#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৬
পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে কারোও সুবিসাল কক্ষে আবিষ্কার করলাম,
চারিদিকে তাকাতেই দেখলাম,
এটা কারোও রুম। কিন্তু এতো বড়, রুম দেখে অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলাম। আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলাম, এ কোনো সাম্রাজ্যের চেয়ে কম না। কি সুন্দর সাজানো,নামি দামি ফার্নিচারের সমাহার। আমি ভাবছি এই ঘরটা কার। এত সাজানো গোছানো ঘর তো আমারও না। যদিও এর কিছুই নেই আমার ঘরে।আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছি, কি সুন্দর কারুকাজ করা প্রতিটা আসবাব, সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে নজর কারা বেলকনি। থাই গ্লাসেস করা, একপাশে গার্ডেনিং করা, হুট করেই আজকের ঘটনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম, কান্নার মাঝেই পিপাসা অনুভূত হচ্ছে। এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলাম গ্লাস হাতের নাগালের বাহিরে,তাই উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই মাথা ঘুরে উঠলো,ব্যলেন্স হারিয়ে পরে যাওয়ার আগেই সেই চেনা মানুষটার বুকে নিজের অস্তিত্ব টের পেলাম।
তখন মনে পরলো, আচ্ছা মানুষটা তো আমার স্বামী। আমাকে কি মেনে নিবে উনি? নাকি পরিবার আর জেদের চাপে পরে আমাকে বিয়ে করেছেন? ভাবনার সুতো ছিড়লো কারো ধমকানিতে,
আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরি আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আবার ধমকে উঠে বললো-
— এই মেয়ে তুমি জানো না তুমি অসুস্থ! তাহলে একা একা কেন উঠতে গেলে।নিজের ক্ষতি করতে তোমার এত ভালো লাগে? কি হলো চুপ করে আছো কেন?
একে তো আজকের ঘটনা, তার ওপর এই লোকটার
ধমকানিতে জানি না কি হলো,
অভিমানে চোখ থেকে অশ্রুকনা টপটপ করে ঝরে গেলো। মিঃ চৌধুরির হটাৎ কি হলো বুঝলাম না, অস্থির হয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলেন —
— কি হয়েছে জান, খারাপ লাগছে কি? আমার টেনশন হচ্ছে, চুপ করে আছো কেন?
আচ্ছা পাখি বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি হুট করে জোরে জোরে কান্না করতে করতে বললাম –
— কেন কেন মিঃ চৌধুরী কেন আমাকে বিয়ে করে নিজের জিবনটা নষ্ট করলেন। ওহহ বাকি সবার মতো বুঝি আমাকে দয়া দেখিয়েছেন। থাকবো না আমি এখানে,, চ চলে যাবো, ছাড়ুন আমায়,
এবার মিঃ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললেন,
— এই মেয়ে সেই কখন থেকে কি চলে যাবো, চলে যাবো বলে যাচ্ছো হ্যা। আরেকবার এই কথাটা বলে দেখো, পা
ভেংগে বসিয়ে রাখবো।
খুব দূর্বল লাগছিলো, তাই হুট করেই মিঃ চৌধুরীর বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে ভর ছেড়ে দিলাম, উনি আমাকে আকড়ে ধরে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলেন। আমাকে এক পাশে থেকে জড়িয়ে ধরে পানি খাওয়ালেন। আমি ক্লান্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বিরবির কররে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। এবার উনি আমার দিকে ঝুকে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলতে শুরু করলেন-
— তোমাকে কষ্ট দেয়া প্রত্যেকটা মানুষের জন্য শাস্তি বরাদ্ধ আছে। কেউ ছাড় পাবে না জান। এতদিনের কষ্ট আর পেতে দিবো না জান। আমার ঈশু পাখির জন্য পৃথিবির সকল ভালোবাসা উজার করে দিবো আমি।ভালোবাসি জান। মাই কুইন, ইউ আর মাই কুইন, ইন মাই লাইফ।
কথাগুলো বলতে বলতে মিঃ চৌধুরী কাউকে ফোন করে বলতে শুরু করে!
— ওর হাত পা ভেংগে দাও। কারন সেই হাত দিয়ে আমার জান কে বাজে ভাবে ছোয়ার চেষ্টা করেছে। ওর চোখ তুলে নিবে কারন সেই চোখে আমার মায়াবতীর জন্য লোভ জেগেছিল। ওর কলিজা ছিড়ে নিয়ে আসো, ওর কত বড় কলিজা আমিও দেখবো।সাহিল আমি আজ আসতে পারবো না, কজ আমার জান ওইক, তাই তুমি কি ওর ব্যবস্থা নিতে পারবে না?
— পারবো স্যার, পারবো। তবে তার আগে আমি আমার মতো টর্চার করতে চাই। ম্যম এর গায়ে হাত দিয়েছে, আপনার নুন খেয়েছি, কিছু তো আমার কর্তব্য আছে।
— ইয়া ইয়া সিয়র ( বাকা হেসে)
এদিকে আনটি আংকেল এসেছে, মায়া, সায়ন ভাইয়া, আবির ভাইয়া এসেছে। আপুও এসেছে, একটা নতুন শাড়ি, গহনা পরে এসেছে।আপু মাথায় হাত বুলিয়ে এটা সেটা বোঝাচ্ছে। সাথে সবাইও বোঝাচ্ছে। এর মধ্যেই খবর দিলো, আপুর বাসর ঘর সাজানো শেষ। তাদের সব কাজের জন্যই আলাদা মেইড আর গার্ড আছে। তাই আপু এই রুমে আসার পর সব কাজ সবাই ভাগ করে মিলে মিশে করছে। এর মধ্যে মিঃ চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করলো। খেয়াল করলাম লোকটার ড্রেস চেঞ্জ করা। আচ্ছা এটা তাহলে কার রুম? লোকটা ফোন স্ক্রল করে আনটি কে উদেশ্য করে বললো-
— মম সামিয়া আর সায়ন কে ঘরে দিয়ে আসো। সারাদিনে ওরা ক্লান্ত। আর তোমরাও ডিনার করে ঘুমিয়ে পরো। বাকি রিচোয়েলস কালকে করো।আর মায়া মেইড কে বলে দিবি চিকেন সুপ পাঠিয়ে দিতে ঈশার জন্য।
— ওকে বড় ভাইয়া।
আমি এবার ভাবনায় পরে গেলাম, সবাই চলে গেলে আমি ঘুমবো কোথায়?উনার সাথে নাকি?
ভাবনার সুঁতো ছিরে আনটির ডাকে,
— মামনি, ড. তোমাকে আজকে হালকা হেলদি ফুড খেতে বলেছে,। সুপটা শেষ করে ঘুমবে ঠিক আছে।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। একে একে বিদায় নিয়ে সবাই চলে গেলো। আমি এবার হাত পা গুটিয়ে নেই কারন ঘরে মিঃ চৌধুরী ছাড়া কেউ নেই। ভয় আর অসস্তি যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। হটাৎ আমার নিজের ভাবনার মাঝেই তাকিয়ে দেখি সেই শাড়ি পড়া এখনো।শাড়ি যা তা অবস্থা হয়েছে, আচ্ছা
আমি তো শাড়ি পরে শুতে পারি না, ওই বাড়ি থেকে তো কোন ড্রেস ও আনি নি, এখন কি করবো। হটাৎ মনে হলো কারো নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছরে পরছে। আমি চোখ তুলে তাকাতেই চমকে উঠি। একি উনি কখন এলেন? উনি হুট করে হেসে বলে উঠলেন!
—জান তুমি এত অন্যমোনস্ক কেন থাকো কেন। সেই কখন থেকে ডাকছি ,জামাইটা এদিকে তো,। ( অসহায় ফেস করে)
আমি ওনার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। উনি এত স্বাভাবিক আচরন কেন করছেন?উনি কি সব ভুলে গেলেন? কিন্তু আপাদত এই শাড়ি চেঞ্জ না করলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাবো। তাই ওনার দিকে ফিরে ধির কন্ঠে বললাম,
— শুনছেন?
ওনি বুকে বা হাত দিয়ে শ্বাস নিয়ে বললেন,
— ওফফ জান মেরে ফেলবে নাকি, কেন এত পাগল করো তুমি?
আমি হাবলার মতো তাকিয়ে থেকে, আবার বলে উঠলাম –
— আপুকে একটু ডেকে দিবেন প্লিজ।
উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন!
— কেন? সামিয়াকে দিয়ে তোমার কি কাজ,?
— আব আ আসলে, আমি তো কিছু আনি নি, তাই কি পরবো চেঞ্জ করে?
বলেই মাথা নিচু করলাম উনি
আমার গালে স্পর্শ করে মাথা তুলে বললেন,
—তাকাও জান। তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তুমি কার স্ত্রি, কার অস্তিত্য? তুমি কেন মাথা নিচু করে আছো, আর ড্রেস কি তোমার কম আছে, সামিয়া কে ডেকে দিতে হবে?
— না আসলে আমি কি পরবো তাই,
আর কিছু বলার আগে উনি উঠে গিয়ে চার পার্টের কাবার্ড খুলে দিলেন, আমি তাকাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। একি এত ড্রেস শাড়ি, চুরিদার,টপস,মেচিং জুয়েলারি,কসমেটিক্স, পুরো।
আমি মুখ ফসকে জিজ্ঞাস করে বললাম,
— এ এত মেয়েদের ড্রেস, এগুলো কি আপনার বউ এর জন্য কিনেছিলেন। আমি বোঝা হয়ে এসে আপ!
— তুমি আবার সেইম কথা বলছো? হ্যা আমার বউ এর জন্য কিনেছি, কিন্তু সেটা তুমি। তোমার জন্যই কেনা বুঝেছো? যাও চেঞ্জ করে আসো, খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।
আমি উঠতে নিলেই উনি এসে আমাকে কোলে নিয়ে নেয়। আমি ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,
— কি কি করছেন আপনি? আমি যেতে পারবো। নামান আমাকে,
— না আপনি আবার ঘুরে পরে আমাকে রক্তাক্ত করার জন্য।
উনি কথাটা বলেই আমাকে ওয়াশ রুমে নামিয়ে একটা ওয়াইট গ্লিটার এর শাড়ি হাতে দিলেন,। সাথে প্রয়োজনিয় সব হাতে তুলে দিলেন। আমি লজ্জা পেলেও জিনিসটা স্বাভাবিক ভাবে নিলাম। কারন যে সামনেই খুন করতে পারে তার জন্য এসব কিছুই না। ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলাম। এবার মনে পরলো, আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না এখন কি করবো? তারপর ভাবলাম আপুকে ডেকে নিবো, আপাদত পেচিয়ে বের হই। কোন মতে ফ্রেস হয়ে শাড়ি পেচিয়ে বের হতেই উনি অবাক চোখে তাকিয়ে হা হা করে হাসা শুরু করলেন। আমি লজ্জা পেয়ে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়ে বললাম,
— একটু আপুকে ডেকে দিবেন? আমি না শাড়ি পরতে পারি না।
— পারো না তো কি হয়েছে? আমি পারি, আমি পরিয়ে দিচ্ছি।এদিকে এসো। আর ভেবো না আমি অন্য কোন নারী কে শাড়ি পরিয়েছি। আমি শুধু আমার জানের জন্য শিখেছি। কি হলে এসো?
আমি শাড়ি খামচে ধরে পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
— না না একদন না, আ আপনি আপুকে ডেকে দিন। প্লিয দেখুন আ!
— আহ ঈশু পাখি তুমি এতটা পিচ্চি কেন? তুমি কি জানো না আজ সায়ন আর সামিয়ার বিয়ে হয়েছে, আজ ওদের একটা স্পেশাল রাত জান। স্পেশাল মোমেন্ট এ এখন আমি তোমার বোনকে ডেকে আনবো?
ওনার কথায় লজ্জায়, মাথা নিচু করে নিজেকে নিজেই বকতে লাগলাম, ছি আমি কি থেকে কি বলে নিজেই লজ্জায় পরলাম। আমি আর কিছু ভাবার আগে উনি টেনে নিয়ে গিয়ে শাড়ির আচল কোমরে গুজে কুচি করে আমার হাতে দিয়ে ইশারা করলেন, আমিও গুজে নিলাম। আচল টেনে আবার গায়ে দিয়ে দিলেন।আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
উনি ঘার কাত করে ঠোট কামরে বললেন
— এভাবে পাগল করো না প্লিজ। আম কন্ট্রোললেস।
উনি আর কিছু বলবে তার আগেই মেইড নক করলো।উনি খাবার নিয়ে আমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে সুপ নিয়ে মুখে তুলে দিলেন।
আমাকে ইশারা দিলে খেতে লাগলাম। যদিও আমি আর খেতে পারছি না। তাই না পারতে বললাম –
— প্লিজ আর না। আমার খারাপ লাগছে।
— বেশি খারাপ লাগছে জান?
— হুম। আর খাবো না।
— আচ্ছা আর খেতে হবে না।
তারপর উনি নিজের খাবার খেতে শুরু করলেন। এক পর্যায় আমার ঘুম পেতে
লাগলো, আমিও বেডের এক সাইডে ঘুমিয়ে গেলাম। এর মাঝেই উনি খাওয়া শেষ করে আমাকে কোলে নিয়ে, শুয়িয়ে দিয়ে, কাথা দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— আমার পাখি, ছোট্ট পাখিকে এত ভালোবাসি যে, তাকে বুকে লুকিয়ে রাখতে চাই। আমার ঈশু পাখি,শাড়ি পরতে পারে না, এত বাচ্চা যে শাড়ি সামলাতেই পারে না।পাগলি একটা। আমার সাথে নতুন দিনের সূচনা হবে, বলে গভির আলিংগনে জড়িয়ে নিলেন।
( রিচেক হয় নি। হ্যপি রিডিং) 🥀🥀
#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৭
সকালে ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে পারলাম কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ আছি, কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে।সামিয়া আপুও প্রায় রাতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। তাই আপু ভেবে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম চোখে বললাম –
— আপু তুমি কখন এলে? এত শক্ত করে কেন জড়িয়ে আছো?( ঘুম ঘুম চোখে)
কিন্তু একি আপুর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ঘুম উবে গিয়েছে। মস্তিস্ক ফাকা ফাকা লাগছে। উনি নিশচিন্তে আমাকে জড়িয়ে ধরে মিটমিট করে হাসছে। ইশ লোকটাকে আমি আজ এত কাছে থেকে দেখছি। একটা লোক এত মারাত্বক কিউট হয় কিভাবে। ভাবনার মাঝেই উনি আমার গালে ঠোট ছুঁয়িয়ে দিলেন। আমি বিস্ফরিত নয়নে তাকাতেই আরও শক্ত করে আমাকে কমোড় জড়িয়ে তার বুকের ওপর টেনে নিয়ে আসলেন। ফের বলতে শুরু করলেন –
— গুড মরনিং ” জান। আমার মিষ্টি পাখি। আজকের পর থেকে এভাবেই আমাকে ঘুম থেকে তুলবে।
— কি কি করছেন কি! ছাড়ুন আমায়। দে দেখুন আমার হাস- ফাস লাগছে, অসস্তি ফিল হচ্ছে, প্লিজ ছাড়ুন –
—ও সারারাত আমাকে ঘুমতে না দিয়ে এখন বুঝি ছেড়ে দিবো? আগে আমি ঘুমোবো তারপর ছাড়াছাড়ি।
হায় আল্লাহ আমার তো জড়িয়ে ধরার অভ্যাস। তাই বলে মিঃ চৌধুরীকে আমি সাড়ারাত জড়িয়ে ধরে ছিলাম? ছি ছি, ভাবতেই গাল গরম হচ্ছে। আমি আবার কিছু বলার আগে উনি আমার গালে হাত দিয়ে বললেন-
— ঈশু এটা ঠিক না কিন্তু। দেখো আমি তোমার একটা মাত্র জামাই। কিন্তু তুমি আমাকে উল্টো আদর না করে, এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? ( ইনোসেন্ট ফেস করে)
— মিঃ চৌধুরী অ অনেক বেলা হয়েছে। আর আমি এসবে অভস্ত নই। আমাকে ছাড়ুন, আমি ফ্রেশ হবো।সবাই কি ভা!
—মিসেস চৌধুরী আপনি কি জানেন এই সাম্রাজ্য আর এই মানুষটা পুরো আমি?তাহলে আপাদত আমাকে টাইম দিন। নয়তো রাতে যেটা করেছি এখন তার উল্টোটা করতে বাধ্য হবো।
কি করেছে উনি? আমার সাথে? না না উনি আমাকে জোর করেছে? এসব ভাবনার মাঝেই কান্না করে দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাস করলাম –
— আপ আপনি কি করেছেন রা রাতে? ( কেঁদে উঠে)
— হেই জান লুক পাখি। বিলিভ মি তুমি যা ভাবছো কিছুই না। আমি তোমার দিকে বাজেভাবে তাকাই না পর্যন্ত, সেখানে তোমাকে ছুবো কিভাবে?
— তাহলে কি করেছেন আপনি ( চোখ মুছে)
— জান রিলেক্স। তুমি নেহাত বাচ্চা, এসবের প্রেসার নিয়ো না। আমি জাস্ট তোমার শাড়ি ঠিক করে দিয়েছি। আর জড়িয়ে ধরেছি।
শাড়ি ঠিক করেছে শুনতেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি, ঠিক ভাবেই সেট করা। উনি হুট করেই আমাকে নিচে শুয়িয়ে দিয়ে আমার ওপর ঝুকে পড়ে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললে বাকা হেসে বলে-
—ওপেন ইউর আইস জান। আই সেইড ওপেন।
আমি পিটপিট করে চোখ খুললে ঘরির দিকে ইশারা করে বলে উঠে,
—মাত্র ৬ঃ৫০ বাজে। নতুন বউ বলে ফর্মালিটি করতে হবে হা। জামাই সেবা করলেই হবে। ঈশু আমি যে এত দিন ঘুমতে পারি নি। এখন শান্তির ঘুম দিবো। সো ডোন্ট ডিসটার্ভ।
— আ আমি ওঠি আপনি ঘুমান দেখুন সবা!
— আহ আরেকটা সাউন্ড হলে, বাসর আজকেই সারবো।বলে দিলাম। এই আরাভ কিন্তু যা বলে তাই করে ইউ নো মিসেস চৌধুরী।
বলেই গলায় মুখ গুজে শুয়ে পরলেন। আমিও একটা সময় এই লোকটার এত তাড়াতাড়ি এত পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সারে দশটার দিকে মিঃ চৌধুরীর ঘুম ভাংলে, আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে উঠে পরে। আমার দিকে তাকাতেই দেখে শাড়ি সরে পেটের অর্ধেক অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে, লোকটা বিরবির করে বলতে শুরু করলো-
— তুমি কি জানো? মানুষ এর মানসিক শান্তি কিসে? যখন তার পছন্দের মানুষটা তার হয়ে যায়। তুমি আমার মায়াবতি। আমার মানসিক শান্তি৷ এতটুকু আচ আসতে দিবো না আমার জানপাখির ওপর। যে গম্ভির আরাভ হাসতো না সে সারাদিন তোমার কথা ভেবে হাসে। তার কল্পনায় এক নারী জুড়ে থাকে। এতটা পাগল না করলেও পারতে। এখন এই সোন্দর্য দেখিয়ে কি আমাকে মারতে চাও। কিভাবে আমি এই পিচ্চিকে নিয়ে কন্ট্রোল থাকবো শুনি? ঘুমাও জান, তোমার রেস্ট্রের প্রয়োজন।
বলতে বলতে আমার গায়ে চাঁদর দিয়ে দিলেন। নিজে ফ্রেশ হতে গেলেন। ঘরির কাটা ১২ টার ঘরে গেলে আমি চোখ খুলে আবার সেই চিরচেনা ঘরে আবিষ্কার করলাম। হটাৎ করেই মনে পরলো আমি তো নিজের বাড়িতে নেই, আমার তো বিয়ে হয়েছে কাল। এখন সবাই কি ভাববে? তাই উঠে বসে তাড়াতাড়ি বের হতেই খেয়াল করি শাড়ি ঠিক নেই, তাই চাদর দেয়াতে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমি বুঝতে পেরেছি এটা মিঃ চৌধুরীর কাজ, হয়তো চায় না, ঘুম থেকে উঠে আমি লজ্জায় পরি৷ এখন নিচে যেতে হবে ভাবতেই হুট করে দড়জা খুলতেই চমকে উঠি৷ সামনে তাকাতেই দেখলাম মায়া আর সামিয়া আপু। আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি সব ঠিক আছে তাহলে ওরা এমন হাসছে কেন৷ এর ভিতর মায়া বলে উঠলো–
— হ্য গো নতুন বউ তোমার কি ম্যনার্স নাই? কোথায় বিয়ের পরের দিন চা নাস্তা বানাবে তা না সারারাত বড়ের আদর সোহাগ পেয়ে বেলা করে ঘুম থেকে উঠছো।( চোখ পাকিয়ে বললো)
আপুও মায়ার কান ধরে বললো-
বেশি পেকেছো তুমি মায়া। আমরা কিন্তু তোমার ভাবি হই।
— ভাবি পরে ও আগে আমার ফ্রেন্ড হয়। আর আমি তো আগেই বলেছি, জামাই নেই তাই ওকে একটু খোচাচ্ছি।
আমি লজ্জায় এদিক সেদিক তাকালে আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো-
— জানি না কি ভালো কাজ করেছি। আমার বোনটাকে যে আমি সবসময় চাইতাম নিজের কাছে রাখতে, আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে।এখন আমার আর টেনশন নেই, আমার পাগলিটা আমার সাথেই আছে। আরাভ ভাইয়াকে এর জন্য থেংস দেয়া তো লাগবেই।
— হ্যা হ্যা এসব পরে হবে মম তো বকবে এখন ওকে না নিয়ে গেলে। ও কিন্তু কালকে শুধু সুপ খেয়েছে। মম কিন্তু এবার বকবে। চলো ফ্রেশ হয়ে গোসল করে এসো। দুপুর তো হয়ে এলো।
দুপুর শুনতেই খারাপ লাগছে।এতক্ষন ঘুমিয়েছি। কে কি ভেবেছে? আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা ব্লাক জামদানি শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। আমাকে ইশারা করলো পরিয়ে দিবে। আমিও চলে গেলাম সাওয়ারে। শাড়ি ছাড়া সব পরে বের হতেই দেখি মেইড খুব সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে।আপু আর মায়া শাড়ি গহনা নিয়ে মিঃ চৌধুরীর চয়েস সম্পর্কে আলোচনা করছে।সামনে যেতেই মায়া আর আপু মিলে চুল শুকিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।শাড়ি পড়িয়ে সোনার বালা,জুয়েলারি পরিয়ে দিলো। কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দু- জনেই প্রশংসা করলেন। তারপর নিচে যাওয়ার জন্য বের হই।আমি যত নিচে নামছি ততো অবাক হচ্ছি। কারন পুরো বাড়িটা বিশাল, এতো পুরো সামরাজ্য মনে হলো, আসলে এবার বুঝতে পারছি কেন সবাই আপুকে এত ভাগ্যবতি মনে করেছিলো। আসলেই বাড়িটা খুব সুন্দর, চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে, নিচে যেতেই দেখি, আনটি সহ আরও অনেক মহিলা। মেইডরা কাজ করছে।বাড়ি সাজানো হচ্ছে।আমি নিচে যেতেই আনটি উঠে এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, বলে উঠলেন-
— মাশাল্লাহ এটা তো পরি দাড়িয়ে আছে। আমার আম্মুটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তুমি অনেকক্ষন না খেয়ে আছো চলো আম্মু —
আমি আমতা আমতা করে বললাম –
— আসলে আনটি আমি জানি না এত টাইম কিভাবে ঘুমোলাম। সরি আসলে আন্টি!
— এই যে সেই কখন থেকে কি আন্টি আন্টি করছো শুনি?মা বলবে, তুমি আমার মেয়ে। ওই যে আমার সামিয়া আর তুবাও মেয়ে তাই আমকে মা বলতে হবে।
আমিও মুচকি হেসে বললাম –
—আম্মু, আমি তোমাকে আম্মু বলবো,
— এই তো আমার মেয়ে। এবার চলো খেতে চলো, আরাভ কিন্তু আমাকে বার বার বলেছে তোমাকে খাওয়াতে,
— সরি আম্মু, আমি আর
— আবার এসব বলছো,আর কাল তোমার খাবারেই ঘুমের মেডিসিন ছিলো পাগলি। তাই এত ঘুমিয়েছো। এবার চলো।
আমিও গেলাম খাবার টেবিলে বসার সাথে সাথে এই সেই আইটেম আমাকে দিচ্ছে, কিন্তু আমি এত খাবার খেতেও পারবো না, তাই একটু মুখে নিতেই আপু এসে আমাকে খায়িয়ে দিতে লাগলো।আর মুচকি হেসে বললো-
— জানিস খুব ভাগ্য আমাদের দুই বোনের। এত সুন্দর মনের মানুষ দের কে পেয়েছি। কত ভালোবাসে বল তো।
বিপরিতে আমিও মুচকি হাসলাম। তারপর আম্মু একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।সবাই এই সেই গিফট দিলো। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম সবাই কি মিশুক, আমাকে রুপ নিয়ে প্রশংসায় করছে। এটা কি সত্যি। কিন্তু মা, দাদি যে বলে আমাকে ভুত ছাড়া কিছুই লাগে না। ভাবতেই বুক ভারি হয়ে এলো , আচ্ছা ওই বাড়িতে এখন নি অবস্থা। অনেক্ষন বসে বোর হলাম। আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম সেইম অবস্থা। মায়া বুঝতে পেরে আমাদের কে নিয়ে ছাদে গেল। বাড়ির সব ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। আমি কাঠগোলাপ দেখতে পেয়ে থেমে গেলাম।ছিড়তে গিয়ে থেমে গেলাম। যদি বকা খাই।
চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম এই সাইড ফাকা। আচ্ছা ওরা গেলো কই? চারিদিকে তাকাতেই দেখলাম, সব দিকেই রাস্তা আমি কোথায় খুজবো ওদের? ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে গেলাম৷ আরেক পা এগোতেই কেউ হেচকা টানে দেয়ালে চেপে ধরলেন, আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে, হালকা চেচিয়ে উঠলাম-
— আহ জানপাখি গো, আমি তোমার জামাই। কেন ভয় পাচ্ছো? এই বাড়ি কেন এই পৃথিবিতে আমি ছাড়া আমার জানকে এমন হুটহাট করে করে কেউ ধরার সাহস আছে কি?
— আপনি। আপনি সব সময় এমন করেন কেন? ( জোড়ে শ্বাস নিয়ে)
— ইশ এত সুন্দর কেন তুমি। তুমি কি জানো? এই কাজ পাগল ছেলেটা কাজ বাদ দিয়ে সারাটা সময় ধরে বউ কে চোখে হারায়। আমার পিচ্চি পরি, তুমি সম্পুর্ণা আমার।
আমি নিশপলক তাকিয়ে আছি৷ এই কি সেই লোকের মুখে শোনা হিংস্র আরাভ? নাকি অন্য কেউ?উনি হুট করেই আমার কানে সেই কাঁঠগোলাপ দিয়ে দিলেন। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছি ওনাকে, কি আছে মিঃ চৌধুরীর মাঝে যা আমাকে মোহিত করে। আমার মনের কথা, আমার পছন্দের জিনিস্টার খবর ও সে রাখে।
— আমার মায়াবতি, কাঁঠগোলাপ কি জানে সে যেমন আছে তাতেই আমি শেষ আর এখন সে এই কাঁঠগোলাপ যে তার স্পর্শে মুগ্ধ। মায়াবতি তুমি শুধু আমার। খুব শিগ্রই সে সম্পুর্নরুপে আমার হবে।
আমি ওনার কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ভাবছি,
— এই মানুষটা কি সত্যি আমার, সত্যি কি আপুর বলা কথা আজ সঠিক হচ্ছে। যে আমাকে আগলে রাখবে।
( রিচেক হয় নি। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)