে। কানে ইয়ারফোন গুজে রেখেছে। এতে কে ওকে কি বলছে। বেচারী সে সব কিছুই শুনতে পারছে না। যদিও মোশাররফ করিমের নাটক রোজ দেখে না। কিন্তুু আজকে দেখছে কেন দেখছে জানে না। এরমাঝে রোজ চেঁচিয়ে বলে উঠলো।”
—-” প্রেমেরী জ্বরে মরেছি কেঁপে। দাওনা মুখে থার্মোমিটার। দেখো না আমার জ্বরটা মেপে,
রোদ হা করে তাকিয়ে আছে। রোজের আম্মু রান্না করছিলো। মেয়ের এমন টাইপ গান শুনে। খুন্তি হাতে নিয়ে হনহন করে এগিয়ে এসে বললো!”
—–” এই বেয়াদব মেয়ে কি গান গাইছিস?”
কিন্তুু রোজ হাত, পা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। নিজের মনে পকপক করেই যাচ্ছে। না পেরে রোজের আম্মু ঠাস করে খুন্তির বারি মারলো রোজকে,
—-” আউচচচ আম্মু এটা কি করলে?”
ইয়ারফোন কান থেকে খুলে বললো রোজ। রোজের আম্মু ফোস, ফোস করে বললো।”
—-” কি গান গাইছিলি তুই?”
রোজ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” ও ওটা আমার গান না। মোবাইলে শুনে গাইছিলাম!”
_____________________________
রোদকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে। রোজ ভ্রু কুঁচকে মুখটা বাঁকিয়ে বললো,
—-” কি রে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
রোদ মুখটা কালো করে বললো।”
—-” তুই প্রেম করিস আর আমি জানি না?”
রোজ চোখ বড়, বড় করে বললো,
—-” এই ভাইয়া এসব কি বলছিস?”
রোজের আম্মু ওখানেই আছে। এই কথা শুনে উনি রেগে বললো!”
—-” রোজ রোদ এসব কি বলছে?”
রোজ অসহায় ভাবে বললো,
—-” আম্মু ভাইয়া মিথ্যে বলছে।”
রোদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। এটা দেখে রোজের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। রোজ রোদের কাছে গিয়ে কানে, কানে বললো,
—-” একদম মিথ্যে বলবি না ভাইয়া। আম্মুকে বল তুই মজা করছিস!”
রোদও ফিসফিস করে বললো,
—-” না হলে কি করবি তুই?”
রোজ দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” তোর আর তামান্নার কথা আম্মুকে বলে দেবো,
রোদ মিনমিন করে বললো!”
—-” তামান্না না তোর বেস্টু হয়?”
রোজ ভেংচি কেটে বললো,
—-” এই মুহূর্তে তোকে ফাঁসানো বেশী জরুরী।”
রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এরপর হেসে দিয়ে বললো,
—-” আম্মু আমি মজা করছিলাম!”
রোজের আম্মু এবার আরো রেগে বললো,
—-” এই তোরা কি শুরু করেছিস? দেখছিস না আমি রান্না করছি। ছেলে, মেয়ে দুটোই বেয়াদব।”
বলে উনি চলে গেলো। রোদ আর রোজ মুখটা চুপসে রেখেছে। রোজের আম্মু যেতেই রোজ বললো,
—- এসব তোর জন্য হয়েছে!”
রোদ আমতা, আমতা করে বললো,
—-” আম্মুকে বলিস না বোন প্লিজ।”
রোজ মুখ ভেংচি কেটে চলে এলো। রোদ এদিক, ওদিক তাকিয়ে নিজেই বললো,
—-” আসলেই আমি বেয়াদব হা, হা!”
পরেরদিন সকালে রোজ রেডি হয়ে। নিজের ব্যাগটা নিয়ে ভার্সিটিতে চলে এলো। রোজকে দেখেই মিম দৌড়ে এসে বললো,
—-” রোজ তুই ঠিক আছিস?”
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” হ্যা কেন আমার আবার কি হবে?”
মিম মুখ চেপে বললো,
—-” কালকে জিজু যে তোকে নিয়ে গেলো?”
রোজ গোল, গোল চোখে বললো!”
—-” ওই জিজু কে?”
মিম দাত সবগুলো বের করে বললো,
—-” কেন শুভ্র চৌধুরী।”
রোজ রেগে বললো,
—-” সাট আপ মিম!”
মিম মুখে হাত দিলো। এরপর ওরা ভেতরে চলে এলো। রোজকে সবাই আড়চোখে দেখছে। আর কি যেন বলাবলি করছে। কিন্তুু রোজ সেগুলো গায়ে মাখলো না। নিজের ক্লাসে গিয়ে ক্লাসে মন দিলো। ক্লাস প্রায় শেষের দিকে। তখনি সেখানে প্রিন্সিপাল স্যার এসে বললো,
—-” শুভ্র চৌধুরীর উডবি ওয়াইফ রোজ কোথায়?”
রোজ হা করে তাকালো। সাথে ক্লাসের সবাই ওর দিকে তাকালো। রোজ কিছু না বলাতে প্রিন্সিপাল আবার বললো। এবার রোজ ঢোক গিলে উঠে দাড়িয়ে বললো।”
—-” স্যার আমি এখানে,
প্রিন্সিপাল মুচকি হেসে বললো!”
—-” তোমাকে শুভ্র স্যার ডাকে,
রোজের মেজাজ গরম লাগছে। মিম বলদের মতো হাসছে। রোজ হনহন করে বেরিয়ে গেলো। রোজকে দেখেই শুভ্র এগিয়ে এলো। শুভ্রকে কিছু বলতে না দিয়ে। রোজ শুভ্রর হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো। ভার্সিটির বসার জায়গায় এনে বললো।”
—-” প্রবলেম কি আপনার?”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” আরে বাহ রাগলে তোমাকে বেশী কিউট লাগে!”
রোজ এবার দাতে দাত চেপে বললো,
—-” আপনি কি পাগল নাকি? আমাকে বিরক্ত করেন কেন?”
কেউ শুভ্রকে পাগল বললে। শুভ্র রেগে হিংস্র হয়ে গেলেও। আজকে কেন জানি ওর খারাপ লাগলো। তবুও শুভ্র হেসেই বললো।”
—-” কারন আমি তোমাকে ভালবাসি,
রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো!”
—-” রাখুন আপনার ভালবাসা। আমি একটা প্রবলেমে পড়ে। আপনাকে আমার হাসবেন্ড বলেছিলাম। আর আপনি সেটার সুযোগ নিচ্ছেন? আপনার মতো পাগলকে আমি ভালবাসবো না ওকে?”
বলে রোজ চলে গেলো। শুভ্র চেয়েও আটকাতে পারলো না। রোজের মুখে পাগল শুনে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা ও কি সত্যিই পাগল? এসব ভাবতে, ভাবতে চলে গেলো। ক্লাস শেষ করে রোজও চলে গেলো বাড়ি,
________________________________
সন্ধ্যায় শুভ্র এক কাপ ব্লাক কফি নিয়ে। ব্যালকনিতে চলে গেলো। আকাশটা থম মেরে আছে। আকাশে হালকা মেঘ জমেছে। শুভ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হেসে বললো।”
—-” কি রে তোরও কি মুড অফ? তাই আমার সাথে তাল মেলাতে চাইছিস? তুইও কি বুঝতে পারছিস? যে আজকে আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আর তুই সেটা বুঝে কাঁদতে চাইছিস। ওকে চল একসাথে কাঁদি কেমন?”
বলে হো, হো করে হেসে দিলো। এরপর একটা আঙুল কপালে ঘষে বললো,
—-” তুই কি ভেবেছিস? আমি শুভ্র সত্যিই কাঁদবো? নো মাই ডিয়ার ডার্ক স্কাই। শুভ্র কাঁদে না এত সহজে। তোর কাঁদতে মন চাইলে কাঁদ। আমিতো বরং আজকে গান গাইবো!”
বলে শুভ্র রুম থেকে গিটার নিয়ে এলো। আবার ব্যালকনিতে আসতে, আসতে বৃষ্টি চলে এলো। শুভ্র মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো, রোজের বলা কথাগুলো ওর মনে পড়ে গেলো। তখনি ও চোখ বন্ধ রেখেই গিটারে সুর তুললো,
?এই বৃষ্টি ভেজা রাতে, তুমি নেই বলে?
?সময় আমার কাটে না?
?চাঁদ কেন আলো দেয় না?
?পাখি কেন গান গায় না?
?তারা কেন পথ দেখায় না?
?তুমি কেন কাছে আসো না?
?এই বৃষ্টি ভেজা রাতে, তুমি নেই বলে?
?সময় আমার কাটে না?
শুভ্র এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। এবার চোখ খুললো লাল হয়ে আছে পুরো।”
?সমুদ্রের ঝড়ো হাওয়া বলে?
?তারা তোমাকে চায়, তারা তোমাকে চায়?
?পাখি মৃদু কন্ঠে বলে?
?তারা তোমাকে চায়, তারা তোমাকে চায়?
এতটুকু গেয়ে থেমে গেলো শুভ্র। এরপর চট করে দাড়িয়ে গেলো। এতক্ষণ বসেই গান গাইছিলো। হঠাৎ করেই শুভ্র নিজের হাসিটা হাসলো। যেই হাসিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যে শুভ্র কিছু করতে চলেছে। শুভ্র গিটারটা পাশে রেখে বললো,
—-” এবার তুমি আমার হবে রেড রোজ। ইয়েস ইউ উইল বি মাইন বেইব। আমার যেটা পছন্দ আপসে না পেলে। সেটা আমি ছিনিয়ে নিতে জানি। আর তাই এবার আমি তোমাকে ছিনিয়ে নেবো!”
#চলবে…