সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-১৭+১৮

0
334

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৭)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

রাইসুরের কেভিনের ভিতরে চেয়ারে বসে কাঁদছেন রাহেলা বেগম। রাকিব হাওলাদারের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু তাকে এখন ভেঙে পড়লে চলবে না। স্ত্রীকে সামলাতে হবে। রূপকও বাচ্চাদের মতো মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠছে। পূরবি কি বলবে ভেবে পেলো না। কিছুক্ষণ নিয়াজও সিয়ামের সাথে জরুরি কথা বলে তাদের এখানে থাকতে বলে কেভিন থেকে বের হয়ে গেলো। হাসপাতালের বাহিরে এসে রুশাকে ফোন করে বললো জলদি হাসপাতালে আসো, সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তোমার আর রূপকের কি কাজ তা কি ভুলে গেছো? রূপককে এসে সামলিয়ে কাজ করতে নিয়ে যাও। আমাদের খুব শীগ্রই কেস্ স্লভ্ করতে হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রুশা আসলো হাসপাতালে, রূপককে বুঝিয়ে বের করে ছুটলো তাদের কাজে। রূপক মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে তাই বাইক রুশাই চালিয়ে নিয়ে জায়গা মতো পৌঁছালো তারা। আজও ওইসব ছেলে মেয়েরা নেশাদ্রব্য নিয়ে বসেছে, রূপক ও রুশাকে নিয়ে যাচ্ছে তার কাছে যার কাছ থেকে তারা এসব টাকা দিয়ে কিনে আনছে। রুশা ও রূপকের চরম কৌতূহল কে হতে পারে সেই ব্যক্তি? রুশা নিজের শার্টের বোতামে এমনভাবে ক্যামেরা সেট করেছে যে বুঝার উপায় নেই। আজ একটু হলেও রহস্য সামনে আসবে। যা কিছুই হোক সব তার ক্যামেরায় সেট হয়ে যাবে। সাকিবদের সাথে রুশা ও রূপক একটি পুরনো বাংলো বাড়ির সামনে দাড়ালো। অর্ধ ভাঙা বাড়ি এটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সাকিব ও কাজল আগে ঢুকলো, পিছনের দিকে গিয়ে একটি বন্ধ দরজায় হালকা আঘাত করে নিচু আওয়াজে ডাকতে লাগলো- ভাই আছেন, বড়ো ভাই আপনি কি আছেন?

ভিতর থেকে একটু উঁচু আওয়াজ বের হলো, কে যেনো বললো- কে?

সাকিব ও একটু উঁচু আওয়াজে বললো- ভাই আমরা, আমি সাকিব৷ নতুন লোক নিয়ে এসেছি, তারা মাল কিনবে ভাই।

কিছু সময় অতিক্রম হলো, এরপরে কট করে দরজা খুলার আওয়াজ হলো। ভিতর থেকে শার্ট শরীরে জড়াতে জড়াতে বেরিয়ে এলো এক যুবক মুখ তার অন্ধকারের জন্য অস্পষ্ট। একটু আলোর মধ্যে আসতেই লোকটির মুখাবয়ব স্পষ্ট দেখতে পারলো সবাই। রূপক চমকে উঠলো মুখ দেখে, সামনের লোকটি ও চমকে উঠলো। যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা এমন কিছু দেখবে সে।

রূপক অবাক হয়ে উচ্চারণ করলো- শান!

শান নিজেও অবাক হয়ে বললো- তুই?

রূপকের এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার বন্ধু এসব কাজের সাথে যুক্ত। কোথায় ছেলেটাকে দেখে তো এমন মনে হয়না। সবসময় তো ভার্সিটিতে সবার সাথে হাসি খুশি থাকে। সবসময় অন্যায় কাজ না করার জন্য সবাইকে উপদেশ দেয়। আর সেই ছেলেই কি না এসব অবৈধ নেশাদ্রব্য বিক্রি করছে।

ওদের ভাবাভাবির মধ্যেই রুশা কানের ব্লুটুথে চাপ দিয়ে পূরবিকে ইনফর্ম করে দিলো। পূরবিরা কাছেই ছিলো, পাঁচ মিনিটের ভিতরে ঘিরে ধরা হলো শানের অবৈধ ব্যবসার স্থান ভাঙা বাড়িটি। রুশা শানের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে, নিয়াজ ও সিয়াম সাথে কিছু পুলিশ ফোর্স ও ঘিরে ধরেছে শানকে চারিদিক থেকে, কিছু করারও সুযোগ পাইনি সে। কয়েকজন পুলিশরা সাকিব ও কাজলসহ ওদের সঙ্গীদের ঘিরে রেখেছে। শান বুঝি বুঝে গেলো তার বেঁচে ফিরার পথ নেই, তাই কোনো পরবর্তী চাল বা কথা না বলে দুহাত উপরে তুলে মাথা নিচু করে রাখলো।

পূরবি জেসিকে নিয়ে শান যে ঘর থেকে বের হয়েছিলো সেটা চেক করতে লাগলো, ভিতরে শান ছাড়া কেউ ছিলোনা। তবে ভিতরে অসংখ্য অবৈধ মাল রয়েছে, শুধু ড্রাগস নয় সাথে ইয়াবা ও হাই লেভেলের হুইস্কির বোতল ও রয়েছে, যা কোনো মানুষকে একবার আসক্ত করলে মৃত্যু নিশ্চিত।

আস্তে আস্তে সবাইকে গাড়িতে তুলা হলো, সাকিব ও তার সঙ্গীদের একটা গাড়িতে তুলে কিছু পুলিশ নিয়ে গেলো, নিয়াজ ও সিয়াম সাথে কিছু পুলিশ নিয়ে শানকে ধরে নিয়ে গেলো আরেকটা গাড়ি দিয়ে। রুশা, পূরবি ও জেসি মিলে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। পিস্তল সামনে তাক করে সতর্কতার সাথে সব চেক করতে করতে ছাদে পৌঁছালো তিনজন। পিছন পিছন রূপক ও আছে।

– ম্যাম, আর কেউ নেই। মেবি শান একাই এখানে থাকতো। আর যদি কেউ থেকেও থাকে তাহলে সে এই মুহুর্তে এখানে উপস্থিত নেই। বাকিটা আমরা মিস্টার শানের মুখ থেকে জানতে পারবো। তাকে জিজ্ঞেস করলেই সত্যিটা বের হবে, যদি সত্যি বলে তো ভালো নাহলে আমরা অন্য ব্যবস্থা নিবো। আপনি শুধু অর্ডার করুন। বললো রুশা।

পূরবি কিছু বলবে তার আগেই ধপ করে কিছু পড়ার শব্দ হলো, শব্দটা ছাদের মধ্যেই হয়েছে। সবাই আশপাশে চেক করতে লাগলো, পূরবি কিছু একটা চোখে পড়তেই বাঁকা হেসে রুশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো, রুশা বুঝতে পেরে নিজেও বাঁকা হাসলো। পূরবিকে বললো- চলুন ম্যাম আমরা চলে যাই, আর কেউ নেই। বলতে বলতে রুশা ছাদে অবস্থানরত টাংকির পিছনে এসে দাড়ালো, খপ করে কারো হাত ধরে সামনে নিয়ে আসলো। রূপক আবারো চমকালো। অবাক হয়ে বললো – বাঁদল!

রুশা বাদলের কলার ধরে পূরবির সামনে এনে দাঁড় করালো, পূরবি হালকা হেসে বললো- কি? ভেবেছিলে লুকিয়ে থাকলে দেখতে পাবো না? এতো কাচা মনে হয় তোমার আমাদের? এমনি এমনি আইনের অফিসার হয়নি বুঝলে। রুশা কাজ শুরু করো,,,

পূরবির বলতে দেরি রুশার মারতে দেরি নেই, ঠাস ঠাস করে বাদলের গালে চড় মারলো দুইটা। ব্যাথায় নীল হয়ে উঠলো বাদলের গাল, রূপক চমকে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে মনে বললো- কি শক্তি রে বাবা, এই মেয়েটাকেই আমার চাই।

তোমাকে কিছু এখন জিজ্ঞেস করবো না, যা জিজ্ঞেস করার সবার শানের সাথেই করবো। শাস্তি ভোগ করতে প্রস্তুতি নাও, এসব চড় তো কিছু না, সবতো এখনো বাকি। বললো জেসি।

জেসি বাদলের শার্টের কলার ধরে রেখে রূপককে বললো- চেক করুন তো, যদি কিছু থাকে শরীরে লুকানো।

রূপক বাদলের সব চেক করলো, কিছু পাওয়া গেলোনা। রুশা ঠোঁট উল্টো করে বলে- এমন অবৈধ কাজ করছো, আর সাথে কোনো অস্ত্র রাখোনি, ভেরি বেড। খালি হাতে আমাদের সাথে লাগতে এসেছো? ভাবলে কি করে পালিয়ে যেতে পারবে? ছাড় পাবেনা তোমরা, কেউ ছাড় পাবেনা। শাস্তি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এমন শান্তি দিবো না, জীবনে অবৈধ কোনো কাজের কথা শুনলেও বুক কাঁপবে, তোদের মতো কিছু অমানুষের জন্যই যুব সমাজ খারাপ হচ্ছে, তোরা নিজ হাতে ওদেরকে এসব নেশাদ্রব্য তুলে দিস। সবার আড়ালে এসব করে সবার সামনে ভালো মানুষির মুখোশ পড়ে থাকিস। তোদের ক্ষমা নেই, কোনো ক্ষমা নেই। সারাজীবন এর কর্মফল ভোগ করবি, যদি ছাড়াও পেয়ে যাস তবুও ভোগ করতে হবে। কথার আঘাত সহ্য করতে হবে মানুষের, এই আঘাতের থেকে বড় আঘাত হতেই পারেনা। জেসি এটাতে ধরে নিয়ে চলো, ফলো মি।

রুশা হাঁটা ধরলো পিছনে জেসি বাদলের শার্টের কলার ধরে নিয়ে যেতে থাকলো। পূরবি আবারো আশপাশটা চেক করলো, তারপর রূপককে বললো – তোমার বন্ধুরা এমন, আর তুমি একটুও বুঝোনি?

রূপক অসহায় কন্ঠে বললো- বুঝবো কি? আমি তো কখনো ভাবতেও পারিনি, ওরা এমন হবে। কতো স্নেহ করতাম ওদের বন্ধু হিসেবে, ওরাই কিনা দুষমন বের হলো। আমি ভাবতে পারছি না কিছু, না জানি সামনে আরো কি কি দেখতে হবে। আমি এখন নিশ্চিত হলাম এসবে যারা জড়িত তারা আমাদের আশে পাশেরই পরিচিত সব। শুধু আমরাই চিনতে পারছিনা।

পূরবি কিছু বললো না, বাঁকা হেসে নেমে গেলো, পিছন পিছন রূপকও নেমে গেলো।

চলবে,ইনশাআল্লাহ,,

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৮)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

বেলা এগারোটা, পূরবিদের গোপন আস্তানায় সবাইকে আনা হয়েছে। বাদল শান ও সাকিবদের চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। চারিদিক থেকে সবাই ওদের ঘিরে দাড়ানো। পুরো আস্তানার বাইরে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এই ব্যবস্থাটা পূরবিই করেছে, বাই এনি চান্স যদি পালানোর চেষ্টা করে কেউ, যাতে পালাতে না পারে তাই সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পালানোর। পূরবি নিয়াজ ও সিয়ামকে ইশারা করলো সবাইকে একটা করে পানির বোতল দিতে। সবাইকে একটা করে পানির বোতল দিতেই সবাই ঢকঢক করে পানি পান করলো। পানি খাওয়া শেষ হলে পূরবি হালকা কেশে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করলো। শানের দিকে তাকিয়ে বললো- কতোদিন ধরে চলছে এসব?

শান মাথা নিচু করে নিলো, পূরবি আবারো বললো- আনসার মি মিস্টার শান।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে শ্বান বললো- বেশি দিন না, কয়েকমাস।

ভ্রু কুঁচকে পূরবি বলে- ভার্সিটিতে যে লাশ গুলো পাওয়া যেতো ওইগুলোর ব্যাপারে কিছু জানেন?

শান মাথা নিচু করে না বললো, পূরবি আবারো প্রশ্ন করে- কি কি জানেন আপনি মিস্টার শান? যা জানেন সব আমাদের বলুন। তাতে আপনার শাস্তি একটু হলেও কমবে। সবার আগে এটা বলুন, আপনি এই অবৈধ কাজে কেনো জড়িয়েছেন?

শান বলতে শুরু করলো- আমিও বাদল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যখন চাকরি খুজছিলাম তখন কোথাও চাকরি পাচ্ছিলাম না, বাধ্য হয়ে টিউশনি করাতাম কয়েকটা। কিন্তু এতে আমার চলতো না। কোনো মতে চলতে পারলেও আমার এটা সহ্য হচ্ছিলোনা। আমি সবসময়ই চাইতাম আমার অনেক টাকা হোক। যাতে কখনো কিছুর জন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়। টিউশনি করিয়ে অনার্স পর্যন্ত পড়ে শেষ করলাম। মাস্টার্সে ভর্তি হলাম, টেনে টুনে হলেও ভালোই যাচ্ছিলো দিনকাল। টিউশনির টাকা কিছুটা বাচিয়ে গ্রামে পাঠাতাম মাকে ঔষধ কিনে খাওয়ার জন্য। মায়ের টিউমার ধরা পড়েছিলো কিন্তু টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না, তাই ডাক্তারের কাছ থেকে সময় নিয়ে মাকে ঔষধ খাওয়ানোর কথা বলেছিলাম। সেই ঔষধ গুলোই মা কিনে খেতেন। কিন্তু ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে, নাহলে যেকোনো সময় মায়ের কোনোকিছু হয়ে যেতে পারে। একদিকে আমার টিউশনি করিয়ে যা পাই সব পড়াশোনার পিছনে খরচ হয়ে যায়, কিছুটা বাচিয়ে মাকে ঔষধের টাকা দিতে পারলেও অপারেশনের টাকা জোগাড় করা আমার জন্য কঠিন। আজকালকার যোগে কেউ কাউকে টাকাও ধার দেয়না, আর আমার তেমন আত্মীয়ও ছিলো না যে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাবো। এসব ভাবতে ভাবতেই দিন যেতে থাকে। মাস্টার্সের একবছর শেষ হলো আমার, মাস্টার্স লাস্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম আমি। ঔষধ খেয়ে ভালোই উন্নতি হয়েছিলো মায়ের, ভেবেছিলাম অপারেশন করানোর দরকার পড়বে না। কিন্তু হঠাৎ করেই মা অসুস্থ হয়ে গেলেন। মাথার ব্যথায় বারবার জ্ঞান হারাতেন। ডাক্তার দেখালে সে বলে যতো তারাতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে, যদি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন না করি তো আমার মা,,,, আমার মাকে আর বাচানো যাবেনা। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, কার কাছে সাহায্য চাইবো আমি? তখনই মাথায় এলো রূপকের কথা। রূপক তো মোটামুটি বড়োলোক ঘরের সন্তান, ওর কাছে সাহায্য চাইলে ও হয়তো করতে পারবে। এই ভেবেই আমি হাওলাদার বাড়ি যাই। কিন্তু সেদিন রূপক বাড়িতে ছিলোনা। বাড়িতে শুধু রূপকের দাদু রামিম হাওলাদার ছিলেন। রূপককে না পেয়ে যখন হতাশ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছিলাম তখন রূপকের দাদু জিজ্ঞেস করেন কি জন্য রূপককে আমি খুঁজছি। আমি ইতস্তত বোধ করলেও দাদুকে সমস্যার কথা বলে দেই। দাদু আমাকে টাকা দিবেন বলেন, বিনিময়ে তিনি যে কাজ আমায় দিবেন সেটা আমাকে করতে হবে। আমি মায়ের কথা চিন্তা করে কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যাই। দাদুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার পরে হাসপাতালে এসে মায়ের চিকিৎসা করাই। মা কয়েকদিনের ভিতরে সুস্থ হয়ে উঠেন। মনে মনে রূপকের দাদুর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞতা বোধ করি, সে যদি ঠিক সময়ে টাকা দিয়ে সাহায্য না করতো তো মাকে বাঁচাতে পারতাম না আমি।
কিন্তু কে জানতো টাকা দেওয়ার পিছনে তার স্বার্থ লুকিয়ে ছিলো।

কি কাজ দিয়েছিলেন তোমায়? বলে সিয়াম।

শান আবারো বলতে শুরু করে- দাদু আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যান, কোনো এক অন্ধকার জঙ্গলের ভিতরে পোড়াবাড়ির মতো। বাড়িটি জঙ্গলের খুব গভীরে কেউ কখনো বুঝতে পারবেনা জঙ্গলের গভীরে এতো বড়ো বাড়ি থাকতে পারে। কেউ তো ভয় পেয়ে ওই জঙ্গলের ধারে কাছেও যায়না। কারণ ওখানে বিভিন্ন জীব জন্তু থাকতে পারে। দাদু আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যান রাতের আঁধারে, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাড়ির ভিতরে ডুকে দেখি বাহির যতোটা নিস্তব্ধ ভিতর ততোই কোলাহল পূর্ণ। চারিদিকে গার্ড দিয়ে পাহাড় রাখা। বস্তুা বস্তা ড্রাগস, ইয়াবা। যা বিদেশে পাচার করা হয়, সাথে বাংলাদেশেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। যেমন আমাদের ভার্সিটিতে বিক্রি করেছি আমি। দাদু আমাকে এই কাজই দেন, আমার কাজ হলো ভার্সিটির আশে পাশে ও ভার্সিটির যুবক যুবতিতের এর প্রতি আসক্ত করা, তাদের কাছে মাল বিক্রি করা। আমি দাদুর প্রস্তাবে নাকোচ করি, কিন্তু দাদু আমাকে ছাড় দেননা। তিনি আমার অসুস্থ মাকে মারার হুমকি দেখান, টাকার লোভ দেখাতে থাকেন। একসময় আমারো মনে হয় সত্যিই এই পৃথিবীতে টাকার চেয়ে বড় কিছু হতেই পারেনা, যার কাছে টাকা আছে তার সব আছে। যার টাকা নেই তার কিছুই নেই। আমিও টাকার লোভে পড়ে রাজি হয়ে যাই, শুরু করি নিজের ভার্সিটি ও ভার্সিটির বাইরে বড়োলোকের ছেলেমেয়েদের কে নিয়ে বিক্রি, ওরা ওদের আরো বন্ধুকে নিয়ে এসে আমাকে সাহায্য করতো। খুব কম সময়েই অনেক ছেলেমেয়ে আসক্ত হয়ে যায়, তারা তাদের বন্ধু বান্ধবদের ও নিয়ে আসতে থাকে। এভাবেই চলছিলো আমার কাজ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে রূপক, তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, তার দাদু এই কাজ করেছেন। তিনি এসবের সাথে যুক্ত। রূপক আরো অবাক হলো যখন পূরবিসহ ওর টিমের কারো মুখে অবাক হওয়ার বা চমকানোর কোনো চাপ নেই। নির্লিপ্ত হয়ে তারা বসে আছে এখনো।রূপক না পেরে বলেই উঠলো- আপনারা কেউ চমকান নি কেনো? আপনারা কি এসব আগে থেকে জানতেন?

জেসি সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়- শিওর ছিলাম না, তবে এখন শিওর হয়ে গেলাম। সাথে জবানবন্দি রেকর্ড ও করে নিচ্ছি। আপনার দাদুর ব্যবসাসহ সবকিছুর খুঁজ খবর নিয়ে আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি, তাই চমকাইনি।

নিয়াজ বলে- তো মিস্টার শান, আপনি কিভাবে যুক্ত হলেন সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু মিস্টার বাদল এসবে কিভাবে যুক্ত হলেন?

শান আবারো বলতে শুরু করে- বাদলও আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, ও টিউশিন করে পড়াশোনা করতো। ভালোই চলতো ওর। বাদলের কোনো পিছুটান নেই। যা ছিলো তা শুধু টাকার অভাব, আমিও ভাবলাম একা একা কাজ না করে কাউকে সাথে নিয়ে কাজ করি। তাহলে দ্রুত কাজ করতে পারবো। তাই বাদলকে প্রস্তাব দেই। বাদল প্রথম রাজি হয়নি, পরে ওকে বুঝাই যে দেখ টাকা ছাড়া দুনিয়ায় কিছু নেই। যেমন- কয়েকমাস আগে তোর জিএফ এর বিয়ে হয়ে গেছে, তার বাবা তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়নি কারণ তোর টাকা নেই। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বাদলকে রাজি করাই। ও বলে ভেবে আমাকে জানাবে। আপনারা গতকাল আমাদের ধরে এনেছেন, গতকালই বাদল কাজে যুক্ত হয়েছে। ও তেমন অপরাধ করেনি গতকাল শুধু ঘুরে ঘুরে দেখেছে কিভাবে কি করতে হয়, তাই ওকে ছেড়ে দিবেন প্লিজ।

পূরবি বলে- বাদলের কি শাস্তি হবে সেটা আদালত দেখবে। হয়তো সে কম সাজা পাবে কিন্তু তাকেও পেতে হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ