সাইকো লাভার পর্ব-০৫

0
3738

#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ৫

শুভ্র গিটার নিয়ে রুমে চলে এলো। ১দিন পর রোজ ভার্সিটি গেইটে আছে। ভেতরে যাবে এমন সময় শুভ্র এলো। শুভ্রকে দেখেই রোজের মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো। সেটা শুভ্রর চোখ এড়ালো না। শুভ্র তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।”

—-” তোমার সাথে আমার কথা আছে,

রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো!”

—-” কিন্তুু আপনার সাথে আমার কথা নেই,

শুভ্র হাসলো এরপর বললো।”

—-” জাস্ট ২মিনিট ওকে?”

রোজ মুখটা পেঁচার মতো করে বললো,

—-” ওকে বলুন কি বলবেন?”

শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো!”

—-” দেখো আমি অত বনিতা করতে পারিনা। তাই যা বলার আমি ক্লিয়ারলি বলছি। তুমি সেদিন প্রিন্সিপালকে মিথ্যে বলেছিলে। তারপরও আমি তোমাকে কেন কিছু বলিনি জানো?

রোজ প্রশ্নবোধক ভাবে তাকালো। সেটা দেখে শুভ্র আবার বললো,

—-” বিকজ প্রথম দেখেই। আমার তোমাকে ভাল লেগেছিলো। আর সেই ভাললাগাটা এখন ভালবাসায় রুপ নিয়েছে। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”

রোজ চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে বললো,

—-” এসব কি বলছেন আপনি?”

শুভ্র কোন হেলদুল না করেই বললো!”

—-” হ্যা ঠিকই বলেছি রেড রোজ। এবার বলো তুমি কি চাও?”

রোজ রেগে বললো,

—-” শুনুন অনেক হয়েছে। আমি আপনাকে যেখানে ভালবাসি না। সেখানে আপনাকে বিয়ে করবো কেন? আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”

শুভ্র সাইন গ্লাসটা চোখে নিয়ে বললো,

—-” ওকে এবার এই বিয়ে নিয়ে। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো। দেখি উনি আমাকে কি বলে!”

রোজ দাত কিড়মিড় করে বললো,

—-” আপনি আমার বাবার কাছে যাবেন না।”

শুভ্র বাঁকা হেসে বললো,

—-” বাই সুইটহার্ট!”

বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। রোজও আর ক্লাসে গেলো না। রোজও একটা সিএনজি ডেকে চলে গেলো। শুভ্র রোজদের বাড়ির সামনে এসে নামলো। এরপর এদিক, ওদিক তাকিয়ে দেখলো। রোজদের বাড়িটা ৪তলা। বাড়ির সামনে ফুলের বাগান সুইমিংপুল আছে। একপাশে গাড়ি পার্কিং করার সিস্টেম করা। শুভ্র হনহন করে ভেতরে চলে গেলো। রোজের বাবা আজকে অফিসে যায়নি। উনি সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছিলো। আর একটা সোফায় রোদ বসে গেইম খেলছে। শুভ্র গিয়ে আগে ওনাকে সালাম দিলো। উনি শুভ্রকে দেখেই চিনে বললো,

—-” আরে শুভ্র চৌধুরী আপনি?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” আঙ্কেল আপনি আমাকে তুমি করে বলুন। আর আন্টিকে একটু ডেকে এগুলো নিতে বলুন,

এবার উনি শুভ্রর হাতের দিকে তাকালো। শুভ্রর হাতে গাট্টি, গাট্টি মিষ্টির বক্স। আরো অনেকগুলো বক্স আছে। মানে প্যাকেট যেগুলোতে ফল রাখা। রাস্তায় শুভ্র দাড়িয়ে দোকান থেকে কিনেছে। রোজের বাবা তাকিয়ে বললো!”

—-” এসব কি?”

শুভ্র হেসে বললো,

—-” সবটা আমি বলছি, আন্টিকে ডাকুন।”

রোজের বাবা রোজের আম্মুকে ডাকলো। উনিও এসব দেখে অবাক হলো। এরপর সব ভেতরে নিয়ে গেলো। উনি যেতেই শুভ্র বললো,

—-” আঙ্কেল আপনি আমাকে চেনেন। তাই আমার কথাটা একটু মন দিয়ে শুনবেন!”

রোজের বাবা একটু হেসে বললো,

—-” তারআগে তুমি বসো।”

শুভ্র সোফায় বসে আবার বললো,

—-” আমাকে আপনি চেনেন। তাই আমি কেমন সেটাও জেনে থাকবেন। আমি কোনদিন কোন মেয়েকে পাত্তা দেইনি। বা কোন মেয়ের সাথেই মিশিনি!”

এতটুকু বলতেই রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” এসব বাবাইকে বলছেন কেন?”

শুভ্র বিরক্ত হলেও হেসেই বললো।”

—-” ভাইয়া লেট মি ক্লিয়ার,

রোজের বাবা রোদকে বললো!”

—-” রোদ ওকে বলতে দাও,

রোদ মুখ বাঁকিয়ে বসে রইলো। শুভ্র একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” জীবনে প্রথম কাউকে ভাল লেগেছে। একচুয়ালি আমি তাকে ভালবাসি। আর সে হলো আপনার মেয়ে রোজ। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই,

রোজের বাবা অবাক হয়ে বললো!”

—-” সত্যি?”

শুভ্র ঠোটের কোনে হাসিটা রেখেই বললো,

—-” জ্বি আঙ্কেল আমি ওকে অনেক ভালবাসি।”

__________________________

রোদ কিছু বলবে তারআগেই শুনলো,

—-” কিন্তুু আমি বাসি না!”

সবাই দরজার দিকে তাকালো। রোজ রেগে বোম হয়ে আছে। বড়, বড় পা ফেলে শুভ্রর সামনে এসে বললো,

—-” আপনি এত বেহায়া কেন? আমি না আপনাকে বললাম? যে আমি আপনাকে ভালবাসি না।”

শুভ্র ওসবে কান না দিয়ে বললো,

—-” আঙ্কেল আপনি বলুন কি চান?”

রোজের বাবা রোজকে বললো!”

—-” ওকে ভালবাসো না কেন? ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ?”

রোজ রেগে বললো,

—-” এসব কি বলছো বাবাই?”

উনি সোজা কথা বললো।”

—-” আমি চাই তুমি শুভ্রকে বিয়ে করো,

রোদ এগিয়ে এসে বললো!”

—-” বাবা রোজ যখন রাজী না। তাহলে তুমি ওকে বিয়ে করতে বলছো কেন?”

রোজের বাবা এক ধমক দিয়ে বললো,

—-” তুমি চুপ করো।”

রোদ আর কিছু বললো না। শুভ্র রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,

—-” আঙ্কেল রোজ একটু সময় নিক। এরপর না হয় ওর ডিসিশন জানাবে!”

রোজ দাতে দাত চেপে বললো,

—-” আমার ডিসিশন না আছে আর থাকবে।”

বলে উপরে চলে গেলো। শুভ্র রোজের বাবাকে বলে চলে গেলো। বাড়ি এসে নিজের রুমে রোজের একটা ছবির সামনে দাড়িয়ে বললো,

—-” আমিও দেখি কি করে না থাকে। আগামীকালই তোমার না কে আমি হ্যা করবো বেইব!”

পরেরদিন রোজ রেডি হচ্ছে। রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। নিচে আসতেই দেখলো রোদ হিরো সেজে আছে। মানে ব্লু কালার শার্ট পড়া। তার উপর ব্লাক জ্যাকেট। ব্লাক জিন্স প্যান্ট পড়া। পায়ে ব্লাক কালার সুজ। হাতে ব্লাক এন্ড ব্লু কালার ঘড়ি। চোখে ব্লাক সাইন গ্লাস। হাতে গাড়ির চাবি ঘোরাতে, ঘোরাতে যাচ্ছে। রোজ রোদের সামনে গিয়ে বললো,

—-” কোথায় যাচ্ছিস?”

রোদ কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” তোকে বলবো নাকি?”

রোজ দাত কেলিয়ে বললো,

—-” তামান্না আসছে তাই না?”

রোদ চোখ বড়, বড় করে বললো!”

—-” তুই কি করে জানলি?”

রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” তুই কি ভুলে গেলি? তামান্না আমার বেস্টু।”

রোদ আমতা, আমতা করে বললো,

—-” জানিস যখন আমাকে যেতে দে!”

রোজ মেকি হেসে বললো,

—-” ওকে বাট আমাকেও নিয়ে যা।”

রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রোজ বললো,

—-” আরে আমাকে সামনে নামিয়ে দিবি!”

রোদ হেসে বললো,

—-” আচ্ছা চল।”

এরপর দুই ভাই-বোন বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে রোদ গাড়ি স্টার্ট দিলো। মিমদের বাড়ির সামনে রোজ নেমে গেলো। আর রোদ নিজের গন্তব্যস্থানে যেতে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। কিছুদুর যাওয়ার পরেই দেখলো। রাস্তা আটকে কিছু লোক দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে রোদ গাড়ি থেকে নেমে বললো,

—-” হোয়াট দ্যা হেল? এই কারা আপনারা? আর এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন কেন?”

এতটুকু বলতেই একজন এগিয়ে এসে। রোদের মুখে রুমাল চেপে ধরতে গেলো। রোদ সেটা বুঝতে পেরে লোকটাকে লাথি দিলো। লাথি খেয়ে লোকটা মুখ থুবরে পড়লো। এরপর আরো একজন এগিয়ে এলো। রোদ তার নাক বরাবর ঘুষি দিলো। হঠাৎ করে একজন পেছন থেকে। রোদের ঘাড়ে ইনজেকশন পুষ করে দিলো। রোদ ঘাড়ে হাত দিয়ে আহ করে উঠলো। আস্তে, আস্তে নিস্তেজ হয়ে ঢলে পড়লো রাস্তায়। লোকগুলো রোদকে তুলে নিয়ে চলে গেলো!”

___________________________

রোজ আর মিম বেরিয়ে গেলো। রোজ আর মিম ক্যাম্পাসে বসে আছে। এরমাঝে রোজের একটা ফোন এলো। রোজ তাকিয়ে দেখলো স্কিনে তামান্না লেখা। রোজ খুশি হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই তামান্না বললো,

—-” রোজ রোদ কোথায়?”

রোজ একটু অবাক হয়ে বললো।”

—-” কি বলছিস তামুনি? ভাইয়ার তো এতক্ষণ পৌছে যাওয়ার কথা,

তামান্নাও চিন্তিত হয়ে বললো!”

—-” কিন্তুু ও তো এলো না রোজ,

রোজ একটু হেসে বললো।”

—-” আচ্ছা একটা কাজ কর। তুই চলে আয় আমি দেখছি,

রোজ ফোন রাখতেই। কোথা থেকে শুভ্র এসে হাজির হলো। শুভ্রর ঠোটে বাঁকা হাসি। শুভ্র কিছু না বলে রোজকে টেনে নিয়ে গেলো। গাড়িতে বসিয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছু বলার সুযোগ দিলো না। শুভ্র জানে রোজ বকবক করবে। তাই হাত বেধে মুখে টেপ মেরে রেখেছে। রোজকে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে এলো। এরপর টেনে ভেতরে নিয়ে এলো। রুমে নিয়ে টেপ খুলে দিলো। আর হাতও খুলে দিলো। হাত খোলা পেয়েই রোজ গিয়ে। ঠাস করে শুভ্রর গালে থাপ্পর মারলো। থাপ্পর খেয়ে শুভ্র ক্ষেপে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে বললো!”

—-” এখনো সময় আছে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও,

রোজ শুভ্রর কলার ধরে বললো।”

—-” রাজী না হলে কি করবেন আপনি?”

শুভ্র রোজের হাত চেপে ধরে বললো,

—-” করবো না করে ফেলেছি। আচ্ছা বেইব তোমার রোদ ভাইয়া কোথায়?”

রোজ এবার ভয় পেয়ে বললো!”

—-” মানে?”

শুভ্র বাঁকা হেসে বললো,

—-” তোমার ভাইয়ার না এয়ারপোর্ট যাওয়ার কথা ছিলো?”

রোজ কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো।”

—-” কোথায় আমার ভাইয়া?”

শুভ্র রোজের সামনে মোবাইল ধরলো। রোজ সেটা দেখে চমকে গেলো। গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রোদকে চেয়ারের সাথে। হাত, পা বেধে বসিয়ে রেখেছে। পাশেই কয়েকজন গার্ড রোদ চেঁচিয়ে বলছে,

—-” স্টুপিডের দল আমাকে ছেড়ে দে বলছি। একবার আমাকে ছাড় আমি তোদের কাউকে ছাড়বো না। তোদের এত বড় সাহস হয় কি করে? রোদ্দুর আহমেদ রোদকে কিডন্যাপ করিস? কাউকে ছাড়বো না আমি!”

শুভ্র হেসে দিয়ে বললো,

—-” মানতে হবে আমার শালাবাবু। একদম আমার মতো রাইট?”

রোজ ফোনটা ছুড়ে ফেলে বললো।”

—-” আমার ভাইয়াকে ছেড়ে দিন প্লিস,

শুভ্র বিছানায় বসে বললো!”

—-” দেবো তো বেবি অবশ্যই দেবো। তবে আগে আমাদের এংগেজমেন্ট হয়ে যাক কেমন?”

রোজ অবাক হয়ে বললো,

—-” মানে কি বলছেন এসব?”

শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”

—-” তোমার জন্যই তোমার ভাইয়াকে আটকে রেখেছি। তুমি এখন বাড়ি গিয়ে বলবে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও। তোমার বাবাই আমাকে ফোন করে সেটা জানাবে। আমাদের এংগেজমেন্ট হবে দ্যান আমি রোদকে ছেড়ে দেবো। নাহলে আর কোনদিন তুমি তোমার ভাইয়াকে পাবেনা,

রোজ চিৎকার করে বললো!”

—-” আপনি একটা জানোয়ার। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,

শুভ্র এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে। রোজের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এরপর রোজকে কাছে টেনে এনে। রোজের ঠোটে নিজের ঠোট ছুয়ে দিলো। রোজ চেষ্টা করেও ছুটতে পারছে না। কতক্ষণ পর শুভ্র রোজকে ছেড়ে বললো।”

—-” আজকের মধ্যে তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবি। নাহলে কালকে রোদের লাশ পাবি। দেখ আমি কিন্তুু খুনি না ওকে? কিন্তুু তুই রাজি না হলে খুনি হতে প্রবলেম নেই আমার,

রোজ ভয়ে, ভয়ে চলে গেলো। রোজ যেতেই শুভ্র বাঁকা হেসে বললো!”

—-” আমি তোমার সাইকো লাভার বেইব। আর তোমাকে পেতে আমি সব করতে পারি,

#চলবে…