সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-১৫+১৬

0
300

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৫)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজে, জায়নামাজে বসে আছেন রাহেলা বেগম। পাশের মসজিদ থেকে আযান ভেসে আসছে। আযান কানে আসতেই নামাজে দাড়িয়ে যান তিনি। নামাজ শেষ করে তসবিহ নিয়েই জায়নামাজে বসে থাকেন। দরজায় টকটক আওয়াজে দরজার দিকে তাকান রাহেলা, এই সময়তো কারো আসার কথা না। কে এলো? রাহেলা বেগম তসবিহ হাতে নিয়েই উঠে আসলেন। দরজার সামনে দাড়িয়ে বললেন কে?

ওপাশ থেকে ভেসে এলো রূপকের ক্লান্ত স্বর- মা আমি রূপক, দরজা খুলো।

রাহেলা বেহম দরজা খুলে দিলেন, রূপক মাকে সালাম দিলো, রাহেলা বেগম উত্তর দিয়ে রূপককে জড়িয়ে ধরলেন। রূপকও পরম আবেশে মায়ের বুকে মুখ লুকালো। দরজা বন্ধ করে রূপকের কাধ জড়িয়ে ধরেই বিছানায় বসেন রাহেলা বেগম। রূপক মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চু*মু দিয়ে বলে- তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো মা, তাই চলে আসলাম।

রূপকের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে রাহেলা বলেন- ভালো করেছিস, আমারো তোকে খুব মনে পড়েছে। তোদের কাজের কি খবর?

– তুমি চিন্তা করোনা মা, আমরা খুব শীগ্রই সব খুজে বের করবো। মেইন কালপ্রিট কে তা বের করে আমার ভাইয়াকে ঠিকই বের করে আনবো। তারপর আমি তুমি বাবা ও ভাইয়া মিলে একসাথে সুখী পরিবার হবো।

আর ওই রামিম হাওলাদার কে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। উনার জন্য আমি এতোদিন মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তুমি থাকতেও আমাকে এটা ভেবে বাঁচতে হয়েছিলো, আমার মা… আর কিছু বলতে পারলো না রূপক রাহেলা বেগমকে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। রাহেলা বেগম নিজের চোখের পানি মুছে রুপকের চোখের পানি মুছিয়ে দেন।

রূপক কান্না থামিয়ে আবারো বলে- বাবা এখনো তোমাকে ভালোবাসে মা। তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের জল জড়ায়। আমি দেখতাম তবে আগে রাগ হতো, কারণ দাদু আমাদের তোমার সম্পর্কে ভুল কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন বাবার এসব দেখলে আমার খুবই খারাপ লাগে, আমার বাবা কতো কষ্ট পাচ্ছেন। আচ্ছা মা আমি কি বাবাকে তোমার কথা বলে দিবো?
বাবাকে আর কষ্ট পেতে দেখতে পারছিনা আমি, বলে দেই মা বাবাকে সব?

রাহেলা বেগম কি বলবেন ভেবে পেলেন না, তবে নিজের স্বামীর কষ্টের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে সব জানাবেন। রাহেলা বেগম রূপকের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলেন- তোর বাবাকে নিয়ে আসিস, আমি নিজে তাকে সব বলবো।

মুচকি হেসে রূপক বলে- সকাল হলেই নিয়ে আসবো মা। বাবাকে সারপ্রাইজ দিবো।

আচ্ছা দিস, এখন চল খাবি।

রাহেলা বেগম ভাত ও ডাল নিয়ে আসলেন রূপকের জন্য, রূপক বায়না ধরলো মায়ের হাতে খাবে। রাহেলা বেগম স্মিত হেসে রূপককে খাইয়ে দিতে লাগলেন। রূপক খাওয়া শেষে মাকে আরো ভাত ও ডাল আনতে বললো, রাহেলা বেগম বিনাবাক্যই নিয়ে আসলেন। ভাতের থালা নিয়ে রূপক নিজের হাতে মাকে খাইয়ে দিলো লাগলো। রাহেলা বেগমের চোখে অশ্রুরা ভীড় জমালো, তার মনে হলো তার রাইসুর না জানি কি খাচ্ছে অন্ধকার জেলে। গলা দিয়ে ভাত নামতে চায়নি তার, কিন্তু রূপকের কথা ভেবে অনেক কষ্টে খেয়ে নিলেন।

খাওয়া শেষ করে, রূপক মাকে বলে বেড়িয়ে যায়, উদ্দেশ্য তার বাবাকে নিয়ে আসা। আজ সে তার বাবাকে বিগ সারপ্রাইজ দিবে, আচ্ছা তার বাবা মাকে দেখে কি করবে? সে কি থমকে যাবে? কথা গুলো ভেবেই রূপকের মন নেচে উঠে। মোবাইল বের করে কল করে রাকিব হাওলাদারের নাম্বারে।

রাকিব হাওলাদার অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন। বয়স বাড়ছে কিন্তু কাজ কমছে না, রূপকের পড়াশোনা শেষ হলে তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে তিনি অবসর নিবেন সবকিছু থেকে। ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠে তার, রূপকের নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকান, রূপক তো বাসায় থাকবে এই সময়, হঠাৎ তাকে ফোন দিলো কেনো? ভাবতে ভাবতেই ফোন রিসিভ করলেন। তাকে কিছু বলতে না দিয়ে অপাশ থেকে রূপক ভীতু কন্ঠে বলে-, বাবা! বাবা আমাকে বাচাও। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তুমি আমাকে বাচাও বাবা।

চমকে যান রাকিব হাওলাদার, তার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ তার ছেলে রূপক। এতো আদরের ছেলের বিপদ হয়েছে শুনে বুক ধকধক করতে লাগলো তার। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অনুভব করলেন। পাশে থাকা টি টেবিল থেকে পানি ভর্তি গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পান করলেন। ভয়ার্ত কন্ঠে বলেন- কি হয়েছে রূপক সোনা? তুমি ঠিক আছো তো বাবা? বাবাকে বল কি হয়েছে রূপক। ভয় পেও না, তুমি যেখানে আছো আমাকে নাম বলো আমি আসছি এখনি মানিক আমার।

রূপক আবারো ভয়ার্ত কন্ঠে রাহেলা বেগমের বাসার ঠিকানা দিয়ে দেয়। রাকিব হাওলাদার বলেন- তুমি ভয় পাবেনা সোনা, বাবা আসছি। তোমার কিছু হবেনা।
রাকিব হাওলাদার ফোনে কথা বলতে বলতেই গাড়ি বের করেছেন, রূপক ফোন কেটে দিয়েছে ততোক্ষণে। গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে রাকিব হাওলাদার ছুটলেন রূপকের বলা ঠিকানায়।

এদিকে, রূপক হাসছে। সে তার বাবার খুব আদরের তা সে জানে। এটাও জানে তার বাবা যখন জানতে পারবেন সে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলে তাকে এখানে এনেছে, তাও রূপকের বিপদের কথা বলে তাহলে তিনি রূপককে আস্থ রাখবেন না। বাবার থাপ্পড় খেলে খাবে, কিন্তু বাবাকে সারপ্রাইজ দিবেই৷ এটাই রূপকের একমাত্র ইচ্ছে।

পাশেই বাজার থেকে কিছু জিনিস কিনে রূপক ঘরের ভিতরে ঢুকে রাহেলা বেগমকে বললো- মা তোমার হাতের পায়েস খেতে ইচ্ছে করছে, এই নাও সব নিয়ে এসেছি।

রাহেলা বেগম রূপকের কপালে চুমু দিয়ে সব নিয়ে রান্না ঘরে যান, মাটির চুলায় পায়েস রান্না করতে থাকেন।

রাকিব হাওলাদার রূপকের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে আবারো ফোন দেন রূপককে। রূপক ফোন রিসিভ করে বলে- বাবা, ওইযে একটা মাটি ও সিমেন্টের ঘর দেখতে পাচ্ছো, ওটাতেই আমি আছি। তোমার হাতের বামদিকে দেখো। বলেই রূপক ফোন কেটে দেয়। মায়ের কাছে গিয়ে বলে মা তুমি একটু বিছানায় গিয়ে রেস্ট নাও, আমি দেখছি। সব তো দেওয়া শেষ, আরেকটু পরে আমি নামিয়ে নিবো। রাহেলা বেগম মানা করলেও রূপক শুনলো না, বাধ্য হয়ে রাহেলা বেগম বিছানায় এসে বসলেন, আর তখনই দরজায় কারো করাঘাতের শব্দ হয়।

এসময় কে আসতে পারে ভেবে পাচ্ছেন না রাহেলা বেগম, তার ভাবনার মাঝেই আবারো দরজায় কেউ আঘাত করে। বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেন তিনি, দরজা খুলতেই রাকিব হাওলাদার হুরমুর করে ভিতরে প্রবেশ করেন। সামনে তাকিয়ে তার পৃথিবী থমকে যায়। রাহেলা বেগম অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নিজের অর্ধাঙ্গের দিকে। সবকিছু ছাড়িয়ে রাকিব হাওলাদার জ্ঞান হারান, ঢলে পড়েন রাহেলা বেগমের উপরে। রাহেলা বেগম চিৎকার করে রূপককে ডাকেন। রূপক বাবার অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তার বাবা এতো বড় সারপ্রাইজ নিতে পারেন নি তাই জ্ঞান হারিয়েছেন, তা বুঝতে সময় লাগলোনা রূপকের। মাকে চিন্তা করতে বারণ করলো রূপক। কিন্তু রাহেলা বেগম তো সেই থেকেই কেঁদে যাচ্ছেন, মানুষটার কি হলো তাই চিন্তা করছেন তিনি। রূপক বাবার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। কিছু সেকেন্ড পরই রাকিব হাওলাদার পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালেন, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রাহেলা বেগমের দিকে। রাহেলা বেগম জিজ্ঞেস করে যাচ্ছেন ‘ আপনি ঠিক আছেন তো? কিন্তু তা রাকিব হাওলাদারের কানে ঢুকছে না। রূপকের মনে হলো এখন বাবা মাকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ তাই সে রান্না ঘরে চলে গেলো।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৬)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন রাকিব হাওলাদার। নিজের বাবার সব কর্মকাণ্ড জেনে রাগ হচ্ছে তার, সাথে বাবার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। বাবা নামক মানুষটার জন্য সে এতোদিন নিজের প্রিয়তমার থেকে দূরে ছিলেন। তার এক সন্তান বাবা ছাড়া বড় হয়েছে, আরেক সন্তান মা ছাড়া বড় হয়েছে। এক সন্তান জেলে আছে। আজ যদি তার ছেলেটা তার সাথে থাকতো, তারা চারজন মিলে যদি সুখে সংসার করতে পারতো। তাহলে তার এক সন্তানের জীবন এমন হতোনা। শক্তমনের রাকিব আচমকা সামনে বসা রাহেলাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেন। স্বামীর আলিঙ্গন এতোদিন পরে পেয়ে রাহেলা বেগমের যেনো শরীর মন সিক্ত হয়। আবেশে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে তিনিও চোখের পানি জড়াতে থাকেন। রান্না ঘরের দরজার পিছনে দাড়িয়ে আছে রূপক, তার চোখেও পানি। চোখের পানি মুছে রূপক দরজার সামনে থেকে চলে গেলো, বাবা মাকে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া উচিৎ, সে বরং এখন পায়েস নাড়াচাড়া করুক।

‘-আর কতো কাঁদবেন, এবার তো থামুন। রান্না ঘরে রূপক আছে। বলেন রাহেলা বেগম।

রাকিব কান্না থামালেন, তবে প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছাড়লেন না। দুইহাতে রাহেলার মুখ ধরে সারামুখে অনব্রত চুমু খেলেন। রাহেলা বেগম ভাবছেন, তিনি বড়োই ভাগ্যবতী। নাহলে কি এমন স্বামী পান? অন্য কেউ হলে হয়তো বিয়ে করে নতুন সংসার করতো। কিন্তু তার স্বামী তার অপেক্ষায় দিন গুনেছেন। এখনো এতো ভালোবাসেন। খুশিতে রাহেলা বেগমের চোখে আবারো অশ্রুরা ভীড় জমালো, কিন্তু তিনি তা ঝড়তে দিলেন না। রাকিব হাওলাদার কে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলেন কিছু সময়। রূপকের কথা মাথায় আসতেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন। রাকিব হাওলাদার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, বিনিময়ে রাহেলা ইশারা করে রান্না ঘর দেখালেন। রাকিব বিছানা থেকে নেমে রাহেলাকে সাথে নিয়ে রান্না ঘরে আসলেন। রূপক তখন গুনগুন করে গান গাইছিলো আর পায়েস নাড়াচাড়া করছিলো, রাকিব হাওলাদার গিয়ে রূপকের কান টেনে ধরেন। ব্যথায় কুকিয়ে উঠে দাড়ায় রূপক, বারবার বলতে থাকে ‘বাবা কান ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি’ কিন্তু রাকিব হাওলাদার ছাড়লেন না। কান আরো শক্ত করে ধরে বললেন- বাদর ছেলে, বাবাকে একটুর জন্য হার্টফেল করে মেরে ফেলতে। কেউ এমনভাবে সারপ্রাইজ দেয় নাকি? তুমি জানো তোমার বিপদের কথা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো? আমার শরীর প্রচন্ড কাপছিলো অনেক কষ্টে গাড়ি চালিয়ে এই পর্যন্ত এসেছিলাম।

রূপক কান্না কান্না মুখ করে বলে- স্যরি বাবা, আর এমন করবো না। এবারের মতো মাফ করে দাও। কান ছেড়ে দাও প্লিজ, নাহলে তোমার বউমা আমাকে কান ছাড়া বাঁদর বলবে তো!

কান ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে রাকিব হাওলাদার বলেন- আমার বউমা!

রূপক দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে-, হ্যা তোমার বউমা, মানে আমার ভবিষ্যত বউ। আমার যদি কান ছিঁড়ে যায় তখন তো সে এমন কথা বলবেই তাইনা? তাই তো তোমাকে বলছিলাম কান ছেড়ে দিতে।

রাকিব হাওলাদার ও রাহেলা বেগম একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠেন, রূপক দুইজনকে জড়িয়ে ধরে নিজেও হাসে। রাহেলা বেগম তড়িৎগতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে পায়েস চুলা থেকে নামিয়ে নেন। এতোক্ষণ কারোরই এদিকে খেয়াল ছিলোনা। রাকিব হাওলাদার ও রূপককে বললেন বিছানায় গিয়ে বসতে তিনি পায়েস নিয়ে আসছেন। তিনজন মিলে পায়েস খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষে রাহেলা বেগম একটা টিফিনে করে পায়েস নিয়ে রূপকের হাত ধরে বলেন- চল রাইসুরকে দেখে আসি। তোর বাবা ও ওকে দেখবেন বলছেন। রূপক মাথা নাড়িয়ে মায়ের হাত থেকে টিফিন বক্স নিয়ে নেয়। রাকিব হাওলাদার এখন সুস্থ হওয়ায় তিনিই রাহেলা বেগমকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে যান। রূপক নিয়াজের সাথে কথা বলে সবঠিক করে বাইক স্টার্ট করে সেও রওনা দেয়।

.
রিমান্ডের অন্ধকার জেলে বসে আছে রাইসুর, তার সাথে আরো অনেক ছেলে আছে যারা ওর সাথেই ধরা পড়েছিলো। সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, শুধু রাইসুরই এককোনায় বসে আছে মাথা নিচু করে। সামনে তার সকালের খাবার পড়ে আছে, রাইসুর মাকে নিয়ে টানাপোড়োনে দিন পাড় করলেও সে কখনো এমন শক্ত রুটি খায়নি, কখনো এমন ভাজি খায়নি। পেটেও খিদে পেয়েছে, কিন্তু গলা দিয়ে এসব নামবেনা তাই ফেলে রেখেছে। এমনই হয় সবসময়, কিন্তু যখন একেবারেই সহ্য করতে পারেনা তখন পানি দিয়ে হলেও গিলবার চেষ্টা করে সে। সফলও হয়। এতোকষ্ট সহ্য করেও রাইসুরের আফসোস নেই, সে চায় আরো কষ্ট পেতে। তার ভুলের জন্য আরো শাস্তি পাক সে। সব ভুলের শাস্তি পেয়ে এখান থেকে বের হয়ে মায়ের কোলে ফিরে যেতে চায়। মাকে তার সবসময়ই মনে পড়ে, কিন্তু সে এখন চাইলেও মাকে দেখতে পারেনা। সেই যে একবার এসেছিলেন, আর তার সামনে আসেন নি। হয়তো তার মা এসেছিলেন কিন্তু কেউ তার সাথে দেখা করতে দেয়নি। মাথাটা আরো নিচু হয়ে যায় রাইসুরের, মনে পড়ে যায় মায়ের তাকে নিজে হাতে খাওয়ানোর দৃশ্য। তখনই আরেকটা দৃশ্য ভেসে উঠে নেশার টাকা না দেওয়ার জন্য মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া! মাথা তুলে রাইসুর দুই হাত ভালো করে দেখে, এই দুই হাত দিয়েই তো সে তার জননীকে ধাক্কা দিয়েছিলো। সিমেন্টের শক্ত দেয়ালে অনবরত আঘাত করতে থাকে তার দুটি হাত। সবাই অবাক হয়ে রাইসুরের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে থামাচ্ছেনা। পাহারা দেওয়া লোকটি ভিতরে খবর দিতেই নিয়াজ ও সিয়াম তাড়াতাড়ি করে আসে। চাবি দিয়ে তালা খুলে ভিতরে ঢুকে দুইজন। ততোক্ষণে রাইসুরের দুইহাতের চামড়া উঠে গেছে, র*ক্তে ভেসে যাচ্ছে দুইহাত। আঙ্গুলের মাংস বের হয়ে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত বের হচ্ছে, এসব দেখে নিয়াজ ও সিয়াম রাইসুরকে ধরে বের করলো, পাহারা দেওয়া লোকটিকে বললো আবার তালা মেরে দিতে। রাইসুর কে নিয়ে বেরিয়ে যায় দুজন। অফিসে পূরবি ছাড়া সবাই ছিলো, জেসি ও রুশা নিয়াজ ও সিয়ামের সাথে এসে গাড়িতে উঠে। জেসি ড্রাইভ করতে থাকে উদ্দেশ্য হাসপাতাল। এরমধ্যে রুশা পূরবিকে সব জানিয়ে দেয়, পূরবি বলে সেও হসপিটালে আসছে।

রূপকরা গোয়েন্দা অফিসে এসে জানতে পারে কিছু মিনিট আগেই রাইসুরকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়েছে, সব শুনে রাহেলা বেগমের মাথা ঘুরে যায়। পড়ে যাওয়ার আগেই রাকিব হাওলাদার ধরে নেন। রূপক মা বাবাকে নিয়ে ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে হাসপাতালে আসে, তখন রাইসুরকে ধরে গাড়ি থেকে নামাচ্ছিলো নিয়াজরা। মূলত রাইসুরের জন্যই দেরি হচ্ছে ভিতরে যেতে, সে হাসপাতালে যেতে চায়না। তার আরো শাস্তি পাওয়া উচিত, এসবই তখন থেকে বলে যাচ্ছে রাইসুর। বাধ্য হয়ে নিয়াজও সিয়াম জোর করে টেনে নিয়ে যেতে থাকে ভিতরে, রাইসুরের অবস্থা দেখে রাহেলা বেগম দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন নিজের ছেলেকে। রাইসুর মাকে পেয়ে শুঁকনো মুখেও হাসে, রক্তা*ক্ত হাত দিয়ে মুখ ধরে বলে- তুমি এসেছো মা! আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। তুমি কেনো এতোদিন আমাকে দেখতে আসোনি? আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো তোমাকে না দেখতে পেয়ে।

রাহেলা বেগমের চোখের পানি বাধ মানেছে না, কাঁদতে কাঁদতেই রাইসুরের গালে চড় মারেন তিনি। জড়িয়ে ধরে বলেন- আর কতো জ্বালাবি তুই আমাকে! আর কতো! তুই কেনো নিজের ক্ষতি করেছিস বল আমায়? আমি তো তোকে দেখে কষ্ট হতো বলে লুকিয়ে তোকে দেখে চলে আসতাম৷ আর কখনো এমন পাগলামি করিস না বাবা, আমি মরে যাবো তোর কিছু হলে।

রাইসুর হেসে মায়ের কাঁধে জ্ঞান হারিয়ে ঢ’লে পড়ে। রাহেলা বেগম রাইসুরের ভাড় নিতে না পেড়ে পড়ে যেতে নেন তখনই রাকিব হাওলাদার পিছন থেকে দুজনকে আগলে নেন, নিয়াজও সিয়ামের সাথে মিলে রূপক রাইসুরকে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে যায়। ডাক্তার দ্রুত রাইসুরের হাত ড্রেসিং করেন, ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে আইসিইউ তে রাখেন। ওর এখন ঘুম প্রয়োজন।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,