#সিনিয়র_লাভ_বার্ড
#পর্ব:২২ ও ২৩
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা
পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে পূরবি। সব প্রমাণ খুজে বের করা শেষ। আসল অপরাধী কে সেটাও বের করা শেষ। এবার শুধু সবার সামনে তার মুখোশ টেনে খুলার পালা। কি থেকে কি করতে হবে সব ভাবা শেষ পূরবির। টিমের বাকিদের প্রস্তুত হতে বললো সাথে নিজেও রেডি হয়ে নিলো। গাড়িতে উঠে সবাই রওনা হলো কল্পদের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
মনের বিষন্নতাকে পাত্তা না দিয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে সূর্যকে নিয়ে বাকি পরিচিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে কল্প। তাদের সাথে রূপকও যোগ হলো। এক কথায় দুই কথায় আড্ডা জমে উঠলো তাদের। সকলে গলা ছেড়ে একসাথে গান ধরলো। যা পুরো ভার্সিটি উল্লাসিত করে তুললো। সবার মনোযোগ যখন গান গাওয়া কল্পদের দিকে তখনই গেইট দিয়ে এম্বুলেন্সের মতো সাইরেন্স বাজিয়ে পূরবিদের গাড়িসহ পুলিশ ও মিডিয়ার গাড়ি ঢুকলো। ভার্সিটির প্রতিটি মানুষ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা। কল্প ও সূর্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবারো সামনে তাকালো। রূপক অবাক হলোনা একটুও বরং মুচকি হেসে দাড়িয়ে রইলো। সূর্য রূপকের হাসি খেয়াল করে কল্পকে গুতা মেরে ইশারা করলো। কল্প ও সূর্য রূপককে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপার কি? রূপক স্মিত হেসে বললো ‘ দেখতে থাক।
পূরবিসহ ওর টিমের সবাই গাড়ি থেকে নেমে বেরিয়ে এলো। সবার চোখে বিস্ময় কারণ পূরবির পড়োনে গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটরদের কোট। যা সাদা শার্টের উপরে পড়া রয়েছে। কয়েকজন ছাত্র প্রিন্সিপালও শিক্ষকদের কাছে খবর পৌঁছে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারাও উপস্থিত হলেন সেখানে। পূরবি পুলিশদের সম্পূর্ণ ভার্সিটি ঘেরাও করতে বলেছে যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। প্রিন্সিপাল স্যার অবাক হয়ে এসপি আনিসুর রহমানের সামনে দাড়ালেন, প্রশ্ন করলেন- এসব কি অফিসার?
আনিসুর রহমান কিঞ্চিৎ হেসে বললেন- বলেছিলাম না আপনাতের ভার্সিটির রহস্য উদঘাটন করতে গোয়েন্দা অফিসে নতুন ইনভেস্টিগেটর কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ সেই দিন আজ সবকিছুর রহস্য সামনে আসবে। পি.সি আজ সব রহস্যের জাল টেনে বের করবে, মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রত্যেক শয়তানের মুখোশ টেনে খুলবে।
প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইন ঢুক গিললেন, তা দেখে আনিসুর রহমান রহস্য করে হেসে বললেন- কি স্যার গলা শুকিয়ে গেছে নাকি? বলেই পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন – পান করুন, এইটুকুতেই এই অবস্থা। কিছুই তো এখনো হলোনা তার আগেই অসুস্থ হয়ে যাবেন না প্লিজ। অবশ্য অসুস্থতার বাহানায় কাজ হবেনা, আজ সব রহস্য ফাঁস হবেই। কেউ রেহাই পাবে না। আপনিও না! না মানে আপনি যদি কোনো কুকর্ম করে থাকেন তো তাই বলছিলাম আরকি। চিন্তা নেই আপনি তো কিছু করেন নি, তাহলে এতো ভেবে কাজ নেই আপনার।
প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইনের কপালের ঘাম জমতে শুরু করলেন, ঘাম মুছে বললেন- আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা, একটু ভয় হচ্ছে ভার্সিটির নাম খারাপ হতে পারে তার জন্য। আর কিছু না, আমি যেখানে কিছু করিনি সেখানে ভয় কিসের?
আনিসুর রহমান প্রসস্থ হাসি হেসে বলেন- সেটাই তো আপনার ভয় কিসের? তবে সতর্ক থাকুন কেচো খুজতে গিয়ে না আবার কেউটে বেরিয়ে আসে। বলা তো যায় না গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটরদের চোখ বাজ পাখির মতো। মাটির তলে লুকিয়ে থাকলেও খুঁড়ে খুঁড়ে বের করতে সময় নিবেনা। আপনি তাহলে পানি পান করুন, আর দেখতে থাকুন। বলেই আনিসুর রহমান পূরবিদের কাছে এসে দাঁড়ালেন।
প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইন আবারো কপালের ঘাম মুছলেন, মনে মনে কিছু একটা ভেবে হেসে নিজ মনেই বলেন- ওরা এতদূর আসতে পারেনি। যদি সব জানতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই এভাবে শান্ত থাকতো না। আমি তাহলে নিরাপদে আছি। যাক বাবা বেঁচে গেলাম। বলেই ক্ষুর হেসে দাড়িয়ে রইলেন তিনি।
পূরবিদের ইতোমধ্যেই সবার ভীড় করে গোল হয়ে দাড়িছে মাঝে পূরবি ও তার টিম সাথে মিডিয়ার লোকজনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একজন মিডিয়ার লোক প্রশ্ন করলেন- আপনিই কি পি.সি? যার কথা এসপি আনিসুর রহমান বলেছিলেন।
পূরবি কিঞ্চিত হেসে মাথা নাড়ালো। সবার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে, এই মেয়েটা তো তাদের সাথেই পড়েছে আর সে কি না পি.সি। কল্প অবাক হলেও সেটা প্রকাশ না করে মুচকি হাসলো এরকম কিছু একটাই আন্দাজ করেছিলো সে তাই বেশি অবাক হয়নি। সূর্যের মুখ হা করানো নির্লিপ্তভাবে মাছি মশা ঢুকে যাবে, কল্প একটা গুতো দিয়ে বললো মুখ বন্ধ করতে। সূর্য মুখ বন্ধ করে আবারো মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে রইলো।
প্রথমে কথা বলতে শুরু করলো নিয়াজ, সবার উদ্দেশ্যে বললো- সবাই নিশ্চয়ই জানেন যে ভার্সিটিতে
কয়েকটা লাশ পাওয়া গিয়েছিলো? সেই লাশগুলো কাদের আর তাদের কেনোই বা খু*ন করা হয়েছিলো সেটা নিশ্চয়ই সবাই জানতে চান? সব লাশের ডিএনএ বের করে সবাইকে চিন্হিত করা হয়েছে। ওরা সবাই মাদকাসক্ত ছিলো। আবার কয়েকজন নির্দোষ ও ছিলো। নির্দোষ যারা তাদের মারার কারণ হলো তারা প্রতিবাদ করেছিলো তাই তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। আর কে সেটা করেছে জানতে চান? কে এসবের পিছনে জানতে চান?
সবাই একসাথে বলে উঠলো- চাই!!
নিয়াজ কিঞ্চিৎ হেসে পূরবির দিকে তাকালো, পূরবি সিয়ামকে ইশারা করে কিছু বুঝালো। নিয়াজ ও সিয়াম একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইনের সামনে দাড়ালো। ভড়কে গেলেন প্রিন্সিপাল নিচের কুকর্ম ফাঁস হয়ে যেতে বেশি সময় নেই বুঝতে পেরে পিছন থেকে পিস্ত*ল বের করে নিয়াজ ও সিয়ামের সম্মুখে তাক করলেন। তা দেখে ভার্সিটির প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীদের চোখে বিস্ময়। কারোই বুঝতে বাকি রইলো না এসবের পিছনে প্রিন্সিপাল স্যার ও আছেন।
প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইন পিস্ত*ল তাক করে রেখেই বললেন- কেউ আগাবে না, আমি কিন্তু শুট করে দিবো। বলেই গেইটের দিকে যেতে লাগলেন তিনি। কিন্তু তিনি তো জানেন না বাপেরও বাপ আছে। জেসি পিছন থেকে পিস্ত*ল কেড়ে নিয়ে হাঁটুর ভাজে লাথি দেয়। মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যান আজাদ হোসাইন। নিয়াজ টেনে তুলে আজাদ হোসাইনকে নিজের কর্মকান্ড সব শিকার করতে বলে। কিন্তু আজাদ হোসাইন অপারগ তিনি কিছুই স্বীকার করবেন না বলেছেন। পূরবি হালকা হেসে কয়েকজন পুলিশকে বললো আজাদ হোসাইনকে নিয়ে যেতে। বাকিটা নাহয় রিমান্ডের বারি দিয়ে বের করে নিবে। কিন্তু মিডিয়া তো পিছু ছাড়বেনা তাই পূরবি ঠিক করেছে সব বলে দিবে। সব মিডিয়ার লোকজন পূরবির সামনে তাদের স্পিকার ধরলেন। পূরবি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো- ঘটনার শুরু হয়েছিলো অনেক আগে। প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইনয়ের বাবা এই ভার্সিটি নির্মাণ করেন। তিনি সৎ লোক ছিলেন সাথে ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন পুরুষ। কিন্তু কে জানতো এমন ব্যক্তির সন্তান তার কলঙ্ক হবে? হ্যা প্রিন্সিপাল আজাদ হোসাইন বাবার অগোচরে অবৈধ ব্যবসা করতেন। নিজের বাবাকে লুকিয়ে করলেও আজিম হোসাইনের বুঝতে সময় লাগেনি তার ছেলে যে কি পথে হাঁটছে। তিনি বুঝতে পেরে সতর্ক করেন নিজের ছেলেকে। কিন্তু আজাদ হোসাইন বাবার কথা শুনতে ও মানতে নারাজ। টাকার লোভে তিনি আরো বেশি করে যুক্ত হতে থাকেন সব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে। যখন আজিম হোসাইন হুমকি দিলেন তিনি সব পুলিশকে জানিয়ে দিবেন তখনই আজাদ হোসাইনের মাথায় খু*ন চেপ বসে। তিনি নিজের বাবাকে খু*ন করতেও দুবার ভাবেন নি। খু*ন করে স্টোক বলে চালিয়ে দেন তার লাশ। বাবার পরে সবকিছুর মালিক একমাত্র ছেলে হিসেবে আজাদ হোসাইনের, মা জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিলেন। বেপরোয়া আজাদ হোসাইনের পথের বাঁধা হিসেবে আর কেউ ছিলোনা। বাবার রেখে যাওয়া ভার্সিটিকে নিজের কাজে লাগাতে থাকেন তিনি। ভার্সিটির স্টুডেন্টদের নিজের কাজের প্রতি টেনে আনেন। ড্রাগ*স ইয়া*বা সহ সব মাদকাসক্ত ও অ*স্ত্র পাচার সব কিছুতে এগিয়ে যান। যাদের লাশ পাওয়া গিয়েছলো তাদের অনেকই পুরনো কর্মচারী ও তার কুকর্মে বাঁধা দেওয়া ছাত্ররা ছিলো।
একজন মিডিয়ার লোক প্রশ্ন করলেন- এর পিছনে আর কে কে জড়িতো আছেন ম্যাম?
পূরবি লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে- রামিম হাওলাদার। আজাদ হোসাইনের একনিষ্ঠ বন্ধু। যিনি সবার কাছে দয়ার মানুষ হিসেবে পরিচিত। যার নামে ভার্সিটির অর্ধেক খরচ দেওয়া। রামিম হাওলাদার ছিলেন হাওলাদার পরিবারের একমাত্র সন্তান। ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিলেন। সবার কাছে আদরের ছিলেন। বন্ধু আজাদ হোসাইনের এসব জানতে পেরে প্রথমে প্রতিবাদ করলেও পরে টাকার লোভে নিজেও জড়িয়ে যান আজাদ হোসাইনের সাথে এই পাপ কর্মে। দুই বন্ধু মিলে গড়ে তুলতে থাকেন পাপের সাম্রাজ্য। রামিম হাওলাদারের ছেলে রাকিব হাওলাদার বিয়ে করেছিলেন গ্রামের এক গরিব বাবার মেয়েকে। নিজের পছন্দে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলে রামিম হাওলাদার নাকচ করেন। এমন গরিব ঘরের মেয়েকে তিনি নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবেন না কখনো। কিন্তু রাকিব হাওলাদার বাবার কথা শুনেন নি, স্ত্রীকে তিনি প্রচন্ড ভালোবাসেন তাই বাবার কথা অমান্য করে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন। রাকিব হাওলাদারের স্ত্রী রাহেলা বেগম গর্ভবতী হওয়ার পরে রামিম হাওলাদার বাহানা খুজছিলেন কিভাবে ছেলেকে বাড়ি থেকে দূরে সরানো যায়। পেয়েও গেলেন রাকিব হাওলাদারকে ব্যবসায়ীক সমস্যার কথা বলে পাঠিয়ে দেন অন্য দেশে। তখন রাহেলা বেগম ছিলেন সাড়ে আটমাসের গর্ভবতী। সেই সুযোগটাই নেন রামিম হাওলাদার। প্রসব বেদনায় যখন রাহেলা বেগম কাতরাচ্ছিলেন তখন রাহেলা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। জমজ ছেলে সন্তান প্রসব করেন রাহেরা বেগম। রামিম হাওলাদার সুযোগ পেয়ে দুই নাতিকে রেখে রাহেলা বেগমকে বের করে দেন বাড়ি থেকে। কিন্তু সন্তানের মায়া ত্যাগ করা সহজ নয়। এক সন্তানকে চুরি করে পালিয়ে যান রাহেলা বেগম। রাইসুর হাওলাদার, রূপক হাওলাদারের এক মিনিটের বড়। রাইসুরকে নিয়ে রাহেলা বেগম পালিয়ে গিয়ে দুঃখে হলেও সব মানিয়ে নিয়ে ছেলেকে নিয়ে জীবন যাপন করতে শুরু করেন। রাকিব হাওলাদার দেশে ফিরার পরে রামিম হাওলাদার বলেন রাহেলা বেগম অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে গেছেন। রাকিব হাওলাদার বাবার কথা বিশ্বাস করতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন সন্তানকে ফেলে গেছে তখন কিছুটা বিশ্বাস করলেও পুরোপুরি করতে পারলেন না। তবুও বাবার কথা মেনে নিয়ে রূপক হাওলাদারকে মানুষ করতে থাকেন। রামিম হাওলাদার ছেলের অগোচরে লুকিয়ে যান তার আরেক সন্তান রাইসুর হাওলাদারের কথা। বাবা হয়েও রাকিব হাওলাদার নিজের আরেক সন্তানের কথা জানতেন না।
রাইসুর ছিলো রাহেলা বেগমের গর্ব। টেনে টুনে চললেও রাইসুর তার মাকে মাথায় তুলে রাখতো। কিন্তু মায়ের গর্ব রাইসুরকে বিপথে নিয়ে যায় একদল নেশাকোর। খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে নষ্ট হতে থাকে সে। আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয় উঠে। নেশার টাকার জন্য মায়ের গায়ে হাত তুললো। রাইসুরসহ ওর বন্ধুদের কে আমরা আটক করি। ওদের রিমান্ডে নিয়ে সব কথা জানতে পারি। রাইসুর অনুতপ্ত, খারাপ বন্ধুদের প্ররোচনায় পরে এসব করলেও করেছে তো? শাস্তি সেও পাবে হয়তো একটু কম একটু বেশি এটাই পার্থক্য। রূপক হাওলাদার! এই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট। সে নিজের সবটা দিয়ে সাহায্য করেছে আমাদের। নিজের মা বাবাকে এক করেছে। রামিম হাওলাদার দাদু হওয়া সত্যেও তার কুকর্ম ফাঁস করার কাছে আমাদের সাহায্য করতে পিছু হাটেনি। বরং নিষ্ঠার সাথে আমাদের রূপক ও তার বাবা রাকিব হাওলাদার সাহায্য করেছেন। তার জন্য আমরা তাদের দুজনের কাছে কৃতজ্ঞ।
রূপকের দুই বন্ধু বাদল ও শান। দুইজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদেরও নিজের পাপের সাথে যুক্ত করেছিলেন রামিম হাওলাদার। তারা কিন্তু আজাদ হোসাইনের ব্যাপারে জানতো না। বাদলকে তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রামিম হাওলাদার পাপের পথে নিয়ে আসেন। বাদল দিকদিশা হারিয়ে রাজি হয়ে যায় কাজ করতে। টাকা আসতে থাকে তার হাতে। তা দেখে বন্ধু শানকে ও টেনে আনে এই পথে। অবশ্য শান কাজ করেনি, কারণ সে কিছু করার আগেই আমরা তাকে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাদল মিশে গিয়েছিলো এসবের সাথে। সে মনে মনে প্লান ও করেছিলো রামিম হাওলাদারকে সরিয়ে নিজে সিংহাসনের রাজা হবে। সুযোগ পেলে সিংহাসনের রাজা হতে দোষ কোথায়? সেটাই বাদল ভেবেছিলো, তাই কাজ করতে থাকে রামিম হাওলাদারের কথা মতো। ভার্সিটিসহ তার বাহিরে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েতের টানতে থাকে এসবে। এক বন্ধু থেকে আরেক বন্ধু এভাবে সবাই সেবন করতে তাকে অবৈধ নেশাদ্রব্য। শর্ত ছিলো প্রথমবার খাওয়ার পরে নিজের টাকায় কিনে খেতে হবে। নেশায় বুধ হওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের তখন কোনো কিছুর খেয়াল ছিলোনা। তাদের একটাই উদ্দেশ্য টাকা চাই নাহলে নেশাদ্রব্য পাওয়া যাবেনা। যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো এরা। আজাদ হোসাইন ও রামিম হাওলাদারের কি শাস্তি হবে তা আদালত দেখবে। পাপ বাপকেও ছাড়েনা। পাপ করার আগে একশোবার ভেবে নিবেন। পরে পস্তালেও লাভ হবেনা। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য। আর কিছু বলার নেই আমার।
মিডিয়া চলে গেলো, কিন্তু বিস্ময়ভাব কারোরই কাটলো না। সবার মধ্যেই গুনজন হচ্ছে। আস্তে আস্তে সবাই চলে যাচ্ছে। এই ভার্সিটির কি হবে আপাতত কেউ জানেনা। কল্প এগিয়ে এসে পূরবির হাত ধরলো, এক হাত পূরবির গালে রেখে বললো- এতোদিন কোথায় ছিলে?
পূরবি স্মিত হেসে বললো- রামিম হাওলাদার ও তার কুকর্মের সব প্রমাণ জোগাড় করতে এতোদিন লেগেছে।
রুশা বাঁধা প্রদান করে বললো- আরেকটা তো বলা বাকি।
পূরবি ভ্রু নাচিয়ে না বলে, কিন্তু কল্প বলে- কি হয়েছে? সত্যি করে বলুন তো।
রুশা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে- আসলে আমরা রামিম হাওলাদারের অবৈধ ব্যবসার সব কিছুর প্রমাণ জোগাড় করতে রামিম হাওলাদারের গোপন আস্তানায় হামলা করি। সেখানেই আমার উপর গুলি করা হয় কিন্তু পূরবি আমার সামনে এসে নিজে গু*লি বরন করে। একটা পূরবির কাধের দিকে লেগেছিলো, আরেকটা আমার বা হাতে। এতোদিন আমরা কাজ করেছি সাথে পূরবি ও আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম কয়েকদিন। ক্ষত সারেনি এখনো, তবে আস্তে আস্তে সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ। পূরবির খেয়াল রাখবেন আমারটার চেয়ে ওর ক্ষত গাঢ়।
কল্প ছলছল চোখে পূরবির দিকে তাকালো, পূরবি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে বাসায় যাও। আমিও আসছি অফিসে কিছু কাজ আছে।
কিন্তু রুশা সেটা হতে দিলো না, কল্পকে বললো- ভাইয়া ওকে নিয়ে যান, বাকি কাজ আমরা সামলে নিবো। ওর রেস্টের প্রয়োজন।
কল্প সময় বিলম্ব না করে পূরবিকে টেনে নিজের বাইকের পিছনে বসায়, বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়
রূপক রুশার গালে হাত রেখে বলে- তুমি ঠিক আছো?
রুশা স্মিত হেসে বলে- আই এম ফিট। চিন্তা করো না।
রূপক মলিন হাসে তা দেখে রুশা বলে- মন খারাপ করোনা, আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে শত হোক তোমার দাদু তিনি।
রূপক চোয়াল শক্ত করে বলে- সে আমার কেউ হয়না, কোনো অবৈধ ব্যবসায়ীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি রূপক শুধুমাত্র আমার বাবাও মায়ের সন্তান। ওই রামিম হাওলাদার আমার কেউ হয়না, কেউ না।
রুশা মলিন হেসে বলে- শান্ত হও, উত্তেজিত হবেনা প্লিজ। তোমার বাবাকে তো তোমাকেই সামলাতে হবে। যাও বাসায় যাও আঙ্কেলকে সামলাও। যতোই হোত উনার বাবা ছিলেন তিনি, সে ভেঙে পরবে তুমি সামলে নিবে।
রূপক কথা না বাড়িয়ে চলে যায়, তার বাবাকে তাকেই সামলাতে হবে। সূর্য নিজেও রূপকের সাথে যায়, সে থাকলে বন্ধুর একটু মনোবল বাড়তে পাারে।
চলবে, ইনশাআল্লাহ✨