#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৪
২বছর পর।”
সারা ড্রয়িংরুম জুড়ে ছোট, ছোট পা ফেলে হাটছে ছোট্ট মেঘ। আর মেঘের পিছনে ছুটছে মেঘের মাম্মা। মেঘ হেটে, হেটে তার দিদার কাছে গেলো। মেঘকে দেখেই মেঘের দিদা কোলে তুলে বললো,
—-” কি হয়েছে আমার দাদুভাইয়ের? দাদুভাই বুঝি তার দিদাকে মিস করছিলো?”
মেঘরা আজই ওর নানুবাড়ি থেকে এলো। মেঘ আদো, আদো ভাষায় বললো!”
—-” তাত্তু,
তাত্তু মানে হচ্ছে দাদু। মেঘের মাম্মা এসে মেঘকে নিয়ে বললো।”
—-” আম্মু আমি ওকে ফ্রেশ করে আনছি। বাইরে থেকে এসেছি বোঝোই তো?”
মেঘের দিদা মুচকি হেসে বললো,
—-” আচ্ছা যা, ওহ রোদ কোথায়?”
তামান্না কিছু বলবে তখনি রোদ এসে বললো!”
—-” আম্মু আমি এখানে কিছু বলবে?”
এই মেঘ আর কেউ না। তামান্না আর রোদের ১বছরের ছেলে। রোদ কিভাবে ফিরলো পরে জানবেন। আর মেঘের দিদা হচ্ছে রোজের আম্মু। রোজের আম্মু মুখটা ছোট করে বললো,
—-” রোজকে দেখলি রাস্তায়?”
রোদ চমকে বললো।”
—-” কেন রোজ ফেরেনি এখনো?”
রোজের আম্মু একটা বড় শ্বাস ফেলে বললো,
—-” না রে এখনো ফেরেনি। সারাদিন বাইরে থাকে জানিস তো? কত রাত করে বাড়ি ফেরে। আমার মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেলো!”
তামান্না ও মন খারাপ করে বললো,
—-” হ্যা যেদিন থেকে দাভাই নেই। ঠিক সেদিন থেকেই রোজটা পাল্টে গেলো। দাভাই যে কেন রোদকে মারতে চেয়েছিলো? আর দাভাই বা কিভাবে মরলো?”
রোদ গম্ভীর কন্ঠে বললো।”
—-” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। শুভ্র সেদিন হঠাৎ আমার সামনে গাড়ি থামালো। এরপর আমাকে বললো ও মাফিয়া। আর এটা আমি জেনে গিয়েছি বলে আমাকে মারতে চায়। আমি ভেবেছিলাম ও মজা করছে। বাট আই ওয়াজ রং। ও সত্যি, সত্যি আমার উপর গুলি চালিয়ে দিলো। আমি ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যাই। বাট পানির মধ্যে পড়িনি নৌকা রাখা ছিলো নিচে। আর ওই নৌকার উপর পড়ি। ওখানকার লোকজনই আমাকে বাঁচিয়েছিলো। বাট আমার সেন্স এসেছিলো ১০দিন পর। আর তোমরা কাকে যেন আমি ভেবে তার দাফন করেছিলে,
তামান্না চোখ মুছে বললো!”
—-” আমরা কি করতাম বলো? ওটা তো হুবহু তোমার মতো দেখতে ছিলো। আমার পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। ওই ১০দিন আমি কতটা কষ্টে ছিলাম কি করে বোঝাবো তোমাকে? আর পুরো পরিবারের কি অবস্থা হয়েছিলো। আর রোজটা ও তো চিৎকার করে পাগলের মতো কাঁদছিলো। তোমার গুলি লাগার ৭দিন পরই দাভাই মারা গিয়েছে। কিন্তুু আমরা সবাই খেয়াল করেছি। তুমি মারা গিয়েছো ভেবে রোজ যেভাবে কেঁদেছিলো। দাভাই সত্যিই মারা যাওয়াতে এক ফোটাও কাঁদেনি রোজ,
তখনি রোজ ভেতরে এসে বললো।”
—-” বিকজ কোন খুনি মাফিয়ার জন্য রোজ কাঁদেনা। ও ২বছর আগে যেটা করেছে সেটার শাস্তি ও পেয়েছে। শাস্তিটা আমি দেই বা অন্যকেউ,
রোদ ধমক দিয়ে বললো!”
—-” তুই আবার ড্রিংক করেছিস?”
রোজ হেলতে, দুলতে বললো,
—-” হ্যা বাট আজ কম করেছি।”
তামান্না রোজকে ধরে বললো,
—-” এমন কেন হয়ে গেলি তুই রজনীগন্ধা? তুইতো আগে এমন ছিলি না রে!”
রোজ পাগলের মতো হেসে বললো,
—-” কারন আমি আগের রোজ নই। আগের রোজ তো ২বছর আগেই মারা গিয়েছে।”
রোজ আর আগের মত নেই। হ্যা ২বছর আগেই আগের রোজ মারা গিয়েছে। এই রোজ সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। রোজ এখন শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পড়ে। শুভ্রর ওয়াইফ হওয়াও শুভ্রর সব প্রপার্টি এখন রোজের। তাই রোজ দু হাতে টাকা ওড়ায়। ড্রিংক করে ক্লাবে যায়, মারপিট করে, সিগারেট খায়। রোজ মেঘকে একটু আদর করে রুমে চলে গেলো। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
রাত ১১টা ক্লাবে বসে আছে রোজ। হাতে আস্ত এক বোতল ড্রিংক। কতক্ষণ পর, পর চুমুক দিচ্ছে বোতলে। এরমাঝে রোজের সামনে কেউ বসলো। রোজ তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো!”
—-” তুমি আজকেও এসেছো?”
ছেলেটা বাঁকা হেসে বললো,
—-” ইউ নো না বেবি? রোজ যেখানে নিরব সেখানে।”
_____________________
রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-” দেখো নিরব আমার থেকে দুরে থাকবে। আদারওয়াইস তুমি জানো আমি কি করতে পারি!”
বলে হনহন করে চলে গেলো। রোজ যেতেই নিরব হেসে বললো,
—-” ইয়েস বেবি আই নো এভ্রিথিং। দ্যাটস হোয়াই আই লাইক ইউ।”
নিরবের ফোন আসতে সাইডে চলো গেলো,
—-” হ্যা বল!”
ফোনের ওপাশ থেকে কিছু একটা বলে বললো,
—-” আই হোপ বুঝেছেন এনকে।”
নিরব সামান্য হেসে বললো,
—-” এনকে একবার বললেই বোঝে। আফটার অল আই এম এনকে ওরফে নিরব খাঁন। এখন ফোনটা রাখ পরে কথা হবে!”
বলে আবার ভেতরে এলো। ভেতরে এসেই নিরবের মাথা গরম হয়ে গেলো। রোজকে কয়েকটা ছেলে টাচ করছে। আর রোজ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। নিরব রেগে এগোতে গেলেই রোজ যা করার করলো। রোজের হাতে থাকা বোতলটা দিয়ে। একটা ছেলের মাথায় বারি মারলো। সাথে, সাথে ছেলেটা লুটিয়ে পড়লো। এরপর আরেকজন এগিয়ে আসতেই। রোজ বোতলের বাকি অংশটুকু ছেলেটার হাতে ঢুকিয়ে দিলো। এবার রোজের হাত পুরো ফাকা। সেটা দেখে দুজন একসাথে এগিয়ে এলো। রোজ সিটি বাজিয়ে বললো,
—-” আব্বে এবার তো জমে গেলো।”
বলে দুজনের চুল দুহাত দিয়ে মুঠি করে ধরলো। ছেলে দুটো ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো। রোজ দুজনের মাথা একসাথে করে আঘাত করলো। দুজনেই নিচে পড়ে গেলো। রোজ রেগে ফোস, ফোস করে বললো,
—-” তোদের এত বড় সাহস? আমার গায়ে টাচ করার সাহস পেলি কোথায়? এই ক্লাবে মেবি নতুন তোরা। আমাকে চিনিস না, তাই আজ এতটুকু পেলি। নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে। জিন্দা দাফন করে দেবো। জাস্ট রিমেম্বার আই এম নাবিলা রোজ চৌধুরী!”
এতটুকু বলে রোজ থেমে গেলো। এরপর চোখ বন্ধ করে ফেললো। কতক্ষণ পর চোখ খুলে বললো,
—-” নাবিলা রোজ আহমেদ।”
বলে ওখান থেকে সোজা চলে এলো। নিরব অবাক হয়ে সবটা দেখেছে। রোজ বের হতেই নিরবও বের হলো। কিন্তুু রোজকে আশপাশে পেলো না। রোজ গাড়ি নিয়ে শুভ্রর বাড়ি চলে এলো। এসে সোজা উপরের রুমে চলে গেলো। শুভ্রর একটা ছবির সামনে দাড়িয়ে বললো,
—-” বেইমান, বিশ্বাসঘাতক একটা। আমার জীবনটা পুরো নষ্ট করে দিয়েছো তুমি। মরার পরেও আমার পিছু ছাড়ছো না!”
শুভ্রর ছবিটা বেডে ফেলে চলে গেলো। বাড়ি যেতে, যেতে ১টা বেজে গেলো। ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই দেখলো সবাই বসা। রোজ ওদের এড়িয়ে রুমে যেতে গেলেই রোদ ডেকে বললো,
—-” ব্লাক রোজ শোন।”
রোজ দাড়িয়ে পিছনে ফিরে বললো,
—-” কিছু বলবি?”
তামান্না রোজকে নিয়ে সোফায় বসালো। এরপর রোদ রোজের হাত ধরে বললো!”
—-” একটা কথা রাখবি?”
রোজ ইতস্তত করে বললো,
—-” কি কথা?”
রোদ মুখ ছোট করে বললো।”
—-” কাল আমাদের সাথে অফিস পার্টিতে যাবি। প্লিজ বোন না করিস না প্লিজ। কাল আমাদের অফিসকে ২নাম্বার ঘোষনা করবে। টপ ১০ এর মাঝে আহমেদ গ্রুপ ২নাম্বারে। আর ওখানে সবাই পরিবারসহ উপস্থিত থাকবে। আমরা চাই তুইও থাকিস,
রোজ কিছু একটা ভেবে বললো!”
—-” ওকে আমি যাবো,
তামান্না খুশি হয়ে বললো।”
—-” আমি তোকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেবো,
রোজ বসা থেকে দাড়িয়ে বললো!”
—-” তাহলে আমার যাওয়াটা ক্যান্সেল করে দে,
রোদ তামান্নাকে চুপ করতে বলে রোজকে বললো।”
—-” আচ্ছা তুই যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই যাস,
রোজ উপরে চলে গেলো। পরেরদিন সবাই রেডি হয়ে নিচে নামলো। মেঘ সবার কোলেই কাঁদছে। কিন্তুু রোজ কোলে নিলেই চুপ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাতে রোদের খুব জ্বর এসেছে। যার জন্য রোদ যেতে পারবে না বলেছে। রোজের আম্মু বলেছে উনি রোদের কাছে থাকবে। কিন্তুু তামান্না বলছে ও থাকবে। মেঘকে ওনাদের সাথে নিয়ে যেতে। তামান্না অনেক বলায় ওনারা চলে গেলো। কিন্তুু রোজ মেঘকে নিয়ে আলাদা গাড়িতে গেলো। মাঝ রাস্তায় নিরব রোজের গাড়ি থামিয়ে দিলো। রোজ গাড়ি থেকে মেঘকে নিয়ে নেমে রেগে বললো!”
—-” গাড়ি থামালে কেন?”
নিরব অসহায় ফেস করে বললো,
—-” প্লিজ রোজ আমাকে লিভ দাও। আজকে বিজনেস পার্টি আছে। আর আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলো চলে যেতে। গাড়ি আমি ড্রাইভ করে যাবো। প্লিজ এই হেল্পটা করো।”
রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-” ওকে চলো!”
_____________________
নিরব থ্যাংক ইউ বলে গাড়িতে উঠলো। নিরবের পাশের সিটে মেঘকে কোলে করে রোজ বসা। রোজ একটা কালো শার্ট পড়েছে। সাথে ব্লু কালার জিন্স প্যান্ট। কালার করা চুলগুলো ঝুটি করা। হাতে একটা কালো বেল্টের ঘড়ি। যে কেউ দেখলে ভাববে এরা একটা পরিবার। ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো। রোজ আর নিরব একসাথেই ভেতরে ঢুকলো। মেঘ রোজের চুল ধরে টানছে। রোজ বারবার ছাড়াচ্ছে মেঘ বারবার ধরছে। এখানে গান গাওয়ার লোকও এসেছে। কয়েকটা ছেলে গ্রাম থেকে এসেছে। এর ভিতর একজনের নাম শান্ত। সবার আগে নাকি শান্ত গান গাইবে। শান্ত স্টেজের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে। নিরব মেঘকে কোলে নিয়ে আদর করছে। রোজ চুল ঠিক করে মেঘকে নিলো। স্টেজের প্রথম সারিতে রোজের বাবাই, আম্মু বসা। রোজ ওর আম্মুর কাছে গিয়ে বললো,
—-” আম্মু তোমার নাতিকে নাও তো। আমার চুলগুলো ঠিক রাখলো না।”
বলে মেঘকে ওর আম্মুর কোলে দিলো। রোজের আম্মুর কোলে দিতেই মেঘ কেঁদে দিলো। আর আদো, আদো ভাষায় বললো,
—-” মাম্মা!”
রোজ বুঝলো ওর কোলেই মেঘ থামবে। তাই আবার মেঘকে কোলে নিলো। মেঘ রোজের বুকের সাথে লেপ্টে চুপ হয়ে গেলো। শান্ত মুচকি হাসলো পাশ থেকে একজন বললো,
—-” কি রে শান্ত হাসছিস কেন?”
শান্ত তার ভাষায় বললো।”
—-” দেখতাছি বড়লোকের বিরাট কারবার,
এরমাঝে স্টেজে শান্তর নাম নিলো। শান্তর পুরো নাম শান্ত মাহমুদ। সাথে এটাও বললো গ্রাম থেকে আগত। শান্ত স্টেজে উঠে এলো। গাল ভর্তি দাড়ি রাখা। চোখে কালো চশমা, মাথায় গামছা বাধা। শান্ত স্টেজে উঠে বাসিতে সুর তুলে গান গাইতে শুরু করলো!”
?হেএএএ, হেএএএ, লা, লা, লা, রা?
?হেএএএ, হেএএএ, লা, লা, লা,রা?
এতটুকু সুর দিয়ে মুচকি হাসলো,
?রঙের এই দুনিয়ায় নিয়মের বেরাজাল?
?সুদ্ধে মেলে কি রং তামাশা?
?ভবের এই দুনিয়ায় অনিয়ম বেসামাল?
?যুদ্ধে হারা যায় সব খোলাসা?২
এই কলি গেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।”
?ওরে মন, ও পাগল মন?
?মন রে ধোকায় পড়িস না?
?ওরে মন, ও পাগল মন?
?সব করিস প্রেম করিস না?
চোখ খুলে আবার বাসিতে সুর দিলো,
?রঙে ঢঙে পইরা মেয়ের শিখছি কত কলা?
?বুঝি নাই এই মিথ্যা আমার ছাড়বো না মন ফলা?২
?ঘরবাড়ি ছাইড়া আমি হইতাম রে পাগল?
?ওরে মন, ও পাগল মন?
?মন রে ধোকায় পড়িস না?
“বাকিটা শুনে নেবেন”
গানটা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। গান শেষ হতেই সবাই হাততালি দিলো। আর সবাই অনেক প্রশংসা করলো। নিরব এগিয়ে এসে বললো!”
—-” ওয়াও মাইন্ড ব্লোয়িং,
শান্ত সামান্য হেসে বললো।”
—-” আমি ইংরেজি জানিনা সাহেব,
নিরব হেসে বললো!”
—-” অনেক সুন্দর গেয়েছো,
শান্ত আবারো হেসে বললো।”
—-” ধন্যবাদ, মোর এহন যাইতে হইবো,
বলে হেটে বাইরে চলে এলো। গেইটের কাছে আসতেই রোজ ডেকে বললো!”
—-” এই ছেলে শোনো,
শান্ত দাড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে বললো।”
—-” জ্বে কিছু কইবেন মেমসাহেব?”
রোজ শান্তর সামনে এসে বললো,
—-” তোমার নাম কি?”
শান্ত হেসে বললো!”
—-” শান্ত মাহমুদ,
রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”
—-” ওকে যাও,
শান্ত আরেকবার হাসলো এরপর চলে গেলো। রোজও আবার ভেতরে ফিরে এলো। পার্টি শেষ করে সবাই বাড়ি চলে এলো!”
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
#চলবে…