#সে_কি_জানে?
#Writter: Ishanur Tasmia [Mira]
#part: {18}
.
.
.
খোলা আকাশের নিচে দোলনায় বসে আছি আমি।।চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।।যেন বুকে অনেক কষ্ট জমা হয়ে আছে।।আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান।।আমার কষ্ট দেখে তিনি কাতর।।কিন্তু তা প্রকাশ করছেন না।।যথা সম্ভব হাসার চেষ্টা করছেন উনি।।যেন হাসি দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছেন” আমি ঠিক আছি মিরা।।এত কাঁদার কি আছে?? দেখো হাসছি আমি”।।কিন্তু #সে_কি_জানে তার হাসার কারন আমি জানি।।আমার কষ্ট দূর করার জন্য যে,,, সে হাসার চেষ্টা করছে তা আমি বুঝতে পারছি।।হয়তো জানে!!কিন্তু তাও ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উনি।।যদি একটু হলেও কষ্ট কমে আমার।।কিন্তু তার এমন চেষ্টা দেখে আমার কষ্ট যেন আরও বেড়েই চলছে।।তার জন্যই হয়তো কান্না কমার বদলে আরও বেড়ে গেছে।।একসময় হিচকি উঠে যায় আমার।।তা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না উনি।।করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।আমার পাশে বসে আলতো করে আমার হাত ধরে বলে উঠেন……
—” এত কাঁদছো কেন?? আমি তো সুস্থ তাই না?? হাঁটতে-চলতেও পারছি।।তাহলে?? ”
উনার কথা শুনে কান্না ভেজা কণ্ঠে তাকে বললাম…..
—” আপনার সাথে আমার কথা নেই।।এমন বড় এক্সিডেন্ট হলো আর আপনি আমাকে একটু জানানোর প্রয়োজন বোধও করলেন না।।হাউ কুড ইউ?? ”
—” জানালে তুমি খামাকা টেন্স থাকতে।।তাছাড়া আমি কি ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করেছি নাকি!!ভুলে হাতে গুলি লেগে গিয়েছিলো।।ব্যস এতটুকুই।। ”
—” ব্যস এতটুকু??কেন?? ভুলেই বা হাতে গুলি লাগবে কেন?? নিজের উপর একটুও কি খেয়াল রাখা যায় না।।আর মাথায়!!মাথায় কিভাবে ব্যথা পেয়েছেন আপনি?? ”
—” ক্রিমিনালদের সাথে ধস্তাধস্তির সময় হয়তো পেয়েছি!! ”
বিনিময়ে আমি আর কিছু বললাম না।।।।কথা বলব না তার সাথে আমি!!অভিমান করেছি।।অনেক অভিমান!!এত কিছু হলো আর সে আমাকে একটু জানালোও না।।এমন কেন উনি??একটু জানালে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো??
আমাকে চুপ থাকতে দেখে রেয়ান এবার শান্তভাবে বলে উঠলেন…..
—” প্রেয়সী আমার!!এত কান্না,, অভিমান,,জেদ কোথায় রাখো তুমি??আচ্ছা #সে_কি_জানে তাকে কাঁদলে কতটা কিউট লাগে।।ইচ্ছে করে তার ও-ই লাল গাল-টা টেনে দিতে।।সে যখন আনন্দের সাথে হাসে।।তখন ইচ্ছে করে তার আনন্দের সাথে মিলে আমিও হাসি।।তাকে বলো!! সে কি চায়?? তার আনন্দের সাথে হাসতে নাকি সে তখন কাঁদবে তখন আস্তে করে তার গাল টেনে দিতে।।কোনটা?? ”
কথাগুলো শুনে গলে গেলাম আমি।।যেন আমার সব অভিমান,,জেদ,,রাগ নিমিষেই হাওয়ায় মিশে গেছে।।তার এসব কথা শুনলে যে আমার মন নরম হয়ে যায়!!রেয়ানের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখি সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।।হয়তো উত্তরের আশায়।।তাই ধীরে ধীরে তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।।তারপর বললাম……
—” দু’টোই চাই আমার।।দিবেন আমাকে?? ”
কথাটা শুনে হাসলেন উনি।।পরক্ষনে সেও জড়িয়ে ধরলেন আমায়!!তার মনে শুধু একটাই কথা ঘুরছে ” আমার মরুভূমিটা আজকে সত্যিই আমার হলো।।আমি পেরেছি তাকে আমার করতে!! ” হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলো।।মাথা উঁচু করে রেয়ানের দিকে তাকাতেই দেখি উনি চোখ বন্ধ করে আছেন।।তার কাছ সরে আসতে আসতে বললাম…..
—” রেয়ান!!আপনার ফোন বাজছে।। ”
কথাটা শুনে রেয়ান ফোন বের করলেন পকেট থেকে।।তারপর আমার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন…..
—” ফোনটা ধরে কথা বলো।। ”
তার কথা মতো ফোনটা হাতে নিলাম।।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি দিধার কল।।সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।।দিধা ফোন দিয়েছে!! তাহলে উনি কথা বলছেন না কেন??আমাকেই বা কথা বলতে বলছেন কেন?? আমার ভাবনায় ছেদ করে রেয়ান আবারও বললেন ” ধরো “।।তার দিকে একবার তাকিয়ে ফোনটা ধরেই ফেললাম।।ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে দিধার চিন্তিত ভরা কণ্ঠ ভেসে উঠল…..
—” রেয়ান ভাইয়া।।কোথায় তুমি?? প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।।তুরানের ছোট ভাই নির্ঝরকে পাওয়া যাচ্ছে না।।সকাল হতে রাত গড়িয়ে গেছে।।ও এখনও বাসায় ফিরে নি।। ”
কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ।।সাথে সাথে রেয়ানের দিকে তাকালাম আমি।।উনি বাঁকা হাসছেন।।যেন বলতে চাচ্ছেন উনি উনার কথা রেখেছেন……
.
১ঘন্টা যাবত জেড়া করছি রেয়ানকে।।কিন্তু সে তো সে-ই।।কোনোভাবেই বলছেন না নির্ঝর কোথায়।।বরং শুধু এতটুকুই বলছেন….
—” সময় এলে বাসায় পাঠিয়ে দিবো ও-ই ছেলেকে।।এত চিন্তার কিছু নেই।।আর তাছাড়া ওর প্রতি তোমার এত চিন্তা কেন হ্যাঁ?? আমার জন্যও তো এত চিন্তা করো না।।ও-ই ছেলে গেছে আজকে।।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।।ওর আমি কি করি।। ”
তার এমন কথা শুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না।।ডান হাতের এই অবস্থায়ও উনি নির্ঝরকে নিয়ে গেছেন।।আল্লাহ জানে সুস্থ থাকলে কি করতেন!!তার এসব আমার বিরক্ত লাগছে,,পাশাপাশি ভালোও লাগছে।।কিন্তু এখন আপাতত ভালো লাগাটা সাইডে রেখে কিছুটা রাগ নিয়েই তাকে জিজ্ঞেস করলাম….
—” আপনি বলবেন না নির্ঝর কোথায়?? ”
—” নোপ ”
—” তাহলে আপনি এখানে বসে থাকেন আমি যাচ্ছি।। ”
—” আরে আরে,,,এখন গেলে কেমনে হবে?? আমাদের বিয়ের ব্যাপারেও তো কথা বলতে হবে তাই না?? ”
—” কিসের বিয়ে?? কার বিয়ে?? ”
—” আমাদের বিয়ে।। ”
—” কোনো বিয়ে টিয়ে হবে না আমাদের।।আপনি আমার কথার উত্তর দিয়েছেন??দেন নি তাই তো??তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করব কেন?? করব না বিয়ে আপনাকে।। ”
কথাটা শুনে রেয়ানের মুখ মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে গেল।।গম্ভীর কণ্ঠেই বললেন…..
—” আমি ওকে একটা রুমে আটকে রেখেছি।।৩-৪দিন পর ছেঁড়ে দিবো।। ”
—” ওয়াট??৩-৪দিন।।আর ইউ সিরিইয়াস??কালকে সকালের ভেতর ও যেন ওর বাসায় পৌঁছে যায়।।নাহলে আপনার আর আমার বিয়ের কথা ভুলে যান!! ”
—” ওকে ফাইন।।ছেঁড়ে দিবো।। ”
—” হুম,,এবার এ-না আপনি আমার সুপার হিরো।। ”
বলেই গাল টেনে দিলাম তার।।আর সে!!সে অন্য দিকে মুখ করে আছেন।।আমার দিকে তাকাচ্ছেনও না।।হয়তো রাগ করেছেন আমার ওপর।।ভীষণ রাগ!!
.
আমার কথায় হয়তো রেয়ান সত্যিই রাগ করেছিলেন।।তাই কিছু না বলেই চলে যান ছাদ থেকে।।পরেরদিন রেয়ান তার কথা রেখেছিলেন।।নির্ঝকে ছেঁড়ে দেন উনি।।কেউ জানেও না যে নির্ঝরকে আসলে রেয়ান কিডন্যাপ করেছিলেন।।খুব চালাকির সাথে সব কিছু হেন্ডেল করেন উনি।।কিন্তু বিপত্তি ঘটে আমার সাথে।।আজকে সারাদিন রেয়ান আমার সাথে কথা বলেন নি।।কল দিয়েছিলেন মাকে।।মা আর রিহান কথা বলেছে তার সাথে।।আমি কথা বলতে গেলেই ফোন কেটে দেন উনি।।বুঝতে পারছি না এত রাগের কি আছে??#সে_কি_জানে তার এমন রাগে আমার কষ্ট হচ্ছে!!
.
সকালটা আমার এভাবেই কেটে যায়।।মাঝরাতের দিকে রিহানকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত পাশে নিতেই অনুভব করি পাশে কেউ নেই।।তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ভালো ভাবে পাশে তাকাতে শুরু করি।।সত্যিই রিহান নেই এখানে।।আর না আছে রুমের কোনো জায়গায়।।সাথে সাথে ভয় লাগা শুরু হয়ে যায় আমার।।কোনোমতে নিচে যেতেই দেখি চারপাশ পুরো অন্ধকার।।হঠাৎ কেউ বলে উঠে……
—” ?Happy Birthday To You
Happy Birthday To You
Happy Birthday,,Happy Birthday
Happy Birthday
Dear moruvumi?”
কথাটা বলতে বলতেই আমার ঠিক সামনে থেকে কেউ যেন আসছে।।সে একটু কাছে আসতেই আমি অবাক!!এ তো মা,,রিহান আর রেয়ান।।সাথে দিধাও আছে।।রেয়ান আর রিহান হাঁটু গেড়ে হাঁটছে।।তাদের হাতে কেক।।রেয়ান বাম হাত দিয়ে কেক ধরেছেন আর রিহান দু’হাত দিয়ে।।তাদের দু’পাশে মা আর দিধা মোমবাতি নিয়ে আসছে।।দৃশ্যটা দেখতেই আমার চোখে পানি চলে আসে।।এতো ভালোবাসে কেন এ মানুষগুলো আমায়।।আমি কি আদও এ ভালোবাসার যোগ্য??হয়তো!!তারা ধীরে ধীরে আমার একদম কাছে চলে আসে।।রেয়ান একটা মুচকি হেসে আমাকে বলেন…..
—” সো মাই ডিয়ার হবু বউ।।কেক-টা কেটে আমাদের উদ্ধার করো প্লিজ।। ”
কথাটাশুনে এবার রাগ করলাম না বরং হেসে দিলাম।।তার ভালোবাসা যে এমনই।।সামনে প্রকাশ না করলেও তার কাজকর্ম দিয়ে সে বুঝিয়ে দেয় যে সে কতটা ভালোবাসে আমায়।।আমি খুশি মনে কেকটা কাটলাম।।প্রথমে মাকে খাওয়ালাম,,,আমাকে এত সুন্দর পৃথিবীতে জন্ম দেওয়ার জন্য।।তারপর রিহানকে,, আমার ছোট দুনিয়াকে এত বড় করার জন্যে।।এরপর রেয়ানকে,,,আমাকে এত এত ভালোবাসার জন্য।।আর অবশেষে দিধাকে,,,আমার এত ভালো বোন হওয়ার জন্য।।
সবশেষে সবাই মিলে রেয়ানকে ধরলাম গান গাওয়ার জন্য।।উনিও সাথে সাথে গান গাওয়া শুরু করে দিলেন…..
?প্রেমে পড়া বারণ?
?কারনে অকারন?
?আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখলেও?
?হাত ধরা বারণ?
?প্রেমে পড়া বারণ?
?কারনে অকারন?
?আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখলেও?
?হাত ধরা বারণ?
?তোমায় যত গল্প বলার ছিলো?
?তোমায় যত গল্প বলার ছিলো?
?সব পাপড়ি হয়ে পাছের পাশে?
?ছড়িয়ে রয়ে ছিলো?
?দাও নি তুমি আমায় সে সব?
?কুড়িয়ে নেওয়া কোনো কারন?
?প্রমে পড়া বারণ?
?কারনে অকারন?
?ও-ই মায়া চোখে চোখ রাখলেও?
?ফিরে তাকানো বারণ?
?প্রমে পড়া বারণ?
.
.
.
#চলবে?