#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:৪
,
,
বাস থেকে খানিকটা দুরে একটা ছোটখাটো খাবার হোটেল।বাসের যাত্রীরা অনেকেই নেমে এখানে এসেছে।
ছোট ছোট কাঠের বেন্ঞ্চে বসে চা নাস্তা করছে তারা।
আমি শুভর পিছুপিছু হাটতে হাটতে দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
শুভ ইশারা করলো একটা খালি বেন্ঞ্চে বসার জন্য।আমি মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে চুপচাপ বেন্ঞ্চটায় বসে পরলাম।
আশেপাশে তাকিয়ে সবার দিকে নজর বুলাতে লাগলাম।
শুভ দুহাতে দুটো প্লেট নিয়ে পাশে এসে বসলো।
পরোটা আর ভাজি নিয়ে এসেছে সে।
আমার সামনে একটা প্লেট রাখতেই গপাগপ খাওয়া শুরু করলাম আমি।
আজ সারাদিন না খেয়ে আছি।বিয়ের চিন্তায় খাওয়া দাওয়া এমনিতেও কিছুদিন ধরে করতাম না বললেই চলে।
এখন একবারে সব ক্ষিদে জেকে বসেছে।
আশেপাশে নজর বুলানোর সময় নেই।
একটু খেয়েই সামনে তাকালাম আমি।
দেখি শুভ হা করে আমার দিকে চেয়ে আছে।
চোখদুটো যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে।
আমি খাওয়া বন্ধ করে তার চোখের সামনে তুড়ি বাজালাম।
বললেন,
—কি হয়েছে? এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো?
শুভ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
—তুমি কি রাক্ষুসী গো?
আমি চোখ গরম করে তাকালাম।
শুভ ভয় পাবার অভিনয় করে বললো,
—ওরে বাবা,চোখ দিয়ে তো আগুন ঝরছে?
এবার আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর যে তুমি রাক্ষুসিই।
আমি রেগে হাতের কাছে থাকা পানির বোতল ওর দিকে ছুড়ে মারলাম।তবে শুভর গায়ে লাগলোনা।সে হাত দিয়ে ধরে ফেললো।
তা দেখে আমার রাগ যেনো আরও বাড়লো।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমি অন্যদিকে ঘুরলাম।
খাবোনা আমি।একেবারেই খাবোনা।
না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পরবো।তারপর?তারপর মরে যাবো।
সামান্য খেয়েছি বলে কিনা আমায় রাক্ষুসী বললো?কেনো?
পরক্ষনেই মনে পরলো,আমি না খেয়ে অসুস্থ হলে শুভর কি?আমি নিজে অসুস্থ হলে তো নিজেরই ক্ষতি।
ওর কি যায় আসবে তাতে?
তাহলে আমি কেনো খাবোনা?তাছাড়া আমার বিল তো আমিই দেবো।
কথাটা ভেবেই প্লেটটা আবার টেনে নিলাম।
শুভ আড়চোখে দেখলো আমায়।
পরক্ষনেই হেসে দিলো।
বললো,
—তোমার মুখ ফুলানো লুকটাই ভালো ছিলো!
আমি পরোটা চিবাতে চিবাতে বললাম,
—আর এমনি লুক বুঝি ভালোনা?
শুভ একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো।বললো,
—খুব একটা খারাপ না যদিও।
কিন্তু মুখ ফুলানো লুকটাই বেশি ভালো।
একটু চুপ থেকে দুষ্টু হেসে বললো,
—কিছুটা হনুমান হনুমান টাইপের।
আমি চোখ বড় করে দাড়িয়ে পরলাম।
কেউ যে আমাকে এমন কিছুর সাথে উদাহরণ দিতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।
আমি আর হনুমান?
মুখ ফুলালে আমায় হনুমানের মতো লাগে?
কিন্তু প্রিতম?সেতো বলেছিলো আমায় সবচেয়ে কিউট লাগে তখন।
দেখলেই নাকি বুক কেঁপে ওঠে।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,তুমি আমায় মুখ ফুলানো অবস্থায় কোথায় দেখেছো?
সে বিনিময়ে শুধু বলেছিলো,ইট’স সিক্রেট।
বিয়ের পরে বলবো।
সব সব সব বলবো!
আমার কিযে লজ্জা লাগছিলো তখন।
প্রিতমের কথা মনে পরতেই আমার কান্না পেলো।
কোথায় প্রিতম এখন?কোথায় আছে সে?আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে সেকি ভালো আছে?কষ্ট হচ্ছেনা তার?
আমায় খুজছে না?
এদিকে আমি যে এক বদ ছেলের পাল্লায় পরেছি সে কি জানে?
যে ছেলে কিনা আমাকে হনুমান বলে।
ভাবতেই আমি কেঁদে ফেললাম।
শুভ হকচকিয়ে উঠলো।
সে হয়তো এমন কিছু আশা করেনি।
এগিয়ে এসে গড়গড় করে একনাগাড়ে বললো,
—তুমি কাঁদছো কেনো পিহু?কি হয়েছে বলো?আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো?আরে আমি কি সেভাবে বলেছি নাকি?আমি তো ফাইজলামি করলাম।
আরে তোমায় কেনো হনুমানের মতো দেখতে হবে।হনুমান তো আমি।
সরি পিহু।
আ’ম রিয়েলি সরি।
কেদোনা প্লিজ!
প্লিজ কেদোনা!আমি সরি বলছিতো!
আমি কান্না বাদ দিয়ে চোখ বড় করে তাকালাম।
আমি কান্না করলে তার কি?সে কেনো এমন রিয়াক্ট করছে?এমন উতলা হবার ই বা কি আছে?
নাক টেনে টেনে বললাম,
—আর কখনো আমায় রাগাবেননা?
শুভ মুচকি হেসে বললো,
—রাগাবো মানে? সারাজীবন তোমায় রাগাবো আমি!
—সারাজিবন পেলে তো!বাস থেকে নেমে আপনার আর মুখই দেখবোনা আমি!
শুভ শব্দ করে হেসে ফেললো।বললো,
—সে দেখাই যাবে।
আমি মুখ ভেঙচালাম।আমিও দেখবো।হুহ!
পরক্ষনেই মনে পরলো,শুভকে তো আমি আমার নাম বলিনি। তাহলে সে আমার নাম জানলো কিভাবে?
ভ্রু কুঁচকে আবার তার দিকে ঘুরলাম।বললাম,
—সত্যি করে একটা কথা বলুনতো?
শুভ আমার কথার ধরন দেখে হাসি থামালো।বললো,
—কি কথা?
—আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?আমি তো কখনো বলিনি?
শুভ অবাক হওয়ার ভান করে বললে,
—একটু আগে যে বললে,তোমার মনে নেই?
আমি মাথা নাড়লাম।কখন বললাম আমি?কই আমার তো কিচ্ছু মনে নেই।বললাম,
–কখন?
শুভ দুষ্টু হেসে কন্ঠ দাবিয়ে বললো,
—ঐযে যখন বাসে আমার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরলে,আমার জ্যাকেট কেড়ে নিলে?
আমি লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি মাথা নামালাম।
লোকটা দেখি ভীষণ অসভ্য ও।
এভাবে কেউ বলে?কিন্তু ঘুমের ঘোরে তখন কি আমি কথাও বলেছি?এই অভ্যাস আমার কখন হলো।
আমাকে ভাবতে দেখে শুভ আবার বললো,
—এতো ভেবোনা ঘুম কুমারী, ভাবতে ভাবতে মাথার চুল সব পরে যাবে।
তখন কিন্তু কেউ তোমায় বিয়ে করবেনা।আমিও না।
আমি চমকে তাকালাম।বললাম,
—মানে?
শুভ উত্তর না দিয়ে চোখ টিপে দিলো।
হুট করে কিছু মনে পরতেই পেছন ঘুরলো।আশেপাশে তাকালো।কেমন অস্থির দেখাচ্ছে তাকে।
আমি বললাম,
—কি হয়েছে?কি খুঁজছেন?
শুভ কিছুক্ষণ এদিকওদিক দেখে আবার বেন্ঞ্চটায় ফিরে এসে ধপ করে বসে পরলো।তার মুখে যেনো আমাবস্যা নেমে এসেছে।
আমার তা,দেখে ভয় লাগলো খুব।এতো হাসিখুশি ছেলে হঠাৎ এমন করছে কেনো?
আমি হাত ঝাঁকালাম। বললাম,
—বলুননা,কি হয়েছে?
শুভ আমার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো।অস্ফুট স্বরে বললো,
—বাস।
আমি ফট করে পেছনে তাকালাম।
বাস নেই।বাসের কোন যাত্রী ও আশেপাশে নেই।
আমাদের ঝগড়া করার সময় সবাই চলে গেছে?আর আমরা এতোটায় ঝগড়ায় মশগুল ছিলাম যে তা খেয়ালও করিনি?
আমিও শুভর পাশে ধপ করে বসে পরলাম।
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খেতে লাগলো।এখন কি হবে?
,
,
চলবে……