সে আমার মায়াবতি পর্ব-১৮+১৯

0
533

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৮
তখনকার কথা ভাবতেই লোকটার ওপর একরাশ লজ্জা ভর করছে। উফফ লোকটার লজ্জা সরম বলতে কিছুই নেই। তখন জোড় করে চুমু খাওয়ার সময় আপু, মায়া, এসে হাজির হয়। বেহায়া লোকটা তবুও ছাড়ে নি।জোড় করে ছাড়া পেয়েও রেহাই পাই নি আপু আর মায়ার লজ্জাজনক কথার থেকে৷ আজকেই রিসেপশন হবে। সেই অনুজায়ি আমাকে আর আপুকে বিউটিশিয়ান দিয়ে সাজানো হচ্ছে।আপু আর সায়ন ভাইয়ার সেইম কাপল ড্রেস। আমার আর মিঃ চৌধুরীর সেইম কাপল
ড্রেস।আমাকে ব্লাক লেহেঙ্গার সাথে ব্লাক ডায়মন্ড জুয়েলারি
স্মোকি মেকাপ করেছে।আপুকে ব্লু লেহেঙ্গার সাথে মেচিং জুয়েলারি আর মেকাপ করেছে। আপুকে কোন অংশে কম লাগছে না। আপু আমাকে দেখে কপালে চুমু খেয়ে প্রশংসা করেছে।আয়নায় তাকিয়ে দেখি সত্যি নিজের রুপ চেঞ্জ৷ একি মিঃ চৌধুরী আমাকে চিনবে তো?নিজের ভাবনায় নিজেই হেসে দিলাম। তার মাঝেই তুবা এসে হাজির। কালকের বিষয় নিয়ে নানাভাবে লজ্জা দিচ্ছিলো। নিচে ডাক পরলে মায়া, তুবা সহ আরও মেয়েরা মিলে নিচে নিয়ে গেলো।পুরো বাড়ির লুক চেঞ্জ। কত মানুষ গিজ গিজ করছে। অবশ্য করবেই তো ওনারা হাই সোসাইটির মানুষ। তা ছাড়া মিঃ চৌধুরীর ক্ষমতায় একজন পলেটিসিয়ান তার সাথে কত মানুষ এর যোগ সুত্র রয়েছে।ভাবনার সুতো ছিড়লো কোন এক সুদর্সন পুরুষ এর চাহনি তে। আমি অবাক হয়ে ভাবছি এই সম্পুর্ন লোকটা এখন থেকে আমার। ব্লাক শেরয়ানি,ফর্সা হাতে ঘরিটা কি মানানসই লাগছে। চাপ দাড়ি তে মানুষটাকে কি সুন্দর লাগছে। ভাবনায় মত্ত থাকা অবস্থায় কেউ হাত স্পর্শ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো-

— আমি ভাবতে পারি না জান। এই সুন্দর রমনিটা আমার। আচ্ছা ঈশু পাখি তুমি এত সুন্দর কেন? হ্যা।এই প্রেমিক পুরুষ এর মনে আগুন জ্বালিয়ে তুমি দিব্বি সেজে ঘুরে বেরাচ্ছো। এই শাস্তি তুমি পাবে। আজ রাতে ঘরে এসো। কোন ছাড়াছাড়ি নেই পাখি।

— আ আমি যাবো না ঘরে। ( চোখ খিচে বন্ধ করে)

— সময় বলে দিবে।আমার মিষ্টি পরি।

লোকটার কথায় জমে গিয়েছি। সত্যি কি উনি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে জোর করবে?
ভাবনার ভিতর আনটি এসে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন। নিজের কাজল নিয়ে আমার কানের নিচে লাগিয়ে দিলেন। দুই হাতের বালা খুলে আমার হাত ধরতেই বলে উঠলাম-

— আম্মু কি করছো? আমার এসব লাগবে না। তু!

— মা হয়ে মেয়েকে দিচ্ছি তুই কি মানা করবি মা? তুই আর সামিয়া আমার কাছে বউ মা না। আমার মেয়ে। তাই না করবি না।

— আম্মু এগুলো তুমি পরো। তোমাকে মানিয়েছে। আর এমনিতেই আমাকে এত গহনা দিয়োছো সকালে।

— আমার মা কে দিলাম সে ফিয়িয়ে দিচ্ছে? আমার খুব মন খারাপ হচ্ছে কিন্তু।

আম্মুর কথায় সবাই মুচকি হাসছে। আপুও ইশারা দিলো। আমিও হালকা হেসে হাত বারিয়ে দিতেই আম্মু বালা পরিয়ে দিলো। তারপর আপুর কাছে গিয়েও সেইম কাজটা করলো। সবাই কড়তালি দিলো। একে একে সবাই আনন্দর মাঝে আমার ভয় হতে শুরু করলো, মিঃ চৌধুরীর কথায় সত্যি কি তিনি রাতে! না আর ভাবতেও পারছি না। এর ভিতরে দেখলাম একটা মেয়ে দৌরে এসে মিঃ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো।আমি সহ বাকি সবার চোখ ও ওই দিকে। উনিও কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। কেন জানিনা খুব খারাপ লাগলো।উনি মেয়েটাকে নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো-

— মায়াবতি?

আমি জানি উনি আমাকে এই নামে ডাকে তাই উত্তর দিলাম-

— হুম।

— ও হচ্ছে এনা। আমার ফ্রেন্ড। ইংল্যন্ড থাকা কালিন ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়। বিয়ের কথা জানতো না৷ তাই হুট করে এসেই পাগলি টা সারপ্রাইজ দিলো।

— মায়াবতী? এ আবার কেমন নাম আরাভ। আর তুমি তো কোন স্পেশাল কাউকে বিয়ে করতে চাইতে লুক আমার মতো , তাহলে ওর মাঝে কি আছে এমন?

উনি আগের কথা গুলো জোড়ে বললেই লাস্টের কথা গুলো বিরবির করে বললো।কেন যানো আমার ভালো লাগলো না মেয়েটাকে। আমিও তাই সালাম দিয়ে বললাম –

— আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু। ভালো আছেন?

— হ্যা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো আছি।

— তোমার ভালো থাকা যে বেশি দিন টিকতে দেয়া যাবে না। কারন আমি আরাভ কে ভালোবাসি ও শুধু আমার। ( মনে মনে) তো ঈসা তোমার বাড়ি থেকে কেউ আসে নি, আই মিন মা বাবা এনি ওয়ান?

আম্মু আব্বুর কথায় মনটা ছেয়ে গেলো বিষাদে। সত্যি তো আম্মু কি কখনোই আসবে না? আর চাচ্চু চাচিমাও কি আসবে না? এক দিনেই পর করে দিলো আমায়?

মনে মনে কথা বলার সময় চোখের কার্নিস বেয়ে এক ফোটা অশ্রুজল গড়িয়ে পরলো। হটাৎ নিজের গালে কারো হাতের স্পর্শ পেতে চোখ খুলতেই দেখি মিঃ চৌধুরী, উনি কিছু ইশারা করতেই সামনে তাকিয়ে দেখি, দাদি, আম্মু, চাচিমা, চাচ্চু আর রাইসা এসেছে। মনে হয় কত জনম দেখি না। আমি ভুলেই লেগাম এটা আমার সদ্য বিয়ে করা শ্বশুর বাড়ি। দৌরে গিয়ে চাচ্চু আর চাচিমা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করতে লাগলাম৷ আম্মুর কাছে যেতেই দাদি আম্মুকে টেনে নিয়ে গেলো রাইসা হা করে বাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে আমার কানের কাছে এসে বললো

— এই সব কিছু আমার হতো। তুই সব কেড়ে নিয়েছিস। তুই কি ভেবেছিস এভাবে সুখি হবি? হবি না। এই যে রানির মতো সাজ সেজেছিস এগুলো বেশি দিন থাকবে না দেখিস।

— ছি রাইসা এত কিছু করেও তোর মনে এতটুকু অনুসোচনা নেই?

— না নেই। যতদিন তোকে আমি পথে না বসাবো আমার শান্তি নেই৷ দেখি কয়দিন তোর এই ভালো মানুষি টিকে।

বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। আমি পিছনে তাকাতেই দেখি মায়া আর তুবা দাড়িয়ে আছে।

— তোর এই জল্লাদ বোন জিবনেও ঠিক হবে না৷ (তুবা)

— হ্যা দেখো নি, কাল এত কিছু করেও লজ্জা নেই ( মায়া)

— আচ্ছা চল এবার খেতে ডাকছে সবাই। ( তুবা)

খাওয়ার জায়গায় ফ্যমিলির সবাই বসেছে। আম্মু, দাদি,চাচ্চু,চাচিমা, রাইসা,আপু,সায়ন ভাইয়া, তুবা, তুহিন ভাইয়া, মায়া, আবির ভাইয়া,আম্মু আব্বু সবাই৷ মিঃ চৌধুরীর সাথে এনা বসতে চেয়েছে তার আগেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করেছে।আমি লজ্জা পেলেও সবাই মিটমিটিয়ে হেসে সায় জানালো। কিন্তু এর ভিতর লেহেঙ্গার স্লিভলেসের কারনে আমার পেটে আর কমোড়ে রেশ হয়ে গিয়েছে। একে তো স্লিভলেস তার ওপর আবার ভারি ড্রেস। কাউকে কিছু বলি নি৷এখন আরও যন্ত্রনা হচ্ছে৷ কোন মতে খাওয়া শেষ করলে, সবার সাথে টুকটাক কথা বলা শেষে আমাকে আর আপুকে ঘরে দিয়ে এলো। ঘরে এলেই সেই মিঃ চৌধুরীর বলা কথা মনে পরে গেলো। তারাহুরা করে কি করবো ভাবতে ভাবতে যেভাবে আছি ওই ভাবেই শুয়ে পরলাম। কিন্তু একি ঘুম ও আসছে না। দড়জায় আওয়াজ পেয়ে চোখ বন্ধ করে মুখের ওপর ব্লেনকেট দিয়ে ঢেকে নিলাম।
উনি আমার অবস্থা দেখে ঠোট কামড়ে হেসে আমার দিকে এগিয়ে লাইট অফ করে দিলেন। আমি তবুও চোখ খিচে অফ করে রাখলাম। এর ভিতরেই ভুতের ভয়াবহ সাউন্ড পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে সামনে হাতরে হাতরে বলে উঠলাম –

— মিঃ চৌধুরী আ আমার ভয় করছে প্লিজ। আপনি কোথায়?

উনি হুট করেই আমাকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,

— হুস জান আম হেয়ার। ভয় পেয়ো না। আমি এই তো।

বলার এক পর্যায় আমার কোমড় ধরে টান দিলে আমি ব্যথায় হালকা আর্তনাদ করে উঠি। উনি আমাকে ছেড়ে লাইট অন করে আমার কাছে এসে বলতে শুরু করলেন –

— কি হয়েছে। চিৎকার করলে কেন? ভয় পেয়েছো? আর তুমি ড্রেস চেঞ্জ করো নি কেন?

— আব আমি?

— এই এক মিনিট এদিকে এসো, তোমার পেট লাল হয়ে আছে কেন? জান কাম। আমি ডাকছি তোমায়।

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি লেহেঙ্গার ওরনা সরে পেট কোমড় দেখা যাচ্ছে। তাকাতেই দেখি লাল হয়ে রেশ উঠে গিয়েছে। আমার অভ্যশ ব্যথা পেলেই কেঁদে দেই। তাই হলোও ও তাই৷ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। উনি আমাকে টেনে এই সেই বলে বেডে বসিয়ে একটা এনটেসেভটিভ এনে লাগিয়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই নিজেই বলে উঠলো-

— ঈশু জান ট্রাস্ট মি, আমি যাস্ট মলল টা দিয়ে দিবো। আর আমি তখন মজা করেছি। তোমার অনুমতি ব্যতিত আমি তোমাকে ছুঁবো না জান। আই প্রমিস। বাট এখন এটা না দিলে আরও রেস হবে। প্লিজ জান টাচ করবো না।

আমি অবাক দৃষ্টিতে ভাবছি, যেই মানুষ টা সবার সামনে নিজের মতামত অনুজায়ি কাজ করে সে আমার থেকে অনুমতি নিয়ে তার বিয়ে করা বউ কে টাচ করবে? এটা কি আমার ভ্রম? আমি কিছু বলার আগে আমাকে টানে নিজের হাতে এনটেসেভটিপ লাগিয়ে দিচ্ছেন ফুঁ দিয়ে। মনে হচ্ছে আমি একটা ছোট বাচ্চা। এক সময় ওনায় পাগলামি গুলো দেখতে দেখতে ওনার এক হাত খামছে ধরে পাড়ি জমালাম আমার ঘুমের রাজ্যে।

#চলবে____________

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৯
কালকের আর আজকের স্ট্রেস এর কারনে আমি বসে থেকেই উনার বাহু খামছে ঘুমিয়ে গিয়েছি। কিন্তু উনি নিজের মতো বকবক করতে করতে আমার কোমড়ে মলম লাগিয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখে আমি গভির তন্দ্রায় রয়েছি৷ লোকটা আমাকে আরেকটু কাছে টেনে এনে৷ গালে হাত দিয়ে সামনের চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললেন —

— কি সুন্দর নিজের ঘুমে মত্ত তুমি। কিন্তু এদিকে যে আমি তোমার দ্বহনে জ্বলে পুরে ছাড়খার তার খবর কি আছে তোমার কাছে। তোমার মধ্যে এমন কি আছে জান, যা আমাকে নেশালো করে তোলে? আমার ঈশু পাখি সৌন্দর্যে পরিপূর্না। আমার শ্যমলতা। সে আমার মায়াবতি, খুব যতনে কাছে আগলে রাখবো তোমায়। কিন্তু এখন তোমার ড্রেস চেঞ্জ করা জরুরি পাখি৷ নয়তো আরও রেস হবে।

উনি আমার গালে হালকা চাপড় দিয়ে বলে বলে উঠে-

— জান ওঠো। চেঞ্জ করে নাও। নাহলে শরির খারাপ করবে। ঈশু পাখি তুমি কিন্তু আমাকে এবার ইচ্ছে করে জ্বালাচ্ছো।তুমি জানো আমি শুধু তোমাতেই দূর্বল তাই সুযোগ নিচ্ছো জান। ঈশা জান ওঠো –

আমি পিটপিট করে চোখ খুলে ওনার হাতের ওপর হাত রেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম –

— মিঃ চৌধুরী প্লিজ আমাকে একটু ঘুমোতে দিন। প্লিজ প্লিজ। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

বলেই ওনার বুকে মুখ গুজে দিলাম। সাথে সাথে চোখের পাতায় ঘুমের পরি ভর করেছে। এদিকে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,

— উফফ, এই মেয়েটা দেখি মেরে ফেলবে আমাকে। এই ঘুম ঘুম কন্ঠে আমাকে সিডিউস করছো তুমি? ঘুমোও জান, এমনিতেই সারাদিন অনেক স্ট্রেস গিয়েছে।গুড নাইট আমার পাখিটা।

লাস্টের কথাটুকু বলতে বলতে উনি আমার কপালে চুমু খেলেন। আমাকে ঠিক ভাবে রেখে নিজে চেঞ্জ হতে গেলেন।

—————————————-

আবার একটা নতুন দিনের সূচনা হলে। সেই একি দিনের মতো মিঃ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম৷ আমি অপলক তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে, এত পারফেক্ট কিভাবে উনি হতে পারে?আচ্ছা আমি কি ওনার জোগ্য হতে পারবো।ভাবতে ভাবতে যে আমার হাত কখন ওনার গালে চলে গেলো আমি টের পাই নি। ধ্যন ভাংলো ওনার ঘুম ঘুম কন্ঠে —

— শেষ এ কিনা আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলে ঈশু। এটা কিন্তু ঠিক না। এমন ভোলাভালা ছেলেটার ইজ্জত এর সুযোগ নিচ্ছো?

আমি হাবলার মতো তাকিয়ে ভাবছি আমি কি করলাম। শেষ এ নিজের হাতের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। এমা আমি ওনার গাল স্পর্শ করলাম কখন? ভাবনার মাঝেই উনি আমাকে ঘুরিয়ে আমার ওপর ঝুঁকে গেলেন। তারপর আমার গালে নিজের গাল ঘষতে ঘষতে বলে উঠলেন–

— প্রতিটা সকাল যেন তোমায় ঘিরে হয়। আমার পূর্নতার প্রাপ্তি যেন তোমার কাছে বাধা পরে। আমার সব সুখ তোমার হোক মিসেস চৌধুরী।

একে তো ওনার এত কাছে আসা। তার ওপর ওনার গালের চাপ দাড়ির খোচায় হালকা ব্যথা পাচ্ছি। আমি অস্ফুটোস্বরে বললাম —

— কি করছেন কি। দে দেখুন!

— দেখছি তো জান, লুক আমি দেখছি আমার ঈশু কে।

–আপনি দিন দিন কে কেমন হয়ে যাচ্ছেন। প্লি প্লিজ ছাড়ুন আমার অসস্তি হচ্ছে।

— এই টুকুতেই এই অবস্থা তাহলে বাকি আমাদের বাস!

— মিঃ চৌধুরী আমি নামাজ পরবো। ছাড়ুন না!

— আম ইমপ্রেস জান। তার আর কত গুন আছে আমার অজানা? ( গালে চুমু খেয়ে)

উনি সরে যেতেই আমি উঠতে গেলে খেয়াল হয়, আমি তো এই ড্রেসে ছিলাম না? একটা কূর্তি পরা। আমি তো কাল লেহেঙ্গা, আর ভাবতে পারলাম না চোখ বড় বড় করে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম মিঃ চৌধুরী মিটমিটিয়ে হাসছে। বাকা চোখে তাকিয়ে বললো –

— কি হয়েছে? আই নো আম ডেসিং, হ্যন্ডসাম, তাই বলে নিজের বড়কে এইভাবে নজর দিবে?

— আ আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করেছে? আ আপনি?

— জামাইটা আমি তাহলে কে করবে শুনি? (উনি দুষ্টু হেসে বললেন)

— আমি লজ্জায়, অভিমানে নিচে তাকিয়ে আছি, ভাবছি ওনার বলা কথা গুলো, উনি তো কাল প্রমিস করেছে আমাকে অনুমতি বিহিন ছোঁবে না। তাহলে? সব কি মিথ্যা ছিলো-
ভাবনায় থাকা কালীন উনি এসে আমার চুল ঠিক করতে করতে বললেন –

— সম্পর্ক যেমনি হোক তার জন্য চাই বিশ্বাস। আমি কথা দিয়েছি তোমাকে তাই যা কিছুই হোক কথার নরচড় হবে না। আর কাল যদি ড্রেসটা না চেঞ্জ করতে তাহলে তুমি কষ্ট পেতে। এত ভারি ড্রেসে তোমার ঘুম হতো না। আর আমি তোমাকে ডেকেছিও কিন্তু তুমি গভির ঘুমে ছিলে তাই আমি!

— তাই আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ! ( কাদো কাদো ফেসে)

— সসস না জান, আমি না মায়া তোমাকে চেঞ্জ করে দিয়েছে। ( ঠোঁটে আঙুল দিয়ে)

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবছি সত্যি মানুষটা কত সুন্দর। আচ্ছা কেউ কি এতটা সময় দেয় ওনার মতো। আমি জানি না, কিন্তু আমি বুঝে গিয়েছি আমি ভাগ্যবতি বড় ভাগ্যবতি লোকটাকে পেয়ে।
ভাবতেই মুচকি হাসি দিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে –

— এই মেয়ে এভাবে হাসবে না। এখানে ঝড় বয়ে যায় ( বুকে হাত দিয়ে)

আমি একটু সাহস নিয়ে দু- পা পিছিয়ে গিয়ে বললাম,

— তাহলে আমি আরও হাসবো মিঃ চৌধুরী। এখন থেকে আপনাকে জ্বালানোর অস্ত্র আমি পেয়েছি চৌধুরী সাহেব।

বলেই আমি একটা হাসি দিয়ে দৌরে ওয়াস রুমে চলে গেলাম। উনি আমাকে ধরার আগেই আমি ধরাম করে দড়জা মেরে দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম।
উনি মাথা চুলকে বিরবির করে বললেন –

— আমি জানি জান একটু একটু করে তুমি আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছো। বেশ আমি অপেক্ষায় থাকলাম তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য। ভালোবাসি পাখি।

আমি ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নিলাম। এবার ভয় হচ্ছে আচ্ছা উনি কি আমাকে তখনকার জন্য বকবেন? না আপাদত এসব ভাবার সময় নেই নামাজটা শেষ করতে হবে। এমনিতেই বিয়ের ঝামেলায় কদিন নামাজ পরতে পারি নি। তাই আস্তে আস্তে দড়জা খুলে উঁকি দিয়ে দেখলাম না নেই। তাই বের হয়ে ঘরে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম নেই উনি। নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। নামাজ পড়া শেষ হতেই পিছনে ফিরতেই দেখি উনি দাড়িয়ে টুপি খুলছে। জিনিসটা দেখে খুশি হলাম যে উনিও নামাজ পরে৷ আমাকে
হুট করেই টেনে এনে কপালে চুমু খেলেন। আমিও চোখ বন্ধ
নিলাম। তারপর কিছু মনে পরতেই বললাম –

— শুনছেন?

— হুম বলো জান।

— আমরা কি চাচ্চুর বাসায় যাবো না?

— যাবো। কালকে যাবো।কেন জান?মিস করছো?

— হুম খুব।

— আচ্ছা তাকাও এদিক। তুমি এবাড়ির বড় বউ৷ আমার রানি। তোমার যখন মন খারাপ হবে যেতে পারবে কিন্তু!

— কিন্তু কি?

— রাতে কোথায় থাকতে পারবে না।

— কেন?

— কারন আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই।

এটা শুনে কিছু বলার আগেই ওনার কল এলে কথা বলতে যায় বেলকানিতে। আমি সুযোগ বুঝে ঘরের বাহিরে চলে আসি। নাহলে এই লোকটা আমাকে জ্বালাতন করবে। নিচে নামতেই দেখি মেইডরা কাজ করছে। আপু আর আম্মু হেল্প করছে। আমি গেলে আমাকে কাজে হাত দিতে দেয় না। সায়ন ভাইয়া আর আব্বু গল্প করছে। আমি গিয়ে সালাম দিতেই মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। খাবার টেবিলে বসার সময় মিঃ চৌধুরী ও বসে। আমি বসার আগে এনা এসে মাঝখানে বসতে নিলে আমি বসে পরি। আর যাই হোক আমি আমার মিঃ চৌধুরীর সাথে কাউকে ভাগ নিতে দিবো না। সে যেই ফ্রেন্ড হোক আর যা হোক। খাওয়ার মাঝেই মিঃ চৌধুরী বলে উঠে!

— ড্যড কাল অফিস যেতে হবে। কাল সিলেকশন মিটিং আছে মিঃ রয় এর সাথে।

—কাল আমি সামলে নিতে পারবো। আর তোমার মাত্রই বিয়ে হলো, আপাদত আমার আম্মুটাকে সময় দাও। ( আব্বু)

— হ্যা ভাইয়া তুমি গেলে যাও। আমি আমার বউ কে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। ( সায়ন ভাইয়া)

ভাইয়ার কথায় সবাই হেসে দিলেও আপু ভিসন লজ্জা পেলো। মায়া বলে উঠলো-

— তাহলে কি ঈশা ভার্সিটি যাবে না? ও না গেলে আমার ভালো লাগবে না। ( অসহায় মুখ করে)

— একদম না। আমার বউ যতটুকু চাইবে ততো পরবে।এই সংসার সামলানো লাগবে না এখন। বুঝেছো জান।

ওনার কথায় মিঃ চৌধুরীর প্রতি সম্মান আরোও বেড়ে গেলো।আমার ইচ্ছা ছিলো অনেক পরবো।কিন্তু বিয়ের পর ভেবেছি যদি পরতে না দেয়। ওনার কথায় আমি মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করি।এর মাঝেই আংকেল বলে ওঠে –

— আজকে দুপুরে রহমান সাহেব আর তার ফ্যমিলি আসবে। আম্মুরা তোমরা তো চিনো না রহমান সাহেব আমার ছোট বেলার বন্ধু আর বিসনেস পার্টনার। আর আমার দুই আম্মুকে দেখতে আসবে। ওর মেয়েটাকে তো হারিয়ে ফেললো তাই আমার মায়াটাকে অনেক ভালোবাসে। আজ থেকে দেখো আম্মুরা ওরা তোমাদের দু-জনকেও আপন করে নিবে।

আমি কিছুতেই কিছু বুঝলাম না। তাই চুপ করে সায় জানালাম। খাওয়ার এক পর্যায়ে মেইড কফি নিয়ে মিঃ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে আসার সময় এনা পা বারিয়ে দিলে মেইড এর হাতে থাকা কফি পুরোটা আমার হাতে পরে যায়। আমি আর্তনাদ করে ওঠি। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ বুঝে উঠতে পারে নি।সবাই দাঁড়িয়ে যায়। হাত লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে। আমি কান্না করে দিয়েছি। মিঃ চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে আমার হাত টেনে নিয়ে পাগলের মতো পানি খুজছে। পানি দেয়ার সাথে আরও জ্বলে উঠলে আমি হাত ধরে কেঁদে উঠি। আপুও অস্থির হয়ে যায়৷ আব্বু ডা. কল করে দেয়। মিঃ চৌধুরী একটা মলম হাতে লাগিয়ে দিলে আমি বলে উঠি –

— খুব জা জ্বালা করছে মিঃ চৌধুরী। আমি এটা দিবো না প্লিয। ( কেঁদে দিয়ে)

— না জান বেশি লাগবে না। এইতো দেখ। প্লিয পাখি ডোন্ট ক্রাই।

বলেই ফু দিতে দিতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমি সহ বাড়ির সবাই অবাক। ওনার আচরনে সায়ন ভাইয়া, আম্মু, আব্বু সহ মেইডরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের জানামতে মিঃ চৌধুরী কারো জন্য এত পজেসিভ নয়। আর এদিকে এনা সয়তানি হাসছিলো। কিন্তু মিঃ চৌধুরীর এত পাগলামি আর কেয়ার দেখে, রাগে ফুসছে আর বিরবির করে বলছে-

— ছাড়বো না। আমি তোমায় ঈশা। আমার কত বছরের ভালোবাসা তুমি এক নিমিশে কেড়ে নিবে? হবে না। এই তো সবে শুরু, এর পরের গুলো নিতে পারবে তো? হয় ওর লাইফ থেকে সরাবো নয়তো এই পৃথিবি থেকে সরিয়ে দিবো, আরাভ ইস মাই। শুধু আমার। ( সয়তানি হেসে)

#চলবে____________